#রাখীর উপহার
রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী#
"খুব সরু অথচ সুন্দর দেখতে একটা রাখী দিননা,ঐটা বোধহয় ঠিকঠাক হবে।"আমার চেহারার দিকে একবার তাকিয়ে দোকানদার বলে,"দিদি,এটা ছোট রাখী। আপনার ভাইয়ের জন্য বড়টা নিন।"
কিছু না বলে হেসে ছোট রাখীটাই কিনি। আসলে আমার ভাইয়ের হাতটা খুবই ছোট আর সরু কিন্তু এত জোর সেই হাতে যে যত্নে আগলে রাখে বিশ্ব সংসার। কখন যে ভাই,বন্ধু,পিতা,মাতা সবই সে হয়ে গেছে বুঝিনি।রাগ,দুঃখ আর বকাঝকা তাকেই করি ইচ্ছেমত,নিশ্চিন্তে তুলে দিই সব দায়িত্ব। কাল রাখী,অভিযোগ করেছিলাম,"শুধু রাখী পরো,গিফ্ট কই আমার?আচ্ছা বাবা থাক শুধু হাসিটুকু বাঁচিয়ে রেখো শত কষ্টেও।"
মুচকি হেসেছিলো ভাই,যুগলের আঁকা ছবিটা হঠাৎই কাল রাতে ফেসবুক খুলে দেখলাম। আমার জন্য সারপ্রাইজ গিফ্ট রাখীর।
কানে কানে একজন বলে গেলো," নানা রূপে আছি সামনে আগলে রেখেছি যত্নে শুধু চিনতে না পেরে রাগ করিস।সত্যিই তুই এখনো ছেলেমানুষ।"
#সেরা শিক্ষক
#রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী
"হ্যাপি টিচার্স ডে স্যার" সকালে এসেই অমলবাবুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে কানাই।"
"শোন বাবা মা হচ্ছেন সেরা শিক্ষক,তাই বাবা মাকে যত্ন করবি,ওনাদের কথা শুনবি। শুধু মাস্টারমশাইকে নয় আজ ওনাদেরও প্রণাম করিস।"
রিটায়ারমেন্টের পর আজও ছাত্র গড়েন অমলবাবু একটাই পরিতৃপ্তি সেখানে অন্তত কেউ বলেনা সারাজীবনে কি করেছো আমাদের জন্য?
তোমাকে বাবা বলে....বাকিটা আর মনে করতে চাননা। গলায় এক ডেলা কান্না উঠে আসে।
হঠাৎই চমক ভাঙে চেনা গলার আওয়াজে.. কানাই! " স্যার ছেলেটাকে একটু মানুষ করে দিতে হবে।"
আজকাল বোধহয় আত্মবিশ্বাসটাও নড়বড়ে হয়েছে,আস্তে আস্তে বলেন,"চেষ্টা করবো রে।"
ভেদাভেদ#
রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী#
মানুষে মানুষে বিভেদ আর হিংসা বাড়ছে। কখনো বা রক্তপাত হচ্ছে ধর্মের জন্য। খবরের কাগজের প্রথম পাতাটা খুলে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো সুমিতার।টিফিনের ঘন্টা বাজলো ঢং ঢং করে। হৈ হৈ করে মেয়েরা থালাতে গরম ভাত আর আলুসেদ্ধ নিয়ে খাচ্ছে। সরল মুখগুলোতে পরিতৃপ্তির হাসি।হঠাৎই চোখ পড়ে যায় রিজিয়া আর মৌসুমীর দিকে। একই থালাতে ভাত ডাল আলুসেদ্ধ মেখে পরম আনন্দে খেতে খেতে গল্প করছে। বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা ধুয়ে মুছে দিয়েছে সব ভেদাভেদ। সত্যি যদি ওদের দেখে বড়রা শিখতো!
#বন্ধু
রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী#
বাইরে থেকে সবাই তাড়া দিচ্ছে এতো সাজের কি আছে বরের! এবার এসে গাড়িতে বসুক তাড়াতাড়ি। ধুতির কোচা ঠিক করে ওকে এনে একেবারে মায়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় মামা।" কি সব বলতে হয় মাকে বলে দিয়ে টা টা করে বেড়িয়ে পর।"
ছেলের দিকে তাকিয়ে চোখ জুড়োয় ললিতার,নজর যেন না লাগে। " শোন আমার জন্য লক্ষ্মী না এনে একটা বন্ধু আনিস তো। শুনেছি মেয়েরা নাকি মায়েদের বন্ধু হয়। তা আমার তো মেয়ে নেই। তাই বৌমা আসুক বন্ধু হয়ে যার সাথে চুটিয়ে আড্ডা মারবো,ঝগড়া করবো আর ভালোবাসবো।"
.." সিরিয়াল দেখা আর শপিং? সেটা করবেনা?"
হেসে ফেলে ললিতা," পাজি ছেলে!এবার আয়,দুগ্গা দুগ্গা।"
#শুভা
রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী#
"কি হলো বললাম না গয়না আর শাড়িটা পরে বেড়িয়ে আসতে কতবার বলতে হবে শুনি? তুমি কি চাও বিয়েটা আমার ভন্ডুল হোক?"
" কিন্তু তোর শ্বশুরবাড়ির লোক?"
" সেটা তোমাকে ভাবতে হবেনা বৌদিভাই।"
মেরুন পাড় গাঢ় সবুজ রঙের কাঞ্জিভরম শাড়িটা পরে গলায় চুনির হারটা পরে নেয় অস্মিতা।"
শাশুড়িমা এসে কপালে একটা টিপ পরিয়ে দেন।" আজকে বাবু থাকলে তো চোখ ফেরাতে পারতোনা। যেখানেই থাক কত খুশি হবে বলতো? তোমার যে আজ অনেক দায়িত্ব বৌমা।"
চোখটা মুছে বরণডালাটা হাতে তুলে নেয় অস্মিতা। একমাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা,আজ যে ওর অনেক দায়িত্ব। সত্যিই তো খুব আদরের ছিলো ছোটবোন ওর স্বামীর। আজ যে অস্মিতা এই বাড়ির বড় মেয়ে,শাশুড়িমা তাই বলেন।
Comments
Post a Comment