মুনিয়াকে দেখে ভরা জোয়ারে খাবি খাওয়া পরাণটাকে তখনকার মতো গামছা দিয়ে মানে রীতিমতো শাসন করে শক্ত করে বেঁধে রাখতে হলো। একদম কম্যান্ডোর মত বস্ কে কোনদিকে না তাকিয়ে ইয়েস স্যার,সারটেইনলি স্যার,নো প্রবলেম স্যার বলে যেতে হলো।যেন মুনিয়াকে ও জম্মেও দেখেনি কোনদিন আজই প্রথম ছোটি সি মোলাকাত ওদের। রাণা একদম শান্ত ভদ্র ছেলে তাই একদম মুনিয়ার দিকে না তাকিয়ে সব কথা বলে গেলো।
মুনিয়া অত্যন্ত শান্ত কিন্তু একটি অত্যন্ত বড় ল্যাজ নিয়ে বাধ্য মেয়ের মত সব শুনছে এবং ঘাড় নাড়ছে। বস একদম বিগলিত চিত্ত মুনিয়া সুন্দরীকে দেখে আর হবেইনা বা কেন কত মুনি ঋষির ধ্যান ভঙ্গ করেছে সুন্দরী অপ্সরাগণ আর বস্ তো সাধারণ মানুষ।
ভেতরে একটা খুশির নদী তিরতির করে বয়ে গেলেও মাথাটা একটু রাগে চিরচির করতে শুরু করলো রাণার। এরা দুই বন্ধু আস্ত দুটো বদমাশ এরা সব জেনেশুনে রাণার ধৈর্য্য মেপেছে আর ওকে মুরগী বানিয়ে মজা নিয়েছে। হচ্ছে ওদের ব্যবস্থা।
যাক তখনকার মতো খুবই ভদ্রভাবে মুনিয়াকে সাহায্য করার জন্য উদ্যত হয়।
বাইরে এসেই চাপা গলায় বলে.." এটা কি হলো?"
রহস্যময়ী হাসিতে মুচকি হেসে মুনিয়া বলে," কোনটা?"
" এখানে হঠাৎই আসাটা।"
" হঠাৎই হয়ে গেলো জানিস।
কেন তুই খুশি হসনি?"
রাণা এই কথার উত্তরে কি বলবে বুঝতে পারেনা ঠিক..." না ঠিক আছে।"
মুনিয়া আর কথা বাড়ায়না,এটা অফিস তাই শান্ত হয়ে সব কাজ একটু করে বুঝে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
অনেকদিন ধরেই এখানে ওখানে ইন্টারভিউ দিয়েছে আসলে আগের অফিসটাতে স্যালারি প্রবলেম, ভীষণ কম টাকা কাজ বেশি। তাই চেষ্টা করছিলো বেটার কিছুর ভেবেই নিয়েছিলো এখানে কিছু ভালো না পেলে সোজা হাঁটা দেবে বাড়িতে আবার পড়াশোনা শুরু করবে। হঠাৎই জুনির তৎপরতায় আর অম্লানদার চেষ্টায় এখানে ইন্টারভিউ দিয়ে দেখলো সবাই বেশ খুশি ওকে দেখে বুঝলো হয়ত একটা চান্স আছে।
ও বলতে চেয়েছিলো রাণাকে।প্রথমে ঠিক হয়েছিলো জুনির বাড়িতে রাণাকে সব বলে দেওয়া হবে।
তবে জুনিটা সত্যি পাজি বললো," এখন কিছু বলিসনা তোর তো জয়েন করতে দেরি আছে,এর মধ্যে বাড়ি যাবি দেখা যাক কি রিআ্যকশন দেয় রোমিও। "
একটু লজ্জা পেলেও হেসেছিলো মুনিয়া।আসলে দুটোই তো দুষ্টুর পোকা সেই ছোট্ট থেকেই, তাই বুদ্ধি করে বোকা বানানো রাণাকে। তবে সত্যিই ওর চলে যাবার দিন রাণাকে দেখে খুব খারাপ লেগেছিলো ভেবেছিলো বলে দেবে...." সবটা মিছেমিছি আবার আসবো ফিরে।"
কিন্তু হয়নি জুনির চাপে,ও বলেছিলো," শোন একদম গলে যাবিনা বলে দিচ্ছি। ও তোকে থাকতে দেয়নি আমি শোধ তুলেই ছাড়বো।"
" ইশ্ ওকে এভাবে কষ্ট দিবি? মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে বেচারার।"
হাসিতে লুটিয়ে পড়েছিলো জুনি..." শোন নিজেকে একটু আগলে রাখতে শেখ। চোখের ভাষা দেখেই গলে যাসনা মুখে আর কাজে করতে দে।"
হয়ত জুনির কথাটাই সত্যি তাই ব্যাপারটা একদম চেপে গিয়েছিলো মুনিয়া। ঘরপোড়া গরু তো তাই সিঁদুরে মেঘ দেখলে হয় তো ভয় করে।
*****************
অফিসে গম্ভীর রাণা মুনিয়া মন দিয়েছে কাজে।সবটাই নতুন তাই মুনিয়াকেও মন দিতে হয়,রাণা অনেকটাই সাহায্য করেছে বুঝতে। একটা সময় কাজ করতে করতে হঠাৎই দেখে রাণা নেই। ও একটা কাজ বোঝার জন্য জিজ্ঞেস করে জানতে পারে রাণা চলে গেছে। ঘড়িটা দেখে মুনিয়া ছুটির সময় হয়ে আসছে হয়ত কোন কাজ আছে তাই আগেই চলে গেছে। একটু চাপ লাগে মুনিয়ার ও ভেবেছিলো রাণা হয়ত ওয়েট করবে ওর জন্য নিশ্চয় খুব রাগ হয়েছে রাণার। মিচকে পাজি একটা।
ছুটি হতেই জুনিকে ফোন করে...
ওদিক থেকে আওয়াজ দেয় জুনি.." আজ নাটকটা কেমন জমলো? তুই কাজ করছিস তাই আমি আর কল করিনি।"
প্রথমেই খিলখিল করে হাসে মুনিয়া.." প্রথম মুখটা যা হয়েছিলো বলার নয়। তারপর সামলে নিয়েছে। তবে খুব রাগ হয়েছে জানিস চলে গেছে আগেই।"
" বয়েই গেছে, তুই পাঁচনম্বর লিফ্টের কাছে ওয়েট করিস আমি একটু গুছিয়েই আসছি। রাত্রে জমিয়ে সব গল্প হবে।" বলে জুনি
মুনিয়া একটু অপেক্ষা করছিলো জুনিকে দেখে হেসে ফেলে।
" কনগ্ৰ্যাচুলেশন ডিয়ার ফর দ্য ফার্স্ট ডে ইন দ্য অফিস।"
মুনিয়া বলে,"থ্যাঙ্কস তোকে আর তোর বরকে।তোদের জন্যেই তো সবটা হলো।"
" চল যাই,কফি খাবি?"মুনিয়াকে বলতেই দেখে অবাক হয়ে যায় জুনি।
মুনিয়াকে খোঁচা মারে...
রাণা দাঁড়িয়ে আছে,যেন ওদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। ওদের দেখেই বলে..." ঠিক জানি একসঙ্গে এদিক দিয়ে নামবে দুটো। আজকে একদম মাথায় মাথায় ঠুকে দেবো।"
" দেখেছিস মুনিয়া রাণা মোটেই শান্ত নয়,যথেষ্ট মাথাগরম ছেলে দরকারে মারধোর করতে পারে।"
" বন্ধু হয়ে এটা করতে পারলি জুনি,এতো প্রায় এপ্রিলফুলের অকালবোধন।আমার হৃদয়কে কত ক্ষতিগ্রস্ত করেছো সেটা কি জানো? খুব খারাপ তোমরা। আমার চিকিৎসার সব দায় নিতে হবে জুনিকে। কফি খাওয়া ট্রিট দে আরো ক্ষতিপূরণ দিবি।"এক নিঃশ্বাসে বলে যায় রাণা অবাক হয়ে দেখে মুনিয়া।রাণার আবেগ যেন আজ ঝাঁকানো কোকের বোতলের মত উপচে পড়েছে। কি সব বলছে ছেলেটা!
"বন্ধু বলেই তো এক সেকশনে মুনিয়ার ব্যবস্থা করে আবার ফিরিয়ে আনলাম। মুনিয়া এক কাজ কর তুই আমাদের এখানে চলে আয়। আমি বলবো দরকার হলে।"
ঢোক গেলে রাণা," আমি তাই বলেছি নাকি? খুব উপকার করেছিস আমার চল আমি খাওয়াবো কফি আজ খেতে খেতে কথা হবে।"
জুনি বলে," পথে এসো বাবা।"
***************
বেশ কিছুটা সময় কেটে যায় কথায় কথায়...রাণার মনে জমা ঝুরো ঝুরো কালো মেঘগুলো একদম উড়ে গেছে রোদের ঠিকানায়।মুখটা বোধহয় ঝলমলে সবারই।
মুনিয়া আছে কোথায় এখন? এটাই তো এরপরের প্রশ্ন রাণার মনে।সত্যিই তো ওর একটা কোথাও থাকা দরকার। একটু কিন্তু করে বলে ফেলে রাণা.." আছিস কোথায় মানে ঠিক হয়েছে কিছু?"
" আমি খুঁজছি,তুইও খুঁজতে পারিস যদি পারিস। আপাততঃ আমার গোয়ালেই আছে।"
" বুঝলাম দুষ্টু গরুর গোয়াল।"
" মুনিয়া দেখেছিস তো উপকার করতে নেই আমে দুধে বেশ মিশে যায় আঁটি গড়াগড়ি খায়।"
রাণার মনে হয় বাড়ি থেকে ফিরে মুনিয়া একটু বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে। একটু কম কথা বলছে।
মুনিয়া বলে..." হ্যাঁ আমিও দেখেছি কয়েকটা দিন সাতেকের মধ্যেই ফাইনাল হয়ে যাবে।ততদিন জুনিকে একটু জ্বালাবো।"
****************
রাণা আর বলতে পারেনা ওর ওখানে থাকার কথা কারণ আবেগটা সামলানো হয়ত এবার কঠিন হবে। আরো চাপ হয়ে যাবে এবার সত্যিই মুনিয়া চলে গেলে।
মাঝে কেটে গেছে কয়েকটা দিন,দেখা প্রতিদিন হয় তবে কথা মাঝে মাঝে হয়। হঠাৎই রবিবার জুনি ফোন করে..." চলে আয়,ঠিকানা দিলাম। "
অবাক হয়ে যায় রাণা আরে এটা তো ওর বাড়ির থেকে কাছেই মানে পথেই প্রায়।
" এটা কোথায়? কেন যাবো? হোটেলে নাকি?"
" এলেই দেখতে পাবি।"
এদের হঠাৎই কি মাথায় পোকা নড়ে কে জানে? নিজেকে একটু গুছিয়ে রাণা বাইক নিয়ে বেরোয় দেখে ওরা রাস্তাতেই ছিলো। ওকে নিয়ে যায় যেখানে সেটা নাকি মুনিয়ার নতুন ঠিকানা হতে চলেছে।
" কি রে কেমন? চলবে তো? আমরা আগেই দেখেছি। ভালো বন্ধু ক্ষতিপূরণ দিয়েই ক্ষতি করে। মুনিয়া পাখির ছোটবাসাটা ভালোই হয়েছে তাইনা? তোর যাতায়াতের পথেই হলো। আমার বাড়ির কাছে পাইনি তাই অগত্যা,দেখলাম মুনিয়ার এটাই পছন্দ সামনে পার্ক আছে,সব কিছুই কাছে।" ঠোঁটে হাসি মাখিয়ে একটু ঠোঁট ওল্টায় জুনি।
*****************
মুনিয়ার ছোট্ট ভালোবাসা সবার উদ্যোগে সেজে ওঠে সবুজে সবুজ হয়ে।
সবুজ নাকি মানুষের অবুঝ মনকে ভালো রাখে।রাণার দেওয়া ছোট ছোট ইনডোর প্ল্যান্ট স্বপ্ন মেলেছে ওর ফ্ল্যাটে র চারধারে। বারান্দাতে ফুটছে ছোটছোট নাইন ও ক্লোক,আর ফুল ফুটে ছোট্ট বারান্দা ভালোলাগায় ভরে ওঠার পর পরই নিচে হাত নাড়ে রাণা।
আজকাল একসাথে একপথেই যাওয়া আর আসা।
মাকে খবরটা না দিয়ে পারেনি রাণা.." জানো মুনিয়া এখন আমাদের অফিসেই এসেছে।"
মায়ের গলাটা একটু নিরুৎসাহিত শোনায় রাণার..." কোথায় আছে এখন?"
একটু যেন সন্দেহের ছোঁয়া কথাটায়। তাই রাণা বলে," ওর নিজের ফ্ল্যাটেই আছে।"
মা অন্য কথায় যায় এবার.." শোন পুজোর টিকিট কেটে নিস আগে থেকে,পারলে একটা দুটো দিন বেশি হাতে নিয়ে আসিস। এবার কয়েকটা মেয়ের খবর পেয়েছি। ভাবছি তুই এলে দেখবো। আর কতদিন, এবার তো ভাবতে হবে কিছু।"
মায়ের কথাটা শুনে কোনরকমে হাই হ্যালো করে ফোনটা কেটে দেয় রাণা।
ডল আর ওর বাবা একসাথে বলে," ফোনটা কেটে দিলো এত তাড়াতাড়ি।শুনলে মুনিয়া এক অফিসে কি ব্যাপার বল তো?"
রাণার মা হাসে.." এত বড় ছেলে বলতে পারেনা নিজের মনের কথা। আর মুনিয়ার মত না থাকলে বলবেই বা কি? নাহ্ এবার একটু লাগতে হবে আমাদের, ঐ সব লিভ ইন আমার একদম পছন্দ নয়।"
*****************
অদ্ভুতভাবে দুজনের দুজনকে ভালো লাগে খুব কাছের বন্ধু মনে হয়।মুনিয়ার শরীর খারাপ হলে রাণার চিন্তা হয়।বেশিরভাগ রবিবার মুনিয়া লাঞ্চবক্স ঝুলিয়ে দেয় বারান্দা থেকে কারণ রাণা খুব একটা একা আসেনা ওর ফ্ল্যাটে।তাই কিছু দরকার হলে কলকাতার ফ্ল্যাটের আদলে দড়ি আর চিরকুট ভরসা। তবুও মুখ ফুটে ভালোবাসি কথাটা কেন যেন বলতে পারেনি কেউ। হয়ত দুজনেই ভয় পায় বন্ধুত্বের মিঠে পাকটা যেন তিতকুটে না হয়ে যায়। যদি মুনিয়া না করে? আর মুনিয়া ভাবে ওর অতীতের কথা..হয়ত রাণা ভাববে মুনিয়া ওকে ব্যবহার করছে।
*****************
দেখতে দেখতে আবার আসছে একটা পুজো যথারীতি ডলের বায়না তবে এবার একসাথে গেছে জুনি আর মুনিয়া দুজনে। জুনিও যাচ্ছে এবার কলকাতা, শুধু মুনিয়ার যাওয়াটাই ঠিক হচ্ছেনা। নতুন চাকরি যদি ম্যানেজ করতে পারে তিন চারদিন তাহলে নাহয় যাবে ওদিকে ওর মায়েরও মন খারাপ।
" আর কত কিনবি তোরা? এবার চল ফিরি। আরে আমাদের কলকাতার দোকানকেও কিছু পয়সা দে।"
কেনাকাটা করে খেয়ে অম্লানদার জন্য পার্সেল নিয়ে ফেরা। তবে কলকাতা যাওয়াটা এবার একদম আলাদা আলাদা। প্রথমে যাচ্ছে জুনি,তারপর রাণা সব শেষে হয়ত মুনিয়া মানে যেতেও পারে ঠিক নেই।
************
কেন যেন মনটা উদাস হয়ে যায় মুনিয়ার আজকাল রাণার সাথে বেশ কিছুটা সময় কাটানো ভালোলাগা হয়ে গেছে হয়তো বা নিঃসঙ্গতার আশ্রয়ও। রাণার দেওয়া ক্যাডবেরি অভ্যেস হয়ে গেছে আর ক্যাফের সামনে রাণার অপেক্ষা করাটা দাবী হয়ে গেছে।
মুনিয়ার ভালোবাসার জিনিসে সাজানো ছোট বাসায় বসে কখনো মন ডুবে যায় রাণার সাথে প্রথম আলাপের পর আজ ওর কাঁধে নির্ভরতায় হাত রাখার স্মৃতিতে।
নিজেকে মাঝেমধ্যে জিজ্ঞেস করে মুনিয়া রাণা ওর শুধুই বন্ধু না আরো কিছু?
সপ্তাহের মাঝে প্রতিদিনের মত মুনিয়া দাঁড়িয়ে বারান্দায়... ফুলেরা মাথা তুলেছে হাসিমুখে রাণার আসার সময় হয়ে আসছে হয়ত এসে পড়বে একটু বাদেই।
বেশ দেরি হওয়াতে মুনিয়াই ফোন করে..দুবার ফোন করার পর সত্যিই চিন্তা লাগে। তিনবারের বার ধরে রাণা...জড়ানো গলায় বলে," একদম বুঝতে পারিনি রে এতো বেলা হয়ে গেছে। আমার শরীরটা আজ ভালো নেই। তুই আজ একটা ক্যাবে করে চলে যা প্লিজ।"
মনটা খুব অস্থির হয় মুনিয়ার যখন শোনে ওর জ্বর এসেছে হঠাৎই। একটা দুটো কথা বলে রাণা ফোনটা ছেড়ে দেয় বুঝতে পারে ও পারছেনা কথা বলতে। অথচ এখন ওর কাছে যাবার অবস্থাও নেই।
অফিসে মন বসেনা মুনিয়ার, ইতস্ততঃ করেও ফোন করেছে আবার বুঝতে পারে শরীরটা ভালো না একদম ওর। এদিকে ডলও কাঁদো কাঁদো গলায় বলেছে দাদাকে একটু দেখতে।
কি করবে বুঝতে পারেনা মুনিয়া। জুনি অম্লানদা সবাই ব্যস্ত হয় রাণাকে নিয়ে।
**************
প্রায় পাঁচদিন ভুগে মোটামুটি সুস্থ এখন রাণা। পালা করে ওরাই এই কদিন সামলালো সবটা। মুনিয়াকে থাকতে হয়েছে কখনো।
না থেকে উপায় ছিলোনা তবে মন কেমনের এক ঝোড়ো রাতে রাণা যখন ছটফট করছে মুনিয়া বলে ফেলেছে... তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যা রাণা আমার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা,চারদিকটা ভীষণ ফাঁকা। বিশ্বাস কর সত্যিই তোকে ভালোবেসে ফেলেছি।
শরীর খারাপের মাঝেও কানের সাথে সাথে মনকে ছুঁয়েছে কথাটা রাণার। আর মুনিয়া ভেবেছে হয়ত রাণা খেয়ালই করেনি শরীর খারাপের মাঝে।
আবার রাণা ফিরেছে পুরোনো ছন্দে মুনিয়া নাইন ও ক্লক ফোটার সাথে সাথে বারান্দায় দাঁড়ায় ওরই প্রতীক্ষায়।
উইক এন্ডে অফিস ফেরত রেস্টোরেন্টের নিভু নিভু আলোতে রাণা মুনিয়াকে বলে," আরেকবার বলবি?"
" কি বলবো?"
" সেদিন জ্বরের ঘোরে যা শুনেছি।"
" জানিনা কি বলেছি,তখন মাথা কাজ করছিলোনা।" বলে মুনিয়া
" তাইতো বলছি আরেকবার বল,ভীষণ শুনতে ইচ্ছে করছে।"
মুনিয়া হেসে ওঠে," আমার বলা হয়ে গেছে,তুই ভালো করে শুনিসনি আমি কি করবো?এবার পহেলে আপ হোক।"
একটা দুষ্টুমির হাসি খেলে যায় রাণার মুখে...." সব সময় ছেলেরাই আগে আই লাভ ইউ বলবে আর প্রপোজ করবে কেন শুনি?"
মিহি সুরে মুনিয়া বলে..." সত্যিই তোকে ভালোবেসে ফেলেছি।"
শেষটা আগামীকাল:-
"ইশ্ ভালোবাসার ট্রেনটা অনেক পাহাড়ে পর্বত ডিঙিয়ে শেষে এসে পৌঁছলো আবেগের রঙ মেখে প্রেমের স্টেশনে।" রাণা বলে হাসতে হাসতে।
" তা সেই প্রেমের স্টেশনে বসে অপেক্ষা করে করে কি বাড়ি ফিরে যাবি,না ভালোবাসার ট্রেনে উঠবি? বেশি দেরি করলে কিন্তু মিস্ হয়ে যাবে ট্রেন।"বলে মুনিয়া
রাণা বলে, " অবভিয়াসলি উঠবো,দরকার হলে দৌড়ে উঠবো আমি তো সেই পাহাড় থেকেই ছুটছি ভালোবাসার ট্রেনের পেছনে ধরতে পারাই মুশকিল।"
" ও তাই প্রেমের স্টেশনে খোলা ছাদের তলায় বসে বসে ওয়েট করে জ্বর হলো?" মুনিয়া হাসতে হাসতে বলে।
" ভাগ্যিস জ্বরটা হয়েছিল, তাইতো বুঝলাম অনেক কিছু।"
এবার একটু লজ্জা পায় মুনিয়া, রাণার লজ্জার বাঁধ ভেঙে গেছে যা খুশি বলে যাচ্ছে।
রাতে ফিরে মুনিয়ার ঘুম আসেনা সেদিন, কত কথা মনে হয়।হয়ত যা ভুলতে চায় সেটাও পড়ে মনে একসময়। মুনিয়ার জীবনে দ্বিতীয় ভালোবাসা এসেছে যা হয়ত নিঃস্ব করে দেবে ওকে পরিণতি না পেলে।
" ঘুমোস নি এখনো?" মেসেজ করে রাণা।
" নাহ ঘুম আসছেনা,অস্থির লাগছে রে।"
সত্যিই আজ মুনিয়ার মনে অস্থিরতা তবুও কেমন যেন অদ্ভুত একটা ভালোলাগা আর নির্ভরতা জড়িয়ে রাখে ওকে। নিশ্চয় রাণার ছোট ছোট অনুভূতিগুলো ছুঁয়ে থাকবে ওকে। অনেকগুলো দিন রাণাকে দেখছে ছেলেটা ভালো। ওরই মত হয়ত আহত মন নিয়ে ভালোবাসার অপেক্ষায় ছিলো তাই ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজলো অনেকদিন পর দুটো রুক্ষ মন যাদের একসময় ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে গেছে।
ঘুমে চোখ জুড়িয়ে আসে মুনিয়ার,চোখ বুজে ফেলে একসময়।রাণার মনে গুনগুন করে মুনিয়ার মিঠে বোল সত্যিই তোকে ভালোবেসে ফেলেছি। রাণা আরেকবার মনে মনে ছুঁয়ে দেখলো কথাটা আবেশে।
বুদ্ধমূর্তির মুখে ছোট্ট আলোটা পড়েছে রাত্রেও উজ্জ্বল তার জ্যোতি। রাণা সেলফোনে সেই ঘাড়ে হাত দিয়ে ট্রেনে তোলা ছবিটা দেখে।
বাইরে বৃষ্টি নেমেছে,বৃষ্টির ঝিরিঝিরি আওয়াজে ঘুম আসে। এই উইকএন্ডটা ওরা ওদের মতো এনজয় করবে।
জুনিকে সবটা না বলে পারেনা রাণা। কাল ঘুরে এসেই ওকে ফোন করেছিলো।
জুনি হায়নার হাসি হাসে আবার...." মুঝে তো পহেলেই পাতা থা ইয়ার,এ কাহানী শুরু হুয়া বহত পহেলে সে ছুপ ছুপ কর।"
" ধুস্ তোর ভুলভাল হিন্দিতে ফিল্মি ডায়ালগ ছাড়। আমি অত কথা বলতে পারিনা..উই আর ইন লাভ ব্যাস্।" বলে রাণা।
" তাই তো বলছি,তবে এটার শুরু সেই দুগ্গাপুজোতে ধুনুচি নাচে তাইনা? তারপর মুনিয়ার জন্য ফুল পাঠানো।হাত ধরে হাঁটা,ট্রেনে জড়িয়ে সেল্ফি তোলা,মুনিয়ার চলে যাওয়ার সময় কাঁদো কাঁদো মুখ মানে চারে দশে চল্লিশ হয়ে গেছে।এরপরই চারশো ভোল্ট জ্বলবে মানে প্রেমকি বাত্তি।" জুনি বকবক করে চলেছে।
লজ্জা পায় রাণা," ফোনটা রাখ এবার,কিছু বকতে পারিস!"
" হম্ এবার প্রেমটা করে নে চুটিয়ে দারুণ ওয়েদার এখন চল আবার ঘুরে আসি কোথাও থেকে।"
ঘুরে আসার কথাতেই মনটা উড়ে যায় রাণার,এবার তো ভালোবাসা ভাগ হয়ে গেছে দুজনের মাঝে তাই ভালোলাগার অনুভূতি ভাগ করে নেবে মুনিয়ার সাথে ভাসবে নীল আকাশের পেঁজা তুলোর সাথে।বাতাসে যে পুজোর গন্ধ প্রায় ভেসে ভেসে আসতে শুরু করেছে।
তবে দূরে কোথাও যাওয়া হলোনা ওরা ঠিক করলো একদিন সিটি ট্যুরেই যাবে।
গাড়ি অম্লানদাই ঠিক করেছে, সবচেয়ে আগে রাণাকেই উঠতে হয়,ও মুনিয়াকে নিয়ে তারপর জুনিদের নেবে। ওর নাকি সাজতে সময় লাগবে।
আজকাল মুনিয়া রাণাকে বলে দেয় কি রঙের শার্ট পরবে। হোয়াইট টিশার্টে লালের ছোঁয়া রাণার তবে মুনিয়াকে দেখে মুগ্ধ হয় রাণা।থোকা থোকা নাইন ও ক্লক বারান্দা থেকে উঁকি মারছে আর তার মাঝেই দাঁড়িয়ে মুনিয়া, ওকে দেখে হাত নেড়ে নিচে নেমে আসে। লাল সাদা সিফন পরেছে মুনিয়া, তারসাথে গলায় মুক্তোর থোকা ছড়া আর কানে হাল্কা ড্রপস একহাত একটা মুক্তোর ব্রেসলেট।অনেকদিন পর মুনিয়াকে শাড়িতে দেখলো।
রাণার চোখে মুগ্ধতার ছোঁয়া মুনিয়ার কাজল কালো চোখে ঢেউ খেলিয়ে গেলো। জুনিরা বেশ দূরে থাকে তাই বেশ কিছুটা পথ অন্তরঙ্গ কথায় আর আবেশে কেটে গেলো। সত্যিই ভীষণ সুন্দর লাগছে মুনিয়াকে আজ একদম প্রেমের ফাগুয়ার রঙে রাঙা ও।কথা বলতে বলতে হেসে গড়াচ্ছে মুনিয়া ওর গালে রক্তিম আভা।
হই হই করে উঠলো জুনি মুনিয়াকে দেখে..." ইশ্ আমার রাঙা বন্ধু রাঙা শাড়িতে। উরি বাবা একদম ম্যাচিং দুজনে।"
" তুই তো বললি ম্যাচিং পরতে।তোরা নীল আমরা লাল।" বলে মুনিয়া।
" দেখেছো তো অম্লান এবার আমরা তোরা হয়ে গেছে।" জুনি বলে
অম্লান হেসে বলে," আমি খুব নিশ্চিন্ত হলাম যাক বাবা। আমি তো ভেবেছিলাম কোনদিন আমাকে ডিভোর্স দিয়ে হয়ত মুনিয়াকে বিয়ে করে নেবে।"
ঠোঁট ওল্টায় জুনি," ভেবেছিলাম তো তাই মাঝের থেকে রাণাটা এসে এমন কান্নাকাটি করে জ্বরটর বানিয়ে বসলো দেখলাম থাক বাবা।মানে মাইন্ড চেঞ্জ করলাম।এখন তো দেখছি ওটা প্রেম ঘটিত জ্বর ছিলো।"
" গাট্টা খাবি জুনি এবার,কি সব বকে যাচ্ছে।ইশ্ একদম প্রেস্টিজ ঝুলে যাচ্ছে।" বলে রাণা
" আচ্ছা সত্যিই জ্বর এসেছিলো না বগলে পেঁয়াজ রেখেছিলি জ্বর আনতে?"
" ভালো হচ্ছেনা জুনি। ইশ্ কি সব বলছে!" বলে রাণা।
ওদের কথা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়ে অম্লান আর মুনিয়া।
ওদের হাসি গল্পে ছুটে চলে গাড়ি নরম বাতাস আর সুন্দর আবহাওয়ার মধ্যে।
" যাক তোদের সাথে সাথে আমাদেরও প্রেমের স্পা হচ্ছে।"
" মানে?" রাণা অবাক হয়ে যায়।
" আরে প্রেম স্পা মানে নতুন করে ঝাড়পোছ আরে একবার আবার বেশ উড়ু উড়ু মন।"
প্রেমের চোখে আবার একবার নতুন করে দেখা শহরটাকে এর আগে তেমন ভালো করে জায়গাগুলো দেখা হয়নি রাণার। আজকের দেখা আর ছবি তোলা মনে রয়ে যাবে অনেকদিন। মুনিয়া আজ অনেক স্বচ্ছন্দ্যে হাত রাখে রাণার হাতে।
লালবাগে, টিপু সুলতানের গ্ৰীষ্মাবাসে অথবা মন্দিরে যেতে যেতে হাত বাড়ায় রাণা মুনিয়াকে ধরতে। কখনো ওর লম্বাচুলের রাশি ছুঁয়ে যায় রাণাকে আবার কখনো ওর হাসিতে হারিয়ে যায় রাণা। আর রাণার সুন্দর মনটা ছুঁয়ে যায় মুনিয়াকে। বুঝতে পারে নির্ভর করা যায় এই ছেলেটার ওপর,ওর এই ভালো মনটা আগলে রাখবে ওকে আদরে বৈশাখে বা ভরা ভাদরে।
তার মাঝেই ফুলের মালা কেনে জুনি মুনিয়ার আর ওর চুল সেজে উঠেছে মালায়। মুহূর্তেরা সন্ধি করে বন্দি হলো মুঠোফোনে। রাতে একদম ডিনার করে বাড়ি ফিরে আসা। ওদের সবাইকে নামিয়ে দিয়ে রাণা ফেরে বাড়িতে তবে মুনিয়াকে নামানোর সময় ওর শরীরে মিষ্টি ছোঁয়া ছুঁয়ে গেলো রাণাকে। সেদিনের গুডনাইট একটা ওয়ার্ম এন্ড সুইট ভালোবাসার বন্ধনে।
*******************
দেখতে দেখতে পুজোতে যাবার সময় হয়ে গেলো। বাড়ি থেকে বারবার জানতে চাইছে মা রাণা কবে আসছে,রাণার যেতে ইচ্ছে করছেনা মুনিয়াকে একলা রেখে। জুনি তো মহালয়ার দিনই যাচ্ছে।
" তুই চলে একদম সোজা যাবি বাড়িতে, বাড়ির পুজো সবাই অপেক্ষা করছে। অনেক দিন যাসনি।" মুনিয়া বলে।
" আমি আগে যাবোনা,তোর সাথেই যাবো। তুই এখানে একা একা থাকবি। ভালো লাগছেনা।"
" আমি তাহলে কথাই বলবোনা,আমি আসবো ঠিক। পুজোতে একদিন ঠিক দেখা হবে আমাদের। একদম প্রমিস।"
মহালয়ার দিন মুনিয়ার সাথে একসাথে মহালয়া শোনে ফোনে,মনে হয় দুজনেরই মায়ের কথা আর ছোটবেলার কথা। ডুব দেয় মনগুলো চুপ করে ছেলেবেলার আদরে।
দেখতে দেখতে রাণার যাবার দিন চলে আসে,মুনিয়া একদিন এসে পরিপাটি গুছিয়ে দিয়ে যায়।
" এতো কাজের তুই?" রাণা বলে।
" কেন কি ভেবেছিলি শুনি?"মুনিয়া বলে।
" আসলে আমি তো সেই কুড়ে ঝগড়ুটে মুনিয়াকে চিনি।এখন দেখছি নব নব রূপে।পরতে পরতে মিঠে পরশ।"
" কি আমি ঝগড়ুটে!"নাক ফোলায় মুনিয়া।
তবে দুজনের মনটা একটু খারাপ আবার তো মিস্ করবে।জুনি আওয়াজ দেয় বিরহ ভালো প্রেমের ওম আরো মিঠে হবে। রাগ হয়ে যায় রাণার নিজে দিব্যি বরের সাথে শপিংয়ে যাচ্ছে আর ছবি দিচ্ছে শুধু ফ্রীতে জ্ঞান দেওয়া। ওর এদিকে ঘুম হচ্ছেনা মন খারাপের ঠ্যালায়।
বিজ্ঞের মতো বলে জুনি," প্রথম প্রথম তো তাই একটু বেশি খাবি খাচ্ছিস।চলে আয়,ঠাকুর দেখবো একসাথে।"
************
মুনিয়াকে এয়ারপোর্টে আসতে দেয়নি রাণা আবার ফিরবে মনখারাপ করে একা একা।একসঙ্গে দুজনে যেতে পারলে ভালো হত বেশ। কি আর করা যাবে?এখন এই কদিন টেক্সট আর ফোন ভরসা তবে বাড়িতে কল করাও চাপ ডল গোয়েন্দা আছে সব সময় পেছনে।অন্য ভাইবোনও আছে।আসলে পুজোর সময় বাড়িতে লোকজন ভর্তি।
" আমি হয়ত সবসময় ফোন করতে পারবোনা,রাগ করিসনা।
টেক্সট করবো।" বলে রাণা।
" খুব রাগ করবো আমি,আমার মন খারাপ করবে তো।"
বলেই হেসে ওঠে মুনিয়া..." আমি জানিতো বাড়িটা পুরো আনন্দের ক্ষেত্র তোদের পুজোতে। সত্যিই দারুণ।"
রাণা বলে..." তুই আসবি?"
মুনিয়া বলে, " না রে তা হয়না আমাকে তো কেউ আসতেও বলেনি।
আর বারবার যাওয়াটাও ঠিক নয়।
তোদের পাড়ার লোকেরাও কিছু ভাবতে পারে।"
" তাতে কি,ডল তো বলেছে আসতে তোকে।"
রাণা যতই বলুক মুনিয়া জানে যাওয়াটা ঠিক হবেনা। গতবার কাজললতার ব্যাপারটা মনে পড়ে যায় অতটা রিজিড হওয়া উচিত হয়নি ওর। ইশ্ গতবার যে কাজললতা অযাচিত বন্ধনের বোঝা মনে হয়েছিলো আজ যেন মনে হচ্ছে অমন একটা কাজললতার কাজল যদি পারতো যত্নে চোখে টানতে। কিন্তু যা ফিরিয়ে এসেছে তা চাইতে যেতে পারবেনা কিছুতেই মুনিয়া।
******************
আবার চাঁদের হাটে এসে পড়েছে রাণা,মায়ের চোখটা ছলছল করে..জড়িয়ে ধরে বলে,"কতদিন পরে এলি বাবু।"
ভাইবোনদের মুখগুলো চকচকে সুন্দর লাগছে।উপহার হাতে নিয়ে লাফাতে থাকে ডল.." এবার তো আরো ভালো ড্রেস ভীষণ পছন্দ হয়েছে দাদা।"
" কেমন কিনতে শিখেছি বল।"
কলা দেখায় ডল.." হাতি শিখেছিস,এবার আবার কাকে নিয়ে গেছিস সাথে কে জানে?"
বাবা এতো এক কাঠি এগিয়ে,মেয়েরা সত্যিই বোধহয় খুব চালাক হয়। দরকারে কান কাটতে পারে ছেলেদের। ডলের সাথে কথার মাঝেই ফোনটা আসে উঁকি মারে ডল..ফোনটা নিয়ে গম্ভীর মুখে বাইরে চলে আসে রাণা,যেন বেশ জরুরী ফোন মুচকি হাসে ডল।
মুনিয়ার ফোন বুকের ভেতরে বেশ অনুভূতি হয় রাণার তবুও কুল থাকতে হয় চারদিকে গোয়েন্দার ছাড়াছাড়ি। বলে," খুব মিস্ করছি,তুই এলে খুব ভালো হত। সবার পছন্দ হয়েছে সব কিছু। দিন গুনছি কবে আসছিস।টেক কেয়ার, রাতে কথা হবে।"
সারাদিন হট্টগোলের পর রাতেই একটু শান্তিতে কথা বলা যাবে।
ঠাম্মার আর দাদানের ঘরে দেখা করতে গেছে রাণা।দাদান এখন অনেকটা ভালো আছে।
চিবুকে আলতো করে চুমু দিয়ে ঠাম্মা বলে," দাদুভাই এবার একটা লাল টুকটুকে দিদিন আসুক,নাচবো,গাইবো বরণ করবো গরদ পরে।
বৌমা কিন্তু এবার কোমর বেঁধে লেগেছে।"
একটু অস্বস্তি হয় রাণার মা তাহলে সত্যিই বিয়ের জন্য ক্ষেপেছে? কিন্তু ও তো একজনকে ভালোবাসে এখনই তো সবে বলতে পেরেছে মনের কথাটা এর মধ্যেই কেন মা এত ব্যস্ত হয়েছে? মুনিয়াও বলেছে কোন তাড়াহুড়ো ও করতে চায়না। জুনি বলেছে আগে কোর্টশিপে থাকা দেন শাদী। এতো তাড়ার কি আছে সেই তো বরবাদী হবে আলটিমেটলি। রাণা বলেছে," বরবাদ যদি হলিই তবে বিয়ে করতে গেছিলি কেন?"
" আরে তখন কি বুঝেছি নাকি,এতো ঝকমারি বিয়ের পর আসে। তবে তুই শুনিসনা বিয়ের ইচ্ছেই চলে যাবে।"
" আমাদের বিয়ের ইচ্ছে নেই এখনই।" বলেছিলো মুনিয়া।
" তাই নাকি তাহলে লিভ ইনে থাকবি?"হাসে জুনি।
" রক্ষে করো মা লিভিং টুগেদার, আলাদা হওয়া,চলে যাওয়া, ফেরত আসা প্রচুর নাটক হয়েছে এবার দেরিতে হলেও একদম স্ট্রেইট ছাদনাতলায়।" বলেছিলো রাণা।
তবে বাড়িতে এসে এবার সত্যিই কেমন লাগে। পুজোর মধ্যে তো কিছু হবেনা,আর পুজোটা হলেই চলে যাবে।
ঢাকের বাদ্যি আর হৈ হুল্লোরে জমলো পুজো, সারা বাড়িতে ধূপ ধুনো আর খাওয়ার গন্ধ। তার মাঝেই রাণার ফোনে বাজে টুংটাং, দাদার আচরণ বড়ই সন্ধেহজনক লাগে ডলের কাছে।দুএকবার উঁকিঝুঁকি মেরেছে ফোনে প্রায়ই দেখে স্ক্রীনে ফুটে ওঠে ময়না।
প্রথমে খুব একটা গা না করলেও মাঝে মাঝেই দেখে ময়নার ফোন এলেই দাদা বেশ লাজুক লাজুক মুখে কেটে পড়ে। যদিও মায়ের সাথে এই ব্যাপারে কোন কথা হয়নি। কারণ এই সময়টা মায়ের খুব চাপ থাকে। এতবড় পুজো,লোকজন,রান্না খাওয়া সবই সামলাতে হয় মাকে।
মুনিয়া অষ্টমীর দিনে এসে পৌঁচেছে অবশেষে, একটু নিশ্চিন্ত লাগে রাণার। যাক্ তবুও অনেকটা কাছে এসে গেছে মুনিয়া।
অষ্টমীর অঞ্জলির পর মা রাণাকে ডেকে বলে," বাবু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার আগে জলখাবার খেয়ে যাবি। আজ কিন্তু তোর পছন্দের রাধাবল্লভী আর আলুর দম। আর শোননা কাল তোর বাবার এক বান্ধবী আর ওর হাজব্যান্ড আসবে তুই কিন্তু বাড়িতে থাকিস।"
আশ্চর্য লাগে রাণার..." বাবার আবার বান্ধবী কোথা থেকে এলো মা? ফেসবুকের নাকি?
মা বাবাকে সামলাও কিন্তু। এমনিতেই প্রচুর কথা বলে।"
রাণার কথা শুনে হেসে ফেলে ওর মা..." নারে ফেসবুকেই দেখা তবে কলেজের বান্ধবী। শোননা ওরা কাল তোকে দেখার জন্যই আসবে। পুজো দেখার জন্য তোর বাবা আসতে বলেছিলো,ভালোই হলো একসাথে দুটোই হবে।"
অদ্ভুত একটা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পায় রাণা,এই জন্যই ওকে এত আদর করে ডেকে নিয়ে আসা এখানে?সত্যিই ভীষণ অস্বস্তি হয় অথচ মুনিয়াকে কিছু বলতেও পারেনা। ও বুঝতে পারে বাবার বান্ধবী সুতরাং বাবার সম্মান জড়িয়ে এখানে। কি যে করবে? রাতে শুয়েও ভালো করে ঘুম হয়না।
*******************
নবমীর ভোরে ডল মাকে খবর দেয় "দাদাকে পাওয়া যাচ্ছেনা দাদা পালিয়েছে বাড়ি থেকে। কি জন্য ওকে বলতে গেছো ওকে দেখতে আসছে ওরা? এমনি ওরা আসতো আসতো।
" সে কি রে? কোথায় গেলো রাণা? তোকে কিছু বলে যায়নি?কাল দশমী কত হৈ হৈ বাড়িতে।"
মুচকি হাসে ডল," কাল হয়ত এসে যাবে মা। তোমাদের গেস্টরা তো আজই চলে যাবে। ওদের ভয়ে পালিয়েছে মনে হয়। আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো ওরা কখন যাবে।"
ওর মা অবাক হয়ে বলে," সে আবার কি কথা? কি বিচ্ছিরি ব্যাপার বলতো। তোর বাবাও শুনলে রাগ করবে।"
" মা একটা কথা বলবো? দাদা বোধহয় প্রেম করছে।"
" সে কি! তুই কি করে জানলি?"
ডল হাসে," আমি গোয়েন্দা মা,মাঝেমাঝেই ওর ফোনে একটা ফোন আসে ময়নার। দাদা সরে গিয়ে ফিসফিস করে কথা বলে।"
ওর মায়ের মুখটা হাঁ হয়ে যায়...." ময়না আবার কে রে ?" ©রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী
( একটা বাড়তি পর্বের জন্য একদিন আরো নিলাম---অন্তিম পর্ব কাল)
....................
#লিভিং_টুগেদার#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
"আচ্ছা এমন শুনেছিস কখনো বিয়ের কথা শুনে ছেলে বাড়ি থেকে চলে যায়? মেয়েরা শুনেছি অনেক সময় বাড়ি থেকে চলে যায় কিছু না বলতে পেরে।"
" মা ও কোথাও যায়নি কলকাতা গেছে। এই আমাকে মেসেজ করেছে।কাল ওদের বন্ধুদের মধ্যে কথা হয়েছে ওখানে ঠাকুর দেখবে ওরা। কি পাজি দাদা দেখেছো কতদিন আমি কলকাতার ঠাকুর দেখিনা।"
" বাড়ির পুজো ছেড়ে কলকাতা যাওয়া সাত সকালে চুপিচুপি দাঁড়া দেখাচ্ছি আমি।"
যতবারই ফোন করে শান্তা দেখে ছেলের ফোন নেটওয়ার্ক সীমার বাইরে। বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে বলে..." শোন কাউকে কিছু বলিসনা, বলবি অফিসের একটা কাজে যেতে হয়েছে। আমার হয়েছে জ্বালা ছেলের দোষ ঢাকতে মিথ্যে কথা বলা।"
মায়ের কথাতে মাথা নাড়ে ডল।
যথারীতি আবার বাড়ির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবাই।পুজোর বাড়ি আবার অতিথি আসছে অনেক কাজ আছে।
মাঝে কেটে গেছে কিছুটা সময় অতিথিরা চলে এসেছে। মহা মুশকিল এসেই ওরা জিজ্ঞেস করে রাণার কথা,সবার এক কথা ছেলে কই।
" আসলে ওর অফিসের একজনের আসার কথা তাকে রিসিভ করতে গেছে এয়ারপোর্ট। তারপর কিছু কাজও আছে।"..কথাগুলো কোন রকমে বলেই ওদের আদর আপ্যায়ন করতে লেগে যায় রাণার মা। ওরা ভীষণ খুশি অনেকদিন বাদে ফেসবুক মিলিয়ে দিয়েছে বন্ধুর সাথে বন্ধুকে তারপর আবার এই পুজোবাড়িতে আসা সব মিলে একদম জমজমাট ব্যাপার।
খাবার গুছোতে গুছোতে ডলকে ওর মা বলে," দাদাকে পেয়েছিস ফোনে?"
ফোনটা মায়ের নাকের ডগায় আনে ডল "এই দেখো পুতুলদি স্ট্যাটাস দিয়েছে সবাই মিলে কোথায় যেন খাচ্ছে। ও মা!অনেক ছেলেমেয়ে তো এখানে। আচ্ছা ময়না কোনটা হতে পারে?"
ডলকে ইশারা করে ওর মা।পরে চুপ করে বলে ,"মুনিয়াই তো ভালো ছিলো আবার ময়না কেন? দেখিস তো যে মেয়েটার পাশে বসে সে কিনা।"
" মা দাদার পাশে কে কিছু বোঝা যাচ্ছেনা।"
"ফোন করতো ওকে,তোর বাবা খুব রাগ করছে"।
ফোন করতেই মাখন লাগানো গলায় রাণা বলে," সত্যিই কাল অনেক রাতে জানতে পারলাম,অফিসের একজন আসবে তাই হঠাৎই চলে আসতে হলো।ডলকে জানিয়েছি তো।"
" আমি কিছু জানিনা তুই বাড়ি ফিরে আয় তাড়াতাড়ি। কাকে রিসিভ করতে গেছিস ময়না?"
রাণার মুখটা হাঁ হয়ে যায়..." কোন ময়না? মা আজকে ঠাকুর দেখার প্ল্যান হয়েছে সব বন্ধুরা আছে এখানে।কাল সকালেই চলে যাবো।"
" তোর বাবার বন্ধুরা এসেছে। তোকে খুঁজছে। কাল করিসনা আজই চলে আয় বাড়িতে পুজো।"
" আচ্ছা দেখছি আমি। তুমি একটু ম্যানেজ করে নাও প্লিজ।"
সবাই জানতে পারে কথাটা ওরা বলেন কোন সমস্যা নেই ছবিতে তো দেখা হয়ে গেছে তাই কোন ব্যাপার নয় অনেক করে বলে গেলো ওদের যেতে ওদের বাড়িতে।
মুনিয়াদের বাড়িতে যাওয়াটা ভালো দেখায়না তাই জুনিদের বাড়িতে থেকেই ওদের আড্ডা ঠাকুর দেখা খাওয়া সব চলছে।
মুনিয়াকে সবটা বলেছে রাণা.." শোন এমনিতেই আসতাম আমি কথাই ছিলো একসাথে ঠাকুর দেখবো তারপর যেই শুনলাম বাবার বন্ধু আসছে আমাকে দেখতে আমি হাওয়া।"
মুনিয়ার মুখটা সিরিয়াস লাগে.." বুঝলি আমার বাড়ি থেকেও খোঁজাখুঁজি করছে। মা বলছে আর একা ওখানে থাকতে দেবেনা তাই পাত্র চাই করতে কোমর বেঁধেছে।"
" শোন রাণা,আজ রাতে মুনিয়ার বাড়িতে আঙ্কেল আন্টির সাথে দেখা করে বলেই দে কথাটা, মুনিয়া ঘ্যানঘ্যান করছে সারারাত ঠাকুর দেখলে মা বকবে। কারো কোন চাপ থাকবেনা,আর মনে হয় আন্টি আপত্তি করবেনা। মুনিয়া তুইও তো বলতে পারিস মাকে।" জুনি বলে
হাসে মুনিয়া," কতবার আর এক কথা মাকে বলবো। দেখি শেষে তো বলতেই হবে।"
এবার সত্যি নার্ভাস লাগে রাণার ইশ্ এতো সেই সিনেমার ঢঙে বলা আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। ইশ্ মা শুনলেই বা কি বলবে।
"শোন খাওয়াদাওয়া ঠাকুর দেখা মোটামুটি হয়েছে,আমি এখন বাড়ি যাই। মা বারবার ফোন করছে। প্রমিস মা বাবাকে পাঠাবো মুনিয়ার বাড়ি। বলছি কোন সমস্যা হবেনা।"
জুনি হাসে," মুনিয়া দেখেছিস কেমন ভীতুর ডিম। তার থেকে তুই চল ওদের বাড়ি গিয়ে বলবি আপনাদের ছেলের কোথাও বিয়ে হবেনা।"
মুনিয়া কাজললতার কথা ভেবে কেমন থমকে যায়। রাণা ওর ঘাড়ে হাত রাখে.." মা বাবা আমাদের ছোট থেকে বড় করেছেন তাই ওরা একটু প্রাধ্যান্য পাক।"
রাণার পৌঁছতে পৌঁছতে বেশ অনেকটা রাত হয়ে গেছে। মা তখনো জেগে কাজ করছে.." তুই বললি যে সারারাত ঠাকুর দেখবি আবার কি হলো? সেই এলি যদি একটু বিকেল বিকেল আসতিস দেখা হত। খাবি তো?"
রাণার মনে তখন বাজছে একটা কথা যা করেই হোক মাকে রাতেই বলতে হবে। মায়ের কাছে এসে বলে..." আচ্ছা মা সেই কাজললতাটা তোমার কাছে আছে? ওটা আবার মুনিয়াকে দেওয়া যায়না?"
মায়ের মুখটা দেখতে অদ্ভুত গম্ভীর লাগে রাণার..." ও তাহলে এতো সব কান্ড চলছে, তা ময়না আবার কে? ঐ কাজললতা তো ঠাম্মার কাছে। আমি জানিনা কিছু তুই দেখ ঠাম্মাকে বলে।"
" ময়না কেউ না,ময়নাই মুনিয়া মা। নামটা ভুল করে সেভ হয়ে গেছে। তুমি ঠাম্মাকে একটু বোলো। আসলে মুনিয়ার খুব খারাপ লাগছে।"
" তুই কাল সকালে ঠাম্মার পুজোর পর গিয়ে বলিস।আমার এখন অনেক কাজ। এইজন্য তুই বাড়ি থেকে চলে গেছিস তা আগে বললে কি হত শুনি?"
মায়ের হাবভাব দেখে খুব একটা খুশি হয়েছে মনে হলোনা।সারারাত ভালো করে ঘুম হলোনা রাণার।ও চলে এসেছে বলে ওরাও আর রাতে ঠাকুর দেখার প্ল্যান ক্যানসেল করেছে।
ভোরবেলায় উঠে পড়ে রাণা সত্যিই এবার পুজোটাও যেন কেমন,চাপে চাপেই কেটে গেলো।প্রথমে মুনিয়া না আসার চিন্তা তারপর বাড়ি থেকে চলে যাওয়া আবার আজকে কি করবে কে জানে?
রাণা জানে ঠাম্মু সকালে দশটার আগে ফ্রী হয়না।তারপর আবার আজ দশমী...ঢাকিরা তখনো ঘুমোচ্ছে।বাড়িও চুপচাপ তখনও কারো ঘুম ভাঙেনি।
দুর্গা ঠাকুরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় রাণা মা বলতো নবমীর পরেই ঠাকুরের মুখ ভার হতে থাকে আর দশমীর বিকেলে মায়ের চোখদুটো লাগে কান্নাভেজা। মায়ের সামনে হাতজোড় করে দাঁড়ায় রাণা মনে মনে বলে মা একটু সামলে নিয়ো সব কিছুই বাবা মাকে যেন রাজী করতে পারি মুনিয়ার বাড়ি যেতে। ঠাম্মা আবার কি বলবে কে জানে? সব মিলিয়ে মনে যেন একটা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা চলছে। দুগ্গামন্ডপ থেকে বাইরে এসে ক্ষীরপুকুরের ধারে এসে বসে রাণা চার পাশের গাছগুলোর ডালে কত চেনা অচেনা পাখির বাসা আর তাদের কিচিমিচি মনটা হারিয়ে যায়। বেশ অনেকটা সময় কেটে গেছে এই করে।হঠাৎই পেছনে শোনে....." এই তো পেয়ে গেছি।চল চল চা জলখাবার খাবি। ও হাঁফিয়ে গেলাম।মা তো বললো আবার তুই পালিয়েছিস নাকি?"
বকবক করতে করতে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় ডল। বলে," দাদা মনে আছে আমাকে ছোটবেলায় কেমন টানতে টানতে স্কুলে নিয়ে যেতি? আজ আমি নিয়ে যাচ্ছি টানতে টানতে তোকে। হ্যাঁ রে ময়নাটাই মুনিয়া, মা বললো। আমার কি মজা হচ্ছে মুনিয়াদি বৌদি হবে।"
" খুব পাকা হয়েছিস না? একদম কান মলা
দেবো।" বলে রাণা
" কে কাকে কানমলা দেয় দেখবি এবার?বাবা তো ভীষণ রেগে আছে তোর জন্য বন্ধুদের কাছে কথা থাকেনি বাবার। আর ঠাম্মা কেমন দেবে দেখো।"এক নিঃশ্বাসে বলে যায় ডল।
সত্যিই ছোটবেলার মত আজ পেটটা কেমন গুড়গুড় করছে রাণার।টেনশনে ভালো করে লুচি খেতেও পারলোনা। বাবার মুখোমুখি এখনো হতে হয়নি..বাবা বাজারে গেছে তবে ঠাম্মার ঘরে যেতে হবে এবার।
**************
ঠাম্মার ঘর বাড়ির একদম শেষে, ঘোরানো বারান্দা দিয়ে যেতে হয়।এখনো বাড়িতে সবাই ঠাম্মা দাদুকে মেনে চলে।মাকেও তেমনই দেখেছে রাণা।
ঘরে উঁকি দিতেই একগাল হাসি দেয় ঠাম্মা," আমি ভাবছি তাই আমার দাদা গেলো কোথায়?কাল সারাদিন তোমাকে দেখিনি। এবার তো গপ্পই হলোনা তেমন তোমার সাথে। এসো এসো। এবার সেই নাচ হবে তো? ধুনুচি হাতে?"
ঠাম্মা বলাতে একটু সুযোগ পায় রাণা..." আমি তো তেমন নাচতে পারিনা ঠাম্মা, গতবছর বন্ধু এসেছিলো তাই।"
" তা এবছর তাকে আনলেনা কেন?আমি তো ভাবলাম তুমি কলকাতা গেছো তাকে নিয়ে আসবে। সে যা হোক নাচ কিন্তু হবেই আমার দিদিভাইরা তো আছে।তারাই বা কম কি?"
" ঠাম্মা ঐ কাজললতা তোমার কাছে আছে নাকি গো?" বলে রাণা।
" কেন রে দাদা? আছে তো।তোর বৌ এলেই দেবো ভেবেছি মায়ের পায়ে ঠেকিয়ে রেখেছি।"
একগাল হাসে ঠাম্মা..." না তোমার নতুন দিদিভাই যদি..."
পুরো কথাটা বলে ওঠা হয়না রাণার বাইরে বাবার গলার আওয়াজ পায়। বাবার গলার আওয়াজ পেয়ে ঠাম্মা বাইরে বেরোয়,ঘরে বোকার মত বসে রাণা।
বাইরে বেশ কথার আওয়াজ শুনতে পায়..." আপনি বলেছেন আর না এসে পারি। কাল যদি থাকতো রাণা তাহলে আজ আর আসতে হতোনা।"
কে এলো আবার! ওর বাবার বন্ধু নাকি? এবার তো আর পালাবার পথই নেই। উঃ সত্যিই কি যে মুশকিল। কি করবে এখন?
বাইরে থেকে বাবার বেশ গুরুগম্ভীর গলার আওয়াজ পাওয়া যায়..." রাণা বাইরে আয়।"
আর কোন উপায় নেই অগত্যা বাইরে বেরোনো।
হঠাৎই যেন মনের মধ্যে একটা গান বেজে উঠলো..' তুমি এলে অনেকদিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো। তুমি এলে অনেক কথা এলোমেলো মনে হলো। তুমি এলে অনেকদিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো।'
ইশ্ শরতের রোদের মিঠে আলোয় ভরেছে উঠোন হঠাৎই বৃষ্টির গান মনে হলো কেন? তবে বৃষ্টি তো নেমেছেই মন জুড়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে ওর প্রেমিক মনটাকে যা এতক্ষণ ভয়ে চুপশে ছিলো।
মুনিয়ার পরনে আজ সোনালী জড়ির পাড়ের গাঢ় সবুজ শাড়ি। এবার পুজোতে ওকে কিনে দিয়েছিলো রাণা। মাথা নিচু করে ঠাম্মাকে প্রণাম করছে মুনিয়া পাশে আন্টি আঙ্কেল আর পেছনে হায়নার মতো দাঁত বের করে জুনি আর পুতুল। ইশ্ এত বড় বোকা বানানো!
ঠাম্মা কাছে ডাকে রাণাকে," একসাথে প্রণাম করতে হয় দুজনকে এসো দাদুভাই। ইশ্ কাল কেন যে পালাতে গেলে? এই তো তোমার বাবার বান্ধবী মিতা। তবে ঘটক বিদায় পাবে আমার দুই দিদিভাই পুতুল আর জুনি।"
Comments
Post a Comment