Skip to main content

গল্প নয় সত‍্যি

#গল্প_নয়_সত‍্যি#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

তখন প্রথম মা হয়েছি,বয়েস কম।বাচ্চা হওয়ার কিছুদিন বাদেই অসুস্থ হলাম। আমাকে আর আমার বাচ্চাকে দেখাশোনা করার জন‍্য আয়া এলো বাড়িতে গল্পের খাতিরে তার নামটা পাল্টেই লিখলাম। আমি তাকে বলতাম রমলা মাসি,লম্বা একহারা গড়ন,কিন্তু একটু নুয়ে পড়া চেহারা। বেশ বয়েস হয়েছে উনি ওপার বাংলার লোক মানে দেশ ছেড়ে একসময় চলে এসেছেন। আমার মা প্রথমেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলো.." আমার মেয়ে কিন্তু বেশ লম্বা চওড়া তুমি পারবে তো ওকে সব করতে?"
         ঘাড় নেড়ে বলেছিলো." ভাববেন না আমি সব পারবো মাকেও দেখবো আর বাচ্চাকেও দেখবো। পাশেই থাকি,কাজটা হলে খুব ভালো হয়।"
               সেই থেকে আমার সঙ্গী হয়ে গিয়েছিলো রমলা মাসি।একটা সময় আমি সুস্থ হয়ে গেলাম,ফিরলাম কাজে। তারপর আমার ছেলেকে দেখাশোনা করতো মাসিই। আমাদের পাশের কোয়ার্টার সংলগ্ন আউটহাউসে থাকার জন‍্য আমারও খুব সুবিধা হয়েছিলো।আর মাসিও নিশ্চিন্ত হয়েছিলো কাজের জন‍্য বাসভাড়া দিয়ে দূরে কোথাও যেতে হবেনা।
                  বেশ কিছুদিন কাজ করার পর আমাদের সম্পর্ক কেমন যেন আন্তরিক হয়ে গিয়েছিল।আমার ছেলে একান্ত বাধ‍্য ছিলো মাসির,মোটামুটি ওকে একজায়গাতেই বসিয়ে রাখলেও বসে থাকতো।
                  আমাদের বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করতে বললেও মাসি রাজি হতোনা বলতো," কিছু দিলে দিয়ে দাও বাড়িতে নিয়ে যাবো আসলে নাতি নাতনি থাকে তো তাই একসাথেই খাই।"
                ধীরে ধীরে একটু করে জেনেছিলাম একজন নারীর বঞ্চনাভরা জীবনের কথা।তবুও দেখেছি সব সময় হাসির রেশটুকু মুখে মাখানো থাকতো।
    আজকের দিনে আমরা মেয়েদের অধিকার নিয়ে ভাবি,বঞ্চনার শিকার হলে প্রতিবাদ করি। কিন্তু রমলা মাসির মতো মানুষরা কি সত‍্যিই কিছু পেয়েছিলো জীবনে?
         প্রথমে যখন শুনতাম নাতি নাতনিকে নিয়ে মাসি খায় তখন ভেবেছিলাম বাহ্ সবাই একসাথে থাকে।পরে জেনেছি দুই ছেলে পাশে থাকলেও তারা মাকে খেতে দেয়না।বৃদ্ধা মা আয়ার কাজ করে নিজেরটা চালায় আর তার সাথে আদরে আব্দারে খাওয়ায় চার নাতি নাতনিকে।মাসির কাছেই শুনেছি গোটা ডিম খুব একটা খাওয়া হতোনা, ডিম ভেঙে বড়া করে নাতি নাতনিদের সাথে খেতো। মনটা ভারী হতো বুঝতাম সন্তানরা বিমুখ হলেও নাতি নাতনিদের আদরে রাখতো ঠাকুমা। হয়ত স্নেহের বন্ধন এমনি হয়।এর নামই মাতৃত্ব।
               একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, কবে থেকে এই কাজ করছো? তোমার স্বামী কি করতো গো?উনি মারা গেলেন কবে?
             প্রথমে খুব হাসলো মাসি তারপর বললো," মাঝে মাঝেই মরে যেতো।ভাবতাম বুঝি মরেই গেছে তবুও সিঁদুর মুছিনি।সিঁদুর মুছলে আবার অন‍্য উৎপাত গো।তিনটে ছেলে মেয়ে তো তাই বারমুখো হতে পারিনি।ওদের কে দেখবে?
  আবার হঠাৎই দেখলাম মরেনি সে বেঁচে আছে। শেষবারের মরাটা আমার কাছেই মরলো।আসলে সাতজম্মের চুক্তিতে সাতপাক ঘুরে শাঁখা সিঁদুর পরিয়েছিলো তো।"
           আমার তখন বয়েস কম,নতুন সংসার করছি,বাচ্চা হয়েছে।সত‍্যি বলতে কি একটু বোকা বোকাই ছিলাম।পুরোটা মাথাতে ঢুকলোনা। তাই বললাম সে কি গো! মানুষ বারবার মরে নাকি?

        " সে অনেক কথা গো,বাবুকে আজ ঘুম পাড়াচ্ছি।তুমিও একটু ঘুমোও।সেই কোন ভোরবেলা ওঠো।এরপর ছেলে উঠে গেলে আর ঘুমোতে পারবেনা।সে বলবো আরেকদিন।"
                            মাঝে কেটে গেছে কয়েকদিন তখন ছেলে ছেলে করে বরের দিকে নজর দেওয়ার সময় কমে গেছে একদিন একটু খোটাখোটি হলো। আমার চোখ জলে ভরলো,মন খারাপ হলো।
    মাসি বললো," ছেলে ছেলে কোরনা সারাদিন, আমি তো আছিই দেখছি।একটু দাদাকে সময় দাও ছেলেদের মন বড় অস্থির গো ঘরের থেকে বাইরে তাদের সুখ বেশি।অত ছেড়ে দিয়োনা সবসময় সুখকে আগলে রেখো।"
         আমার মাথায় ঢুকলোনা,আগলাবো আবার কি অত বড় মানুষটাকে বাচ্চা নাকি?
                      " স্বামী সুখকে যত্নে আগলে রাখতে হয়।কতজনের নজর পড়ে জানোনা তো? আসলে ঘরপোড়া গরু তো আমি সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পাই।"
              অনেকেই ভাববেন লেখিকার যা বুদ্ধি বাইরের লোক জ্ঞান দিতে এসেছে দাম্পত‍্য বিষয়ে। ওদের এত মাথা ব‍্যথা কিসের? কেন জানিনা আমি মাসিকে ততদিনে আপনজন ভেবে ফেলেছি।অবশ‍্য এটা আমার একটা দূর্বলতা। চট করে মানুষকে বিশ্বাস করি ভালোবাসি।
                জিজ্ঞেস করলাম কেন গো কি হয়েছিলো তোমার?
          শুনেছিলাম এক মেয়ের কথা,স্ত্রীর কথা মায়ের কথা। ঠাকুমা হবার গল্প কিছুটা আমার জানা ছিলো।
   রমলা মাসি বলতে শুরু করেছিলো....
           " আমাদের বাড়ি ছিলো ঢাকা ডিস্ট্রিক্ট। ঢাকার কাছের একটা ছোট গ্ৰামে বাড়ি,নিজেদের পুকুর,ধানক্ষেত আর বাড়ি। কত সুখের ছিলো সেই মেয়েবেলা।আমরা তিনবোন আর দুই ভাই। আমার পনেরো বছর হইতেই বাবা বিয়ে দিলো তখন ঐ দেশের অবস্থা ভালো না।কাকারা ইন্ডিয়াতে চলে এসেছে তখন। বিয়ের পর বরের সাথে ইন্ডিয়া চলে এলাম। একটা কারখানাতে চাকরি করতো,শিয়ালদার কাছে একটা ছোট বাড়িতে ভাড়া থাকতো। নতুন বিয়ে,নতুন সংসার বরের আদর ভালোবাসা।প্রথমটা বেশ স্বপ্নের মত ছিলো গো। কারখানা থেকে ফেরার সময় আমার জন‍্য প্রতিদিন কিছু খাবার আনতো। একটা সময় বুঝলাম মা হতে চলেছি।তখন আমার বয়েস ষোলো।"
       মাসি একটু থামলো,আমি একটা নিঃশ্বাস ফেললাম।পড়াশোনা করোনি একটুও?
     " করেছিলাম তো,ঐ ক্লাস সিক্স অবধি। তারপর আর হয়নি। পেটে বাচ্চা আসার পর বাংলাদেশে বাবাকে জানালো ও চিঠি দিয়ে।প্রথম বাচ্চা তো তাই বাপের বাড়িতেই হবে। সেইজন‍্য  বাবা আমাকে দিয়ে যেতে বললেন।"
      মনে মনে ভাবলাম বাচ্চা হবে কার জন‍্য আর দায় নেবে কে?
          " অনেকদিন বাদে বাপের বাড়িতে আসা। কত আনন্দ,গল্প,পুকুরের মাছ খাওয়া আর গাছের আম খাওয়া।ও দিন সাতেক থেকেই ইন্ডিয়াতে ফিরলো।"
      আমি জিজ্ঞেস করলাম তোমার মন খারাপ হলোনা বরের জন‍্য?
       "হলো তো। ওর বুকে মাথা রেখে কাঁদলাম,বললাম আমাকেও নিয়ে চলো। এখানে আমার মন খারাপ করবে। ও হাসলো বললো বাচ্চা হলেই আসবে দেখতে।"
      " এসেছিল বাচ্চা হবার পর?"
" হ‍্যাঁ ছেলে হয়েছিলো আমার খবর পেয়ে খেলনা জামাকাপড় নিয়ে এসেছিলো। বাবা বলেছিলো সবেই তো হয়েছে ছয়মাস থাক এখানে। ও রাজি হয়ে গিয়েছিলো। আমার মনটা একটু খারাপ হয়েছিল, ও আদরে ডুবিয়ে দিয়েছিলো আমাকে।"
           তারপর? কবে এলে কলকাতায়?
রমলা মাসি একটু লজ্জা পায়.." দুমাস পরে জানতে পারি আবার বাচ্চা হবে আমার।"
       মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে ওহ্। মনে মনে বলি কাজের কাজ করে গেছেন তোমার উনি বাহ্।

    " তারপর বাবা চিঠি দেয় যে এখানেই থাক এখন একেবারে বাচ্চা হলে যাবে। মেয়ে হলো আমার। ও আসতে একটু দেরি করলো জানালো কারখানায় ঝামেলা চলছে মিটলেই আসবে। তাছাড়া বাড়িও বদল করতে হবে। তারপর ও এলো,দেখলাম বেশ চেহারা খারাপ হয়ে গেছে।মেয়েকে দেখে খুব খুশি বললো লক্ষ্মী এসেছে সব ভালো হবে এবার। অনেকদিন বাদে ওকে আবার কাছে পেলাম.. বললাম আমাদের এবার নিয়ে চলো। অনেকদিন এখানে আছি লোকজনই বা কি ভাবছে? ও বললো দাঁড়াও বাবার সাথে কথা বলি। সেই সময় প্রায় পনেরো দিন থাকলো। বাবার সঙ্গে কথা বললো...বাবা বললো 'ঠিক আছে পুজোর পরেই নিয়ে যেয়ো,আর হ‍্যাঁ বাড়িটা একটু বড় দেখেই নিয়ো।দুটো বাচ্চা যাতে একটু হাত পা ছড়িয়ে থাকতে পারে।'
           ও চলে গেলো আমিও আশায় দিন গুনছি আর তো চারটে মাস মাঝে তারপর আবার আসবে।
                দুমাস পেরোতেই আমার শরীর খারাপ হলো খুব মাথাই তুলতে পারছিনা। বাবা কবিরাজ ডাকলো বললেন আবার...."
           মাসি পুরো বললোনা তবে আমি বুঝলাম প্রচন্ড রাগ হলো।মনে মনে বললাম ন‍্যাকামি যত,বৌকে রাখার মুরোদ নেই প্রত‍্যেকবার এসে একটা করে দিয়ে যাচ্ছে।ছিঃ। মুখে বললাম তুমি কি মাসি!
       " তখন কতটুকু বয়েস বলতো আঠেরো পেরিয়েছি উনিশে কি আর মাথায় বুদ্ধি।অতদিন বাদে বর এসেছে।"
     মনে মনে ভাবলাম আর কি? পুজো দাও বরকে। আবার আসবে আরেকটা দিয়ে যাবে।
        " আমার যাওয়া হলোনা বুঝলে,ওকে বাবা বারণ করলো। এবার আবার ছেলে হলো। কুড়ি হতে না হতে তিনটে বাচ্চার মা হলাম। বাবা ওকে আসতে বারণ করলো,বললো কাকা আসবে এলে আমায় সঙ্গে নিয়ে যাবে।"
         আমি মনে মনে ভাবলাম বেশ করেছে না আসতে দিয়ে তোমার ঐ অসভ‍্য কান্ডজ্ঞানহীন বরকে।না হলে আবার বংশবৃদ্ধি করে চলে যেতো।
                       অবশেষে প্রায় চারবছর বাপের বাড়ি কাটিয়ে ফিরলাম কলকাতা।মা খুব কাঁদছিলো। তবে মনে হলো বাবা একটু শান্তি পেলো আমায় পাঠিয়ে। সত‍্যিই তো সবাই কানাকানি করছিলো যে আমি বোধহয় বাপের বাড়িতে রয়ে গেলাম।"
                তোমাকে দেখে কি করলো বর? খুশি হলো?
            " দেখলাম একটা বাড়িতে উঠেছে সেটা আরো খারাপ।বাচ্চাগুলো কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। ছোটটা তখন খুবই ছোট। বাড়ি ঘর খুব অগোছালো আর নোংরা। কদিনেই কোমর বেঁধে লেগে খেটেখুটে ঠিকঠাক করলাম মোটামুটি থাকার মত। টুকটাক জিনিসও কিছু কেনা হলো। তবে কেন যেন মানুষটাকে খুব আলগা মনে হলো।বাড়িতে অনেকটা সময় থাকেনা যখন আসে তখন যেন খুব ক্লান্ত, ছেলেমেয়েদেরও কাছে টানেনা। ওদেরকে সামলে ,রান্নাবান্না করে ঘরের কাজ করে কদিনে আমিও যেন হাঁফিয়ে উঠলাম।
           মাঝে কেটে গেছে প্রায় দুটো মাস।ওকে একদিন বললাম নিয়ে চলোনা একদিন কালীঘাটে।কলকাতার তেমন কিছুই তো দেখিনি। সকালে উঠে ট্রামে করে তিনটে বাচ্চা নিয়ে গেলাম কালীঘাটে। ফেরার সময় বললো,' চলো পিসতুতো দাদার বাড়ি যাই বেহালা।'
               ওখানেই দুপুরের খাওয়া খেলাম।দুপুরে খাওয়ার পর বললো,' একটু সিগারেট কিনে আসছি বুঝলে। বেলা পড়লেই বেরোবো।'
                  সন্ধ‍্যে গড়িয়ে গেলো ফিরলোনা।আমি অনেকক্ষণ ব‍্যস্ত হয়েছি।কি করবো? কোথায় খোঁজ নেবো? পিসতুতো ভাসুর সব জায়গা দেখে এলো কোথাও নেই। আমি কেঁদে অস্থির,বড় ছেলেটাও কাঁদছে।তাকে পাওয়া গেলোনা।
        ভাসুর বললো রাতে ওখানে থেকে যেতে পরদিন ওর কারখানাতে খোঁজ নেবে।
       সারারাত ঘুমাতে পারলাম না,চুপ করে বসে রইলাম এই বুঝি আসে। পুলিশেও খবর দেওয়া হলো। পরেরদিন কারখানা থেকে এসে ভাসুর বললো সেখান থেকে অনেকদিন আগেই তাকে ছাটাই করে দিয়েছে।
                 অবাক হয়ে গেলাম,কি করতো তাহলে? তিনদিন ভাসুরের বাড়ি আছি।অবশেষে খবর পেলাম খালপাড়ের কোন মেয়েমানুষের খপ্পরে পড়েছিলো লোকটা তারসাথে কোথাও হয়ত চলে গেছে।তবে কোন হদিস পেলামনা। এদেশে যারা ছিলো কেউই আমাকে তেমন সাহায্য করলোনা।বাবা তখন অসুস্থ সেখান থেকেও তেমন সাহায্য পেলামনা কয়েকটা টাকা ছাড়া। ভাসুরের অবস্থাও খুব একটা ভালো না,তবুও ওরা মানুষ ভালো।একদিন কিন্তু কিন্তু করে ভাসুর বললো,' বৌমা একটা কাজ পেয়েছি করবে? গ্লাস ফ‍্যাক্টরিতে কাজ।একটু কষ্টের পারবে? আর না পারলে চলবেই বা কি করে?'
                     আমি নির্বাক হয়ে শুনছি বড় চোখটা ছলছল করছে। বৌকে বারবার প্রেগন‍্যান্ট
করেছে লোকটা অথচ অন‍্য মহিলার সাথেও সম্পর্ক রেখেছে। নিজের লালসা মিটিয়েছে,গাছেরও খেয়েছে তলারও কুড়িয়েছে।
           বললাম তারপর?

      "তারপর শুরু হলো আমার লড়াই গো।ভোরবেলা উঠে যাহোক একটা কিছু রান্না করতাম।বস্তিতে একটা ঘুপচি ঘর ভাড়া নিলাম।গয়নাগাটি যেটুকু ছিলো পরে দেখলাম ও সরিয়েছে। আসেপাশের লোকেরা বাচ্চাগুলো দেখতো। কুকুর বেড়ালের মত বাড়তে শুরু করলো ওরা অযত্নে।আমাকে পেলে আর ছাড়তোনা।"
           তোমার জীবনে কেউ আসেনি মাসি? সিঁদুর পরতে?
     
      " হ‍্যাঁ পরতাম গো,শাঁখা সিঁদুরের আশ্রয়ে সমাজের কু নজর থেকে বাঁচা। কেউ কেউ ভিড়তে চেয়েছে গো তবে ফূর্তি করতে।দায়িত্ব কেউ নিতে চায়নি গো।তাই আর মান খোয়াইনি। ঐ সম্মানটুকু নিয়েই মাথা উঁচু করে বেঁচেছি।
   ছেলেমেয়েদের কর্পোরেশনের স্কুলে।
   

                       

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...