Skip to main content

লক্ষ্মীরূপেণ

#লক্ষ্মীরূপেণ#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

লক্ষ্মীর পা আঁকছিলো মেঘা,আলপনা দিতে খুব ভালো লাগে ওর। নতুন বৌয়ের এই শৈল্পিক দক্ষতা শাশুড়িমায়েরও খুব পছন্দ। তাই প্রতি বৃহস্পতিবার ওর দায়িত্ব সকালে উঠে স্নান করে যেটুকু আলপনা দিতে হয় সেটুকু দিয়ে তারপর স্কুলে বেরোনো। সেই জন‍্য সেদিন একটু তাড়াতাড়ি উঠতে হয়। তবে জোর করে নয়,ভালোবেসেই কাজটা করে মেঘা।
            তবে আজকের আলপনা দেওয়াটা একটু বেশিই স্পেশাল।আরে কোজাগরী পুজো বলে কথা তাই আল্পনাটাও বেশ বড়সড়।
     " মা আর কোথায় কোথায় দেবো বলো।"
" আর কোথাও দিতে হবেনা। তুলসী তলায় দিয়েছো তো?"
" হ‍্যাঁ, মা।"
"অনেক হয়েছে "
এবার একটু কাপড়টা বদলে নাও। লালপাড় ঢাকাইটা পরে নাও খুব সুন্দর লাগবে। পাড়ার দু একজন আসবে তো নতুন বৌ তুমি।আর পায়ে একটু আলতাও দিয়ো। লক্ষ্মীর আগমনে লক্ষ্মীমন্ত সাজগোজ করে ঘরে ঘরে অনেকেই।যাদের দশ আঙুলের ছোঁয়ার জাদুতে অনেক মুশকিল আসান হয়।আবার ভালোবাসা দিয়েও অনেক সময় অলক্ষ্মী বা অসতীর তকমাও জোটে অনেকের কপালে।
         তবে মেঘার কপাল তেমন নয় দুধে আলতায় পা ডুবিয়ে  শ্বশুরবাড়িতে পা রাখার পরপরই বাড়িতে পরপরই সুখবর।ননদের বাচ্চা হবার খবর এলো।
      বাড়িতে সবাই মেঘাকে লক্ষ্মীমন্ত ভাবে।শাশুড়িমা হয়ত সেইজন‍্য একটু বেশিই যত্ন করেন। ওর দিদিও বলে," তোর ভাগ‍্য সত‍্যিই ভালো। আমি তো সারাদিন কাজ করি তবু মন পাইনা। একবার খারাপ নজরে চলে গেলে আর ফিরে আসা যায়না।"
                নিজেকে একদম সুন্দর পরিপাটি করে গুছিয়ে নেয় মেঘা। শাশুড়িমা তাকিয়েই বলেন," এই তো বেশ সুন্দর লাগছে। বাড়ির বৌ সেজেগুজে না থাকলে কি ভালো লাগে?" মেঘা বোঝে উনি সাজগোজ পছন্দ করেন।কিন্তু নিজে সাজেননা। শ্বশুরমশাই নাকি বেশি সাজগোজ পছন্দ করেননা। পরে বরের কাছে শুনেছে.." আরে আমার ঠাকুমা মাকে একদম পায়ের তলায় করে রেখেছিলো।মা কি পরবে,কোথায় যাবে,সংসারে কি হবে সবই ঠিক করতো ঠাকুমা না হয় পিসিমা। আমি তখন ছোট ছিলাম। মাঝে মাঝে অবাক লাগতো।অনেকদিন দেখেছি মাকে আড়ালে চোখের জল ফেলতে।"
    " তুমি কিছু বলতেনা?"
" ওমা আমি তো তখন ছোট।তাছাড়া মেয়েদের ব‍্যাপারে আমি কি বলবো?ঠাকুমা পিসিমা আমাকে ভালোবাসতেন।শুধু শুনতাম মেয়েমানুষের এটা করতে নেই ওটা করতে নেই। বাবাও বলতো মেয়েদের বেশি আস্কারা দিতে নেই মাথায় ওঠে।"
  " তাই নাকি তুমিও তাই মনে করো?তাই শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে রাত্রে থাকতে চাওনা। আদর কমে যাবে বলে।"
" আরে ধ‍্যুৎ তুমি তো আমার মাথায় উঠেই আছো এমনিতেই।মেঘাকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে আদরে ভরতো সজল।"
     বুকে মাথা দিয়ে আদর নেবার মধ‍্যেও মেঘার মনে হচ্ছিলো কথাগুলো ঐজন্যই হয়ত কত মেয়েমানুষকে শরীর ভোগ করা ছাড়া ভালোবাসা দিতে ভাবতে হয়েছে।যদি মাথায় উঠে যায়।
           নিজে যে অশান্তিতে দিন কাটিয়েছেন তা যেন বৌয়ের জীবনে না আসে তা ভাবেন সুলতা। তাই হয়ত যত্নে রাখেন বৌমাকে। ভালো মাছ মাংস যা ও খেতে ভালোবাসে তুলে দেন পাতে। নিজের প্রাপ‍্যটা যেন মেনে নেওয়ার অভ‍্যেসে না দাঁড়ায় তার মত।
  " মা তুমিও এবার একটু সাজগোজ করো।"
" আমার আবার সাজগোজ কি এই একটু শাড়ি পাল্টে খোঁপা বাঁধবো।"
  বরাবর তাই দেখে এসেছে মেঘা আর তাতেই উনি সুন্দর। তবুও উনি শাড়ি পরে আসার পর একটু গুছিয়ে সাজিয়ে দেয় মেঘা। গলার কানের গয়না পাল্টে দেয়।
        পুজোর জোগাড় করে ওরা বসে আছে কিন্তু ঠাকুর মশাইয়ের পাত্তা নেই।মহা মুশকিল তো সময় আছে তো একটা।কখন হবে পুজো? শ্বশুরমশাই এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছেন। অনেক পরে শোনা গেলো ওদের যে ঠাকুর পুজো করেন ওনার হঠাৎই একটা বিপদ হয়েছে আসতে পারবেননা।উনি একজনকে দিয়েছেন  তিনি এখনো এই পাড়াতে ঢুকতে পারেননি। বার বার ঘড়ি দেখছেন সুলতা.." কি কান্ড বলতো সময় পার হবার পর পুজো হবে! আমার শাশুড়িমা থাকলে যে কি কান্ড করতেন এতক্ষণে! সারা বাড়ি দাপিয়ে বেড়াতেন আর চিৎকারে অস্থির হত সবাই।"
        নাহ্ পুজো হয়ত আর সময়ে হবেনা এবার মেঘারও মনে হয়।শাশুড়ি শ্বশুরমশাইকে দেখে ওরও খারাপ লাগে।
    একটু ইতস্ততঃ করে বলে.."মা একটা কথা বলবো।পুজোটা তুমিই করে ফেলো। প্রতি বৃহস্পতিবার তো তুমিই করো।কি সুন্দর করে একদম নিষ্ঠাভরে। আমার তো খুব ভালো লাগে।"
     "কি বলছো?ঘরের পুজো আর এটা কি এক! আমার ঠাকুমার আমলেরও আগের পুজো এটা।এভাবেই হয়।" শ্বশুরমশাই বলে ফেলেন।
" একদম পুজো না হওয়ার চেয়ে তো এটা ভালো। মা তো বাড়িটা যত্নে ধরে রেখেছেন ওনার লক্ষ্মীশ্রী দিয়ে তাইনা বাবা?"
   কথা হয়ত এখানেই শেষ হয়না। " আমি তো মন্ত্রও জানিনা সব।"
মোবাইলে গুগল খুলে বসে মেঘা," যখন যেমন তখন তেমন।এই নাও এখানে মন্ত্র আছে। তুমি করো আমি আছি তো।"
তবে সময় কম,তাই শাশুড়িমা আসনকে নমস্কার করে বসলেন আসনে। আজ এক লক্ষ্মীর আরাধনায় নিষ্ঠাভরে বসেছে দুই লক্ষ্মী। মায়ের মুখটা যেমন হাসিমাখা তার থেকেও যেন মনে হলো আরো প্রসন্ন লাগছে। হাসি মেঘার মুখেও আজ যে ওর নির্ভরতার হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছে শাশুড়িমার আত্মবিশ্বাস। বাড়ির ঠাকুরকে বাড়ির বৌ পুজো করছে,এক মা আরেক মাকে করছে আহ্বান..'এসো মা লক্ষ্মী বোসো ঘরে।আমার ঘরে থেকো আলো করে।'
আরতির শিখা মা দিচ্ছেন ছেলের মাথায়।কখনো কখনো পায়ের নিচে পড়ে থাকা মেয়ে মানুষের হাতের ছোঁয়ায় আর আরতির বহ্নিশিখায় মুছে যায় অনেক সংস্কারের অন্ধকার।
#ছয়দিনের_ছয়_ভাবনা#
#সাম‍্যের_অর্থ_আমার_কাছে#
সমাপ্ত:-
          
         

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...