Skip to main content

মানে না মানা

#মানে_না_মানা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

অহনার নতুন বিয়ে হয়েছে। অবশ‍্য প্রেম করেই বিয়েটা,ওর পছন্দের আনন্দর সঙ্গে।আগে থেকেই মোটামুটি চিনতো শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে। শ্বশুর শাশুড়ি দুজনেই ভালো মানুষ খারাপ নয়।তবে ওর শাশুড়িমা মমতা একটু বেশিই ঠাকুরভক্ত।
     অহনাদের বাড়িতে আবার একটু অন‍্য আবহাওয়া শনিবার, মঙ্গলবার নেই।নেই বৃহস্পতিবার নিরামিষ খাওয়ার ঝামেলা।সবদিনই মাছ মাংসের অবাধ বিচরণ।
  তাই ওর মা বলেছিলো প্রথমেই.."সবই ভালো তবে একটু বেশি নিয়মনিষ্ঠা কিন্তু তুই কি ওসব মানতে পারবি?"
" আরে আমরা যেদিন গেছিলাম সেদিনও দেখলাম বারবার হাত ধুয়ে কাজ করছে।"
" মা, হাত ধোয়া কি খারাপ নাকি? এটা তো হাইজিন। শরীর ভালো থাকবে।"
  " ওরে মেয়ে শ্বশুরবাড়ির নিন্দা এখন থেকেই গায়ে সহ‍্য হচ্ছেনা তাই তো?"
  "মা আমি গেছি ওদের বাড়িতে,হ‍্যাঁ হাত ধুয়ে খেতে হয়। বিছানায় খাওয়াতে ওনার আপত্তি আছে। আমি ভেবে দেখেছি দুটোর মধ‍্যে কোনটাই ভুল নয়। বিছানায় খাবার খেলে খাবারের গুড়ো পরে থাকলে তাতে পিঁপড়ে আর জীবাণুর উৎপাত দুই হতে পারে।"
        " এই যে মহারাণী,আর খাবিনা এরপর বিছানায় বসে।আরে অভ‍্যেস তো করতেই হবে।চ‍্যারিটি বিগিনস আ্যট হোম। যত উপদ্রব মায়ের কাছে।"
  " আর তো কিছুদিন মা।তোমাকে জ্বালিয়ে নিই। তারপর আমাকে মিস্ করবে।"
            " একদম না, নিজে পছন্দ করেছো।আমি তো বাঁচবো বাপু।তারপর আমরা কর্তা গিন্নী একদম ঘুরবো এদিক ওদিক যেখানে খুশি।"
  " মা তুমি কিন্তু ভীষণ বাজে।"
  মাকে জড়িয়ে ধরে অহনা। মায়ের চোখের কোলটা একটু যেন ভেজা হয়ে ওঠে বন্ধুবিচ্ছেদের কষ্টে। ঐ মেয়েকে নিয়েই তো কেটে যায় সারাদিন।
  " মা,আমি কি অনেকদূরে যাচ্ছি।একটু খানি দূরেই তো শ্বশুরবাড়ি।যখন খুশি চলে যাবে।"
                শ্বশুরবাড়ি চেনা অহনার, চেনে শ্বশুর শাশুড়িকেও।তবুও সাবধানী হয়।মা বলে দিয়েছে,আগে দেখে শুনে তারপর কথা বলবি।
            হাত ধোয়া অভ‍্যেস করে নিয়েছে অহনা।
" শোনো অহনা, তোমরা খাও যা খুশি আমার কোন আপত্তি নেই।তবে আমাকে জোর করোনা।যা করি সংসারের জন‍্যই, সবার মঙ্গলের জন‍্য। আর ঐ মাছের পাক সব কোরনা,একটু মানিয়ে নিয়ো অভ‍্যেস হয়ে যাবে।"
  "শেষে ওকেও অভ‍্যেস করাবে? হ‍্যাঁ সবার মঙ্গল করতে গিয়ে উনি নিজের অমঙ্গল ডেকে আনছেন। না খেয়ে খেয়ে পেটের অসুখ বাধিয়েছেন।"
" মা বাবা ঠিকই বলেছেন। না খেয়ে থাকলে কিন্তু আমি একদম শুনবোনা। তাহলে আমরাও স্ট্রাইক করবো।"
  " সে কি কথা! দেখেছো মেয়ের কান্ড?আমার ছেলে কিন্তু মোটেই খিদে সহ‍্য করতে পারেনা।"
      " না পারুক,আমি কিন্তু খুব জেদি।"
" তা জানবোনা আবার,আমাকে বাবু সব বলেছে। ব্রেকআপই হয়ে যাচ্ছিলো নাকি।ছেলের তো কি অবস্থা!"
   হাসে অহনা, একটু লজ্জাও পায়।কি ছেলে বাবা মাকে সব বলেছে। আজকে আসুক।
" তাহলে শুনেছো তো আমি ব্রেক আপ ডাউন সবই করে দিতে পারি রাগ হলে। তাই ঠাকুরকে ডাকো কিন্তু খালি পেটে নয়।"
      কদিন লক ডাউনে সবাই গৃহবন্দী।বরের বায়না মেটাতে অহনা ছোটাছুটি করছে মোটামুটি সারাদিন।" মা দেখেছো তো,কি রকম চায়ের নেশা তোমার বরের আর ছেলের।কবার হলো দেখো।"
     শাশুড়িমা যা বললো তাতে আক্কেলগুড়ুম অহনার..." চা পাতা তো এক কেজি আনিয়ে রেখেছি।সেদিন হোয়াটস আ্যপে দেখলাম দিনে অন্ততঃ তিন কাপ চা খেতে বলেছে গো। তাহলে নাকি শরীর ঠিক থাকবে।"
" মা তুমিও হোয়াটস আ্যপে এত কিছু দেখো?"
" হ‍্যাঁ দেখি তো।আমি কি শুধু পুজো করি নাকি সারাদিন? আমাকেও একটু চা দাও,আর তুমিও খাও। কিছু হবেনা..লিকার খাও চিনি ছাড়া।"
           "আর কি খোদ ওপর মহলের অর্ডার,তাই চা হয়ে যাক।"হাসে আনন্দ
  মুখ বাঁকায় অহনা," এবার তুমি করবে।কাজ ভাগ করে নেবো।"
" আমি তো চাই কাজ ভাগ করে নিতে।বাবাও তো বলছে।তোমরাই তো ঢুকতে দিচ্ছোনা।"
  " এবার যাও,তবে কুড়ি সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধোয়া কনুই পর্যন্ত।"
        শ্বশুর শাশুড়ি দুজনেই হেসে ফেলে।কত চিন্তার মধ‍্যে এই খুনশুটি টুকুই এক ঝলক খোলা আকাশের হাতছানি ওদের কাছে।
          কদিন ধরেই ক‍্যালেন্ডার দেখছে মমতা,"ইশ্ এই চৈত্র মাসে কত কি,আমাদের এখানে সারা চৈত্র মাস শনিবার মঙ্গলবার মেলা হয়।হাতিবাগানে বসে সেলের বাজার।কত কেনাকাটা আর লোকজনের ভিড়।আর দেখো এই সময় কিনছি আলু,চাল,আটা,তেল এইসব।চারিদিকে শুধুই নির্জনতা। অন্নপূর্ণা পুজো,বাসন্তী পুজো সব বন্ধ।এমন শুনেছো আগে কখনো? একটু দেখোনা ষষ্ঠী কবে?"
   " জামাই ষষ্ঠী?"
" ওরে জামাই ষষ্ঠী নয় অশোকষষ্ঠী।আমি মানি,তোমাকে মানতে হবেনা।"
" গুগলে দেখবো মা?"
" গুগলে পুজো দেখা যায়?"
" সব দেখা যায়।কি চাই তোমার শুধু বলো।"
        খুঁজে তারিখটা বলে দেয় অহনা। এই যাহ্ কালই তো আমার যে অশোক ফুল আর সোনামুগ লাগে। অহনার গিন্নীবাধ‍্য শ্বশুরমশাই উদ‍্যোগী হয়েছিলেন বাজারে যেতে আনন্দই বকুনি দেয়। " বাবা তোমার কিন্তু ষাটের ওপর বয়েস মনে আছে তো।সুতরাং ষষ্ঠী এবার মাথায় থাক তুমি যাবেনা।আমিও যাবোনা লকআউট চলছে।"
না বললেও হঠাৎই একটা ওষুধ আনতে যেতে হলো বাইরে।তাই মাকে বলেই গেলো.." তোমার কি আনতে হবে? কিগো মা?"
      " তুই পারবি বাবু?
আনন্দ জানে মা কি বলবে তাই নিজেই বলে "তোমার কিসব ডাল ফুল ঐসব তো। কি হবে মা? দোকান সব বন্ধ।"
  " দ‍্যাখ যদি পাওয়া যায়।"
বাইরে বেরোয় আনন্দ,একটু বাদে ফিরেও আসে।
     
পেলি?"
"না মা যে দোকানটার কথা বলেছিলে সেটা আজও বন্ধ। "
"অন‍্য কোথাও ছিলোনা?দেখেছিস?"
"পাওয়া গেলোনা মা,সত‍্যিই আমি খুঁজেছি।"
"তাড়াতাড়ি হাতটা ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেল বাবা একদম কনুই পর্যন্ত কুড়ি সেকেন্ড ধরে।"
  দিনের মধ‍্যে বাড়ির সবাই যে কতবার এই কথাটা শোনে তার শেষ নেই। মনটা খুঁতখুঁত করে মমতার ইশ্ অশোকফুল আর সোনা মুগই পাওয়া গেলোনা?
     অহনা ঘর থেকে বাইরে আসে...
    "কি ভাবছো এত? মা শোনো এবার আর তোমার অশোকষষ্ঠী করে কাজ নেই।দেখছো না সব পুজো বন্ধ। দেবতা মন্দিরে দোর দিয়েছেনতে আমাদের পুজো নেবেন না।মা তুমি জলখাবার খেয়ে নাও এবার।"
        " খাবো,খেতেই হবে।ঘরের ঠাকুরকে আগে একটু পুজো দিয়ে নিই সবার ভালোর জন‍্য।ভালো থাক সবার সন্তানেরা,সুস্থ থাকুক সবাই।সমস্ত অমঙ্গল কেটে যাক।"
      " আচ্ছা বেশ,তাহলে আগে চা খেয়ে নিয়ে তারপর.."
    অহনার মুখের দিকে তাকিয়ে মমতা ভাবেন এ হয়ত এক অন‍্য ষষ্ঠী।লকআউটের সকালে দই কলাতে মুগ আর অশোকফুল না খেয়ে আজ গৃহলক্ষ্মীর আদেশই শিরোধার্য। যখন যেমন তখন তেমন,সেটা মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়াতেই সুখ কিন্তু কজন পারে?
সমাপ্ত:-
        
           
          

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...