Skip to main content

রক্ষিতা

#রক্ষিতা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

আমি সুমন,জয়চাঁদ উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের ক্লাস এইটের ফার্স্ট বয়। আমাদের অবস্থা খুব একটা ভালোনা তবুও আমি কোনদিন অভাব কাকে বলে তেমন করে বুঝিনি। বাবা ব‍্যবসা করে মানে নির্মলা মাসিমাকে সাহায‍্য করে ব‍্যবসার কাজে।আর তাতেই আমাদের সংসার চলে যায় ভালোভাবে। আমার মা খুব নিরীহ কিন্তু বাবা বদমেজাজী মাঝে মাঝে নেশা করেও বাড়ি আসে।মা তখন আমাকে সরিয়ে নিয়ে যায়। মাকে বাবাকে বলতে শুনেছি.." কই তুমি তো আগে এমন ছিলেনা। এখন কেন এমন করছো শুনি? ছেলে মেয় বড় হচ্ছে।"
       " বেশি ফ‍্যাচফ‍্যাচ কোরোনা তো পুরুষমানুষের একটা নেশা থাকবেনা তা কি হয়? প্রত‍্যেকদিন কি খাই,কখনো সখনো।অত টাকা কোথায় পাবো যে ডেলি মাল খাবো।"
       বাবার চোখে একটা সর্বনাশের নেশা খেলে গিয়েছিলো।আমি আড়াল থেকে দেখেছিলাম। মা চোখে আঁচল চাপা দিয়েছিলো ঘরে ঢুকে ডুকরে কেঁদেছিলো কেন যেন খুব অসহায় লাগতো মাকে। আজকাল মা মাঝে মাঝেই কাঁদে মনে যেন কোন আনন্দ নেই। মাঝে মাকে বলতে শুনেছি  " তুমি ঐ ব‍্যবসার কাজ ছেড়ে দাও নানা জন নানা কথা বলে। আমার ভালো লাগেনা। ঐ কাজ ছেড়ে বরং চাষ করো।"
  " যার লাগি করি চুরি সেই বলে চোর।তিনটে ছেলেমেয়ে মানুষ করবো কি করে ওদের বিয়ে দেবো কি করে সে হিসাব আছে?"
       তারপর থেকে মাকে কোন সময় কাঁদতে দেখলেও আর কিছু বলতে শুনিনি।
     এবার পরীক্ষার রেজাল্টের পর বাবা একটা নতুন সাইকেল এনে উঠোনে রাখলো।আমি তো আনন্দে নেচে উঠলাম.. আমরা তিন ভাইবোন জড়ো হলাম সাইকেলের চারপাশে। " নে পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়ার গিফ্ট।"
      মা ঘর থেকে বাইরে এসে বললো," তুমি কিনলে?"
       " না নির্মলা দিয়েছে।বললো ছেলেকে দিয়ো নাড়ুদা। স্কুলে যাবে সাইকেলে করে।"
        মায়ের মুখে কোন খুশি না দেখে কেমন যেন অবাক লাগলো। আমি ছুটে মায়ের কাছে গিয়ে বললাম..কি সুন্দর সাইকেল তাই না মা!
            পরেরদিন সাইকেল নিয়ে স্কুলে গেলাম,আমি তখন হাওয়ায় ভাসছি।আজ বন্ধুরা যে কি বলবে আমাকে! স্কুলে আসতেই ওরা ঘিরে ধরলো আমাকে সবার চোখে আমি বেশ হিরো।
  হঠাৎই ক্লাস ইলেভেনের সুনীলদা আর অন্তুদা এগিয়ে এলো.." এই যে ভালো ছেলে,বেশ হেব্বি সাইকেল এনেছিস তো! তা কে কিনে দিলো?"
       আমার মাসিমা দিয়েছেন।
ফুঃ কে? হাঃ হাঃ হাঃ মাসিমা না তোর বাপের রক্ষিতা। বাপের রক্ষিতাকে আবার মাসিমা বলছে
রে। রক্ষিতা শব্দটা তখনো আমার কাছে অপরিচিত তবে ওদের অঙ্গভঙ্গী দেখে মনে হলো কথাটা খুবই খারাপ।
      আমি তেমন কিছু বলতে পারলাম না শুধু বললাম রক্ষিতা? সেটা আবার কি?
  ওরা খ‍্যা খ‍্যা করে হেসে উঠলো.." নেকু,পুসু যা বাপকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর ঐ বেধবাটার সাথে কি করে? রক্ষিতা কথার মানে কি?"
       সারাটা দিন ক্লাসে মনটা তেতো হয়ে থাকলো পড়াটা মাথায় ঢুকলোনা। বাড়ি ফিরে এলাম বাবাকে জিজ্ঞেস করার মত সাহস আমার নেই।তাছাড়া সেদিন রাতে বাবা বাড়িও ফিরলোনা। মাকে জিজ্ঞেস করে জানলাম নির্মলা মাসিমার শরীর খারাপ জ্বর হয়েছে দেখার মত কেউ নেই তাই বাবা আজ আসতে পারবেনা।
              রাতে বিছানায় শুয়ে ঘুম এলোনা মনে হলো এক্ষুনি গিয়ে দেখে আসি বাবা ওখানে কি করছে? কিন্তু আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় দু কিলোমিটার দূরে মাসিমার বাড়ি তাই যাওয়া সম্ভব নয়। উঠে  উঠোনে এলাম চাঁদের আলোতে উঠোন ভরে গেছে,হঠাৎই দেখলাম মা দাওয়াতে হেলান দিয়ে বসে। মা তুমি ঘুমোওনি?
" না রে ঘুম আসছেনা। তাই এসে বসেছি,ভালো লাগছে। তুই ঘুমোতে যা বাবা বোন আর দিদি ঘুমিয়ে পড়েছে।"
            আমি মায়ের কাছে এসে বসলাম, মা আমার মাথাটা কোলের কাছে টেনে বললো, "পড়াশোনা করিস,রাত জাগলে শরীর খারাপ হবে বাবা। আয় মাথায় হাত বুলিয়ে দিই।ঘুম এলে ঘরে চলে যাবি।"
  তুমি যাবেনা?
  " যাবো বাবা।"
মায়ের হাতের নরম ছোঁয়া তবুও মনে হয় কাজ করে করে মায়ের হাতদুটো খুব শক্ত হয়ে গেছে। মাকে বলি,আচ্ছা মা তোমাকে সারাদিন অনেক কাজ করতে হয় তাইনা? তোমার খুব কষ্ট হয় তাইনা মা?
    " তুই বড় হ ভালো করে পাশ দে আমার সব কষ্ট মুছে যাবে।"
            আচ্ছা মা নির্মলা মাসিমা কি তোমার বোন? কথাটা শুনে মা যেন একটু চমকে ওঠে।
  " কেন রে?"
না আমাদের এত ভালোবাসে,বাবাকে কত বিশ্বাস করে। কত জিনিস দেয় আমাদের।
    মা বলে," হ‍্যাঁ ঐ আর কি?বোনের মতই আমার বন্ধু ছিলো একসময়।"
   একসময় কেন?এখন আর বন্ধু নয়?তাহলে তোমাকে শাড়ি পাঠায় কেন পুজোতে?
" এখন আর যাওয়া হয়না বাবা,বন্ধু যদি মালিক হয় তাহলে একটু বাধো বাধো লাগেনা। তোমার মাসিমা বড়লোক মানে অনেক টাকা।আমরা গরীব।"
         আমি নির্মলা মাসিমাকে দুএকবার দেখেছি কই তেমন তো দেখিনি।মাসিমার হাতের কাজের ব‍্যবসা।নিজে কর্মচারীদের সাথে বসে কাজ করেন।কখনো মাল নিয়ে যান শহরে বাবা সেদিন রাতে ওখানেই থেকে যায়,মাসিমাকে স্টেশনে পৌঁছে ভোরের গাড়িতে তুলে আসে।আবার সন্ধ‍্যেবেলা নিয়ে আসে স্টেশন থেকে। এক একদিন মাকে মুখঝামটা দিতে শুনেছি..." ভোরের গাড়িতে তুলবে বলে সারারাত থেকে এলে।আবার আনতে ছুটছো,কেন আর কেউ নেই নাকি?"
     " নিজের কেউ থাকলে কি আমাকে দরকার হত? নাকি আমাকে এত বিশ্বাস করতো? একটু ধৈর্য্য ধরো সীমা,তুমিই তো ঢুকিয়েছিলে আমাকে ওখানে।আমি কোথাও যাচ্ছিনা সংসার ফেলে।শুধু টাকার জন‍্য পড়ে আছি। ওর তো কেউ নেই তাই আমাকে ভরসা করে,আর মরলে আমরাই  পাবো সেই ব‍্যবস্থা করে রাখছি।"
         চমকে উঠেছিলাম কথাটা শুনে বাবা একটা মানুষের মরার পর সম্পত্তি পাওয়ার ব‍্যবস্থাও করে রেখেছে!
        মা তখনো আমার মাথায় হাত বুলোচ্ছে,একটা সময় জিজ্ঞেস করে "কি রে ঘুম পাচ্ছে এবার?"
  আমি আস্তে আস্তে বলি আসছে মা,আচ্ছা মা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
" কি কথা রে?"
  আচ্ছা রক্ষিতা মানে কি গো? খারাপ কিছু?
মা অদ্ভুতভাবে চমকে ওঠে,রেগে যায় হঠাৎই.." কে বলেছে এসব কথা,ঠিক করে বল একদম মিথ‍্যা বলবিনা।"
           ঐ ছেলেরা বলছিলো নির্মলা মাসিমা নাকি বাবার রক্ষিতা এই বলে খুব হাসলো। বলোনা মা কি মানে?
        "রক্ষিতা মানে যে রক্ষা করে। নির্মলা মাসিই তো আমাদের রক্ষে করছে তাইনা? তার জন‍্যে আমরা ভালো আছি দুবেলা দুটো খাচ্ছি। তোরা পড়াশোনা করছিস তাইনা? আর কখনো বলিসনা এইসব কথা শুনিসওনা।লোকে হিংসে করে বলে,আমরা ভালো আছি তা ওদের প্রাণে সয়না।"
            ছোট থেকেই আমি মায়ের বাধ‍্য ছেলে তাই আর প্রশ্ন না করে শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
              মাঝে কেটে গেছে দুটো বছর আমি মাধ‍্যমিক পাশ করতে নির্মলা মাসিমা অনেক কিছু কিনে পাঠিয়ে দিয়েছেন।বইপত্র সবই কিনে দিয়েছেন। এখন আমি ইলেভেনে পড়ি,সাইকেল নিয়েই টিউশনে যাই।দিদি বিয়ে ফাইনাল দেবে,বাবা ব‍্যস্ত হয়ে গেছে বিয়ের খোঁজ করতে। মাও চাইছে দিদির বিয়ে হয়ে যাক সংসার কিছুটা হাল্কা হবে। কিন্তু দিদির একদম ইচ্ছে নেই বলে নিজে কিছু করে বিয়ে করবো নাহলে তোমার মত অবস্থা হবে আমার,বাবা তোমাকে মানে একটুও।
   মা হঠাৎই রেগে যায়.." মানুক না মানুক আছে তো আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েই।"
           সেদিন আমি পড়তে যাচ্ছি হঠাৎই দেখলাম নির্মলা মাসিমা চুড়িদার পরা স্কুটি চালাচ্ছে পেছনে বিরাট মালের ব‍্যাগ। হয়ত কোথাও মাল সাপ্লাই দিতে এসেছেন,খুব খাটেন শুনেছি বাবার কাছে।সারাদিনই কাজ করেন।
       হঠাৎই কানে এলো দুজন মহিলা বলছে," বেধবা মেয়েছেলের সাজ দেখেছিস,স্কুটি চালিয়ে খুকি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।বর মরে একদম পোয়াবারো হয়েছে মাথার ওপর পুরুষের শাসন না থাকলে যা হয়।যা খুশি করছে।
      মাসিমাকে দেখে হঠাৎই মায়ের কথা মনে হয়েছিলো। উনি মায়ের বন্ধু তাই শুনেছি,বিধবা অথচ কতটা স্বাবলম্বী কিভাবে একটা ব‍্যবসার পেছনে খেটে বড় করেছেন। বাড়ি ঘর করেছেন এমনকি আমাদেরও কত সাহায‍্য করেন।কিন্তু মানুষের এইরকম মানসিকতা কেন?এরা কি কিছুতেই মানুষকে ভালো থাকতে দিতে চায়না তাকে পায়ে দড়ি পরিয়ে সাদা থানে রেখে খুশি হয়!কেন যেন ওদের কথাগুলো শুনে মনটা ভারী হয়ে গেলো।
                      এখন আমি রক্ষিতা কথার মানে জানি..পুরুষ রক্ষক হয়ে যখন কোন মহিলাকে নিজের কুক্ষিগত করে রাখে ভোগ করে ইচ্ছেমত বা ব‍্যক্তিগত সম্পত্তি বলে মনে করে তখন সেই মহিলাকে রক্ষিতা বলে। অনেকবারই নিজেকে বোঝাতে চেয়েছি একজন স্বাধীন মহিলা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী। যিনি আমাদের সাহায্য করেন আমার বাবা যার কর্মচারী তিনি কি করে আমার বাবার রক্ষিতা হবেন? ভাবতে মাথাটা কেন যেন গুলিয়ে উঠেছিলো নাহ্ আর ভাবতে পারিনি বা হয়ত চাইনি।
          তবুও একদিন সত‍্যি আমার সামনে এসে গিয়েছিলো নিজের অলক্ষ‍্যে। বাবা মায়ের সঙ্গে কয়েকদিন ঝামেলা চলছে..বাবা নেশা করে বাড়ি আসে,মা দরজা বন্ধ করে দেয়। ঘরের ভেতরে চলে তর্ক বিতর্ক বাবা মায়ের কাছে টাকা চায় আর কি নিয়ে ঝামেলা হয় বুঝতে পারিনা। একদিন সকালে উঠে মাকে দেখলাম না।দিদিও নেই মামাবাড়ি গেছে।বাবা অকাতরে ঘুমোচ্ছে তখনো নেশা কাটেনি। এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করছি পাচ্ছিনা হঠাৎই একজন বললো মধুপুরের দিকে যেতে দেখেছে মাকে বোধহয় নির্মলা মাসিমার বাড়ি গেছে তাহলে ভেবে আমি রওনা দিলাম।
         দরজার বাইরে থেকেই বুঝলাম মা সেখানে এসেছে,আশ্চর্য হলাম মা খুব একটা এখানে আসেনা। তাহলে হঠাৎ কি হলো?টাকার জন‍্য?
    ভেতরে যাবো কিনা ভাবছি হঠাৎই কানে এলো মায়ের গলা.." কিসের এতো দেমাক তোর টাকার? বিধবা হয়ে কিসের দেমাকে এত ঠাটবাটে থাকিস? আমার স্বামীর?"
  " মুখ সামলে কথা বল সীমা, আমার কাছে এসে কেঁদে পড়েছিলি তোর বরের একটা কাজের জন‍্য। বলেছিলি ছেলেমেয়ে নিয়ে না খেতে পাওয়ার মত অবস্থা তোদের।যা বলবো তাই করবি মনে নেই।"
   মা ঝাঁঝিয়ে ওঠে," মনে আছে,খুব মনে আছে।তবে তখন তো জানতাম না আমার বরটাকেই তোর কাছে জন্মের মত বন্ধক রেখে দিতে হবে।তুই তাকে নিঃশেষ করে ছাড়বি।একটা অমানুষ বানাবি তোর শরীরের আর টাকার লোভ দেখিয়ে।"
    আমি সতেরো বছরের একটা ছেলে যেন চোখের সামনে কালো পর্দা সরে যাওয়ায় একটা সিনেমা দেখছি।কিন্তু নড়তে পারছিনা সেখান থেকে।
    " নষ্ট আমি নাড়ুদাকে করিনি।নষ্ট তোরা আমাকে করেছিস একটু একটু করে শুধু টাকার লোভে। কত সম্পত্তি আর টাকা আমার আত্মসাৎ করেছে নাড়ুদা তুই তো জানিস। জানিসনা বল?টাকা তো তুই রাখিস কাছে আমি শুনেছি।"
       মা যেন একটু দমে যায়,"কাজ চেয়েছিলাম একটা।আর তুই কাজের বিনিময়ে আমার সব নিয়েছিস।"
     " তাই নাকি আমার স্বামী মারা গেলো তার ছমাস বাদে আমার পাঁচবছরের ছেলে। আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। ব‍্যবসা লাটে উঠেছিলো দুবছর কাউকে মুখ দেখিইনা।ভালো করে হাঁটতে পারতাম না।পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর একদিন হঠাৎই মনে হয়েছিলো কাজ শুরু করতেই হবে আমাকে নাহলে বাঁচবোনা। কিন্তু ভরসা করার মত লোক পাচ্ছিলাম না। তখন আমার কোলে তোর ছেলেকে তুলে দিয়ে সাহায্য চেয়েছিলি তুই। ছেলেটাকে কোলে নিয়ে মনে হয়েছিলো আমার বাবাই। ও আমার গলা ধরেছে জড়িয়ে।"
        " তাই খুব লোভ হয়েছিলো না আমার সংসার দেখে আর সেইজন‍্য আমার বরকে হাতের মুঠোতে রাখতে তার সঙ্গে শুয়েছিলি। আমার ছেলেকে সবসময় নজরে রাখতিস,জিনিস কিনে দিতিস। লোভী মেয়েমানুষ ছিঃ।"
         " সীমা তুই এখান থেকে চলে যা,তোদের কেউ আমার বাড়ির আসেপাশে আসবিনা। নাড়ুদাকে আমি ঢুকতে দেবোনা এখানে।যা হয় আমার হবে।এমনিতেই তোরা আমাকে ধনেপ্রাণে শেষ করেছিস। তোর স্বামী সংসারের ওপর আমার লোভ ছিলোনা আমার দূর্বলতা ছিলো শুধু তোর ছেলের ওপর।ও যে বাবাইয়ের মত একদম।আর সেই দূর্বলতার সুযোগে আমার অসুস্থতার সুযোগে তোর স্বামী দিনের পর দিন আমাকে ধর্ষন করে গেছে। তুই নাকি স্বামীকে সুখ দিতে পারিসনা। তোর ছোটমেয়ে হওয়ার পর তোর নাকি আর কিছু নেই? আমার শরীর অর্থ সবটুকু নিংড়ে নিয়ে এখন কি চাইতে এসেছিস?"
    লজ্জায় আমার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিলো চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছিলো জল। সত‍্যিই এখনো এই দেশের কত মহিলা সমাজের অন‍্য ক্ষুধার্ত পুরুষের থাবার হাত থেকে বাঁচতে আত্মসমর্পণ করতে বাধ‍্য হয় শুধু একটু নির্ভরতার জন‍্য। সবটাই কি শরীরের প্রয়োজনে না না সমাজ তাদের ব‍্যবহার করে নিজের প্রয়োজনে কারণ ছোট থেকেই তারা পিতার তার পরে পতির আর শেষে সন্তানের সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। নির্মলা মাসিমা কাঁদছেন অঝোরে ঘরে,মাকে কতটা সেই কান্না ছুঁলো আমি জানিনা তবে আমাকে ছুঁয়ে গেলো।খুলে গেলো আমার চোখ মেলাতে পারলাম না স্কুটি চালানো স্বাবলম্বী মাসিমাকে আজকের সাথে।
           আমি থামের আড়ালে দাঁড়ালাম, মা চলে
যাচ্ছে ঘর থেকে বেরিয়ে। আজ কেন যেন নির্মলা মাসিমার সম্বন্ধে মায়ের বলা কথাগুলো সত‍্যি বলে মনে হলো। আজ বুঝলাম মা অনেক মিথ‍্যা কথা বললেও একটা কথা ঠিক বলেছে যে রক্ষা করে তাকে রক্ষিতা বলে তাই বোধহয় নিজে সংসার না করতে পেরেও নির্মলা মাসিমা এতদিন রক্ষা করে গেছেন আমাদের সংসার আর তাই বাবা ফিরতো বাড়িতে আমরাও হয়ত অভাবের যন্ত্রনা তেমনভাবে বুঝিনি কোনদিনও। অন‍্য কেউ হলে হয়ত কবেই বাবাকে দাবী করে বসতো।
        কিন্তু দোষী কে?
আচ্ছা আমি কি নির্মলা মাসিমার কাছে গিয়ে বলবো আমি তো তোমার বাবাইয়ের মতই সবাই তোমাকে ব‍্যবহার করলেও আমি তোমায় ঠকাবোনা। মাসিমা কি আমাকে বিশ্বাস করবে?©কলমে রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী(copyright protected)

ভালো লাগলে লেখিকার নামসহ শেয়ার করুন।
সমাপ্ত:-
   

 
    
   
     
     

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...