Skip to main content

আমরা করবো জয়

#আমরা_করবো_জয়#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"আমি ভাবছিলাম শাঁখা বাঁধানো দেবো,তুই একটু রুমকিদের বাড়ি থেকে মাপটা জোগাড় করে দিবি? নাকি তোর কাছে আছে? থাকার তো কথা,লোহা বাঁধানো বানাবি তো?নাকি বানিয়ে ফেলেছিস?"
" ও সবের আবার কি দরকার মলি,এই শাঁখা দেবার? অত ভাবিসনা তো।যা হয় একটা হবে।এখনো তো দেরি আছে।"
" মানে,বোনপো বৌ তাকে কিছু দেবোনা তা হয়?
তোর পছন্দ হচ্ছেনা নাকি? আসলে তুই তো পায়েলের বিয়েতে হার দিয়েছিস।"
    " তুই এই কথা বলতে পারলি! ঐ হারটা আমি কবেই বানিয়ে রেখেছি পায়েলের জন‍্য।একটাই তো মেয়ে আমাদের তিন বোনের।"
  " দিদি তুই রাগ করিসনা সোনা। আসলে জানিসই তো ওর অফিসের এখন কি অবস্থা।দুতিন মাস মাইনেই হয়না। তাই..."
       " সবই তো জানি রে সোনা।সত‍্যিই কি দিন এলো! কে ভেবেছিলো রমেনেরও অত ভালো চাকরির এই অবস্থা হবে!সেই জন‍্যই তো বলি দিদির পাশে থাকিস তাহলেই হবে।"
    " তা হয়না দিদি,একটা কিছু তো দেবোই আমি। প্রথম ছেলের বিয়ে আমাদের।"
" তাহলে তুই ছোট্ট একটা দুল দিস।আসলে রুমকি তো হাতে কিছু পরেনা।তাই অযথা পড়েই থাকবে।"
     সেকি রে বিয়ের পরও কি ন‍্যাড়া হাতে থাকবে? ওমা কি অলুক্ষণে কান্ড! এক বছর তো শাঁখা পলা খুলতেই নেই,মানে আমার শাশুড়ি তাই বলতেন।তবে পায়েলের শাশুড়ি অত কড়া নয় বলে পায়েল তো ছয় মাস বাদে খুলে দিলো ইউরোপ যাবার সময়,কিসব বললো দুবাই এয়ারপোর্টে নাকি সব খুলতে হয়। কে ঝামেলায় যায় বাবা।সত‍্যি মিথ্যা জানিনা,তবে আমি বকলাম।বললো ছাড়ো তো মা।"
    " না রে তেমন কিছু নয়।রুমকিকে তো তুই দেখেছিস মধ‍্যবিত্ত ঘরের সাধারণ মেয়ে ঐ সব কিছু নেই। আসলে ওদের যা কাজ অত গয়না পরে যেতে পারেনা,ল‍্যাবে কাজ করে তো।"
    " তাতে কি? তুই সব গুছিয়ে দিবি।একটা ছেলের বৌ বলে কথা।"
  " হুঁ বলেছিলাম,হেসেছিলো। শুধু বলেছিলো, 'আসলে ছোটবেলায় মা শিখিয়েছিলো যেটা ব‍্যবহার করবেনা সেটা ঘরে জমাবেনা।উপহার হলেই বা। প্রয়োজন মত জিনিস রাখবে।'...কথাটা ভালো করে ভেবে দেখেছিলাম বুঝলি খারাপ লাগেনি। কত জিনিসই তো আমরা ব‍্যবহার করিনা অথচ জমিয়ে রাখি। ছেলেকে বলেছিলাম কথাটা।"
  ছেলে বললো," মা মেয়ে মাত্রই গয়না ভালোবাসে।সেখানে ও যখন নিতে চাইছেনা অযথা জোর কোরোনা।টাকাটা বরং রেখে দাও কাজে লাগবে।"
         " কি করি বল?তুই তো জানিস আমি সাজতে আর গয়না পরতে ভালোবাসি তাই নিজেই দুএকটা বানিয়ে নেবো বৌয়ের নাম করে।তারপর যখন দরকার হবে ও পরবে।আরে সব তো একসময় ওরাই পাবে।"
                  শ্রীজিত আর রুমকি একটা সময় একই স্কুলে পড়তো তারপর একটা সময় রুমকি স্কুল ছাড়ে।আর যোগাযোগ হয়না,আর তখন ছোট ছিলো সত‍্যি বলতে মাঝে মাঝে রুমকির লুচিতে ভাগ বসানো ছাড়া আর কোন রিলেশন ছিলোনা মানে খিদের সাথে লুচি আলুরদমের সম্পর্ক। হাতে আপেলটা নিয়ে কামড়াতে কামড়াতে দাতা কর্ণর মতো বলতো,"খেয়ে নে,ভালো খেতে হয় দিদানের লুচি।আমি তো প্রায়ই খাই। মা অফিসে যায় বলে তো দিদানই টিফিন করে দেয় আমাকে।"
         পরে রুমকি স্কুল ছেড়ে যাবার পর শুনেছিলো।ওর মা নাকি আবার বিয়ে করেছে তাই ট্রান্সফার নিয়ে অন‍্য কোথাও চলে গেছে। মাঝে মাঝে শ্রীজিত শুধু ওর দিদানের হাতের লুচিটা মিস্ করতো। কে জানে কোথায় চলে গেলো হঠাৎই গোল গোল চোখের গজদাঁতের শ‍্যামলা মেয়েটা? রাধিকাকে বলতে মুচকি হেসে বলেছিলো ক্রাশ ছিলো নাকি রে? বলিস নি তো?
আরে ধুৎ লুচি আলুরদমের ক্রাশ ছিলো।
                        সেই ক্লাশ এইটের হারানো রুমকিকে খুঁজে পেয়েছিলো হঠাৎই একটা কনফারেন্সে, রুমকি তখন রিসার্চ করছে মাইক্রো বায়োলজিস্ট। অনেকক্ষণ দেখে শ্রীজিত বলেছিলো," সাহস পাচ্ছিনা ঠিক একটা কথা বলবো।"
   হঠাৎই চোখটা গোলগোল করে গজদাঁতের ফাঁকে হেসে উঠেছিলো রুমকি.." লুচিপ্রেমিক শ্রীজিত চৌধুরী না!"
    শ্রীজিতের সাহস না পাওয়া কথাগুলো বলে দিয়েছিলো রুমকিই।তারপর ব্রেকে ভীষণ আড্ডা,আর সেখানেও সেই লুচি।প্রথমে টিফিন বক্সটা খুলতেই চমকে উঠেছিলো শ্রীজিত।কিছুই তো পাল্টায়নি যোলো বছরে। " এখানে তো খাবার দেওয়ার কথা তাহলে এখনো লুচি!"
     " আরে আমি এখন খুব একটা লুচি খাইনা,দিদানের কড়া হুকুম বাইরের খাওয়ার খেতে হবেনা। তবে আজ মনে হয় তোর জন‍্যই এটা।"
     " দিদান এখনো লুচি বানায়?মানে বানাতে পারে?"
     ফোঁস করে উঠেছিলো রুমকি," কেন রে? আমার দিদান বুড়ি নাকি? এখনো আগলে রাখে আমাকে। মায়ের তো সময় হয়না।"
     একটা গোপন অভিমানের পরশ ছুঁয়ে গেছিলো শ্রীজিতকে বুঝেছিলো কোথাও একটা না পাওয়া আছে মেয়েটার,প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো রুমকির।বাড়তি পাওনা ছিলো লুচি,মানে এবার আর ঠান্ডা নয় একদম গরম গরম ফুলকো লুচি।দিদানের যত্নে খাওয়া," দাদু আরেকটা দিই,দেখো একদম ফুলকো।মুখে দিলেই গলে যাবে।"
              আলাপ হয়েছিলো ওর মা আর বাবা বোনের সাথেও।পাশাপাশি ফ্ল্যাটে মা থাকতো নতুন সংসারে আর রুমকি দিদানের সাথে।
" দিদান মন থেকে কিছু চাইলে ভগবান তা মিলিয়ে দেয়।"
" আসলে দিদান ও তোমার লুচিকে এতদিন ধরে চেয়েছে তাই ভগবান পাইয়ে দিয়েছেন।"
      মহা পাজি তো মেয়েটা,এত পাজি ছিলোনা একসময়। প্রথমদিন যখন বাড়িতে এনেছিলো মা বলেছিলো,"ঠিকই আছে তবে একদম সিম্পল একটুও সাজগোজ করেনা।"
" মা ও ভীষণ কাজ পাগল তারপর চাপও আছে প্রচুর সময় পায়না একদম। তাছাড়া বোধহয় ওর শখও নেই। এই ঠিক আছে।"
          দুবছর পর যখন বিয়ে ঠিক হলো তখন প্রতিমা আগেই শুনে নিয়েছিলেন কি কি কিনবেন ওর জন‍্য।কারণ ঐ মেয়ে যা..যা ব‍্যবহার করবেনা তা ঘরেও রাখবেনা।
          যেটুকু বলেছে সেটুকুই কিনলেন বোনেরা মিলে।হোয়াটস্ আ্যপ তো আছেই, তাই অসুবিধা হলেই ফোন করে বলা একটু হোয়াটস আ্যপট দেখে বলো। ওপাশ থেকে উত্তর আসে," দেখছি কিন্তু এত কি দরকার! আছো তো তোমরা যা পছন্দ করবে সেটাই হবে।"
           পাকা কথার সময় ওর দিদান হাতটা জড়িয়ে ধরে বলেন," ছোট থেকেই আমার খুব ন‍্যাওটা মেয়েটা। কি যে কষ্ট হচ্ছে আমার! একটু আত্মভোলা, পড়াশোনা আর নিজের জগতেই থাকে।তেমন কাজকর্ম জানেনা আসলে।"
       "তাতে কি আমি তো আর কাজের লোক নিয়ে যাচ্ছিনা।যদি কখনো কিছু করতে শখ হয় করবে।আমার এক পুরোনো গার্জেন আছে জানেন তো।যদিও একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে কখনো কখনো।"
         সন্ধ‍্যা প্রায় বারো বছর আছে ওদের বাড়িতে তাই প্রতিমার চাপ অনেকটাই কম।
             রুমকির ইচ্ছেমতই বিয়ের দিন ধরা হলো কারণ ওর চাকরি নতুন তাই সবটাই মাথায় রাখতে হবে। শ্রীজিতের কলেজের চাকরি। বধূবরণ করতে গিয়ে একটু অবাকই হলেন প্রতিমা,মেয়ে গয়না পছন্দ করেনা বলে এত কম গয়না দিয়েছে বাপের বাড়ি থেকে! আসলে মা আবার বিয়ে করেছে কি আর হবে।তারপর আরেকটা বোনও আছে তাই হয়ত মা এখন থেকেই টেনে চলছেন।তারপর ওনারাও তো কিছু বলেননি।
             সন্ধ‍্যার পাকামিতে কোন অনুষ্ঠানেই ত্রুটি নেই। সমানে মাতব্বরি করছে। দুধে আলতায় পা ডুবিয়ে এসে প্রতিমার খুব কাছে দাঁড়ায় রুমকি একটু আস্তে বলে,"মামণি,এই ব‍্যাগটা তোমার কাছে রেখে দাওনা।খুব ভারী লাগছে অনেকক্ষণ নিয়ে আছি তো।"
   অবাক হন প্রতিমা সত‍্যিই তো বেশ একটা ভারী ব‍্যাগ।ওড়নার আড়ালে চোখেই পড়েনি।
" কোথায় রাখবো,ঘরে রেখে দিই?"
" আলমারিতে রেখে দাও।"
ঠিকই বলেছে মেয়েটা বাড়িতে অনেক লোক তাই আলমারিতে রেখে দেওয়াই ভালো।
                যাক সব শেষ হলে ওরা বোনেরাই মুক্ত করে বৌমাকে বাঁচালো মোটামুটি।অনেক হয়েছে আর নিয়ম করতে হবেনা।এবার বিশ্রাম নাও।
       বৌভাতের দিন সাজানোর সময় মলি বলেই ফেললো," তুমি গয়না ভালোবাসোনা তাই তোমার মা আর আমরাও সব ছোটখাটো জিনিস দিয়েছি।"
    একটু হাসে রুমকি,"হ‍্যাঁ আমার ভারী কিছু আসলে পরা হয়না মানে অভ‍্যেস নেই। মামণিকে একটু ডেকে দাওনা গো।"
  ওরা একটু মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। প্রতিমা এসে দাঁড়ায়," কিছু বলবে?"
" আমি ভুলে গেছি গো ব‍্যাগটার কথা,একটু দেবে।"
     আলমারি খুলে প্রতিমা ব‍্যাগ বের করেন,সত‍্যিই তো খেয়াল ছিলোনা নানা কাজে।আগেই দেওয়া উচিৎ ছিলো।
      ব‍্যাগটা খুলে একটা পুরোনো বাক্স প্রতিমার হাতে দেয় রুমকি.." দিদাকে দাদুর দেওয়া উপহার।দেখোনা জোর করে আমায় দিলো। বলে দিয়েছে বৌভাতের দিন পরতে। না পরলে আবার রাগ হবে।"
           মনে মনে একটু লজ্জিত হন প্রতিমা আর অন‍্যেরাও বেশ অনেকগুলো ভারী পুরোনো সময়ের গয়না কিন্তু খুব সুন্দর।
                       সত‍্যিই আজ রুমকির দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারেনা শ্রীজিত।গয়না নাকি কনের সাজে সেই শ‍্যামলা গোল চোখের মেয়েটাকে এত মিষ্টি লাগছে! প্রশংসা পান প্রতিমাও সবাই বলে খুব গুণের আর সুন্দর বৌ হয়েছে একদম রাজযোটক। দিদাকে দেখে চোখটা টলটল করে ওঠে জলে রুমকির আদুরে গলায় বলে,"আমি কিন্তু খোঁজ নেবো ঠিকমত খাচ্ছো কিনা।" শ্রীজিত বলে," আরে খোঁজ কি আমি তো কলেজ ফেরত চলে যাবো লুচি খেতে।"
    " তোকে কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে দিদা গয়না পরে।কেন যে সাজিসনা! দাদুভাই চোখ ফেরাতে পারবেনা।"
       লজ্জা পায় রুমকি," তোমার মত লাগছে?"
" আমার থেকেও মিষ্টি।তোর দাদু থাকলে তো তোকে বিয়েই করে ফেলতো আবার।"
             ফুলশয‍্যার রাতে আদরে কাছে টেনে নেয় শ্রীজিত। গয়নাগুলো খুলতে যায় রুমকি,একটু থাক।আমি দেখে নিই আগে ভালো করে।সন্ধ‍্যে থেকে শুধু বাইরের লোকই দেখলো। রুমকিকে বসিয়ে ইচ্ছেমত ছবি তোলে শ্রীজিত।
          পরেরদিন আবার বাক্সটা প্রতিমার হাতে দেয় রুমকি, "রেখে দাও মামণি।"
  " তোমার আলমারিতে রাখোনা,লকারে রেখে দেবো।"
     " তুমি রেখে দিয়ো,আমার সময় হবেনা।"
সত‍্যি এক কাজপাগল বৌ এসেছে! কবে যে হানিমুনে যাবে কে জানে দশদিন তো হলো।সবাই তো বিয়ের পরদিনই চলে যায়।তা না ওনার কি জরুরী কাজ আছে।ছেলেটাও সায় দিয়ে যাচ্ছে সবটাতে। অনেক বলে টিকিট করিয়েছেন প্রতিমা বলেছেন ওরা না গেলে এরপর উনিই কর্তাকে নিয়ে হানিমুনে চলে যাবেন।
                      সামনে সপ্তাহের শেষেই ওরা যাবে সাতদিনের জন‍্য সব ব‍্যবস্থা হয়ে গেছে।দুজন একদিন গিয়ে কিছু কেনাকাটা করে এনেছেও।

     " কি বৌ হয়েছে গো তোমার দিদি?আমার তো কাজ বেড়ে গেছে। খাবার খায়না ঠিকমত,চা দিলে পড়ে থাকে।বলে দিয়ো এটা ওর দিদার বাড়ি নয়।"
  " চুপ কর সন্ধ‍্যা, আজকের মেয়ে চাকরি করে।কত পড়াশোনা করেছে ওরা কি ঘরকন্না করবে নাকি? আমার বৌমাকে নিয়ে আর যদি কিছু বলেছিস তাহলে বুঝবি।"
     সন্ধ‍্যা হাসে,হাসেন প্রতিমাও। কিন্তু ভালো থাকা বেড়াতে যাওয়া আর হলোনা। মাঝে এলো করোনা।
    শ্রীজিত খবর দিলো.." রুমকি কিছু বলেনি?আমাদের যাওয়াটা মনে হয় হবেনা মা।এরমধ‍্যে বাইরে যাবোনা।চারদিকে খুব খারাপ অবস্থা।"
  " সে কি! সব কিছু করে যাওয়া হবেনা?মেয়েটার কতটা খারাপ লাগবে ভেবেছিস?"
   " সব ভেবেছি,যাওয়া হবেনা।"
তবে ভাগ‍্যিস যায়নি কারণ গেলে সত‍্যিই বিপদ হতো।কয়েকদিনের মধ‍্যেই লকডাউন হয়ে গেলো।শ্রীজিতের কলেজও বন্ধ হয়ে গেলো।
         " একি তুমি তৈরি হচ্ছো কেন? কোথায় যাবে?সব তো বন্ধ!"
" মামণি,আমাদের একটা মিটিং আছে খুব এমার্জেন্সী। গাড়ি আসবে,ওরাই পৌঁছে দেবে।"
    বেশ অনেকটা রাতে ফেরে রুমকি।শ্রীজিতের মুখটাও কেন যেন একটু গম্ভীর লাগে। রাতে বাথরুমে উঠেছিলেন প্রতিমা তখনো ওরা কথা বলছে। কোন অশান্তি নাকি?
      পরপর কদিনই বেরোচ্ছে রুমকি বিশেষ কোন কাজে প্রতিমা খুব একটা কিছু বলেননা। হঠাৎই একদিন নীচতলাটা পরিস্কার করতে লাগলো রুমকি। "একি বৌমা হঠাৎই নীচতলা পরিস্কার করছো কেন?"
    " এমনি মামণি,ভাবছি কদিন আমি নীচের ঘরে থাকবো। কাজ বেড়েছে একটু বিশ্রাম করবো।রাতে ফিরি তোমাদের অসুবিধা হয়।"
             আশ্চর্য হয়ে যান প্রতিমা হঠাৎ কি হলো? ভালোবাসার বিয়ে। এরমধ‍্যেই আলাদা থাকতে চাইছে লোকেই বা কি বলবে! অগত‍্যা ছেলেকে বলেন," তোদের মধ‍্যে কি কোন অশান্তি হয়েছে বাবু?"
  " না তো,কেন?"
"আসলে রুমকি বলছিলো কদিন একতলাতে থাকবে।বিশ্রাম হচ্ছেনা।কাজের চাপ বেড়েছে। সবার ছুটি ওর কি এমন কাজ বলতো?"
    " তোমাদের কি প্রব্লেম মা? থাকনা ও নিজের মত ছাড়ো। খাওয়ারটা দিয়ো আমি দিয়ে দেবো।"
        কদিন বাড়িতে গুমোট আবহাওয়া ভাগ‍্যিস কদিন বাড়িতে লোকজন আসছেনা তাও রক্ষা।নাহলে কি ভাবতো? বাড়ির বৌ আলাদা থাকছে। না কিছু বলবেননা যা পারে করুক।
            তবে আর মাথা ঠিক রাখতে পারলেননা প্রতিমা যেদিন ছেলের ঘরে গিয়ে দেখলেন ড্রেসিং টেবিলের ওপর লোহা বাঁধানোটা খুলে রেখেছে রুমকি। শাঁখা পলা পরেনা ঠিক আছে,ল‍্যাবে কাজ করতে হয় কিন্তু তাই বলে লোহাটাও খুলে রেখেছে।একটা মাত্র ছেলে তার।আজ রাতে আসুক রুমকি কথা বলবেনই এতো বাড়াবাড়ি কিছুতেই মানবেননা।একেই করোনায় যখন সব লকডাউন তখন বেরোচ্ছে,ল‍্যাবে নাকি কাজ। কি এত কাজ?
               গাড়ির আওয়াজ পেয়েই গেট খুলে দেয় শ্রীজিত। ছেলেটাও হয়েছে তেমনি,তোর সাথে যে শোয়না,লোহাটা পর্যন্ত পরেনা তাকে খাবার দেওয়া গেট খোলা! আজ কথা বলবেনই।
            "রুমকি দাঁড়াও,আমার কিছু কথা আছে তোমার সাথে।"
    " মামণি তুমি এখন নেমেছো কেন?কাল সকালে আমি কথা বলে যাবো।"
" কাল না আমি আজই বলবো।তুমি ওপরে এসো।"
" ওকে ছেড়ে দাও মা ক্লান্ত হয়ে এসেছে ফ্রেশ হতে দাও তারপর কথা হবে।"
  " তুই চুপ কর,আমি এখনি কথা বলবো।"
" আমি এখন কথা বলবোনা মামণি,সরি আমাকে আগে ফ্রেশ হতে হবে।চেঞ্জ করতে হবে,তারপর।"
            খুব অপমানিত লাগে প্রতিমার রুমকির কথা শুনে।ওপরে এসে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন। মা শোনো অযথা শরীর খারাপ কোরনা।
          কেঁদে ফেলেন প্রতিমা.."একমাসও হয়নি এর মধ‍্যে কেমন করে বললো শুনলি। অন‍্যায় করবে আবার..."
       " তুমি শোনো..."
" আমি বলছি,আমাকে বলতে দাও।"
ততক্ষণে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে রুমকি চুল দিয়ে জল গড়াচ্ছে তখনো। আস্তে আস্তে প্রতিমার পাশে সোফায় বসে পড়ে.....
" প্লিজ মামণি,এবার কি বলবে বলো। আমিও সব বলছি।"
" তোমার হাতের লোহা কোথায়?"
শ্রীজিতের মুখের দিকে তাকায় রুমকি।
"মামণি জানো তো করোনা কতটা ছোঁয়াচে যার জন‍্য লকডাউন চলছে সবাই আজ ঘরবন্দী। কিন্তু আমাদের ছাড় নেই,আমাদের কাজটাই এই।তুমি ভয় পাবে অযথা আতঙ্কিত হবে তাছাড়া তোমার আর বাবুর দুজনেরই বয়েস হয়েছে তাই এটুকু সাবধানে আমাদের থাকতেই হবে। আমাদের ল‍্যাবে করোনা টেস্ট হচ্ছে মা।সারাদিন অনেক কাজ,একটুকুও সময় পাইনা।কতদিন দিদাকে দেখিনা।ভয়ে যাইও না,দিদা জানলে চিন্তা করবে।"
      বাদবাকিটা শ্রীজিত বলে.." কতবার খুলবে আর পরবে তাই খুলেই রেখেছে হাতেরটা মা।যতটা সাবধানে থাকা যায়। আর নিজেকেও সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে। দেশের মানুষের জন‍্য ওরাও খাটছে মা রাতদিন করে।"
             চোখটা ছলছল করে প্রতিমার কত বড় কাজ করছে ঐ মেয়েটা আর উনি কত কি ভেবে অযথা রাগ করেছেন। " তোরা একবার আমায় বললি না!"
  " তুমি চিন্তা করতে মা।"
" আমি কিছু শুনতে চাইনা,কাল থেকে স্নান করে এখানে এসে খেয়ে যাবে।"
" মা কয়েকটা দিন তো।ঠিক এই ঝড় কেটে যাবে।তারপর তো আবার সবাই একসঙ্গে সব করবো।ভালো থাকবো সবাই।"
          সকালে বারান্দায় দাঁড়ান প্রতিমা,মেয়েটা ল‍্যাবে বেরোচ্ছে।গাড়িতে ওঠার আগে হাত নাড়ে রুমকি। অস্ফুটে বলে ওঠেন প্রতিমা জীবাণু হার মানুক জীবনের কাছে খুব শিগগিরি আসুক জীবনযুদ্ধ জয়ের বার্তা,ভালো থাক সবাই
সমাপ্ত:-
            

 
    

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...