Skip to main content

বাঙাল ঘটি

#বাঙাল_ঘটি_লড়াই#

       বাটি চচ্চড়ি,পোস্ত ভাতে,কাদা চিংড়ির বড়া উঃ উঃ একদম জিভে জল আসা খাবার। পোস্ত বিনা দিন কাটেনা আমি কেমনে থাকি এ ঘরে আমার পোস্ত বিনা দিন কাটেনা...গলা ছেড়ে মাঝে মাঝেই গাইতে ইচ্ছে করে চাঁদনীর। মা জানে একটা পোস্তর পদ মেয়ের লাগবেই তাই বাড়িতে কিছু না হলেও টম‍্যাটো পোস্ত হবে ওর জন‍্য। যদি কোনদিন পছন্দমত পদ না হয় তাহলে মেয়ের বায়নায় মাকে বসতে হবে কাঁচালঙ্কা,কাঁচাতেল দিয়ে পোস্তবাটা মাখতে বসতে। তারপর তাই দিয়ে ভাত মেখে খেয়ে মেয়ের শান্তি।

        এতো আদুরে মেয়ে বাড়ির সে কিনা শেষে প্রেম করলো? তা বেশ ছেলে ভালো হলেই হলো কিন্তু শেষে বাঙাল ছেলে!
         বাবা কিছু বলার আগেই মা আপত্তি তুলেছিলো। " চাঁদ সব ঠিক আছে কিন্তু ঐ বাঙালেই আমার আপত্তি। ওদের খাওয়াদাওয়া আমাদের সাথে একদম মেলেনা।"

       " মা খাওয়া নিয়ে কি হবে? ও সব ঠিক হয়ে যাবে আমি ঠিক ইচ্ছেমতো করে নেবো। আর তুমি কি করে জানলে মেলেনা? আজকাল সবাই সব কিছু খায়।"

      " নিজে দেখে করছিস আমাকে কিন্তু পরে বলিসনা মা তোমরা যে কি বিয়ে দিলে?"

             ছেলের বাড়ি থেকে যেদিন দেখতে এলো সেদিন যথারীতি ঘটি বাড়ির স্পেশাল মেনু হয়েছে চাঁদনীদের বাড়িতে। ঝুরো ঝুরো আলুভাজা, বিউলির ডাল,চিংড়ির বড়া,পোস্ত বড়া ভাজা,টম‍্যাটো পেঁয়াজ আর ফুলকপি দিয়ে রুইমাছের ঝোল,গলদা চিংড়ির মালাইকারি বেশ মিষ্টি মিষ্টি করে।তার সাথে চাটনি পাঁপড়,দই আর বর্ধমানের বিখ‍্যাত মিষ্টি।
            যদিও হবু জামাই দুএকবার এসে বেশ আহ্লাদে আটখানা হয়ে এই পদগুলো খেয়ে গেছে কিন্তু বেয়াই বেয়ান আর চাঁদনীর ননদ ননদাইয়ের মুখ দেখে ওরা বুঝলেন মেনু একদমই না পসন্দ ওনাদের।

      " আপনারা খুব পোস্ত খান তাইনা?
            আমাদের বাড়িতে তেমন পোস্ত চলেনা,মানে কেউ পছন্দ করেনা।" ঠোঁট উল্টে বলেন চাঁদনীর হবু শাশুড়িমা।"

       চাঁদনীর মা একটু হেসে বলে," দিদি তাহলে তো খুব মুশকিল, আমার মেয়ের তো পোস্ত ছাড়া খাওয়াই হয়না। জানেন তো কত দাম পোস্তর, তবুও ওর বাবা শিশি ভর্তি পোস্ত এনে রাখে মেয়ের জন‍্য। একমাত্র আদুরী মেয়ে আমাদের।"

       ওখানে কিছু বলতে না পারলেও বাড়িতে এসে মা মেয়েতে মিলে একদম ফেটে পড়লেন..চাঁদনীর ননদ বনি বললো.." মা দেখেছো ঘটিদের কেমন চিমটি কাটা কথা একদম বুঝিয়ে দিলো যে তোমার বৌমার জন‍্য শিশি ভর্তি পোস্ত এনে রাখতে হবে না হলে ওনার ভাত উঠবেনা গলায়। দেখেছো তো মা আমার বেলা কত বাছাই করে একদম খাঁটি বাঙাল ছেলে আনলে। আর তোমার আদরের পোলাকে পারলে? ঠিক নিজে যা বুঝলো তাই করলো।"

       ছেলের প্রতি একটু বেশিই পক্ষপাতিত্ব মমতার তাই কিছু করার নেই ওর খুশিতে খুশি হওয়া ছাড়া। তবুও বললেন.." থামতো বাপের বাড়ির সব সোহাগ চলে যাবে দুদিনেই শ্বশুরবাড়িতে এলে। সব ন‍্যাকামি ঘুঁচে যাবে। হুঁ আমরা কি খাইতাম বিয়ার আগে সবই ভুলসি এখন। শ্বশুর,বর,পোলাপাইন যা খায় তাই খাইসি।"

        ওদিকে চাঁদনীর মা নন্দা ওকে বলে.." শোন সব মেনে নিবিনা। তাইতো বাপু আমি শুনিয়ে দিয়েছি মেয়ের আমার এবেলা ওবেলা পোস্ত লাগে। কি নাক সিঁটকে খাচ্ছিলো দেখেছিস? মনে হচ্ছে যেন অখাদ‍্য খেতে দিয়েছি।"

        " হুঁ বিমল ফোন করেছিলো,'বললো আজ ইলিশ করতে পারতে তা নয় একদম ঘটি ছাপ মারা চিংড়ি! পুরো আইটেম তো শুনলাম একদম ঘটি যদিও আমি খুব মিস্ করলাম। আমি গেলে পুরোটাই দারুণ এনজয় করতাম।'
              যাক্ ছাড়ো,ঘটি মেয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে তাই আমাদের রান্না তো খেয়ে দেখতেই হবে।"

          পরের পর্বেই মেয়ের বাড়ির ডাক পড়লো ছেলের বাড়িতে দিনক্ষণ পাকা করতে। যথারীতি সেই সারস আর শেয়ালের গল্পের মত ব‍্যাপার।
      মেনুতে সব খাঁটি বাঙাল পদ..ডাল,তপসে মাজের ফ্রাই ছোট মাছের ঝাল ঝাল চচ্চড়ি,মাছের ভাঙাচুরা শুক্তা,তিনরকমের মাছের ঝাল ঝাল পদ তাতে অবশ‍্যই ইলিশের সরষেবাটা আছে আছে। মানে তোমরা দুইপদের মাছ খাইয়েছো আমরা খাওয়ামু তিন পদের মাছ আর মাছভাজা লইয়‍্যা চারপদ।
         তবে নন্দা আর ওর কর্তা দুগ্লাস জল সহযোগে সবই মোটামুটি খেলো এবং তারিফও করলো।
তবে একটা কামড় বসিয়ে দিলো আবার..." আমার মেয়ে একটু নিরামিষ ভালোবাসে এই পোস্ত ধোকা পেলে তো মাছ ফেলে খেয়ে নেবে। আসলে ঝালটা খেতে পারেনা তো। মাছের কাঁটা বেছে দিই এখনো ঐ অতবড় মেয়েকে।"

         মমতা মনে মনে মুখ বাঁকায় ন‍্যাকা। কিছু কথা আছে মায়ের,ঘটি তো তাই টিপে টিপে কথা বলে। এতো আদরের কইন‍্যা যখন ঘরেই থুইতে পারতা কি কাম বিয়া দেওনের।
        যাক বাঙাল ঘটির রায়টের মাঝেই চাঁদনীর বৌ হয়ে আসা এই বাঙাল বাড়িতে। বিয়ের দিনই তো নিয়ম কানুনে মাথা ঘুরে গেছে ওর বাপরে বাপ প্রায় চব্বিশ ঘন্টা ব‍্যাপী ভারত বন্ধের মত বিয়ের অনুষ্ঠান চললো। আর তাতে আবার চোদ্দপাক ঘুরে ঘুরে সিঁদুর পরা। ওর জেঠুর মেয়েদের তো বাপু সেই রাতেই সব চুকেবুকে গিয়ে সকালেই একদম ধা করে শ্বশুরবাড়িতে চলে যাওয়া কাঁদতে কাঁদতে।

          এই বাড়িতে এসে নানা বিধি নিয়মের ঝুড়ির মধ‍্যে কেমন যেন হারিয়ে গেলো চাঁদনী শেষে মাথা ঘুরে যাওয়ার হাল। পাশ থেকে ননদ বললো.." কি গো মাথা ঘুরত‍্যাসে নাকি? আমার দাদার মাথা এতদিন ঘুরাইছো তা তো একটু হইবোই।
           শেষে যখন মেঝেতে ল‍্যাটা মাছ ছড়িয়ে দিয়ে ওকে তুলতে বললো তখন উরি বাবা উরি মা করে প্রায় ডিগবাজি খাওয়ার অবস্থা চাঁদনীর। শেষে বিমল হাল ধরলো..." আরে দুজনের এখন এক হৃদয় তাই বৌ কে সাহায্য করলে কিছু হবেনা।"
      সবার আপত্তি না শুনে নিজেই কায়দা করে মাছগুলোকে তুললো চাঁদনীকে বললো তুমি শুধু আমাকে ধরে থাকো।

                চাঁদনী বুঝলো বাঙাল ঘটির লড়াইয়ের ময়দানে একজন আছে ওর পক্ষে মানে ত্রাতা পতিদেবতা। তাই ভালোবাসা আর আদর দিয়ে বেঁধে নিলো বিমলকে চাঁদনী।

        প্রথমদিন রান্না করতে গিয়েই বিপদ.. শাশুড়িমা বললেন," শোনো মাছের ঝোলে মিষ্টি আর টম‍্যাটো দেবেনা। তোমার শ্বশুর খাইতে পারেনা।"
                   রান্না করে শ্বশুরমশাই আর বরের মতামতের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে চাঁদনী।বিমল আঙুল চেটে ইশারা করে। হাসে চাঁদনী। শাশুড়িমা শ্বশুরমশাইকে জিজ্ঞেস করেন.." কি গো ঝোল ঠিক হইসে তো। "
        শ্বশুর মশাই বললেন.." চলবো।"
    চাঁদনী আনন্দে ভাবে যাক পাশ করে গেছে। তবে বিমল মাকে বলে," ভালো তবে তোমার মতো হয় নাই।"
         খুব অভিমান হয় ওর.. ঘরে এলেই ঝাঁপিয়ে পরে..." তুমিও শেষে ওদের দলে গেলে?"

       বিমল বলে," বুঝলা না এটা হোম পলিটিক্স মা ভাবলো গিয়া ছেলেটা ভ‍্যাড়া হইয়‍্যা যায়নি।"

       ভীষণ পাজি তো মনে মনে ভাবে চাঁদনী বৌয়ের কাছে বৌয়ের মতো আর মায়ের কাছে মায়ের মত। ওর মাকে বলতেই মা বললো তোর বাবাও এমনই ছিলো কখনো একটা কথাও বলেনি একদম মিচকে। চাঁদনী বুঝতে পারে ওর থেকে মা অনেক বেশি ঠোঁটকাটা আর স্পষ্টবক্তা।

          শাশুড়ির ঝাল রান্না খেয়ে এক একদিন হেঁচকি উঠে যায় চাঁদনীর। ইশ্ শুধু মাছ আর মাছ,সবটাতেই মাছ। সবই যেন কাঁটা কাঁটা।

            ওদের পুজোপাব্বণে নিরামিষ হয় মা লুচি কখনো কচুরি করে আহা কি অপূর্ব তার স্বাদ। এই বাড়িতে নিরামিষের পাট নেই সব দিনই আমিষ। দুগ্গাপুজো,লক্ষ্মীপুজো,সরস্বতীপুজো সবেতেই মাছের ছড়াছড়ি। ইলিশ মাছের গন্ধও আজকাল যেন ভালো লাগেনা চাঁদনীর।

        রান্না করা তো দূরে থাক গন্ধ শুকলেও গা গোলায়।খুব ইচ্ছে করে একটু পোস্তবাটা খেতে কাঁচালঙ্কা তেল দিয়ে মেখে। তবে খুব একটা সাহস পায়না শাশুড়িকে বলতে।

       কয়েকদিন পর শাশুড়িমা বুঝতে পারেন ওর খাওয়া দেখে.." ভাত খাওনা ভালো করে ক‍্যান? মাছও খাইতে চাওনা। কি হইসে?"

        চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে অভিজ্ঞতায় বোঝেন মা হতে চলেছে চাঁদনী। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতেই ধরা পড়ে ঠিক।

        ছেলেকে ডেকে পাঠান শাশুড়িমা.." বাজার থেকে পোস্ত আনিস তো।"
     " মা এর আগে তো এনেছিলাম,তা পোকা ধরেই বোধহয় গেলো নষ্ট হয়ে। আর আনতে হবেনা ওকে বরং কদিনের জন‍্য বর্ধমানে দিয়ে আসি যেতেও চাইছিলো।"
             ওদিক থেকে ওর মা ফোন করছে বার বার সত‍্যিই তো এই সময় কত কি খেতে ইচ্ছে করে।
        চাঁদনী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শোনে উনি বলেন..." এখনই গাড়ি জার্নি করতে হইবোনা,যাইবো কদিন বাদে। তুই আনিস পোস্ত আমি কইর‍্যা দিমুনে যেমন পারি।

********************

      মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো বছর সূর্যর জন‍্যই বোধহয় শ্বশুরবাড়িতে পোস্ত বিউলির ডাল ঢুকে গেছিলো। শাশুড়িমা মাঝে মাঝে খুটখাট ঝামেলা করলেও একটু একটু করে চাঁদনীর মা না হলেও মায়ের মত হয়ে গিয়েছিলেন তবে বাঙাল ঘটির লড়াইটা মাঝে মাঝেই হতো।
     চাঁদনী কখনো মুখ টিপে বলতো..." আপনাদের মানে বাঙালদের খুব জেদ মা,গলদা মালাইকারি কি খুব খারাপ খেতে? চিংড়ির বড়া বিউলির ডাল?"

       " তুমিও তো কম না বৌমা এতগুলা বছরে ঘইট‍্যা গন্ধ গেলোনা তোমার গা থেকে। ইলিশও খাইত‍্যাসো আবার পোস্ত পোস্তও করত‍্যাছো।"

        মা আর ঠাম্মুর লড়াইয়ের মাঝে মধ‍্যে মধ‍্যে মুখ বাড়ায় সূর্য মানে চাঁদনীর ছেলে..." নারদ,নারদ বাহ্ বাঙাল ঘটি লাঠালাঠি দারুণ জমেছে চলুক চলুক।আমি ভিডিও করছি।"

       হাসে বিমল,"তোল ভিডিয়ো তুলে দে পোস্ট করে। "
        " বাবা হ‍্যাটস অফ টু ইউ,এই দুজন গ্ৰেট লেডিকে নিয়ে আছো কি করে এতদিন?"

            "পত্নী আর মাতা খুশিকরণ মন্ত্র বাবা এই জপ করেই ভালো আছি তুমিও শিখে নিয়ো কাজে লাগবে। ভবিষ‍্যত সুখের হবে।" বলে বিমল।

        " মা দেখেছেন তো কেমন গাঁটে গাঁটে বুদ্ধি আপনার ছেলের। আমার ছেলেটাকেও খারাপ করছে।"

        ********************

   ছেলে যে বাপের পথেই হাঁটছে তা কিছুদিন বাদেই বুঝতে পারলো চাঁদনী।

             ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো..." তা হ‍্যাঁরে বাঙাল না ঘটি? আমার অবশ‍্য তেমন কিছু নেই দুটোর কোনটাতেই আপত্তি নেই। তবুও তোর ঠাম্মু জিজ্ঞেস করবে। ঘটি হলে আবার নাক তুলবে।"
              " সেই আবার বাঙাল ঘটি! আমি জানিনা মা,আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি আর কিছু জানিনা।মনে হয় তোমাদেরও ভালো লাগবে। একদিন বাড়িতে আনবো তখন জিজ্ঞেস করে নিয়ো।"

      *************
সূর্যর সঙ্গে একদিন বিকেলে ওদের বাড়িতে এলো মেঘলা। এখনকার মেয়ে চাকরি করে স্মার্ট আর সুন্দরী।
     শাশুড়িমাকে ডাকে চাঁদনী.." মা আপনার হবু নাতবৌ এসেছে চলুন। নাতি আপনাকে খুঁজছে।"

      শাশুড়িমা বলেন," কি দিন আইলো, মাইয়‍্যারাই এখন শ্বশুরবাড়ি দেখতে আসে আগে। তা বাঙাল না ঘইট‍্যা জিগাইছো?"

       ঘইট‍্যা কথাটা শুনে খুব রাগ হয় চাঁদনীর," আমি জিজ্ঞেস করিনি। আপনি করুন। আমার কিছু একটা হলেই চলবে।"

       আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলটা আঁচড়ে একটু ফিটফাট হয়ে নেন শাশুড়িমা।এমনিতেই উনি খুব টিপটপ, তারপর নাতবৌয়ের সামনে যেতে হবে।

            উনি ঘরে ঢুকতেই মেঘলা উঠে প্রণাম করে। সূর্য বলে ঠাম্মু," এই আমার বান্ধবী মেঘলা।"

            উনি হেসে বললেন," এ কেমন হইলো গিয়া সূর্যের পাশে মেঘলা?"

       সূর্য বলার আগেই মেঘলা বলে," মেঘের ফাঁকে সূর্য হাসে। মেঘের সাথে তো সূর্যেরই ভাব।"

         চাঁদনী ভাবে," আজকালকার মেয়ে ঠিক যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিলো। আর কি জব্দ নাত বৌয়ের কাছে।"
        একথা সেকথার পর উনি জিজ্ঞেস করলেন, "তা তোমরা কি বাঙ্গাল না ঘটি?"

     মুচকি হাসে মেঘলা ও জানে ওকে ফেস করতে হবে এই প্রশ্ন তাই বলে,  " আমি বাটি ঠাম্মা।"
         ওর কথা শুনে চাঁদনীর শাশুড়ির চোখ কপালে ওঠার অবস্থা..." বাটিটা আবার কি গো?"

       " বাটি মানে আমার বাবা বাঙাল মা ঘটি। আমি বাবার বা আর মায়ের টি মিলিয়ে বাটি।"

     এবার উনি নিঃশ্বাস ফেলেন.." ও বুঝলাম, তা কি খাইতে ভালোবাসো? পোস্ত? মায়ে তো ঘটি কইল‍্যা।"
        আমি সব ভালোবাসি ঠাম্মু.." পোস্ত,চিংড়ি,ইলিশ, শুক্তো,চচ্চড়ি,পাঁঠা,মুরগী,বিউলির ডাল সব এমন কি অক্টো..."
       সূর্য এবার একটা চিমটি কাটে..." আর কইসনা এবার চুপ যা। ভাগ‍্যিস থামিয়েছে নাহলে বলতো হয়ত অক্টোপাস স্কুইড সব খাই।"

               একটা নিঃশ্বাস ফেলে চাঁদনীর শাশুড়িমা বলেন," তা রানতে পারো কিছু? মানে যারা খাইতে ভালোবাসে তারা রান্ধেও তো। আমার নাতিও সব খায় মানে খাইতে ভালোবাসে।"

মেঘলা চটপট উত্তর দেয়.." বাড়িতে অনেক লোকজন তাই খুব একটা কাজ করতে হয়না তবে ইচ্ছে হলে রাঁধি ইউটিউব দেখে। সূর্যকে খাইয়েছি তো। তোমাকেও খাওয়াবো।"

       চাঁদনী মনে মনে বলে প্রথমে ঘটি,তারপর বাটি এবার হয়তো দাঁতকপাটি খাবেন উনি।

বেজার মুখে উনি বলেন,"আচ্ছা আমি যাই এখন তোমরা কথা কও।বৌমা ওরে খাইতে দিয়ো কিন্তু।"

             চাঁদনী মনে মনে ভাবে এই বাটির ঝড়ে এবার বাঙাল ঘটি লাঠালাঠি হয়ত মিটে যাবে। উঃ আজকালকার মেয়ে বটে!

        #দুয়ো#

     হঠাৎই একদিন ভেতরের বাড়িতে খবর গেলো তাড়াতাড়ি বরণডালা সাজাও অতীন নামছে গাড়ি থেকে দেখে তো মনে হচ্ছে সাথে বৌ নিয়ে ঢুকছে। কোন কথা নেই বার্তা নেই একেবারে বিয়ে করে এলো!

          নিভা শুনে যে কি করবেন বুঝতে পারেননা,এর আগে দুই ছেলের বিয়ে নিজে দেখেশুনে দিয়েছেন। একদম মাথার চুল থেকে পায়ের নখ দেখে বংশ মর্যাদা যাচাই করে এনেছেন দুই বৌকে। নাতি নাতনি আর দুই বৌকে নিয়ে ভরা সংসার নিভার। তবে চোখের মণি ওনার ছোটছেলে।তা নিয়ে অবশ‍্য মাঝে মাঝেই আড়ালে কথা বলে বৌমারা..." তোমরা যতই মা মা করো মায়ের চোখের মণি কিন্তু সেই ছোটছেলে।"
       অবশ‍্য ছেলেরা খুব একটা গায়ে মাখতোনা,কারণ মা বাবাকে চটিয়ে লাভ নেই এখনো সব বিষয় সম্পত্তিই বাবার হাতে।

   " অযথা তোমরা কি সব যে বলো বুঝিনা অতীন আমাদের সবার প্রিয়।সবচেয়ে ভালো পড়াশোনায় ছিলো এখন কলেজে পড়ায়। সবাই ওকে ভালোবাসে।"

          সবার নয়নের মণি অতীন যার ওপর সবার আশা ভরসা সে বন্ধুর বিয়েতে সাতদিনের জন‍্য ভাগলপুর গিয়ে শেষপর্যন্ত বিয়ে করে ফিরলো! কি এমন হলো?
         ভেতর বাড়িতে খবর যেতেই বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিভা চোখের জলে ভেসে শাপ শাপান্ত করলেন ছোটবৌমাকে না দেখেই।
             "ওরা কতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে? এরপর তো লোক হাসাহাসি হবে। বাইরে লোক জমা হয়েছে রীতিমতো,গ্ৰামের ব‍্যাপার জানোনা। বৌমারা যাও দেখি তাড়াতাড়ি তোমার শাশুড়িকে নিয়ে। আগে তো ভেতরে আসুক ওরা।"

       নিভার দাপট সংসারে একটু বেশি বরাবরই কারণ বড়লোকের মেয়ে নিভা তারই বাপের বাড়ির টাকায় আনন্দবাবুর এতো সম্পত্তিবৃদ্ধি।তাই গিন্নীকে জীবনসঙ্গীর সাথে সাথে ভাগ‍্যলক্ষ্মী বলেও মানেন।

                কমলা তখনো গাড়ির ভেতরে বসে,অতীনই আবার বসতে বলেছে লোকের ভিড় দেখে। ঘোমটা সরিয়ে কমলা দেখে অনেক বড় বাড়ির সামনে ওরা দাঁড়িয়ে। কমলার গালে তখনো চোখের জল শুকিয়ে লেগে আছে। ঠাকুমা বলতো সবসময় অলুক্ষুণে অপয়া মেয়ে জন্মেই তো বাবাকে খেলো।মাকে দেখেছে চিরকাল বাড়িতে দাসীবৃত্তি করতে। তবে মা সবসময় বলতো.." কমল পড়াশোনা বন্ধ করিসনা মা। যত কষ্ট হোক আমি পড়াবো তোকে।"

           তবে কলেজের পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর আগেই যে মা মারা যাবে তা ভাবতেই পারেনি। পুরো জীবনটা অন্ধকার হয়ে গিয়েছিলো। কাকিমাদের অত‍্যাচার, সারাদিনের খাটুনি আর শেষে বিয়ের নামে প্রায় বিক্রি করে দেওয়া এক মদ‍্যপ চরিত্রহীন কয়লা ব‍্যবসায়ীর হাতে।
           হয়ত কিছু ভালো কাজ আর মায়ের আশীর্বাদ ছিলো তাই অদ্ভুতভাবে অতীনের সাথে বিয়েটা হয়। ওর বন্ধু অতসীর বিয়েতে গেছিলো অতীন। সারাটা পথই বারবার মায়ের কথা মনে হয়েছে আর কেঁদেছে। বেশ কিছুটা সময় ওরা বাইরে কেউই আসেনি বুঝতে পারে কমলা বাড়ির লোক হয়ত অসন্তুষ্ট।

          একটু পরে উলুর আওয়াজ পাওয়া যায়..ছেলের কাছে বরণডালা এনে চোখ মোছে নিভা.." শেষে এইভাবে তোকে বিয়ে করতে হলো? কত কি ভেবেছিলাম তোর বিয়ে নিয়ে?"

    " কোন উপায় ছিলোনা মা তুমি তো জানো চোখের সামনে অন‍্যায় কোনদিন আমি দেখতে পারিনা মা। "
               ছেলের বৌয়ের মুখের দিকে তাকাতে ইচ্ছে করেনা নিভার। কোনরকমে বরণ করে ঘরে তোলেন। লজ্জাতে মাথা নিচু করে থাকে কমলা।

             টুকটাক একটু নিয়ম করার পরেই জিজ্ঞেস করে নিভা..." তা বৌয়ের নাম কি রে ছোটখোকা?"
         অতীন হাসে.." তুমিই জিজ্ঞেস করো মা? ও তো বোবা নয় নিজেই বলবে। যদিও খুবই কম কথা বলে। কাল থেকে পাঁচটা কথাও বলেছে কিনা কেজানে? অবশ‍্য যা অবস্থায় বিয়ে হলো আর কিই বা বলবে। রীতিমতো লঙ্কাকান্ড করে বিয়ে।"
            ছেলের কথা শুনে এবার ভালো করে বৌয়ের মুখের দিকে তাকায় নিভা,ইশ্ মনে হয় দেখে কতদিন খেতে পায়নি। একটু একখানা ছোট্টপারা মুখ। গায়ের রঙও তেমন ভালো নয়।তবে কপালখানা ভালো তাই একদম সোজা এই বাড়িতে।
          " তোমার নাম কি? ভাইবোন কজন? বাড়ি কোথায়? তোমরা বাঙাল না ঘটি?

            আমার নাম কমলা,ভাইবোন নেই,মা বাবাও নেই কাকারা ভাগলপুরেই থাকে। আমি বাঙালী।

        কমলা কথা কম বললেও কমলার কথায় মনটা ছুঁয়ে যায় অতীনের। কি সুন্দর করে বললো বাঙালী।
           কিন্তু নিভার গা জ্বলে যায়,এ মেয়ে তো মহা চালাক তাই আবার বলে.." তোমরা বিহারী নয় বাঙালী তা বুঝলাম।কিন্তু বাঙাল না ঘটি?"

        কমলার কেমন আশ্চর্য লাগে," আমার জন্ম এইদেশে তবে শুনেছি ঠাকুমা আগে বাংলাদেশে থাকতেন। "

           তার মানে বাঙাল,কথাটা কাঁটার মতো বেঁধে নিভার মনে। আর এটাও বুঝতে পারে যে এই মেয়ে মোটেই বোকা নয় বাঙাল তো? একসময় ওপার থেকে এসে এপারের মানুষগুলোকে কোণঠাসা করেছিলো আর এবার তার ভদ্র সৎ ছেলেটাকে হাত করে এই বাড়িতে ঢুকলো।

      ***************

  কমলার এই অযাচিত প্রবেশ বাড়ির কারো যে ভালো লাগেনি তা বুঝতে খুব বেশিদিন সময় লাগলোনা অতীনের।
      কমলাকে রান্নাঘরে কখনোই ঢুকতে দেওয়া হতনা কারণ বাঙাল রান্না কেউ খেতে পারবেনা এই বাড়িতে। ওর পরিবেশন ভালোনা,পুজোর কাজ জানেনা,এঁটো কাঁটার বিচার নেই এমন কত অভিযোগ।

কমলা মাঝে মাঝে বুঝতেই পারেনা ও বাঙাল বলে শাশুড়িমা অসন্তুষ্ট নাকি কপালে কাঙাল বলে উনি ওকে ভালোবাসেন না।
     খুব ইচ্ছে করে ওর একটু মায়ের আদর পেতে ওনার কাছে কিন্তু সব সময়ই অবহেলা আর কথার আঁচড় ছাড়া তেমন কিছু জুটতোনা। অতীনও বুঝতো কমলা যেন বাড়ির একটা ফালতু কুড়োনো অচল পয়সা যার বাপের বাড়ি নেই বাপের বাড়ি থেকে তত্ত্ব আসা নেই। হয়ত তেমন চোখ ধাঁধানো রূপও নেই।
        তবুও কমলার মনটাকে খুব যত্নে আগলায় অতীন সবার আড়ালে শোয়ার ঘরে। কমলা বই পড়তে ভালোবাসে কত রাত গল্প করতে আর গল্প শুনতেই সময় কেটে যায়। রাতের সোহাগের ছোঁয়ায় সকালে একটু দেরি হলে উঠতে বুঝতে পারে শাশুড়ির আর জায়েদের মুখ ভার হয়।

              এর মধ‍্যেই অতীনের বদলি হয়ে গেলো কলকাতায়। হয়ত হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো সবাই। তাতেও শাশুড়িমা শোনালেন," কিছুই তো তেমন জানেনা,কি জানি কি করে সংসার করবে?"
       " মা চলুন না আপনি গিয়ে কদিন থেকে একটু দেখিয়ে দেবেন।"
          অতীনও বলে," মা চলোনা, একটু গুছিয়ে দেবে ওকে শিখিয়ে দেবে।"
  " এক বছর তো রইলো এখানে বাবা শেখার ইচ্ছে না থাকলে কি হবে? একেই বাঙাল তারপর আবার বিহারে মানুষ মা বাপ মরা মেয়ে কিছুই জানেনা।"
    শাশুড়ির ঠোঁট উল্টানো দেখে চোখটা ছলছল করে কমলার। সত‍্যিই হয়ত কিছুই জানেনা আসলে মা বাবা না থাকলে যা হয়। শাশুড়িমাও কোনদিন ভালোবেসে কাছে ডেকে নিলেননা।"

***************

    মাঝে কেটে গেছে আরো দুটো বছর অতীন বাড়িতে এলেও মাঝে মাঝে কমলাকে নিয়ে মাকে নিয়ে যেতে পারেনি নিজের কাছে। কেন জানেনা এক অদ্ভুত ইগো মায়ের।

         বিকেলবেলা চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে টিভি খোলেন নিভা.. রান্না দেখাচ্ছে হঠাৎই চোখ পড়ে যায় এতো ছোটবৌমা মানে কমলা। ডাক ছাড়েন বড় আর মেজো বৌমাকে। "দেখেছো কি অবস্থা! এখানে এক বছর থেকে গেলো কিছু বুঝলাম না এখন তো দেখি টিভির রাঁধুনি হয়ে রাঁধতে গেছে।"
             " মা বাঙাল মেয়ে ভীষণ বুদ্ধি ওদের। কই আপনাকেও তো বলেনি রান্না করছে। আপনি বলবেন ঠাকুরপোকে ফোনে।"
        বৌমারা বললেও ছেলেকে কথাটা বলতে ইচ্ছে করেনা নিভার। সত‍্যিই হয়ত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়ে যাবে মেয়েটাকে। অভিমানের মেঘ অকারণে আরো কালো হলো।

       তবুও একদম কোনদিনই যেখানে পা দেবেননা ভেবেছিলেন নিভা হঠাৎই সেই ছোটছেলের বাসাতে পা রাখতে হলো ওদের কর্তা গিন্নীকে। বাবার পেশমেকার বসানোর পুরো দায়িত্ব হাসিমুখে নিলো অতীন।

      

      
            
     

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...