#স্বপ্ন_বাসর#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
আই লাইনার দিয়ে চোখগুলো যেন আরো সুন্দর হয়েছে মেয়েটার,একদম নেশা নেশা।"মে আই হেল্প ইউ স্যার".বলতেই একগাল হাসি আর গালের ডিম্পলে মনটা একটু যেন কোথায় হারিয়ে গেলো ইয়ঙ্গ বিজনেস ম্যান মানে সম্রাট বসুর একমাত্র ছেলে সৌজন্যর। কিছুদিন আগেই বাইরে থেকে এম বি এ করে দেশে ফিরেছে। এর আগেও দু একবার এসেছে বিজনেস ট্যুরে তবে তখন সাথে বাবা ছিলো। এবার একটা বড় আ্যসাইনমেন্ট নিয়ে একাই আসা। হঠাৎই লকটা আটকে গেছে রুমের তাই একটু অস্বস্তি হচ্ছিলো।
সুন্দরী মেয়েটার সামনে কেমন যেন একটু বোকা বোকা লাগে হঠাৎই তাই কার্ডটা ওকে দেয়। মিস্টি হেসে একটু চাপ দিয়েই দরজাটা খুলে "থ্যাঙ্কস" বলে বিদায় নিতে যায়। ধন্যবাদ না দিয়ে পারেনা সৌজন্যও তবে ফিদা হয়ে যায় আবার সেই হাসিতে।
মেয়েটা পেছন ফিরতেই হঠাৎই বলে ওঠে.." এক্সকিউজ মি।"
মিষ্টি হেসে আবার ফিরে তাকায় মেয়েটা। " সৌজন্য বসু ফ্রম ক্যালকাটা। ইউ?"
ও বলার আগেই ওর ইউনিফর্মের নামে চোখ পড়ে যায় মিম রয়।
খেয়াল করে মেয়েটাও তাই আবার হাসিমাখা ধন্যবাদ জানিয়ে চলে যায়। মিম সবেই হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করে জয়েন করেছে মুম্বাইয়ের পাঁচতারা হোটেলে যদিও এর আগেও একবার আইটিতে এখানে কাজ করে গেছে তবুও সাবধানে থাকতে হয় একদম নতুন চাকরি কোন ভুল যেন না হয়। কাজ করতে করতে এরকম অনেক বোর্ডারকেই দেখে,সাহায্যও করতে হয় কিন্তু এইভাবে আলাপ কখনোই নয়। চারদিকেই সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।
সৌজন্য বুঝতে পারে সবটাই তবুও বারবার মন হারায় গভীর কালো চোখে আর গোলাপী গালে।
আ্যসাইনমেন্ট শেষ হতে আরো দুদিন লেগে যায়। এরমধ্যে একদিন একটু দূর থেকে দেখেছে একবার,এত বড় হোটেলে কোথায় ডিউটি করছে তা তো জানা নেই। আর রহস্যময়ী তো হাসি ছাড়া আর কোন রহস্য ভেদ করলোই না। এরা কি ইয়েস নো আর প্লিজ বলা পুতুল হয়ে যায় কে জানে? কিন্তু ওর তো একদম লাভ আ্যট ফার্স্ট সাইট হয়ে গেছে উফফফ্ কি যে করে?
হঠাৎই সুযোগ হয়ে গিয়েছিলো ফেরার আগের আগের দিন। ডিউটি সেরে ফিরছিলো মিম,সৌজন্য একটু গায়ে পড়া হয়েই আবার কথা বলেছিলো। প্রথমটা কি বলবে বুঝতে পারেনি তারপর একটু একটু করে আলাপ হয়ে গিয়েছিলো অনেকটাই। মন হারিয়ে ফেলেছিলো সৌজন্য বসু মুম্বাইয়ের হোটেলের এক সামান্য না না সামান্য কেন অসামান্য সুন্দরীর কাছে যে স্মার্ট, সুন্দরী আর অনর্গল চারটে ভাষা বলতে পারে। তবে শুনলো হাউসকিপিংয়ে আছে এখন কিন্তু খুব ভালোবেসেই এই পেশাতে এসেছে।
" আচ্ছা,তুমি আরো অন্য কিছু পড়তে পারতে তো?"
"কেন আমি তো পড়াশোনা করেই এসেছি,আরো অনেক কিছু শিখে এসেছি। আই লাভ মাই প্রফেশন।" বাংলাটা একটু কাটা কাটা বলে মিম। খুব মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাড়িতে আরো দুটো ছোট ভাইবোন আছে। বাবা একটা চাকরি করেন তবে আর খুব বেশিদিন চাকরি নেই তাই অনেকটা দায়িত্ব ওর কাঁধে।
সে যা হোক হোক আপাতত প্রেমে ভেসে গেলো সৌজন্য,ভালো লাগলো মিমেরও। এ যেন সিনেমার মত,রাজপুত্র এলো দেখলো আর জয় করে নিলো মন। সৌজন্যর যাওয়া পিছোলো আরো দুদিন। বাড়ি থেকে মা ফোন করলো," কি রে তোর বাপি তো বললো দারুণ কাজ করেছিস।তাহলে আবার ফিরতে দেরি করছিস কেন? তোকে মিস্ করছি সোনা।"
আপাততঃ মাকে একটু যেমন তেমন করেই বোঝালো। হাসলো মিম," মাকে হাইড করতে নেই বলে দিলেই তো পারতেন একটু আউটিং করে যাবেন।"
মিমের হাতটা ধরে সৌজন্য," এই যে মিস্ মিম রয় এই আপনি কতদিন চলবে?"
" আসলে প্র্যাকটিস হয়ে গেছে,আসবে একটু সময় লাগবে।"
সৌজন্য কলকাতা ফিরে গেলেও মনটা পড়ে রইলো মুম্বাইয়ে।
গত নয় মাসে আরো দুবার ঘুরে গেছে মুম্বাই থেকে। মিমের সাথে ওদের বাড়িতেও ঘুরে গেছে। খুবই সাজানো গোছানো একদম সুন্দর ছোট ফ্ল্যাট ওদের। মা বাবাও খুব ভদ্র। তবে মিম কিছু রান্না করে।আচ্ছা ওর কি দশটা হাত আছে? মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় সৌজন্যর উফফফ্ কি ভালো কেক,প্যাটিস,কুকিজ আইসক্রিম সব বানায়। ওদের বাড়িতে খেতে বসে মনে হলো কোন বড় রেস্তোরাঁয় বসে ক্যান্ডেললাইট ডিনার করছে।কাঁটা চামচ প্লেট থেকে টেবিল সাজানো রান্না সবই পরিপাটি মানে একদম স্টার্টার থেকে ডেজার্ট পর্যন্ত পারফেক্ট ডিনার।
সৌজন্যর যাওয়ার দিন মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল মিমেরও।একটা বাক্স করে ওর বানানো কেক কুকিজ দিয়ে দিয়েছিলো সাথে বলেছিলো," মাকে দিয়ো,বোনকে দিয়ো। আর বাবাকে উইদাউট সুগারটা দিয়ো।"
" আর আমারটা কি হলো?আমি কিছু পাবোনা?"
সৌজন্যর আব্দারে মিমের ঠোঁট ছুঁয়েছিলো সৌজন্যকে আবেগে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছিলো উষ্ণতায়। "আর বেশিদিন নয় এবার কেক কুকিজ খাইয়েই মাকে গুড নিউজটা দেবো যে তোমার ছেলের মনে একদম জায়গা করে নিয়েছে মুম্বাইয়ের এক পরী যাকে এনে না দিলে আমি মুম্বাইয়ে থেকে যাবো এরপর।"
" তাতো তোমাকে থাকতেই হবে।" আবার সেই হাসিটা..একদম ফিদা হয়ে গিয়েছিলো সৌজন্য হেসে বলেছিলো,"কেন,মুম্বাইয়ের রানীকে আমি একদম ফ্লাইটে করে উড়িয়ে কলকাতায় নিয়ে যাবো। আর এই টাইট হাগে একদম বুকের কাছে জড়িয়ে রাখবো।"
" তা তো থাকবো,বাট আমার জব কি হবে? তাইতো আমি এখানেই থাকবো।"
"ওকে,তাই হবে" বলে হাতটা দিয়ে আবার ওকে ছুঁয়ে সৌজন্য এয়ারপোর্টের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলো।
বাড়িতে গিয়ে পুরো কুকিজে ঠাসা কনটেইনার মায়ের হাতে দিয়ে বলেছিলো," খেয়ে দেখো,কেমন হয়েছে বলবে কিন্তু। এখনই খাও একটা।"
" তুই এনেছিস ভালো তো হবেই। আচ্ছা বাবা সবাইকে দিয়ে তবে তো খাবো।"
"আমি তো এনেছি তবে তোমাদের জন্য খুব যত্নে বানিয়ে দিয়েছে একজন। তাকে ফিডব্যাক দেবো তো।"
সবার প্রশংসার মধ্যে সৌজন্য সবটাই বলে ফেলে। বোন তো সঙ্গে সঙ্গে দেখে ছবিটা। " ও মা এতো একদম হিরোইন গো।"
"তাই তো বলি আমার দাভাইয়া বিদেশ থেকে ঘুরে এসেও দেশে কাকে দেখে এমন লাট্টু হলো। বল নারে কি নাম?কোথায় থাকে?কি করে?"
" ওরে বাবা থাম এবার,দাঁড়া বলছি।"
যত আনন্দ নিয়ে বলতে শুরু করেছিলো সৌজন্য সেটা আর শেষে থাকলোনা।
" আচ্ছা ইউ হ্যাভ নো চয়েস বেটা? শেষে হোটেলে কাজ করা একটা মেয়ে বসু বাড়ির বৌ হবে? আমাদের একটা তো স্ট্যাটাস আছে নাকি?হোটেলের বোর্ডারদের বিছানা তোলে,চাদর পাতে।ইশ্ আমি তো ভাবতেই পারছিনা,ঘর পরিস্কার লন্ড্রী সবই তো করে। ওহ্ গড! আমি কি বলবো সবাইকে?
না না তুই অন্য কিছু ভাব,তোর বাবা জানতে পারলে খুব রাগ করবে।"
অদ্ভুত একটা মন খারাপ হয় সৌজন্যর, ফোনের স্ক্রীনে তখন মিমের ছবিটা ভাসছে ওর ফোন এসেছে হয়ত জানতে চাইছে ওর বানানো খাবার খেয়ে সবাই কি বললো। মায়ের সামনে কথা বলতে ইচ্ছে করলোনা।
ঘরে এসে ফোন করে মিমকে বলে সবাই খুশি হয়েছে প্রশংসা করেছে। এইটুকু বলেই বলে,"আচ্ছা মিম..আফটার ম্যারেজ তো আমরা একসাথে থাকবো। তুমি তখন না হয় কলকাতার কোন হোটেলে জব কোরো বা আমাদের ফার্মেও করতে পারো।"
কেমন যেন অদ্ভুত লাগে মিমের.." কেন?আমি ফার্ম জয়েন করবো কেন? এটা তো খুব ভালো হোটেল এখানে অনেকে চান্সই পায়না। আচ্ছা পরে কথা বলবো আমরা।" ফোনটা কেটে দেয় মিম।
রাতে খাবার টেবিলে ছোটখাটো একটা ঝড় উঠলো মিমের ব্যাপারে। "ম্যাট্রিমনিতে দেবো,অনেক আগেই বলেছি।তুমি রাজি হওনি,বললে আরো কিছুদিন এনজয় করতে চাও,ঘুরবে বেড়াবে সিঙ্গল হয়ে। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার প্রফেসর কত আছে।এছাড়াও সান্যাল তো অনেকদিন বলে রেখেছে,মেয়েটিও ভালো কনভেন্ট এডুকেটেড স্মার্ট। আমার তো বেশ লাগে।"
"মিমও খুব স্মার্ট, হিন্দি, ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ,বাংলা সব বলতে পারে। বি এস সি করেছে,মাস্টার্সও করেছে হোটেল ম্যানেজমেন্টে। দরকার হলে পরে টিচিংয়েও যেতে পারবে।"
" ছাড়ো তো,কত মাইনে পায় আর ওখানে? ভাবতেই পারছিনা আমি।জাস্ট একটা লন্ড্রী গার্ল!"
কত মাইনে পায় কথাটা হাতুড়ির মত বারবার আঘাত করে সৌজন্যর মাথায়,মিম নিজেই তো বলেছে প্রথম ঢুকেছে মাইনে তেমন কিছু নয় তবে পরে বাড়বে। অনেক বলে বাপি মা কে রাজি করিয়েছে একবার মিমকে দেখতে যেতে।আর ওখানেই কথা হয়ে যাবে,মিমকে বুঝিয়ে বললে নিশ্চয় বুঝবে।
খুশিতে নিজেদের ছোট ফ্ল্যাটটাকে কয়েকদিন ধরে যত্ন করে একদম পরিস্কার করে ফেলেছে ওরা। প্রায় দুদিন আগে থেকেই সব খাবারের জোগাড় চলছে।
সম্রাট বসুর আর আরতির কেমন যেন দমবন্ধ লাগে মিমদের ছোট্ট ফ্ল্যাটে। উফফ্ কোন লন নেই,বাড়িতে সেই মান্ধাতা আমলের সোফা আর ফার্ণিচার। ছেলেটা যে কি করলো! এই মেয়েগুলো বোধহয় ভালো ছেলে ধরার জন্যই হোটেলে ঢোকে।মিম আজ একটু অন্য সাজে কলাপাতা সবুজ শাড়িতে সোনালী পাড়,কপালে ছোট্ট টিপ কানে ছোট্ট ঝুমকোতে খুব সুন্দর লাগছে ওকে।মনে মনে ভাবে আরতি রূপ দেখেই ছেলের মাথা ঘুরে গেছে। থাক ঝামেলা করে কাজ নেই তবে বসু বাড়িতে বৌ হতে চাইলে আগে হোটেলের চাকরি ছাড়তে হবে।
খুব সুন্দর দক্ষতায় সার্ভ করে খাওয়ালো ওদের মিম। সম্রাট বসু মনে মনে তারিফ না করে পারলেননা,তবুও সন্দেহ হলো হয়ত কিছু খাবার হোটেল থেকেই এনেছে।
পরদিন হোটেলেই ডেকে পাঠালেন মিমের বাবা মাকে। কাজের মাঝে আজ খুব অন্যমনস্ক মিম,কি বলছে মা বাবাকে ওরা কে জানে?
" ওদের অবস্থা আর আমাদের তো মেলেনা তবে ছেলের যখন পছন্দ আছে ওনারা বিয়ে দিতে চাইছেন। আমি কিন্তু এই পাত্র হাতছাড়া করতে পারবোনা। যত টাকা লাগে ব্যবস্থা করবো,এত ভালো ঘর।"
বাবাকে জিজ্ঞেস করে মিম জানলো,ওদের চাহিদার মধ্যে পঞ্চাশটা তত্ত্ব আর ফ্লাইটের ভাড়া বরযাত্রীদের একটু ভালো করে আদর আপ্যায়ন, তবে হোটেলেই করতে হবে সবটা।
" বাবা তুমি হ্যাঁ বললে?
"হ্যাঁ বললাম তো।"
"এত টাকা কোথায় পাবে?"
"হয়ে যাবে,তুই ভাবিসনা। এত ভালো ঘর আর বর। আর শোন ওরা তোকে কাল একটু ডেকেছে এক সাথে লাঞ্চ করতে চায়।"
লাঞ্চের টেবিলে বসে ওনারা যা বললেন তাতে গলাটা কেমন যেন শুকিয়ে এলো মিমের। প্রথমে আরতি শুরু করলেন," তোমাকে দেখতে ভালো,রান্নাবান্না ঘর গোছানো সবটাতেই কেউ দোষ ধরতে পারবেনা। আমার তো খুব আনন্দ হচ্ছে এরপর বাড়িতে পার্টি হলে আমাকে আর কিছু ভাবতে হবেনা। সত্যিই দারুণ রান্না তোমার।"
এত প্রশংসায় একটু লজ্জা লাগে মিমের,হেসে বলে থ্যাঙ্কস আন্টি। সৌজন্যও হাসছে তখন মিটিমিটি। এবার সম্রাট শুরু করেন,"সব ঠিক আছে..শুধু তুমি একটা আ্যপ্লিকেশন দিয়ে রেখো যে জবটা তুমি ছেড়ে দেবে। কারণ আমার বৌমা,লন্ড্রী করবে,বেড পাতবে ইমপসিবল। আর স্যালারিই বা কত? না না বসু বাড়িতে আসতে হলে চাকরি ছাড়তে হবে।"
আর নিতে পারেনি মিম হঠাৎই চিৎকার করে ওঠে "ইমপসিবল" তারপর সংযত হয়। " আমার পক্ষে বিয়েটা করা সম্ভব নয়,আই আ্যম এক্সট্রিমলি সরি। আপনারা আমাকে ইনসাল্ট করছেন। আমি ঘর বাঁধতে গিয়ে স্বপ্নকে ভাঙতে পারবোনা। আশ্চর্য লাগে সৌজন্যর,মিমকে এভাবে কথা বলতে ও কখনোই দেখেনি। ওর ভালোবাসার কোন দামই নেই,ওই কুড়ি হাজার টাকার চাকরিই সব! সৌজন্য মিমকে বোঝাতে যায় পারেনা।
" থ্যাঙ্কস্ ফর এভরিথিং, আর আমাকে বুঝিয়োনা ওনারা যা চান তুমি তেমন মেয়েকে বিয়ে কোরো। আমি এমনিতেই মাথা নিচু করেছি,আরো করলে নিজের সাথে চোখ মেলাতে পারবোনা।"
রাস্তায় এসে চোখটা চিকচিক করে মিমের,জানে বাবা বকবে মা কাঁদবে। বন্ধুরা খারাপ বলবে এমন একটা চান্স মিস্ করার জন্য।তবুও না কিছুতেই নিজের স্বপ্নের মৃত্যু দেখতে পারবেনা। সৌজন্যর ভালোবাসার থেকেও আত্মসম্মানটা বেশি দামি ওর কাছে।
মাঝে অনেকবার ফোন করেছে সৌজন্য একই কথা একটু আ্যডজাস্ট করো আমার জন্য। নাহ্ আ্যডজাস্ট করেনি মিম,ব্রেকআপ হয়ে গিয়েছিল ওদের। হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলেন সম্রাট,আরতি।একটা সময় রাগ হয়েছিলো সৌজন্যরও। একটু বোধহয় বেশিই সুপিরিয়র ভাবে নিজেকে মিম। দেখা যাবে কত সুখী হয় জীবনে।
বছর খানেক বাদে মিঃ সান্যালের মেয়ের সাথেই বিয়ে হয়ে যায় সৌজন্যর। ততদিনে হ্যাঙওভার কেটে গেছে ওর। মুম্বাইয়ের কাজগুলো বাবাই করছেন ওকে আর যেতে হয়নি এরমধ্যে। বিয়ের পর একবার গিয়েছিলো একটা কাজে,হঠাৎই ইচ্ছে করেছিলো হোটেলে খোঁজ করতে মিমের, তবে শুনেছিলো জব ছেড়ে দিয়েছে ওখানকার। সৌজন্য আর এষার হানিমুনটা মালদ্বীপে হলো। এষার পছন্দ তাই সবাই তাতেই মত দিয়েছে। এষা বড়লোকের আদুরে মেয়ে, মিমের মত সুন্দর হয়ত নয় তবে গোলগাল ফর্সা। সৌজন্যর ব্যাপারে খুবই পোজেসিভ। ওর আদরের আঁচড়ে মিমের ঠোঁটের ছোঁয়া একটু একটু করে ভুলে গেছে সৌজন্য একটা সময় করুণা হয়েছিলো মেয়েটার জন্য।জাস্ট মিডলক্লাস মেন্টালিটি, আত্মসম্মান,স্বপ্ন যত্তসব। হয়ত এখনো হানিমুন কাপলের ঘর সাজাচ্ছে বা বিছানা সাফাই করছে।
মাঝে কেটে গেছে পাঁচ বছর,ওর বোনেরও বিয়ে হয়ে গেছে। এবার সামারে ওরা সবাই মিলে সুইজারল্যান্ডে এসেছে। এই সময়টা ভীষণ ভালো আবহাওয়া এখানে। হোটেলের নরম বিছানায় শুয়ে এষা মাঝরাতে ওর কানের কাছে মুখটা রাখে আর ঠোঁটে ঠোঁট..মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্য ডে। এষাকে কাছে টেনে নেয় সৌজন্য কাল ওদের ফিফথ আ্যনিভার্সারি। এখনো ওদের মাঝে কেউ আসেনি। কিছুটা আদরে,কিছুটা অভ্যেসে কাটে কিছুটা সময়।
" দাদাভাই, আজ সব তুমি খাওয়াবে তাইনা বৌমনি?"
জুরিখের সবচেয়ে বড় রেস্তোরাঁয় ওরা এসেছে ডিনারে। চারিদিক ঝলমল করছে,ওদেরও মুখগুলো ঝলমলে। বোন তো কথা বলেই যাচ্ছে,ওরা অর্ডারের সাথে সাথে আ্যনিভার্সারির কথাও উল্লেখ করে। সবাই মিলে গল্প করছে,এষার মুখটাও খুশিতে ভাসছে।
" কি সুন্দর না এখানকার মেয়েগুলোকে দেখতে,আর তেমনি স্মার্ট। ইশ্ এত সুন্দর মেয়েগুলো সব কাজ করছে,মুখে হাসি লেগেই আছে।"..এষা বলতে থাকে ওর নিজের মত করে। সৌজন্যর মনটা তখন হয়ত ডুব দিয়েছে কোন অতীতে। অন্য কথায় যান আরতি,বেশ কিছুক্ষণ কাটলো গল্পে এর মধ্যে ওরা ড্রিংকস দিয়ে গেছে,নাচে মিউজিকে তখন চারপাশ জমজমাট। এর মাঝেই কেক আসে সাথে সারপ্রাইজ গিফ্ট আর অনেক ফুল। "মেনি মেনি,হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্য ডে,উইশ ইউ আ..."
বাকি কথাগুলো ভালো করে আর সৌজন্যর কানে যায়না চোখের সামনে তখন শুধুই ফেলে আসা এক অতীতের অনুস্মৃতি। মিম! হয়ত আচমকা দেখে চিনতে পারতোনা,তবুও ভোলে কি করে? চিনতে পেরেছে মিমও তবুও পেশাগত সৌজন্যে মুখে হাসির ছোঁয়াটুকুতে চকচক করছে টোলখেলানো গোলাপী গালদুটো।
সৌজন্যের পরিবারের অস্বস্তিকর বিস্ময়ের মধ্যেও ফুলের বোকে আর সারপ্রাইজ গিফ্টটা তুলে দেয় এষার হাতে। এষা খুশিতে থ্যাঙ্কস্ জানিয়ে ওর দিকে ইশারা করে কিছু বলার জন্য। শুকনো গলা দিয়ে ভেসে ভেসে আসে ছোট্ট ধন্যবাদ জ্ঞাপন। আবার সেই সিগনেচার হাসিটা ভেসে ওঠে মিমের মুখে। আজ আর ফিদা লাগেনা সৌজন্যর খুবই অস্বস্তি হয়।
ওর বোন একটু বাদে সবটা সামলানোর চেষ্টা করে,এষাকে নিয়ে কথা বলতে বলতে উঠে যায় লনে। ও জানে দাদা আর বাবা মায়ের একটু স্পেশ দরকার হয়ত। ওরা যেতেই আরতি বলে ওঠে," একদম মুড অফ করিসনা,আগে জানলে এখানে খেতেই আসতামনা। দেখেছিস তো এখানেও সেই টেবিল সাফাই আর বিছানা পাতার কাজ করতে এসেছে,আর কিই বা করবে?"
কোন কথারই উত্তর দিতে ভালো লাগেনা সৌজন্যর তখন শুধু মনে হচ্ছে কখন খাওয়া শেষ করে উঠবে।
হঠাৎই আ্যনাউন্সমেন্টটা কানে আসে,টুডে ইজ আ স্পেশাল নাইট ফর মিঃ এন্ড মিসেস বসু সো আ স্পেশাল মিউজিক আ্যন্ড সেলিব্রেশন ফর দেম ফ্রম...কথাগুলো গরম সীসার মত কানে লাগে আরতির,বিছানা পরিস্কার করার কাজ করে বলে যে মেয়েটাকে একদিন অসম্মান করেছিলেন সে আজ এই হোটেলের কর্ণধারের স্ত্রী এবং তার চেষ্টাতেই এই হোটেল আজ দেশের অন্যতম বড় হোটেল।
হাসিতে ঝলমল করতে করতে অতিথিদের বিশেষ আপ্যায়নে ব্যস্ত মিম। উঁচুতে উঠেও মাটির গন্ধ নিয়ে আজও বাঁচে মিম। ভালোবাসার বাসর সাজাতে না পেরে একদিন স্বপ্ন সাজাতেই পাড়ি দিয়েছিলো চাকরির অফার পেয়ে বিদেশে। সেখানেই কাজের প্রতি আনুগত্য আর ভালোবাসা এনে দিয়েছিলো সাফল্য। হয়ত খুব তাড়াতাড়ি মুম্বাইয়ের হোটেলের প্রোজেক্ট নিয়ে দেশে ফিরবে হেরে গিয়ে নয় একদম সফল হয়ে। ডিনার শেষ করে যাওয়ার সময় শুভরাত্রি জানিয়ে আবার আসার আমন্ত্রণ জানায় মিম,একটা টাইট হাগ করে এষাকে শুভকামনা জানায়। হয়ত একটু বেশিই আতিথেয়তায় আজ বাঁধলো নিজের অপমানিত অতীতকে পরম সুখে আর লুকোনো কষ্টে।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment