Skip to main content

উত্তর


#উত্তর#

#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
অ য়ে অজগর আসছে তেড়ে
আ য়ে আমটি আমি খাবো পেড়ে।
বাবা এই তো কত সুন্দর করে বলতে পারে আমাদের দাদুভাই। দেখেছো কি সুন্দর ছবি!
আদর করে জড়িয়ে ধরেন নাতিকে সুষমা,ঠাম্মুর কোলের ওমে ছোট্ট হাতে আঁচলটা ধরে মুঠোয় পাকাতে থাকে জিজো।
  ওদের ঠাম্মি আর নাতির ভাব ভালোবাসা দেখছিলেন শিবতোষ। 
" এই বইটা রেখে দিয়েছিলে তুমি! আর ঐ এবিসিডির বই সেটাও আছে নাকি?"
" হ‍্যাঁ মাস্টারমশাই আছে,ওটাও আছে। আমার তুতুনের ঐ দুটোই তো একদম ছোটবেলার বই। আর ছেলে আমার লক্ষ্মীও ছিলো,বইপত্র ছিঁড়তো না তাইতো রাখতে পেরেছি।"
    শুধু এই বই দুটো কেন তুতুনের ছোটবেলার বড় বেলার অনেক বই তো যত্নে রাখা ঘরে। ঠাকুমার ঝুলি থেকে সেরা সত‍্যজিৎ,চাঁদের পাহাড় সবই তো আছে যত্নে রাখা।একটা সময় ছেলেটাতো ঐ বইগুলো নিয়েই শুতো অবশ‍্য পাশাপাশি টিনটিনও পড়তো।পড়তো ইংরেজী বইও একটু বড় হবার পর।
           তখন টিভি দেখার অত রেওয়াজ ছিলোনা তাই বই পড়াটাই নেশা ছিলো ছেলের।আর সেইজন‍্য জন্মদিনে বই ছিলো উপহার। আগে থেকেই ফরমাশ থাকতো কি বই লাগবে ছেলের আর তর সইতোনা প‍্যাকেট খোলার।তারপর কয়েকদিন বাদেই বলতো.." কি বই এগুলো, পাতলা চটি।এই তো পড়া হয়ে গেলো।"
                 ছেলের ছোটবেলা গুছিয়ে রেখে দিয়েছেন সুষমা।এখন নাতির কাছে বইটা খুলে যেন মনটা আবার সেই অতীতে ফিরে গেলো।
               অফিস থেকে বাড়িতে এসেই জিজোকে খোঁজে রোমা। " মালতী তুমি রান্নাঘরে কি করছো?জিজো কোথায়?"
    রোমা বোধহয় একটু সময়ের আগেই এসেছে আজ মালতীও একটু কেমন যেন ভ‍্যাবাচ‍্যাকা খেয়ে যায়। " একটু চা করছিলাম বৌদি।জিজো দোতলায় মাসিমার কাছে। মেসোমশাইয়ের কাশি হয়েছে তাই বললেন একটু আদা চা করতে।"
           মালতীটাও হয়েছে তেমনি সারাক্ষণ অন‍্য কাজ করতে পারলে বেঁচে যায়।
     " জিজো"
বৌমার ডাকে একটু অস্বস্তি হয় সুষমার,"দাদুভাই দুপুরে ঘুমোয়নি আজ তাই একটু ঘুমিয়ে পড়েছে।এই এতক্ষণ গল্প শুনছিলো ছবি দেখছিলো।"
         তখনও ঠাকুমার আঁচলটা জিজোর হাতের মুঠোয় ভীষণ বিরক্ত লাগে রোমার,নিজে বাড়িতে থাকেনা বলে আয়া রেখেছে তবুও সারাক্ষণ ছেলেটা দাদা যাবো আর আমু যাবো। নিজের ছেলেটাও যেন পর হয়ে যাচ্ছে। আর তেমন হয়েছে শঙ্খ মায়ের হাতের বাটি চচ্চড়ি খাবে বলে বাইরের অফারটাই নিলোনা। বলাতে উত্তর দিলো," আমি বাইরে চলে গেলে তোমাকে আর জিজোকে কে দেখবে?তোমার জব তো এখানেই।আমি বাবা বৌ ছেলে ছেড়ে থাকতে পারবোনা। আমি বলে দিয়েছি আমার বাবা অসুস্থ আমার ওপরেই সবটা।"
রোমি ভেবেছিলো শঙ্খ চলে গেলে ও সোজা হাঁটা দেবে বাপের বাড়ি,একদম নিশ্চিন্তে অফিস করবে। সব বোঝে মন ভোলানো কথা,আসলে ঐ হোম সিকনেস আর কিছুনা,মায়ের আঁচলের তলায় থাকা। আর মা সারাক্ষণ তুতুন তুতুন করছে যেন কচি খোকা!
    বিছানায় পড়ে থাকা বইটা দেখে মুখটা একটু কুচকে যায় রোমার.." এই বইগুলো কোন যুগের? কে দেখছিলো এইসব?"
   " আমিই খুলে বসেছিলাম বৌমা,তুতুনের ছোটবেলার বই।দাদুভাই কি সুন্দর ছবি দেখছিলো আর আমার সাথে সাথে বলছিলো।"
         " মা কিছু মনে করবেন না,জিজোর দুই হলো।আমি কবে ওকে প্লে স্কুলে দিয়ে দিতাম।আপনার ছেলের জন‍্য পারিনি, ওকে নাকি প্রেসার দেওয়া হবে। তবে বাংলাটা প্লিজ পড়াবেননা এখন। আমি কথা বলছি আড়াই বছরের পরই আমি দিয়ে দেবো ওকে ভালো কোন ইংরেজি স্কুলে। তাই ওর মাথায় এখন অ,আ ঢোকাবেননা।"
        ছেলের মুঠো থেকে শাশুড়ির আঁচলটা ছাড়িয়ে ওকে কোলে তুলে ঘরে চলে যায় রোমা।
             ঘরের মধ‍্যে দুটো মানুষ চুপ করে বসে রইলেন সুষমা বইগুলো গুছিয়ে তুলতে লাগলেন আর শিবতোষ রবিঠাকুরের ছবির দিকে তাকিয়ে একটা নিশ্বাস ফেলে বলেন,"তুতুন বলছিলো বাড়ি রঙ করাবে।তুমি বরং কিছু বাচ্চাদের বই মালতীকে দিয়ে দাও। ওর তো খুব পছন্দ এই বইগুলো।"
       চোখের কোলটা জল টলটল করে খুব তাড়াতাড়ি আজকাল। তবুও অন‍্যদিকে তাকিয়ে সুষমা বলেন," পুরোনো বই দেবো কেন,তুমি বরং নতুন কয়েকটা বই এনে দিয়ো।"
    শিবতোষ বোঝেন তুতুনের হাতের ছোঁয়া বইগুলোতে,কোনটায় আবার ওর কাঁচা হাতে নাম লেখা।কোনটার মলাট একটু ছেঁড়া।দাদুভাই আজ একটু নাড়াচাড়া করেছে এটাতেই আনন্দ।
                কিছুদিন ধরেই একটা ছন্দ ভাঙার আওয়াজ অনুভব করছিলেন শিবতোষ। একটা চাপা অশান্তি ছেলে বৌয়ের মধ‍্যে। হঠাৎই একদিন কানে এলো,"ওকে আমি একদম এমন স্কুলে দেবো যেখানে বাংলার কোন চাপ থাকবেনা।"
    " নিজের মাতৃভাষা একদমই শিখবেনা! তাহলে কি শিখবে?"
   "মাতৃভাষা শিখতে হয়না। ওটা নিজে থেকেই শেখা হয়ে যায়।ও ইংরেজী আর হিন্দী নেবে।"
      শিবতোষ ভেবে পায়না লড়াইটা কোথায় দুই সাধারণ শিক্ষক শিক্ষিকা বাবা মা বা ঠাম্মু দাদুর শিক্ষা আর ভালোবাসা থেকে তাদের উত্তরসূরী কে দূরে রাখা।নাকি সত‍্যিই যুগ পাল্টাচ্ছে,মাতৃভাষা এখন নেহাতই অকেজো,ঐ ভাষায় পড়াশোনা করে চাকরি বাকরি আর স্ট‍্যাটাস কোনোটাই হয়না। তাহলে রবীন্দ্রনাথের মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের সমান কথাগুলো বোধহয় শুধুই কথার কথা নাকি অপ্রাসঙ্গিক? 
        জগদীশচন্দ্র বসুর প্রথম শিক্ষা পাঠশালাতেই শুরু হয়েছিল।কারণ তার বাবা বিশ্বাস করতেন প্রত‍্যেক শিশুরই আগে মাতৃভাষা শেখা উচিত তাহলে অন‍্য ভাষা শিখতেও সময় লাগেনা। তুতুনও তো যাদবপুরে ঢুকেছিলো বাংলা শিখেই। এখন ভালো চাকরিও করছে।
       দূরদর্শী শিবতোষ সুষমাকে শুধু বলেন,"একটা বড় ঢেউ হয়ত আসছে বুঝলে।কিন্তু তুতুন আর দাদুভাইয়ের গায়ে যেন না লাগে। আমরা জীবনে অনেক কষ্ট করেছি আমরা সয়ে নেবো।
           কয়েকমাস বাদেই তা বোঝা গেলো যখন ওরা দাদুভাইকে নিয়ে একদম বিদেশে চলে গেলো। রোমা সুযোগটা ছাড়তে দেয়নি এবার শঙ্খকে..."কিছু আমি শুনবোনা,জিজোর ভবিষ্যতটা ভাবো। দিদিভাই ওখানে আছে সানিকে নিয়ে তো কোন চিন্তাই করতে হয়না ওদের।"
            বাড়িটা খুব খালি হয়ে গেলো,শিবতোষ সকালেই বেলুড়ে চলে গিয়েছিলেন সুষমাকে নিয়ে।কেন যেন বাচ্চাটা বড় মায়ার বাঁধনে বেঁধে ফেলেছিলো।মুঠো দিয়ে শক্ত করে ধরতো সুষমার আঁচলটা,শিবতোষের গলা জড়িয়ে দাদা দাদা করতো।মেঝেতে বসে ছড়িয়ে খেলতো। তবুও বুক বাঁধলেন ওরা ভালো থাক।সত‍্যিই তো এই পোড়া দেশে ঐ বুড়ো বাপ মা গুলো ছাড়া আর আছে কি? নিজেদের জন‍্য কিছুতেই ওদের আটকাতে পারেননা।
        ফোনে কথা হয় মাঝে মাঝেই,বৌমা তেমনভাবে ফোনে না এলেও ছেলে খবর নেয় সবসময়। ওরাও জিজ্ঞেস করেন," হ‍্যাঁ রে তোরা সব ভালো আছিস তো? বৌমা,দাদুভাই? দাদুভাই স্কুলে যাচ্ছে?কি বলছে?আমাদের কথা বলে?
              রোমা বাড়িতে থাকলে ফোনের সময়টা ছেলেকে নিজের কাছেই রাখে তাই তুতুন বলে,"ও খাচ্ছে বাবা,একটু বাদেই বেরোবে স্কুলে। আমি রওনা দিলাম অফিসে।"
        এক দুবার নাতি আসে ফোনে। সুষমা,শিবতোষ এদিক থেকে ডাকেন," দাদু তুমি কি করছো? দাদা আমু আমরা তোমার মনে আছে? ভালো থেকো দাদু।"
                      সময় কাটাতে কয়েকটা দুঃস্থ ছেলেমেয়ে পড়ান ওরা। কখনো কিছু বানিয়ে ওদের খাওয়ান। ছেলের আর নাতির জন্মদিন একই মাসে।ঠাকুর বাড়িতে গিয়ে পুজো দিয়ে আসেন সুষমা।
   " পায়েস আবার করার কি দরকার? এই তো বলছিলে ব‍্যথা বেড়েছে।আর আমিও তো খাইনা।"
   হাসেন সুষমা," খাবার লোক ঠিক জুটে যাবে দেখো।"
       ছোট ছেলেমেয়েগুলো সত‍্যিই চেটেপুটে পায়েস খেলো আর সুষমার চোখে খেলে গেলো এক অদ্ভুত তৃপ্তি।
                  মাঝে কেটে গেছে বছর দেড়েক হঠাৎই এলো খুশির খবর..."বাবা আসছি। পনেরো দিনের ছুটি পেয়েছি। সবাই মিলে আসছি।"
     কি করবেন ভেবে পাননা ওরা সত‍্যিই তো আর বেশি সময় নেই সুষমা ব‍্যথা ভুলে নারকেলের নাড়ু,তক্তি,সন্দেশ বানাতে শুরু করেন।মালপোয়াও বানাতে হবে। বৌমার পছন্দ আমলকির আচাড়,বড়ি সব সব গুছিয়ে রাখতে হবে।
       " আচ্ছা দাদুভাইয়ের জন‍্য কয়েকটা রসগোল্লা বানিয়ো কিন্তু। মনে আছে বৌমা বাইরের খাবার দিতোনা অথচ খুব মিষ্টি পছন্দ করতো।আর মুখে রসগোল্লা নিয়েই দুলে দুলে গাইতো মিত্তি মুত্তা খাবো।"
           মনে করেই দুজনে হেসে অস্থির হলেন। আর তিনটে দিন মাঝে,কদিন ছেলেমেয়েগুলো কে আসতে বারণ করবেন তাই একটু বেশি করে পড়া এগিয়ে রাখছেন। "শোন কাল একটু ফুল আনবি তোরা আর এই রকম একটা কাগজ কেটে বানাস তো।"
      "কি হবে স‍্যার?"
"কাল একুশের কবিতা পড়াবো"
কালই তো একুশ তারিখ,একুশ তারিখে একুশের কবিতা! তাহলে বাইশের কবিতাও আছে নাকি?"
  " ধ‍্যাৎ বোকা। একুশকে নিয়েই কেন কবিতা লেখা যায় কাল পড়াবো।"
      মনটা খুব চঞ্চল থাকে এই দিনটায়,বাবার মুখে শুনেছেন ভাষাদিবসের শহীদের রক্তভেজা আত্মবলিদানের কথা। অথচ আজ আমরা বাঙালী হয়েও অনেক সময় সঙ্কুচিত আর লজ্জিত হই বাংলায় কথা বলতে। মনটা কেমন যেন ভারী হয়ে যায়,তুতুনের উত্তরসূরী দাদুভাই বড় হয়ে কোনদিনই জানবেনা বাংলাকে,হয়ত অনভ‍্যাসে আর চর্চার অভাবে একদিন ভুলে যাবে বাংলা ভাষা। না না কেন এই সব ভাবছেন,এই যে একদল কুচোকাচা আসছে তার কাছে তাদের মধ‍্যেই বাঁচবে,নিশ্চয় বাঁচবে বাংলাভাষা। তাই ওদের শেখাবেন বোঝাবেন একুশের তাৎপর্য।
        খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন একটা জায়গা ছেলেদের দিয়ে মাঝখানে ফুল দিয়ে আর কাগজ দিয়ে বানিয়েছেন শহীদ বেদী। এবার পড়াতে শুরু করেন।আবদুল জব্বার, রফিকউদ্দিন, আবু বরকত এদের কথা বলতে বলতে গলাটা কেমন ভিজে যায়।সুষমা দেবীও এক পাশে বসে চুপ করে শুনছেন।
        হঠাৎই কলিং বেল বাজে,দোতলা থেকেই ডাক দেন সুষমা.." উমা একটু দরজাটা খুলে দে। দ‍্যাখ কে এলো।"
      শিবতোষ তখন বুঝিয়ে চলেছেন..ধানক্ষেত ভিজে গিয়েছিলো রক্তে,চাপ চাপ তাজা রক্ত। কেন ওদের মেরেছিলো জানিস ওরা মাতৃভাষা বাংলাকে ঊর্দুর বদলে চেয়েছিলো। মাতৃভাষার গলা টিপে মারতে দেয়নি তার বদলে নিজেদের প্রাণ দিয়েছিলো।চোখটা ভেজা লাগে শিবতোষের যতবার পড়াতে যান এমনি হয়। শুধু মনে হয় বাংলার শ্বাসরোধ হবে আর কতদিন? কবে বাঙালী গর্ব করবে এই অমূল‍্য ভাষার জন‍্য?
         সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে চোখটা চকচক করে ওঠে আনন্দে আর বিস্ময়ে সুষমার। হাত দিয়ে ইশারা করে শঙ্খ ওর কোলে দাদুভাই। 
          ছেলেকে কোল থেকে নামিয়ে ছেড়ে দেয় শঙ্খ,প্রথমে আড়ষ্টতা কাটিয়ে দাদার কাছে গুটিগুটি পায়ে দাঁড়ায় জিজো। 
             কি রকম যেন একটা অনুভূতি ঠিক বলতে পারেননা শিবতোষ,তোরা?আজ হঠাৎ?বৌমা কোথায়?
" ও আসছে ওর মা বাবাকে পৌঁছে দিয়ে ওরা এয়ারপোর্ট গেছিলো।"
     সেই ছোটবেলার মত সারপ্রাইজ দেওয়া আর গেলোনা ছেলেটার।
       সুষমা মিষ্টি আর নাড়ুর বাটি নিয়ে বসেছেন..জিজো রসগোল্লাটা মুখে দিতেই শিবতোষ বলেন,"ইটস্ গুড দাদুভাই?"
   " বাবা ও মুখ খুলছেনা কিন্তু তুমি বাংলা বলো ও বোঝে সব।একটু লজ্জা পাচ্ছে,অনেকদিন বাদে তো?
        "এই নে দাদানকে আর আমুকে শোনা তো.."
সেই প্লাস্টিকের বইটা! কয়েকদিন খুঁজেছিলেন সুষমা পাননি।
      জিজো বইটা খুলে বলতে থাকে আদুরে গলায়..অ এ অজগর আসছেএএ তেড়ে।
   বাংলাটা তাহলে মরেনি,দাদুভাই ভোলেনি কিছু। হয়ত শঙ্খই বাঁচিয়ে রেখেছে ওর মাতৃভাষাকে ওর পরবর্তী প্রজন্মের মধ‍্যে। একটা কঠিন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়ে মনটা ভরে গেলো শিবতোষের।
             বাবার মুখটা দেখে বড় নষ্টালজিক লাগে শঙ্খর মনে পড়ে যায় বাবা মায়ের কাছে পড়তে বসার সেই দিনগুলোর কথা। তাইতো চুপটি করে কিছু ছোটবেলার বই নিয়ে গেছিলো।


সমাপ্ত:-


  


           


Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...