Skip to main content

মেঘলার আকাশ

#মেঘলার_আকাশ#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

পার্লার থেকে একেবারে সাজিয়েই নিয়ে এসেছিলো মেঘলাকে আকাশ,আসলে মায়ের সেইরকমই অর্ডার ছিলো। ফোনে শুনেই মা বলে দিয়েছিলো,"হঠাৎই বিয়ে করে ফেলেছো,কেন করেছো অত কিছু আমি জানতে চাইনা। তবুও বাড়ির বৌ তো একবার বাড়িতে আসবে নাকি?"
                একটু দেরী হলেও শেষ পর্যন্ত দিন পনেরোর ছুটি নিয়ে মুম্বাই থেকে আসতেই হলো আকাশকে। এদিকে বাড়িতে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে পুরোপুরি। খুব বেশি না হলেও প্রায় পঞ্চাশজনকে না বলে পারেনি পর্ণা। অনেক প্ল‍্যান ছিলো সবারই ওদের ছেলের বিয়ের নিয়ে কিন্তু ছেলে যে কাউকে কিছু না বলে এমন একটা কান্ড করবে ভাবতেই পারেননি ওরা। এই নিয়ে আত্মীয়মহলে অনেক জলঘোলা হয়েছে,অনেকেই মুখ টিপে হেসেছে সারাক্ষণ ছেলের গর্বে গর্বিত পর্ণার মুখে ঝামা ঘষেছে ছেলে। যে ছেলে মা ছাড়া কিছু বুঝতোনা সে এমন একটা কান্ড ঘটালে!" বিয়েতো দিতামই দিদি,না হয় নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছে তা ঠিক আছে। বরং আমার দায়িত্ব থাকলোনা ভালোই তো।" মনে মনে হিতাকাঙ্খী আত্মীয়রা ভেবেছিলো ভাঙবে তবুও মচকাবেনা। শুধু পর্ণা বুঝিয়েছিলো নিজেকে এই বলে যে,খারাপ লাগলেও বেশি রাগ করে কি আর হবে? মাঝের মাঝ ছেলেটা পর হয়ে যাবে। হয়ত আর বাড়িতে আসবেনা এর বেশি আর কি হবে? তাই আসুক ওরা উনি বরণ করে নেবেন এই বাড়ির বৌকে।
                   গয়না আর শাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বোনের মেয়েকে হোটেলে,এ বাড়ির মেয়ে বলতে তো ওই একমাত্র মেয়ে,আসলে পর্ণার ছোটবোন সুমিতা ওর ছোট দেওরের বৌ। আর কলি ওর মেয়ে,তিনবছর আগেই তো বিয়ে হয়ে গেলো মেয়েটার। আবার একটা গুড়গুড়ে নাতিও হয়েছে একদম চিনির মত মিষ্টি আর হামাগুড়ি দিচ্ছে এই সবে। ঠিকই ছিলো ওরা প্রথমে হোটেলে উঠে তারপর একদম তৈরী হয়ে বাড়ি আসবে।
             আলোতে আর লোকজনে বাড়িটা যেন নতুন করে সেজেছে,গাড়ি থেকে নেমে হাতটা বাড়িয়ে দেয় আকাশ মেঘলার দিকে। " দাদাভাই তুই যা আমি বৌদিভাইকে নামাচ্ছি।" শাড়িটা উঁচু করে ধরে মাটিতে পা রাখে মেঘলা। শাড়ি পরার অভ‍্যেস ওর খুব একটা নেই তাই সাবধানে পা রাখে মাটিতে। ততক্ষণে পর্ণা হাতে বরণডালা নিয়ে বেড়িয়ে এসেছেন বাইরে। ফেসবুকে আর আকাশের গ‍্যালারিতে অনেকবারই দেখেছে ওর শাশুড়িমার ছবি,মোটাসোটা গোলগাল কপালে বড় টিপ আর মুখে একটা চাপা হাসির ছোঁয়া। মুখের হাসিটা বলে দেয় মানুষটা মনে হয় খুব একটা খারাপ না। সত‍্যিই কি মুখ দেখে মনের সবটা বোঝা যায়? হয়ত বা কিছুটা যায়।
             কলি মেঘলার ওড়নাটা একটু টেনে দেয়,মেঘলা একটু বেশিই স্মার্ট ওর মনে হলো। নতুন বৌয়ের কোন জড়তা বা লজ্জা ওর মধ‍্যে নেই। ঘিয়ের প্রদীপের আলোর শিখা মেঘলার মুখে ফেলেন পর্ণা,বেশ সুন্দরী দেখতে ওকে। অনেকবার বলেও পাজি ছেলেটা একটা ছবি পাঠায়নি,বলেছে সারপ্রাইজ থাক। আদরে বরণ করে নতুনবৌকে ঘরে তোলেন ওরা দুই বোন।
    " মা,বিয়েটা তো হয়েই গেছে এত নিয়মের কি দরকার? তুমি বরং ওদিকটা দেখো,লোকজন তো এসে পড়েছে।"
     " তোকে ওদিকের চিন্তা করতে হবেনা,আছে তো বাবা আর কাকা। তারপর আমাদের নতুন জামাইও আছে।"
       কলির বর অভি আকাশের বন্ধু,কখন যে ব‍্যাটা তলে তলে ওর বোনটার দিকে নজর রেখেছিলো কে জানে?এই তিনবছরেও ওর নতুন জামাই নামটা ঘুঁচলোনা। ওদের সাথে দেখা করে এসেই এদিকে লেগে পড়েছে এই বাড়ির তো এখন ও ছেলে কাম জামাই।
                ওড়নাটা একটু সরিয়ে শ্বাস নেয় মেঘলা,নিয়মের ঘেরাটোপে ওর কেমন যেন লাগে। সত‍্যিই কি এগুলো করতে হয় না লোকে মজা করে করে কে জানে?
          সবাই মিলে হৈ চৈ করতে করতে কয়েকটা নিয়ম আর ছবি তোলা হয়ে গেলো। " কেমন জব্দ বৌদিভাই, লুকিয়ে বিয়ে করে।"..একটু হাসে মেঘলা। ঘর ততক্ষণে একটু খালি হয়ে উঠেছে সবাই খেতে যাচ্ছে,রাত্রিও হয়েছে। মেঘলার একটু অস্থির লাগে হাতের ঘড়িটার দিকে তাকায় ফোনটা হাতে নেয়। আকাশ ওর দিকে তাকিয়ে একটু ইশারা করে এবার সত‍্যিই খুব রাগ হয় ওর,তখন থেকে নিয়মকানুন একে প্রণাম করো ওকে করো। সবাইকে দেখে হাসো,কতক্ষণ ফোনে কথা বলতে পারেনি।মেসেজবক্সটাও দেখা হয়নি।
                        " মা ওর বোধহয় শরীরটা ভালো লাগছেনা,বাইরের লোকজন তো প্রায় চলে গেছে। তাহলে কি ও চেঞ্জ করে রেস্ট নেবে?"
        পর্ণার সত‍্যিই একটু বিরক্ত লাগে ছেলের কথা শুনে। কি হয়েছে এমন? নতুন বৌয়ের কেমন যেন অস্থিরতা মুখে তেমন হাসি নেই।
    " মানি,এই দুষ্টুটা ঘুম থেকে উঠেছে তাই নিয়ে এলাম। তুমি বলেছিলে তো..."
   কলির কথা শেষ না হতেই পর্ণা ওর কোল থেকে নাতিকে নিয়ে নতুন বৌয়ের কোলে দেন। " এই যে কার কোলে উঠেছো দাদুভাই এটা তোমার মিষ্টি মামী। তোমার কোলেও এমন একটা গোপাল আসুক কিছুদিন বাদে বৌমা।"
          " সেই আশা বোধহয় কোনদিনই আপনার পূরণ হবেনা। আমি আপনাকে গোপাল এনে দিতে পারবোনা কোনদিনই ,তবে আমার মেয়েটাও খুব মিশুকে ওর নাম রাই..."
           বাকি কথাটা আর শেষ করা হয়না মেঘলার, তখন ঘরে লোকজন তেমন ছিলোনা। তবুও ঘরে বাজ পড়লেও বোধহয় এতটা আশ্চর্য হতেননা পর্ণা। আকাশ একটু বাইরে গেছিলো বন্ধুদের ছাড়তে,ঘরে পা দিয়েই কথাটা শুনতে পায়,এত বলা সত্ত্বেও মেঘলা একটু ধৈর্য্য রাখলোনা! ততক্ষণে উৎসবের সব রঙ যেন মুছে গেছে পর্ণার মুখ থেকে,কোন কথা বলতে আর ইচ্ছে হলোনা। আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরোতে বেরোতে শুনতে পেলেন।"হ‍্যাঁ,শান্তাদি রাই কি ঘুমিয়ে পড়েছে? খুব কাঁদছিলো না?ও খেয়েছে তো? আজকের রাত্রিটা একটু বুঝিয়ে রাখো। সরি গো আমার ফোন করতে অনেকটা দেরী হয়ে গেলো। খুব টেনশন হচ্ছিলো আমার।"
               সেদিনের রাতটা পর্ণার ঠাকুরঘরে গোপালের সামনে বসেই কেটে গিয়েছিলো। সুমিতা দুবার এসে ঘুরে গেছে,ছেলে আর ওর বাবাও একবার এসেছিলো কিন্তু পর্ণাকে দেখে কারো কথা বলার সাহস হয়নি। হাল্কা আলোর রেখা ফুটেছে আকাশে,নিজের ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে ছাদের একপাশে লাগানো শিউলি গাছের কাছে এসে দাঁড়ান পর্ণা। একদিন বাদেই ভাদ্রমাস পড়বে,শরৎ আসছে। গাছে একটা দুটো করে শিউলি ফুল ফুটছে। তারই মিষ্টি সৌরভ ছড়িয়েছে চারদিকে। ভোরের ঠান্ডা হাওয়া কিছুটা শীতল করে পর্ণাকেও ইচ্ছে করে একটু বেশি শ্বাস নিতে বড় দমবন্ধ কেটেছে কালকের রাতটা।
            হঠাৎই পিঠে একটা স্পর্শ পায় পেছন থেকে ছোটবেলার মত গলাটা জড়িয়ে ধরেছে আকাশ.."মা"
        উত্তর দিতে পারেনা পর্ণা,জমে থাকা অভিমান,রাগ আর দুঃখ অঝোরে নামে দুই চোখ বেয়ে।
       ভোরের আলো তখনও ভালো করে ফোটেনি। যে কথা মাকে ফোনে বলতে পারেনি লুকিয়েছিলো আজ যে সে কথা তাকে বলতেই হবে। " মা তুমি একবার শোনো সবটা। তারপর না হয় আজই চলে যাবো আমরা। আমি তো আসতে চাইনি মা। তুমিই তো.."
     পর্ণার ভেতরের কথাগুলো চিৎকার করে বুকের ভেতর হুটোপুটি করলেও বলতে পারলেননা," আমি কি এতই পর হয়ে গেছি তোর কাছে যে এত কিছু লুকিয়েছিস! কেন সব আগে বলিসনি?"
          একটু একটু করে ছেলে বলতে থাকে আর উনি শুনতে থাকেন...যখন বিয়ের প্রায় পরপরই ইউটেরাসে টিউমার থাকায় সেটা বাদ দেওয়া হয় ভবিষ‍্যতের খারাপ আশঙ্কায়।মেঘলার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো শ্বশুরবাড়ির সবাই,কেউ ওর পাশে থাকেনি এমনকি স্বামীও না। বারবার জিজ্ঞেস করে উত্তর পেয়েছিলো যে মেয়ে একটা সন্তানের জন্ম দিতে পারবেনা সে তো মেয়েই নয়। তাছাড়া কি হবে ওদের বংশরক্ষার? অপমানে,খারাপ ব‍্যবহারে মানসিক অত‍্যাচারে ওরা বাধ‍্য করেছিলো ওকে শ্বশুরবাড়ি ছাড়তে। বাপের বাড়ি ফিরে এসে একমাসের মধ‍্যেই বাবাকে হারিয়েছিলো মেঘলা,মনে হয় আঘাতটা নিতে পারেননি বাবা। ওর মা ছোটবেলায় মারা গেছেন,তাই বোধহয় কোন কষ্টই বোঝার লোক ওর ছিলোনা। থাকার মধ‍্যে ছিলো শান্তাদি,ওদের পুরোনো কাজের লোক।
                শুরু হয়েছিলো বাঁচার লড়াই,দূরে বিয়ে হওয়ার জন‍্য একদিন যে চাকরি ছেড়েছিলো আবার পড়াশোনা করে নতুন চাকরি নেয়। শুরু হয় মেঘলার জীবনের এক নতুন অধ‍্যায়। সব কিছুর মধ‍্যেও..
          "আমি বলছি এবার"..ভালো করে না তাকালেও পর্ণা বোঝেন মেঘলা এসে দাঁড়িয়েছে ওদের খুব কাছে।
       " চাকরি করতে শুরু করলাম,আমার অন‍্য জীবন শুরু হলো। ছেলেদের ব‍্যাপারে উৎসাহটা আর ছিলোনা ভালো লাগতোনা তেমন কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে। একদিন উইকেন্ডে আমার স্কুলের বন্ধু ডোরার সাথে দেখা হয় অনেকবছর বাদে। ডোরা খ্রীস্টান, ও বিয়ে করেনি একটা হোমে থাকে। তারপর থেকেই মাঝেমধ্যে সময় পেলেই চলে যেতাম ওদের হোমে। সব কিছুর মধ‍্যেও মাঝেমধ‍্যেই তাড়া করতো অতীতের স্মৃতি হয়ত মনের মধ‍্যে সুপ্ত যন্ত্রণাও ছিলো মা হতে না পারার। তাই ভাবিনি কখনো আবার নতুন করে শুরু করার কথা,কারণ বংশরক্ষা তো আমি করতে পারবোনা। সব নিয়ম মেনেই মা হলাম,সিঙ্গলমাদার। আ্যডপ্ট করলাম আমার মেয়েকে,আমার রাই,আমার জীবনের সবকিছু।
                               পুরোনো বাড়িটা ছেড়ে একটা ফ্ল্যাট কিনে চলে এলাম আকাশদের আ্যপার্টমেন্টে একটু হাসলো মেঘলা। অবশ‍্য তখন আমি ওকে চিনতামনা। চিনেছিলাম প্রায় মাস ছয়েক বাদে,সেটাও ঐ রাইয়ের জন‍্যই। রাইকে তখন সবেই প্লেস্কুলে দিয়েছি,ড্রাইভার দিয়ে আসতো সঙ্গে থাকতো শান্তাদি। একদিন খুব বাজে ভাবে গাড়িটা আ্যক্সিডেন্ট করলো,অনেকটা রক্ত বেড়িয়ে গেলো রাইয়ের চলছে যমে মানুষে টানাটানি। পুজো আমি করতামনা,ঠাকুর আমাকে কিছুই তো দেয়নি তবুও কেন যেন সেদিন হাত পেতে ছিলাম ভগবানের কাছে রাইকে ফিরিয়ে দেবার জন‍্য। নিজেকে খুব অপয়া মনে হয়েছিলো হয়ত মা হওয়ার কোন যোগ‍্যতাই আমার নেই। রাইয়ের রেয়ার গ্ৰুপের ব্লাড,সবাইকে বলেছিলাম কারণ ব্লাডব‍্যাঙ্কে পাওয়া যায়নি রক্ত। একা একা পাগলের মত ছুটছি সাথে কয়েকজন বন্ধু হঠাৎই ও এলো, রক্ত দিতে চাইলো।
           দশদিন বাদে মেয়েকে নিয়ে এলাম বাড়িতে। তারপর থেকে প্রত‍্যেকদিনই ও আসতো হসপিটালে। রাইয়ের সাথে দোস্তি হয়ে গেছিলো ওর। তারপর একটা সময়..."
                   "হ‍্যাঁ আমিই মা,রাইকে প্রথমে ভালোবেসে ফেলেছিলাম আর তারপরে মেঘলাকে। বিয়ে করতে চেয়েছিলাম ওকে,ও রাজি হয়নি সবটা বলেছিলো আমায়। তারপরেও আমি.."
           পর্ণার চোখটা আজ বড় ভিজে,নিজের সন্তানের মা তো অনেকেই হয়। কিন্তু এভাবে মা হওয়া! মনের মাঝে উঁকি দেয় কত কি? ঘাতপ্রতিঘাত হয় নিজের বিবেকের সাথে সমালোচনার। না জানি সবাইকে কত কি বলতে হবে কতবার?
কিন্তু রাই? মা বাবা ছাড়া বাচ্চাটা আছে কোথায়?
ঐটুকুনি শিশু হয়ত কত কান্নাই না কাঁদছে।
ও কি মুম্বইতেই?
           শুকনো গলায় পর্ণা বলেন," রাই কোথায়?ওকে কোথায় রেখে এসেছিস?"
           ভোরের সদ‍্য ফোটা আলোতে ধুয়ে যাচ্ছে পর্ণার মুখটা। আকাশের মাকে কেমন যেন বড্ড মা মা দেখতে লাগলো মেঘলার।কত ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছে,মায়ের মুখটাও ঠিক করে মনে পড়েনা ওর। কাল থেকে এসে পর্ণাকে একবারও মা ডাকেনি মেঘলা,আজ ভীষণ ওনাকে মা ডাকতে ইচ্ছে করছে।
                        ঐ দূরের গাছটাতে সবুজ লাল একটা পাখি উড়ে বসলো,টুপটুপ করে ঝরে পড়লো প্রথম শরতের দুএকটা শিউলি ছাদে। পর্ণার খুব কাছে এখন মেঘলা। " ওকে নিয়ে এসো এ বাড়িতে বৌমা। আমার আকাশের বড্ড ভালোবাসার আর রক্তের সম্পর্ক যে ওর সাথে। ঐ টুকু মেয়েকে কেউ বন্ধুর বাড়িতে রাখে?"
                      এরপরের সবটাই সামলেছিলেন ওরা দুই বোনে আর কলি। অভি বোধহয় আগে থেকেই সবটা জানতো। পরদিনই অভি আর কলির উদ‍্যোগেই ওরা চারজন বেড়াতে গেলো দুতিনদিনের জন‍্য তারপর রাই আসবে এই বাড়িতে। পর্ণার কড়া আদেশ জন্মাষ্টমীর দিন ফিরে আসা চাই কিন্তু সেদিন অনেক কাজ বাড়িতে।
               দেখতে দেখতে দিন কেটে গেলো এই কদিন পর্ণারও কেটে গেছে খুব ব‍্যস্ততায়। বাড়ির ছেলেদের তো কোন মাথাব‍্যথা নেই,বাজার করেই ক্লান্ত।" দিদি ওরা আধঘন্টার মধ‍্যেই আসবে,কলি ফোন করেছিলো।"
                প্রদীপের শিখাটাকে বাড়িয়ে দেন পর্ণা মনে মনে বলেন মনের সব অন্ধকার কাটিয়ে দাও ঠাকুর। কিছুক্ষণের মধ‍্যেই বাইরের কথায় বোঝেন ওরা এসে পড়েছে।
             বাইরে এসে চোখটা ঝাপসা হয়ে যায় পর্ণার এতক্ষণ যত্ন করে যাদের সামনে প্রসাদ সাজিয়ে রাখছিলেন তারা যে কখন তার একদম সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারেননি। কি কান্ড! কি যে মিষ্টি লাগছে আজ মেঘলাকে আর কলিকে! মেঘলার কোলে নাড়ুগোপাল আর কলির কোলে রাধিকা রাই। দুটোকে একদম ঐ রকম সাজিয়ে এনেছে। নিশ্চয় এটা কলির কাজ!
              হয়ত ভগবান মানুষের মাঝেই থাকে আমরাই চিনে নিতে পারিনা। আর চিনলে ভালোবাসার ম‍্যাজিকটাচে অনেক মনোমালিন‍্যের মেঘলা আকাশেই হয়ত ওঠে ঝকঝকে রোদ্দুর।
     পর্ণা ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন ওনার রাই রাধিকা আর নাড়ুগোপালকে,চোখটা আজ খুব ঝামেলা করছে শুধুই জল আসছে। জল আজ মেঘলার চোখেও,আজ আর ও সিঙ্গেল মাদার নয়,রাই পেয়েছে ওর পুরো পরিবারকে।
"আয় আয় সবাই ঠাকুরঘরে এক্ষুনি পুজো শুরু হবে।"@ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
সমাপ্ত:-
                      
       
      

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...