Skip to main content

"আমাদের জামাইষষ্ঠী হবেনা এবার?"
          গলার কাছটা একটু ব‍্যথা করে শর্মির,তবুও বলে.." আর ষষ্ঠী হবেনা,কে করবে ষষ্ঠী? ওগুলো এখন ভুলে যাও।"
        শর্মির ব‍্যথাটা বোঝে সুদীপ,আসলে জামাইষষ্ঠীর খাওয়া দাওয়া শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া ও পুরোটাই মিস্ করে।তাই কিছু না ভেবেই বলে ফেলেছে হুট করে কথাটা।
        " আরে মন খারাপ কোরনা,আমার তো নিমন্ত্রণ ছিলো ষষ্ঠীর তোমার পিসিমার বাড়িতে।যাবোও তো ঠিক ছিলো।কিন্তু হঠাৎই ওদের অসুবিধা হলো তাই ক‍্যানসেল হলো প্রোগ্রাম।"
             " জানি তো,তুমি ভেবোনা আমি তোমাকে ট্রিট দেবো।"
                     পকেট থেকে একটা খাম বের করে শর্মির হাতে দেয় সুদীপ।
       " এটা রেখে দাও একদম যত্ন করে। এবারও যাবো ভাই শ্বশুরবাড়ির দেশে।নাইবা থাকলো শ্বশুরমশাই আর শাশুড়িমা জায়গা গুলোর গন্ধ তো নেওয়া যাবে।"
            টিকিট টা দেখে খুশি হলেও মুখটা একটু বিমর্ষ লাগে সুদীপার। আজকাল আর আনন্দ হয়না বাপের বাড়ির দিকে যাবার নামে। অথচ একটা সময় কত খুশি থাকতো মনে।
             "ভালো করে দেখো টিকিটটা দেখো শর্মি আমরা কোথায় যাচ্ছি।তুমিই তো বলছিলে তোমাকে অনেকদিন ধরে যেতে বলছে তোমার ফেসবুকের দিদি সেখানে যাবে।"
           সুদীপ ততক্ষণে গড়গড় করে বলতে থাকে ওর ট‍্যুর সিডিউল। প্রথমে ওখানে যাবো তবে আমার হোটেল বুক করা হয়ে গেছে। তারপর আরও দুজায়গায় ঘুরে একটু মনটা ভালো করে ফ্রেশ হয়ে ফিরে আসা।"
                   " সত‍্যিই দিদিদের ওখানে যাবো?ওরা তো খুব খুশি হবে।কিন্তু হোটেলে উঠবো! ওরা বারবারই বলেছে ওদের বাড়িতে থাকতে।"
         " দেখো,এটা আমাকে বোলোনা একদম প্রথম আলাপে মালপত্র নিয়ে উঠতে পারবোনা।সেই ট্রেনের জার্নি করে ঝোড়ো কাকের মত চেহারা নিয়ে উনাদের ওখানে যাওয়া যায়না।"
                 শর্মির ফেসবুকের দিদি জামাইবাবু,কত মানুষের সাথে পরিচয় হয় আবার তারা কোথায় হারিয়ে যায়। সম্পর্ক ধরে রাখতে পারেনা কি জানি কেন হারিয়ে যায় এভাবেই কত সম্পর্ক। তবুও একটু ভালোবাসার জন‍্য আকড়ে ধরে সুদীপ জানে,অবাকও হয় তবুও কিছু বলেনা। হয়ত বোঝে শর্মির এই জায়গাটা।

          প্রথমে খুব খারাপ লাগলেও দিদি জামাইবাবু মেনে নিলেন ওদের হোটেলে থাকাটা।
                     একটার পর একটা স্টেশনে পেরিয়ে পৌঁছনো এক নতুন শহরে মনে উত্তেজনা কিছুটা ভালোলাগাও। হোটেলে গিয়ে একটু বিশ্রামের পরই জামাইবাবু এসে নিয়ে গেলেন গাড়িতে করে উনাদের বাড়িতে।
             প্রথমেই থালাভর্তি মিষ্টি আর পায়েশ তার সাথে পিঠের জোগাড় আর মনের ভালোবাসা উজাড় করে দেওয়া আতিথেয়তা। দিদি,জামাইবাবু ওদের একমাত্র মেয়ে একদম আপন করে নিয়েছিলো ওদের।
          সুদীপেরও ওদের আন্তরিক ব‍্যবহারে একটু একটু করে দূর হচ্ছে জড়তা। শর্মি বলে," আমার দিদি জামাইবাবু কেমন? ভালো না?"
                    হাসে সুদীপ,"ইশ্ আমাকে লজ্জায় ফেলে দিচ্ছো"।তারপর ওদের সাথেই একটু সান্ধভ্রমণে বেরোনো। মন ভরে যাওয়া কিছু অনুভূতি।
                 সুদীপ তাড়া দেয়," দাদা এবার আসি,আমাদের হোটেলে ফিরতে হবে তো।"
             জামাইবাবু দিদি বলেন," নিশ্চয় ফিরতে হবে তবে একদম রাতের খাবার খেয়ে। একেই আমরা খুব রাগ করেছি আমাদের বাড়িতে না ওঠাতে।"
               রাতে খাবার টেবিলে বসে সুদীপের আর শর্মির থালার চারদিকে বাটির মেলা দেখে শর্মির মনে হলো হঠাৎই মায়ের আদরের কথা। কতদিন কেউ এমন সাজিয়ে খেতে দেয়নি।
           বলে ফেলে," উরিবাবা,মাছ,মাংস,পনীর এত রকম তরকারি,দই মিষ্টি। এতো একদম জামাইষষ্ঠীর খাওয়া।"
         দিদি বলে," আজ তো জামাইষষ্ঠীই তাই আমারও ইচ্ছে করলো একটু বোনের জামাইকে সাজিয়ে খেতে দিই।"
               সুদীপ মাথা চুলকে বলে," কবে শর্মির সাথে মজা করেছি অথচ একদম ভুলে গেছি আজ জামাইষষ্ঠী।"
         মুখে হাসির সাথে সাথে চোখটা ভিজে যায় শর্মির। অপরিচিত দুই মন আজ ফেসবুকের বন্ধনে আবদ্ধ আত্মীয়তার সূত্রে।দিদিরও মা বাবা নেই,শর্মিরও নেই তবুও আজ এক এমন দিনে একসাথে হওয়া যা হয়ত মনের মণিকোঠায় রয়ে যাবে সারাজীবন। দুটো দিন যে ঘোরাঘুরি করে আর অঢেল খুশিতে কোথা দিয়ে কেটে গেছিলো বুঝতেই পারেনি ওরা।আর তার সাথে দিদির হাতের সব জিভে জল আনা রান্না। সুদীপের আর শর্মির সাথে সাথে ওদের মেয়েরও হাত ভরেছিলো দিদির দেওয়া উপহারে। ফেরার সময় চোখভরা জল নিয়ে হাত নেড়েছিলো শর্মি,বড় তাড়াতাড়ি চোখ ভিজে যায়।আসলে এতো আনন্দ অনেকদিন পায়নি তাই হয়তো।
                            কাল জামাইষষ্ঠী, দেখতে দেখতে এক বছর হয়ে গেলো।দিনগুলো কোথা দিয়ে চলে গেছে তবে এই লকডাউনেও ঘরের বন্ধ দোরের ভেতর চোখ বন্ধ করেই দেখতে পায় গতবছর কাটানো সেই দুটো দিন।

         
            
                      
     

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...