Skip to main content

মিশর এক বিস্ময় (৩)

#মিশর_এক_বিস্ময়#(৬)
    #হারগাদা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

মিশর এক বিস্ময় লিখতে লিখতে একটা সময় আমিও হারিয়ে গিয়েছিলাম কারনাক টেম্পল দেখার পর হারগাদা যাচ্ছি বলে। হারগাদা আফ্রিকান সৈকত শহর একদম রেড সির ধারে অবস্থিত। রেড সি বলতে আমিও ভেবেছিলাম জলে লালচে ছোঁয়া নিশ্চয় পাবো কিন্তু মাঝে মাঝে সমুদ্রের জলে একটু হাল্কা লাল আভা দেখা গেলেও জলের রঙ গাঢ় নীল।একদম চোখ জুড়িয়ে যায় মানে এত গভীর প্রেম হয়ে যায় যে চোখ ফেরাতে ইচ্ছেই করেনা। কারনাক থেকে হারগাদা পৌঁছতে আমাদের মোটামুটি বেশ রাত্রিই হয়ে গিয়েছিলো যতক্ষণ দিনের আলো ছিলো মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম মরুভূমির দৃশ‍্য। এক জায়গাতেই কত রঙের বালির স্তর দেখলাম..সত‍্যিই অদ্ভুত, কেমন যেন অবাক লাগে। তারপর বেশ অনেকক্ষণের অপেক্ষার পর বুঝতে পারলাম সমুদ্রের পাশ দিয়ে চলেছে আমাদের বাস।চারদিকে কি সুন্দর আলো জ্বলছে আর অনেক বড় বড় হোটেল,রেস্তোরাঁ আর শপিং মল। আমাদের হোটেলের নাম ছিলো এ এম সি রয়‍্যাল।হোটেলের সামনেই আমাদের মালপত্র নামিয়ে বাস বিদায় নিলো তবে আমাদের গাইড মানে যাকে আমরা হাবিবি বলছিলাম এবং ট‍্যুর অপারেটর সাথেই ছিলেন। বিশাল বড় লবি,সুইমিংপুল,জিম,স্পা,ডিস্ক,পার্সোনাল বিচ এছাড়াও আরো অনেক সুবিধাযুক্ত হোটেল।আমাদের রুমের চাবির সাথে সাথে সবার হাতে একটা করে সাদা ব‍্যান্ড আটকে দিলো ওরা। শুনলাম এই ব‍্যান্ডটা মানে আমরা এখানে উঠেছি সুতরাং আমাদের খাওয়া দাওয়ার জন‍্য এটা লাগবেই। হোটেলের ঘরে ঢুকে একটু ফ্রেশ হয়েই চলে এলাম ডাইনিং হলে,বেশ অনেকটা বড় ডাইনিং হল একসাথে অনেক মানুষ বসে খেতে পারে। খাওয়ার আইটেম মোটামুটি সব জায়গাতেই একরকম অর্থাৎ প্রচুর বেকারি আইটেম থেকে ভেজ,ননভেজ,রাইস,রোটি,ডেসার্ট এন্ড ফ্রুটস অনেক রকমের। আমি অবশ‍্য খাওয়ার ব‍্যাপারে একটু খুঁতখুঁতে মানে ঝোলভাত খাওয়া একদম বাঙালি তো তাই একটু জেনে বুঝে প্রতিদিনই খাবার নিই। আগে ভালো করে নাম ধাম দেখে এবং চেহারা পত্তর দেখে খাবার নেওয়া আরকি।
             খাওয়ার পর জানতে পারলাম পরের দিন সকালে বিশেষ কিছু করার নেই সুতরাং সকালে ব্রেকফাস্ট করে আমরা যাবো রেড সিতে ওখানে সাবমেরিনে উঠবো। বেশ মজা লাগলো কাল সমুদ্রের তলার জগৎ দেখবো এটা ভেবে। তাই পরের দিন সকাল সকাল উঠে ব্রেকফাস্ট করে একদম দল বেঁধে বাসে উঠে গেলাম। বাস আমাদের নিয়ে গেলো জেটিতে তারপর ওখানে গিয়ে উঠলাম সাবমেরিনে।ওমা সাবমেরিন তো জলের ওপর দিয়ে যাচ্ছে কেন! যাক বাবা আমি বেশ ততক্ষণে পেছনে ফেলে আসা হারগাদার সৌন্দর্য উপভোগ করছি। খুবই সুন্দর লাগছে যেন মনে হলো নীল সায়রে এক রাজপ্রাসাদ। মাঝে মাঝে ভেসে আসছে দুএকটা জাহাজ নীলের ওপর সাদা যেন ঠিক রাজহাঁস পাখনা মেলেছে। সাবমেরিনে তখন বাজছে আফ্রিকান মিউজিক তার তালে তালে সবাই নাচছে আমাকেও ওরা ডাকলো এই ব‍্যাপারে খুবই কাঁচা আমি তাই জাহাজের দোলায় একদম বডি ব‍্যালেন্স রাখতে না পেরে বসে বসেই ঠান্ডা পানীয় নিলাম হাতে আর উপভোগ করলাম।
             একটু পরেই আমাদের নিচে যেতে বলা হলো..সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে দেখলাম কাঁচের জানলার পাশে ছোট ছোট বসার টুল। এবার বেশ সাবমেরিন বলে মনে হলো।টুলে বসে জানলায় চোখ রেখে কিছুক্ষণের জন‍্যে একদম হারিয়ে গেলাম সমুদ্র জগতে।ওয়াও! কত রকমের মাছ আর সামুদ্রিক প্রাণী।কত সুন্দর তাদের রঙ,ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে আর চলে যাচ্ছে। হলুদ,লাল,কালো,সবুজ, নীল কত রঙের নাম জানা আর না জানা সব মাছ। এর মধ‍্যে গাইড একটা হাঙরকেও দেখালো অবশ‍্য খুব ছোট। তার সাথে কত সামুদ্রিক গাছপালা।সমুদ্রের তলায় যে অত গাছপালা থাকে তা দেখেছি আন্দামানে তবে এবার যেন আরো কাছ থেকে।এক এক সময় মনে হচ্ছিলো মাছগুলো হয়তো গ্লাস ফুটো করে চলে আসবে।সত‍্যিই মন ভরে গেলো দেখে।তার মাঝেই দেখলাম স্কুবা করছে অনেকেই। ডিসেম্বর মাস,সমুদ্রের ধারে হলেও হারগাদাতেও বেশ ঠান্ডা তখন। আমাদের দলের দুটো কলেজের ছাত্রী স্নরকেলিং করবে বলে সুইমিং কস্টিউম পরে নামলো সিঁড়ি বেয়ে সমুদ্রে সঙ্গে অবশ‍্যই ওদের লোক। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই উঠে এলো ঠান্ডায়।
                সাবমেরিনে ঘুরে মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেলো এবার স্নান করে লাঞ্চের পালা। লাঞ্চের সময়ই আমাদের গাইড বলে দিলো সন্ধ‍্যে সাতটার মধ‍্যে রিসেপশনে চলে আসতে। লাঞ্চের পর আমরা দুজনে হাঁটতে হাঁটতে সুইমিংপুলের পাশ দিয়ে বিচের দিকে এলাম।অনেকেই তখন রোদে গা এলিয়ে সানবাথ নিচ্ছে। আমরা সমুদ্রের মাঝ বরাবর কিছুটা হেঁটে এলাম,সুন্দর পথ করা আছে সমুদ্রের ওপর দিয়ে।
         দুপুরে ঘরে এসে যথারীতি বিশ্রামের পর সন্ধ‍্যের প্রস্তুতি।আগে থেকেই বলা ছিলো একত্রিশে ডিসেম্বর আমরা হারাগাদাতে থাকবো আর সেখানেই ব‍্যবস্থা গালা ডিনারের। এমনিতেই ফ্রুটজুস কোল্ডড্রিঙ্কস চা কফি ঢালাও থাকে।কিন্তু সেদিন ককটেল মকটেলের সাথে খাওয়া ছাড়াও বছর শুরুর অনুষ্ঠান দেখা তাই পার্টি মুড সবারই। সুতরাং কিছু তো স্পেশাল থাকতেই হবে। আমি ঠিক করেছিলাম আগেই সেদিন ট্র‍্যাডিশনাল ড্রেস পরবো তাই আমি শাড়ি আর ও ধুতি পাঞ্জাবি পরলো। একদম পারফেক্ট বাঙালি সাজ। আমাদের গ্ৰুপের কয়েকজন মহিলাও শাড়ি পরেছেন।বেশ লাগছে সবাইকে দেখতে।সবার বেশ একটু অন‍্যরকম সাজগোজ।বিদেশীরাও সবাই প্রায় পার্টি ওয়‍্যারে আছে।চারিদিকে একটা উৎসব উৎসব ভাব। অনভ‍্যস্ত আমিও একটা রেডওয়াইন নিলাম।মহিলারা সবাই মিলে একসাথে বসে বেশ আড্ডা আর গল্প জমলো সবাই তখন বেশ ফেস্টিভ মুডে।সবার আশা নতুন বছর আসছে কিছু নতুন খবর নিয়ে।তখন কে আর জানতো দুহাজার কুড়ির কথা ইতিহাসে লেখা থাকবে। দুহাজার কুড়ি আনবে একটা অনভিপ্রেত অভিজ্ঞতা যা রীতিমতো ভয়ঙ্কর।
                      গালা ডিনারের মেনু সত‍্যি বলছি আমি পুরোটা দেখে উঠতে পারিনি।মোটামুটি তিনহাজার মানুষের জায়গা হতে পারে এমন ডাইনিং হল। আর মেনুর কথা কি বলবো.. সেদিনও মনে হচ্ছিলো আর আজও মনে হয় যে সময় বিশ্বের অনেকের হাতে খাওয়ারের অপশন নেই সেই সময় মানে তার অনেকটা আগে এত খাবার! মানে এত রকমের খাবার!
     হাঁস,মুরগী,বিফ,ল‍্যাম্ব,পর্ক,টার্কি,কোয়েল,র‍্যাবিট আরো যে কিসের মাংস ছিলো আমি দেখে উঠতে পারিনি।সব মাংসই তন্দুর অপশনে আছে চোখের সামনেই গ্ৰীল করে দিচ্ছে দরকারে। এছাড়া রকমারি মাছ,ভেজিটেবল, স‍্যালাড,বেকারি,ডেজার্ট, কেক,প‍্যাস্ট্রি আর কত কি বলবো।হ‍্যা ফ্রুটস যত খুশি সফ্ট আর হার্ড ড্রিংকস। আমি ভেতো বাঙালি উঁকি দিয়ে এটা ওটা দেখে শেষে একটু চিকেন আর চিংড়ি নিয়ে বসলাম। তবে কেকের রকম আর ডিজাইন দেখে মুগ্ধ হলাম,বার বার মনে হলো আমার ছেলে মেয়ের কথা। ওরা থাকলে সত‍্যিই খুব খুশি হতো।
        খেতে খেতেই শুরু হলো ওদের প্রোগ্ৰাম নানারকম আ্যফ্রিকান ডান্স,জিপ্সি ডান্স আর সবশেষে বেলি ডান্স। সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখলাম,খাওয়া তখন মাথায় উঠেছে আমার। সত‍্যিই অপূর্ব! ততক্ষণে পুরোনো বছরের প্রায় শেষ ঘন্টা বাজার পথে নাচের তালে পা মিলিয়েছি আমরাও যে যার মতো আনন্দ করছি।তার মধ‍্যেই সূচনা হলো দুহাজার কুড়ির। সবাই তখনো পার্টি মুডে।আমাকে দেখছে কয়েকজন বিদেশি মহিলা আলাপ করলেন ওরা খুবই উৎসাহিত আমার সঙ্গে ছবি তোলাতে। হয়ত ভারতীয় সংস্কৃতি পছন্দ করেন অনেকেই তাই আমারও ভালো লাগলো। নজর কাড়লো আমার কর্তার পাঞ্জাবি
আর ধুতিও। পার্টি শেষ হয়েও রয়ে গেলো তার রেশ আমাদের দলের অনেকেই তখনো পাশের ছোট ডিস্কে পা মেলালেন নাচের তালে।সবাইকে শুভরাত্রি ও নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিয়ে ফেরা হোটেলের ঘরে। পরের দিন দুপুরে লাঞ্চ করে আমাদের ফেরার পালা।তাই বেশ কিছুটা সময় পাওয়া গেলো বিশ্রামের। পরদিন সকালে লাঞ্চ করে দুজনে আবার হেঁটে গেলাম সমুদ্রের ওপর দিয়ে তখন আকাশে বেশ চড়া রোদ কিছু প‍্যারাগ্লাইডিং হাওয়ায় ভাসছে। নীলের নীলিমায় আবার ডুবে গেলাম মন হারিয়ে গেলো রেড সির সৌন্দর্যে। লাঞ্চটা খুবই মেপে করলাম কারণ সেদিন আমাদের কায়রো ফিরে যাওয়া।পৌঁছতে পৌঁছতে রাত্রি হয়ে যাবে। কায়রো পৌঁছে পরের দিন যাবো আলেকজান্দ্রিয়া। হঠাৎই লিখতে লিখতে বন্ধ করেছিলাম লেখা আবার হয়তো একটা দুটো পার্ট লিখবো না হলে শেষ হবেনা। আজ এইটুকু থাক।©কলমে রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী

#মিশর_এক_বিস্ময়#
         (৭)
(আলেকজান্দ্রিয়া)
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

কায়রো ফেরার আগে হারগাদাতে হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকটা ছবি তুলে উঠে বসলাম বাসে। অনেকটা পথ যেতে হবে তাই আবার যাত্রা শুরু। যতক্ষণ দেখা গেলো দেখলাম রেড সি কে মন ভরে। রাস্তার পাশে মরুভূমি আর তার পাশে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে লাগলো রেড সি। আবার হঠাৎই দেখা গেলো কিছুক্ষণ।তারপর কিছুক্ষণ বাদে মিলিয়ে গেলো একদম তারপর শুধুই মরুভূমির বৈচিত্র‍্য,কোথাও বালির ঢিবি আর কোথাও ঢেউ খেলানো বালিয়াড়ি।তার মাঝে মাঝে কোথাও জনবসতি। মাঝে একটা ক‍্যাফেতে আমাদের বাস থামলো তখন বাইরে বেশ ঠান্ডা হাওয়া। কফি খেয়ে চাঙা হয়ে আবার শুরু যাত্রা।
কায়রো পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় সাতটা বেজে গেলো।আমাদের পরিচিত হোটেল ওয়েসিসেই আবার উঠলাম। মালপত্র ঘরে রেখে ফ্রেশ হয়ে সোজা চলে আসা ডিনারের জন‍্য,পরদিন ভোরে ওঠা আবার ব্রেকফাস্ট করে বেরোনো আলেকজান্দ্রিয়ার পথে।
        আলেকজান্দ্রিয়া মিশরের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। গ্ৰীক বীর আলেকজান্ডারের নাম অনুসারে এই শহরের নাম আলেকজান্দ্রিয়া।৩৩১ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে এই শহরের প্রতিষ্ঠা হয়। প্রায় এক হাজার বছর ধরে আলেকজান্দ্রিয়া হেলেনীয়,রোমান,বাইজান্টাইন ও মিশরের রাজধানী ছিলো,৬৪১ খ্রিষ্টাব্দে মিশরে মুসলিমদের বিজয়লাভের আগে পর্যন্ত। আলেকজান্ডারের আসার আগে এই শহরের নাম ছিলো রাকোটিস। এই শহরকে রাজধানী করেছিলেন এক সময় আলেকজান্ডার।মিশরের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর এখানে অবস্থিত। এখানে আছে মিশরের বৃহত্তম গ্ৰন্থাগার বিবলিওথিকা।মিশরের বৃহত্তম শিল্প ও বাণিজ্যকেন্দ্র আলেকজান্দ্রিয়া। এখানে তেলের পাইপলাইন আছে। ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত সুন্দর আলেকজান্দ্রিয়া শহর। এই শহর বিখ‍্যাত আলেকজান্দ্রিয়া বাতিঘরের জন‍্য।কিন্তু এখন তার অস্তিত্ব নেই,ভূমিকম্পে নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ এক সময় এটি সপ্তম আশ্চর্যের একটা ছিলো।এখন সেখানে একটা ফোর্ট আছে যা আমরা দূর থেকে দেখলাম। কায়রো থেকে আলেকজান্দ্রিয়ার দূরত্ব ২২০ কিলোমিটার। আট লেনের আধুনিক শহর। তার মাঝে মাঝে আছে আমরা যেদিন আলেকজান্দ্রিয়া যাই সেদিন আবহাওয়া খুব একটা ভালো ছিলোনা একটা মেঘমেঘ ভাব আর ঝোড়ো হাওয়া।
        
      #দ‍্য ক‍্যাটাকম্বস অভ কোম আল শোকাফা#
ক‍্যাটাকম্ব শব্দের বাংলা অর্থ ভূগর্ভস্থ সমাধিক্ষেত্র। এটা আলেকজান্দ্রিয়াতে অবস্থিত বিখ‍্যাত ঐতিহাসিক স্থান আর মধ‍্যযুগের সপ্তাশ্চর্যের একটা। এখানকার ভেতরের ভাস্কর্যগুলো চুনাপাথরের মনোলিথ মানে এক প্রস্তরে খোদাই করা। সমাধিসৌধের ভেতরে যাবার জন‍্য একটা বৃত্তাকার সিঁড়ি আছে ঠিক কুয়োর মত দেখতে এখান দিয়েই বাইরে থেকে মৃতদেহ ভেতরে আনা হত। আমরা গোল গোল ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলাম।
      পাথরের তৈরি মৃতদেহের সমাধিক্ষেত্র সার দিয়ে রাখা দেখে যেন হঠাৎই মনটা কেমন হয়ে গেলো।কত হাজার বছর ধরে এইভাবে আছে সমাধিগুলো।
     ভূগর্ভস্থ সমাধিক্ষেত্রের ছাদ এক এক জায়গায় এত নিচু যে মাথা নিচু করে ঢুকতে হয়।ভেতরে পাথরের শীতলতা এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগায়।
     এখানে এখনো গ্ৰীক ভাস্কর্যের নিদর্শন আছে যা বিস্ময় জাগায়। হারকিউলিসের ভাস্কর্য এবং কোথাও সাপের খোদাইকৃত মূর্তি কোথাও বা গ্ৰীক দেবদেবীর মূর্তি। প্রত‍্যেকটা পাথরের ঢাকনা দেওয়া বাক্সে একটা সময় মৃতদেহকে সমাধি দেওয়া হয়েছে। দেখে মনে হয় কারুকার্য করা পাথরের সিন্দুক।
         দেখা শেষে আবার গোল গোল সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এলাম।মনে রয়ে গেলো এক অদ্ভুত অনুভূতি বা মন চলে গেলো অতীতের কল্পনায়।

         আমাদের পরবর্তী দেখার জায়গা পম্পেইস পিলার।পিলার মানে স্তম্ভ,পিলার হচ্ছে রোমানদের বিজয়স্তম্ভ। রোম এবং কনস্টান্টিনোপলের বাইরে এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় স্তম্ভ।২৯৭খ্রীষ্টাব্দে এটি নির্মিত হয়। প্রাচীন পৃথিবীতে নির্মিত এটি অন‍্যতম বৃহৎ মনোলিথ মানে এক পাথরে তৈরী স্তম্ভ। রোমান সম্রাট ডাইয়োক্লেতিয়ান এক বিজয়কে স্মরণীয় করতে এটি তৈরী করেন। এটার ভিত থেকে চূড়া পর্যন্ত উচ্চতা ছাব্বিশ দশমিক পঁচাশি মিটার। এর চারপাশে অনেকগুলো প্রাচীন রোমান ভাস্কর্য আছে।বেশ কিছুটা হেঁটে আমরা একদম পম্পেইস পিলারের কাছে এলাম। আশ্চর্য হয়ে গেলাম মসৃণ এবং সুউচ্চ পিলার দেখে যা প্রাচীন যুগে নির্মিত হলেও বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় সয়েও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে।
           এটা দেখার পর আমরা ভূমধ‍্যসাগরের ধারে এসে উপস্থিত হই ওখানে তখন খুব ঝোড়ো হাওয়া আর ঠান্ডা বাতাস বইছে। তখন দু এক ফোঁটা করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।আমরা ওখান থেকে কাতবে দূর্গ দেখে বাসে উঠে বসলাম। পথেই কে এফ সিতে লাঞ্চ ব্রেক পেলাম। ওখানে যখন লাঞ্চ সারছি তখন বেশ জোরে বৃষ্টি নেমেছে তার সঙ্গে ভূমধ‍্যসাগরীয় শীতল বাতাসে হাত পা জমে যাওয়ার জোগাড়। তাই বাদবাকিটুকু বাসে বসে উপভোগ করেই ফিরলাম কায়রোর উদ্দেশ্যে।
    যতক্ষণ বাস ঘুরলো শহরে ততক্ষণ উপভোগ করলাম চোখ দিয়ে লাইব্রেরী  ওভারব্রীজ ও ভূমধ‍্যসাগরের সুন্দর দৃশ‍্য।
           সেদিনের মত ফিরলাম কায়রোতে আবার আলেকজান্দ্রিয়া দেখে পরের দিনই আমাদের ফেরার ফ্লাইট তবে আমরা সকালটাও নষ্ট করবোনা তাই কথা হলো আমরা ভোরে বেরোবো কায়রো থেকে প্রায় চল্লিশ মিনিট দূরে স্টেপ পিরামিড দেখতে। আজ এইটুকু থাক।
সমাপ্ত:-

#মিশর_এক_বিস্ময়#
      (শেষটুকু)
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

এগারো দিনের মিশর ভ্রমণের আজই শেষ দিন আমাদের।মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি একদিকে আনন্দ আরেকদিকে একটা মন খারাপের অনুভূতি। বাড়ি ফিরবো অনেক দিন বাদে।আবার ছেলে মেয়েদের মুখগুলো দেখবো,কতদিন ওদের দেখিনা আবার দেশের মাটিতে পা রাখবো এই সব মিলিয়ে একটা আনন্দ। আরেকদিকে একটা হাল্কা মন কেমন করা অনুভূতি একদম শেষবারের মত বাস থেকে যাতায়াতের পথে পিরামিডকে চেটেপুটে দেখে নেওয়া যতক্ষণ দেখা যায়।মন হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন যুগের ইতিহাসের মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা গিজার পিরামিডে যা প্রাচীন যুগের ইতিহাসে সপ্তাশ্চর্যের মধ‍্যে একটা যা কেবলমাত্র এখনো মাথা উঁচু করে বেঁচে আছে। আর তো কোনদিনই আসতে পারবোনা,সেই ছোটবেলা থেকে যা স্বপ্নে দেখেছি তা বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে অনেকটা ইচ্ছেশক্তির জোরে আর পরিশ্রমের ফলে। তাই কিছু অসুবিধাকে অগ্ৰাহ‍্য করেই গেছি আর উপভোগ করতে চেয়েছি পুরোটা। আজই যেহেতু আমাদের ফ্লাইট তাই হাতে সময় নেই।আমাদের দলের কয়েকজন গেলেননা তাদের শরীর দেবেনা তাই। আমাদের বলা হলো আমরা একদম সকাল ছটায় বেরিয়ে যাবো সাড়ে আটটার মধ‍্যে ফিরে যাবো তারপর ব্রেকফাস্ট করে একদম রওনা দেবো। সেদিন আমরা প‍্যাকেট লাঞ্চ করে নেবো।
         আমরা সকালেই তাই স্নান করে ফ্রেশ হয়ে ঘরেই চা বানিয়ে খেয়ে বাসে উঠে বসলাম। সকালে তখন বেশ কড়া ঠান্ডা,বাইরের আবহাওয়া একটু মেঘলা। বাইরে তখন ভোরের শীতলতা প্রকৃতির ঘুম ভাঙছে,চারিদিকে দেখতে দেখতে বুঝতে পারলাম সাকারার কাছাকাছি এসে পড়েছি। সাকারা লোয়ার ইজিপ্টে অবস্থিত।স্টেপ পিরামিড পিরামিডের চেয়েও প্রাচীন। পিরামিড ব‍্যবহৃত হত মৃত‍্যুর পর ফ‍্যারাওদের দেহ রাখার জন‍্য একদম তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সমেত। আর স্টেপ পিরামিড ফ‍্যারাও তার জীবদ্দশায় বানাতেন,তা ধাপে ধাপে উঠতো অনেক সময় ফ‍্যারাওদের বিজয়ের পর তারা সেখানে উঠে তাদের বিজয়ের উৎসব পালন করতেন অথবা বক্তৃতা দিতেন। এবং মৃত‍্যুর পর সেই পিরামিডের ভেতরের প্রকোষ্ঠেই তাদের মৃতদেহ সযত্নে সংরক্ষণ করে রাখা হত। অনেকগুলো পিরামিডের মধ‍্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে কেবলমাত্র ডিজোসের পিরামিড তবে এখনো খননকার্য চলছে। আমরা ডিজোসের পিরামিডের বিরাট চত্বরে ঢোকার আগে প্রবেশ পথের পাথরের রঙ এবং কারুকার্য দেখে মুগ্ধ হলাম।এখনো কি মসৃণ সেই পাথর,হাত দিয়ে মনে হলো ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখলাম।
          স্টেপ পিরামিড সম্বন্ধে কিছু কথা যা ওখানে লেখা আছে তা পড়েই বলছি।ইতিহাসের প্রথম পাথরের তৈরি বড় সৌধ।একসঙ্গে পুরো পিরামিড একেবারে বানানো হয়নি প্রথমে সাইড লেন্থ 63 মিটার এবং হাইট 8.5মিটার তৈরি হয়। তারপর আরো তিনমিটার সবদিকে বাড়ানো হয় এবং পূর্বদিকে নয় মিটার।এই করে মোটামুটি এগারোটা ধাপ তৈরি হয়েছিলো ডিজোসের সময়।এই পিরামিডের বেস মোটামুটি 121×109m
            সমাধিক্ষেত্রের একদম তলায় প্রায় আঠাশ মিটার গভীর পিরামিড।চল্লিশ মিটার পর্যন্ত মাটির তলায় অনেকগুলো ভাগ ছিলো। যেখানে প্রায় তিরিশ হাজার জার একদম সলিড পাথরের তৈরি যা পাওয়া গেছে।বেশিরভাগ জার গ্ৰানাইট এবং আ্যলাবাস্তার পাথরের তৈরি।নিচের প্রকোষ্ঠের পাথরের রঙিন টাইলসে কিং ডিজোসের হেবসেড ফেস্টিভ‍্যালের চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। যার কিছু কিছু রঙ এখনো সুন্দর আছে। ভেবে খুবই আশ্চর্য হলাম একদম প্রাকৃতিক রঙের ছোঁয়ায় চিত্রিত দেওয়ালের খোদাই চিত্র এখনো অক্ষুন্ন আছে।
           এই কাজ তখনকার সময়ের বিখ‍্যাত আর্কিটেক্ট ইমহোতেপের বানানো। ইমহোতেপ তার ভাস্কর্য এবং সৃষ্টির জন‍্য বিখ‍্যাত ছিলেন। গ্ৰীকরা তাকে গড অফ মেডিসিন বলতেন।
            স্টেপ পিরামিড

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...