Skip to main content

নষ্টা

#নষ্টা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"বিধবা হওয়ার পর দেখেছো কেমন সাজের ঘটা।কই আগে তো কখনো দেখিনি জিন্স পরতে।আজকাল তো জিন্স ছাড়া কিছুই পরেনা দেখি।
আর জেল্লা দেখেছো কেমন!"
আরে হবেনা,বরের এতগুলো টাকা পেয়েছে সেগুলো এখন তো সব ওরই। তাই ইচ্ছেমত সাজগোজ করছে আর টাকা ওড়াচ্ছে মনের সুখে।"
            "প্রতিদিনই তো দেখি ব‍্যাগ ঝুলিয়ে খটখট করে যাচ্ছে,কোথায় যায় কে জানে?"
    "আমার বাড়ির উল্টোদিকে তো থাকে সবই দেখি ভাই। ফেরেও তো বেশ অনেকটা রাতে।"
"আর কি শ্বশুর শাশুড়িকে বোকা বানিয়ে নিজের মত চলছে। পড়তো আমার শ্বশুরবাড়িতে বুঝতো।"
        " আমার ছোটননদকে দেখেছো তো,সাদা শাড়িই তো পরছে সেই কবে থেকে। অনেক জোর করে ভাইয়েরা হাল্কা রঙে ফিরিয়েছে।"
           মৌলির প্রতিবেশী এরা তাই একটু হয়ত বেশিই ভাবাটা এদের মৌলিক অধিকার। কোলাপসিবল গেটটা সরিয়ে নিজেই তালা খুলে ঢোকে বাড়িতে। মামণিকে বলেই দিয়েছে,তাড়াহুড়ো করে এসে দরজা খোলার দরকার নেই। অনেক অঘটনের মাঝেও এই মেয়েটাই হয়ত একটুকরো খোলা আকাশ কৃষ্ণেন্দু আর তৃষার জীবনে।
"এত দেরি হলো রে আজ,সেই কখন থেকে আমি আর তোর বাপি বসে আছি।"
       " মা আজ খুব জ‍্যাম ছিলো রাস্তায়,তাইতো বলেছিলাম আমাকে বাইরে বের কোরোনা। বেশ তো ছিলাম ঘরের ঘরকন্না নিয়ে। তোমরাই জোর করতে শুরু করলে বেরোনোর জন‍্য।আমি এক্ষুনি আসছি চেঞ্জ করে।"
                       টেবিলে বসে প্রায়ই চোখ চলে যায় ফাঁকা চেয়ারটার দিকে। ওটাই একেবারে পারমানেন্ট জায়গা ছিলো সুমন্তর। হঠাৎই যে কি হলো!একটু চিকিৎসারও সুযোগ পেলোনা। গাড়িতে আ্যক্সিডেন্ট,অথচ কত পাকা হাত ছিলো ওর।
     আত্মীয়মহলে কানাকানি হয়েছিলো,পাঁচবছর হলো বিয়ে হয়েছে কোন বাচ্চাকাচ্চা হলোনা। কে জানে হয়ত নেশাটেশা করে...
        "তারপর কি এমন কাজ করে গো,কে জানে। শুনেছি তো বড় চাকরি করে অফিসে।"
   মৌলি আর বাড়ির সবাই জানে কিছুই করেনি সবটাই হয়ত ওদেরই দুর্ভাগ্য। কিন্তু কারো ভাবনাকে আগল দিতে তো ওরা পারবেনা।
           " মামণি আজকে আর আমি ভাত রুটি খাবোনা। তোমায় বলেছিলাম তো,ঐ দুধের মধ‍্যে কিছু একটা দিয়ে খেয়ে নেবো। সারাদিন এত ফল খেয়েছি।"
     কৃষ্ণেন্দু বকতে গিয়েও চুপ করে গেলেন,আজ একাদশী। ডায়েটের অজুহাতে মেয়েটা এই দুটোদিন মাসে ভাত খায়না। বকুনি দিয়েও লাভ হয়নি,অদ্ভুত সংস্কার।
                 " আর হ‍্যাঁ বাপি তুমি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো,কাল সকালে উঠতে হবে তো।"
           ভোরবেলা তৃষার ডাকে ঘুম ভাঙে কৃষ্ণেন্দুর,সামনেই পুজো। এখন আলো ফুটতে একটু দেরি হয়। সামনের গাছটায় শিউলি ফুটেছে টুপটাপ করে ঝরে পড়ে মাটিতে। একটু বাদেই তৃষা গোলাপী স্থলপদ্ম তুলে সাজি ভরে ঠাকুর ঘরে এনে রাখবে।ছেলেটা অনেকদিনই সকালে উঠে মায়ের টুক করে একটা ছবি তুলে বলতো,"আমার জ‍্যান্ত দুর্গা,দাও দাও এই ফুলটা আমার দুর্গাকে দেবো,একটা পোজ দাও তো দেখি।"
"কি যে করিস না মহা পাজি ছেলে একটা!আমাকে আবার ফুল তুলতে হবে।ঠাকুরের জন‍্য তোলা ফুল মানুষকে কেউ দেয়?"
     "আমি দিই,কারণ তোমার ঐ দুর্গা আমাকে মোচাচিংড়ি,কচুর লতি,শাপলার বড়া করে খাওয়ায়না। শুধু সাজুগুজু করে অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।"
   "ছিঃ বাবু,উনি সাক্ষাৎ মা অন্নপূর্ণা। উনি আছেন বলেই তো জগৎ সংসার চলছে।"
        প্রতিদিন ছেলে বাইরে যাবার সময় দুর্গা দুর্গা করে হাত কপালে ঠেকালেও কেন যে ছেলেটা সেদিন ফিরলোনা কে জানে!
                      "বাপি,আমি কিন্তু রেডি তোমার হলো?আর মামণিকেও তো নিতে পারতে সাথে একটু ঘুরে আসতো।"
  একটু হেসে কৃষ্ণেন্দু বলেন,"থাক ছেড়ে দে ওর এখন অনেক কাজ। তারপর বেশি হাঁটলে বলবে আবার পায়ে লাগছে।"
           ওরা মাঠের কাছে এসেই শুনতে পায় .."গুডমর্ণিং প্রফেসর, আজকাল তো আর দেখাই যায়না। সাথে আবার কে?"
     "হ‍্যাঁ সবটাই অনেকদিন অনিয়মে চলে গিয়েছিলো। আবার শুরু করছি।"
কৃষ্ণেন্দু কিছু বলার আগেই পরম শুভাকাঙ্ক্ষী ভদ্রলোক বলে ফেলেন,"ও এতো আমাদের বৌমা,আসলে অনেকদিন বাদে দেখলাম তো। আগে শাড়ি পরা দেখেছি তাই চিনতে পারিনি। তা বেশ বেশ।"
       ওনার কথার জবাব না দিয়েই কৃষ্ণেন্দু এগিয়ে যান,ঐ তো মোটর ট্রেনিং সেন্টারের ছেলেটি আসছে গাড়ি নিয়ে। ওদের দুজনকে গাড়িতে উঠে বসতে অনেকেই কৌতূহল ভরে দেখলো..কাকু জেঠুদের চায়ের আড্ডায় আওয়াজ উঠলো..আরে আগে বিধবাদের কত নিয়ম ছিলো,আমার পিসিমাকে দেখেছি তো ঐ এক থান শাড়ি তারপর পুজো আচ্চা নিয়ে থাকতো। কালে কালে কত দেখবো,শ্বশুর বিধবা বৌমাকে নিয়ে গাড়ি শেখাতে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তাই ভাবি সকালে উঠে গেঞ্জি প‍্যান্ট পরে কোথায় যাচ্ছে?
      আরে আমি তো চিনতেই পারিনি প্রথমে,আসলে আগে তো এই পোশাকে দেখিনি। আরে বাবা ঘোমটার তলায় যে খ‍্যামটা নাচ ছিলোই,তাই স্বামী মরতেই সব সামনে এসেছে।
                  হাসি আর টিকাটিপ্পুনিতে আজ সকালে মর্ণিং ওয়াকের আসরে চায়ের সাথে টা টা ভালোই জমলো।
         আবার সবাই সচেতন হয়ে উঠলো বৌমা আর শ্বশুর ফিরছে। অনেকেই বেশ জরিপ করে দেখলো মৌলির শরীরটা,বিধবা হওয়ার পর যেন আরো খোলতাই হয়েছে।যতই সমালোচনা করা হোক এই সুযোগটা বোধহয় কেউই ছাড়তে চাননা।
             তৃষা আপত্তি করেছিলো.."শেষে বৌমাকেও তুমি ড্রাইভিং শেখাবে পণ করেছো। ছেলেটা তো এই করেই।"
" আচ্ছা,আ্যক্সিডেন্ট তো কতই হয়। হাঁটতে গিয়ে পা ভাঙে তাই বলে হাঁটাই ছেড়ে দেবে। নাকি জীবনে মরতে হবে বলে বাঁচাই ছেড়ে দেবে।"
   চিরকালই একটু অন‍্যরকম কথা বলেন কৃষ্ণেন্দু তৃষা জানে তাই বলে লাভ হয়না। নিজে পছন্দ করে কাকার কাছে মানুষ হওয়া অনাথ ছাত্রীকে বৌমা করে এনেছিলেন। শুধু ছেলেটার জন‍্যই ওর চাকরি করা হয়নি,মায়ের আর বৌয়ের আদর খেয়ে এভাবে যে..নাহ্ আর ভাবতে পারেননা।
           " আমি কথা বলে রেখেছি,ড্রাইভিংটা এরপর বিকেলে থাকবে সকালে যেমন সুইমিংয়ে যাচ্ছিলে যাবে।"
          সেদিন সুইমিং ক্লাবে পাড়ার আভা বৌদির সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিলো..একটা বাঁকা হাসি হেসে বলেছিলো," আগেই তোমায় তাকিয়ে দেখতাম,মাঝে মাঝে আমার কর্তাও দেখতো।সুমন্ত চলে যাবার এই কয়েকমাসে যা সুন্দরী হয়ে গেছো,এখন তো সবাই দেখে তোমায়।"
      কিছুক্ষণ সময় লেগেছিলো বুঝতে মৌলির কথাটা নিন্দা,প্রশংসা না ব‍্যাঙ্গ?
তবুও কিছু করার নেই ওর,অনেক বকুনি খেয়েছিলো শ্বশুরের কাছে," বাঁচতে হবেনা?তাহলে তো সহমরণে গেলেই হত। বৃথাই রামমোহন এত পরিশ্রম আর কষ্ট সহ‍্য করে সতীদাহ বন্ধ করেছিলেন। এবার ওঠো,এই সংসারের হাল তো তোমাকেই ধরতে হবে। নিজেকে তৈরি করো। অনেক ছোটাছুটি আছে।"
স‍্যার থেকে বাপি বলতে অনেকটা সময় লেগেছিলো মৌলির। জানে না বলে লাভ হবেনা তাই মেনে নেওয়াই ভালো। সুমন্তর অফিসের চাকরিটা হয়ত কিছুদিনের মধ‍্যে ওর হয়ে যাবে তাই বাপি পরপর সব ট্রেনিংগুলোই করিয়ে নিতে চান। বেশ কষ্ট হলেও মৌলি মনের কষ্ট ভোলার জন‍্য নিজেকে ব‍্যস্ত রাখে সারাদিন..এমন শ্বশুর কজন পায়?তাই প্রথমে একটু সঙ্কোচ হলেও আজকাল ড্রেসকোডটাও বদলে নিয়েছে প্রয়োজনে।
                   সামনের মাঠের প‍্যান্ডেলে কাপড় জড়ানো হচ্ছে,মাঝে আর দশদিন। গতবছরও মেয়েটা আর ছেলেটা কত আনন্দ করেছে। সিঁদুর খেলেছেন দুই শাশুড়ি বৌমা আনন্দে,আর কত ছবি তুলেছে ঐ ছেলে। সময় পেলেই ক‍্যামেরা নিয়ে রেডি হয়ে বলতো,"মনের আনন্দে ছবি তোলো,কবে কে ছবি হয়ে যাবে তার ঠিক আছে?"দেওয়ালে হাসিমাখা মুখটা এখনো যেন দুষ্টুমিতে ভরপুর।
                           বারান্দায় বসেই কটা দিন এবার কেটে যাবে ওদের,বাচ্চা মেয়েটার সামনে দিয়ে কিছুতেই মাকে বরণ করতে যেতে পারবেননা।
মেয়েটারও খুব পরিশ্রম যাচ্ছে,চাকরির জন‍্য অনেক কিছুই শিখতে হচ্ছে। পুজোর জন‍্য ফিরতে বেশ অনেকটা রাত হয়ে যাচ্ছে জ‍্যামে আটকে।
           "কি গো ফোন করেছিলে?"
"হ‍্যাঁ করেছিলাম তো একবার,বললো চিন্তা না করতে রওনা দিয়েছে এসে যাবে।"
           আজ সত‍্যিই কেন যেন অস্থির লাগে তৃষার,কই এত দেরি তো করেনা কখনো। তৃষার তাড়ায় আবার ফোন করেন কৃষ্ণেন্দু,এবার বলছে নট রিচেবল অর আইদার সুইচড্ অফ। দেখতে দেখতে প্রায় সাড়ে এগারোটা পেরিয়ে ঘড়ি বারোটার দিকে। ফোনটা একই কথা বলে যাচ্ছে। স্পোকেন ইংলিশের ক্লাশ করে,সেল্ফ ডিফেন্সের ট্রেনিং নিয়ে তারপর ফেরে মেয়েটা। সত‍্যিই তো কি আর বয়েস মাত্র সাতাশ বছর। চাকরি চাকরি করে একটু বেশিই বোধহয় চাপ পড়েছে মেয়েটার ওপর। জিজ্ঞেস করেছিলেন কৃষ্ণেন্দু,"তোমার অসুবিধা হচ্ছেনা তো?"
" না বাপি ঠিক আছে,আর তো কয়েকটা মাস।কাজের মধ‍্যে ভালো থাকি।"
   তাহলে কি কোন বিপদে...
না না কিছু হবেনা সব ঠিক হবে।
বারান্দায় ওদের দেখে সামনের ফ্ল্যাট থেকে কথা ভেসে আসে.." মাসিমা ঘুমোননি এখনো?মৌলি বোধহয় এখনো ফেরেনি না?"
     ...." ফোন করেছিলাম ফিরবে একটু বাদেই।"
ঘরে এসে বরের কাছে বলে উল্টোদিকের ফ্ল্যাটের রুনা," জানি তো এমনই হবে,এরপর পাড়াতে থাকাই দায় হবে। কি করছে কে জানে?এইসব নষ্ট মেয়েমানুষের জন‍্য পাড়াতে থাকাই দায়।"
          "কে নষ্ট হলো,তোমার এত কষ্ট কেন রুনা?ছাড়ো তো ঘুমাও এবার,তোমরা মেয়েরা পারোও। এই তো আগে কত ভালো বলতে ওকে আমাদের ছেলেকে কত আদর করে,ক‍্যাডবেরি দেয়।"
" ছাড়ো তো,আমি আর বাবাইকে কথাই বলতে দিইনা। নষ্টা চরিত্রহীন মেয়েমানুষ।"
                 রাত বাড়ছে,শহরের একাকীত্ব গ্ৰাস করছে ঘরবন্দী দুই অসহায় মা বাবাকে। "কাকে ফোন করি বলতো?আমার ছাত্র সুবিমল আছে পুলিশে। ফোননম্বর দিয়েছিলো অনেক আগে। ওকে একবার দেখবো?কিন্তু এত রাতে!"
                ফোন করার আগেই বাইরে জিপের আওয়াজ পায়,জানলার পরদাটা সরাতেই নজরে পরে পুলিশ। ভয়ে তৃষার বুকটা কেঁপে ওঠে,মনে পড়ে যায় আরেকটা অভিশপ্ত রাতের কথা।
  বেল বাজে,দরজা খোলেন কৃষ্ণেন্দু।  উল্টোদিকের বাড়ির জানলাটাও খুলে যায়।
   " আচ্ছা আপনি কি মৌলি সেনের শ্বশুরমশাই?"
"হ‍্যাঁ আমি,কিন্তু ও কোথায়?ও ঠিক আছে তো?"
"আপনাকে একটু হসপিটালে যেতে হবে,উনি আসলে বারবারই বলছিলেন।"
      তৃষাকে সঙ্গে নিয়েই কৃষ্ণেন্দু বেড়িয়ে যান ওদের সাথে। গাড়িতে বসেই সুবিমলের কথা বলেন ওদের। ফোনে কথাও হয় ওর সাথে।
         " শোনো ও বাড়িতে তালা দিয়ে ওরা দুজনেই তো চলে গেলেন। মনে হচ্ছে রেপ টেপ কিছু হয়েছে। হসপিটালে যেতে হবে কেন মাঝ রাতে শুনি। দুদিন বাদেই তো ষষ্ঠী পুজো শুরু,এইরকম একটা বিধবা রেপড্ মেয়ে পাড়াতে। আমি তো ভাবতেই পারছিনা।"
           " ওহ্! সারাদিন পর শান্তিতে ঘুমোতেও দেবেনা। যেমন আমার বৌ,তেমন হয়েছে এই পাড়া।"
                     হসপিটালে পৌঁছেই ব‍্যস্ত হয়ে পা বাড়ান কৃষ্ণেন্দু আর তৃষা। গাড়িতেই সবটা শুনেছেন। মেয়েটা ঘুমোচ্ছে,মাথার ব‍্যান্ডেজে তখনো রক্তের ছাপ। পরম যত্নে মাথায় হাত রাখেন কৃষ্ণেন্দু। "বাপি,মামণি তোমরা আবার...জড়ানো গলায় বলে মৌলি।
  তুমি ঘুমোও আছি আমরা।
                      পরের দিন সকালে উঠেই রুনা উল্টোদিকের বন্ধ দরজাটা দেখে বুঝেছিলো যা সন্দেহ করেছিলো তাই হয়েছে,লজ্জায় মুখ লুকিয়েছে শ্বশুর শাশুড়ি ধর্ষিতা বৌমাকে নিয়ে।
        খবরের কাগজটা ফেলে দিয়ে যায় ছেলেটা খুলতেই চোখটা আটকে যায় প্রথম পাতায়..মুখটা বড্ড চেনা,ওর বহু সমালোচনার নষ্ট মৌলির।
■■এক অন‍্য দুর্গা■■
   রাতের কলকাতায় কোচিং ফেরত নিগৃহীতা কিশোরীকে নিজের প্রাণসংশয় করেও উদ্ধার করলেন কয়েকজন দুষ্কৃতীদের সাথে লড়াই করে এক গৃহবধূ । আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন হসপিটালে বছর সাতাশের গৃহবধূ মৌলি সেন। কখনো কখনো মেয়েরাই যে মেয়েদের ত্রাণকর্তা হতে পারে তা সত‍্যিই দেখালেন উনি।
                     আজ ষষ্ঠী,দেবীর বোধন..প‍্যান্ডেলে দেবী দুর্গার মুখটা বড় সুন্দর। পুরোহিত মশায় মন্ত্র পড়ছেন। কৃষ্ণেন্দু গাড়ির দরজাটা খুলে দাঁড়ান," এসো মা.." তিনদিন পরে আবার নিজের বাড়িতে পা রাখে মৌলি।
            আজ সত‍্যিই গর্ব হয় নিজের কন‍্যাসম এই অভাগা পুত্রবধূর দিকে তাকিয়ে কৃষ্ণেন্দুর। ভারত সরকারের গোয়েন্দাবিভাগে চাকরি করত সুমন্ত তার মত করেই গড়তে চেয়েছিলেন মৌলিকে এই কয়েক মাসে।বলেছিলেন যোগ‍্য হয়েই চাকরিতে ঢুকবে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর মশায়কে তখনকার দিনে স্ত্রীজাতির আর বিধবাদের দুঃখ ছুঁয়েছিলো। সত‍্যিই তারা বড় অভাগা হয়ত এখনো,দেওয়ার অঙ্কে পাওয়ার হিসেবটা বড়ই ফেলনা হয়ে যায় সময়ে।
       "শুনছো,কোথায় গেলে তুমি?"
গাড়ির আওয়াজ আর কৃষ্ণেন্দুর হাঁকডাকে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় রুনাও।
       ঐ বাড়িতে তখন শঙ্খ বাজছে,উলু দিতে দিতে বরণডালা নিয়ে বাইরে আসেন তৃষা,তার হাতের পেতলের থালাতে থরে থরে সাজানো স্থলপদ্ম আর সিঁড়িতে বিছোনো শিউলি.." আয় মা,সাবধানে আয়।"
                        মহাষষ্ঠীর সকালে কৃষ্ণেন্দু তৃষার ঘরে পা রাখলো এক অন‍্য দুর্গা যে দ্বিভুজেও দশভুজা হওয়ার ক্ষমতা রাখে। পুজোমন্ডপ থেকে ভেসে আসছে...যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃ রূপেন সংস্থিতা নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নম:
                 আজ খুব ছেলের কথা মনে পড়ছে তৃষার,থাকলে কি কান্ডটাই না করতো।
সমাপ্ত:-
                     
           

               

        
                 
                      .............
                          
                    
                     

                       

                

                     

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...