Skip to main content

অলক্ষ্মী

"মা সব কিছু টেবিলে গোছানো আছে,ঢাকা দিয়ে রেখেছি। আমি বেরোলাম নাহলে দেরি হয়ে যাবে। দিদিভাইকে বলবেন চা করা আছে টেবিলে।"
              কৃষ্ণের নাম করতে করতে সবটুকুই কানে এলো অসীমার। যতই ভাবেন চোখ খুলবেননা তবুও চোখটা খুলেই গেলো..গা পিত্তি জ্বলে গেলো দেখেই। কে বলবে ছেলেটা চলে গেছে একবছরও হয়নি এর মধ‍্যেই কি সাজের ঘটা!পড়াশোনা চলছে নাকি ওনার। তখন সবাই বুঝিয়েছিলো এত কম বয়েসে এমন হলো মেয়েটা থাকবে কি নিয়ে? এখন আপসোস হয় কেন মত দিয়েছিলেন। প্রফেসরের বাড়ি যাচ্ছে পড়তে এত সাজের আছেটা কি? পড়তে যায় না লীলাকেত্তন করতে যায় কে জানে?
         দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে অসীমার, ভগবান আমার যে কোলটা খালি হয়ে গেলো তার হিসেব কে রাখে,পিঠোপিঠি দুই ছেলেমেয়ের প্রায় দশবছর বাদে ঐ ছোটছেলে। মা ছাড়া কিছুই বুঝতো না। কোথা থেকে যে ঐ অপয়া মেয়েটার খপ্পরে পড়লো কে জানে!
                     "পড়তে যাচ্ছো বেশ,তবে পড়া হলেই চলে এসো মনে থাকে যেন।"
   এমন কথা প্রতিদিনই শুনতে হয় প্রায় তাই কাঁকনের আর কিছু বলতে ইচ্ছে করেনা,"আচ্ছা মা।"
       চোখের কোলটা ভিজে যায় কাঁকনের একটা সময় সুমন্ত থাকতে ও কোথাও গেলে উনি কপালে হাত ঠেকিয়ে দুর্গা, দুর্গা করতেন বলতেন সাবধানে এসো মা।
                 মা ডাকটা কতদিন শোনেনি ওনার কাছ থেকে মনে করতে চায়না। আজকাল যেন ওকে দেখতেই পারেননা উনি।কতদিন ভালো করে কথাও বলেননা। অথচ বাড়ির সব কাজ সেরেই পড়াশোনা করে।
             ছুটতে ছুটতে বাস রাস্তায় এসে দাঁড়ায় কাঁকন অনেকটা রাস্তা বাসে যেতে হবে। এম.এ পার্টওয়ানে সুমন্তই ভর্তি করে দিয়েছিলো,তখন বাড়িতে কেউ তেমন আপত্তি করেনি। অথচ তখনকার সময় আর আজকে কত ফারাক। সুমন্ত ওকে ভালোবেসে বিয়ে করলেও শাশুড়িমা সুন্দরী বৌমাকে বরণ করেছিলেন লক্ষ্মীরূপেই,বড় বৌমার পাশে ছোটবৌমা লক্ষ্মীমন্ত আর পুতুল পুতুল। চাকরি করা বড়বৌমা যেখানে তেমন কিছুই করেনা সেখানে অসীমার শেখানোর গুণে বেশ অল্পদিনেই কাঁকন শিখে নিয়েছিলো সুন্দর ঘরকন্না।
                   ওর বেশি প্রশংসা করলে দিদিভাই বলতো," মা ওর বয়েস কম,এখন অনেক এনার্জি করুক। আমার মত পুরোনো হলে আর নাম কেনার জন‍্য কাজ করতে যাবেনা।"
                আচ্ছা মেয়েদের লক্ষ্মীমন্ত থেকে অলক্ষ্মী হতে কি কোন সময় লাগেনা?নাকি পয়া বৌমা হঠাৎই হয়ে যায় অপয়া?কান্না পায় আবার কাঁকনের,ওর মা থাকলে হয়ত ওর কষ্টটা বুঝতো

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...