"মণিমা আমি মাছ খাবোনা। মাছটা তুলে রাখো।"
"পুপাই প্রতিদিন এক কথা বলা আমার ভালো লাগেনা। এই জন্যই তো চোখে চশমা হয়েছে। দাঁড়া আমি আসছি কাঁটা বেছে দেবো মাছের।"
" মণিমা আমার তোয়ালেটা দাওনা,নিতে ভুলে গেছি।"
" সত্যি ছেলে মেয়েগুলো শুধুই বড় হয়েছে কোন বুদ্ধিই হলোনা। সারাক্ষণ মণিমা আর মণিমা।"
তুলিকে তোয়ালে দিয়ে পুপাইয়ের মাছের কাঁটা বাছতে যায়। তার মধ্যেই আবার ডাক পড়ে "মণি আমার শাড়িটা একটু ধরে দিয়ে যা না। সেফটিপিন নিয়ে আসিস একটা।"
" যাচ্ছি দিদিভাই,পুপাইয়ের মাছটা একটু বেছে দিয়ে হাতটা ধুয়ে।"
ততক্ষণে আরেকজন এসে আঁচলে টান দিয়েছে..." আমার পুতুলকে একটু শাড়ি পরিয়ে দেবে।"
ওকে কোলে তুলে নিয়ে ছোড়দিভাইয়ের শাড়িটা ঠিক ঠাক করে দেয় মণিমালা।
" দেখ তো ব্লাউজের পিঠটা কেমন হয়েছে? ভালো করেছে না?তোকে বললাম একটা দুটৈ ডিজাইনার ব্লাউজ বানা। কি সুন্দর ফিগার তোর। আচ্ছা কুহুকে একটু দেখে রাখিস।দিদিভাইতো পুজোর ঘরে আমি বেরোলাম অফিসে। তোর দাদা তাড়া দিচ্ছে।"
কুহুকে কোলে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়ায় মণিমালা..." টা টা করো মাকে বাবাকে।"
মণিমালা এই বাড়ির ছোট বৌ। মেজ ভাই আর ছোট ভাইয়ের পর পরই বিয়ে হয়েছিলো। দাদার বিয়েতে বরযাত্রী গিয়েই বৌদির মাসতুতো বোনকে পছন্দ হয়েছিলো তনয়ের। যদিও মণিমালা একটু আপত্তি করেছিলো প্রথমে.." দাদা আমি আরো পড়বো। এম.এ পড়বো। তারপর আমার গান?"
"বাবার বয়েস হয়েছে বোনি,ভালো সম্বন্ধ এসেছে আমাদের সবার ইচ্ছে বিয়েটা হয়ে যাক। ওরা যদি পড়ায় পড়বি। আর গান তো অনেকটাই শিখেছিস।গাইবি মনের সুখে।"
অনেক সময় অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়।মণিমালাও সব কিছু ভেবে মেনে নিয়েছিলো। তনয়ের সাথে আলাপ হয়েও ভালো লেগেছিলো। গান শুনতে ভালোবাসে..বলেছিলো,"পড়তে চাইলে পড়বে।কোন অসুবিধা নেই।"
মাথায় মুকুট,পরনে লাল বেনারসী আর হাতে গাছ কৌটো নিয়ে একটু ভয়ে ভয়েই পা রেখেছিলো শ্বশুরবাড়িতে। অত বড় পরিবার,দুই জা ভাসুর,শ্বশুর,শাশুড়ি এক ননদ। পারবে তো মানিয়ে নিতে? অবশ্য ওদেরও যৌথ পরিবার তাই চিন্তা কিসের?
" পা ফেল আস্তে আস্তে।ছটফট করিসনা এখন আমি কিন্তু তোর বড় জা।একদম গার্জেন। প্রণাম করবি।"
হেসেছিলো মণিমালা.. ওর মাসতুতো দিদি নন্দিতা ওর থেকে বছর দুইয়ের বড়। একটা সময় কতো পার্সোনাল গোপন কথা বার্তা হত মামাবাড়ি গেলেই। আহা কি ভালো ছিলো পুজোর দিনগুলো একসাথে মিলে মিশে ঠাকুর দেখা,আড্ডা গল্প দিদি বলে পাত্তাই দিতোনা, সেই দিদিই এখন ওর জা।
মণিমালার বড় জা শিউলি,একটু গোলগাল মোটাসোটা দেখে মনে হয় খুব গম্ভীর কিন্তু মানুষটা খুব ভালো। তবে বড়দিভাইয়ের একটু বেশি প্রিয় ঠাকুর ঘর আর রান্নাঘর।ওর শাশুড়িমা অসুস্থ থাকায় বড়দিকে না জিজ্ঞেস করে কোন কাজই করেনা। মা বলে দেন," সবটা বড় বৌমার কাছে জেনে নিয়ো।অনেক আগে এসেছে এই সংসারে।সবটাই ওর জানা।আর কাউকে তো একটা দায়িত্ব নিতে হবে।"
তবে ওর বেশি ভাব ছোড়দির সাথে।ছোড়দি দিদি কাম বন্ধু।মণিমালার শাড়ি,ব্যাগ কি লাগবে বোধহয় বেশি নজর করে নন্দিতাই। হয়ত স্বার্থ একটা আছে সারাদিন কুহুর অত্যাচার হাসিমুখে সামলায় ওর মণিমা। তবে ভালোবাসাটাই বোধহয় বেশি।
পুপাই আর তুলি বড়দির দুই ছেলেমেয়ে। পুপাই ইলেভেনে পড়ে,তুলি কলেজ শেষে এখন ইউনিভার্সিটিতে। ওদের নিয়েই আর সংসার সামলে দিন কেটে যায় মণিমালার। আর মাঝে মাঝে মন খুঁজে বেড়ায় তনয়কে।
বিয়ের পরের দুটো বছর স্মৃতি হয়ে মনের মণিকোঠায় আছে আজো।সেই স্পর্শ,সেই ভালোবাসা আর একান্ত কিছু মুহূর্ত আজও ছুঁয়ে যায় মণিমালাকে দীর্ঘশ্বাসে।
তনয়ের পথ চলা থেমে গিয়েছিলো। তনয়ের সুগার ছিলো,ওরা বলেনি।হয়ত বলার প্রয়োজন মনে করেনি। হঠাৎই একদিন চলে যাওয়া।ইনসুলিন নিলেও অনিয়মও করতো প্রচুর।খেতে খুব ভালোবাসতো।মণিমালার কথা শুনতোনা,দাদাদের কথাও শুনতোনা। বলতো দুদিনের জীবন খায়ো,পিয়ো,জিয়ো।
বাড়িতে একটা ভাঙন এলেও মণির ভাঙা মনকে কেউ ভাঙেনি। বরং ওর দাদারা নিতে আসতে চাওয়াতে শ্বশুরমশাই আর জায়েরা আপত্তি করেছিলো।বলেছিলো," নিজের বাড়িতে নিজের ঘরে আছে।পড়াশোনা, গান যা করতে চা
Comments
Post a Comment