Skip to main content

লিভিং টুগেদার (1)

#লিভিং_টুগেদার#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

মুনিয়া চুলটা মুছতে গিয়ে দেখলো টাওয়েল না নিয়েই ঢুকে পড়েছে বাথরুমে।গলা উঁচু করে ডাকে.." রাণা প্লিজ গিভ মি টাওয়াল,রাণা।"
             সেভিং ফোম গালে লাগানো অবস্থায় রাণা তোয়ালে হাতে বাথরুমের দরজা নক করে। মুনিয়ার ভেজা হাতটা গায়ে লাগতেই চোখটা চলে যায় ওর মোমসাদা নরম হাতটার দিকে। ইচ্ছে করে ছুঁতে হাতটা।কিন্তু না মুনিয়ার কন্ডিশন মনে পড়ে যায়। তোয়ালে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
     " ডোন্ট বি নটি রাণা,আমার অলরেডি কিন্তু লেট হয়ে যাচ্ছে। শিগগিরি তোয়ালেটা দে।"
            তোয়ালেটা নিয়েই দুম করে বাথরুমের দরজাটা বন্ধ করে দেয় মুনিয়া।
                       কথা আছে সকালের ব্রেকফাস্ট বানাবে রাণা কারণ মুনিয়াকে রাতে অফিসের কাজ করতে হয়,আর ও একদম সকালে উঠতে পারেনা।দুপুরের লাঞ্চ অফিসেই করে দুজনে আর রাতের ডিনার মুনিয়া বানাবে তবে তাতে যদি হেল্প লাগে তাহলে রাণা একটু একটু করে দেবে।
        মুনিয়ার হাসি পায় সত‍্যিই ভালো ছেলেটা ওর সব আব্দার মেনে নিয়েছে।

                         প্রথম যখন ব‍্যাঙ্গালোরে এসেছিলো জব নিয়ে তখন অত কম স‍্যালারিতে সত‍্যিই চালানো খুব মুশকিল হয়েছিলো সবটা। আ্যপার্টমেন্টের ভাড়া,খাওয়া খরচ তারপর নিজেদের হাতখরচ। কাউকেই পার্টনার হিসেবে পাচ্ছিলোনা মুনিয়া। অবশেষে পেয়েছিলো একজনকে প্রথমে।
         এদিকে মায়ের সব সময় ফোন আসছে.." বাইরে থাকতে হবেনা,চলে আয় এখানে। চাকরি পেলে করবি নাহলে করতে হবেনা।"
                   আর তার সাথে ঘ‍্যানঘ‍্যান করতো প্রমোদ ওর বয়ফ্রেন্ড..ও ননবেঙ্গলী।কলেজেই রিলেশন হয়েছিলো তবে কেউ বিয়ে করতে চায়না এখন। দুজনেই চায় ক‍্যারিয়ার গড়তে।

          তবে মুনিয়ার মাঝে মাঝে মনে হয় সত‍্যিই প্রমোদের সঙ্গে ওর বিয়েটা কোনদিন হবে কিনা কে জানে? আজকাল যেন মনে হয় কোথায় যেন ভাঁটার টান ওদের সম্পর্কে। হয়ত চোখের বাইরে চলে গেলে প্রেমের বাঁধনও আলগা হয়ে যায়।

       তবুও তো প্রমোদ জানেনা ও রাণার সাথে এই ওয়ান রুম ডাইনিং ফ্ল্যাটটা শেয়ার করছে নেহাতই অস্তিত্ব সংকটে।প্রথমে ও আর জুনি ফ্ল্যাটটা নিয়েছিলো।কিছুদিন বাদেই মাথামোটা জুনিটা বিয়ে করে কেটে পড়লো। কি করবে ভাবছিলো মুনিয়া ঠিক তখনই রাণার সাথে একদিন ক‍্যান্টিনে প্রথমে দেখা তারপর আলাপ আর এখন রাণা ডাইনিংয়ে আর ও বেডরুমে। রাণা ক্ষতিকর প্রাণী নয় এটা বোঝার পর মাঝে মাঝে অবশ‍্য বলে.." বোসনা এখানে,একটু না হয় শুয়ে পড় টায়ার্ড লাগলে।
           বসতে পারলে শুতে চায় কথাটা শুনেছে রাণা তাই বলে.." না না আমি চেয়ারেই ঠিক আছি।
            একসাথে থাকার শুরুতেই কতগুলো শর্ত দিয়েছিলো মুনিয়া কাজকর্ম আর ডুজ আ্যন্ড ডোন্টজের গত একবছরে তা কোনদিনই ভাঙেনি রাণা। আর আজকাল তো রাণাকে বোধহয় আলাদা করে ছেলে হিসেবে ভাবেইনা মুনিয়া।শুধু মায়ের সাথে বা প্রমোদের সাথে ভিডিও কলে রাণাকে অমিট করে দেয় একদম।মানে সম্পূর্ণ একা থাকে ফ্ল্যাটে এমন ভাবসাব করে।
         মুনিয়া যখন মাকে ওর কত কাজ আর পারছেনা ইত‍্যাদি বলতে থাকে তখন কানে হেডফোন লাগিয়ে ওর ফ্ল্যাটমেট রাণা হয়তো চিকেন রাঁধছে বা ম‍্যাগি বানাচ্ছে।
              অন‍্যদিকে রাণাও সেম মা যখন ফোন করে তখনি হাই তুলতে তুলতে মুখ বেজার করে বলে.." খুব চাপ মা,একা হাতে সব করা।"
        " তুই একটা বিয়ে কর এবার, মানে বান্ধবী হয়নি কিছু?"
       " মা,তুমি পারো বটে,মনে নেই আমার ব্রেকআপের পর কতদিন কেলিয়ে গেছিলাম একেবারে জীবন হেল হয়ে গিয়েছিলো তার চেয়ে ঢের ভালো সিঙ্গেল থাকা। খেয়ে দেয়ে কাজ নেই সেধে ঘাড়ে ঝামেলা নেবো!"

             ওদিক থেকে মুনিয়া বাথরুম থেকে বেরোনোর সময় কাঁচকলা দেখিয়ে চলে যায়। ইশ্ এখনি ওকে টয়লেটে যেতে হলো! বিচ্ছু একটা! কেস খাইয়ে ছাড়লো মনে হয়।
       " হ‍্যাঁ রে একটা মেয়ে যেন ছুটে চলে গেলো ঘরে।"
          " কোথায় আবার মেয়ে?
          " দেখলাম তো মনে হলো।"
         " ওহ্ তাহলে বিন্দিয়া হবে?"
      " শোন বাপু একা থাকিস ওসব কাজের মেয়েটেয়ে রেখে কাজ নেই।কখন আবার কি মুশকিল হয়।"
      আবার উঁকি মারে মুনিয়া, চোখ বড় করে রাণা।
        

        হঠাৎই একদিন রবিবার ভোরে কলিংবেল বাজছে, নিউজপেপার ভেবে পাত্তা দেয়না রাণা। আবার বাজে বেল,ওহ্ ছুটির দিনেও শান্তি নেই।ডাইনিংয়ে শুয়ে যত জ্বালা ওর যতবার বেল বাজবে ওকে উঠতে হবে দরজা খুলতে ওদিকে মহারাণী নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে দরজা দিয়ে। অসহ‍্য!
             দরজা খুলতে উঠতে উঠতে আবার দুবার বেল। অসভ‍্য পাবলিক যতসব। আরে লোকে উঠবে দরজা পর্যন্ত হেঁটে আসবে তারপর তো দরজা খুলবে নাকি? বেশ একটা বিরক্ত নিয়ে দরজা খুলতে যায় রাণা,চশমা ছাড়া ঘুম চোখে দরজা খুলে একদম বোকা বোকা হয়ে যায় রাণা.." একি তুমি!"
             " হ‍্যাঁ আমি,আকাশ থেকে পড়লি যেন। অফিসের একটা কাজে অন‍্য একজনের আসার কথা ছিলো তা সে হঠাৎই অসুস্থ হলো তাই অগত‍্যা।"
      " একটা খবর তো দেবে আগে থেকে?কালই তো ফোনে কথা হলো।"
     " সারপ্রাইজ বেটা,আমিও দিতে পারি দেখেছিস।"

    রাণাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বাবা ওর হাতে ট্রলিটা ধরিয়ে ঢুকে পড়ে ঘরে।
     কি করবে ভেবে পায়না রাণা,কেমন যেন হঠাৎই বাথরুম পাচ্ছে। বাবাকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকতে যায়। যদি একটু ম‍্যানেজ করা যায়।

      সত‍্যিই মেয়েটার কোন কান্ডজ্ঞান নেই।কতবার বলেছে যে এভাবে ওর এরিয়াতে কোন জামাকাপড় না রাখতে তবুও ঠিক হ‍্যাঙারে করে কালকের আধাভেজা জামা ঝুলিয়ে রেখেছে ঘরে।
         বাবার তো নিশ্চয় নজর যাবে।কে জানে কি হবে এবার?
      বাবা অবশ‍্য কিছু বলেনা এ ব‍্যাপারে," ওহ্ তুই ঘুমোচ্ছিলি বোধহয়। এক কাজ কর তুই ঘরে গিয়ে শুয়ে পর আমি ডাইনিংয়ে একটু গড়িয়ে নিই।তোর কাছে আজ সারা রবিবারটা কাটাবো বলে একদিন আগেই চলে এলাম।"
           কতদিন বাদে বাবাকে দেখছে কিন্তু মনে কেন যেন খুশির পালক না উড়ে দুশ্চিন্তার মেঘ জমছে।কি করে ম‍্যানেজ যে করবে বুঝতেই পারেনা।
                নাহ্ বাবাকে বলে দেবে সবটা যা হয় হবে।
            " তুমি শুয়ে পড়ো বাবা, আমি আর শোবোনা বরং আমি একটু চা করে দিই তোমাকে।"
       " আরে না না তুই একটু ঘুমো এখন। আমিও একটু ঘুমোই আসলে জার্নি করে এসেছি তো। শোন আজ কিন্তু আমিই রান্না করবো।"
             বাবার হাতের কষা মাংস,ভীষণ প্রিয় রাণার।বাবা রান্নাঘরে ঢুকলে মোটামুটি কষানো থেকেই শুরু করে দিতো ওরা খেতে।
          কিন্তু আজ কিছুতেই আনন্দ হচ্ছেনা যেন।
              বাবাকে শুয়ে পড়তে দেখে কিছু বলতে পারেনা। পায়চারি করতে থাকে,তারপর একটা চেয়ারে বসে পড়ে।
"কি রে যা শুতে। বসলি কেন আবার?"
 ও বুঝতে পারে ও এখান থেকে না গেলে বাবা ঘুমোতে পারবেনা খুব বলতে ইচ্ছে করলো,তোমার পাশেই শুয়ে যাই আমি..কিন্তু ডিভানটা খুবই ছোট আরেকজন শোয়ার উপায় নেই কোনো।
      তাই ভেজানো দরজা ঠেলে আস্তে আস্তে ঘরে ঢোকে,ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই। এ একদম ফাঁদে পড়েছে আটকে। কি জানি হঠাৎই যদি মেয়েটা চোখ খুলে ওকে দেখে কি করবে কে জানে?
এসি চালিয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছে মুনিয়া। এলোমেলো চুলগুলো মুখের চারদিকে ছড়ানো। একটু হারিয়ে যায় রাণা,পরিস্থিতির চাপে হঠাৎই ঢুকে পড়তে হয়েছে ঘরে। কি করবে ভেবে পায়না,বাধ‍্য হয়ে বিনব‍্যাগটার ওপর শরীরটা এলিয়ে দেয় মাথায় তখন অনেক চিন্তা কি করবে ভেবে পায়না। মুনিয়াকে ডাকবে,ডেকেই বা কি হবে। হয়ত উঠবেই না তারপর যদিও ওঠে তো চিৎকার শুরু করবে কেন অসময়ে ঘুম ভাঙানো হলো।
     রবিবার চা ব্রেকফাস্ট বানিয়ে ফেলে রাখে,আগে ডাকতো ডাকলেই মাথা গরম তারপর ওঠেও না। তার থেকে থাক ফ্লাক্সে। ঐভাবেই রেখে দেয় রাণা।
              চাকরিটা একটু শক্তপোক্ত হলেই এই ফ্ল্যাটটা ছাড়বে নিজের মত স্বাধীন ভাবে থাকবে। এত চুক্তি আর শর্তে থাকা যায়না। উনি ছোট প‍্যান্ট পরে ঘুরে বেড়াবেন তাকানো যাবেনা, উনি স্কার্ট তুলে শোবেন ইচ্ছেমতো নিজের বাড়ি ভেবে।লজ্জায় দরজা বন্ধ করে ঘোমটা টেনে ডাইনিংয়ে বসে থাকতে হবে। ইচ্ছে হলে ডিনার বানাবে না হলে বানাবেনা ল‍্যাদ লাগছে বলে শুয়ে যাবে। তারপর খাওয়ার আনিয়ে বা বানিয়ে তাকে ডেকে খাওয়াতে হবে। একদম অসহ‍্য ব‍্যাপার স‍্যাপার। মনীশ মানে ওর বন্ধুকে বলেছিলো একদিন। ও শুনে বললো.." ধুর নিজে অর্ডার দিয়ে খেয়ে শুয়ে যাবি। ও কে রে! যে খাবার বানিয়ে ডেকে খাওয়াতে হবে?"
             যতই যে বলুক তবুও পারেনা রাণা তখনই ওর আহ্লাদী বিশ্ব বখাটে বোনটার কথা মনে পড়ে যায়। আসলে মেয়েগুলো এমনি হয় বাবাদের আহ্লাদ পেয়ে মাথায় ওঠে যেমন ওর বোন ডল। নামটাও যেমন কাজেও তেমন। আর বাবাও যেন ওকেই বেশি ভালোবাসে,তবে মা,ঠাম্মু,দাদু,কাকান সবাই তো ওকে ভালোবাসে।
               কৃষ্ণনগরে একদম ঘোরানো বারান্দা দেওয়া বড় বাড়ি ওদের। বাড়িতে গেলে একদম জমজমাট ব‍্যাপার। বাড়ির পেছনেই খিড়কি দিয়ে গেলেই ওদের ক্ষীর পুকুর।চারধারে কত বড় বড় গাছ।হাওয়া উঠলে পুকুর পাড়ে বসলে মন জুড়িয়ে যায়। ওখানে লুকিয়ে সিগারেট খেতে গিয়ে কতবার ধরা পড়েছে ডলের কাছে।
  " দাদা তুই ধোয়া ছাড়িস! মাকে বলে দেবো কিন্তু। ধূমপান ক‍্যান্সারের কারণ।"
      " গাট্টা খাবি একদম।আচ্ছা তোকে এতো বড় চকলেট দেবো।"
              বাড়ি,বাবা মা বোন আত্মীয়স্বজনের থেকে আলাদা হয়ে কত দূরে এখানে থাকতে হয়েছে ঐ হিটলার মেয়েটার সাথে। সে নাহয় হলো কিন্তু আজ কি হবে?
                মুনিয়ার দিকে আবার তাকায় রাণা ও তখন পাশ ফিরে শুয়েছে।ডাইনিংয়ে উঁকি দেয় বাবার হাল্কা নাকডাকা চলছে। সবাই আরামে ঘুমোচ্ছে শুধু ওরই চোখে ঘুম নেই। নাহ্ এবার মুনিয়াকে ডাকতেই হবে। ও চেঁচালে চ‍্যাঁচাক মুখ চেপে ধরতে হলে ধরবে।
          " মুনিয়া, ওঠ প্লিজ ওঠ। একবার তাকা একটা প্রবলেম হয়েছে।"

   " ওঃ মা! শুরু হলো তো তোমার।আমি এখন চোখ খুলতে পারছিনা। তুমি যাও প্লিজ।"
     হায় ভগবান এ কোন লেডি কুম্ভকর্ণ একেবারে ওকে মা বানিয়ে দিলো! নাহ্ ধাক্কা দিতে হবে।
      ধাক্কা দিতেই চোখ খুলেই বিষম চেঁচিয়ে ওঠে মুনিয়া.." এই এই ডোন্ট টাচ্।এই ঘরে এখন কেন এসেছিস? কি হয়েছে কি।"
            ওর মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে রাণা.." চুপ বাবা শুনতে পাবে।"
      আবার চেঁচিয়ে ওঠে মুনিয়া," হোয়াট! কার বাবা?"
       " অবভিয়াসলি আমার।"
     " যাক তবুও ভালো আমার বাবা আসেনি।তোর বাবা এসেছে আমি কি করবো? তুই ম‍্যানেজ কর।"
      বলে আবার ধপাশ করে শুয়ে পড়লো মেয়েটা।

          বাইরে বাবার কাশির আওয়াজ পায় রাণা ওদের কথাবার্তায় বোধহয় বাবা উঠে বসেছে।
        ও বাইরে বেড়িয়ে আসে।
  বাবা হাই তুলছে বসে.." ও বেশ একটু মিনি স্লিপ দিয়ে উঠলাম বেশ ঝরঝরে লাগছে এখন। শোন একটু চা বানা এবার তারপর চল যাই মার্কেটে। ওহ্ শোন এদিকে ট্রলিটা খোল তো।"
                      ট্রলি খুলেই নিমকি,নাড়ু,ভুজিয়া,কুকিজ,বাদাম তক্তি,সরভাজা,সরপুরিয়া,ক্ষীর দেখে মনটা খুশ হয়ে গেলেও কিছু বলেনা রাণা। আজ যেন মুখে সবই তেতো লাগছে। একটুও আনন্দ হচ্ছেনা।
      " কি রে একটা একটা করে বের কর সব। ঐ ঘরে রেখে দে কিছুটা কৌটো কৌটো করে, আর কিছুটা কিচেনে রাখ। টুকটাক সময় পেলেই খাবি,ফেলে রাখিসনা।আর আমার সামনে বসে মিষ্টি আর নাড়ু খা আমি দেখি। তোর মা আবার চিড়েও দিয়ে দিয়েছে তুই ক্ষীর দিয়ে খেতে ভালোবাসিস তাই। চল আমি সব গুছিয়ে রাখি তোর সাথে সাথে। তোর মা বলেছে নতুন বাড়ি নিয়েছে একটু দেখো কি লাগবে না লাগবে।"

                তোর মা এই বলেছে আর ঐ বলেছে।আর বোধহয় সামলানো গেলোনা বাবাকে। এদিকে বাবা তখন পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢোকার মুখে।
********

উঃ কি যে হবে এবার! বাধ‍্য হয়ে মুখ খোলে রাণা।
     " বাবা,ঐ ঘরে এখন যেয়োনা। আসলে তোমাদের বলা হয়নি।আমি একটা বন্ধুর সাথে ফ্ল্যাট শেয়ার করছি। আসলে এখন তো খুব একটা বেশি পাইনা হাতে।তাই অগত‍্যা শেয়ার করতে হলো।"

              " ওহ্! তো ভালোই করেছিস।
একা একা থাকলে আমাদেরও চিন্তা হয়।
সাথে কেউ থাকলে নিশ্চিন্ত যা দিনকাল পড়েছে। অসুস্থ হলেও তো কেউ থাকবে পাশে।
তা বলিসনি কেন আগে?
তাহলে খাবার দাবার একটু বেশি আনতাম। অবশ‍্য তোর মা সব বেশি করেই দিয়েছে।"

          বাবা নিজের মনে বকবক করে চলেছে। এই হচ্ছে ওদের বাড়ির লোকেদের একটা দোষ,অসম্ভব বকতে পারে সবাই। একবার শুরু করলে আর থামেনা, রাণাকেই বরং ওরা বলে রামগড়ুরের ছানা। ওর নাকি কথা,আর হাসি দুই ভীষণ দামি তাই খরচ করেনা লকারে রাখে।

            " তা ডাক ওকে,আলাপ করি একটু। তুই তো মোটেই তেমন মন খুলে কথাই বলিসনা।একসাথে চা টা খাওয়া যাবে।"

          " বাবা,আসলে ও ঘুমোচ্ছে।সকালে উঠতে পারেনা। ও আসলে অনেক রাত জাগে তো.."

               বাবা আর কিছু না শুনে বলেন.." থাক থাক।উঠুক ধীরে সুস্থে তারপরই কথা হবে বরং চল আমরা বাজারে যাই। বাজারটা করে নিয়ে আসি।"
              " বাবা শোনোনা একটা কথা..."

                 কথাটা বলতে বলতেই মুখটা আটকে যায় রাণার আর কিছু বলতে পারেনা।

স্লিপিং স‍্যুট পরে ঘর থেকে কখন বাইরে এসেছে মুনিয়া ও খেয়ালই করেনি।
               ততক্ষণে বাবার পায়ে একটা ঢিপ করে প্রণাম ঠুকেছে এসে। "হাই আঙ্কেল আমি মুনিয়া, ভালো নাম মৌবনী কলকাতাতে বাড়ি এখানে চাকরি করতেই আসা। আমি আর রাণা এই ফ্ল্যাটটা শেয়ার করি।"

                  বাবাকে যতটা সরল আর বোকা মনে করে রাণা ততটা নয় দেখলো। বাবা তো খুবই স্মার্ট যা দেখছে। একটুও যেন অবাক হয়নি মানে যেটা হওয়াই স্বাভাবিক ছিলো। এ আর এমন কি, এমন একটা মুখ করে একগাল হাসি নিয়ে বলে...
" থাক থাক মা,রাণার মা তাহলে ঠিকই দেখেছিলো।
আমাকে বললো একটা সুন্দর মত মেয়েকে দেখলাম ঘুরতে ফ্ল্যাটে।
বাহ্ খুব ভালো,খুব ভালো।
তাতে কি হয়েছে,আজকাল ছেলে মেয়েরা বড় হলে অনেকেই এমন একসাথে থাকছে।
আসলে যুগ তো পাল্টাচ্ছে।"

           কি অবস্থা!ওহ্ বাবা তাহলে গোয়েন্দা হয়েই এসেছে এবার।মানে চাক্ষুষ তদন্ত করতেই সারপ্রাইজ ভিজিট দিলো।

          ততক্ষণে মুনিয়া ওর ঝুলি খুলে বসেছে.." উরিব্বাস,সরভাজা,সরপুরিয়া ফ্রম কৃষ্ণনগর! কতদিন খাইনি। একবার বাসে করে বহরমপুর যাবার পথে খেয়েছিলাম।মুখে লেগে আছে সেই স্বাদ।"
            বাবা বলতে থাকে.." আরে খাও যত খুশি,তোমার কাকিমা সব বেশি করে দিয়েছে। তুমি রাণার বন্ধু,এরপর তো কত যাবে আমাদের বাড়িতে। তখন তোমাকে খাওয়াবো কৃষ্ণনগরের সব দারুণ দারুণ মিঠাই।"
                  বেশ তো ম‍্যানেজ মাস্টার মুনিয়া,কি সুন্দর জমিয়ে বসেছে আর বাবা ওকে পেয়ে ছেলেকে পাত্তাও দিচ্ছেনা। কৃষ্ণনগরে কত যাবে মানেটা কি? ও কেন যাবে ওদের বাড়ি? ওখানে ওর কি দরকার? এই এক দোষ ওদের বাড়ির লোকেদের লোককে একদম আপন ভেবে তার কাছে হাড়ি খুলে বসে।

    একটু বিরক্ত হয়ে বলে.." বাবা চলো এসে গল্প করবে।বাজারটা করে নিয়ে আসি দেরি হয়ে যাচ্ছে। এরপর রান্না করা আছে আবার।"

               " হ‍্যাঁ আঙ্কেল,ঘুরে এসো তোমরা তাড়াতাড়ি আজকে আমিই বানাবো লাঞ্চ।"
         বাবা এতো ভূতের মুখে রাম নাম দেখছে,বাবাকে দেখে একদম ভোল পাল্টে ফেলেছে।
        ওর কথা শুনে গলে যায় বাবা একদম...
           " বাহ্ খুব ভালো তাহলে তো দারুণ হবে।অবশ‍্য আমি হেল্প করবো তোমাকে।আমি তো ভেবেছিলাম আমিই আজ মাংসটা করবো।"

      কত কাজের একেবারে, রান্না করবেন উনি?
মনে মনে বলে রাণা।
                বাবা রান্না করবে শুনেই সঙ্গে সঙ্গে ক‍্যাচটা লুফে উত্তর দিলো মুনিয়া...

" তাহলে তো দারুণ হবে আঙ্কেল,সত‍্যি কথা বলতে নিজের রান্না খেয়ে খেয়ে মুখে অরুচি এসে গেছে। কবে যে বাড়ি যাবো? যাক তবুও আজ একটু ভালো করে খাবো কতদিন বাদে।"
        একদম হাত চেটে খাবে আজকে।"

            রাণার দিকে তাকিয়ে এবার মুচকি হাসে মুনিয়া ভাবখানা এমন যেন কেমন ম‍্যানেজ করে ফেলেছি তোর বাবাকে দ‍্যাখ। তুই তো তখন থেকে ইয়ে ইয়ে করছিলি সমানে।
            বাবাকে নিয়ে বাইরে বেরোয় রাণা মনে মনে গালাগালি করতে করতে কুড়ের হদ্দ,আর্ধেক দিন রান্না করেনা সেখানে একেবারে রান্না করবে বলে গলে পড়ছে। মেয়েগুলো এমনি হয় মিচকে পাজি। একবার তো শিক্ষা হয়েছে প্রেম করে,শেষে এমন ধোকা খেলো যে বিছানা নেবার অবস্থা।
        বাইরে এসেই বাবা একটা ধমক দিলো..

   " আচ্ছা মেয়েটা কত ভালো।
তোর ভালো বন্ধু নিশ্চয় নাহলে তোর সাথে মানিয়ে গুছিয়ে আছে।
  তা বাড়িতে বলতে কি ছিলো?
আজকাল তো এমন কত ছেলেমেয়ে থাকছে একসাথে।
ও সব কোন ব‍্যাপার না।"

           " একসাথে থাকা আবার কি?
ফ্ল্যাট ভাড়া বেশি তাই আছি কদিন এখানে। একটা ভালো কিছু পেলে চলে যাবো।"

            " তা তুই অতক্ষণ ওর ঘরে ঢুকে বসেছিলি কেন?
আমার ভয়ে বুঝি?
আমাকেই বলতেই পারতিস আগে সবটা।
হ‍্যাঁ ফ্ল্যাটটা একটু ছোট,তা বড় ফ্ল্যাট দেখতে পারিস দুজনে থাকবি বেশ গুছিয়ে।"

      " বাবা,বড় ফ্ল্যাট কেন ছোট ফ্ল্যাটই নেবো আর আমি সেখানে একদম একা থাকবো।"
       " সেকি! এই বিদেশে মেয়েটাকে একা ফেলে যাবি?"
        "বাবা,এখনকার মেয়েরা সবাই স্বয়ংসম্পূর্ণ,স্মার্ট, ওয়ার্কিং কেউ একা নয়।"

         " থাক থাক এখনই আলাদা থাকার দরকার নেই।
পরে ভাবা যাবে।
এমনকিছুতে মেয়েটা তো ভালো,হাসিখুশি সুন্দর, মিশুকে।" বলে বাবা পা চালায়।
              
বাবা বাজারে গেলেই আর কোন চেতনা থাকেনা এই নিয়ে মায়ের সাথেও ঝামেলা হয়।
          অনেক বুঝিয়ে বলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করলো বাবাকে। তবুও বেশ বড়সড় একটা ঝোলা নিয়ে ফিরলো দুজনে।
                    ততক্ষণে ঘর দোর খাবার টেবিল বেশ পরিস্কার। রান্নাঘরও বেশ একটু গুছোনো। ঘর থেকে মিস্টি রুম ফ্রেশনারের গন্ধ। অবাক হয় রাণা আজ যেন সেতার সুরে বাজছে। বেলা দুটো আড়াইটাতে যে মুনিয়া হাই তুলতে তুলতে স্নান করতে যায় তার আজ স্নান হয়ে গেছে। সুন্দর একটা সাদা টপ আর নীল র‍্যাপার পরেছে মুনিয়া। আজ আর ছোট প‍্যান্ট,গেঞ্জি পরেনি।
             
                রাণা ডাইনিংয়ে বসে আজ পেপারে চোখ বোলাচ্ছে কিন্তু কানটা কিচেনে।বাবা মোটামুটি নো এন্ট্রি করে দিয়েছে ওকে।
    " আজ আমি আর মুনিয়া সব করে নেবো তুই বিশ্রাম কর।"
                    এর মধ‍্যেই মায়ের সাথে ফোন হয়ে গেলো। মা কথা বললো তার সাথে ফোড়ন কাটলো ডলও.." দাদা,কি সব শুনছি! লিভ ইনে আছিস মনে হচ্ছে।"
        সামনে পেলে একটা রামগাট্টা দিতো পাজিটাকে। দূরে বলে বেঁচে গেলো.." খুব পাকা হয়েছিস একদম ফালতু কথা ছাড়।"

         দুদিন বাবা আসাতে বেশ অন‍্যরকম লাগলো প্রথমে যে ভয়টা ছিলো তা ধীরে ধীরে চলে গেছে তাই বাবাকে নিয়ে এখানকার দেখার জায়গাগুলো ঘুরলো রাণা।সাথে অবশ‍্য মুনিয়াকে নিতেই হয়েছে বাবার জ্বালাতনে। উনি অবশ‍্য দয়া করে ওনার শোয়ার ঘরটা ছেড়ে দিয়েছেন ওদের জন‍্য কারণ ওর বেডটাতে দুজন শোয়া যায়। তা না হলে রাণাকে মেঝেতে বিছানা পেতেই শুতে হত।
            বাবা যাওয়ার আগে আবার একগাদা খাবার কিনে দিয়ে গেলো এবং বারবার মুনিয়াকে রিকোয়েস্ট করলো দুর্গাপুজোতে যেন অবশ‍্যই ওদের বাড়িতে আসে।
                      " আমাদের বাড়িতে দুর্গাপুজো হয় এসো মা বাবাকে নিয়ে দেখবে খুব ভালো লাগবে।
আমরা সবাই খুব খুশি হবো।"
           মাথা নাড়ে মুনিয়া.." মিস্ করবো আঙ্কেল তোমার রান্না।আবার চলে এসো আন্টি আর ডলকে এনো এরপর।"

          "কিছু নেকু মেয়ে একটা!
      এমন করে বলছে যেন কত জায়গা এখানে। আর ওনার যেন থ্রী বেডরুম ফ্ল্যাট এটা।"

*****************
           আজকাল বাড়ি থেকে ফোন এলেই সবাই মুনিয়াকে খোঁজে আর ও রাণাকে একদম সাইড করে দিয়ে চুটিয়ে ভিডিও কলে বসে গল্প
করে ওর বাড়ির লোকজনের সাথে। যেন কতদিনের চেনা। যেদিন বাড়ির লোক শোনে ও নেই বাইরে গেছে বা ফেরেনি ওদের একদম মুখ ঝুলে যায়। যেন আগ্ৰহই হারিয়ে ফেললো ভিডিও কলের।
       " আচ্ছা তোমরা যদি ওর সাথেই কথা বলার জন‍্য ফোন করে থাকো তাহলে ওর ফোনেই তো করতে পারো।"
           " আচ্ছা এত হিংসুটে কেন তুই,মেয়েটা খুব মিশুকে সুন্দর তাই ভালো লাগে।"
     মনে মনে বলে রাণা আমার মত থাকতে এক ছাদের তলে তাহলে বুঝতে কি জিনিস।

  দেখতে দেখতে পুজো এগিয়ে আসছে মুনিয়ার বাড়ি থেকে ফোন এলে বেশ দরজা দিয়ে কথা বলে সেখানে রাণার এন্ট্রী নেই। বাইরে থেকে শুনতে পায় ড্রেসের প্ল‍্যানিং হচ্ছে,বন্ধুদের সাথে ঠাকু্র দেখার কথা হচ্ছে।
             রাণাও বাড়ি যাবার জন‍্য একটু একটু করে রেডি হচ্ছে। ডলের বায়না ওখান থেকেই একটা ড্রেস আরো হাবিজাবি লিপস্টিক,ব‍্যাগ তার জন‍্য কিনে নিয়ে যেতে হবে।
     " এই শোন অনলাইনে অর্ডার দে আমি পে করে দেবো।"
       " না না হবেনা,তুই আনবি।নাহলে আমি মুনিয়াদি না না বৌদিকে বলে দিচ্ছি।"
      " এক চাটা মারবো এবার বোন যদি ওকে কিছু বলেছিস।"
           যতই ডলকে ধমকাক তবুও একটা মাত্র বোন তাই অগত‍্যা মুনিয়াকে সঙ্গে নিয়েই শপিং সারতে হলো। মাঝের মাঝ রাতের ডিনার করে ফিরবে ঠিক হলো।অনেক দিন বাদে বাইরে রেস্তোরাঁয় খেতে এসেছে ওরা, মুনিয়াকে আজ হোয়াইট নেটের টপ আর জিন্সে খুব সুন্দর লাগছে। তবে ওদিকে না তাকানোই রাণার ভালো।
                          মুনিয়ার পছন্দের খাবারই আজ অর্ডার দিলো রাণা,আজ অনেকটা সময় ওরই প্রয়োজনে কাটিয়েছে ওর সাথে।
             " শোন ডলকে এগুলো দেখাবিনা এখন সবটা সারপ্রাইজ থাক। একদম বাড়ি গিয়ে সুটকেস খুলে সবার হাতে হাতে জিনিসগুলো দিবি।"
           বেশ বুদ্ধি আছে তো মেয়েটার মাথায়,রাণা মনে মনে তারিফ না করে পারেনা।
         
                দেখতে দেখতে ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় এসে গেলো,ওদের যৌথ সংসারে কয়েকদিন তালা থাকবে। ওহ্ কিছুদিনের শান্তি পাওয়া যাবে।
অবশ‍্য রাণার বাড়ি থেকে বারবারই মুনিয়াকে পুজোর দিন আসতে বলা হয়েছে ওদের বাড়িতে।
      যদিও রাণার একদম ইচ্ছে নেই যে ও আসুক। সবাই একটা উৎসুক দৃষ্টি দিয়ে দেখবে ধুর যাতা ব‍্যাপার।
       " হ‍্যাঁ আন্টি খুব চেষ্টা করবো যেতে তবে মা ছাড়বে কিনা বুঝতে পারছিনা। দেখবো যদি ম‍্যানেজ করতে পারি।"
        " আচ্ছা বেশ নবমী নাহলে দশমীতেই এসো,এখানে মেলা হয় খুব মজা করি সবাই।"
        মা বাবার পাশ থেকে ডলও সমানে বলেছে। আজকাল রাণার নিজেকে কেমন যেন ফালতু মনে হয়।সবার প্রায়োরিটি লিস্টে আছে মুনিয়া।

কলকাতা পর্যন্ত একই ফ্লাইটে এসে যে যার বাড়ির পথ ধরে।
রাণাকে বলতেই হলো "চলি রে পারলে চলে আসিস পুজোতে ভালো লাগবে সবার।''
        "খুব চেষ্টা করবো দেখি কি হয়। আসি রে বাই।"

মুনিয়ার বাড়ি থেকে ফোন আসে রাণাও রওনা দেয়।
*******

বাড়িতে এসে দেখে আনন্দের হাট বসে গেছে চারিদিকে।দুগ্গাদালানে পাড়ার ছোট ছেলেমেয়েরা ভিড় করেছে।উঠোনের গাছে শিউলির সুবাস,শেষ সময়ে রঙের ছোঁয়া পড়ছে মায়ের গায়ে।কার্তিক গণেশের সাজ মোটামুটি শেষ পায়ে জুতো পরে ওরা তৈরি মামা বাড়ির পথে। একদম ওয়ার্ম ওয়েলকাম বাড়ির গেট থেকেই।এটাই খুব ভালো লাগে বাড়িতে এলেই একদম একটা ভি আই পি ভাব। সবাই কি করবে ভেবে পায়না।অনেকটা আদর,অনেক খুশি আর দেদার মজা। বাড়িতে পিসিও এসেছে পুজোর জন‍্য মা বললো মাসিও আসবে সপ্তমীতে।
                 ট্রলি খুলে সবার হাতে যার যার গিফ্ট দেয় রাণা।মা বলে," ঠাকুমাকে আর দাদুকে দিয়ে প্রণাম করে আয় আগে। তুই এতো কাজের হয়ে গেছিস ভাবতেই পারছিনা। কত কি কিনেছিস একদম গুছিয়ে সবার জন‍্য!"

       কলার তোলে রাণা," আরো অনেক কিছু শিখেছি মা।তোমাকে রান্না করে খাওয়াতেও পারি। এই নে ক্ষেপি দেখ পছন্দ হয় কিনা?"
        " মা তুমিও যেমন ও কিনেছে নাকি? ও একটা পেন কিনতে পারেনা। আমি জানি সব কিনে দিয়েছে ওর রুম পার্টনার মুনিয়াদি। তাইনা দাদা?"
            "ঐ রুম পার্টনার আবার কি রে?"
রেগে কটমট করে তাকালেও আর বেশি কিছু বলতে পারেনা কথাটা তো সত‍্যিই। ঠাকুমাকে শাড়ি আর দাদুকে ধুতি চাদর দিতেই ঠাকুমা মুচকি হাসে.." তা সে কই? তোমার বন্ধু মানে আমাদের দিদিভাই।"
         "বন্ধু আবার কি?একসাথে থাকি।"
  " মনের মিল নাহলে কি কেউ একসাথে থাকতে পারে নাকি? তা সে কবে আসবে?"
      " দেখি আসে কি না?"
  বলেই রাণা তাড়াতাড়ি পালায় কারণ এরপর নানা তামাশা করবে ঠাকুমা তার সাথে আবার ভাই বোনরা জুটলেই হয়েছে।
           সপ্তমী পুজোর ভোরে কলাবৌ স্নান করাতে বাড়ির সবার সাথে রাণাও গেলো।বাঙালির দুর্গা পুজোর গন্ধটাই যেন কেমন আনন্দমাখা।আকাশে বাতাসে ভাসে পুজোর মিঠে গন্ধের সুবাস। ওদের ক্ষীরপুকুর থেকেই জল ভরে কলাবৌকে স্নান করিয়ে মাথায় জল নিয়ে ফিরে আসা। বাড়িতে সকাল থেকে পেটপুজো শুরু।এই কয়দিন ঠাকুরেই রান্না করে। মা কাকিমাদের তাও সারাদিন অনেক কাজ থাকে তবুও রান্নাটা করতে হয়না এই যা। ডল তো লাফিয়ে বেড়াচ্ছে পিসির মেয়ের সাথে আর মাঝে মাঝে এসেই নানা বায়না।"দাদা আমাদের ঠাকুর দেখতে নিয়ে যাবি তো?"
                  দুপুরে সকালে রাতে খাবার লম্বা লিস্টি তার মধ‍্যে বাবা মা বেশ কয়েকবার বলেছে "হ‍্যাঁ রে মুনিয়ার সাথে কথা হয়েছে? আসবে বলেছে?"
      " না মা এখন পুজোর সময় সবাই বিজি আমি তাই ডিস্টার্ব করিনি।"
         " আমাকে ফোনটা দিস তো কথা বলবো।"

    " মা এলে নিজেই আসবে এখন ব‍্যস্ত সবাই,ঠাকুর দেখছে। এতো মাথা খারাপ কোরনা তো।থাকে আমার সঙ্গে আর যত মাথা ব‍্যথা তোমার।"
     " তোর সঙ্গে থাকে বলেই তো মাথা ব‍্যথা আমার।
কে থাকছে তোর সাথে তাকে একবার দেখবো না?"
  " ওহ্ মা তাহলে না আসাই ভালো।
এলেই তো তোমাদের বাড়াবাড়ি শুরু হয়ে যাবে। যত্তসব।
আর শোনো মা ও আমার পরিচিত।
আমার সাথে ওর কোন রিলেশন নেই।"
       ওর কথা শুনে মুচকি হাসে মা," ঠিক আছে তবে পরিচিতিটা নিশ্চয় বেশি তাই তো থাকতে পারছিস এক সাথে।"
" আর আমাদের বলিসনি কেন শুনি তুই একটা মেয়ে মানে সুন্দরী মেয়ের সাথে আছিস?"

" মা মিথ‍্যে কখন বলে লোকে যখন ডাল মে কুছ কালা থাকে তাইনা?" ফোড়ন কাটে ডল।

         " উঃ ভগবান! এই যে ক্ষেপি,এবার তোর জপের মালা ফোনটা আমি নিয়ে দেখবো তোর মুগডালে কয়টা কালো পাথর আছে।"
        " ও মা দেখেছো তো।"

              " মা দেখেছো তো তোমাদের এতরকম কথার জন‍্যেই আমি বলিনি কিছু।"

***********
      ফেসবুকে ছবি দেখেছে রাণা,এক এক সময় এক এক রকম সাজের ছবি।বন্ধুদের সাথে আড্ডা।পাড়ার প‍্যান্ডেলে ঘোরাঘুরি, একগাদা ছেলেমেয়ের সাথে আড্ডা দিচ্ছে ম‍্যাডক্স স্কোয়ারে।
              বন্ধুর তালিকা অনেক লম্বা,আর তাদের নিয়ে একদম মেতে রয়েছেন মহারাণী। অবশ‍্য রাণাকে উত‍্যক্ত করার লোকজনেরও অভাব নেই একেই কিছু কাজ সারতে হচ্ছে অফিসের তারপর ওর ভাইবোনেরা মাথা খাচ্ছে। অষ্টমীর দিন একটু বেড়িয়েছিলো বন্ধুদের সাথে,সবাই মোটামুটি এনগেজড এখন শুধু ও আর দুএকজন ভাঙা হৃদয়ের সিঙ্গেল। যাক অনেকদিন বাদে নিজের শহরে বন্ধুদের সাথে পুজোতে জমাটি আড্ডা।
                   সবাই বেশ সবার কথা বলছে।ওকেও জেরা করলো। " আরে বস্ কিছু তো বল,আর কতদিন একা থাকবি?"
     অবশ‍্য অনেকেই বললো একা থাকাই ভালো..প্রেম করলেই এই কোথায় গেলে? কার সঙ্গে অনলাইনে ছিলে? ফোনের বাতি জ্বলছিলো কেন শেষ রাত অবধি। যা সব শুনতে হয়না। এই ভালো আছিস। আর বিয়ে করলে তো একদম কেরোসিন জীবন।
             সুদীপ্ত নতুন বিয়ে করেছে ও তো বলেই ফেললো," আর শোন আগে কিছুদিন লিভ ইনে থাকবি বুঝবি জানবি তারপরে যা করার করবি।"
               " কেন রে তোর কি হলো আবার? এই তো সবে বিয়ে হলো।"
        " সে অনেক কথা,বলা যাবেনা।"
    লিভ ইন! লিভ টুগেদারের যা ঠ‍্যালা, মানে সাতে পাঁচে না থেকেও যা জুলুম সইতে হয় তারপর যদি একসাথে থাকতো! মানে আরো কাছাকাছি, নাহ্ মাথাটা কেমন করছে।এমনিতেই অনেক সাহস দেখিয়েছে আর কাজ নেই।
          এবার কোন রকমে চাকরিতে প্রমোশন পেলেই একা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বিন্দাস থাকবে। বাবা! বিয়ে করার আগেই বিয়ে করলে কি কি সমস‍্যা হতে পারে তার অনেকটাই বুঝে গেছে।
     ও নরম বলে কি এভাবেই মাথায় উঠে যে কেউ ছড়ি ঘোরাবে?
           দেখতে দেখতে দশমী এলো,সেদিন বাড়ির সামনে ওদের ঠাকুরের জন‍্যেই মেলা বসে বাড়ি আত্মীয় স্বজনে জমজমাট হয়।
         যাক এতদিন যখন আসেনি মেয়েটা আর আসবেনা যতই মা বাবা হায় হায় করুক। অবশ‍্য কৌতূহলী অনেকেই আছে বাড়িতে।যাক বাঁচা গেলো ফালতু ঝামেলা এড়ানো যাবে।
                        বাড়িতে বেশ আজ জমজমাট মেনু মায়ের কাছে শুনে নিয়েছে নবরত্ন পোলাও হচ্ছে,ছানার কোপ্তা,স্টাফড পট‍্যাটো, নবরত্ন কারি, ধোকার ডালনা এই সব হচ্ছে।
          সকালে রাধাবল্লভী আর আলুরদম খেয়ে পাড়ার প‍্যান্ডেলে আড্ডা দিচ্ছিলো হঠাৎই একজন বললো কে যেন একটা ওদের বাড়ি খুঁজছে।
              " খুঁজতে দে আমি যেতে পারবোনা এখন,সবে একটু বসেছি। আরে কাউকে বলনা বাড়ি দেখিয়ে দেবে।"
*********

         "আরে ঐ তো রাণা বসে আছে। রাণা...."
চেনা গলা শুনে সামনে তাকায়..এই সেরেছে
                      ততক্ষণে বেশ রোদ উঠেছে  তার মধ‍্যে সাদা চিকনের কুর্তা আর লাল ফুলকারি ওড়নাতে মুনিয়া দেবী। গরমে ফর্সা গাল লাল টুকটুকে,সাথে একজন বান্ধবী। ভাবতেই পারেনি শেষপর্যন্ত ও এই কৃষ্ণনগরেও এসে হাজির হবে। এসেই চোটপাট শুরু,"মা তো ছাড়তেই চায়না অনেক ম‍্যানেজ করে এসেছি,আঙ্কেলের কথা কি ফেলতে পারি? কিন্তু এত দূর জানলে আসতামই না তাছাড়া এটা কৃষ্ণনগর তো নয়। নামেই এটা কৃষ্ণনগর,আসলে এটা কৃষ্ণনগর থেকেও অনেক দূর ধ‍্যাড়ধেড়ে গোবিন্দপুর।"
         ওর চোটপাট শুনে এদিকে হেসে অস্থির ওর বান্ধবী। রাণা ওর মত অভদ্র ঠোঁটকাটা নয়,তাছাড়া ওরা অতিথি তাই আর বিশেষ কিছু না বলে শুধু বললো," এই জন‍্যেই বাবাকে বলেছিলাম,কলকাতার মানুষদের এখানে পোষাবে না। যাক আয় আয় ভেতরে সবাই খুব খুশি হবে।"
           " দাঁড়া তোর সাথে আলাপ করিয়ে দিই আগে..আমার স্কুলের বন্ধু পুতুল পাড়াতেই থাকে এখন চাকরি করছে।"
            হাই,হ‍্যালো পর্ব শেষে এগোয় রাণা।
                   ভেতরে ওদের নিয়ে যাওয়া মাত্র পুরোটা জমে গেলো,আসলে যৌথ পরিবারগুলো বোধহয় এমনি হয়। পুরো ঘোরানো বারান্দা জুড়ে মা, কাকিমা, মাসি, পিসি আর ভাই বোনদের ভিড় তার সাথে বাবার উচ্ছ্বাস।
" আরে এই তো মুনিয়া,আমি জানতাম তুমি আসবে। ও সাথে বন্ধুও এসেছে বাহ্ খুব ভালো। তাইতো আজ বিকেলের জন‍্য সব স্পেশাল মিষ্টির অর্ডার দিয়েছি।"

যত আদিখ্যেতা,মানে বাবা যেন পারলে পুরো মিস্টির দোকানটাই তুলে আনে আরকি।
         
         " হ‍্যাঁ আঙ্কেল ঐ জন‍্যেই তো চলে এলাম অনেক ম‍্যানেজ করে। ও আমার বন্ধু পুতুল।"

         " আর আমি ডল,তুমি পুতুল।আর তুমি তো মুনিয়াদি আমি চিনি আগে থেকেই। চলো চলো।"

                   বোনেদের সঙ্গে বাড়ির সবার সাথে
মিশে গেলো ওরা দুজন একদম মনে হলো যেন বাড়িটা ওদের রাণা বহিরাগত। মুনিয়ার এটা একটা ভালো গুণ।
যেটা রাণা পারেনা খুব একটা। আর ডল মানে ওর বোন তো এমন করছে যেন ওরই বোধহয় রুমমেট বা বন্ধু কেউ হবে।
                   " রাণা মুনিয়াকে নিয়ে ঠাম্মুর সাথে দেখা করে আয়। ঠাম্মু কিন্তু রাগ করবে। সকাল থেকে অনেকবার খোঁজ নিয়েছে।"
         বাড়ির সবার এমন একটা ভাবসাব যেন মুনিয়া ওর বৌ মানে নতুন বৌ শ্বশুরবাড়িতে এসেছে তাই সবাইকে দেখাতে হবে ওনাকে। আর ঠাম্মুকে বিশ্বাস নেই কখন কি বলে ফেলবে জানেনা তাই দরকার নেই।
                        " তুমি নিয়ে যেয়ো মা। আমি একটু আসছি বাইরে থেকে।"
                     বাইরে গিয়ে যেন একটু নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচে,এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা সিগারেট ধরায়।

                 " কারা এলো রে রাণা? দারুণ দেখতে কিন্তু।গার্লফ্রেন্ড নাকি রে?"

      " আরে না না পরিচিত অফিসের সোর্সে।"

আর কিছু না বললেও একটা হাসি ফুটে ওঠে ওদের মুখে। "
                বাড়ির দিকে ফিরতেই বোনেরা ধরে," দাদা দারুণ সুন্দর তো দেখতে মুনিয়াদিকে।
আর খুব ভালো রে সুন্দর মিশতে পারে।"

       " মিশতে পারে তো ভালো মাথায় তুলে নাচ।"

                      তখন কথাটা এমনি বলেছিলো রাণা,তবে মুনিয়ার জয় জয়াকার আরো হলো নাচে। ওর ধুনুচি নাচ দেখে সবাই একেবারে মুগ্ধ। মুগ্ধতা ছুঁয়ে গেলো রাণাকেও সাদা লাল ঢাকাই ঢেউ খেলেছে মুনিয়ার শরীরে,লাল ব্লাউজের পিঠে দুর্গার মোটিফ।এর আগে ওকে কখনো শাড়ি পরতে দেখেনি। ওর চুলগুলো স্ট্রেইট কোমর অব্দি,চুলে হাল্কা সোনালী রঙ যা ওর গায়ের রঙের সঙ্গে সুন্দর যায়। আজ মায়েদের সাথে সাথে বোনেরা,মুনিয়া আর ওর বান্ধবী সবাই শাড়ি পরেছে। বিশেষ দিনে বোধহয় শাড়িতে মেয়েদের অদ্ভুত সুন্দর লাগে।
              হাতে ধুনুচি নিয়ে নিপুণ দক্ষতায় নাচছে মুনিয়া বোনেরাও আছে সাথে। অনেকদিন অভ‍্যেস নেই রাণার তবুও বাবা জোর করে নিয়ে যায়।
   " তুই কি রে?
মেয়েটা কেমন নাচছে আর তুই ছেলে হয়ে বসে আছিস।
এখন তোরাই তো আনন্দ করবি।
আমাদের তো বয়েস হচ্ছে।"
                       নাচের তালে পা মেলায় রাণাও একটা সময় নেশা হয়ে যায় তালের ছন্দে আর সবার উৎসাহে। বুঝতে পারে বাড়ির অনেকগুলো চোখ মুগ্ধতার সাথে দেখছে ওদের।

মায়েরা ঠাকুর বরণ করছে,ঠাম্মা খুব একটা হাঁটাচলা করতে পারেনা তাই একটা চেয়ারে বসে সব দেখছে।
             সিঁদুর খেলাতে সবাই মেতে উঠেছে। আশ্চর্য হয়ে যায় রাণা এমনিতে মেয়েরা সিঁদুর পরুক না পরুক সিঁদুর গালে মেখে সেল্ফি তোলার শখ ষোলোআনা। মা,কাকিমা,মাসি আর পিসিমণিকে কি সুন্দর লাগছে। রাণার ঠাকুরদা এখনো আছেন তবে অসুস্থ,ঠাম্মুকেও সিঁদুর মাখায় মায়েরা।
          " আরে ডলু দিদিন,ঐ নতুন দিদিভাইকেও একটু সিঁদুর দে দেখি।
ওর মুখটা তো একদম পরিস্কার।
তোরাই শুধু সিঁদুর গালে মাখছিস আর ফটো তুলছিস।
আর কি সব এবার যাবে এক এক করে শ্বশুরবাড়িতে।"

         " তোমার কি আর কোন কথা নেই ঠাম্মু বিয়ে ছাড়া?
আগে দাদার হোক তারপর আমাদের।"

       মুনিয়া তখন মা দুর্গার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছিলো পেছন থেকে ডল গিয়ে ওর গালে আর কপালে সিঁদুর মাখিয়ে দেয়।
  " এই রে,আমি আবার কেন? এতো মায়েরা করে। ইশ্ আমার মুখটা গেলো।"
  একটু থমকে যায় ডল, তারপর বলে.." সে যাকগে আমাদের বাড়ির পুজোতে আমরা সবাই গালে সিঁদুর মাখি তাই তুমিও মাখবে আর এটাকেও দেবো এবার।"
          বলেই দাদার কপালে একটা সিঁদুরের লম্বা টিপ পরিয়ে দেয় ডল। ডলের দুপাশে মুনিয়া আর রাণা একদম কাছাকাছি আজ এভাবেই অনেকগুলো ছবি ফ্রেমবন্দী হয়ে গেলো। হঠাৎই ডল তাড়াতাড়ি মাঝখান থেকে সরে গিয়ে ওদের দু তিনটে ছবি তুলে দিলো।
            আজ মুনিয়ার সাদা লাল ঢাকাইয়ের সাথে রাণার সাদা চিকনের পাঞ্জাবি একদম ম‍্যাচ করে গেছে। অষ্টমীর আর দশমীর দিন ওরা সবাই বাড়িতে ধুতি পরে আর মেয়েরা শাড়ি।
                   তবে রাণার মুখটা একটু গম্ভীর টেনশনে বাড়ির লোকেরা খুব বাড়াবাড়ি করছে।ওরা কি চায় কে জানে। এটা ঠিক রাণার ব্রেকআপের পর মায়েরও খারাপ লেগেছিলো ওর মনের অবস্থা দেখে।তবে প্রেম আর সম্পর্ক কি চাইলেই করে নেওয়া যায়? এতটা ঠিক নয়,মুনিয়াকেও কেমন যেন একটু গম্ভীর লাগলো। যদিও হেসেই ছবি তুললো। ছবি তোলার পর একপাশে দাঁড়িয়ে বন্ধুর সাথে কথা বলছে তারপর একটা ফোন আসাতে আড়ালে চলে গেলো। বাড়িতে তখন ভাসানের আয়োজন হচ্ছে। ঢাকের আওয়াজের মধ‍্যেই ঠাম্মু ডাকে রাণাকে.." দাদু ভাসানের পর আমার ঘরে আসিস তোর দাদানের কাছে আসবি তো?"
        " আসবো ঠাম্মা,দাদানকে প্রণাম করতে আসবো।"
           " তোর বন্ধুকেও নিয়ে আসিস।"

      ভাসানের পর হৈ হৈ করে ফেরা,বাবা কাকাদের এখনো বিশাল এনার্জি।মায়ের চোখটা একটু টলটলে জলে তখনো।দুর্গামন্ডপ বড় ফাঁকা তখন শুধু মন্ডপে জ্বলছে একটা প্রদীপ। বিষণ্ণতার মধ‍্যে খুশির ছোঁয়া আনে বিজয়ার মিষ্টিমুখ আর কোলাকুলি। সবাই তখন মেতেছে ভালোবাসার বিনিময়ে রাণাও প্রণাম করে বড়দের। মুনিয়া এখন আবার হাসিখুশি, মনে হচ্ছে যেন রাণাকে চেনেইনা বোনদের সাথে ও হ‍্যাপি বিজয়া বলে দুএকটা প্রণাম সেরে ফেললো। মা ওকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলো। সত‍্যিই বাড়ির লোকগুলো খুব বাড়াবাড়ি শুরু করেছে।বোনকে দেখতে পেয়ে রাণা অভিযোগ করে। উত্তর পায় রাণা হিংসুটে।

                ঠাম্মার ঘরে যাবার রিমাইন্ডার আবার মা দেয়.." এই তোরা সবাই আগে ঠাম্মুর ঘরে চল আমার সাথে। দাদান দুপুরে ঘুমোচ্ছিলো তাই মুনিয়াও চলো। তোমাকে যেতে বলেছেন বাবা,বলছিলেন আলাপই হলোনা।"
          " হ‍্যাঁ আন্টি আমি শুনেছি দাদু অসুস্থ, নিশ্চয় যাবো।"
                        সুতরাং লেফট রাইট এন্ড স্ট্রেইট টু ঠাম্মুস ঘর একদম ঘোরানো বারান্দা পেরিয়ে শেষ মাথায়। রাণা জানে ঠাম্মুর নিয়ম একসাথে দুজনের বেশি নয় কারণ দাদানের শরীর খারাপ,ঘরে বেশি লোক গেলে দাদানের অসুবিধা হতে পারে।
           যাক বাবা আগে হেংলু গুলো কারণ ঠাম্মু দু হাড়ি মিষ্টি আর খাম নিয়ে বসে থাকবে। ওদের বাড়ির এটাই নিয়ম বাবা কাকা পিসি সবাই এই দিনটাতে দাদান ঠাম্মুর কাছ থেকে টাকা পায়,ওটা নাকি আশীর্বাদ।এমনকি বাড়ির কাজের লোকেরাও বাদ যায়না। একটা সময় দাদান ছোট্ট বটুয়া করে মোহরের মত ঝকঝকে কয়েন দিতো।ওটাতেই ওদের মুখগুলো খুশিতে ভরে উঠতো।ছোটবেলাটা সত‍্যিই যেন একটা খুশির ঝাঁপি।
             আহা আহা খাম পেয়ে আর মিষ্টি,নাড়ু খেয়ে সব একেবারে খুশিতে ডগমগ হয়ে আছে।
           ঠাম্মুর অর্ডার ছোট থেকে বড় তাই রাণার পালা শেষে ও জানে কিন্তু মা মুনিয়াকেও আটকে রেখেছে। যাক অবশেষে চান্স এলো,বোনেরা ততক্ষণে বিদায় নিয়েছে ওদের সাথে পুতুলকেও নিয়ে গেলো ওরা। তবে মা এবার ঘরে দুজনের প্রবেশের নিয়ম ভেঙে ওদের সাথেই ঢুকলো ঘরে।

                 " এসো দিদি তোমাদের দাদান তো বাইরের লোক খুব একটা দেখতে পায়না তাই খুব ইচ্ছে তোমাকে দেখার।
এই যে গো নতুন দিদিভাই  রাণার বন্ধু।"

                   দাদুকে প্রণাম করে মুনিয়া, নতুন দিদিভাই নামটা বেশ লাগে ওর। ঠাম্মু রাণাকে পাত্তা না দিয়েই ওকে নিজের হাতে মিষ্টি খাইয়ে দেয়।
       নে বাবা আদর খেয়ে নে যত খুশি ফ্রীতে। মনে মনে বলে রাণা। কিন্তু ঠাম্মু যে এটা করবে ভাবিনি ও।

            একটা ছোট লাল ভেলভেটের ব‍্যাগ তুলে দেয় মুনিয়ার হাতে। অবাক হয়ে যায় মুনিয়া। মাও একটু অবাক হয়। মুনিয়া তো একটু কাচুমাচু হয়ে বলেই ফেলে..
      " এর মধ‍্যে কি আছে ঠাম্মু? আমাকে কেন?"

"নতুন দিদি এটা তোমার ঠাম্মুর দেওয়া একটা ছোট উপহার।"

"আমাকে!"

    " কেন তুমি আমার দিদিভাই না? আমার সব দিদিদের আছে তোমার থাকবেনা কেন?"
            রাণার এবার সত‍্যিই অস্থির লাগে মুনিয়ার মুখটা দেখে। ঠাম্মুর হঠাৎ আবার কি দিতে হলো ওকে? কোন গয়না টয়না নাকি? ও কে যে ওকে...

          " না না ঠাম্মু মিষ্টি খেলাম, তোমরা এতো ভালোবাসা দিলে এটা আমি নিতে পারবোনা। কি এটা?
             মা একটু হাসে ঠাম্মুর দিকে তাকিয়ে। তারপর মুনিয়াকে বলে..." খুলেই দেখো কি আছে? আমরাও দেখি ঠাকুরমার ঝুলিতে কি আছে?
********************

     মুনিয়া আস্তে করে ভেলভেটের ছোট বটুয়াটার ফিতেটায় টান দেয়,মুখটা খুলে যায়। রাণাও তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে। মুনিয়ার হাতে লাল চুড়ির গোছা ঝনঝন করে বাজছে ও হাত ঢুকিয়ে আস্তে আস্তে বার করে আনে। এই জিনিস রাণা ডলের কাছে আর ওর পিসির মেয়ের কাছেও দেখেছে অবশ‍্য মা তুলে রেখেছে ওটা আলমারিতে যত্নে।
          মুনিয়াও তখন দেখছে ওটা.." এত সুন্দর রূপোর কাজললতা! আমি কোনদিন এমন কাজল লতা দেখিনি। এটা কেন? মানে হঠাৎ?"
          রাণা আর থাকতে পারেনা ঘরে,কি হবে এবার কে জানে তার থেকে বাইরে ঘুরে আসাই ভালো। বাইরে যেতে যেতে শুনতে পায়...
                 মা বলতে শুরু করেছে.."একটা সময় আমাদের এই বাড়িতে মেয়েদের জন্মকে দুঃখজনক বলে মনে হত কারণ তোমার ঠাম্মুর শাশুড়িমায়ের পর পর মেয়ে হয়েছিলো অনেকগুলো তার জন‍্য উনি ওনার শাশুড়ির কাছে প্রচুর কথা শুনেছেন এমন কি ছেলের বিয়ে দিতেও চেয়েছিলেন উনি। তারপরই আট বোনের পর তোমাদের দাদুর জন্ম হয়। এরপরেই অবাক কান্ড যে মেয়েদের উনি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন তাদের আর কারো ঘরে মেয়ে হয়না শুধু ছেলে হচ্ছে পর পর,আর ছেলের ঘরেও কোন মেয়ে নেই পরপর পাঁচ ছেলে তার মধ‍্যে বেঁচে আছেন শুধু তোমার দুই আঙ্কেল। শেষে উনিই মানত করেছিলেন মা দুর্গার কাছে মেয়েদের এ বাড়িতে রূপোর কাজললতা দিয়ে আদর করে বরণ করা হবে।মানে একদম চোখের কাজল করে রাখা হবে। ভাবতে পারো মেয়ে জন্মাবার জন‍্য মানত। আর তারপরেই রাণার পিসিমার জন্ম।"
           মুনিয়া অবাক হয়ে শোনে রাণার মায়ের বলা কথাগুলো।
"সত‍্যি কি যুগ ছিলো,ছেলের আশায় আট মেয়ে?
মানে ছেলে না হলে হয়ত আরো হত। তারপর আবার মেয়ে জন্মানোর জন‍্য মানত!"

         " তা তো করতেই হবে দিদি,মেয়েরা যে প্রকৃতি বাড়ির লক্ষ্মী।তারা না এলে বাড়ি যে বড় ফাঁকা। এই যেমন তুমি এলে বাড়িটা কত ঝলমলে হলো আমাদের। আমাদের মা দুগ্গার হাতের কাজললতা তুমি দেখোনি দিদি? এই এত বড়...আমার শাশুড়িমা বানিয়ে দিয়েছিলেন তোমার পিসিমা হবার পর।"

    
     

       
                        
                     

 
          

              
            
       
     
       

        

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...