"দেখে বসবি কিন্তু,তারপর বলিসনা আমি তোকে ফেলে দিয়েছি।"
" তাহলে আমি চালাই,তুই পেছনে বোস।"
" অত সাহসের দরকার নেই,চুপ করে বোস।"
মুনিয়া পেছনে বসেছে,কেমন যেন একটা লাগে রাণার।এর নামই কি ভালোলাগা?
ওর ছোঁয়া পাচ্ছে রাণা,কখনো গায়ের গন্ধ। এই পারফিউমের গন্ধটা রাণার খুব চেনা। বাইকে বসেও নিজের মনে বকছে মেয়েটা।কিছু কথা রাণাকে ছুঁয়ে যায় কিছু বুঝতে পারেনা। দেখতে দেখতে পৌঁছে যায় ওরা।
" ইশ্ কি সুন্দর সাজিয়েছিস রে? সত্যি খুব একটা ট্র্যাডিশনাল লুক এসেছে। বাটিকের পর্দা কোথায় পেলি? কি সুন্দর লাগছে! সাথে ম্যাচিং ডিভান কভার।"
শান্তিনিকেতনের একটা বুটিক থেকে অনলাইনে আনিয়েছি রে। আমার খুব পছন্দ ছিলো,তবে ঠিকানাটা পুতুল দিয়েছে ওর এক বন্ধুর বুটিক।
" বাবা এত কথা হয় তোর পুতুলের সাথে?"
" হম্ মাঝে মাঝে কথা হয়।ও তো শান্তিনিকেতনে পড়তো তাই মাঝে মাঝে যায় ওখানে।"
" বুঝলাম।"
" কি বুঝলি?"
" কুছ কুছ হোতা হ্যায়, পুতুল ঘর গুছিয়ে দিচ্ছে।"
" হাতি বুঝেছিস।নে ক্যাডবেরি আর স্ন্যাক্স খা,জুনি আসছে। বুদ্ধমূর্তি দেখেছিস?"
" হম্ দেখেছি তো।"
" ওখানে প্রতিদিন শান্তি চাই। কাজের চাপে মরছি এদিকে প্রমোশন হয়ে।"
হৈ হৈ করে এসে ঢোকে জুনি আর অম্লান তারপর আর সবাই।
মুনিয়াকে দেখে হাসে জুনি...." আমি খবর পেয়েছি একজনকে একদম ভিআইপি ট্রিটমেন্ট দিয়ে এনেছে রাণা। ওরে বাবা একদম ম্যাচিং তো।"
এবার একটু লজ্জা পায় রাণা.." আরে কফি আর স্ন্যাক্স খা ভাই। ভাবনার গরু তো এবার গাছে উঠে নাচবে।"
তবে ভাই যে যা বলুক মেয়েরা কিন্তু খুব ভালো হাউসহোল্ড ম্যানেজ করতে পারে। মাকে যেমন দেখেছে তেমনি আজ দেখলো জুনি আর মুনিয়াকে। রাণাকে আর তাকাতে হয়নি। কতদিন বাদে কেউ খাবার সার্ভ করে দিলো।
সারাটা দিন সত্যিই ভীষণ ভালো কাটলো। যাবার সময় জুনিটা বলে গেলো.." এবার পার্টনার আসুক,নেমন্তন্ন খাবো তখন শুধু এসে আজ বহুত খাটালি।"
" হম্ রাইট এবার বৌ আসুক।"
" তোরা থাম,কাজ করে কথা শোনাতে নেই। চল তোকে ছেড়ে দিয়ে আসি এবার।"
" ক্যাব বুক করে চলে যাবো ইয়ার।"
" না না কথা ইজ কথা।"
শহর তখন একটু চুপচাপ, রাত্রি নেমেছে বাতাসে একটু শীতলতার ছোঁয়া,রাণার ঘাড়ে ছুঁয়ে আছে মুনিয়ার হাতটা। আরেকটু কি পথটা বেশি হলে ভালো হত?
মুনিয়াকে ছেড়ে দেয় রাণা
" আসবি? কফি খেয়ে যা।"
" নাহ্ আবার কোনদিন আসবো।"
" পৌঁছে টেক্সট করিস।"
ওকে পৌঁছে দিয়ে ঘরে ঢোকে রাণা,যাক সারাদিন বাদে এবার ফ্রী,তবে এখনো কিছু কাজ আছে কিচেনটা ক্লীন করে শোবে....
কিচেনে একটা প্যাকেট পায়..আরে এটা তো গিফ্ট! কে আবার রেখে গেলো এখানে!
খুলতেই চিরকুট পায়....." অনেকদিন বাদে আবার লিখলাম তোকে,টাইটা বাঁধিস গলায় বন্ধুত্বের একদম টাইট গিট্টুতে বেঁধেছি এতো তাড়াতাড়ি মুক্তি নেই। আর এই ফ্রেঞ্চ পারফিউমটা অফিসে তোর গোমড়ামুখে হাসি ফোটাবে।"
আবার পড়ে লেখাগুলো রাণা মুক্তোর মত প্রতিটা শব্দ সাজানো। খুব ছোট্ট কথাগুলো অথচ যেন কত গভীর।
পারফিউমটা হাল্কা স্প্রে করে রাণা ওর শরীরে মিষ্টি সুবাস আর শীতলতা ছুঁয়ে যায় যা ঘুমোতে দেয়না রাতে একটা আবেশে ভরিয়ে রাখে।
মনে মনে হেসে বলে..." এই রাগী রাগী মিঠে মিঠে বন্ধুত্বটা থাক।কে মুক্তি চেয়েছে?
প্রেম প্রেম খেলার থেকে ঝগড়া,রাগ আর বকুনি মাখা বন্ধুত্বটাই মিঠে।"
মুনিয়াকে টেক্সট করে রাণা,ফোনে কথা বলতে পারবেনা গুছিয়ে।
..." পৌঁছে গেছি। কিচেনে পেলাম। চিরকুট টা ক্রীম বিস্কিটের মত একদম ক্রীমে ভরা।"
পড়তে পড়তে এলোমেলো চুল সরিয়ে হাসিতে গড়ায় মুনিয়া। ভালো কথা বলতে পারে তো ছেলেটা।
" তাহলে আর কি খেয়ে ফেল গিলে। পারফিউমটা কেমন? টাইটা পছন্দ হয়েছে?"
...." ভীষণ পছন্দ। কখন রাখলি ওগুলো?"
" ভুলে গেছিলাম গল্পের তালে। আসার সময় তাই চুপি চুপি...."
হঠাৎই অফলাইনে চলে গেলো মেয়েটা এই একটা ভীষণ বাজে অভ্যেস বলে যায়না।
চুপি চুপি কথাটা কেমন যেন মনকে ছুঁয়ে যায় রাণার....
একটা গানের কথা খুব মনে পড়ে গেলো,দাদুর ঘরে রেকর্ডে বাজতো...বেগম আখতার
' চুপি চুপি চলে না গিয়ে সে কেন বিদায় নিলোনা হেসে।"
তখন সেভাবে অনুভব হয়তো করতে পারতোনা কিন্তু আজ বড় শুনতে ইচ্ছে করছে গানটা।ইউটিউব খুঁজে ব্লুটুথ স্পীকারে ফোনটা কানেক্ট করে। ঘরে ছড়িয়ে পড়ে গানটা,রাস্তা তখন নিরিবিলি, শহরের গায়ে ঘুমের চাদর আর রাণার মনে ছুঁয়ে যাচ্ছে গানের আদর এ আদর মনকে শান্ত করে ভালো রাখে।
কেমন যেন অদ্ভুত এলোমেলো রোদ্দুরের ছোঁয়া আবার ঝোড়ো বাতাস মাখা একটা দিন আজ। রাণার মনে আজ নাম না জানা নানান সুগন্ধের মিশেল।
গানটা তখনো বাজছে বেগম আখতারের সুরেলা ভরাট গলায়...' কে যে তারে ডেকে নিয়ে গেলো সেধে...আমি তো রাখিনি তারে বেঁধে মায়ার ছলনায়।'
চোখটা জড়িয়ে আসে রাণার। ওদিকে মুনিয়ার দুটো চোখ জেগে তখনো প্রমোদের সাথে কথা বলছে মেসেঞ্জারে। সেইজন্য হঠাৎই সরে এলো হোয়াটস আ্যপ থেকে। এই রাতটুকু কিছুটা সময় কাটানো ভালোবাসার খুনসুটিতে।
প্রতিদিন কথার মাঝে একটু করে দিন গোনা আর বেশি নয় সামনের মাসেই আসবে প্রমোদ।
" গুড নাইট,অব তো শো যা পাগলী,কাল অফিস হ্যায় তো।"
মুনিয়া শরীরটা এলিয়ে দেয় বিছানায়। ঘড়িতে প্রায় দুটো,শহরে এখনো জ্বলছে আলো। আকাশের তারাদের সাথে খোলা জানলার পাশে জাগছে ওর মত কিছু মানুষ...হেডফোনটা বাজছে.....শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদে মোর অঙ্গ যায় জ্বলিয়া,ভ্রমর কইয়ো গিয়া।"
******************
মাঝে কেটে গেছে দিন পনেরো,অফিসে যাওয়ার সময় মুনিয়ার দেওয়া সুগন্ধী মনকে ছুঁয়ে যায় রাণার।
সত্যি কথা বলতে ভালো পারফিউম বোধহয় ভালোলাগার একটা অনুভূতিকে ছুঁয়ে থাকে তার মিঠে সুবাসে।
রাণাকে মা কিছুদিন ধরেই বলছে বাড়িতে আয় একবার। বেশ অনেকদিন হয়ে গেলো,সেই কবে পুজোতে এসেছিলি।"
" দেখছি,কবে যাওয়া হয়। খুব কাজের চাপ গো।দেখি সামনের মাসে একবার যাওয়ার চেষ্টা করবো। তোমরাও তো আসতে পারো একবার মা।"
" ডলের পরীক্ষা তো সামনে,তাই যেতে পারছিনা বাবা। ওকে একা রেখে যাওয়া যায়?"
অভিমানের সুরে বলে রাণা..." হ্যাঁ তোমার আদুরে মেয়েকে আগে সামলাও। আমি একাই বেশ আছি।"
ওদিক থেকে উত্তর আসে.." এই হিংসুটে,শুধু মাকে ডাকছিস মায়ের আদর খাবি বলে।আর আমার যে মন খারাপ দাদার জন্য।তাই একসাথেই যাবো।"
" ওকে,মাই সুইট সিস্ সবাইকে নিয়ে আসিস। দারুণ হবে কিন্তু।"
" যেতে পারি তবে মুনিয়াদিকেও ডেকে নিস দারুণ মজা হবে। ও আমাকে বলেছিলো পুরো শহর ঘুরিয়ে দেখাবে।"
" আগে আয়তো তারপর দেখা যাবে।"
রবিবার ড্রাই চিলিচিকেন আর ফ্রায়েডরাইস রান্না করেছে রাণা। আজকাল আর তেমন করে কুকিং হয় কোথায়। তবে রাইসটা নিয়ে খুবই চাপ ছিলো। তবুও যাক গলাভাত হয়নি এই রক্ষে।
একটু চেখে দেখে ভালোই হয়েছে মনে হচ্ছে।
বানিয়েই কেন যেন মনে হলো মুনিয়ার কথা।
একটা সময় রবিবারের রান্না নিয়েও কত ঝামেলা হয়েছে ওদের। কে করবে রবিবারের রান্না?শেষে ঠিক হলো এক রবিবার রাণা আরেক রবিবার ও করবে। ভগবান ওকে ওঠায় কার সাধ্য,শেষে রাণাকেই নামতে হত ময়দানে তবুও খেতে বসে শুরু হত এটা ঠিকঠাক হয়নি ওতে নুন কম।
এই নিয়ে একটু আধটু ঝগড়া হত মাঝেমধ্যে,অবশ্য জিততো মুনিয়া যেমন ডল জেতে সব সময়।ঝগড়াটা ঠিক আসেনা রাণার।
হঠাৎই মনে হলো একটা কাজ করলে হয়,আজ তো রবিবার। নিশ্চয় ঘুমোচ্ছেন এখনো মহারাণী ওকে একটু খাবার দিয়ে এলে কেমন হয়? যদিও বলবে ভালো হয়নি তা বলুক।
তাড়াতাড়ি করে গুছিয়ে নেয় খাবারটা...সারপ্রাইজ দেবে।খুব বলেছিলো বন্ধুত্বের গিট্টুটা টাইট করে বেঁধে দিয়েছে দেখাই যাক আজ। ভালোই হবে আজ আর ওকে রাঁধতে হবেনা।
ওপরে ওঠার আগেই নিচে কেয়ারটেকার বললো,"মৌবনী ম্যাম নহি হ্যায় সাহাব।" কিছুক্ষণ আগেই গেছে বাইরে হয়ত ফিরবে একটু বাদেই।কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রাণা একটা চিরকুট লিখে চলে যায় প্যাকেটটা কেয়ারটেকারের কাছে রেখে..." এসেছিলাম,হঠাৎই ইচ্ছে হয়েছিলো তাই। কিছু একটা রান্না করেছি তোর কথা মনে হলো। বাজে লাগলেও খাস।"
কি যা তা ব্যাপার,এখনো কি খায়নি? অনেকক্ষণ তো হলো এখনো একটাও ফোন করলোনা!
একটু বাদেই ফোনটা বাজে....স্ক্রীনে লেখা ময়না... রিনরিনে হাসিটা মনকে ছুঁয়ে গেলো.." বাজারে ঘুরে ঘুরে পেটটা খিদেতে চুঁই চুঁই করছিলো,এসেই পেলাম খুশিকা খাজানা আহা আহা কি সুন্দর বানিয়েছিস রে একদম ফাইভস্টারের শেফের মত।"
" বাবা এতো তারিফ! আগে তো কত ঝগড়া করতিস?"
" অনেক উন্নতি হয়েছে একা একা থেকে দেখছি। তোর বৌয়ের কপাল ভালো হবে,রাজ করবে একদম।"
যত্ত বাজে কথা,লজ্জা পায় রাণা, "ধুস্ রাখ এখন,পরে কথা হবে। বাই টেক কেয়ার।"
**************
ফোনটা একবার বেজেছিলো,ধরা হয়নি কাজ করছিলো আবার রিং হচ্ছে তাই ধরতেই হয়.." রাণা প্লিজ,ভীষণ এমার্জেন্সী এখনি হসপিটালে চলে আয় যত তাড়াতাড়ি পারিস। মুনিয়াকে নিয়ে আমরা এখানে এসেছি উই নিড ইউ ইমিডিয়েটলি।"
অবাক হয়ে যায় রাণা কেমন যেন লাগে..জুনি ততক্ষণে ফোনটা কেটে দিয়েছে।
কি হলো মুনিয়ার?
হঠাৎই হসপিটালে কেন!
তবে কি কাল ওর দেওয়া খাবার খেয়ে শরীর খারাপ হলো?
না না ওভাবে কেয়ারটেকারের হাতে খাবারটা দিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি।
অস্থির মন নিয়ে হসপিটালে রওনা দেয় তখনি কোন রকমে ম্যানেজ করে।
জুনি,অম্লান বসে আছে।
" কি হয়েছে মুনিয়ার?
ফুড পয়জন?
আমি কাল খাবার দিয়েছিলাম ওকে।"
ইশারায় চুপ করায় ওকে জুনি, তারপর যা বলে কেমন যেন ধোঁয়া ধোঁয়া লাগে রাণার।
মনে জমতে থাকে মন খারাপের মেঘের পাহাড়।মুনিয়া ওর কে? হয়ত কেউ নয়।
তবুও ওর ভালো থাকার একটুকরো খোলা আকাশ মুনিয়া।
ওর রিনরিনে হাসিটা পাহাড়ি ঝর্ণার মত ওকে উড়িয়ে নিয়ে যায় মেঘপাহাড়ের দেশে।
মুনিয়া কোনদিনই ওর কেউ না হলেও ভালো থাক মুনিয়া আবার চুটিয়ে ঝগড়া করুক।ছোট প্যান্ট পরে অবেলায় উঠে হাতে ব্রাশ নিয়ে ছোটাছুটি করুক ওর নিজের মত। হয়ত বাথরুমের সামনে গিয়ে ওর হাতে টাওয়েলটা দিতে পারবেনা তবুও বাঁচুক মুনিয়া, ওর নিঃশব্দ ঘুম ভেঙে চোখ খুলে তাকাক।
" হ্যাঁ রে জুনি মুনিয়া আবার কথা বলবে তো? ঝগড়া করবে তো চেঁচিয়ে?"
হঠাৎই যেন কিসব বলে যাচ্ছে রাণা...যা মনে হচ্ছে তাই।
কেঁদে ফেলে জুনি.." তুই এখানে বোস রাণা,আমাদের বন্ধুত্ব থাকবে। মুনিয়া কোথাও যাবেনা। আমরা আবার পার্টি করবো।"
রাণা কাঁদতে পারেনা,শুধু গলাটা বন্ধ হয়ে আসে..." ও কেন এমন করলো জানিস?
কাল দুপুরেও তো কত কথা বললো আমার সাথে..."
" আমি কিছু জানিনা রে কি হয়েছিলো। অম্লান ম্যানেজ করছে পুরোটা,বেশি কথা বলিসনা। পুলিশও এসেছিলো। পরে সব বলবো। আন্টিও হয়ত এসে যাবে। খুব ভেঙে পড়েছেন ওরা।"
মুনিয়া তখন হসপিটালের ওটিতে। মেজাজী, ছটফটে আর বকবকিয়া মেয়েটা ঘুমের দেশে হারিয়ে গেছে অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে।
কয়েকদিন প্রমোদ কয়েকটা টেক্সট ছাড়া আর তেমন যোগাযোগ করেনি ওর সঙ্গে। বলেছিলো বাইরে যাচ্ছে,তারপর আর পায়নি ওকে। কাল মার্কেটিংয়ে গেছিলো মুনিয়া কিছু জিনিস কিনতে প্রমোদ আসবে বলেই।
দুপুরে খাবার পর,হোয়াটস আ্যপ গ্ৰুপে কলেজের কুশল বলে..শর্মাজির এনগেজমেন্ট হলো জানিস তোরা?
সব সময় গ্ৰুপে ঢোকেনা মুনিয়া তবে নোটিফিকেশন আসতেই থাকে। কিছু দেখে,কিছু দেখা হয়না।
অবাক হয়ে যায় মুনিয়া চোখ রাখে গ্ৰুপে..চোখটা কাঁপছে তখন,বুকের মাঝে জল থই থই।
এই নিয়ে সবার উত্তেজনা অনেক কথা,সবাই কথা বলছে।কেউ জানতে চাইছে শর্মাজি আর মৌবনী কেসটা কি হলো? উত্তর পায়... না না কোন এক কোটিপতি বাবা অনেক দহেজ দিয়ে কিনে নিয়েছে শর্মাজিকে..।
আর শর্মাজি তো এমবিএ করতে বাইরে যাচ্ছে পুরোটাই শ্বশুরের টাকায়।
কেউ কেউ ব্যাপারটা সাপোর্ট করছে,ওদের মধ্যে এটা একটা রেওয়াজ দহেজ ওরা খোলাখুলি নেয়।
একজন জিজ্ঞেস করলো.." মেয়েটা কেমন দেখতে রে?"
" গ্ৰুপে এসব বলিসনা,মৌবনীর খারাপ লাগবে।
ইনস্টা দেখ।"
কেমন যেন হাত পা ঠান্ডা হতে থাকে মুনিয়ার। একটু একটু করে জমে যেতে থাকে।ভেবে পায়না কাকে ফোন করবে মাকে না প্রমোদকে?
সামনে সপ্তাহে তো ওর আসার কথা।তাহলে কি ওরা ভুল বলছে হোয়াটস আ্যপে?ইচ্ছে করে গ্ৰুপটা লিভ করে বেরিয়ে যেতে। কিন্তু পারেনা।
ইনস্টা খুলবে? দেখবে একবার?
আঙুলগুলো কেমন যেন অবশ লাগে মুনিয়ার।
হোয়াটস আ্যপ থেকে বেরিয়ে আসার সময় নজর যায় স্ট্যাটাসে। প্রমোদ তো কখনো স্ট্যাটাস দেয়না! আজ তো দিয়েছে,তবে কি সত্যিই?
দেখবে স্ট্যাটাস?
একবার দেখবে?
মনকে বারবার জিজ্ঞেস করেও দেখে।আজ মনটা কেমন যেন বোবা আড়ি করেছে নিজের সাথেই। স্ট্যাটাসে দেখে মুনিয়া...আঙটি পরাচ্ছে প্রমোদ কাউকে একটা... কাউকেই তো। ও তো প্রমোদের পাশে নিজেকেই সাজিয়েছে এই কয় বছর ধরে। কিন্তু প্রমোদ তো দেখবে ও স্ট্যাটাস দেখেছে। হ্যাঁ ও দেখবে বলেই তো দিয়েছে।
পাগলের মত নিজের মনে বকবক করতে থাকে মুনিয়া। চোখের জলে ভাসছে চোখের কাজল,নাকটা লালচে আভার মন খারাপের সিঁদুরে মাখামাখি।
টলতে টলতে নম্বরটা হাতড়ায় মুনিয়া, চোখটা বড় আবছা তখন।
" তুমনে শাদী কর লিয়া? বিন বাতায়ে মুঝে। আমি যে তোমার জন্য ঘর সাজিয়েছি প্রমোদ। কত কি কিনেছি আমরা থাকবো দুজনে। কিতনে স্বপ্নে সাজায়া,তুম কাহা হো?"
নিজেকে সামলাতে পারেনা,কান্নায় ভেঙে পড়ে মুনিয়া। বালিশ আর কুশনগুলো ছুঁড়ে ফেলে মাটিতে। গড়িয়ে গড়িয়ে বিছানায় মুখ ঢেকে কাঁদে।
"শাদী নহি হুয়ি ইয়ার,পাপা নে বহত জেদ কিয়া উসি লিয়ে মজবুর হোকে।"
" আর তুম্ মান গয়া? তুমি তাহলে শুধুই আঙটি পরালে?"
ফোনটা কেটে দেয় প্রমোদ।
পাগলের মত ইনস্টা বার করে মুনিয়া, অনেক লোকজন, বড় অনুষ্ঠান হাসিখুশি কতগুলো মুখ ভেসে ওঠে চোখের সামনে।শর্মাজির পাশে আজ অন্য কেউ।
মুনিয়ার এক কামরার ফ্ল্যাটে আজ ভরা ভাদর মাসের কান্নার বানভাসি ঢেউ। মেঝেতেও পা ফেলতে পারেনা মুনিয়া আজ যেন জলে ভেসে যাবে ও।
বাইরেও তখন নেমেছে অঝোর ধারায় বৃষ্টি,দূরে কারো সুখের বাসর থেকে শোনা যায়...." রিমিঝিম গিরে সাওন..."
মুনিয়ার তখন..... 'এ ভরা বাদর মাহ ভাদর শূন্য মন্দির মোর।'
জুনি ফ্ল্যাটে কতগুলো চিরকুট পেয়েছিলো।রাণার হাতে দেয়।রাণা অবাক হয়ে দেখে কাটাকুটি করা কতগুলো লাইন...
'কিচ্ছু চাইনি আমি আজীবন ভালোবাসা ছাড়া
আমিও তাদেরই দলে বারবার মরে যায় যারা।'
কেমন যেন এই লাইনগুলোর মধ্যে নিজেকে খুঁজে পায় রাণা।
"কোথা থেকে পেলো এই লাইনগুলো মুনিয়া?
এটা কি কোন গান?"
" তুই শুনিসনি গানটা? কত যে ভালোবাসতো মেয়েটা কে জানে!"
প্রমোদের ডিটেলস কখনো জানেনি রাণা। মুনিয়ার সাথে থাকলেও ওর গন্ডীর মধ্যে কখনোই ঢোকেনি,পর্দার বাইরেই থেকেছে।
শুধু কাজললতা ফেরত দেওয়ায় বুঝেছিলো অনেক কিছু।তবুও সবটাই হাল্কা করে দিয়েছিলো।
মাঝে অনেকগুলো ঘন্টা কেটে গেছে..রাণার মনে চিরকুটের কাটাকাটি শব্দগুলো ঘোরাঘুরি করে ভোকাট্টা ঘুড়ির মত..কিচ্ছু চাইনি আমি,আজীবন ভালোবাসা ছাড়া।"
ওদের সবার ভালোবাসা আর ওর মা বাবার বুকফাটা কান্নায় মুনিয়াটার ঘুমের দেশে যাওয়া হলোনা মনে হয় এবারের মত।
রাণা ভেতরে যায়নি,ও কিছুতেই দেখতে পারবেনা ঝগড়ুটে মেয়েটাকে এমন চুপ করে শুয়ে থাকতে। ওরা বললো,একবার চোখ মেলে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো তারপর আবার ঘুমিয়েছে নিশ্চিন্তে। বিপদ কেটে গেলেও অবজারভেশনে থাকতে হবে। ছুটি হবে হয়ত কয়েকদিন বাদে।
মেঘ কাটলেও দুঃস্বপ্নের রাতের ঝড়ের ধাক্কাটা বোধহয় কাটেনি তখনো। ওর মা তখনো কাঁদছেন মাঝে মাঝেই। মাঝরাতে মেয়ের মনখারাপের মেসেজ উনি দেখেননি ঘুমোচ্ছিলেন তখন,সকালে বিন্দিয়া পায়না বেল বাজিয়ে ফোন করে। ফ্ল্যাটের লোকেরা দরজা ভাঙে,জুনিকে ফোন করেন মাসিমা।
ঐ ঝগড়ুটে,কুড়ে আর বন্ধুত্বের গিট্টুমারা স্ট্রেটকাট মেয়েটার ঢাকা চাপা প্রেমটা যে এতটা গভীর ছিলো জানতে পারে রাণা।
ওরও তো একটা প্রেম ছিলো একসময়, সত্যিই এখন মনে হয় অযথা কত রাতের ঘুম নষ্ট করেছে জেগে থেকে ওর জন্য।বাড়িতে মিথ্যে বলেছে,মায়ের সাথে ঝামেলা হয়েছে পড়াশোনা ঠিকমত হচ্ছেনা বলে।
শেষে কি হলো চার বছরের রিলেশনশিপের কাটাকুটি খেলায় শেষ গোল্লাটা ওকে দিয়ে চলে গেলো বেটার অপশনে।রাণা পড়ে রইলো ভাঙা মনে। হয়ত বা আজও সেই মনে রয়েছে কিছু ফাঁক আর ফাটল যা দিয়ে ফেলে আসা স্মৃতিগুলো ভিড় করে আসে কখনো। মন খারাপ গুলো মাঝ রাতে ঘুম ভাঙায় অথবা রাতজাগায় জেগে থাকা তারাদের মাঝে।
তারপর একটা সময় ভারভার চোখদুটো বুজে যায় গভীর দীর্ঘশ্বাসে কিন্তু তখনো ভেঙে যাওয়া বিশ্বাস প্রেতাত্মা হয়ে ঘোরে দুঃস্বপ্নের চারপাশে।
রাণা আর জুনি দুজনেই অনেকবার করে বলেছিলো মুনিয়ার মা বাবাকে ওদের ফ্ল্যাটে থাকতে।রাজি হননি ওনারা।বললেন..." যাই ওখানেই,দেখি যদি পারি মেয়েটার ভাঙাচোরা স্বপ্নগুলো ও আসার আগে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখি।"
কথাটা শুনে কেমন যেন বুকে জমা মন খারাপ চোখের কোণে ভিড় করে রাণার। নিজেকে আড়াল করে সরে যায়।
বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়েছে রাণার।শরীরটা আর দিচ্ছেনা।একসাথেই টুকটাক কিছু খেয়ে ফিরেছে ওরা। তাই সারাদিনের ক্লান্তি ধুয়ে ফেলে বিছানায় ছড়িয়ে দেয় নিজেকে....চিরকুটের কথাগুলো কানে বাজে আবার। ইউটিউব খুলে গানটা খোঁজে...শাহজাহান রিজেন্সী সিনেমার গান অনেকটাই চৌরঙ্গীর আদলে বানানো সিনেমাটা।
আস্তে করে গানটা চালিয়ে দেয়...কিনু গোয়ালার গলি কবিতায় আকবর বাদশার সাথে যেমন হরিপদ কেরানী মিলেমিশে গেছিলো,কোথায় যেন ঠিক তেমনি একটা নরম ঝগড়ুটে হেরে যাওয়া মেয়ের সাথে মরতে মরতে বেঁচে থাকা একটা ছেলে নিজেকে মেলাতে পারে.....গানটা বেজে চলেছে তখনো...
কিচ্ছু চাইনি আমি আজীবন ভালোবাসা ছাড়া
আমিও তাদেরই দলে বারবার মরে যায় যারা।
.................
বাসতে বাসতে ভালো তোমারি দুহাতে গেছি মরে
আবার এসেছি ফিরে নেভা নেভা ছায়াপথ ধরে।
***************
"হ্যালো জুনি? ফোন করেছিলি মাসিমাকে?
তুই কি গেছিস সকালে?"
" নারে আমি যাইনি।
হ্যাঁ রে কথা হয়েছে ওনারা ওখানেই আছেন।
ডঃ বলেছে ওকে বেশি ডিস্টার্ব না করতে।
আসলে ট্রমাটা এখনো কাটেনি।
শুনলাম একটা দুটো কথা বলেছে তবে এখনো ঘুমোচ্ছে।"
" তুই কি বিকেলে যাবি?"
" হ্যাঁ যাবো তো,সকালে তো পারিনি।
তুই আসছিস তো?"
" না রে আমার আসা হবেনা আজ অনেকটা কাজ...তুই প্লিজ যাবার আগে একবার আমার সেকশন হয়ে যাস।
আমি তোকে ফোন করে নেবো।"
মুনিয়াকে এভাবে দেখতে একটুও ইচ্ছে করেনা রাণার শুধু এটাই শান্তি যেখানেই হোক এখনো শ্বাস ফেলছে মেয়েটা।
ওর হাসিমাখা চোখদুটোতে দুঃখের ছায়া দেখতে কেমন যেন ভয় করে রাণার।
জুনি মিসড্ কল দেয় লিফ্টের কাছে এসে দাঁড়ায় রাণা..." এটা ওর বিছানার পাশে রেখে দিস।"
হাসে জুনি," যাবিনা?"
" কাল যাবো।"
মুনিয়ার বিছানার পাশে জুনি যত্ন করে রাখলো খুব হাল্কা একটা অর্কিডের বোকে সঙ্গে একটা মেসেজ ঝুলছে। রাণার চিরকুট...
" আজ কেমন আছিস মুনিয়া?"
" একটু ভালো। তোরা আমাকে ঘুমোতে দিলিনা কেন? আমি যে ঘুমোতে চেয়েছিলাম।"
" ঘুমোতে চাইলেই হবে?আমাদের পার্টির কি হবে?আবার হৈ হল্লা,হুটোপুটি, জন্মদিনের মজা।এইসব করতে হবে তো? সিস্টার বকু দিচ্ছে আজ আসি। রাণা দিয়েছে ফুলগুলো দেখিস চোখ দুটো খুলে,মন ভালো হবে।
ওরা চলে যাবার পর অনেকক্ষণ চোখ বুজে থাকে মুনিয়া..মা খুব কাঁদছিলো,বাবা বললো.." এই নাকি আমার বেটু,যে বাবাকে পেছনে বসিয়ে কলকাতা ঘোরায়,বাজার করে,বাবার ওষুধ কিনে দেয়।"
হঠাৎই মনে হলো প্রমোদের ভালোবাসা না পেয়ে এত মানুষের ভালোবাসা ফেলে ও যাচ্ছিলো কোথায়?
কিন্তু সবাই কি বলবে?
দুই চোখ জলে ভরে যায় মুনিয়ার, প্রমোদ ওকে ঠকিয়েছে। এত বড় ধোকা! ওর স্বপ্নের ঘর যে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। কত স্বপ্ন সাজিয়েছিলো ঘরের আনাচে কানাচে। ছবি এঁকেছিলো তুলির টানে পর্দায়,কুশনে আর ফুলদানিতে। চায়ের কাপ থেকে ডিনার প্লেট সবই কিনেছিলো ঘুরে ঘুরে শুধু ওরই জন্য। সব কেমন ভেঙে গেলো,ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো ছেঁড়া মালার পুঁতির মতো।
অর্কিডগুলোর দিকে চোখ পড়ে মুনিয়ার ওর প্রিয় রঙ।ও জানে রাণার অফিসের কাছে একটা ফ্লাওয়ার বুটিক আছে ওদের ফোন করলেই ওরা সাজিয়ে দেয় পছন্দমত।
রিবন জড়ানো ছোট্ট চিরকুটটা চোখে পড়ে...
💌" পৃথিবীটা খুব সুন্দর, চোখদুটো খোলা রাখিস অসময়ে ঘুমিয়ে পড়িসনা।"💌
কথাগুলো কানে বাজে, হাসি পায় মুনিয়ার পৃথিবীর কিছু মানুষ বড়ই অসুন্দর আর বিশ্বাসঘাতক। যারা ভালোবাসা নিয়ে খেলে,বিশ্বাস ভেঙে স্বপ্নগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে বিস্মৃতির অন্তরালে।
সারাদিন অফিসে কাজের মাঝে মাঝেই মেঘলা মনটা ভারী হয়েছে দুশ্চিন্তায়। মাকে কেন যেন কথাটা বলতে পারেনি রাণা। কি করে বলবে মুনিয়া নামের একটা মেয়ে যে ধুনুচি নাচ নাচে ফাটাফাটি, গান গায়,ঝগড়া করে, পাহাড়ি ঝর্ণার মত হাসে সে হসপিটালের বিছানায় শুয়ে আছে স্লিপিং পিল খেয়ে।
অনেক কথা জানতে চাইবে মা, বারবার ফোন করবে ডল আর বাবা। তাই থাকনা কিছু কথা মনের অন্তরালে।
রাতেও জুনির সাথে কথা হলো.." ডিপ্রেশন কাটেনি এখনো একটু সময় লাগবে তবে ভাবিসনা সব ঠিক হয়ে যাবে। আরে হমলোগ হ্যায় না।"
জুনির হাসিতে রাণার মনের মেঘ কুয়াশাটা ভেদ করে একটুখানি আশার আলো।উঁকি মারে।
বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দেয় রাণা রাতে গান শুনতে ওর ভালো লাগে। একলা মনের ভাবনার সঙ্গী ঐ গানগুলো হয়ত বা শব্দের ছন্দে মনের বন্দি কথা আর ভাবনাগুলো খুঁজে পায়।
খুব হাল্কা করে সাউন্ডটা টিউন করে রাণা...তবুও বন্ধ ঘরে ঘুরপাক করে শব্দগুলো🎶
তুমি যাকে ভালোবাসো
স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো
তার জীবনে ঝড়।
তোমার কথার শব্দদূষণ
তোমার গলার স্বর।
আমার দরজায় খিল দিয়েছি
আমার দারুণ জ্বর।
তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর।
***************
আগের দিনের সব ক্লান্তি কিছুটা মুছে গেছে বিছানার আদরে ।চায়ের কাপ নিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রাণা। রাস্তার ধারে সারি দিয়ে সবুজ কিছু গাছ,সামনের বাড়ির বাগানে সবুজে হলুদের হাতছানি। আজকের সূর্যটা উজ্জ্বল, রোদের আভায় শহরকে রাঙিয়েছে হাল্কা কমলা রঙে। আজকে যাবে মুনিয়াকে দেখতে.....
************
আজকে মুনিয়াকে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো জুনির।
" এই তো আমাদের মুনিয়া পাখি পাখা মেলেছে। দেখ রাণা,আজ অনেক ফ্রেশ।"
রাণা অবাক হয়ে যায় আসলে ও তো আজই দেখলো মুনিয়াকে ঝড়ের পরে, সেদিন তো ও ভেতরে আসেনি।
মুনিয়ার চোখের মণি আজ দুষ্টুমিতে হাসেনা,অদ্ভুত শান্ত গভীর ঝিলের মত ওর চোখদুটো। একটা ঝোড়ো হাওয়া কেমন যেন উল্টেপাল্টে দিয়েছে ছটফটে মুনিয়াকে।
ওর পাশে ফুলের বোকেটা রেখে দেয় রাণা.." কবে ফিরবি বাড়িতে?"
" দেখি ওরা কবে ছাড়ে।''
" আমি বাড়িতে আসবো,তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়।ওখানেই তোকে মানায়। সেই দাপুটে,ঝগড়ুটে আর হাসিখুশি মুনিয়া।"
একটা হাল্কা হাসি দেখতে পায় মুনিয়ার মুখে, খুবই ম্লান।পাহাড়ি ঝর্ণার মত নয়।
জুনিও কিছু কথা বলে যায় নিজের মত। মুনিয়া একটু হাসে আবার তবুও মনে হয় ওর মনটা যেন একটা ভাবনার জাল বুনে যাচ্ছে নিজের মত আনমনে।
ফেরার সময় ক্যাবে আঙ্কেল আন্টিকে ড্রপ করে বাড়ি ফেরে রাণা। শোনে কাল বা পরশু ছেড়ে দেবে মুনিয়াকে।
**************
কতদিন রাণার স্ক্রীনে ময়না নামটা আর দেখা যায়না। তবে মুনিয়া এসে গেছে বাড়িতে যে বাড়িটা ওর স্বপ্ন ভাঙার আর স্বপ্ন দেখার সাক্ষী। কদিন ওর মা বাবা এখানেই আছেন।জুনির কাছে শুনেছে কয়েকদিন থাকবেন ওরা।
রাণা একদিন যায় হঠাৎই অফিস ফেরত..." মুনিয়া আছে?"
" হ্যাঁ আছে তো,সামনের সপ্তাহ থেকে বেরোবে।"
বাবার সাথে কথা বলছিলো বোধহয়, রাণাকে দেখে পুরোনো হাসিটা অনেকদিন বাদে হাসলো মুনিয়া..." মুখটা অমন কেন তোর? আমি এখন বেশ ভালো আছি। কফি খাবি?"
"তুই বোস, আমি বানাচ্ছি মুনাই কফি।"
" না মা আমি আজ কফি বানাবো। ও আমার হাতের কফি খেতে খুব ভালোবাসে।"
রাণা একটু লজ্জা পায়।
" আমি জানি তো তুই ওকে কফি করে খাওয়াতিস। সত্যি তুমি যে কেন এই বাড়ি ছেড়ে গেলে বলতো? তুমি থাকলে সব ঠিকঠাক থাকতো।"
রান্নাঘর থেকে মুখ বাড়ায় মুনিয়া..." তুমি যদি জানতে ও আমার সাথে আছে রাগ করতে না?"
" এই যে এখানে এসে শুনলাম রাগ করেছি?"
তবুও এত কিছুর পরও একটা কথা মনে হলো যে প্রমোদ ভাগ্যিস ওর সাথে লিভ ইনে থেকে ওকে ঠকায়নি। হতেই তো পারতো তেমন,মুনিয়া তো ভেসেই গেছিলো প্রেমের জোয়ারে তার আগেই যে পাথরের বাঁধে ধাক্কা খেলো হয়ত সেটাই ভালো।
আসলে প্রেমটা অজান্তেই হয়ে যায়,প্রেমের কোন সাক্ষী থাকেনা তো তাই বোধহয় হুট করে পালিয়ে যাওয়া সহজ। এ তো বাপু বিয়ে নয় আঙটি বদল মালা বদল দৃষ্টি বদল একগাদা লোক সই সাবুদ।
এখানে মন দেওয়া নেওয়া হয় অজান্তেই আবার ভাঙেও একান্তেই।শুধু ওর কথাটাই খোলামেলা আলোচনা হয়েছিলো গ্ৰুপে তাই হয়ত ও নিতে পারেনি।
এর থেকে প্রমোদ যদি বলতো..আমার মা বাবার মত নেই এই বিয়েতে। আর আমাকে ওদের কথা মানতে হবে তুই দুঃখ পাসনা মৌবনী, দোস্তি রহেগা হামেসা। তাহলে কি খুব ক্ষতি হত?
সেদিন যে কি হয়েছিলো নিজেও জানেনা,আবেগটাকে যদি বুদ্ধি দিয়ে একটু নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো,রাগ আর দুঃখগুলো যদি তখন হাইস্পীডে না দৌড়তো তাহলে হয়ত অঘটনটা ঘটতোনা।
আর কখনো করবেনা এমন ছেলেমানুষী,সত্যিই মা আর বাবা কত কাঁদছিলো।কাজকর্ম ফেলে ছুটে এসেছে ধেড়ে খুকির প্রেমের ধোকা সামলাতে।
আজ বেশ ভালো লাগলো রাণার ওর পুরোনো ঠিকানায় এসে। কেমন যেন একটা বাড়ি বাড়ি ছোঁয়া পেলো। সামনে ধোঁয়া ওঠা কফির কাপটা রাখে মুনিয়া।
" দেখতো কেমন হয়েছে? আগের মত পেরেছি তো?"
ওর জোর করে হাসি আনা মুখটাতে আরেকটু আনন্দের ছোঁয়া দিতে চায় রাণা.." ভীষণ ভালো হয়েছে শুধু একটা জিনিস মিসিং।"
" কিছু দিইনি কি?"
" হম্।"
গম্ভীর মুখে রাণা বলে। মুনিয়ার বোকা বোকা মুখটা দেখে খুব হাসি পায়।
...বলনা কি?
রাণা আস্তে আস্তে বলে "চিরকুট।"
নিজের সেই রিনরিনে হাসিটা অজান্তেই হেসে ফেলে মুনিয়া.." মা দেখেছো তো আমি একটা ভুল করেছি বলে সবাই কেমন আমার লেগ পুল করছে।"
হাসে রাণা।
" তাহলে ভুল করেছিলি সত্যিই,তাইতো?"
ওর মা বলে।
" জানিস আমার মনের ফেসিয়াল করাচ্ছে মা রেগুলার যাতে ধুলো জমা মনটা আমার পরিস্কার হয়ে যায়।"
অবাক হয়ে যায় রাণা.." মনের আবার ফেসিয়াল কি?"
" একটু কাউন্সেলিং করাতে বলেছে হসপিটাল থেকে। মহা ফাজিল মেয়ে।"
মনে মনে ভাবে কি সুন্দর কথা বলে মুনিয়া..." একদম ঠিক,এবার ধুলো ময়লা ঝেড়ে মনটাকে একদম ফুরফুরে করে ফেল আগের মত। আজ আসি রে। মন তো খারাপ হতেই পারে তবে ওটাকে পরিস্কার করে নিয়ে আবার ঝরঝরে করাটাই জরুরী।"
আসলে শরীরের অসুস্থতা নিয়েই আমাদের সবার মাথাব্যথা থাকে,কারণ শরীর শুয়ে পড়লেই মুশকিল। মন খারাপের খবর কজন রাখে? মন শুয়ে পড়লে যে শরীরের কোন অংশই আর কাজ করতে চায়না। কিন্তু মুশকিল মনের অসুখটা এত ব্যক্তিগত যে অনেক সময় প্রকাশিত হওয়ার আগেই মানুষকে শেষ করে দেয়।
গুডনাইট করে বেরিয়ে আসার মুখে মুনিয়ার দিকে তাকিয়ে ঐ ফাজলামিটা আবার খোঁজে রাণা.....বন্ধুত্বের মিঠেগুড়ে মাখানো দুষ্টুমি ভরা ফাজলামো।
মুনিয়া তখন হাত নেড়ে হাসছে সেই হাসিটা।
*****************
কয়েকদিন বাদেই জুনি ফোন করে," হ্যাঁ রে মুনিয়ার সাথে কথা হয়েছে?"
" কয়েকদিন আগে হয়েছে। টুকটাক টেক্সট হয়। কেন রে? এনি প্রবলেম?"
" হ্যাঁ, আন্টি আঙ্কেল চলে যাবেন নেক্সট উইকএন্ডে।"
" তেমনি তো শুনেছিলাম আগে।"
" আসলে ওদের ফ্ল্যাট থেকে আপত্তি করছে ওর ওখানে থাকার ব্যাপারে।
মুনিয়াকে ওরা আর রাখতে চাইছেনা।
একটা ঘটনা ঘটে গেছে তো তাই।"
" কি অন্যায়!
ওটা একটা মিসহ্যাপ।"
" জানিনা ভাই তবে ওরা দিন পনেরোর মধ্যে মানে এই মাসের শেষে ছেড়ে দিতে বলেছে।
খুব চিন্তায় আছে ওরা।"
"একটা কথা বলবো?"..রাণা বুঝতে পারে জুনি ওকে কি বলবে।একবার মুনিয়াকে ম্যানেজ করে ওকে ঢুকিয়েছে ওর ফ্ল্যাটে এবার রাণাকে ম্যানেজ করবে মুনিয়াকে ওর ফ্ল্যাটে রাখার জন্য।
এমন উপকারী বন্ধু জীবনে আর দুটো দেখেনি। মুনিয়াকে কখনোই চিনতোনা রাণা আবার রাণাকে মুনিয়া চিনতোনা। নিজে বেশ ড্যাং ড্যাং করে বিয়ে করে চলে গিয়ে ওর সাথে মুনিয়াকে ভিড়িয়ে দিয়ে গেছে। এখন আবার সেই একই গেম খেলতে চাইছে।
" হ্যাঁ বল কি বলবি।
তবে মুনিয়ার সাথে আবার থাকার কথা কিন্তু একদম নয়।"
" ব্যাস আর কি,আগেই তো পথ বন্ধ করলি আর কি বলবো?"
" তোর মুনিয়া যা খুশি করবে,আমি ওর বডিগার্ড নই যে ওকে আগলাবো। তুই রাখনা তোর ফ্ল্যাটে,তোর তো ডাবল বেডরুম ফ্ল্যাট।"
ফোনে একটা চিল চিৎকার দেয় জুনি..." এই জন্যই তোর এখনো কোন বান্ধবী জোটেনি।একটা বুদ্ধু কোথাকার।"
গজগজ করে রাণা..." আমি বোকা বলেই তো মাথায় কাঁঠাল ভাঙিস বারবার।
না না ন্যাড়া আর বেলতলায় যাবেনা।
আমার খুব চাপ হয়ে যাচ্ছে।
আমাকে আর জড়াবিনা।
তোর স্কুলের বন্ধু তুই বোঝ। "
" আর তোর কিছুনা?
তাহলে ফুল পাঠিয়েছিলি কেন শুনি?
শোন আমি এখন এইসব ব্যাপারে সিনিয়র তাই সব বুঝি।"
" পাঠিয়েছিলাম কারণ আমি চাই যে মুনিয়া ভালো থাকুক।
যেমন তুই চাস।"
" তাই তো বলছিলাম,মুনিয়া ভালো থাকবে এখানে থাকলে।"
মহা চিনে জোঁক তো জুনি ওকে যেন মুনিয়ার বাড়ি দেখতে বলেছে কেউ।
" এই শোন মুনিয়া এখানে থাকতে চাইলে ওকে বলতে হবে।"
চুপ করে যায় জুনি,মুনিয়া তো ওকে দেখতে বলেছে কিছু একটা ওর বাড়ির আসেপাশে। একবারও বলেনি রাণার সাথে থাকবে।
" এই শোন এরপর আবার যদি আমরা একসাথে থাকি তখন শুধু বাইরের লোক কেন আমার মা বাবাও বিশ্বাস করবে আমরা লিভ ইন করছি।"
জুনি সত্যিই আর কিছু বলতে পারেনা হয়ত রাণাই ঠিক বলেছে। মুনিয়া আর ও একদম নার্সারি থেকে একসাথে পড়ে শুধু কলেজটা আলাদা ছিলো। কলেজের বন্ধু রাণা। তাই হয়ত এক বন্ধুর জন্য আরেক বন্ধুর কাছে দরবার করছে। ওর কাছে রাখা গেলে তো রাখতেই পারতো। রাণা যা বলেছে তা হয়তো ঠিকই।
মুনিয়ার এই ঘটনার পর প্রমোদকে ফোন করেছিলো জুনি...বেশ কিছুটা কথা কাটাকাটির পর প্রমোদ বলে," ইতনে মে সুইসাইড আ্যটেম্পট কিয়া। মগর মেরে কো তো মালুম হ্যায় ও কিসিকে সাথ লিভ ইন মে..."
"ছিঃ প্রমোদ যে মেয়েটা তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসতো তার সম্বন্ধে এই সব বলতে পারলে?"
" তো তুম্ বোলো এটা সত্যি কিনা? আবার আমি যাচ্ছিলাম ওখানে। ছোড়ো যো হুয়া আচ্ছা হুয়া।"
অবাক হয়ে যায় জুনি প্রমোদকে কিছুতেই বিশ্বাস করানো গেলোনা ওরা শুধুই স্বল্প পরিচিত দুটো মানুষ শুধুই বন্ধু।
মুনিয়াকে কিছু বলতে পারেনি জুনি,নিজে অপরাধবোধে ভুগেছে। প্ল্যানটা ওরই ছিলো ভেবেছিলো ছটা মাস বা তার আগেই ছেলেটা চলে যাবে।বিদেশে বিপদে পড়েছে বেচারা।
রাণা কম কথা বললেও এই কথাটা ঠিক বললো।আর মুনিয়া শুনলেও হয়ত রাজি হবেনা তবে আন্টিকে ও বলেছিলো আন্টির ইচ্ছে আছে মানে আপত্তি নেই তবে মুনিয়া চাইলেই হবে।তাই মুনিয়াকে বলার আগে ও রাণাকে বলতে চেয়েছিলো।
যাক দেখা যাক কি হয়..
****************
রাণাকে যা বলেছিলো তা মুনিয়াকে বলেছিলো জুনি। কারণ রাণা বলেছে মুনিয়া থাকতে চাইলে ওকে বলতে হবে।
গালাগাল খেয়েছে মুনিয়ার কাছেও..." এই শোন আমি কিছুতেই রাণাকে বলবোনা ওর বাড়িতে থাকবো।
আমার কোন সেল্ফ রেস্পেক্ট নেই!
শোন যদি সত্যিই এই এত বড় শহরে কেউ থাকতে না দেয়, তোর আর তন্ময়দার মাঝখানে শুয়ে যাবো আমি। "
বন্ধুকে আবার সেই ক্ষেপু ফর্মে দেখে হেসে গড়িয়ে পড়ে জুনি। "এই রে তন্ময় তো তাহলে তোর প্রেমেই ফেঁসে যাবে।"
" সাবধান জুনি তন্ময়দা আমার অয়ান এন্ড অনলি দাদা।"
***************
একটা লেডিস হস্টেলে আপাতত উঠে যেতে হয়েছে মুনিয়াকে। ওর সাজানো সংসারের অনেক জিনিসই বাক্সবন্দী স্বপ্নের মত জুনির ফ্ল্যাটে রয়ে গেছে।
যদি কোনদিন হারানো ভালোবাসা ভুলে আবার নতুন বাসা বাঁধার ভরসা পায় তখন আবার খোলা হবে স্বপ্নের বাক্সগুলো।
আপাততঃ ডাক্তারেরও ইচ্ছে মুনিয়া যেন একা না থাকে,তার থেকে অনেকের মাঝে থাকলে ও ভালো থাকবে হয়তো বা ভুলেও থাকবে।
রাণাকে তবুও কথা শোনায় জুনি," ছেলেরা যে এত হিংসুটে হয় জানিনা বাপু। যাস এবার কফি খেতে ওর হস্টেলে,অনেক মেয়ে দেখতে পাবি তোর একটা হিল্লে হয়ে যাবে।"
হাসে রাণা.." দরকার নেই আমার কফি খাবার। নিজেই বেশ কফি বানাই। তোরা এসে কফি খেয়ে যাস এখানে মাঝে মাঝে।"
"আর চিরকুট?"
এবার একটু লজ্জা পায় রাণা.." ওটা কিন্তু বেশ লাগে।"
" বেশ নির্লজ্জ হয়েছিস তো,সাহসও বেড়েছে। দাঁড়া কাকিমাকে বলতে হবে এবার বিয়ে দাও ছেলের। আর বিদেশে বিভূয়ে ফেলে রেখোনা এভাবে।"
" তার সাথে এটাও বলিস এবার সত্যিই লিভ টুগেদারে নয় লিভ ইনে থাকবে।"
"খুব না...তুই বলিস মাকে।তাহলে সানাইটা তাড়াতাড়ি বাজবে।"
***************
অনেকদিন মুনিয়ার সাথে দেখা হয়না আসলে ওর হস্টেলটা একটু অন্যপথে।হয়ত ইচ্ছে করেই এই পথে পা দেবেনা বলে নিয়েছে।
কদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছে,রাতে বৃষ্টি ভালো লাগে রাণার তবে সেদিন অফিস ফেরত বৃষ্টি নামলো কিছু করার নেই গায়ে রেনকোট দিয়ে বাইকে ওঠে রাণা কিছুটা যাওয়ার পর মনে হলো একবার একটু মার্কেট ঘুরে যেতে হবে। কয়েকটা জিনিস তাড়াতাড়ি কিনে বাইক নিয়ে এগোতে গিয়েই দেখে হাত নেড়ে একটা মেয়ে থামতে বলছে। আজকালকার মেয়েগুলোও হয়েছে শেষে বাইকে লিফ্ট চাইছে। কি করবে স্পীড বাড়িয়ে চলে যাবে,কিন্তু হবেনা একদম প্রায় সামনেই মেয়েটা,ব্রেক কষতে গিয়ে এবার মনটা আর রাগ রাগ হলোনা বরং খুশিতে ভরলো।
" আরে তুই! সত্যিই আমি খেয়াল করিনি। কিন্তু আমাকে চিনলি কি করে?
" আমি তো আর তোর মত লক্ষ্মণ দেওর নই যে শুধুই বৌদি সীতার পা ছাড়া আর কিছু দেখিনি এতদিন?"
" তুই তো বলেছিলি না দেখতে।"
" অনেক হয়েছে এবার চল।"
তখন বৃষ্টি থেমে গেছে তবে প্রকৃতিতে তখনো বৃষ্টির ভেজা ভাব।শুক্রবার তাই অনেকেই বাড়ির পথে একটু বাজার হাতে খুশি মনে সাপ্তাহিক ছুটি কাটানোর আনন্দে।
অনেকদিন বাদে ওর পেছনে মুনিয়া বসে ওর হাতে আর জামায় ভিজে ভিজে ছোঁওয়া। মুনিয়ার একটা হাত রাণার পিঠে রাখা,তবে আজ আর সেই গন্ধটা আসছেনা ওর শরীর থেকে,একটা একটু উগ্ৰ গন্ধ শরীরে। হয়ত বেরোনোর আগেই স্প্রে করে এসেছে।
ও বকবক করছে সেই আগের মত.." ভাগ্যিস দেখলাম, কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি। যাক টাকাটা বেঁচে গেলো আজ। ঐ দিকে আমার হস্টেলের রাস্তা।"
হঠাৎ সাইড করে বাইক থামায় রাণা," আমার খুব খিদে পেয়েছে। চল কিছু খাই।"
" এখন? না না আরেকদিন হবে। ইশ্ এই ভেজা ভেজা সব নিয়ে ঢুকবো রেস্টুরেন্টে। না না তা ভালো লাগেনা। একদিন সেজেগুজে যাবো।"
তাহলে চল আমার ফ্ল্যাটে,কফি খেয়ে যাবি।"
Comments
Post a Comment