বাজাairo airport at 7.50am.. Name of the driver sala.. name of the fight egypt air..name of the fight from kol to bom vistara..Situated in North eastern part of africa..1 million square km whole egypt.eleven countries shared the water of nile..We will stay at Giza today..6 Millon auto riksha 1960 ab Cairo was founded it is the capital of Cairo.Giza is opposite to Cairo..Giza is 5000 years old..Egypt is the old capital.egyptian cotton is white gold..Main crops khejur oranges and olive and grapes also..Sugarcane also..Golden eagle is painted at flag..Perfumes are kept in the tomb of tutan khamen..
26.12Today we have seen the biggest pyramid of kufu..Three panaromic pyramid of mother and daughter..The Sphinx which is the joint symbol of lion and human being..After lunch we have seen papyrus,perfume factory
On 26th night at 8pm we are going for Aswan by train from cairo..There is provision of two persons in every coup with wash basins and food also..Even the cabin crew arranges the bed of every one..
Aswan..27.12 main market of egypt and the place of nyle
It is hundred metre higher than cairo..We start in the 1..high dam oF Aswan.between east bank of egypt..People are Nubian and Egyptian..Religion are islam and Christians.. Population 100000
2.Philae temple..
28.12..We r starting for abu simbal the work of king Rameses..It will take 3 hrs from Aswan to reach there.
Before Christ's birth 4000 b.c or five thousand b.c..King mini came from Luxor united egypt..He founded memphis.his name was written in cup and catfish..They transferred tomb pyramid and kingdom..2300 before christ..King pibi
Horrus is the falcon his reflection must be a man..hexous foreign invader they came from seria they destroyed temples and sculptures..King ahumuja again captured egypt and moved capital to Luxor.
Ramesis his wife was Nefertiti...pq to
Ramesis 2 became king at the age of 25 and ruled for 67 years..
In the evening we visited Commombo was also a temple..King tolong No 6 built this.it means pile of goats..It is built 1400 years before the birth of Christ..The god Horus the falcon and the crocodile god was worshipped here.
29.12.2019 at 5.30am we started for Ed fu temple by Tonga..It was also a good experience..2nd largest temple..
In the evening we visited Luxor temple built by Ramesis 2..A huge temple in Luxor..
The name of our cruise is ms liberty..
Ancient Egypt temple Karnak temple the biggest one..
30.12.19...morning tomb of Pharos
2..Temple of Hachifsut
3.Karnak existed in old kingdom..1500 b.c old..One axe from South to north and sun from east to west.over nile..The construction started from inside to out side..
Catacombs..alexandrIa
#মিশর_এক_বিস্ময়#
(১)কায়রো
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
মা বাবা দুজনেই ছিলেন শিক্ষক শিক্ষিকা উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে পড়াতেন।বাংলা মাধ্যম সেই স্কুলেই পড়াশোনা আমার। মায়ের বিষয় ইতিহাস আর বাবার ইংরেজী। ইতিহাসের পাশাপাশি মায়ের পছন্দের বিষয় ছিলো বাংলাও। ছোটবেলায় বাবার কাছে শুনতাম মজার সব গল্প,বাবা শিবরাম চক্রবর্তী পড়তে পড়তে নিজেও হাসতেন তার সাথে আমিও। আর মায়ের কাছে শুনতাম মনীষীদের ছেলেবেলার গল্প আর ইতিহাসের গল্প। পুজোর সময় জামাকাপড় পাওয়ার আনন্দের চেয়েও বেশি আনন্দ ছিলো কখন বাবা এসে পুজোসংখ্যা অথবা কিশোর সাহিত্য সমগ্ৰ বা ছোটগল্প সংকলনের মোড়ক খুলে হাতে দেবে।
বছরের প্রথমেই বাংলা,ইতিহাস বই পেয়েই প্রথমেই পড়া হয়ে যেত কি কি আছে সেখানে। আর সেই সময়েই চোখ আটকে গিয়েছিলো প্রাচীন সভ্যতা গুলোতে। মানুষ এত উন্নত ছিলো অত অত বছর আগে।কত কিছু জানতো!সিন্ধু সভ্যতা,মিশরীয় সভ্যতা,সুমেরীয় সভ্যতা,মেসোপটেমিয়ার কথা,হরপ্পা মহেঞ্জোদারোর কথা পড়তে পড়তে মন ছুটে চলে যেত কোন সুদূর অতীতে। কিছুটা বইয়ে পড়তাম,বাকিটা মাকে জিজ্ঞেস করতাম। এমনি সময়েই বাবার এক বন্ধুর কাছ থেকে উপহার পেলাম ছোটদের বুক অফ নলেজ ইয়া মোটা বই। এখন গুগল আঙ্কেল আছে যে সব জানে। তখন তো ছিলোনা তাই আমি সময় পেলেই বসে পড়তাম বইটা নিয়ে ডুবে যেতাম ছবিতে কথায়।
ছোটবেলায় বইয়ের পাতায় দেখা স্পিংক্স আর পিরামিড নিয়ে যেত এক কল্পনার জগতে।সত্যিই কি এমন আছে কোথাও যারা এক সময় বিশ্বাস করতো মানুষ মৃত্যুর পরও আবার ফিরে আসে তাই তার মৃতদেহকে যত্নে সংরক্ষণ করতো শুধু তাই নয় তার সাথে রাখতো সমস্ত প্রয়োজনীয় সামগ্ৰী।অর্থাৎ জামাকাপড়,আসবাব, গয়না,খাবার,সুগন্ধী আরো কতকিছু। কি ভাবে তৈরী হয়েছিলো পিরামিড সেই যুগে? কি ভাবেই বা সংরক্ষণ করা হত মমি?মানুষ এতটা আধুনিক কিভাবে ছিলো আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার পাঁচ হাজার বছর আগে?ভাবতে ভাবতে কোথায় যেন হারিয়ে যেতাম।
মিশর আজও এক জীবন্ত ইতিহাস। নীলনদের ধারে আর মরুভূমিতে এখনো লুকিয়ে আছে কত না জানা ইতিহাস যা হয়ত অজানাই রয়ে যাবে। সেই ইতিহাসের পাতাকে চাক্ষুষ দেখতে ছুটে যাওয়া মিশরে। যাওয়ার আগে থেকেই নানা বাধা। পুরো উল্টোলাম একদিন মানে মুখ থুবড়ে পড়লাম, কেটে ছড়ে গেলো মুখ। পায়ে খুব ব্যথা পেলাম।প্রতিমুহূর্তে ভাবছি কি করে পারবো জানিনা। বাড়ির মানুষেরাও নানা ভাবে বলেছে পারবোনা,এভাবে যাওয়া ঠিক হবেনা।তবুও কোথাও কোথাও মনের জোরের কাছে সবটাই হয়ত হেরে যায়। ভগবানে বিশ্বাস করি তাকে স্মরণ করেই বেরিয়ে পড়লাম পঁচিশে ডিসেম্বর দুহাজার উনিশ দুপুরে,কলকাতা থেকে মুম্বাই তারপর বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা এয়ারপোর্টে আর তারপরেই কায়রোতে। কায়রো বর্তমানে মিশরের রাজধানী। কায়রো শব্দের অর্থ বিজয়ী।কায়রো এয়ারপোর্ট থেকে আমাদের হোটেলে পৌঁছতে মোটামুটি পঁয়তাল্লিশ মিনিট লাগলো,আমাদের হোটেলের নাম ছিলো দ্য ওয়েসিস্।সুন্দর সাজানো গোছানো সবুজের সমারোহে কটেজ, সুন্দর ব্যবস্থা।সকালে ব্রেকফাস্ট করে সোজা রওনা গিজার উদ্দেশ্যে। কাইরোর পিরামিডগুলো এবং স্পিংক্স এই অঞ্চলেই অবস্থিত। প্রচুর পর্যটক জমা হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চারিদিকে পর্যটকের ভীড়। তার মধ্যেই অবাক বিস্ময়ে দেখলাম আমার স্বপ্নের পিরামিডকে। সবচেয়ে বড় খুফুর পিরামিডের সামনে অবাক বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিন্তু বেশিক্ষণ দাঁড়ানোর কি উপায় আছে,আসলে গ্ৰুপট্যুর গুলো এমনি হয় সব জায়গাতেই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর তারপর ছবিতোলা আর সেল্ফির ঠ্যালা। প্রচন্ড কনকনে ঠান্ডা আর হাওয়া ওখানে ঠিক যেন উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার মত। তার মাঝেই আমি উড়ে গেলাম ছোটবেলার স্বপ্ন আর বাস্তবকে মিলিয়ে এক জাদুভরা স্বপ্নের জগতে। পিরামিডের ছবি খিচখিচ করে ক্যামেরার ক্লিকে বন্দী করতেই বরের বকুনি খেলাম। " নিজে দাঁড়িয়ে ছবি তোলো,শুধু পিরামিড তুলতে হবেনা।"হাওয়াতে উড়তে উড়তে দাঁড়িয়ে গেলাম। স্টাইলে দাঁড়িয়ে নিজেকে সামলানোই মুশকিল,হাওয়াতে পোশাক চুল সব উড়ে এলোমেলো তবুও ছবি হয়ে গেলো অনেকগুলো।
খুফুর পিরামিড সবচেয়ে উঁচু পিরামিড ওই অঞ্চলে অবস্থিত তিনটে পিরামিডের মধ্যে। উচ্চতা প্রায় একশো চল্লিশ মিটার,এর মধ্যে তিনটে প্রকোষ্ঠ আছে। তিনটে প্যানারোমিক পিরামিড পরপর অবস্থিত ওরা বলে মাদার ডটার পিরামিড যেগুলো আছে খুফুর পাশে। আর আছে সামনে স্পিংক্স। পিরামিড এবং স্পিংক্সের মুখ এমনভাবে বসানো যাতে সূর্যের প্রথম কিরণ স্পর্শ করে। প্রাচীন মিশরীয়রা সূর্যকে দেবতা বলে মানতেন এবং সূর্য সমস্ত শক্তির উৎস কথাটা এই যুগেও সত্যি। প্রাচীন সভ্যতার আর্কিটেকচার, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান,জ্যোর্তিবিদ্যার শিক্ষা এবং সর্বোপরি চিকিৎসা শাস্ত্রে অভূতপূর্ব পারদর্শিতা শুধুই মুগ্ধতা রেখে যায়। আজ থেকে সাড়ে চারহাজার বছর আগের মমির চুল,ভ্রু এবং দাঁত ও প্রতিটা আঙ্গুল এখনো অক্ষত। দেখলে রীতিমতো গায়ে কাঁটা দেয়। নীলনদের বদ্বীপের শীর্ষভাগে কায়রো শহর অবস্থিত। পিরামিডগুলো বহন করে চলেছে আজও ইতিহাসের শিলালিপি সযত্নে। ফ্যারাওদের সুমহান কীর্তি আজও সুর্যকিরণে সমুজ্জ্বল।
কায়রোর বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানের মধ্যে দেখলাম হ্যাঙ্গিং চার্চ যা রেখে গেলো শুধুই বিস্ময় দেওয়ালে অপূর্ব সুন্দর হাতির দাঁতের কারুকার্য আজও অম্লান হয়ে যেন বলছে দেখো কত উন্নত ছিলো আমাদের শিল্প আর সৃষ্টি। সেন্ট ভার্জিন মেরীর অর্থডক্স চার্চ এটা। বেশিরভাগটাই মাটির নিচে রাখা হয়েছে সুরক্ষার কারণে। ব্যাসিলিকান শৈলীতে নির্মিত চার্চের অভ্যন্তরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে একটা উঠোন মত জায়গা আছে যাতে এক সময় প্রায় নব্বই দিন সুরক্ষার কারণে আত্মগোপন করেছিলো বেশ কিছু মানুষ। যা আইজাকের সময় তৈরী হলেও পোপ আব্রাহাম দ্বারা পুনরায় নির্মান করা হয়। এখনো সুন্দর ভাবে রাখা হয়েছে সবটাই। মনে শান্তি আর শ্রদ্ধা জাগে দেখলে আর অনুভব করলে।
কায়রোর অন্যতম দর্শনীয় স্থান ওখানকার রয়্যাল মিউজিয়াম। পিরামিড গুলো থেকে উদ্ধার করা মূর্তি,মমি,আসবাবপত্র, গ্ৰানাইট পাথরের মমি বানানোর জায়গা,মমি রাখার কাসকেড এমন কি রাজা রানীদের মমিও রাখা আছে এই মিউজিয়ামে।যদিও অনেক জিনিসই চলে গেছে দেশের বাইরে,কিছু হয়ত এখনো ইতিহাস লুকিয়ে রেখেছে যত্নে।তবুও যা দেখলাম তা মনের মণিকোঠায় রয়ে যাবে বহুদিন। আমার চোখ খুঁজছিলো সব কিছুর মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ ফ্যারাও তুতেনখামেনের মমি থেকে পাওয়া সুবিশাল সামগ্ৰী। দেখতে দেখতে বিস্ময়ে মুগ্ধ হলাম বিরাট তিনটে সোনার বাক্স যা বড় থেকে ছোট তার মধ্যে স্ফটিকের সিংহাসনে শায়িত ছিলো তরুণ এই ফ্যারাওর মমি যার আবরণ কাঠের কিন্তু সোনা দিয়ে মোড়ানো আর তাতে নিখুঁত মিনাকারির কাজ। খ্রীষ্টপূর্ব কয়েক হাজার বছর আগে কি উন্নত স্থাপত্য,শিল্প ও চিন্তাধারা ছিলো দেখলে বিস্ময়ে মাথা নিচু হয় সভ্যতার মহানতার কাছে। ব্যবহৃত গয়না,চটি,নিরেট সোনার মুখোশ সব দেখে আশ্চর্য শুধুই আশ্চর্য হয়েছি। কেউ যেন ঢেলে সাজিয়েছে মৃতদেহের কক্ষ তার মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য। মমির ঘরে ছবি তোলা নিষেধ এ এক বিস্ময়কর অন্য পৃথিবী যেন। কবেকার মৃতদেহকে ওরা কেমন অবিকৃত করে গেছে।
একটা দিন কেন এ দেখা শেষ হতে হয়ত বছর লেগে যায় তবুও সময়ের দাস আমরা তাই ফিরতে হয়।
কায়রোর অন্যতম আকর্ষণ বিখ্যাত খান আলখালিলি বাজার।আর বাঙালি বাজারে ঘুরবেনা তা হয় নাকি! কিন্তু গাইডের কথা শুনে বুঝলাম এ আমাদের হাতিবাগান বা গড়িয়াহাটের ফুটপাথের মতই দরদাম করে ভাই করো বাজার। তবে বাজার যাই হোক ফটো তুললাম দোকানের মন ভরে। কি সুন্দর সব সাজানো গোছানো দোকান নানা রকম সুন্দর সাবেকি জিনিস দিয়ে সাজানো। দেখলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। আছে তুতেনখামেনের আর নেফারতিতির মুখও আর আলেকজান্দ্রিয়ার হুকো।বাজার ঘুরে সেদিন ওখানেই দুপুরের খাবার খেলাম একদম ইজিপসিয়ান ফুড দিয়ে। বেশ লাগলো রোদে পিঠ দিয়ে সসে মাখানো চিকেন পরোটা আর ফিস পরোটা খেতে।আর সব শেষে মিষ্টি পরোটাতে স্বাদ বদল। আহা আহা বেশ ভালো। আর ভালো হবেনা,ওদের পরোটা রুটি বানানোটা জাস্ট দেখার মত।
রাতে কনকনে ঠান্ডায় খোলা আকাশের নীচে বসে একদম মরুভূমিতে স্পিংক্সের সামনে বসে ডুব দেওয়া লাইট আ্যন্ড সাউন্ডে। কখনো ঘোড়ার আওয়াজ,কখনো বা নীলনদে নৌকোয় আসছে পাথর।আবার কখনো ফ্যারাওদের ইতিহাস শুনতে শুনতে খ্রীষ্টের জন্মের কয়েকহাজার বছর আগে চলে গেছিলাম বুঝতেই পারিনি। শো শেষ হওয়ার পর মনে হলো এতক্ষণ যা দেখলাম আর শুনলাম সবটাই ইতিহাস। মনে সাড়া জাগানো ইতিহাস যা শুধু নির্বাক করে দেয়,ইচ্ছে করে চুপ করে অনুভব করতে মিশরের মরুভূমিতে ফ্যারাওদের পায়ের শব্দ। আবার আসবো অন্য কোন দেখা নিয়ে।
সমাপ্ত:-
#মিশর_এক_বিস্ময়#
(২)#আসোয়ান#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
কায়রো এক রোমাঞ্চে ভরা শহর যার পরতে পরতে লুকিয়ে ইতিহাস। মন ভরেনা সামান্যতে,তবুও সময় অল্প দেখতে হবে অনেক কিছু তাই ছুটে চলা মানে উঠাকে ঝোলা চলরে ভোলা। আমরাও তাই রওনা দিলাম হোটেল থেকে ব্যাগপত্র নিয়ে। এবারের গন্তব্য আসোয়ান, যাওয়া হবে কু ঝিকঝিক মানে ট্রেনে করে। মিশরে এসে ট্রেনে করে একরাত ভ্রমণ!ভাবতেই মনটা বেশ খুশি খুশি হয়ে উঠলো। স্টেশনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই এসে পড়লো ট্রেন,সারা প্ল্যাটফর্ম তখন বাঙালীতে ভর্তি।মনে হলো শিয়ালদা স্টেশনে আছি বোধহয়।সবাই অপেক্ষায় ট্রেনের। ধন্য ভ্রমণপিপাসু বাঙালী,পৃথিবীর যেই দিকেতেই যাই তোমার দেখা পাই। যাক আমরা উঠে পড়লাম ট্রেনে,আমাদের এখানের এসি ফার্স্ট ক্লাস কুপের মত দুজনের কুপ,ভেতরেই বেসিনের ব্যবস্থা তবে বাথরুম বাইরে। শুধু আয়তনে বেশ ছোট তবে ছোটর মধ্যে সব ব্যবস্থাই আছে। কিছুক্ষণ বাদেই আ্যটেনডেন্ট এসে হাজির একদম বিছানা করে খাবার দিয়ে চলে গেলো। ওরে বাবা সিটটা তো বেশ বড় হয়ে গেলো তখন,আরেকটা ছোট সিঁড়িও বেরোলো ওপরে ওঠার জন্য।একদম ছিমছাম ব্যবস্থা সুতরাং হাত পা ধুয়ে খেয়ে একদম বিছানায়। তবে বাথরুমের বেসিন এবং কমোড দুটোতেই জল পেতে গেলে পা দিয়ে বোতাম চেপে নিতে হয়। আমাদের দেশে আমরা শুধু জল বাঁচাও বাঁচাও করে চেঁচাই আবার জল নষ্ট করি যথেচ্ছ।কিন্তু ওরা জলের অপচয়ের ব্যাপারে বেশ সাবধানী। তবে এখানে কোচ আ্যটেনডেন্টটির কথা না বলে পারছিনা,লোকটি আফ্রিকান,ভাষার কিছুটা সমস্যা হয়ত আছে কিন্তু অসম্ভব দায়িত্বশীল।কেউ বাথরুমে ঢোকার আগেই তৈরী,একদম বাথরুম শুকনো করে সাফাই করে দিচ্ছে। রাতে ট্রেনের দুলুনিতে ঘুমিয়ে গেলেও স্বভাবতই চারটের সময় ঘুম ভাঙলো।ব্যাস শুরু হলো একটু বাদেই আমাদের হই চই আর গল্প।আলো ফুটতেই চোখ রাখলাম জানলায় কখনো মরুভূমি কখনো শুকনো হলুদ পাহাড় পেরিয়ে ছুটে চলেছে ট্রেন। কত নাম না জানা স্টেশন আরবী ভাষায় নাম লেখা। দৃশ্য দেখতে দেখতে ইংরেজী সিনেমা ম্যাকেনাস গোল্ডের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিলো,এই রকম প্রেক্ষাপটে স্যুটিং হয় মনে হচ্ছে।অদ্ভুত খাঁজকাটা পাহাড় সৃষ্টি হয়েছে মরুভূমির বালি জমে রঙ সোনালী। কুপ থেকে বাইরে এসে প্যাসেজের মধ্যে দাঁড়িয়ে জমলো গল্প খাস বাংলায় তারপর হঠাৎই দেখি আমার কর্তা নিখোঁজ হয়ে গেছে ব্রেকফাস্ট খেয়েই।ব্রেকফাস্ট সযত্নে পরিবেশন করেছে ওরাই সাথে চা কফি সব আছে। তারপর শুনলাম ও আড্ডা জমিয়েছে ট্রেনের ডাইনিং হলে সেটা নাকি দারুণ সুন্দর।সুতরাং গুটিগুটি পায়ে হাজির হলাম সেখানে। সত্যি দারুণ সুন্দর জায়গাটা একদম কেতাদুরস্ত চেয়ারটেবিল দিয়ে সাজানো। আর কি একপ্রস্থ ফটো তোলা হয়েই গেলো। এই সুযোগ কি বার বার আসবে। একটা স্টেশনে গাড়ি থামলো,দরজা বন্ধ তাই হুটহাট নামার উপায় নেই।জানলা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম লাক্সার,পরিচিত নাম।এখানে দেখার জন্য বিখ্যাত লাক্সার টেম্পল আছে রামেসেস দ্য টুয়ের বানানো।তবে পরে আসবো এখানে আপাততঃ গন্তব্য আসোয়ান। আসোয়ান স্টেশন আসতেই আমরা নেমে পড়লাম। ওহ্ এতক্ষণ তো একজনের কথা বলাই হয়নি হাবিবি..একটু খোলসা করে বলি ওরা ভালোবাসার মানুষকে আরবি ভাষায় হাবিবি বলে।আমাদের সারাক্ষণের গাইড ইউসুফ, দরাজ গলা আর মিষ্টি হাসি নিয়ে বাসে উঠেই মাইক্রোফোন হাতে নিয়েই একটা ডাক দিতো,"হাবিবি হ্যালো,গুডমর্ণিং।তাই আমরাও ওকে ইউসুফের বদলে হাবিবি বলেই ডাকতে শুরু করেছিলাম।আমাদের ট্রাভেলিং এজেন্সীর মালিকও সস্ত্রীক ছিলেন সাথে।যার ফলে আমরা একদম নিশ্চিন্ত।
মার্সিডিজ বাসই মোটামুটি বিদেশে সব জায়গায় ট্যুরের জন্য থাকে সুতরাং তার পেটে মালপত্র ঢুকিয়ে আমরা বাসে উঠে একদম সীটে বসলাম।মিশরের রাস্তাঘাট মোটামুটি তেলের কোম্পানী গুলোর টাকায় বানানো।একদম ঝাঁ চকচকে ঝাকুনি বিহীন পথ।বাসের পেছনের সীটে বসলেও কোন কষ্ট নেই। ওখানে মোটামুটি জলের থেকে তেল সস্তা। জল আমাদের ট্রাভেল গাইড প্রতিদিন মাথাপিছু দেড়লিটার করে দিতো,একটা হোটেলে ঘরে পেয়েছি মাথাপিছু দেড়লিটার জল।এছাড়া বেশি লাগলে কিনে খেতে হয়।মোটামুটি দেড়লিটারের বোতলের দাম দু ডলার। অবাক হওয়ার কিছু নেই ভাই,আরে জলের অপচয় বন্ধ করুন....জলই জীবন।
যাক্ এবার বেড়ানোর কথায় আসি। বাস আমাদের নিয়ে চললো নীলনদের সর্বোচ্চ আসোয়ান ড্যাম দেখাতে।কায়রোতে নীলনদের সাথে মোলাকাত হলেও নীলরঙের ছোঁয়া একটু কম কম লেগেছিলো তাই তৃষ্ণার্ত দুই চোখ তাকিয়ে রইলো নীলের সৌন্দর্য্য দেখার জন্য।আসোয়ান ড্যাম উনিশশো ষাট থেকে সত্তরের মাঝে তৈরী হয়েছিলো। জল নিয়ে এক দেশের সাথে আরেক দেশের ঝামেলা চিরকালের এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি।১৯৫২ সালে মিশরের বিদ্রোহের সময় প্রয়োজন বোঝা গিয়েছিলো নীলনদের জল সংরক্ষণের এবং বাঁধ দিয়ে জলস্রোতকে আটকে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও বন্যা নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা হতে পারে এবং সেটা পরিকল্পনাও হয়েছিলো। অনেক সমস্যা ও রাজনৈতিক অশান্তির মধ্যেও তখনকার প্রেসিডেন্ট নাসেরের তৎপরতায় এবং বিদেশের মূলতঃ রাশিয়ার সাহায্যে সুবিশাল অর্থের বিনিময়ে তৈরী হয় আসোয়ান ড্যাম এবং নাসের লেক। নাসের লেকের নীলরঙা সৌন্দর্য্য মনকে মুগ্ধ করে।আমরাও তাই কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে গেলাম নীলের নীলিমায়। ফটো তোলাতে সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠলাম।সময় আর স্মৃতিকে বন্দী করতে চাইলাম ক্যামেরার চোখে।
একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে বসলাম বাসের জানলায় নীল জলরাশি তখনও ডাকছে হাত বাড়িয়ে। চেয়ে রইলাম অপলক।পরবর্তী দেখার জন্য আবার প্রস্তুতি, চললাম ফিলে টেম্পলের পথে। ভুল করবেননা প্লিজ,এ ফিলে মাছের ফিলে টিলে নয় কিন্তু। বাস থেকে নেমে ওখানকার অধিবাসীদের ছোটছোট দোকানের পাশ দিয়ে এগিয়ে চললাম নদীর দিকে...নাইল! স্বপ্নের নীলনদ। ভূগোলে পড়েছিলাম এই নদকে মিশরের দুঃখ বলা হয়। নীলনদের ওপরে বোটে চেপে পা রাখলাম ফিলে মন্দিরে। পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা বেড়েছে,তবুও চোখে দেখার ইচ্ছে,মুখে আনন্দের হাসি।
ওজাইরিস মিশরীয় ইতিহাসের প্রথম শাসক যার শরীরকে আগে মমি করে পরে সমাধিস্থ করা হয়। প্রচুর ধন সম্পত্তি আর মণিমানিক্য আর তার ব্যবহারের জিনিস সমেত।কিন্তু মমি রাখার বাক্সে সীসাবদ্ধ করে তার ভাই সেথ তাকে মারতে চেয়েছিল। কিন্তু দৈবশক্তিতে বলীয়ান ওজাইরিসের পুনর্জন্ম হয়।
তার স্ত্রী আইসিস তখন গর্ভবতী তাই পুত্র হোরাসকে বাঁচাতে প্যাপিরাসের জঙ্গলে আশ্রয় নেয় তবুও সেথ সেখানে বিষাক্ত সাপ পাঠায় হোরাসকে মারতে।সেই জন্য মিশরের মাইথোলোজিতে সাপকে শয়তান বলেই মনে করা হত। আইসিস সামান্য নারী নয়,আইসিস মাতৃরূপী দেবী যে সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে ছুটে বেড়িয়েছে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। শেষে অস্ত্রও ধরেছে সন্তানের জন্য এবং সেখানে তার মাথা কেটে ফেলে সেথ। শেষে তাকে গরুর মাথা লাগিয়ে দেওয়া হয় এবং মিশরের বহু মন্দিরচিত্রে এই গরুর মাথা লাগানো আইসিসের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। যুদ্ধের সমাপ্তিতে দৈব নির্দেশে মানে ওজাইরাস তখন দেবতা তাই তার ছেলে হোরাস সিংহাসনে বসে। হোরাসই প্রথম রাজা,এবং এক দিক দিয়ে দেবতা।
ফিলে টেম্পল মাতৃরূপী দেবী আইসিসের মন্দির যেখানে নিয়ম মেনে একসময় পুজো হত। কিন্তু বাইজাইন্টাইন বাহিনীর আক্রমণে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় মন্দির। সব ধ্বংস করলেও আজও আইসিস পরম যত্নে শিশু হোরাসকে দুধ খাওয়াচ্ছে সেই পাথরে খোদাই ছবি এখনো অক্ষত। বাইজাইন্টাইনরাও এই প্রতিকৃতিকে মা মেরীর কোলে যীশু বলে হয়ত ভুল করেছিলো তাই নষ্ট করেনি। অদ্ভুত এই ধর্মের জন্য লড়াই,ধর্মান্ধ মানুষ নিজের ঈশ্বরকে প্রতিষ্ঠা করতে অন্যের ঈশ্বরকে খুন করে নষ্ট করে হাজার হাজার বছর আগের স্থাপত্য। মিশরের এই মন্দিরগুলো দেখে মনে হয়না এ সাধারণ মানুষের সৃষ্টি।ঠিক মনে হয় দেবতাদের সৃষ্টি বা অন্য গ্ৰহের কোন প্রাণীর সৃষ্টি। উঁচু উঁচু মসৃণ সোনালী পাথরে বানানো থাম দেখলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়।আর তেমনি খোদাই করা কারুকার্য। শুনলাম এই মন্দিরও কালের গ্ৰাসে আর ধ্বংসলীলায় চাপা পড়েছিলো নীলনদের তলায়।তাকে আবার পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। সেটাও প্রচুর শ্রমসাধ্য ব্যাপার। চারদিকে নীল জলের মাঝে,সোনালী পাথরে তৈরী ফিলে টেম্পল মন মুগ্ধ করলো।
নীলনদের ওপর দিয়ে আবার বোটে করে পারে ফেরা। ফেরার সময়ও চেয়ে রইলাম মুগ্ধ বিস্ময়ে অপার সৃষ্টির দিকে। বাসে করে আবার নীলনদের পাশ দিয়ে। এবার একদম সোজা ক্রুজে। এরপর তিনদিন এখানেই ভাসবো আমরা। আসোয়ানে নীলনদের তীরে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ক্রুজগুলো মোটামুটি একদম ঠাসা ট্যুরিস্টে প্রায়ই এক সময়ে ছাড়ে কখনো বা আগে পড়ে। একটার মধ্যে দিয়ে আরেকটায় যাতায়াত করা যায়।আমাদেরটার নাম ছিলো এম এস লিবার্টি চারতলা সুন্দর ছিমছাম। খাওয়া থাকা সুইমিং পুল,বার,ডাইনিং হল সব ব্যবস্থাই সুন্দর আছে। ঘরের সঙ্গে লাগানো ব্যালকনিও আছে যার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ক্রুজ চলাকালীন উপভোগ করা যায় নীলনদের অপরূপ দৃশ্য। বিছানায় বসে রোদের তাতে গরম করে নেওয়া যায় শরীরও।এছাড়া একদম ওপরে উঠে গেলেই সুইমিংপুলের ধারে শরীর এলিয়ে দিয়ে মন হারিয়ে যায় নীলের চারপাশের প্রকৃতিতে। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ,ডিনার,ইভিনিং টি সবই আছে, আর সব কিছুর সাথে আছে অপার নীলে ভেসে যাওয়ার আনন্দ।কোথাও নীলের চারপাশে শুধুই সবুজের সমারোহ,কোথাও বা ছোট ছোট পাহাড়।আর তারমধ্যে ভেসে চলেছে পাশাপাশি অন্য ক্রুজ,জাহাজ,বোট। তার মধ্যেই উপভোগ করলাম লকগেট খুলে ক্রুজ পার করানোর দৃশ্য ওপর থেকে। লাইন দিয়ে তিন চারটে ক্রুজ দাঁড়িয়ে। সবাই ডেকে অপেক্ষায় আছি এমন সময় নীচে জলের দিকে চোখ গেলো।এসে দাঁড়িয়েছে ভাসমান দোকান বোটে করে।আফ্রিকান মাঝিরা চাদর,টাওয়েল বিক্রির জন্য এসেছে।প্রায় এক তলায় দাঁড়িয়ে চারতলার সাথে কেনাবেচার সুদৃশ্য দৃশ্য দেখার মত।ওখান থেকেই দরদাম চলছে। আপনি রাজি থাকলে সোজা অসম্ভব শক্তিশালী হাতের টিপে নীচ থেকে ছুঁড়ে দেবে ওপরে পলিথিনে মুড়িয়ে জিনিস।আবার আপনি না নিতে চাইলে আপনি ছুঁড়ে দিন বোটে। তবে এভাবে কেনাকাটা না করাই ভালো।জলে পড়ে যাচ্ছে কিছুক্ষেত্রে ছাদ থেকে ফেলা চাদর ওরা ওগুলো অসম্ভব তৎপরতার সাথে সংগ্ৰহ করছে যা দেখার মত।
বিকেলে আমাদের নীলনদে বোটে ভ্রমণ হলো।তখনো বেশ রোদ ঝলমলে আকাশ,নীলের রঙ গাঢ় নীল। তীর ছাড়িয়ে চললাম আমরা,শহরের দৃশ্য মন কাড়লো। মাঝে মাঝে উড়ছে সাদা পাখির দল। আফ্রিকান মাঝি,লম্বা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী একাই মোটা গাছের গুঁড়ির মত দাঁড় টেনে চালাতে লাগলো বোট।তিনকোণা পাল হাওয়ায় উড়ছে নিজের ছন্দে। চোখের সাথে সাথে ক্যামেরার চোখও চললো নিজের ছন্দে। বোটেই মাতলো সবাই মাঝিদের সাথে ইজিপসিয়ান গানের ছন্দে আর নাচে।অদ্ভুত মাদকতা ওদের গানের সুরে। বোটেই চট করে গুছিয়ে বসলো ছোট খাটো একটা বাজার। নীলে ভাসতে ভাসতে সন্ধ্যে প্রায় হয়ে আসছে ফিরতে শুরু করলাম আমাদের ক্রুজের দিকে। সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় শুনলাম ছাড়বে ক্রুজ। পরেরদিনের জন্য আমাদের হাবিবি সময় দিলো ঠিক ভোর সাড়ে চারটায় বাসে উঠে পড়তে হবে। আমাদের পরের দিনের গন্তব্য আবু সিম্বল এক স্বপ্নের ঠিকানা। আজ এইটুকু থাক। আবার আসবো আবু সিম্বল নিয়ে।
সমাপ্ত:-
#মিশর_এক_বিস্ময়#
(৩)
#আবু_সিম্বেল#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
ক্রুজের ডাইনিং হল ছিলো বেসমেন্টে তাই প্রতিদিনই আমরা তিনবার করে সেখানে হাজির হতাম পেটপুজোর উদ্দেশ্যে। বেশ জমাটি খাওয়া দাওয়ার আয়োজন..রকমারি স্যালাড,বেকারি আইটেম প্রচুর সকালের ব্রেকফাস্টে পাউরুটি,মাখন,ডিম,সসেজ,কর্নফ্লেক্স,ফল,মিঠাই,রুটি আরো কত কি।সব খাওয়া আর দেখাও সব সময় সম্ভব হয়ে উঠতো না সকালে দুপুরে আর রাতে তাই ওজন বুঝে ভোজন সেরে নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আমরাও ঠিক তেমনি আবু সিম্বেল যাওয়ার আগে রাতে হাল্কা কিছু খেয়ে ঢুকলাম ঘরে,ভোর সাড়ে চারটায় বাস ছাড়বে সুতরাং অনেক তাড়াতাড়ি ওঠা। বাড়িতে ছেলেমেয়ের খবর নেওয়ার জন্য ঘুমোতে প্রতিদিনই আমার দেরি হয়ে যেত তবে একটা সুবিধা ওখানকার সময় এখানকার থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা পিছিয়ে তাই আমি অনায়াসেই ইজিপ্টে বসে কলকাতার সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে হিসেব করে রাত জাগতাম মানে আড্ডা মারা আর গার্জেনগিরি দুইই করতাম পোলাপানেদের সাথে। ওখানে একটা ইজিপ্ট ভোডা সিমকার্ড নিই যেটাতে তিনদিন কথা বলার পরেই জানায় পয়সা খতম তবে ভাগ্য ভালো কোনরকম হোয়াটস আ্যপে হাই হ্যালো, আছিস ভালো?সাবধানে থাকিস,সময়ে খেয়ে নিস এইটুকুই হত।
তবে সত্যিই ওরা দুই ভাইবোন খুব লক্ষ্মী হয়ত ওদের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভবই হতনা আমার পক্ষে যাওয়া।অনেকগুলো দিন নিজেরা ম্যানেজ করেছে কোন অভিযোগ ছাড়াই। প্রতিদিনের মত সেদিনও খোঁজ খবর নিয়েই ঘুমোলাম যথারীতি আমার কর্তার খুটখাট আওয়াজে রাত তিনটের সময়ই উঠে গেলাম ওদের ওয়েক আপ কলের অনেক আগেই। রাতের ক্লান্তি বিদায় করতে একদম স্নান করে চারটে পনেরোয় রিসেপসনের সামনে। বেশ কড়া ঠান্ডা কিন্তু তখন ওখানে সাথে হাওয়াও। একদম সাড়ে চারটেয় বাস ছাড়লো পুলিশ পাহারায়। মোটামুটি দূরের ট্রিপগুলো ওরা এসকর্ট নিয়েই করাচ্ছিলো,অতিথিদের মানে আমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই। চারিদিকে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার তার মধ্যে আমরা চললাম আবু সিম্বেলের পথে।শুনলাম প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টার পথ রাস্তায় একটা ব্রেক তো থাকেই তাই সব নিয়ে। মরুভূমি দুইপাশে তার মধ্যে বাস চলেছে লাইট জ্বেলে।ওখানে সকালের আলো ফোটে প্রায় ছটার আসেপাশে। হাবিবি গুডমর্ণিং জানিয়ে একটা ছোট ঘুম দিয়ে দিতে বললো।
দুপাশে মরুভূমি মাঝে রাস্তা এমনভাবে বেশ কিছুক্ষণ চলার পর বাস একদম বালিয়াড়িতে ঢুকে এলো রাস্তা ছেড়ে। মরুভূমির মধ্যে একটা খুব সাধারণ চায়ের দোকান আর টয়লেটের ব্যবস্থা।সবাই নেমে গেলো বাস থেকে মানে উদ্দেশ্য চায়ে গরম আর টয়লেটে হাল্কা হওয়া।বাইরে যেমন হাওয়া তেমন ঠান্ডা। সামনে পেছনে দিগন্তবিস্তৃত মরুভূমির শোভায় আমি তখন মুগ্ধ যদিও ঠান্ডায় হাত কাঁপছে। পূবদিকটা তখন লালচে আভায় হাসছে,আমিও অপলক তাকিয়ে। ক্যামেরা বের করে সূর্যোদয়কে ক্যামেরাবন্দী করলাম।এমন ভাগ্য আগে কখনো হয়নি,পাহাড়ে,নদীতে, সমুদ্রে সূর্য ওঠা দেখেছি সেদিন মরুভূমিতে দেখলাম।একদম অসাধারণ লাগলো। সবাই যখন চায়ের খোঁজে আমি তখন সূর্যের হামাগুড়ি দিয়ে পৃথিবীতে পা রাখা দেখছি।
একটু দূরে একটা ছাউনির তলায় একটা ঘোড়া ছিলো বাঁধা।তার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। তবে ঠান্ডায় জমে গিয়ে তখন মনে হচ্ছিলো কতক্ষণে বাসে বসবো। যাক বাস ছাড়লো আর প্রায় ঘন্টা দেড়েকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম আবু সিম্বেল। ছেলে বলছিলো ওরই রোমাঞ্চ হচ্ছে ভেবে আমি কাল আবু সিম্বেল দেখবো। আবু সিম্বেল আসোয়ানের দক্ষিণ অংশে একদম নাসের লেকের লাগোয়া আবু সিম্বেল গ্ৰামে অবস্থিত। রুক্ষতার প্রতীক প্রায় গাছপালা শূন্য এই গ্ৰাম আর পাশেই নাসের লেক।আবু সিম্বেল বানিয়েছিলেন রামেসেস টু এখানে পরপর দুটো বিশাল মন্দির আছে।প্রথমটা রামেসেসের এবং পরেরটা তার প্রিয়তমা স্ত্রী নেফারতিতির। রামেসেসের শতাধিক স্ত্রীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী,বুদ্ধিমতী এবং কূটনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন নেফারতিতিই ছিলেন তার সবচেয়ে প্রিয়।ভাবতে পারছেন শতাধিকের মধ্যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা,কি অসাধারণ ছিলেন এই মহিলা। আর সে যুগে পুরুষেরাই বা কেমন ছিলো। যাক সে সব কথা।তবে শুনলাম প্রেমের কারণে নয় নিজের মাহাত্ম্য আর ইজিপ্সিয়ান ধর্মের প্রচারের কারণেই প্রথমে নিজের মন্দির ও পরে পাশে প্রিয় রাণীর মন্দির নির্মাণ করেন।প্রায় কুড়ি বছর লেগেছিলো মন্দির নির্মাণে।বর্তমানে লেক নাসেরের সুবিশাল রির্জাভারওয়ারের ওপর এই বিশালাকার মন্দির দুটো অবস্থিত। মন্দির দুটোকে পুনরায় স্থাপন করা হয়েছে শুনে আমি চমকে গেছিলাম। এত বড় মন্দির আর স্থাপত্যকে পুনরায় স্থাপন!
শুনলাম কালের থাবায় এক সময় মরুভূমির বালির তলায় চাপা পড়ে গিয়েছিল আবু সিম্বেল। সুইস আনুসন্ধানী লুই বুরখার্ট একসময় মরুভূমিতে অনুসন্ধান চালানোর সময় ঝড়ে বালি উড়ে যেতে একটা বিশালাকার ছাদ দেখতে পান। বুঝতে পারেন কিছু আছে নিচে কিন্তু তিনি অনুসন্ধান আর না এগিয়ে তার বন্ধু বেলজোনিকে ঘটনাটা বলেন।উনি প্রথমে এসে কিছু করতে না পারলেও পরে দলবল সহ এসে মন্দিরের প্রবেশপথ উন্মুক্ত করে ইতিহাসের গুরুত্ব না খুঁজেই মন্দিরের ধন সম্পত্তি নিয়ে পালিয়ে যান। এই ভাবেই আবিষ্কৃত হয় আবু সিম্বেল। একথা শোনা যায় স্থানীয় এক কমবয়েসী ছেলে বালিতে চাপা পড়া সেই মন্দির পর্যটকদের দেখাতো আর তার নামেই মন্দিরের নাম হয় আবু সিম্বেল।
পরম পরাক্রমী ও শক্তিশালী রামেসেস টু নিজেকে দেবতা বলেই মনে করতেন তাই বাইরে তার নিজের বিভিন্ন সাজে চারটে মূর্তি তার নিচে তার সন্তানদের এবং হয়ত তাদের মায়েদের।আর ভেতরে আমুন,রা হারাখতি,প্তহ এবং রামেসেস নিজে। মিশরের মন্দিরের একটাই বৈশিষ্ট্য সবজায়গাতেই সূর্যের আলোকে আলোকিত হত মন্দিরগুলো ।এরা প্রত্যেকেই সূর্যের শক্তিতে বিশ্বাস করতেন। প্রবেশদ্বারের ওপরে রা হারাখতির মূর্তি যাকে পুজো করছেন দুই হাত দিয়ে রামেসেস।আর দেখা যায় সারি দিয়ে বেবুনের মূর্তি সূর্যকে দু হাত তুলে আরাধনা করছে। মিশরের সব মন্দিরের ভেতরেই ত্রিকোণাকৃতি পিরামিডের মত তাই ভেতরের অংশ কম উঁচু। প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকে বিরাট হলঘরে রামেসিসের স্তম্ভের আকারে আটটি মূর্তি আছে যা দেখলে বিস্ময়ে অবাক হতে হয়। এছাড়াও দেওয়ালে রয়েছে নানান যুদ্ধ ও যুদ্ধ বিজয়ের চিত্র।
দ্বিতীয় মন্দির তুলনামূলক ভাবে ছোট,রানী নেফারতিতির মন্দির। এখানেও বড় আকারের ছয়টি মূর্তি আছে উচ্চতা পঁয়ত্রিশফুট মূর্তিগুলোর। দুই পাশেই দুটো রামেসেসের মূর্তির মাঝে একটা করে রানীর মূর্তি। অর্থাৎ চারটে রামেসেসের এবং দুটো নেফারতিতির। সব মূর্তিগুলো সমান উচ্চতার।মজার কথা এই যে মিশরে কোন সময়ই রাণীদের মূর্তির উচ্চতা রাজাদের হাঁটুর ওপর উঠতনা।কিন্তু এই ক্ষেত্রে রাজা রানীর মূর্তি একই উচ্চতার দেখে মনে হয় রাণী নেফারতিতি নিজের যোগ্যতায় রাজার হাঁটুর নীচে পড়ে না থেকে সমকক্ষ হতে পেরেছেন।বা রাজা তাকে সেই সম্মান দিয়েছেন।
আর এখানেই সৃষ্টি হয়েছে অমর প্রেমের ইতিহাস তাই তো সুন্দরী নেফারতিতি আজও প্রসিদ্ধ। দোকানের শো পিসে,ছবিতে সব জায়গায় দেখা যায় তার সুন্দর নিষ্পাপ মুখের ছবি যা মন কাড়ে সবার। তবে আমার খুব পছন্দ তুতেন খামেন এবং নেফারতিতির প্রতিকৃতি,আসলে ছোট থেকে অনেক জায়গায় ছবি দেখেছি এদের তাই হয়ত হবে।
মন্দিরের দিকে তাকিয়ে কি দেখবো,আর কি দেখলাম প্রথমে সবার উত্তেজনায় আর ভিড়ে কিছুই বুঝে উঠতে পারলামনা। এ যে এক বিস্ময়,কি অসাধারণ সৃষ্টি!এত বড় মন্দির বানিয়েছিলো কি ভাবে! তবে অনেক কষ্টে আবিষ্কৃত হওয়া এই বিশাল সৃষ্টি নাকি হারিয়ে যেতে বসেছিলো। আসোয়ানের বৃহত্তম বাঁধের কথা আগেই বলেছি সেই বাঁধের জল আটকাতে গিয়ে সুবিশাল লেক তৈরী হয় যা নাসের লেক নামে পরিচিত।সেই লেকের জলে প্লাবিত হতে বসেছিলো মন্দির। তখন শুরু হয় এই যুগের স্থপতিদের কারিগরি,ইউনেস্কোর সাহায্যে ১৯৬৪ সালে মন্দিরটিকে প্রায় হাজারেরও বেশি টুকরোতে কেটে ফেলা হয়।
কি সাঙ্ঘাতিক কাজ ভাবতে পারছেন!টুকরো গুলোকে কাছের পাহাড়ের ওপর তোলা হয়। এক একটা টুকরোর ওজন প্রায় ত্রিশ টন। উফফ্ ভাবা যায়না জাস্ট।প্রতিটা টুকরো নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা ছিলো এই ভাবে নাসের লেকের সুবিশাল রিজার্ভারের ওপর মন্দির দুটোকে নতুন করে সাজানো হয়। শুধু ছাদটাকে একই আদলে বানানো হয় পাথরের পরিবর্তে কংক্রিটের, দেখতে হয় উল্টোনো কড়াইয়ের মত।আর অঙ্ক কষে মন্দিরকে এমনভাবে বসানো হয় যাতে সূর্যের রশ্মিতে স্নান করতে পারে মন্দির এবং মূর্তি। অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ এছাড়া আর কোন কিছুই বলার নেই। মানুষই ভাঙে মানুষই গড়ে মানুষই প্রাণ নেয় এবং প্রয়োজনে বাঁচায়। মানুষের সুমতিতে আর যত্নে বাঁচুক এই অসাধারণ স্থাপত্যগুলো সেটাই চাই।
আবু সিম্বেলকে প্রণাম জানালাম না না প্রণাম জানালাম খ্রীষ্টপূর্ব হাজার হাজার বছর আগের সৃষ্টি আর স্রষ্টাদের। মনের তৃপ্তিতে রোদ মেখে ফিরলাম বাসের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় যথারীতি একটা ব্রেক এলো চা কফি খাবার। আমাদের হাবিবি দৃষ্টি আকর্ষণ করালো দূরে,সত্যিই তো কি ওটা ? কি সুন্দর জলে মরুপাহাড়ের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। পরক্ষণেই বুঝতে পারি ওটা মরীচিকা। মরীচিকার দেখাও পেলাম তবে অনেকটা দূর থেকে। ছবি তোলার চেষ্টাও করলাম, খুব একটা ভালো এলোনা। কিন্তু মুগ্ধ হলাম দূর থেকেই।
ক্রুজে ফিরে এলাম চটজলদি ফ্রেশ হয়ে ছুটলাম লাঞ্চ খেতে।তখনো চলছে খাওয়া, বাঙালির ডাল ঝোল খাওয়া পেটে বেশ ভালোমন্দ জুটছে কদিন ধরেই তবে কথায় বলেনা গরীবের পায়েশ খাওয়ার অভ্যেস নেই আমারও সেই হাল। কিছু খাই,কিছু দেখি আবার কয়েকটা দেখে ভাবি।যাকগে পেট খালি থাকলে ফল দিয়ে ভরিয়ে নেবো। দুর্দান্ত খেঁজুর আর ফ্রাই খেলাম আর মাল্টা। রাস্তার ধারে গাছ তাতে কমলা রঙের ফল ঝুলছে দেখে চক্ষু সার্থক করলাম দু একটা পাড়তে পারলে মন্দ হতনা। যাক খাওয়া শেষ করে ওপরে উঠে একদম বিশ্রাম রোদে পিঠ দিয়ে। কিছুক্ষণ বাদেই তো আবার চা আর কেক নিয়ে বসতে হবে। এটাই সুখ হয়ত বাইরে এসে খাও আর ঘোরো।
রাতের খাওয়ার পর এক সুন্দর আনন্দময় পরিবেশে দেখলাম বেলি ড্যান্স। মিশরের বেলিড্যান্স সত্যিই অনবদ্য ঐ পরিবেশে এবং বাজনার তালে তালে হাস্যময়ী সুন্দরী মেয়েটি মজা করে সবাইকে আনন্দ দিলো নেচে।আমাদের দলের কেউ কেউ সঙ্গী হলেন তার।এই ব্যাপারটা আমার ঠিক আসেনা তাই উপভোগ করলাম মনের আনন্দে আর হাততালিতে। শেষে আমার কর্তার সাথে বেলি ড্যান্সারের ছবি তুলে দিয়ে সেদিনের মত সবাইকে গুড নাইট জানিয়ে নিজের ঘরে এলাম। আজ এই টুকুই থাক। এরপর আসবো এডফু নিয়ে।
সমাপ্ত:-
সন্ধ্যেবেলায় হেঁটে হেঁটে একদম একটুখানি গিয়েই ক্রুজ থেকে ওপরে উঠে দেখলাম কমোম্বো টেম্পল।রাজা ষষ্ঠ টলং এই মন্দির বানান। যীশুর জন্মের একহাজার চারশো বছর আগে নির্মিত হয় এই মন্দির।এই মন্দির হোরাস,ফ্যালকন এবং কুমীর দেবতার পুজো হত। একটা বিরাট গভীর কুয়ো দেখলাম লাল ইটের তৈরী সেই প্রাচীন যুগে যেখানে কুমীর রাখা হত।গভীরতা দেখে মাথাটা একটু ঘুরে গেলো। এখনো তবে খনন কার্য চলছে। লালচে আলোয় দেখলাম লালচে মন্দির আর তারপর ফিরে আসা শুধুই মুগ্ধতা নিয়ে।একটা ছোটখাটো মিউজিয়মও আছে যেখানে ব্যান্ডেজ করা কুমীর মানে কুমীরের মমিও দেখলাম।এছাড়া কুমীর শুটকিও দেখলাম। ধন্য কুমীর দেবতা,তার আশীর্বাদ নিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে ফেরা ক্রুজে। পিরামিড রহস্য,দেবতা,মমি,মন্দির,ফ্যারাও আর রাজা এমন কত সৃষ্টি মনের মধ্যে জীবন্ত হয়ে রইলো। বিস্ময় আর ভালোলাগা নিয়ে আজ ইতি টানছি।
সমাপ্ত:-
# Revised edition#
#মিশর_এক_বিস্ময়#
(৩)
#আবু_সিম্বেল#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
ক্রুজের ডাইনিং হল ছিলো বেসমেন্টে তাই প্রতিদিনই আমরা তিনবার করে সেখানে হাজির হতাম পেটপুজোর উদ্দেশ্যে। বেশ জমাটি খাওয়া দাওয়ার আয়োজন..রকমারি স্যালাড,বেকারি আইটেম প্রচুর সকালের ব্রেকফাস্টে পাউরুটি,মাখন,ডিম,সসেজ,কর্নফ্লেক্স,ফল,মিঠাই,রুটি আরো কত কি।সব খাওয়া আর দেখাও সব সময় সম্ভব হয়ে উঠতো না সকালে দুপুরে আর রাতে তাই ওজন বুঝে ভোজন সেরে নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আমরাও ঠিক তেমনি আবু সিম্বেল যাওয়ার আগে রাতে হাল্কা কিছু খেয়ে ঢুকলাম ঘরে,ভোর সাড়ে চারটায় বাস ছাড়বে সুতরাং অনেক তাড়াতাড়ি ওঠা। বাড়িতে ছেলেমেয়ের খবর নেওয়ার জন্য ঘুমোতে প্রতিদিনই আমার দেরি হয়ে যেত তবে একটা সুবিধা ওখানকার সময় এখানকার থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা পিছিয়ে তাই আমি অনায়াসেই ইজিপ্টে বসে কলকাতার সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে হিসেব করে রাত জাগতাম মানে আড্ডা মারা আর গার্জেনগিরি দুইই করতাম পোলাপানেদের সাথে। ওখানে একটা ইজিপ্ট ভোডা সিমকার্ড নিই যেটাতে তিনদিন কথা বলার পরেই জানায় পয়সা খতম তবে ভাগ্য ভালো কোনরকম হোয়াটস আ্যপে হাই হ্যালো, আছিস ভালো?সাবধানে থাকিস,সময়ে খেয়ে নিস এইটুকুই হত।
তবে সত্যিই ওরা দুই ভাইবোন খুব লক্ষ্মী হয়ত ওদের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভবই হতনা আমার পক্ষে যাওয়া।অনেকগুলো দিন নিজেরা ম্যানেজ করেছে কোন অভিযোগ ছাড়াই। প্রতিদিনের মত সেদিনও খোঁজ খবর নিয়েই ঘুমোলাম যথারীতি আমার কর্তার খুটখাট আওয়াজে রাত তিনটের সময়ই উঠে গেলাম ওদের ওয়েক আপ কলের অনেক আগেই। রাতের ক্লান্তি বিদায় করতে একদম স্নান করে চারটে পনেরোয় রিসেপসনের সামনে। বেশ কড়া ঠান্ডা কিন্তু তখন ওখানে সাথে হাওয়াও। একদম সাড়ে চারটেয় বাস ছাড়লো পুলিশ পাহারায়। মোটামুটি দূরের ট্রিপগুলো ওরা এসকর্ট নিয়েই করাচ্ছিলো,অতিথিদের মানে আমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই। চারিদিকে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার তার মধ্যে আমরা চললাম আবু সিম্বেলের পথে।শুনলাম প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টার পথ রাস্তায় একটা ব্রেক তো থাকেই তাই সব নিয়ে। মরুভূমি দুইপাশে তার মধ্যে বাস চলেছে লাইট জ্বেলে।ওখানে সকালের আলো ফোটে প্রায় ছটার আসেপাশে। হাবিবি গুডমর্ণিং জানিয়ে একটা ছোট ঘুম দিয়ে দিতে বললো।
দুপাশে মরুভূমি মাঝে রাস্তা এমনভাবে বেশ কিছুক্ষণ চলার পর বাস একদম বালিয়াড়িতে ঢুকে এলো রাস্তা ছেড়ে। মরুভূমির মধ্যে একটা খুব সাধারণ চায়ের দোকান আর টয়লেটের ব্যবস্থা।সবাই নেমে গেলো বাস থেকে মানে উদ্দেশ্য চায়ে গরম আর টয়লেটে হাল্কা হওয়া।বাইরে যেমন হাওয়া তেমন ঠান্ডা। সামনে পেছনে দিগন্তবিস্তৃত মরুভূমির শোভায় আমি তখন মুগ্ধ যদিও ঠান্ডায় হাত কাঁপছে। পূবদিকটা তখন লালচে আভায় হাসছে,আমিও অপলক তাকিয়ে। ক্যামেরা বের করে সূর্যোদয়কে ক্যামেরাবন্দী করলাম।এমন ভাগ্য আগে কখনো হয়নি,পাহাড়ে,নদীতে, সমুদ্রে সূর্য ওঠা দেখেছি সেদিন মরুভূমিতে দেখলাম।একদম অসাধারণ লাগলো। সবাই যখন চায়ের খোঁজে আমি তখন সূর্যের হামাগুড়ি দিয়ে পৃথিবীতে পা রাখা দেখছি।
একটু দূরে একটা ছাউনির তলায় একটা ঘোড়া ছিলো বাঁধা।তার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। তবে ঠান্ডায় জমে গিয়ে তখন মনে হচ্ছিলো কতক্ষণে বাসে বসবো। যাক বাস ছাড়লো আর প্রায় ঘন্টা দেড়েকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম আবু সিম্বেল। ছেলে বলছিলো ওরই রোমাঞ্চ হচ্ছে ভেবে আমি কাল আবু সিম্বেল দেখবো। আবু সিম্বেল আসোয়ানের দক্ষিণ অংশে একদম নাসের লেকের লাগোয়া আবু সিম্বেল গ্ৰামে অবস্থিত। রুক্ষতার প্রতীক প্রায় গাছপালা শূন্য এই গ্ৰাম আর পাশেই নাসের লেক।আবু সিম্বেল বানিয়েছিলেন রামেসেস টু এখানে পরপর দুটো বিশাল মন্দির আছে।প্রথমটা রামেসেসের এবং পরেরটা তার প্রিয়তমা স্ত্রী নেফারতিতির। রামেসেসের শতাধিক স্ত্রীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী,বুদ্ধিমতী এবং কূটনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন নেফারতিতিই ছিলেন তার সবচেয়ে প্রিয়।ভাবতে পারছেন শতাধিকের মধ্যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা,কি অসাধারণ ছিলেন এই মহিলা। আর সে যুগে পুরুষেরাই বা কেমন ছিলো। যাক সে সব কথা।তবে শুনলাম প্রেমের কারণে নয় নিজের মাহাত্ম্য আর ইজিপ্সিয়ান ধর্মের প্রচারের কারণেই প্রথমে নিজের মন্দির ও পরে পাশে প্রিয় রাণীর মন্দির নির্মাণ করেন।প্রায় কুড়ি বছর লেগেছিলো মন্দির নির্মাণে।বর্তমানে লেক নাসেরের সুবিশাল রির্জাভারওয়ারের ওপর এই বিশালাকার মন্দির দুটো অবস্থিত। মন্দির দুটোকে পুনরায় স্থাপন করা হয়েছে শুনে আমি চমকে গেছিলাম। এত বড় মন্দির আর স্থাপত্যকে পুনরায় স্থাপন!
শুনলাম কালের থাবায় এক সময় মরুভূমির বালির তলায় চাপা পড়ে গিয়েছিল আবু সিম্বেল। সুইস আনুসন্ধানী লুই বুরখার্ট একসময় মরুভূমিতে অনুসন্ধান চালানোর সময় ঝড়ে বালি উড়ে যেতে একটা বিশালাকার ছাদ দেখতে পান। বুঝতে পারেন কিছু আছে নিচে কিন্তু তিনি অনুসন্ধান আর না এগিয়ে তার বন্ধু বেলজোনিকে ঘটনাটা বলেন।উনি প্রথমে এসে কিছু করতে না পারলেও পরে দলবল সহ এসে মন্দিরের প্রবেশপথ উন্মুক্ত করে ইতিহাসের গুরুত্ব না খুঁজেই মন্দিরের ধন সম্পত্তি নিয়ে পালিয়ে যান। এই ভাবেই আবিষ্কৃত হয় আবু সিম্বেল। একথা শোনা যায় স্থানীয় এক কমবয়েসী ছেলে বালিতে চাপা পড়া সেই মন্দির পর্যটকদের দেখাতো আর তার নামেই মন্দিরের নাম হয় আবু সিম্বেল।
পরম পরাক্রমী ও শক্তিশালী রামেসেস টু নিজেকে দেবতা বলেই মনে করতেন তাই বাইরে তার নিজের বিভিন্ন সাজে চারটে মূর্তি তার নিচে তার সন্তানদের এবং হয়ত তাদের মায়েদের।আর ভেতরে আমুন,রা হারাখতি,প্তহ এবং রামেসেস নিজে। মিশরের মন্দিরের একটাই বৈশিষ্ট্য সবজায়গাতেই সূর্যের আলোকে আলোকিত হত মন্দিরগুলো ।এরা প্রত্যেকেই সূর্যের শক্তিতে বিশ্বাস করতেন। প্রবেশদ্বারের ওপরে রা হারাখতির মূর্তি যাকে পুজো করছেন দুই হাত দিয়ে রামেসেস।আর দেখা যায় সারি দিয়ে বেবুনের মূর্তি সূর্যকে দু হাত তুলে আরাধনা করছে। মিশরের সব মন্দিরের ভেতরেই ত্রিকোণাকৃতি পিরামিডের মত তাই ভেতরের অংশ কম উঁচু। প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকে বিরাট হলঘরে রামেসিসের স্তম্ভের আকারে আটটি মূর্তি আছে যা দেখলে বিস্ময়ে অবাক হতে হয়। এছাড়াও দেওয়ালে রয়েছে নানান যুদ্ধ ও যুদ্ধ বিজয়ের চিত্র।
দ্বিতীয় মন্দির তুলনামূলক ভাবে ছোট,রানী নেফারতিতির মন্দির। এখানেও বড় আকারের ছয়টি মূর্তি আছে উচ্চতা পঁয়ত্রিশফুট মূর্তিগুলোর। দুই পাশেই দুটো রামেসেসের মূর্তির মাঝে একটা করে রানীর মূর্তি। অর্থাৎ চারটে রামেসেসের এবং দুটো নেফারতিতির। সব মূর্তিগুলো সমান উচ্চতার।মজার কথা এই যে মিশরে কোন সময়ই রাণীদের মূর্তির উচ্চতা রাজাদের হাঁটুর ওপর উঠতনা।কিন্তু এই ক্ষেত্রে রাজা রানীর মূর্তি একই উচ্চতার দেখে মনে হয় রাণী নেফারতিতি নিজের যোগ্যতায় রাজার হাঁটুর নীচে পড়ে না থেকে সমকক্ষ হতে পেরেছেন।বা রাজা তাকে সেই সম্মান দিয়েছেন।
আর এখানেই সৃষ্টি হয়েছে অমর প্রেমের ইতিহাস তাই তো সুন্দরী নেফারতিতি আজও প্রসিদ্ধ। দোকানের শো পিসে,ছবিতে সব জায়গায় দেখা যায় তার সুন্দর নিষ্পাপ মুখের ছবি যা মন কাড়ে সবার। তবে আমার খুব পছন্দ তুতেন খামেন এবং নেফারতিতির প্রতিকৃতি,আসলে ছোট থেকে অনেক জায়গায় ছবি দেখেছি এদের তাই হয়ত হবে।
মন্দিরের দিকে তাকিয়ে কি দেখবো,আর কি দেখলাম প্রথমে সবার উত্তেজনায় আর ভিড়ে কিছুই বুঝে উঠতে পারলামনা। এ যে এক বিস্ময়,কি অসাধারণ সৃষ্টি!এত বড় মন্দির বানিয়েছিলো কি ভাবে! তবে অনেক কষ্টে আবিষ্কৃত হওয়া এই বিশাল সৃষ্টি নাকি হারিয়ে যেতে বসেছিলো। আসোয়ানের বৃহত্তম বাঁধের কথা আগেই বলেছি সেই বাঁধের জল আটকাতে গিয়ে সুবিশাল লেক তৈরী হয় যা নাসের লেক নামে পরিচিত।সেই লেকের জলে প্লাবিত হতে বসেছিলো মন্দির। তখন শুরু হয় এই যুগের স্থপতিদের কারিগরি,ইউনেস্কোর সাহায্যে ১৯৬৪ সালে মন্দিরটিকে প্রায় হাজারেরও বেশি টুকরোতে কেটে ফেলা হয়।
কি সাঙ্ঘাতিক কাজ ভাবতে পারছেন!টুকরো গুলোকে কাছের পাহাড়ের ওপর তোলা হয়। এক একটা টুকরোর ওজন প্রায় ত্রিশ টন। উফফ্ ভাবা যায়না জাস্ট।প্রতিটা টুকরো নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা ছিলো এই ভাবে নাসের লেকের সুবিশাল রিজার্ভারের ওপর মন্দির দুটোকে নতুন করে সাজানো হয়। শুধু ছাদটাকে একই আদলে বানানো হয় পাথরের পরিবর্তে কংক্রিটের, দেখতে হয় উল্টোনো কড়াইয়ের মত।আর অঙ্ক কষে মন্দিরকে এমনভাবে বসানো হয় যাতে সূর্যের রশ্মিতে স্নান করতে পারে মন্দির এবং মূর্তি। অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ এছাড়া আর কোন কিছুই বলার নেই। মানুষই ভাঙে মানুষই গড়ে মানুষই প্রাণ নেয় এবং প্রয়োজনে বাঁচায়। মানুষের সুমতিতে আর যত্নে বাঁচুক এই অসাধারণ স্থাপত্যগুলো সেটাই চাই।
আবু সিম্বেলকে প্রণাম জানালাম না না প্রণাম জানালাম খ্রীষ্টপূর্ব হাজার হাজার বছর আগের সৃষ্টি আর স্রষ্টাদের। মনের তৃপ্তিতে রোদ মেখে ফিরলাম বাসের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় যথারীতি একটা ব্রেক এলো চা কফি খাবার। আমাদের হাবিবি দৃষ্টি আকর্ষণ করালো দূরে,সত্যিই তো কি ওটা ? কি সুন্দর জলে মরুপাহাড়ের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। পরক্ষণেই বুঝতে পারি ওটা মরীচিকা। মরীচিকার দেখাও পেলাম তবে অনেকটা দূর থেকে। ছবি তোলার চেষ্টাও করলাম, খুব একটা ভালো এলোনা। কিন্তু মুগ্ধ হলাম দূর থেকেই।
ক্রুজে ফিরে এলাম চটজলদি ফ্রেশ হয়ে ছুটলাম লাঞ্চ খেতে।তখনো চলছে খাওয়া, বাঙালির ডাল ঝোল খাওয়া পেটে বেশ ভালোমন্দ জুটছে কদিন ধরেই তবে কথায় বলেনা গরীবের পায়েশ খাওয়ার অভ্যেস নেই আমারও সেই হাল। কিছু খাই,কিছু দেখি আবার কয়েকটা দেখে ভাবি।যাকগে পেট খালি থাকলে ফল দিয়ে ভরিয়ে নেবো। দুর্দান্ত খেঁজুর আর নীলনদের টাটকা মাছের ফ্রাই খেলাম আর খেলাম মাল্টা মন ভরে অনেক খাবারের মাঝে। রাস্তার ধারেও মাল্টা গাছ তাতে কমলা রঙের ফল ঝুলছে দেখে চক্ষু সার্থক করলাম দু একটা পাড়তে পারলে মন্দ হতনা। যাক খাওয়া শেষ করে ওপরে উঠে একদম বিশ্রাম রোদে পিঠ দিয়ে। কিছুক্ষণ বাদেই তো আবার চা আর কেক নিয়ে বসতে হবে। এটাই সুখ হয়ত বাইরে এসে জাস্ট দেখো,খাও আর ঘোরো।
আমরা ফিরে আসার পরই ক্রুজ চলতে শুরু করেছে সন্ধ্যেবেলায় এসে ভিড়লো কমোম্বোর ঘাটে। আগে থেকেই হাবিবি বলেই রেখেছিলো।ওমা ক্রুজ থেকে নেমেই সিঁড়ি বেয়ে ওপরে একটু খানি হাঁটতেই মন ভরলো ঝলমলে আলোতে দেখলাম কমোম্বো টেম্পল।রাজা ষষ্ঠ টলেমি এই মন্দির বানান। গ্ৰীক রোমান রাজ্যকালে এটা গ্ৰীকদের উপনিবেশে পরিণত হয়েছিলো।যীশুর জন্মের একহাজার চারশো বছর আগে নির্মিত হয় এই মন্দির।এই মন্দির হোরাস অর্থাৎ ফ্যালকন(বাজপাখির মত মুখ যে দেবতার)এবং কুমীর দেবতার পুজো হত। একটা বিরাট গভীর কুয়ো দেখলাম লাল ইটের তৈরী সেই প্রাচীন যুগে যেখানে কুমীর রাখা হত।গভীরতা দেখে মাথাটা একটু ঘুরে গেলো। এখনো তবে খনন কার্য চলছে উদ্ধার হচ্ছে না জানা অনেক অনেক তথ্য। লালচে আলোয় দেখলাম লালচে মন্দির যার দেওয়ালে দেওয়ালে হায়ারোগ্লিফিক লিপি এবং স্তম্ভগুলো রেখে গেছে অদ্ভুত জ্যামেতিক পরিমাপের উৎকর্ষতা।খ্রীষ্টপূর্ব সময়ে মানুষের উন্নতি,বুদ্ধি ও স্থাপত্যের নিদর্শন আজও শুধুই বিস্ময় আর মুগ্ধতা রেখে যায়।আর তারপর ফিরে আসা শুধুই একরাশ ভালোলাগা নিয়ে।একটা ছোটখাটো মিউজিয়মও আছে যেখানে ব্যান্ডেজ করা কুমীর মানে কুমীরের মমিও দেখলাম।এছাড়া কুমীর শুটকিও দেখলাম। ধন্য কুমীর দেবতা,তার আশীর্বাদ নিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে ফেরা ক্রুজে। পিরামিড রহস্য,দেবতা,মমি,মন্দির,ফ্যারাও আর রাজা এমন কত সৃষ্টি মনের মধ্যে জীবন্ত হয়ে রইলো।
রাতের খাওয়ার পর এক সুন্দর আনন্দময় পরিবেশে দেখলাম বেলি ড্যান্স। মিশরের বেলিড্যান্স সত্যিই অনবদ্য ঐ পরিবেশে এবং বাজনার তালে তালে হাস্যময়ী সুন্দরী মেয়েটি মজা করে সবাইকে আনন্দ দিলো নেচে।আমাদের দলের কেউ কেউ সঙ্গী হলেন তার।আমাদের ট্যুর অর্গানাইজার সস্ত্রীক দারুণ নাচলেন। এই ব্যাপারটা আমার ঠিক আসেনা মানে পারিনা বলতে লজ্জা নেই তাই উপভোগ করলাম মনের আনন্দে আর হাততালিতে। শেষে আমার কর্তার সাথে বেলি ড্যান্সারের ছবি তুলে দিয়ে সেদিনের মত সবাইকে গুড নাইট জানিয়ে নিজের ঘরে এলাম। আজ এই টুকুই থাক। এরপর আসবো এডফু নিয়ে।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment