Skip to main content

গীতবিতান

#গীতবিতান#
রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

অষ্টমঙ্গলার পর নতুন বিয়ে করা বৌ বিনীতা যখন বগলদাবা করে তানপুরা আর একগাদা রবীন্দ্র রচনাবলী হাতে করে শ্বশুরবাড়িতে পা রেখেছিলো খুবই দুর্বিষহ লেগেছিলো অতীন্দ্রর। শাশুড়িমা মুখ টিপে হেসে বেশ কড়া করে বলেছিলেন," অষ্টমঙ্গলাতে তো গেলে গিঁট খুলতে বাপু তা একেবারে গিঁট পাকিয়ে ফিরে এলে সাত তাড়াতাড়ি একদম তারের যন্তর হাতে করে। আর এগুলো কি শুনি?"
         " এগুলো রবিঠাকুরের বই মা। আমার বন্ধু এরা। ভীষণ মন খারাপ করছিলো তাই নিয়ে চলে এলাম মা।"
                " হুঁ পাটনায় থাকা বেহারী ভূত কিনা পড়বে রবিঠাকুরের বই।"
         বিড়বিড় করে বকবক করেন শাশুড়িমা। যদিও সম্বন্ধ দেখাশোনা আর বিয়ে সবই কলকাতায় মামাবাড়ি থেকে হয়েছিলো বিনীতার। অনেকবার করে নেড়েচেড়ে হাত,পা,চুল দেখেও মন থেকে সেই বেহারী কথাটা কিছুতেই যাচ্ছেনা বিনীতার শাশুড়িমায়ের। নেহাত কর্তার খুব পছন্দ হয়ে গেলো বাপমরা মেয়েকে নাহলে কিছুতেই তিনি রাজী হতেননা এই বিয়েতে। যদিও দেখতে রূপসী,একটু বেশিই রূপসী আর ওখানেই হয়ত একটু মন কেমন করা ঈর্ষা ওনার। অষ্টমঙ্গলা করতে গিয়ে দুটোদিন পার হতে না হতেই ফেরত এলো হাঘরে বাপের বাড়ি থেকে,মেয়ে জামাইকে রাখার মুরোদ নেই। আর ছেলেটাও হয়েছে তেমনি আনতে দিলো কেন এই আপদ যন্তরটাকে? এখন প‍্যাঁচার মত মুখ করে দাঁড়িয়ে।

         শ্বশুরমশাই অবশ‍্য খুব খুশি হয়েছিলেন বৌমার হাতে তানপুরা দেখে," দেখেছো গিন্নি ঠিক যেন সরস্বতীর মত দাঁড়িয়ে বৌমা। আমার বেশ হলো গান শুনবো সকাল বিকেল।"

            অতীন্দ্র কোনদিনই শুনতে চায়নি বিনীতার গান। বিনীতার শরীরটাকে পছন্দমত খুলে দেখতে দেখতে নিজের অপছন্দগুলো ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছিলো অতীন্দ্র। শুধু বিনীতাই বলতে পারেনি ওর পছন্দগুলো।
     ওর আদর করে আনা বন্ধুরা মুখ লুকিয়েছিলো অন‍্য বইয়ের পেছনে আর তানপুরাটা মাদুরের পেছনে। গরমের দিনের বিকেলে মাঝেমধ‍্যে মাদুর পেতে মেঝেতে বসে বন্ধুকে কোলে তুলে নিতো বিনীতা একমাত্র শ্রোতা ছিলেন শ্বশুরমশাই। বাইরে বাসন ফেলার দুমদাম আওয়াজে বুঝতো তানপুরার সুরে শাশুড়ির অসুর প্রবৃত্তিটা আরো বাড়ছে।

                      একটা সময় বাড়িতে আরো একটা ছোট বন্ধু এলো,বিনীতার সন্তান। ওর এলোমেলো সুরে বাড়ি ভরলো তবে দূরে চলে গেলো বিনীতার সুরের বন্ধুরা। তবুও মা হওয়ার চেয়ে বড় খুশি বোধহয় কিছুতেই হয়না। অতীন্দ্রর সাথে যে বন্ধুত্বটা অনেক চেষ্টা করেও করতে পারেনি সে বন্ধুত্বটা পুরোপুরি হয়ে গেলো ওর সন্তানের সঙ্গে।         অতীন্দ্রর সাথে মনের ফাঁকটা আর জুড়লোনা তেমনভাবে কোনদিনই। তবে বন্ধু হলো ছেলে আর বই। অতীন্দ্রর সাথে ওর ভাব না হওয়ার পেছনে হয়ত অনেক কিছুই ছিলো। কিছুটা ছিলো এই সংসারেই উপস্থিত আর কিছুটা বাইরেও। বাইরের প্রলোভন,বন্ধুবান্ধব আর নেশা কোনটাই থামাতে পারেনি বিনীতার রূপ বরং ওর রূপকে যে পায়ে মাড়ায় অতীন্দ্র তা বুঝিয়ে দিতো হাবেভাবে। আর তাতে ইন্ধন দিতেন শাশুড়িমা।ছেলে বৌয়ের অমিলটা তাকে দিতো বেশ আত্মতৃপ্তি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিনীতা....
   তবে এতদিন বাদে স্বামী আর শাশুড়ির দোষত্রুটি আর তলিয়ে দেখতে চায়না। দুজনেই তো অনেকদিন গেছে তারার দেশে।

****************

            তেতাল্লিশ বছর বয়েসে বাইশের অত্রিকে নিয়ে বিধবা হয়েছিলো বিনীতা। ওর মায়ের মতই অকাল বৈধব‍্য এসেছিলো ওর জীবনেও। অতীন্দ্র যদি একটু হিসেবী হতো জীবনযাত্রায় তাহলে হয়ত এত তাড়াতাড়ি এই পৃথিবীর আলো ফিকে হয়ে যেতোনা ওদের জীবনে। তবে ছেলেকে অবলম্বন করে আর ওকে বড় করতে করতেই কখন যে কেটে গেছে অনেকগুলো বছর বুঝতেই পারেনি। ছেলে ছাড়া আর অন‍্যদিকে তাকাওনি কখনো।
    একদিন অত্রি হঠাৎই বগলদাবা করে নিয়ে এলো আবার পুরোনো তানপুরাটা।কখন যে সারাতে দিয়েছিলো কে জানে?
     " মা তোমার পুরোনো বন্ধুকে আবার এনে দিলাম ওর সাথে আবার আলাপ করো চুটিয়ে।"
        বিনীতা চিরকালই স্বল্পভাষী এবং শ্বশুরমশাইয়ের পর্যবেক্ষণে বুদ্ধিমতীও তাই বুঝলেন তার এতদিনের অবলম্বন পুত্র রূপ বন্ধুকে এবার ছাড়তে হবে তাকে। ছেলের জীবনেও এসেছে কোন বিশেষ বন্ধু যে হয়ত মায়ের থেকেও একসময় প্রিয় হয়ে উঠবে ওর জীবনে। এটাই তো স্বাভাবিক, আজ তোমার যা কাল তা অন‍্য কারো হবে। দীর্ঘদিনের অনভ‍্যাস হলেও একটু একটু করে বন্ধুত্ব করতে শুরু করলেন তানপুরার সাথে বিনীতা, অনেকটা সময় অত্রি বাড়িতে থাকেনা ভালোই হয়েছে সেই সময়টা ডুবে যান রেওয়াজে অথবা রিমলেস চশমা নাকে চড়িয়ে পাতা ওল্টান গীতবিতানের..'ভরা থাক ভরা থাক স্মৃতিসুধায় হৃদয়ের পাত্রখানি লেখাটায় চোখ চলে যায়।' বই আর সুগন্ধ সত‍্যিই খুব ভালো উপহার। সুগন্ধের শিশি একসময় খালি হয়ে গেলেও বইয়ের পরতে পরতে জমে থাকা অনেক স্মৃতির ডালিই মনকে নিয়ে যায় সুদূর অতীতে। আনমনা হয়ে যায় বিনীতা ওর খামখেয়ালী আঙুলগুলো ছুঁতে চায় বহুদিন আগে লেখা মুক্তাক্ষর গুলোকে।

*******************

       অত্রির জীবনের সেই প্রিয় বান্ধবীটি মানে যার আগমন বার্তা বছর দুয়েক আগেই বিনীতা পেয়েছিলেন সে যখন এই বাড়িতে পা দিলো তখন বিনীতার বয়েস পঞ্চাশ হলেও শরীরে বয়েসের ছাপ তেমন পড়েনি, মুখে সরলতা মাখানো।নিজের জীবনের কোন প্রভাবই যাতে না পড়ে নতুন বৌমার জীবনে তারজন‍্য খুব চেষ্টা করলেও বৌমা রাত্রির মন জয় করতে পারলেননা বিনীতা।হয়ত তার জন‍্য তার রূপ কিছুটা দায়ী,আসলে অনেক সময়ই অতি বড় ঘরণী না পায় ঘর আর অতি বড় সুন্দরী না পায় র। মানুষের ঈর্ষা করার মত হয়ত অনেককিছুই ছিলো বিনীতার। বেশিরভাগ স্বামীই(সকলে নন) অনেকক্ষেত্রেই ঈর্ষা করেন স্ত্রীদের বাড়তি কোন গুণ(রান্না,ঘরকন্না ছাড়া) । আর অনেকক্ষেত্রেই মহিলারা অন‍্য মহিলার রূপ এবং গুণ উভয়কেই, আর সেই জন‍্যই বিনীতা পুত্র ছাড়া তেমনভাবে কারো প্রিয় হতে পারেনি। রাত্রি প্রথমেই বাড়িতে এসে দেখলো শাশুড়ির সাথে তুলনায় যাওয়ার মত ওর তেমন কিছু নেই যদিও অন‍্য শাশুড়ির মত বিনীতার মনের আসেপাশে সে কথা ছিলোনা। বৌভাতের রাত থেকেই বন্ধুদের স্তুতি শুরু হয়েছে,"তোর শাশুড়ি কি সুন্দর দেখতে রে। কি ভীষণ ভালো ব‍্যবহার! মনেই হয়না অত্রিদার মা।"
       কথাগুলো বিঁধলো রাত্রিকে ওনার গমরঙা সুডৌল দেহসৌষ্ঠবের পাশে রাত্রি রোগা পাতলা শ‍্যামলা আর ছোটখাটো। গানও সে জানেনা,নিরামিষ আমিষ রান্নাতেও তেমন পটু নয়।তবে ঝরঝরে ইংরেজী বলে,বড়লোকের বাড়ির একমাত্র মেয়ে বাবার কলকাতা শহরে অনেকগুলো বাড়ি আর গাড়ি। তাই শাশুড়ির সাথে তেমন করে বন্ধুত্ব জমলোনা কোনভাবেই রাত্রির। সব সময় মনে হত অত্রি একটু বেশিই মা মা করে সবসময়..মায়ের রান্না,মায়ের কথা,মায়ের রুচি,মা বঞ্চিত হয়েছে জীবনে।
     খুব রাগ হয় রাত্রির,"তোমার মা তোমার জন‍্য স‍্যাক্রিফাইস করেছে এটা তো স্বাভাবিক।সব মায়েরাই করে,এতে নতুন কি আছে।সব সময় এমন বোলোনা প্লিজ। আমি এগুলো শুনে কি করবো?"
         অত্রি চেষ্টা করলো রাত্রির মত হতে কারণ রাত্রিদের ব‍্যবসার অনেকটা এখন সামলায় অত্রি।
             নিজেকে গুটিয়ে নিলেন বিনীতা আরো।
অত্রিকে ডেকে বললেন," বাবু এবার একটা রান্নার লোক রাখ।"
     " কেন মা?তোমার কি শরীর খারাপ? ছোট থেকে তো তোমার রান্না খেয়েই বড় হয়েছি।"
         " আমার বয়েস হচ্ছেনা,তারপর আজকাল অস্থির লাগে।ভালো কিছু খেতে হলে বলবি করে দেবো।"
        রাত্রি এটাই চাইছিলো মনে মনে খুশিই হলো রান্নাঘর হাতে পেয়ে। তবে রাত্রির মেয়ে মানে বিনীতার দিদিভাই যখন একদম গ্ৰ‍্যানির ন‍্যাওটা হয়ে উঠলো তখন আর নিজেকে সামলাতে পারলোনা রাত্রি। ঐটুকু মেয়ে একবার সই বলে উনি ডাক দিলেই ছুটে যায়,রাতেও আনতে হিমসিম খায় রাত্রি।
              বিনীতার স্নেহে আঘাত লাগে রাত্রির ব‍্যবহারে কি যে মায়ার বাঁধন এই নাতি নাতনি!

****************

মেয়ের পড়াশোনার অজুহাতে উত্তর কলকাতা থেকে দক্ষিণ কলকাতায় বাবার ফ্ল্যাটে উঠে এসেছে অনেকদিন রাত্রি অত্রি আর মেয়েকে নিয়ে। তবে যাতায়াত বন্ধ হয়নি,অত্রি মায়ের টানে প্রতি সপ্তাহেই একবার ছুটে যায়,কি দরকার অদরকার সবটাই দেখে। রাত্রির যাওয়া কম হয় তবুও মাঝে মাঝে গিয়ে দেখে ভালোই আছে বিনীতা নিজের গন্ডীতে। একাই নিজের সব কাজকর্ম করেন নিজের মত। রাত্রি বলে," একটা লোক রেখে দিন সারাদিনের।"
    " না বৌমা,এই তো বেশ আছি।অযথা ঝামেলা বাড়িয়োনা।সারাদিন কাজ থাকে একটার পর একটা। এই সুযোগে কবিগুরুর বইগুলো পড়া হচ্ছে।ভালো আছি।"
        বিনীতার সই ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর কোলে "গ্ৰ‍্যানি আমি তোমার সাথে থাকবো।"
     " এখন তোমার স্কুল আছে সই তুমি বড় হও তারপর একসাথে আমরা থাকবো। ঠিক আছে।"

****************

  দেখতে দেখতে দিন চলে যায় কোথা দিয়ে সেই কবে এ বাড়ির চৌকাঠে পা দেওয়া বিনীতা প্রায় সত্তর ছুঁইছুঁই আর তার সই চন্দ্রিমা সদ‍্য যৌবনে পা রেখেছে। চন্দ্রিমার প্রিয় বন্ধু তার গ্ৰ‍্যানি। সময় পেলেই গাড়ি চালিয়ে ছুটে আসে টালিগঞ্জ থেকে টালায়। বিনীতার আলমারি থেকে তানপুরা সবেতেই তার অবাধ হস্তক্ষেপ চলে আর তার সাথে চলে মুখও। এই বয়েসেও বিনীতাকে সইয়ের জন‍্য বানাতে হয় নাড়ু,আমসত্ত্ব। রাত্রির কোন বাধাই আর আটকাতে পারেনা দুই সইয়ের মিলন। মেয়ের মধ‍্যে মাকে খুঁজে পায় অত্রি,একদম মায়ের মত দেখতে হয়েছে মেয়েকে তবে স্বভাবে ডাকাত।মাকে তো চিরকালই শান্ত দেখেছে।

          গ্ৰ‍্যানির আলমারি ঘাটতে থাকে চন্দ্রিমা।
  " কি খুঁজিস সই?"
   " ও গ্ৰ‍্যানি আমি রবীন্দ্র রচনাবলীর দুটো খন্ড নিয়ে গেলাম।"
    " ওরে ওগুলো তো আমার বুকের পাঁজর,বিয়ের পর বুকে করে এনেছিলাম।যত্নে রাখিস সই।"

      সাইডব‍্যাগে বইদুটো নিয়ে একটা চুমু খেয়ে গ্ৰ‍্যানিকে চলে যায় চন্দ্রিমা। সামনেই বাইশে শ্রাবণ কয়েকটা গান তুলবে আর্যদের বাড়িতে গিয়ে। যদিও মা কিছু জানেনা তবে গ্ৰ‍্যানি জানে আর্য ওকে প্রপোজ করেছে। সইকে সব বলতে হয় ওর। গ্ৰ‍্যানি বলেছে," আগে চাকরি তারপর বিয়ে কিন্তু সই। এখন তুমি খুব ছোট।"

***************
   হারমোনিয়ামের ওপর রবীন্দ্ররচনাবলী রাখা,গানটা লিখছে আর্য হঠাৎই একটা ছবি পৃষ্ঠার ভেতর থেকে উঁকি দেয় অবাক হয়ে যায় আর্য।
      " তুই এই ছবিটা কোথায় পেলি?"চন্দ্রিমাকে জিজ্ঞেস করে।
   " আরে এটা তো গ্ৰ‍্যানির বই। হবে গ্ৰ‍্যানির কোন ছবি।কেন রে?"
   " আমি আসছি এক মিনিট।"

          ছবিটা নিয়ে ভেতরে চলে যায় আর্য,একটু পরেই ওর ছোটদাদুকে নিয়ে আসে।
         ছোটদাদু বলেন, " বিনীতা তোমার ঠাম্মু দিদিভাই?"

      " হ‍্যাঁ দাদু। কিন্তু তুমি কি করে চিনলে গ্ৰ‍্যানিকে?"
  দাদুর সাথে সাথে হাসে আর্য.." আরে তোর গ্ৰ‍্যানি আমার দাদুর ক্রাশ ছিলো একসময়। আমাদের বাড়িতেও এই ছবিটা আছে আমি তো ঠিক বার করেছি খুঁচিয়ে।"
         " ঐ সব ক্রাশ বুঝিনা তবে বিনীতার জন‍্য আর বিয়েই করা হলোনা বুঝলি।"
   চন্দ্রিমা জানে আর্যর ছোটদাদু চিরকুমার তবে তার পেছনে যে গ্ৰ‍্যানি তা তো জানা ছিলোনা। ইশ্ যদি আর কিছুদিন আগে দেখা হত দুজনের তবে দেখা তো করাতেই হবে জলদি জলদি।

       ওরা দুজনেই দেখে ছোটদাদু রবীন্দ্র রচনাবলীর প্রথম পাতাটা খুলেছেন যেখানে মুক্তাক্ষরে লেখা..' ভরা থাক স্মৃতিসুধায় হৃদয়ের পাত্রখানি।'

     বিনীতাকে দেওয়া প্রথম উপহার আজও রেখেছে যত্নে। বন্ধুত্বটা তাহলে পুরোনো বইয়ের মলাটের মাঝে মনে রেখেছে বিনীতা।

              বিনীতার সামনে আজ বন্ধুত্বের পুরোনো অ্যালবামটা খুলে দিয়েছে ওর সই। কি বলবে সৌরীনদাকে? হয়ত বলবে আজও তোমাকে মনে রেখেছি বলেই মাঝে মাঝে হৃদয়ের জানলা খুলে উঁকি দিই গীতবিতানের পাতায়। স্মৃতির সুর বাজে বন্ধুত্বের তানপুরার পুরোনো তারগুলোতে পঞ্চাশ বছর আগের মতই।
সমাপ্ত:-

         

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...