Skip to main content

মহালয়ায় ভেজে মন

#মহালয়ায়_ভেজে_মন#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

পুজোর আগে দিয়ে ভোরবেলাটা বড় জাদুমাখা হয়,খুব ছোটবেলা থেকেই ঘুম ভেঙে যেত শিউলির গন্ধমাখা ভোরগুলোতে। রাত্রিবেলা ঘুমোতে যাওয়ার আগেই ওরা এসে কানে কানে বলে যেত মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে,'তুই এখন ঘুমিয়ে পড় গন্ধ ছড়িয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিই।'জানলা দিয়ে ভেসে আসা গন্ধ চোখে মেখে কখন যে ঘুম আসত বুঝতেই পারতামনা। ভোরে গায়ে একটু হাল্কা ঠান্ডা লাগত,মা ডেকে দিত'ওঠ,এই নে সাজিটা.. সাদা হয়ে আছে শিউলিতলা। দেখিস ফুলে পা দিসনা যেন। আবছা ঘুমের চাদর জড়ানো চোখে পা রাখতাম উঠোনে,সাবধানে বসে একটা একটা করে ফুলে ভরতাম সাজি। ততক্ষণে সূর্যও আলতো ছোঁয়া দিয়ে যেত গালে,ভর্তি সাজি থেকে হাল্কা গন্ধের পরশ ছুঁয়ে যেত। আজও চোখ বুজলে পাই সে গন্ধ। বাবা ততক্ষণে মর্ণিং ওয়াক সেরে কচুপাতায় করে আরও কিছু ফুল নিয়ে হাত ভর্তি করে ফিরত। স্নান সেরে মা ফুল সাজিয়ে দিতো ঠাকুরের সামনে,কখনো আব্দার করে গাঁথতাম মালা। প্রকৃতির ফুল পাতারা চুপিচুপি এসে বলে যেত মা আসছে। মহালয়ার আগের দিন থেকেই শুরু হয়ে যেত তোড়জোড়,ব‍্যাটারিটা আবার পাল্টানো হোক,বেশ জোরে আওয়াজটা চাই কিন্তু,আসেপাশের বাড়ি থেকেও যাতে শোনা যায়। সারারাত মায়ের ঘুম হতনা ভালো করে,মা বলত অমাবস‍্যার রাতে নাকি চুরি ডাকাতিও হয়,চুপ করে মায়ের কোল ঘেষে শুয়ে থাকতাম। মা মাঝে মাঝেই টর্চ জ্বালিয়ে সময় দেখতো কটা বাজে। ভোরে আধো ঘুম জড়ানো চোখ খুলতাম মায়ের ডাকে। অদ্ভুত সুন্দ‍র এক অনুভূতি,কেন জানিনা এখন তেমন হয়না কেন,কিছুটা বুঝতাম,কিছু বুঝতামনা কখনো বা আবার চোখ বুজে আসতো। মা ডেকে দিতো এই ঘুমোবিনা,মহালয়া তখন শেষের দিকে গান হচ্ছে নম চন্ডী নম চন্ডী। কান্না জড়ানো গলায় মন্ত্রপাঠ শুনতাম জাগো মা জাগো। সত‍্যিই বোধহয় জেগে উঠতেন মা দুর্গা তাই নিজের দুচোখ মেলে দেখতাম মায়ের স্নেহমাখা মুখ আর মানসচক্ষে দেবী দুর্গাকে। সব যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত। মনে হত কি আনন্দ আর কি আনন্দ ঐতো মায়ের চক্ষুদান হবে,আর হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা দিন,মন প্রাণ জুড়ে শুধুই তখন পুজোর গন্ধ। বার বার করে আলমারি থেকে পুজোর জামাটা বার করে দেখা আর গন্ধটা শুকে রেখে দেওয়া। পাশের বাড়ির কাকিমারা এলেই আবার আলমারি খুলে দেখানো মায়ের শাড়ি,বাবার জামা আর আমার জামা। ছিলোনা তেমন বেশি শুধুই ছিল খুশি। সবুজ শিউলিগাছ আর টগরফুলের গাছ ছেড়ে চলে এসেছিলাম বিয়ের পর ইটকাঠের শহরে। আচ্ছা শহরের মানুষেরা কি প্রাণহীন হয়ে যায় একটু একটু করে যেমন আমি হয়েছি। একটু আকাশ খুঁজি,শিউলিফুলের গন্ধের জন‍্য মনটা আকুল হয়ে ওঠে তাই ভোর সাড়ে চারটেয় যখন উঠি জানলা খুলে মুখটা বাড়িয়ে প্রকৃতির ঠান্ডা বাতাস লাগাই মুখে চোখে। বাসে করে যেতে যেতে জানালায় থাকে এক পিপাসু মুখ যার চোখদুটো একটু ভিজতে চায় সবুজের ছোঁয়ায়। মহালয়ার কত রূপ দেখলাম এই কতগুলো বছরে,বিয়ের পর শ্বশুরমশাই আর স্বামীর সাথে শুনেছি মহালয়া। ভোরে দরজা জানলাগুলো খুলে দিতাম,মাখতাম ভোরের শহুরে গন্ধ। মা হলাম,ছেলেকে ডেকে দিতাম,'বাবা ওঠ মহালয়া শুনবিনা?'ওকে কাছে নিয়ে শুনতাম মহালয়া। আজও ডাকি ওদের,ছেলেটা এসে পাশে বসে শোনে মহালয়া। আমার মায়ের সাথে কথা বলতাম ভোরে,'মা শুনছো তো?বাবা উঠেছে গো?'বাবা পাশ থেকে বলত,'কখন উঠে পড়েছি।'..ছোঁয়া পেতাম মা দুর্গার। দিন গেলো,বাবা যেন কোথায় হারিয়ে গেলো, আর কেউ বলতোনা এই তো উঠে পরেছি। মা বলত আর ভালো লাগেনারে কিছু। এ বছর এক অন‍্য মহালয়া,মা দুর্গা আসছেন দশদিক আলো করে তবুও মনটা ভালো নেই মা যে আমার আর নেই।
মৃণ্ময়ী মায়ের মাঝে প্রতিনিয়ত খোঁজা চিণ্ময়ী মাকে। দুচোখ ভরে দেখবো তাকে আর বলবো,আগলে রেখো মা,আদরে রেখো তোমার সন্তানদের।
সমাপ্ত:-

        


Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...