#বসন্তে_পুরুলিয়া#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
( প্রথম ভাগ)
একটু বেশিই শীতকাতুরে আমি আর মনেপ্রাণে বসন্ত বিলাসী।আমার প্রিয় ঋতু বসন্ত। এই বসন্তের কোন এক সন্ধ্যায় জীবনের বেশ কয়েকটা বসন্ত মা বাবার কাছে কাটানোর পর আমার জীবনে এসেছিলো একজন মানে যোগ হয়েছিলো। সাতপাক নয় রীতিমতো চোদ্দপাক ঘুরে কেঁদেকেটে পা রেখেছিলাম শ্বশুরবাড়িতে।তখন আমি সত্যিই ছোট মনটাও নরম আর আদুরে।তবুও বসন্ত ভাসিয়েছিলো তার রঙে রঙীন করে।শিমূল পলাশের লাল রঙের সাথে রাঙা হয়েছিলো আমার সিঁথিও।মেয়ে থেকে বৌ হয়েছিলাম আমি। আমার প্রিয় বসন্ত আবার দিয়েছিলো এক ছোট্ট নরম নরম ফুটফুটে পুতুলকে আমার কোলে,আমার প্রথম সন্তান।যিনি অবশ্য এখন রীতিমতো গুরুগম্ভীর ভদ্রলোক। বসন্ত যেমন ভরিয়ে দিয়েছিলো তেমনি ঠিক চারবছর আগে আমার জীবনের প্রিয় মানুষ আমার বাবাকে নিয়ে গিয়ে বিয়োগের শুরু করেছিলো। যোগ বিয়োগের খেলায় কেমন যেন অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম। বুকের ভেতর একটা যন্ত্রণা অসহ্য কষ্ট এখনো কেমন যেন মনকে ছিঁড়ে ফেলে যখন মনে করি।
বসন্ত আনে কখনো যোগ কখনো বা বিয়োগ,কখনো হাসায় আবার কখনো কাঁদায়। দৈনন্দিন জীবনযুদ্ধে সকলেই ব্যস্ত কখনো বা আহত তার মধ্যে এক ছুটে চলে যাওয়া প্রকৃতির টানে আর সেটাই বোধহয় প্রলেপ হয়ে ভালো করে মন আর মনটা ভালো থাকলে শরীরটাও কেমন যেন বাধ্য হয়ে যায় আর খুব একটা দুষ্টুমি করেনা বেশ লক্ষ্মী হয়ে থাকে লক্ষ্মীছাড়া মনটার সাথে।
অনেকদিন বাদে তিনদিন ছুটি আমাদের আবার কারো বা চারদিন ছুটি।তাই পায়ের তলাটা চুলকোতে থাকে অনেকেরই,আমারও কিছুটা। অনেক জায়গা ঘুরেছি কিন্তু অদেখা রয়ে গেছে আমারই রাজ্যের অনেক জায়গা। আর বসন্ত মানেই আমার হৃদয়ে রঙের সাথে সাথেই রক্তক্ষরণ।তাই রঙের ছোঁয়া পেতেই ছুটে যাওয়া পুরুলিয়া। শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা তাই সব জায়গাতেই ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই বাণী।কারণ এখন শান্তিনিকেতনের পাশাপাশি পুরুলিয়াতেও ভীড় বাড়ছে দোলের সময়। তবুও ছেলে খুঁজে কিছু ফোন নম্বর দেওয়াতে বেশ কয়েক জায়গায় ফোন করে শেষে বড়ন্তিতে থাকার ব্যবস্থা হয়।হোটেলের নাম মহুলবন হিল রিসর্ট। নিজেদের পড়াশোনার জন্য দুই ছেলেমেয়ে ব্যস্ত তবুও ওরাই সহযোগিতা করে আমাদের তাই হয়ত এভাবে যখন তখন বাইরে যেতে পারি। বসন্তকে ছুঁয়ে দেখবো,পলাশ দেখবো মন ভরে এই সব ভাবনায় মনটা কেমন যেন উড়ে গেলো কোন নিরুদ্দেশে।
কলকাতা থেকে অনেক ট্রেন আছে পুরুলিয়া যাবার,রাতে উঠে বসলে ভোরে পৌঁছে যাওয়া যায়। তবে ঠিক হলো এত তাড়াতাড়িতে যখন ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছেনা তখন বাড়ির গাড়িতেই যাওয়া হবে। গাড়িতে গেলে সময় লাগে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা মত। রাস্তা বেশ ভালো।আমাদের দলে আমরা চারজন তাই সেভাবেই রওনা দিলাম ভোর ছটা নাগাদ।তার আগেই ঝিরঝিরে বৃষ্টির শব্দ আকাশের মুখ ভার ভার তবুও নো পরোয়া করেই রওনা দিলাম। লঙ ড্রাইভে গেলে পথে গুরাপ এলে আমরা হিন্দুস্থান ইনটারন্যাশনাল ধাবাতে খাবোই।সুতরাং ব্রেকফাস্ট পর্ব সেখানে সেরে এগিয়ে চলা আবার গন্তব্যের দিকে।দুপাশে সবুজের সমারোহের মধ্যে একটু বৃষ্টির ছোঁয়া কখনো বা একটু রোদের মেঘের লুকোচুরি মনকে করেছে উদাসী। সন্ধানী চোখদুটো তখন রাস্তার দুপাশে শিমূলের লালের মাঝে খুঁজছে পলাশকে।
" ঐ তো পলাশ গাছ" একটা দুটো দেখলেই আমরা সবাই মেতে উঠছি আনন্দে। সবুজে ঘেরা মসৃণ রাস্তা তার সাথে কবিগুরুর গান ভরিয়ে দিচ্ছিলো মনপ্রাণ।
আমরা রওনা দিয়েছিলাম মার্চের আট তারিখে।সেদিন ছিলো নারীদিবস,সারাবছর নারীদের কথা মনে থাক এটাই চাই তবুও সেদিন ফেসবুকের কল্যাণে শুভেচ্ছা আর প্রশংসার ছড়াছড়ি। নারী দিবসে আমিও যেন এক মনের পাখনা মেলা নারী ঘরের বাইরে পা রেখে মুক্তির আশ্বাস উপভোগ করছি।
পথে যেতে যেতে ঠিক হয়েছিলো ভাল্কিমাচান হয়ে যাবো।ভাল্কিমাচান বর্ধমানের একটা ছোট গ্ৰাম শালগাছের জঙ্গলে ঘেরা।যেতে যেতে হঠাৎই উচ্ছ্বাস আমাদের মনে একটা প্রাচীন বটগাছ দেখে।শাখা প্রশাখা আর জটাজাল বিস্তার করে মাথাউঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রকৃতিতে। আমরাও হয়ে গেলাম ছেলেমানুষ তাই ফটোশুট হলো ইচ্ছেমত। ভাল্কিমাচানে অরণ্যসুন্দরী রিসোর্টের সামনেই পুরোনো ইঁটে গাঁথা চারটে পিলার দেওয়া স্তম্ভ যার নীচে রয়েছে এক পরিত্যক্ত কুয়ো।মনে হয় এক সময় শাস্তি দেওয়ার জন্যই এটা ব্যবহার করা হত।
ভাল্কিমাচান দেখে আবার পথচলা শুরু মেজিয়াতে হাল্কা চা বিস্কুট খেয়ে আবার পথচলা কিন্তু পলাশ দেখেই আবার থেমে গেলাম রাস্তার মাঝে খুব আনন্দ নিয়ে রোদ্দুরেই ছুটে গেলাম পলাশের তলায়। দুহাতে মাখলাম পলাশের রঙ। মুঠোফোনে বন্দী হলো মুহূর্ত।
তারপর শুধুই পলাশ বিছোনো পথ,মানে দুধার লালে লাল এমন কিছুটা পেরিয়ে এলাম বড়ন্তিতে ওখানেই মহুলবন হিল রিসর্টে আমাদের বুকিং ছিলো। বড়ন্তীর সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয়।টিলা,পাহাড় আর বড়ন্তী ড্যামে বন্দী বিস্তৃত জলাশয় মনকে করে উতলা।আমাদের রিসর্টেই ফুলে ভরা তিনটে পলাশ গাছ ছিলো। প্রথমে এসেই মন ছুঁলো সেই দৃশ্য। সাদর অভ্যর্থনা পেলাম ওখানে কুক কাম কেয়ারটেকার সঞ্জয়ের কাছে।বললো খাবার একদম রেডি হাত পা ধুয়ে এলেই গরম খাবার পাওয়া যাবে। আমরাও তাই খুব তাড়াতাড়ি পরিস্কার হয়ে চলে এলাম ডাইনিং হলে।ভাত,ডাল,আলুপোস্ত বেগুনভাজা,মাছের ঝোল আর শেষ পাতে চাটনি পাপড় আর কি চাই।
খাওয়া সেরেই কিছুক্ষণ বাদে চললাম বড়ন্তী ড্যামের ধারে সেখানে তখন গাড়ির মেলা।আমাদের রিসর্ট থেকে খুব কাছেই ড্যাম। পড়ন্ত বেলায় সীমাহীন জলরাশি পাহাড়ের কোলে খেলা করছে। আর সূর্যের ছটা পড়েছে লেকের বুকে সে এক মন ভোলানো দৃশ্য। বেশ কিছুক্ষণ তা উপভোগ করে পেট্রোল নেবার জন্য আবার পনেরো কিমি পাড়ি দিলাম। কারণ কাছাকাছি তেমন কিছুই নেই।ফিরতে ফিরতে প্রায় সাতটা।রিসর্টে এসে হাত পা ধুয়েই পেয়ে গেলাম গরম গরম বেগুনি, মুড়ি আর চানাচুর আর তার সাথে গরম চা।একদম ঘরে পৌঁছে দিয়ে গেলো। চায়ের সাথে আড্ডায় মাতলাম আমরা। আকাশে তখন গোল রূপোর থালার মত চাঁদ উঠেছে আর সামনে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ রাস্তার ওপারে। তখন বেশ শীতের ছোঁয়া লাগলো শরীরে। পরের দিন বেশ সকালে বেরোনোর কথা হলো কারণ দেখার জন্য আমাদের হাতে ঐ একটা দিন তারপরের দিন কলকাতা ফেরা। তাই রাতে গরম গরম রুটি সাথে ফুলকপির তরকারি আর চিকেন খেয়েই ঘরে এসে করে ফেললাম পরের দিনের প্রস্তুতি।পরের দিন দোল আর দোল মানেই মনে বনে রঙের মেলা।বনে তো রঙ লেগেছেই আর তার ছোঁয়া মনেও এবার শুধু অপেক্ষা সেই রঙ মেখে নেওয়ার তাই হলুদে হলুদে সাজার প্রস্তুতি নিয়ে সেদিনের মত দিনের শেষে রাতে শান্তির ঘুম দিলাম।
( চলবে)
#বসন্তে_পুরুলিয়া#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
(২)
সেদিন দোল,দোল বোধহয় সত্যিই মনে প্রাণে দেয় দোলা। মনকে রাঙায় এক নতুন রঙে। কখনো সে রঙ অনুরাগের কখনো বা বিরহের আবার কখনো বিদায়ের। সকাল থেকেই ইউটিউবে বাজছে বসন্তের গান,রাঙিয়ে দিয়ে যাও গো এবার যাবার আগে। তখনো ভোরের আলো ফোটেনি আমার বাড়ির ভদ্রলোকের ডাকে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই যেন মনে হচ্ছে হাত বাড়ালেই ধরতে পারবো চাঁদকে এতটাই কাছে। আকাশ জুড়ে বড় সোনার থালার মত চাঁদ তখন আর রুপোলি নয় একদম সোনা। আস্তে আস্তে ভোর হচ্ছে আমরাও ব্যস্ত হলাম তৈরি হতে কারণ মাত্র একটাই দিন হাতে পরের দিনই আবার কলকাতার পথে ফেরার পালা। রাঙিয়ে দিয়ে যাও শুনে আমরাও নিজেদের রাঙিয়ে নিলাম লাল হলুদে,ড্রেস মোটামুটি বাড়িতেই ঠিক হয়েছিলো আমাদের সাথে ওর বন্ধু এবং বন্ধুপত্নী ছিলো যারা আমারও দাদা আর বন্ধু।সেই দাদাই দুজনের জন্য দুটো হলুদ শাড়ি কেনেন।পাঞ্জাবি ও ওদেরই কেনা।শাড়ি পরাতে আমি চিরকালই এলোমেলো।আসলে আমি সবই করি কিন্তু কিছুই পারিনা ঠিকমত এমনি গোত্রভুক্ত এক মহিলা। তাই গুছিয়ে শাড়ি পরানোর দায়িত্বও নিলো ওর বান্ধবী। ওর তত্ত্বাবধানে মায়ের মত শাড়ি পরলাম একদম পুতুলের মত দাঁড়িয়ে।পরিপাটি করে শাড়ি পরিয়ে দিলো।খোঁপায় বাগানের পলাশ,হাতে পলাশ আর গাল রাঙা হলো বসন্তের গোলাপি, হলুদ আর বেগুনি রঙের আবিরে।শেষের রঙটা খুবই না পসন্দ হলেও মাখতেই হলো।আমাদের ভদ্রলোক রঙ মাখানোর উৎসাহে প্রায় তিন কেজি আবির কিনে ফেলেছেন। সকালে চা বিস্কুট সেল্ফ সার্ভিসে খেতে হয় দুধ,লিকার,চিনি ছাড়া চা সবই রাখা থাকে ফ্লাক্সে শুধু ঢেলে খাওয়ার অপেক্ষা। আবিরের খেলায় মাতলো রিসর্টের অন্যান্য সবাই মানে খেলবো হোলি রঙ দেবোনা তাই কখনো হয়?ঐ রকম আরকি। যদিও আমাদের মালদায় ঐ দিনটা দেব দোল ধরা হয় এবং পরের দিন হোলি।পুরুলিয়াতে তাই দেখলাম সেদিন ওরা তেমন রঙের ছোঁয়া নেয়নি। মনে আর বনে রঙের ছোঁয়া,তাই গালে রঙ মেখে ভুতু হয়ে আমরাও আমাদের রিসর্টের সামনের পলাশের তলায় মন ভরে ছবি তোলা হলো। জীবনের স্বাদ আর গন্ধকে মুঠোয় ধরার এক চেষ্টা,কিছুক্ষনের জন্য ভুলে যাওয়া সবটা।
আমরা বাড়ির গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম সাথে কলকাতার ড্রাইভার। ও পুরুলিয়ার পথঘাট কিছুই জানেনা তাই অগত্যা গুগলকাকুই ভরসা।গুগল খুঁজেই আগের দিন পেট্রোল পাম্প পেয়েছি।আর তারপর যে রাস্তা দেখিয়ে গুগল ফেরত এনেছিলো তা মনে করলে আমার ভয় এবং কষ্ট দুই হয়।পুরো শালবনের জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে অন্ধকার লালমাটির কাঁচা পথ।পি ডাব্লু ডির তত্ত্বাবধানে তৈরি রাস্তা ছাড়া গ্ৰামের বাড়িঘর এবং রাস্তা খুবই খারাপ।এখনো খুবই দৈন্যদশার মধ্যে কাটাচ্ছে এই রাজ্যের বহু মানুষ তারই এক টুকরো ছবি দেখলাম ওখানকার সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রায়।আমাদের শহুরে ম্যাচিং সাজগোজ আর সেল্ফির পাশে একদল পরিশ্রমী কঠিন মুখের মানুষ মুখে সততার পাশাপাশি কাঠিন্যের ছাপ।অন্ধকার রাস্তায় পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে যাতায়াত করছে। বাচ্চাগুলোর শুকনো মুখ তবুও হাসিমাখা।একটু পয়সার জন্য হাতে পুটলিতে সবুজ রঙ নিয়ে ঘুরছে। কিন্তু করোনার কোরোনা প্রচারে অনেকেই মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে তাদের থেকে।তাই কারো কাছে দশটা টাকা পেলে মুখগুলো ঝলমল করছে আনন্দে।
কলকাতায় যেখানে কত বাহারি পুজো প্যান্ডালে কোটি কোটি টাকা খরচ করে দেবী পুজো হয় সেখানে এই শিশুরা কত অল্পেই খুশি। জীবনে আলো,রঙ সবই খুবই কম এদের তবে আছে প্রকৃতির এক অদম্য আশ্রয় যা এদের ভালো রেখেছে আগলে রেখেছে।জঙ্গল ঘিরে রেখেছে পরম মমতায়। নিজেদের পোশাক জীবন,নিজেদের ছেলেমেয়েদের জীবনযাত্রা যখন ভাবলাম তখন শুধুই মনে হলো জীবনে বোধহয় এত কিছু লাগেনা ভালো থাকতে।আমরা শহুরে হয়ে অভ্যেসকে কেমন যেন পাল্টে ফেলেছি খুব তাড়াতাড়ি।
রঙমাখা আর ছবি তোলা শেষে গাড়িতে উঠে বসলাম যেতে হবে অযোধ্যা পাহাড়। বড়ন্তি থেকে অযোধ্যা পাহাড় মোটামুটি আড়াই তিনঘন্টার পথ।বুঝলাম সব দেখে শুনে ফিরতে মোটামুটি রাত্রি হয়ে যাবে। গাড়ি ছুটলো আপন ছন্দে,কিছুটা খারাপ রাস্তা পার হয়ে লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে বড় রাস্তা ছুঁলো গাড়ি। এবার একদম মসৃণ পথ দুদিকে শাল পলাশ আর শিমূলের মেলা। খোলা জানলা দিয়ে আসছে এলোমেলো বসন্তের বাতাস আর তার ছোঁয়ায় মন বলছে বসন্ত এসে গেছে মানে এফ এম তাই বলছিলো আর কি। পথেই গাড়ি থামিয়ে একটা মিস্টির দোকানে গরম গরম কচুরি খেলাম,দারুণ ছিলো কিন্তু খেতে আর সাথে ছানার গজা সেটাও খুব ভালো। তারপর আবার ছোটা,গুগল কাকু হঠাৎই রাস্তা দেখাতে দেখাতে এক ভাঙা মেঠো পথে এনে হাজির করলো দেখাচ্ছে মাঠের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালাতে। কি ঝামেলা বলতো!শেষে জিজ্ঞেস করে আবার অন্য পথে আসা। ঠিক রেললাইনের পাশ দিয়ে পুরুলিয়া শহরকে বাইপাসে রেখে পথ ধরলাম। কিছুটা এগিয়ে যেতেই পাহাড়ের পথ ধরলাম, চারিদিকের রুক্ষতা তখন একটু করে সবুজের ছোঁয়া মেখে সেজেছে অপরূপা হয়ে। যত ওপরে উঠছি পলাশ গাছ একটু করে কমছে তার বদলে কখনো জঙ্গলের লম্বা লম্বা শাল সেগুনের গাছ। আদিবাসী মেয়েরা মাথায় করে নিয়ে চলেছে গাছের ডাল বুঝলাম জ্বালানি হবে। ওদের ব্যস্ত পা মাটিতে সদর্পে পা রেখে বলছিলো দেখে যাও আমরাও বাঁচি কিন্তু লড়াই করে আর তাতেই খুশি থাকি।হয়ত জীবনযুদ্ধে সবাই আমরা অংশীদার তার মধ্যে এক একজনের লড়াই এক এক রকম। যথারীতি মাঝে মাঝেই নেট চলে যাচ্ছে,আমরাও একে ওকে জিজ্ঞেস করে এগিয়ে চলেছি। পথেই চোখ আটকে যায় বাড়ির সামনে ছোট বাঁশের টুকরোকে ব্যাট করে দাঁড়িয়ে পুচকে ভাই আর তার দিদি ক্যামেরা তুলতেই দিদি দে ছুট।পুচকেটাকে নিলাম যত্নে ক্যামেরায়।
ওদের লাল রঙ করা মাটির বাড়িতে যেন মাখানো এক অসীম মমতা।আমারও খুব ইচ্ছে করলো দাওয়াতে বসতে আর উঠোনে দাঁড়াতে।একটু লজ্জা লজ্জা করেই বসলাম যদি ওরা কিছু মনে করে।তবে মন ভরে গেলো। প্রথমেই আমরা গেলাম হিলটপে।অযোধ্যা পাহাড়ের উচ্চতা দুহাজার মিটার তবে হিলটপের ওপরটা সমতল। কথিত আছে রামচন্দ্র সীতাকে নিয়ে এখানে এসেছিলেন এবং সীতার পিপাসা পাওয়াতে তীর ছুঁড়ে পাহাড়ের মধ্যে থেকে জল বের করেছিলেন। তা সীতাকুণ্ড নামে পরিচিত,খরাতে আসেপাশে জল না থাকলেও সীতাকুন্ডে জল থাকে। হিলটপে উঠে মনভরে দেখলাম সবুজের চাদর জড়ানো অযোধ্যা পাহাড়কে। মাথা নত হয় প্রকৃতির কাছে বারবার আর বলে বিস্ময়ে তাই জাগে জাগে আমার গান কবির ভাষায়। ছোট কয়েকটা ছেলে সবুজ আবির নিয়ে ঘুরছে একটু কিছু পাবার আশায়।টাকা পেয়ে মুখে হাসি ফুটলো। আমরাও শশা খেয়ে কিছুটা পেট এবং পিপাসা দুই ঠান্ডা করে নামলাম আস্তে আস্তে। পথের নিশানা এবং নেটের গন্ডগোলে বেশ ভুলভাল করে অবশেষে পৌঁছলাম আপার ড্যামে,পাহাড়ের কোলে বিস্তৃত জলাধার একদম নীল জল। কিছুদিন আগেই নীলনদের নীলিমায় পাগল ছিলাম তবে এই জলের রঙই বা কম কি? আসলে আমাদের আসেপাশে আছে অনেক কিছুই শুধু দেখার চোখ দিয়ে খুঁজে নিয়ে প্রাণভরে উপভোগ করতে হয়।
গাড়ি নিয়ে একদম বাঁধানো পথ দিয়ে দুপাশের জলরাশি দেখে এগিয়ে চলা আর ছবি তোলা। মনে তখন খুশির ঢেউ। আপার ড্যাম দেখে একটু নিচের দিকে নামতেই দেখতে পেলাম লোয়ার ড্যাম। ছোট কিন্তু খুব সুন্দর স্বচ্ছ নীল জল মন কাড়লো। আর দেখলাম পলাশের ঝোপ। নামতে লাগলাম নিচের দিকে এখানে শিবমন্দির আর রাধাকৃষ্ণ মন্দির আছে। য়ন্দিরের পাশেই আলো করে আছে পলাশ গাছ। ততক্ষণে গরমে ঘেমে মুখচোখের রঙ লেপে মোটামুটি বাঁদরী হয়েছি। তবুও উৎসাহে কমতি নেই মাথায় পলাশের মালা জড়িয়ে ছবি তুললাম।মন্দিরের দেবতাও দর্শন করলাম।একটু দূরে শুনছি বাউলগান হচ্ছে। আমরা তখন এগোচ্ছি সামনের দিকে দেখবো পাখি পাহাড় আর মাঠাপাহাড়।পলাশ ছড়ানো রাস্তার প্রেমে পাগল হয়ে আবার নেমে গেলাম গাড়ি থামিয়ে। রাস্তাতেই পড়লো একটা খাবার হোটেল তবে নামটা মনে রাখা উচিত ছিলো কিন্তু মনে নেই।মোটামুটি একশো জনের একসাথে খাবার ব্যবস্থা সেখানে। বুঝলাম এই দিকে যারা আসে তারা এখানেই খায়। বেশ ভালো ব্যবস্থা খাবার। খেয়ে সোজা পাখি পাহাড়ের দিকে।দূর থেকেই দেখলাম পাহাড়ের গায়ে পাখির ছবি আঁকা শুনলাম অনেক পাখির আনাগোনা হয় এখানে।তবে পাহাড়ে পাখির ছবি এঁকে পাখিপাহাড় বানানোটা আমার ঠিক ভালো লাগেনি।এ যেন প্রকৃতির বুকে ট্যাটু করার মত।
মাঠা পাহাড়েরও মাথাটা গোল মত।পুরূলিয়াতে বেশিরভাগ পাহাড়ের আকৃতি অনেকটা এক রকম। পাখি পাহাড় দেখে গাড়ি ছুটলো চড়িদা গ্ৰামের দিকে। এই গ্ৰামেই ছৌ শিল্পীদের বাস।আর ছৌ নাচের মুখোশ এখানেই বানানো হয়। খুব ইচ্ছে ছিলো ছৌ নাচ দেখার কিন্তু এত কম সময়ে তা আর হলোনা। ছৌ নাচ আমার ভীষণ প্রিয় এ যেন এক বীরত্বের কাহিনী বলে যায়।আর তেমনি প্রিয় মুখোশ,মুখোশ বানানো দেখলাম কি ভাবে কাগজের মন্ড দিয়ে মুখোশ হচ্ছে। সত্যি হাতের কাজের মূল্যই আলাদা। একটা ছোট গ্ৰাম জুড়ে এক অন্য স্বপ্নের রাজ্য। ঠিকমত রাস্তা না জানায় কিছুক্ষণ ঘুরপাক খেয়ে পৌঁছলাম তুরগা লেক আর তার সংলগ্ন তুরগা বাঁধে। লেকের কাছে এসে মনে হলো যেন কোন পাহাড়ি লেকের ধারে এসে গেছি।লেকের ওপারে লম্বা লম্বা পাইনের সারি।বাঁধের ওপর দিয়ে অনেকেই হাঁটছিলেন তবে আমরা তখন মোটামুটি পোড়া পাঁপড় হয়ে গেছি তাই শুধুমাত্র দেখেই নয়ন সার্থক করে ফিরে আসলাম।কারণ তখনও মোটামুটি আমাদের দেখার লিস্টে বামনি ফলস আর মার্বেল লেক আছে।তারপর আবার ফিরতে হবে তিনঘন্টার পথ পেরিয়ে বড়ন্তিতে।সুতরাং তাড়াহুড়ো করে এবার দেখতে হবে। দুএকটা পয়েন্ট বাদ গেলো কিন্তু কিছু করার নেই বুঝলাম লোকাল ড্রাইভার না নেওয়াতে একই পথে বারবার ঘুরপাক খেয়ে অনেকটা সময় গেছে। তবে যা দেখলাম তা মনের মণিকোঠায় রয়ে যাবে অনেকদিন তাই আবার আসবো কখনো এই ভেবেই মনকে বোঝানো।
বামনি ফলস খুবই সুন্দর তবে এখানে হড়কা বানও আসে।আমার পায়ের কারণে নামার সাহস পেলাম না।ওপর থেকে উঁকিঝুঁকি করে কিস্যু দেখতে পেলাম না। ওর বান্ধবী মাঝপথ পর্যন্ত গিয়ে জলের দেখা পেয়ে ফিরে এসেছে। সূর্য তখন প্রায় পশ্চিম দিকে ঢলো ঢলো হবে একটু বাদেই।আমরা পা চালাই মার্বেল লেকের দিকে।কথায় আছে যার শেষ ভালো তার সব ভালো।মার্বেল লেক সত্যিই অসাধারণ। নানা রঙের মার্বেল পাথরের প্রাচীর ঘেরা সুন্দর লেক।মন ভরে গেলো দেখে।লেকের ধারের পাথরে দাঁড়িয়ে উপভোগ করলাম সৌন্দর্য তবে আরেকটু থাকতে পারলে সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারতাম।কিন্তু গুগলকাকু আবার কোন পথঘাটে ঢোকাবে এইসব ভেবেই পা চালালাম গাড়ির দিকে। গাড়িতে ওঠার আগে লেবু চা খেয়ে বেশ তরতাজা লাগলো।আমাদেরও তখন বিধ্বস্ত অবস্থা তাই আর দেরি নয় চলো বড়ন্তির পথে আবার। আকাশে তখন মায়াবী পূর্ণিমার ঢলোঢলো চাঁদ উঠেছে।আর গান বাজছে আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে।বনে যাওয়ার মত যদিও সাহস নেই ঐ রাতে, তবে এই চাঁদনী রাত মনে থাকবে আজীবন।
একসঙ্গে বেশ কয়েকটা গাড়ি যাচ্ছে তাই অনেকটা নিশ্চিন্ত।চারপাশ দেখতে দেখতে যাওয়া,উপভোগ করা চাঁদনী রাতের মোহিনী রূপ।
পুরুলিয়া শহরের ওপর দিয়েই এলাম।ভালো লাগলো শহর, তবে যেমন শহর হয় তেমনটাই। প্রায় সাড়ে নটা নাগাদ ঘরে ঢুকলাম।হাত পা ভালো করে ধুয়ে একদম সোজা ডাইনিং হলে।কিছুক্ষণ বাদেই এলো গরম গরম রুটি আর দেশি চিকেন।সুতরাং লেটস ইট।
কথা হলো পরেরদিন বাড়ির পথে গড় পঞ্চকোট আর বিহারীনাথ দেখে ফিরবো। সুতরাং
জয় বাবা ভোলানাথ বলতে বলতে ঘুমের দেশে পাড়ি দেওয়া।
চলবে...
#বসন্তে_পুরুলিয়া#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
(শেষটুকু)
বাইরে এলে যত রাতেই শুতে যাইনা কেন ঘুম ভেঙে যায় সকাল সকাল।তার সাথে মনটাও একটু ভারাক্রান্ত হলো যে আজই আবার ফিরতে হবে শহরের বুকে। ব্যস্ততা ভুলে যাওয়া চনমনে মনটাকে আবার সংসারমুখো করে ফিরিয়ে নেওয়া ঘরের টানে। সকালে উঠেই তাই একটা হাল্কা চাদর গায়ে দিয়ে রিসর্টের সামনে এসে দাঁড়াই।গেট পেরোলেই রাস্তা,আর রাস্তার ওপারেই দিগন্তবিস্তৃত ফাঁকা জায়গা পাহাড়ের কোলে।মাঝে মাঝে পাথরের আদরে পলাশ গাছ হয়েছে একটা একটা করে। আমরা রিসর্ট লাগোয়া বাগানে গিয়ে দাঁড়াই।বাতাসে তখনও বেশ ঠান্ডার পরশ।পলাশ গাছের তলায় একটা বসার বেদীতে গিয়ে বসি।কত ছোটছোট পাখি আসছে আর যাচ্ছে,সরু ঠোঁট ডুবিয়ে খাচ্ছে পলাশের মধু। ওদেরকে দেখার জন্য বেদীতে উঠে দাঁড়ালাম।ওরা নিজের খেয়ালে রয়েছে।পলাশের ছবি ক্যামেরায় তুলে নিলাম যত্নে। থোকা থোকা পলাশ থরে থরে সাজিয়ে রেখেছে বিধাতা ডালে ডালে।
ভোরের বড়ন্তি লেককে দেখার জন্য রাস্তা ধরে হাঁটলাম সোজা।দুপাশে সবুজের মাঝে পথ,কিছুটা গেলেই লেক। মন ভরে নিলাম লেকের সৌন্দর্য্য। নীল জলে টুপ করে উড়ে আসছে মাছরাঙা, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাচ্ছে কত পাখি। হাঁটতে হাঁটতে সোজা এলাম পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দপ্তরের রিসর্টের কাছে। এই রিসর্টটা বড়ন্তিতে ঢোকার মুখেই একদম লেকের পাশে। আবার হাঁটতে হাঁটতে ফেরা হোটেলের দিকে। কিছুক্ষণ বাদেই তৈরি হয়ে বেরোতে হবে।প্রথমে গড় পঞ্চকোট তারপর বিহারী নাথ হয়ে একদম কলকাতার পথে রওনা তাই গোছগাছ স্নান সবই করতে হবে। স্নান করে তৈরি হতে না হতেই বারবার সঞ্জয় আর অন্যেরা ডাকলো লুচি ঠান্ডা হয়ে যাবে তাই একদম চলে আসতে হবে ডাইনিং হলে।
আমরাও তাই চলে এলাম লুচির টানে।একদম খাস্তা গরম গরম লুচি আলুর তরকারি আর ডিমের ওমলেট চলে এলো আর আমরাও একদম ঝাপিয়ে পড়লাম। একদম আঃ দারুণ কথাটাই এলো মুখে, কারণ এত সুন্দর করে যাচাই করে বসিয়ে খাবার পাবার ভাগ্য আমার মত কজন গিন্নীর কপালে জোটে।বিদেশে গেলাম সেখানে খাবার থরে থরে সাজানো যা ইচ্ছে নিয়ে খাও কিন্তু আমাদের ফুলকো লুচির কাছে সবই কেমন যেন ফিকে।ক্যালরি?ধুর বেড়াতে এসে ওসব ভাবলে ঠাকুর পাপ দেয় তাই শুধুই পেটপুজোতে পুণ্যি।
যাক ঝোলাপত্র গাড়িতে রেখে একটু আবিরের ছোঁয়া সবাই নিলাম গালে কপালে কারণ সেদিন হোলি।শেষবারের মত পলাশগাছ গুলোকে দেখে সেলফি তুলে উঠে পড়লাম বাহনে গন্তব্য গড় পঞ্চকোট এই পথে একবার মাইথন থেকে একবার এসেছিলাম বেশ কয়েকবছর আগে কিন্তু ড্রাইভার এত ভয় দেখালো যে আর শেষ পর্যন্ত জঙ্গলের পথে হাঁটতে সাহস হয়নি। পুরুলিয়া জেলার উত্তর পূর্বাংশে অবস্থিতগড় পঞ্চকোট মোটামুটি বর্ধমান ও ঝাড়খণ্ডের সীমান্তে। আমাদের গাড়ি পলাশের রাজ্য পেরিয়ে এসে একদম চলে এলো প্রাচীন পঞ্চরত্ন মন্দিরের কাছে। দূর থেকে মন্দিরটা দেখে মুগ্ধ হলাম।ছবিতে অনেকবার দেখেছি সবুজের মাঝে পঞ্চরত্ন মন্দির আজ চাক্ষুষ করলাম।কিছুক্ষণ কোন কথা বলতে পারলাম না এত ভালো লাগলো। মনে মনে কল্পনা করলাম অতীতে হয়ত কতই জমজমাট ছিলো জায়গাটা,রাজবাড়ি,গড় আর মন্দির।বিগ্ৰহ পেতো নিত্যপুজো। তাও ভগ্নপ্রায় মন্দিরের সংস্কার ও সাজানোর ফলে এখনো আছে মাথা উঁচু করে। গাড়ির জানলায় খুদেরা ভিড় করেছে পলাশের মালা হাতে সুতরাং আবার শেষবারের মত মালা কিনে আমরা দুই মহিলা খোঁপায় জড়িয়ে নিলাম।
গড় পঞ্চকোট অঞ্চল একসময় শিখর রাজবংশের রাজধানী ছিলো।কালের কবলে বেঁচে আছে শুধুই চিহ্নটুকু জরাজীর্ণ অবস্থায় আর তার গন্ধ মাখতেই পর্যটকেরা ভিড় জমায় সেখানে। মন্দিরের সামনে পেছনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম।তারমধ্যেই নজর কাড়ছিলো একটু দূরে গম্বুজ আকৃতির ভাঙা অংশটার দিকে। শুনলাম একসময় ওটা ছিলো ওয়াচ টাওয়ার।সিঁড়ি বেয়ে উঠে ছোট প্রকোষ্ঠে চোখ রেখে দেখতো পাহাড় আর জঙ্গলের ওপার থেকে কে আসছে। গড়ের কিছু ভাঙা অংশ এদিক ওদিকে ছড়ানো এখনো, তবে ভেতরে ঢোকা যায়না জঙ্গলে। প্রকৃতির বুকে মাথা উঁচু করে আজও আছে পঞ্চরত্ন মন্দির যার পেছনের বারান্দায় বসলে শীতল হয় মন।
এবার ফেরার পালা যেতে হবে বিহারীনাথ আর তারপর একদম সোজা বাড়ির পথে। পলাশে ঘেরা রাস্তায় চোখ রেখে এগিয়ে চললাম ভরসা আবার গুগল কাকু। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পৌঁছে দিলো বিহারীনাথ শিবমন্দিরের সামনে বাইরে তখন কড়া রোদ্দুর। পাহাড়ের কোলে বিহারীনাথের শিবমন্দির লাগোয়া পুকুর।মন্দির চত্ত্বর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এবং বেশ বড়। গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে একটু শীতল হলাম। তারপর এলাম ভেতরে।এখানে শিবলিঙ্গ কিছুটা নিচে।অনেকেই দোল পূর্ণিমার পুণ্য লগ্নে পুজো দিতে এসেছে।পূজারী তা নিয়ে বেশ ব্যস্ত। গর্ভগৃহের ভেতরটা বেশ বড় এবং সুন্দর।বিহারীনাথ বাঁকুড়া জেলার সুউচ্চ পর্বত এখানে ঘন জঙ্গলও আছে। সালতোড়া থেকে এর দূরত্ব চোদ্দকিমি।
বিহারীনাথ দেখে উঠে বসলাম গাড়িতে আমার সঙ্গীরা তখন আইসক্রিম খাচ্ছে,সত্যিই খুব গরম তখন। আমি গাড়িতে বসে আছি পাশে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালো। বুঝলাম পুজো দিতেই আসা নিশ্চয়।হঠাৎই দিদি দিদি করে আমাদের গাড়ির জানলায় একটা ডাক।মিষ্টি একটা ছেলেমানুষ বৌ দরজা খুলতেই একদম ঢিপ করে পায়ে একটা প্রণাম।মেয়েটা খুশিতে দিশাহারা, আমার পুরোনো ছাত্রী ও ভাবতেই পারেনা এখানে আমাকে দেখবে।নামটা বলতেই একটা মিষ্টি ইউনিফর্ম পরা বয়েজ কাট চুলের মুখ মনে পড়ে গেলো। হয়ত শিক্ষিকা জীবনের এইগুলোই বড় প্রাপ্তি।ততক্ষণে ওর বরও এসে প্রণাম করলো।ওর দুবছরের ছেলে আদুরে গলায় মায়ের নির্দেশে বলে উঠলো হাত তুলে নমস্তে। মনটা কিছুক্ষণের জন্য ভরে উঠলো কানায় কানায়। শুনলাম ওর আসানসোলে বিয়ে হয়েছে সেদিন ছুটি তাই এসেছে মন্দিরে।
ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এবার একদম কলকাতার পথে।গুগল কাকু যা তা কান্ড করলো একটা সময়।ছোট ছোট সরু রাস্তা দেখালো,কখনো মাঠের পথে এনে দেখাচ্ছে রোড সারানো হচ্ছে। যাক শেষে উদ্ধার পেলাম পেট্রোলপাম্পের লোকের সহায়তায়। হাইওয়েতে উঠে আঃ বলে বাঁচলাম।আরে সবই যদি নেটে নেটে হয় তাহলে কি হয়? কখনো মানুষও কাজে লাগে।
হাই ওয়েতে আবার লঙ ড্রাইভের স্বাদ কিন্তু আজ মুডটা একটু অফ। আরে বাবা আবার তো গোয়ালে এসে ঢোকা। মাঝে দুপুরের খাওয়া সেরে একদম বিকেলে এসে পৌঁছলাম শক্তিগড়। জায়গাটা কিসের জন্য বিখ্যাত সবাই জানেন।আর কি আমরাও এখন আমি লেংচে মরি বলতে বলতে একদম সোজা ল্যাংচার দোকানে। শেষ পাতে মিস্টি না হলে জমে নাকি? আরে বাবা মধুরেণ সমাপয়েৎ।তাই ল্যাংচা,সীতাভোগ,মিহিদানা সবই কিনলাম মন ভরে। এবার একদম বাই বাই।অনেক হয়েছে এবার বাড়ি যাই।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment