#সোহাগ_ভরা_হাগ#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
ছোটবেলার পচা পরীক্ষাটা, মানে ঐ যেটা থাকলে পেট গুড় গুড় করতো বার বার বাথরুম পেতো আরে বুঝতে পারছোনা মানে অঙ্ক পরীক্ষা সেটা থাকলে মাঝে মাঝেই মনে হত এই বোধহয় ধুকপুক বন্ধ হয়ে যাবে। পরীক্ষা দিতে যাবার আগে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দিতেই হতো আভাকে।বলতে হত...খুব খুব ভালো পরীক্ষা হবে।কোশ্চেন হাতে পেয়ে দেখবি সব কটা অঙ্ক জানিস। কোন ভয় নেই,মা আছে তো সাথে। আমি বলেছিনা...
" কি বলেছো? আমার ভয় করছে। সব পারবো তো মা?"
" বলেছি না যে সব বাচ্চার সাথে মা থাকে তাদের কোন ভয় নেই।"
ছোট থেকে সবসময় মা কঠিন কঠিন পরীক্ষার দিকে ঠেলে দিয়ে এক ডায়ালগ দিয়ে গেছে চিরকাল।
মোটামোটা বইগুলো পড়তে পড়তে আবার পেটটা গুড়গুড় করে শুভর। ইশ্ সব জায়গার হাড়গুলোর নাম মিলে মিশে একাকার হয়ে গুলিয়ে যাচ্ছে।নির্ঘাত আ্যনাটমিতে ফেল্টু মারবে..আবার সেই অঙ্ক পরীক্ষার মত লাগছে।
পরীক্ষা দিতে যাবার আগে তাড়াহুড়ো করছে আভাও। "ভালো করে দিবি,সব ঠিক হবে।চিন্তা নেই।আর এখন তো বড় হয়ে গেছিস।"
" মা একটু আসবে.."
আঁচলে হাতটা মুছতে মুছতে এগিয়ে আসে আভা।
একটু লজ্জা লজ্জা করে বলে.." তোমার সেই জাদু কি ঝাপ্পিটা একটু দাওনা।খুব চাপ লাগছে।"
ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে আভা বলে.." কোন চাপ নেই,কোশ্চেন দেখলেই সব মনে পড়ে যাবে। বলেছি না যে সব বাচ্চাদের সাথে মা থাকে তাদের কোন ভয় নেই।"
" মা এখন আমি বড় হয়ে গেছি,ডাক্তারি পড়ছি।"
" তাতে কি ছেলেমেয়েরা সবসময়ই ছোট মায়ের কাছে। অল দ্য বেস্ট। এবার আয়।"
***********************
"আন্টি আসবো?"
পড়াতে পড়াতে আড়চোখে দরজার দিকে তাকায় সুমনা।চশমাটা একটু তুলে নিয়ে আবার পড়াতে শুরু করে।
" আসবো আন্টি?"
নাহ্ আজ এটাকে একদম ঢুকতে দেবেনা ক্লাসে।
" তুই আজ বাইরে দাঁড়িয়ে থাক। কাল যদি ঠিক সময়ে আসিস তাহলে বসবি ক্লাসে।
পরপর তিনদিন সময় দিয়েছিলো তবুও লেট।
সত্যি কি যে করে.."এদিকে আয়তো? কেন কেন দেরি হয় শুনি?"
" আসলে দিদিমণি আমরা ফুটপাথে প্লাস্টিক টাঙিয়ে থাকি ঘর নেই আমাদের। পুলিশ প্লাস্টিক টাঙাতে দেয়না রাত না হলে।তাই ঘুমোতে দেরি হয়ে যায় আর উঠতেও।"
মনটা ভিজে যায় সুমনার।মেয়েটা নতুন ভর্তি হয়েছে।না জানি কত অসুবিধার মধ্যেই বাঁচার জন্য লড়াই করছে।"
সুমনার একটু আহ্লাদ আর একটু ছাড়ে গুটিগুটি পায়ে পুতুল এবার মাধ্যমিকের দরজায়।
ভালোবাসাটা মনে থাকলেও বকুনিও দেয়নি কম।
ওদের ফেয়ারওয়েলে চোখটা ঝাপসা হয়ে আসে, এতদিন ধরে গড়ে তোলা আরেকটা দল টুকটুক করে এগিয়ে মিশে যাবে এই পৃথিবীর মানুষের ভীড়ে।
"থাক থাক আর প্রণাম করতে হবেনা,একদম মাথা ঠান্ডা করে বুঝে বুঝে পরীক্ষা দিবি।"
" একটা কথা বলবো...আমাকে একটু"
পুতুলের গলাটা ধরা ধরা,চোখে চিকচিকে জল
" বোকা মেয়ে কাঁদিস কেন?"
বলতে নিজের চোখটাও ভিজে যায় সুমনার।
'' আমাকে একটু জড়িয়ে ধরে আশীর্বাদ করবেন মাথায় হাত দিয়ে..."
সোহাগের একটা হাগ..যা পুতুলের কাছে পরম পাওয়া তাই একদম প্রাণভরে উপভোগ করলো মিষ্টি আদরটা।
*************************
ভালোবাসা কি মরে যায়?নাকি ভালোবাসারও জোয়ার ভাঁটা আছে? তাহলে হয়ত জয়িতা আর ঋষির ভালোবাসায় ভাঁটার টান লেগেছে। আজকাল ঋষি যেন জয়িতার মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়েও দেখেনা। অভিমান চিরকালই একটু বেশি জয়িতার হয়ত আবেগটাও তাই শুধুই কষ্ট পায়। ভালোই তো ছিলো ওরা,কই আগে তো ওর এতটুকু কষ্ট হলেও ঋষি আগলাতো ওকে।তাহলে এখন কেন ওর কষ্ট আর তেমন করে ওকে ছোঁয়না?
জয়িতা ভালো নেই,কতদিন ওকে কেউ জড়িয়ে ধরেনা,আদর করেনা। ওর শরীর খারাপ কাল থেকে জ্বর তবুও ঋষি কিছু বললোনা। শুধু ওষুধ আনতে হবে কিনা বলে চলে গেলো।
এখন তো ওর অনেক কাজ,প্রচুর ফোন।জয়িতার কোন জায়গাই নেই সেখানে। হঠাৎই শরীরটা অবশ লাগে।আসুক জ্বর,ও ওষুধ খাবেনা।আর কাউকে কিছু বলবেও না।
ভিজে চোখটা নিয়ে জ্বরে কেমন যেন শরীরটা কাঁপে ওর।
হঠাৎই কেউ কপালে হাত রাখে, খুব চেনা হাত। চোখ বুজেই অনুভব করে ঋষি, জড়িয়ে ধরে আছে ওকে.." উঃ কি গরম গা!ভাগ্যিস ফাইলটা ফেলে গিয়েছিলাম। আজ আর অফিসে যাবোনা।"
সত্যিই কি ফাইল ফেলে গিয়েছিলো ঋষি? নাকি আবার হয়ত সাময়িক ভাঁটার পর ভালোবাসার জোয়ারে ভেসে জয়িতাকে জড়িয়ে ওর সব অসুখকে আজ দূর করে দিতে চায় ঋষি।
কখনো উষ্ণ আলিঙ্গনই বোধহয় সম্পর্কের সব শীতলতা এক নিমেষে ভুলিয়ে দেয়।
************************
"কি ছিরি তোমার বৌমা!
কতবার বলেছি ঐ সেলুনে গিয়ে চুলটা ছোট করে ছেঁটে আসবেনা। তাও আবার তাই করলে!"
মহা মুশকিল মৌনার পছন্দ ছোট চুল,বেশ ম্যানেজেবল আর স্টাইলিশ কিন্তু মামণির পছন্দ লক্ষ্মীমন্ত বৌদের মত লম্বা চুল। বিয়ের পর একবছর কোন রকম সামলে ছিলো তারপরেই ঘ্যাঁচ করে কেটে ফেলেছে আর সেই থেকেই চলছে অশান্তি।
ওর বরকে বলেছিলো। উত্তর পেয়েছে... "কেশাকেশিতে আমি নেই আমি পাশাপাশিতে আছি বাবা। সাঙ্ঘাতিক দুই মহিলার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যে পুরুষ তার আর কিই বা বাক্ স্বাধীনতা থাকতে পারে?"
মহা চালাক সুযোগ সন্ধানী ছেলে! একদম মিচকে। মামণি কাল থেকে ভালো করে কথাও বলছেনা। ধ্যুৎ কেমন যেন লাগছে সব ফ্যাকাশে।
আজ আবার একটা বিয়েবাড়ি তাই ওনার এত রাগ হয়েছে চুল কাটায়। অফিস ফেরত একটা ক্যাডবেরি আর গোলাপফুল নিয়ে পেছন থেকে মামণির গলাটা জড়িয়ে ধরে মৌনা..."হ্যাপি হাগ ডে। এই দেখো।"
ওমা এতো বিয়েবাড়ির জন্য পুরো শাড়ি পরে আর খোঁপা বেঁধে এসেছে! কিন্তু খোঁপাটা হলো কি করে!
বৌমার আদরে গদগদ শাশুড়িমা বলেই ফেললেন," ধন্য বিউটি পার্লার বাপু! এরা সব পারে।"
মুচকি হাসলো ছেলে,ধন্য তোমরা শাশুড়ি বৌ এই চুলোচুলি তো ওই গলাগলি।
*****************************
----মা আজ কি মেনু গো?
---রোজ রোজ এক কথা জিজ্ঞেস করিস কেন বলতো?
---বলোনা গো
----মাছের ঝোল আর ভাত,চিকেনও আছে।
.....ইশ্ তোমার সেই ট্যালটেলে মাছের ঝোল আর পাতি চিকেন!
.....কেন রে বাড়িতে লোকে কি খাবে?তোর বাবাকে বল শেফ রাখতে বাড়িতে।
...কি খাওয়া হবে সাহেবের শুনি?
....কুছ স্পেশাল আর স্পাইশি।
এই রকম নিত্য কথা আর ঝুট ঝামেলা হত মা আর ছেলের।
মাঝে কেটে গেছে সাতটা বছর। দুবছর বাদে ছেলে আসছে। কি রান্না করবে ভেবে পায়না নয়না।
ফোনে উচ্ছ্বাস শোনা যায়...মা কি রান্না করছো আমার জন্য? আমার একটা স্পেশাল মেনুর আব্দার আছে কিন্তু।
...কি রে?
.....তোমার হাতের ইউনিক ট্যালটেলে মাছের ঝোল আর পাতি চিকেন।
চোখের কোলটা ভিজে যায় নয়নার...জার্মানিতে হোটেলের শেফ ছেলে কত ভালো ভালো খাবার খায়। আর যে খাবার নিয়ে নিত্য ঝামেলা হত একসময় সেটাই খেতে চাইছে!
থালা চেটেপুটে খেয়ে মায়ের গলাটা জড়িয়ে ধরে ছেলে..." ওহ্ মা ইউ আর দ্য বেস্ট শেফ ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। আমার চাই তোমার রেসিপি। লাভ ইউ মা আ্যন্ড তোমার ট্যালটেলে মাছের ঝোল আর পাতি চিকেন।"
***********************************
ঘুম ভেঙে মাকে না দেখলেই কাঁদতো মেয়েটা।মায়ের আঁচলের ওমে জড়িয়ে ঘুমোনো ছিলো ওর অভ্যেস। মায়ের আঁচলের গন্ধ শুকতে শুকতে গল্প শুনতো রাণী দুর্গাবতী আর রাণী লক্ষ্মীবাঈয়ের। " শোন দুর্গা তোকে কিন্তু দুর্গাবতী বা লক্ষ্মীবাঈয়ের মত সাহসী হতে হবে।"
" আমি তোমার মত হবো তো মা?"
মা হাসতো আমার মত না,তোকে আমার থেকেও অনেক বড় হতে হবে।"
বড় হয়েছিলো দুর্গা তবে মেয়েরা কোনদিনই মায়ের চেয়ে বড় হতে পারেনা।তাই মা যতদিন ছিলো বিপদে আপদে আগলে বলতো," তোর আর লক্ষ্মীবাঈ হওয়া হলোনা।তুই তোর বাবার মতই একটুতেই ভয় পাস।"
" তুমি আছো তো,আমার আবার ভয় কি?ডাক দিলেই তো এসে আগলে রাখো।"
মা নেই মেঘের দেশে ভেসে ভেসে হারিয়ে গেছে আকাশের তারা হয়ে। দুর্গার কদিন খুব শরীর খারাপ। দূর্বল শরীরটা মাঝে মাঝেই মায়ের যত্ন আর ভালোবাসা চায়। ঘুমের মধ্যে অনেকদিন বাদে মাকে দেখলো।মাকে জড়িয়ে ধরলো,ঝরলো দুজনেরই চোখের জল।"
হঠাৎই ঘুম ভেঙে গেলো তবুও মনে জড়িয়ে রইলো আঁচলের গন্ধ আর মায়ের নরম শরীরের আদরের ছোঁয়া।
সমাপ্ত:-
*************
Comments
Post a Comment