#ছুটি#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#"আজ ছুটি আছে, সকালে একটু জম্পেশ করে লুচি আলুর দম বানাও তো দেখি। প্রতিদিনই তো আজকাল শুকনো রুটি খাওয়াচ্ছো। সাথে একটু ছোলার ডালও রেখো। দুপুরের মাটনটা একটু জমিয়ে রান্না কোরো। চিংড়ির মালাইকারিটাও হবে নাকি আজকে? মাংস তো একটু কম আছে। কিছুটা এঁচোড়ও আনা আছে তারপর আমি যাচ্ছি বাজারে বাকিটা আনছি আর যদি কিছু করতে চাও।"
...খুব বলতে ইচ্ছে করছিলো লিপির, আচ্ছা আজ নাকি ছুটির দিন, আমার কবে ছুটি বলতে পারো? কথাটা জিভের ডগায় রয়ে গেলো কারণ ভুল করে এই কথাটা বলে উত্তর পেয়েছিলো.."ছি ছি নিজেকে শেষ পর্যন্ত শ্রমিক ভাবলে লিপি, তুমি হচ্ছো গিয়ে এই সংসারের মালিক, আমরা সবাই হলেম গিয়ে তোমার.."।
ওখানেই থামিয়েছিলো কর্তাকে আর বাকিটা বলতে দেয়নি। বুঝতে পেরেছিলো বাড়ির বৌয়ের ছুটি নেওয়া চলেনা। এভরি ডে ইজ ওয়ার্কিং ডে, আর সবার যেদিন ছুটি সেদিন ওর ওভারটাইম থাকে মানে এই সবাইকে তুষ্ট করে নিজের আত্মতুষ্টি আর তার সাথে উপরি পাওনা গৃহকর্ত্রীর খেতাব।
সত্যি আজ খুব গরম পড়েছে, তাই ঘাম মোছার জন্য একটা বড় সাইজের রুমাল ঝুলিয়ে প্রেসারকুকারে ডালসেদ্ধ বসিয়ে ময়দা মাখতে শুরু করলো লিপি। ওর কর্তা তখনও ছুটি উপভোগ করছে, স্বাভাবিক কঠোর শ্রমে কেটে যায় সপ্তাহের পাঁচটা দিন তাই এইটুকু প্রাপ্য তো থাকেই।
সি সি করে সিটি মারে প্রেসারকুকার, গ্যাসটা কমিয়ে দেয়, ময়দা মাখা প্রায় শেষ। এবার ফটাফট আলুর ছাল ছাড়িয়ে জলে ভিজিয়ে রাখে। মনে মনে একবার এক দুই তিন করে কাজগুলো ছকে নেয় মানে কোথায় শুরু করে কখন শেষ করবে। কপাল থেকে গড়িয়ে পড়ে বেশ বিন্দু বিন্দু ঘাম, মুছে নেয় যত্নে। নিজেকে একটু শুকনো করে নেয় পাখার তলায় এসে। ততক্ষণে চা হয়ে এসেছে, তাড়াতাড়ি কাপে ঢেলে বিস্কুট সহ এগিয়ে দেয়, "শুনছো এই নাও তোমার চা।"
পেপার পড়তে পড়তে অন্যমনস্ক ভাবে এগিয়ে আসে একটা হাত। হয়ত বা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখার সময়ও নেই তখন। তাই কাপটা ধরিয়েই ছুটে যায় রান্নাঘরে। লুচি, ছোলার ডাল, আলুর দমের গন্ধে একটু বাদেই ম ম করে রান্নাঘর। মেয়েটা গন্ধ নিতে একবার রান্নাঘরে ঘুরে যায়। সবাইকে সাধ্যসাধনা করে একজায়গায় করে লুচি খাইয়ে তৃপ্ত করে কয়েকটা চুপসানো লুচি খেয়ে মনটা আনন্দে একটু ফুলে ওঠে লিপির, যাক ছুটির দিনের প্রথম রাউন্ডে একদম ছক্কা মেরে দিয়েছে।
এবার মাংসে টকদই মাখিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে পেঁয়াজ কাটতে থাকে। চলে দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রস্তুতি, ছুটির দিন বলে কথা খাওয়াটা জম্পেশ হওয়া চাই।
ততক্ষণে ঘামে ভিজে গেছে নাইটি, তবুও চলছে হাতাখুন্তি কখনও ছুরি কখনো বটির খুটুর খুটুর। তার মাঝেই লিপি গুনগুন করে গাইলো, 'সকলই তোমারি ইচ্ছা, ইচ্ছাময়ী তারা তুমি। তোমার কর্ম তুমি করো মা লোকে বলে করি আমি।..'
আজ বেশ জমিয়ে খাওয়াটা হলো, এবার একটা জমিয়ে ঘুম না দিলে হচ্ছেনা।''
...ঘরের দরজা দম করে বন্ধ হয়ে গেলো এবার ঠান্ডা ঘরে সবাই, লিপি তখন রান্নাঘরের বাড়তি রান্না ফ্রীজে তুলে রাখছে। তখনও অনেকটা কাজ বাকি। সব সেরে ঘরে ঢুকে কর্তার হাল্কা নাসিকা গর্জনের আওয়াজ পায়। ঠান্ডায় বিছানায় শরীরটা ফেলে আলতো করে, ক্লান্তিটা তখন জানান দেয় আরো বেশি করে চোখটা বুজে আসে।
হঠাৎই শুনতে পায়, "সন্ধ্যে লেগে আসছে সন্ধ্যে দেবেনা নাকি? আমার চা ও দিয়ো।"
...মেয়ে এসে আদুরে গলায় বলে, "মা আমার খিদে পাচ্ছে, বিকেলে কি খাবো?"
..চোখটা খুলতে ইচ্ছে করেনা লিপির আধো ঘুমে বলে ওঠে..." মা গো আমায় ছুটি দিতে বল,সকাল থেকে রেঁধেছি যে....।" হঠাৎই ঘুমের ঘোর কেটে যায় মেয়ের হাসিতে," সত্যি মা কি সব ভুলভাল কবিতা বলছো ঘুমের ঘোরে।খুব অন্যায় কবিগুরুর কবিতা ভুল বলা,ওটা তো আমাদের জন্য লেখা।" জিভ কাটে লিপি ইশ্ কি বলেছে ঘুমের তালে সত্যিই কি ঘুমের ঘোরেও মনের কথা মুখে এসে যায়!
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment