#আসুক_স্যান্টা_বারবার#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
বারান্দায় জামাকাপড় তুলতে গিয়ে মোজাগুলো মেলায় মোহনা। গুছিয়ে না রাখলে বেজোড় হয়ে যাবে তারপর সবাই ঠিকমত না পেলেই মুশকিল হবে সবার।।
মোজাতে হাত দিয়ে মনটা ছুটে চলে যায় ছোটবেলায় উঁকি দেয় একটা ছোট্ট ভালোলাগার স্বপ্ন..ঠিক বড়দিনের আগের দিন রাতে যত্নে পুরোনো মোজাটা নিয়ে শোয়া বিছানায় একদম বালিশের পাশে। স্যান্টাবুড়ো আসবে তার গায়ে ইয়া বড় লাল কোট আর হাতে এত্ত বড় উপহারের থলে। কি জানি এবার কি দেবে মোহানাকে?
মা এসে একবার বলে যেতো,"মোনা,ঘুমিয়ে পড়ো এবার।স্যান্টা তো দেখবে লক্ষ্মীবাচ্চা কি না তুমি তাহলেই তো গিফ্ট দেবে।"
চোখ পিটপিট করতে করতে মোহনা টের পেতো বাবা এসেও একবার দেখে যেত ও ঘুমিয়েছে কিনা। আর তারপর স্যান্টার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়া একটা সময়। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে হাতড়ে দেখা,নাহ্ এখনো মোজা খালি। আর তারপর ঘুম ভাঙতেই ভোরবেলা মোজা ভর্তি ছোট ছোট উপহার। অনেক সময় পাশেও থাকতো উপহারের ঝুলি।
আর তারপর কতবার করে যে দেখা সেগুলোকে তার ঠিক নেই। সত্যি ছোটবেলার যে কি মজা! অথচ তখন মনে হত কবে বড় হবে আর কবে বড় হবে। একদিন হঠাৎই দেখে ফেলেছিলো বাবা রাতের অন্ধকারে চুপিচুপি এসে উপহার রাখছে মোজায়। প্রথমে একটু মন খারাপ হয়েছিলো তবুও বাবাকে কিছু বলেনি। দাদাকে বলেছিলো.." আচ্ছা দাদা,বাবাই কি স্যান্টা ক্লজ?
তাহলে সত্যিই স্যান্টাবুড়ো আসেনা তাইনা? বাবা আমাদের উপহার দেয়।"
দাদা হেসে বলেছিলো," এ মা তুইও দেখে ফেলেছিস!"
ওর থেকে সাত বছরের বড় দাদা বিজ্ঞের মত বুঝিয়েছিলো হ্যাঁ মা বাবারাই তো স্যান্টাক্লজ হয়।তাইতো আমাদের খুশি রাখতে সব সময় চেষ্টা করে। তারপর থেকে সারপ্রাইজটা না থাকলেও মোহনা কখনো বাবাকে বলেনি আমি কিন্তু সবটা দেখে ফেলেছি।
মোহনা শ্বশুরবাড়ি যাবার সময় খুব কেঁদেছিলো বাবার কাঁধে মাথা রেখে।বারবার মনে হয়েছিলো স্যান্টাবুড়োর থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। গরম জিলিপি থেকে,কেক,বিস্কুট,ফুচকা সবটাই কেমন যেন বাবা বুঝে যেত আজ এইটা খেতে ইচ্ছা করছে ওর। মোহনার রাগী মুখ,দুঃখী মুখ,আনন্দের মুখ সবটাই যেন অদ্ভুত চেনা ছিলো বাবার।
শ্বশুরবাড়িতে এসে বুঝেছিলো স্যান্টাবুড়ো সবাই হতে পারেনা। কষ্ট,আনন্দের অনুভূতি সবার সাথে কেন যেন ভাগ করে নেওয়া যায়না। মাঝে মাঝেই মনে হত মিস্ ইউ বাবা। তুমিই বোধহয় সব পারো আর কেউ পারেনা। মোহনাকে দেখতে বাবা মাঝে মধ্যেই চলে আসতেন তাতে কথা হত কি আশ্চর্য মানুষ! মাসের মধ্যে দুবার করে চলে আসছে মেয়ের বাড়ি। আচ্ছা মেয়ের বাড়িতে আসাটা কি অন্যায়? না কি মেয়েদের কোন বাড়ি থাকতে নেই? সেই হিসেবটা আজো মেলাতে পারেনি মোহনা।
তবে স্যান্টাবুড়োকে মোহনাও এনেছে ছেলেমেয়েদের কাছে ঠিক ওর বাবার মত করে। ছোট্ট ছোট্ট গিফ্টে ভরে দিয়েছে ছেলেমেয়েদের মোজা একদম কানায় কানায়। ওদের খুশি মুখগুলো দেখে মনটা ভরে গেছে একদম। দিনের পর দিন কিভাবে যে চলে যায়! তবে একটা সময় ওরাও বুঝতে পেরেছিলো মা বাবারই স্যান্টা হয়।
মোহনার স্যান্টাবুড়ো চলে গেছে ঐ দূর আকাশে যে মানুষটা ওর মুখ দেখলেই সবটা বুঝতে পারতো। বড়দিনে নিরামিষ কেক বানিয়ে স্যান্টাকে খাওয়ানোর মজাই ছিলো আলাদা। কাল বড়দিন,জামাকাপড় গুছিয়ে রাখা টুকটাক রান্না সারা আর বাড়ির ছেলেমেয়ে স্বামীর ফেরার অপেক্ষায় সন্ধ্যেটা কেটে যায় স্মৃতির নষ্টালজিয়ায় মোহনার। একলা ঘরে বাবা মাকে খুব মনে পড়ে,মনে মনে বলে.."স্যান্টা ওদের খবর নিয়ে এসো তো।কেমন আছে ওরা?"
সবার ফেরার শেষে খাওয়াদাওয়া সেরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো বুঝতেই পারেনি মোহনা।হঠাৎই ঘুম ভেঙে যায়...মেরি ক্রিসমাস কারা যেন বলছে। ইশ্ সকাল হয়েছে কখন বুঝতেই পারেনি,বিছানার পাশে হাসিমুখে এসে দাঁড়িয়েছে ছেলেমেয়ে দুটো,একদম কাছে এসে মুঠো খোলে ওরা,ওদের হাতে একমুঠো চকোলেট আর মুখে হাসি। মোহনার খুব প্রিয় একলেয়ার্স, ওরা জানে। ওদের কাছে টেনে আদর করে মোহনার মনে হয় স্যান্টা সত্যিই ফিরে আসে। সব মানুষের মধ্যে বোধহয় লুকিয়ে আছে স্যান্টাবুড়ো.. খুশিতে তোমায় ভরিয়ে দেবে যদি তাকে খুঁজতে পারো।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment