Skip to main content

আলুভাজা

#আলুভাজা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"মা একটু আলুভাজা করে দাওনা,ঐ একদম ঝুরি ঝুরি মানে ঝুরো আলুভাজা যেমন দিদা করতো।"
   মেয়ের কথা শুনে মনটা হু হু করে ওঠে তৃণার।সত‍্যিই মা আলুভাজাটা খুব ভালো করতো।ছোটবেলা থেকে দেখেছে ওটা মায়ের একদম স্পেশাল।কত জায়গায় ঝুরো আলুভাজা খেয়েছে কিন্তু মায়ের মত কোনটাই নয়। আজকাল তো গ্ৰেটারে ঘষেই লোকে ঝুরো আলুভাজা বানাচ্ছে।
  অথচ মা বঁটি দিয়ে কেটেই কি সুন্দর দক্ষতায় বানাতো আলুভাজা।
               " আমি অত ঝুরি আলু কাটতে পারিনা সোনা।আচ্ছা গ্ৰেটারে ঘষে করে দেবো।নাহলে গোল গোল চাকা চাকা করে কেটে করে দেবো।"
        " না না গোল গোল চাকা চাকা নয় তুমি ঝুরো ঝুরোই কাটবে দিদার মতো।"
             সত‍্যিই মহা মুশকিলের কথা। মা বানাতো বলে কোনদিনই সেভাবে মাথা ঘামায়নি। মা এলেই বানিয়ে দিতো নাতি নাতনিকে। ওরা শখ মিটিয়ে খেতো।আর যখন আসতো তখন কনটেইনার ভর্তি করে আলুভাজা এনে বলতো.." রেখে দে কদিন ওদেরকে দিবি।খাক ওরা ইচ্ছেমতো ওদেরকে দিস ডালের পাতে।"
    " মা ওরা যা মুঠো মুঠো খায় দুদিনেই শেষ করে দেবে।"
  " দিকনা,তারপর আমি ভেজে দেবো আবার। আসলে এখানে লাল আলু পাওয়া যায়না।লাল আলুতে বেশি মুচমুচে হয় রে। সেইজন‍্য তো বাড়ি থেকে বেশি করে নিয়ে আসি।"
                    হঠাৎই মা চলে গেলো,বুঝতেই পারেনি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে। সত‍্যিই এখন মনে হয় কত কি জেনে নেওয়া হলোনা। এই তো সেদিন আলু পরোটা খেতে খেতে খুব মিস্ করলো লঙ্কার আচারটা।উফ্ পরোটা দিয়ে যা লাগতো খেতে একদম জমে যেতো আলুপরোটা।
           হঠাৎই সেদিন মনে হয়েছিলো ইশ্ ওখানে যদি ফোন থাকতো তাহলে ফোনেই জেনে নিতো রেসিপিগুলো। মায়ের বানানো কিছু জিনিস ও চেষ্টা করে বানাতে।এই তো সেদিনই ডালপুরি বানালো ভালোই হয়েছিলো তবে তেমন নয়।
          তবে ঝুরো আলুভাজা, মালপোয়া এগুলো করতে কেন যেন ঠিক সাহস পায়না। তিন্নীর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাটা শেষ হয়েও হলোনা।এখনো বেচারা রাত জেগে পড়ছে। তিন্নী এক ঘরে বাবুন এক ঘরে আর তৃণারা আরেক ঘরে ঘুমোয়।তিন্নীর ঘরের পাশেই কিচেন।
                  তৃণা আগেই শুয়ে পরে তবে সকালে উঠেই শুরু হয় ওর ব‍্যস্ততা।সকালে রান্নাঘরে দেখে কয়েকটা আলু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। বটিটাও পড়ে আছে আর পাশে একটা বাটিও। রান্নাঘরের জানলাটা খোলা।কাল রাতে কি ঝড় উঠেছিলো?বাজারের সমস‍্যার জন‍্য বেশি করে আলু কেনা হয়েছে,ঝুড়িতে করে রাখা রয়েছে।
      কিন্তু একি কান্ড!সব এলোমেলো কেন?যাকগে সব গুছিয়ে রান্না করতে বসে তৃণা। একটু বেলায় ঘুম থেকে উঠে তিন্নী গুটিগুটি পায়ে তৃণার কাছে আসে..." মা,কাল রাতে কিচেনে জলের বোতল নিতে গিয়ে দেখতে পেয়েছিলাম সব এলোমেলো আলু,বাটি আর বঁটি পরে আছে।"
    " হ‍্যাঁ, আমিও দেখেছি রে।মনে হয় ঝড় উঠেছিলো।বা বেড়াল ঢুকতে পারে রে।"
     " ঝড় তো ওঠেনি,বেড়াল হতে পারে।"
বুকের ভেতরটা কেমন যেন ভয়ে ছমছম করে তিন্নীর।তবে মা আর দাদা হাসবে তাই কিছু বলতে পারেনা।
               পরের দিন রাতে রাত জাগতে ভয় হয়,অল্প একটু পড়েই ঘুমিয়ে যাবে ভেবেছে। লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ বাদে কিচেনে খুটখাট শব্দ পায়।তারপর বঁটির শব্দ পায়। এই রকম আওয়াজ আগেও পেয়েছে। কিন্তু ভয়ে উঠতে পারেনা।চুপ করে শুয়ে থাকে।
         ভোরবেলায় রান্নাঘরে গিয়ে ভয়ে ভয়ে উঁকি দেয় দেখে যথারীতি বঁটি উল্টে পড়ে আছে,আলু কয়েকটা পড়ে আছে বঁটির পাশে। বুকটা কেমন যেন কেঁপে ওঠে।উঁকি দিয়ে দেখে মা বাবা তখনো ঘুমোচ্ছে।
            সকালে উঠে মনটা উদাস লাগে তৃণার চোখটাও ভিজে লাগে।ভোরবেলায় মাকে স্বপ্ন দেখলো।মায়ের সাথে সেই আগের মত রান্নাঘরে কাজ করছে।মা আলুভাজা কাটছে ভাজবে বলে।
          সত‍্যিই কেন যে মা এত তাড়াতাড়ি চলে গেলো। কিন্তু আজও রান্নাঘরে সেই আলু ছড়ানো! কাল তো জানলাটা ভালো করেই বন্ধ করেছিলো। তবে কি এমন ঘটলো?

তিন্নী উঠতেই বললো.." মা আজ রান্নাঘরে দেখেছো,আলু পড়েছিলো?"
   " হ‍্যাঁ রে দেখেছি।তুই তো রাতে জাগিস দেখেছিস বেড়াল ঢুকছে না তো?"
      " আমি ঘুমিয়ে গেছিলাম মা কাল।"
তৃণা কাজে ব‍্যস্ত হয়ে পড়ে। সেদিন রাতে দাদাকে বলে ওর ভয়ের কথা তিন্নী..." দাদা,আমার ভীষণ ভয় করছে রে।মাকে কিছু বলতে পারছিনা।মা কষ্ট পাবে।হয়ত রাগও করবে আমার ওপর।"
       " কি হয়েছে বলতো? কিসের ভয়?"

   "আমার মনে হয় দুদিন ধরে রাতে দিদা আসছে রান্নাঘরে। আলুভাজা কাটবে বলে হয়তো আসছে।কিন্তু পারছেনা,তাই চলে যাচ্ছে।আসলে ভূত হয়ে গেছে তো।"
       
      " তিন্নী,তুই যে এতো ভীতু আমি কোনদিন জানতাম না। আর তুই শেষে দিদার ভূতের ভয় পাচ্ছিস! দিদা এতো ভালোবাসতো আমাদের।"
   
      " তাই জন‍্য তো আলুভাজা কাটতে আসছে।আমি বায়না করেছি না।"
                " তাহলে তো আমি আজ দিদাকে দেখবোই।এলে আর ছাড়বো না।একদম আলুভাজা ভাজিয়ে তারপর ছাড়বো।"
    " দাদা....মাকে কিছু বলিসনা প্লিজ।"
   
       সেদিন রাতে ওরা তাড়াতাড়ি লাইট নিভিয়ে শুড়ে পড়ে। বুবুন জেগে থাকে,জেগে আছে তিন্নীও। এক ঘরে দুজনেই চুপটি করে শুয়ে। রাত দুটো রান্নাঘরে বঁটির আওয়াজ। পা টিপে টিপে ওঠে বুবুন পেছনে তিন্নী।বুবুন টর্চটা জ্বালায়।
   একটা বিশাল ধেড়ে ইঁদুর ছুটে পালাচ্ছে,বঁটির ওপর দিয়ে। বঁটি উল্টে পড়লো,তার আগেই আলু ফেলেছে।
          ঘরের আলোটা জ্বালিয়ে হা হা করে হাসে বুবুন। বোনের বোকা বোকা মুখটা দেখে খুব হাসি পায়।
        " ইশ্ দিদাকে দেখবো বলে এই মাঝরাতে জেগে বসে আছি পুরোটাই জলে গেলো।বোন তোর ভূতের গল্পগুলো পড়া বন্ধ কর। যা তা কান্ড।"
      " দাদা,মাকে বলিসনা প্লিজ,প্লিজ। মায়ের খারাপ লাগবে।"
        " ঠিক আছে বলবোনা,শুধু বলবো তুমি আজকে আলুভাজাটা কোরো। তোমার মায়ের মতো নাইবা হলো। আমাদের মায়ের মতো তো হবে। উই মিস্ আলুভাজা।"©রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী
ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করুন।
সমাপ্ত:-

 
   
                   
       

           
        
   

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...