পয়লাবৈশাখ বাঙালীর এক নতুন বর্ষবরণ
পয়লাবৈশাখ নষ্টালজিয়া,স্মৃতির অণুরণন।
নতুন বছরে বাঙালিয়ানা,নতুন আয়োজন
সুখে থাক ভালো থাক সবার আপনজন।
ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
# রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
-----------------------------------------------------------------
খুব ভোরে হঠাৎই ঘুম ভেঙে গেলো হরনাথের ইশ্ কেনো যে ঘুমটা ভাঙলো। চোখটা বুজতে ইচ্ছে করে আরো কিছুক্ষণ,গৌরীর লালপাড় পরা চেহারাটা আবছা হয়ে গেলো। সকালে পূজো শেষ করেই। রান্নাঘরে ঢুকতো গৌরী,লুচি হতোই জলখাবারে,তার সাথে ছোলার ডাল আলুর দম আর ভীমনাগের সন্দেশ। দুপুরে নারকোলের দুধ দিয়ে পোলাও, পটলের দোর্মা,বেগুনি,রুই কালিয়া,চিংড়ি মালাইকারি আর কঁচিপাঠার ঝোল। শেষ পাতে আমের চাটনি আর অমৃতর দই। চেটেপুটে খেতেন বাবা ছেলে আরো নিমন্ত্রিত আত্মীয়স্বজন সমেত। আহা এখনো মুখে লেগে আছে।
দরজার বেলটা বাজে,সরমা এসেছে। "মেসোমশাই জলখাবারে রুটি খাবেন না খইদই?
তাড়াতাড়ি বলুন,দুপুরের জন্য চারাপোনার ঝোল করে রাখবো।"
পয়লা বৈশাখ আজ শুধুই নষ্টালজিয়া হরনাথের কাছে। স্মৃতির মধুর রোমন্থন। উৎসবের আনন্দের সময়গুলো কখনো বিস্মৃতি,কখনো স্মৃতির অনুরণন। বিড়বিড় করে হরনাথ বলেন," ভালো থাক,সুখে থাক আমার আপনজন।"
-----------------------------------------------------------------
বাবা চলে যাবার পর হাজার ঘেঁটেও মায়ের শাড়িটা পছন্দ হয়না শ্রীর। গলার কাছে একদলা দুঃখের বুদবুদ ওঠানামা করে। লালপাড় শাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। কেনো যে রঙগুলো ফিকে হয়ে যায় এভাবে। সকালে বাবার ছবিতে প্রণাম করে, হালকা নীলে মাকে জড়িয়ে ধরে। জীবনকে নিজের গতিতে চলতে দেওয়াই বর্ষবরণ। আছে দুঃখ আছে মৃত্যু তবুও তা জয় করে হাসিমুখে এগিয়ে চলার নামই যে জীবন। তাই নতুন বছরে ঠাকুরকে প্রণাম করে একটাই কথা বলে ভালো রেখো সবাইকে।
------------------------------------------------------------------
"আচ্ছা দিদিভাই আজ আমাকে নিয়ে একটু বেরোবি চুপিচুপি।"
"কেনো দাদু, আবার তুমি মিষ্টি খেতে বেরোবে তাইনা?"
" এই তোর মাথায় বুদ্ধি, চলনা নিয়ে একটু দুপুরে,তখন ভীড়টা একটু কম থাকবে।"
গুছিয়ে বসে কাপড়ের দোকানে জমিয়ে শাড়ি কিনলেন নাতনির সাথে বসে।
" আচ্ছা ঐ লালপাড়টা দেখি,কিরে দিদি এটা তোর ঠাম্মুকে মানাবে তো? প্রতিবার পয়লা বৈশাখে ওই বেরোয় বৌমার সাথে। এবার ঠ্যাং ভেঙেছে বেচারি।"
এ কেমন বন্ধন,ভেবে পায়না নাতনি। অথচ একসময় দাদু কেনাকাটার জন্য ঠাম্মুর সাথে কত ঝামেলা করতো। উৎসব আর নষ্টালজিয়ায় ভালো থাক মনগুলো।
-----------------------------------------------------------------
সকাল সকাল শাশুড়িমাকে প্রণাম করে রুনা বলে," চট করে স্নান করে নতুন শাড়িটা পরে ফেলো।
..."আমার বয়ে গেছে,সেলের শাড়ি আমার চাইনা। আমাকে না নিয়ে একা একা বাজারে যাওয়া।"
আচ্ছা ঝগড়াটা কাল হবে, তোমার ছেলে নীচে গাড়ি রেডি করছে দক্ষিণেশ্বরে যাবো। কি যাবে তো?"
শাশুড়ির গোমড়া মুখে ঠোঁটের ফাঁকের হাসিটা দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো রুনার। পায়ে ব্যাথা তবুও বাজারে যাওয়ার বায়না। বুড়ো হয়ে গেলে সত্যিই ছেলেমানুষ হয়ে যায় মানুষ। তবুও বেঁচে থাক এই মিষ্টি ঝগড়াগুলো সারাবছর, একটু মিঠে কড়া স্বাদ জীবনে।©রুমাশ্রী
-------------------------------------------------------------------
মা বলতেন বছরের প্রথমদিন চোখের জল ফেলতে নেই তবুও চোখটা আজ কোন শাসন মানছেনা। খুব মনে হচ্ছে বাবার কথা দেবীর। পয়লা বৈশাখের সকালের প্রথম প্রণামটা বাবাকেই করতো। মন চলে যায় ছোটবেলার হালখাতায়,ক্যালেন্ডারে আর মিষ্টির বাক্সে। হঠাৎই কানে আসে," মমি দরজাটা খোল।"
দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতেই দেখে শ্বশুরমশাই আর শাশুড়িমা। সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন ওর মাকেও,ঠিক বিশ্বাস করতে পারেনা। ওনার অমতে বিয়েটা হয়েছিলো বলে আলাদাই থাকতেন। এক বাবাকে হারিয়ে আরেক বাবার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে সবার মাঝে সবার আদরে খুঁজে পেলো বাবার অমূল্য আশীর্বাদ," ভালো থাকিস মমি।" বাবারা সত্যিই থাকে সবকিছুর মাঝে।©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
------------------------------------------------------------------
দেশের বাইরে অনেকদিন তৃণা,দুই ছেলেই বড় হয়ে গেছে। পয়লা বৈশাখের সকালটাতে টেক্সাসে একটু অন্য মুডে কাটাতে ইচ্ছে করলো, যদিও ছেলেরা এইদিনের কিছুই বোঝেনা তবুও তৃণার মুখে এখনো লেগে লাড্ডু নিমকির সাথে মায়ের বাঙালী রান্নার স্বাদ। চলো আজ হয়ে যাক কিছু দেশি স্বাদ, লালপাড় সাদা শাড়ীতে গণেশের ছোট ছোট মোটিফ আর গলায় ডোকরার হার পরে বাঙালি রেষ্টুরেন্টে ওরা। হালখাতা নেই তো কি আছে বেঁচে আছে পয়লাবৈশাখ পারফেক্ট সেলফিতে বাঙালীর কাছে।©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
-------------------------------------------------------------------
Comments
Post a Comment