Skip to main content

ফ্রেন্ডশিপ অ্যান্ড মোর3


ঝঐঅঙ্কিতের হাত ব্রেকের ওপর অহনা হাত রাখে অঙ্কিতের হাতে...ওর হাতে আছে এক গভীর নির্ভরতা যা এই কদিনে অঙ্কিতকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।

      তবে অহনা কখনো জিজ্ঞেস করেনা ওর বাড়ির কথা। কারণ ও জানে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো আর সেটা মুছে দিয়ে বাড়ির মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াটাই বন্ধুর কাজ। বাড়িটাই তো শিকড় সেখান থেকে উচ্ছেদ করা কখনোই উচিত নয়। যারা এটা করে তারা কখনোই ভালো বন্ধু নয়।

  ' আলো আলো রং জমকালো চাঁদ হয়ে যায়,
  চেনাশোনা মুখ জানাশোনা হাত ছুঁয়ে যায়
ধীরে ধীরে মন ঘিরে ঘিরে গান রেখে যায়ো
আজও আছে গোপন ফেরারী মন।
ছোট ছোট দিন আলাপে রঙিন নুড়ির মতন
ছোট ছোট রাত চেনা মনটার পলাশের বন।
------------আজও আছে গোপন ফেরারী মন,
বেজে গেছে কখন সে টেলিফোন।

গানের সুরে আর কথায় আনমনা হয়ে যায় অহনা ওর উড়ুউড়ু মনটাকে ছুঁতে চায় অঙ্কিত আজই   নাহলে এবার সত‍্যিই দেরি হয়ে যাবে।

           বসন্তের বাতাসে সাঁতার কেটে বেশ অনেকটা ড্রাইভ করে ওরা এসে পৌঁছলো মন্দারমণি। সমুদ্র তো কত দেখেছে অঙ্কিত কিন্তু আজ যেন ঢেউ হীন শান্ত সমুদ্রের রূপ মনকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো অঙ্কিতের।
          অহনা বালি কেটে সমুদ্রের জলে পা ডোবাবে বলে ওর হাত ধরে টানে।
       " এক সেকেন্ড একটা ছবি তুলি আগে এই ছটফটে সমুদ্রকন‍্যার।"
                        চারদিক তখন বেশ ফাঁকা ফাঁকা সমুদ্রের জলে পা ডোবায় অহনা ওকে দেখে মনে হচ্ছে আবার ছোটবেলায় ফিরে গেছে দুজনেই বন্ধুত্বের টাইম মেশিনে চড়ে।

               আজ অঙ্কিতের ক‍্যামেরা বাঁধনহারা দুষ্টুমিতে ভরা অহনাকে আজকে বারবারই বন্দি করছে ক‍্যামেরায়। ফটো তুলতে তুলতে অন‍্যমনস্ক হয়ে একটু হোঁচট খায় অঙ্কিত। অহনা ওকে ধরে ফেলে..অঙ্কিতের বুকের একদম কাছে অহনা। ওদের পা গুলো ধুয়ে দিচ্ছে সাগরের জল।
      অঙ্কিতকে দেখতে একদম অন‍্যরকম লাগে অহনার..অঙ্কিত বলে," আমার মা নেই,তোর মত ভালো বন্ধুও নেই তেমন যে বকতে পারে,রাগ করতে পারে আবার আগলাতে পারে এভাবেই হোঁচট খেলে। আমার মত রাগী,ক্ষ‍্যাপা একটা ছেলেকে ভালোবাসতে পারবি?"
                অহনার চোখে ভালোলাগার আবেশ মুখে দুষ্টু হাসি বললো..." দাঁড়া আগে সমুদ্রকে জিজ্ঞেস করে নিই। তারপর বলছি।"
           " মজা করিসনা প্লিজ, বল একটা কিছু আমি কিন্তু দুদিন বাদেই চলে যাবো।"
        অহনার মুখটা খুব সিরিয়াস..." নাহ্ সমুদ্র বললো এত তাড়াতাড়ি বলা যাবেনা,আগে ব্লাড টেস্ট,ইসিজি,ইকো,এক্স রে সব রিপোর্ট আসুক তারপর মেপে দেখতে হবে ভালোবাসার গভীরতা কতটা।"

          অঙ্কিত বলে.." এতদিন দেখে বুঝতে পারিসনি এখনো? রিপোর্ট দেখতে হবে? পচা ডঃ তুই।"
     " তুই পচা বন্ধু,আমি যে তোকে খুব ভালোবাসি তা এতদিন বুঝিসনি কেন? এবার মনে হচ্ছে সিটি স্ক‍্যানও করতে হবে।"
                অহনাকে জড়িয়ে ধরে অঙ্কিত।
  " এই ছাড় এটা তোর জার্মানী নয় যে কথায় কথায় হাগ,কিস সব চলবে। চল এবার কিছু খেয়ে আবার রওনা দিই। কাল তো দোল তাই বাড়ি ফিরি তাড়াতাড়ি।'"
         
             ********************

  ফেরার পথে ড্রাইভ করছে অহনা,অঙ্কিত জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।তখনো বিকেল,মাঝে মাঝেই লোকজনের ভিড় কোথাও বা বাজার বসেছে। অহনা মিউজিক অন করেছে.. গান শুনতে আর গাইতে দুটোই ভালোবাসে অহনা।

      অহনার কাছে শুনেই বাংলা গানকে ভালোবাসা আর নতুন করে চেনা অঙ্কিতের। গান বাজছে.." উঠছে জেগে সকালগুলো
           পাশ ফিরে  মন আবার শুলো।
           এবার তোকে আদর চোখে দেখবে সে।
            *********
             খুনশুটি আর ঝগড়াঝাটি🎶🎶🎶🎶
               আড্ডা হবে খুব জমাটি
               দেওয়াল ঘড়ির পিছন সুরে রাখতে তাল
🎵🎵🎵🎵🎸
          অহনার দিকে আদুরে চোখে তাকিয়ে অঙ্কিত। সমুদ্রে দাঁড়িয়ে প্রেমে পড়ার সেই সকালটা অদ্ভুতভাবে এই বিকেলেও সকালই রয়ে গেছে। পড়ন্ত বেলার আলোতে অহনাকে আরো সুন্দরী লাগছে যদিও রোদ চশমায় ওর চোখদুটো ঢাকা তখনো এলোমেলো হাওয়ায় উড়ছে ওর ঝাঁকড়া চুল।

                      কলকাতার রাস্তায় মাঝে মাঝেই রঙ আবিরের দোকান বসেছে। অঙ্কিত আর অহনা নেমে দুজনেই আবির কেনে। কি সুন্দর সুন্দর সব রঙের ছোট ছোট প‍্যাকেটে আবির।
            রাস্তায় অনেকেই রঙে রাঙা হয়ে ফিরছে অনুরাগে কেউ বা মজায়। রঙের উৎসবের ছোঁয়া ওদের সবারই মনে। ভালোবাসার রঙে রাঙা আজ অহনাও।বন্ধুত্বের রঙ পেন্সিল বাক্সের সব রঙগুলোই আজ ভালোবেসে অহনাকে দিয়ে দিয়েছে অঙ্কিত।
                   সারাদিন বাদে এবার মন দেওয়া নেওয়ার শেষে বাড়ি ফেরার পালা।
         অহনার গালে কপালে মাখিয়ে দেয় অঙ্কিত আবিরের রঙ ভালোবাসার রঙে মাখিয়ে। রঙিন প্রেমের ছোঁয়া লাগে অহনার ঠোঁটেও। ও মাথা রাখে অঙ্কিতের বুকে ওকে নামিয়ে দেবার আগে।
   
        "কাল বাড়ি থেকে নো বেরোনো,বাবার সাথেই থাকবো সারাদিন। বাবা বলছিলো মালপোয়া বানাবে।"
      " একদম কাল আমিও সকালে বেরোবোনা,সন্ধ‍্যেয় আমার একটা কাজ আছে। পরশু দেখা হচ্ছে। আর কি হয়েই এলো।"
     অঙ্কিত দেখতে পায় বসন্তেও অহনার মুখে নিম্নচাপের মেঘ তাই বলে..." তাড়াতাড়ি আসবো আবার প্রমিস।''

******************

        অঙ্কিতের কাছে সব বললেও অহনা বলতে পারেনা রাধিকা ম‍্যাম ওকে কলেজে ডেকেছিলেন নিজের রুমে দুদিন আগে, সৌনীত দাকে বললেন..." সৌনীত আর রুমকি তোমাদের উপর দায়িত্ব রইলো নতুনরা যেন যায় দোলের দিন সন্ধ‍্যেয় আমার বাড়িতে।
অহনা তুমিও এসো কিন্তু অবশ‍্যই এই একটা দিন আমি একটু সবাইকে আসতে বলি।
আসলে তোমরা স্টুডেন্টরাই তো আমার ছেলেমেয়ে।"

       রাধিকা ম‍্যামের গলাটা কেমন যেন ভারী হয়েছিল শেষটা। তবে ম‍্যাম নিজে বলেছেন ডেকে তাই যেতে তো হবেই। অঙ্কিত জানলে হয়ত রিঅ্যাক্ট করবে তাই আর বলেনি অহনা। তাছাড়া এটা তো সত‍্যিই ওদের কলেজের ব‍্যাপার, প্রফেশনের ব‍্যাপারে সব সময় কথা বলতে ভালোও লাগেনা।

        এখানে এসে কদিন সকালেই ঘুম ভেঙে যায় অঙ্কিতের। তখন ভোর হয়েছে, বাবা ওঠেনি দেখলো।ছাদে গিয়ে ফুলের সুবাস নিলো কিছুক্ষণ। ছাদের পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছটা ফুলে ফুলে ভর্তি। মনে পড়লো একবার শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলো বসন্ত উৎসবে তখন কলেজে পড়ে।খুব আনন্দ হয়েছিল মন ছুঁয়ে গেছিলো এক অন‍্য অনুভূতিতে চারিদিকে শিমূল পলাশ রাঙা আর তার মাঝেই ওরে গৃহবাসী গান দিয়ে দিনের শুরু আর তারপরে সবার রঙে রাঙা হওয়ার পালা। বাবা ততক্ষণে উঠে এসেছে ছাদে হাতে সাজি নিয়ে...ওকে দেখে একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

           নানা রঙের ফুলের বাহার আলো করে আছে সাজিতে। বাবা বলে.." ঠাকুরের পায়ে আবির দিস আজ। আমি মালপোয়া ভাজবো।"
     হাসে অঙ্কিত," বাবা ওটা কার জন‍্য? আমার জন‍্য না ঠাকুরের জন‍্য?"
      বাবা হাসে," ঠাকুর তো উপলক্ষ‍্য, খায় তো মানুষ।"

                    একটু বেলা বাড়তেই মনটা কেমন যেন অহনা অহনা করতে শুরু করলো অঙ্কিতের। যাবে নাকি একবার বাইকে করে সারপ্রাইজ দিতে? তারপর যা ভাবা তাই কাজ।

    বাবা আমি একটু আসছি..." এসে স্নান করবো।"বলেই একদম ছুট বাইকে করে।
     
          বেলটা বাজতেই অহনা বলে," মা দেখো তো কে? আমি দোলনাটা সাজিয়ে দিই ফুল দিয়ে।"
            একটু বাদেই ওর মা হেসে দাঁড়ায়..." দ‍্যাখ কে এসেছে। অহনার চোখদুটো খুশিতে নেচে ওঠে আরেকটু হলেই বলে ফেলেছিলো এ তো স্বয়ং কেষ্টঠাকুরই এসে গেছে।

       মায়ের সামনে গুডগার্ল সেজে বলে.." আরে তুই! হ‍্যাপি হোলি। যখন এসে গেছিস একটু বোস আমি ঠাকুর সাজাচ্ছি মা পুজো করবে দেখে যাবি।"
       অঙ্কিত বলে," আমি একটু বাদেই চলে যাবো বাবাও পুজো দেবে। হঠাৎই ইচ্ছে হলো আসার।"
      " আচ্ছা যাস,আটকাবোনা।"

       অহনার ফুলের সাজে ওর শ‍্যামরাই বেশ খুশি হয়ে যেন হাসছে। খুব সুন্দর একটা কিউট দোলনায় বসিয়েছে ওদের। আন্টি সামনে প্রসাদ গুছোচ্ছেন। ধূপের গন্ধে সারা ঘর মেতেছে। অহনা একদম সাদা কুর্তা পাজামা পরেছে সাথে লাল দোপাট্টা।

        ইশ্ একদম পুজোর সময় এসে পড়েছে! ও ভাবতেই পারেনি এখন ওরা পুজো করবে।

              "অহনা গানটা ধর"...মা বলাতে গান শুরু করে অহনা..'ব্রজগোপী খেলে হোরি।'

       সত‍্যিই ভীষণ মিঠে গায় অহনা। মনটা হারিয়ে যায় অঙ্কিতের আজকের সকালে এটাই বোধহয় সেরা পাওনা। অঙ্কিতের মোবাইলবন্দি হলো অহনার গাওয়া নজরুলগীতি। সুরের মূর্ছনায় ভরে গেলো মন। অঙ্কিতের মনে হলো এই কি সেই ছুরি কাঁচি ধরা ডক্টর অহনা?

        পুজোর পর ছাদের নিভৃত অবকাশে দুজনেই দুজনকে মাখায় ভালোবাসার রঙ উজাড় করে। হয়ত যা মনের কুঠুরিতে আগলবন্দি হয়ে থাকবে অনেকদিন।
             
               ****************

      অঙ্কিত বাড়ি আসার সময় আন্টি ক্ষীরের মালপোয়া আর পায়েশ দিয়ে দেয় বাবার জন‍্য একদম জোর করে। বাড়িতে এসে দেখে বাবার স্নান হয়ে গেছে তাই ও নিজেও স্নান করে বাবার পাশে বসে পায়জামা পাঞ্জাবী পরে। ও থাকাতে খুব ভালো লাগে শান্তনুর আর একলা লাগেনা এবার।
               পুজোর মধ‍্যেই ফোনটা অন করে অঙ্কিত অহনার গানটা বাজতে থাকে।
          শান্তনু তখন কিছু বলেনা,পুজো শেষ হলে বলে," মনটা একদম হারিয়ে গেছিলো রে। কি সুন্দর গানটা একদম আজকের দিনের জন‍্যই।"

                অঙ্কিত ভাবলো বাবা কিছুই বোঝেনি,আর শান্তনু মনে মনে ভাবলো এটা তো অহনার গান যার মিঠে গলার গান অঙ্কিতের রিংটোন।

      সন্ধ‍্যেবেলা যাবার ইচ্ছে না থাকলেও ছেলের জোরাজুরিতে যেতেই হলো। অবশ‍্য রাধিকা মন্টুকে গাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলো নিয়ে যাবার জন‍্য।
                     বাবা চলে যাবার পর অনেকটা অবসর। অহনাও বলছিলো কি একটা কাজ আছে। আলমারিটা খুলতে চায় অঙ্কিত এবার ওর ছোটবেলার ছবির অ্যালবামটা সাথে নিয়ে যাবে। মায়ের জন‍্য যখন মন খারাপ হবে দেখবে মাঝে মাঝে।
        আলমারিতে কত স্মৃতি!বাবা সব গুছিয়ে রেখে দিয়েছে এমন কি ওর ছোটবেলার লুডো আর লাট্টুও।অন‍্য খেলনা তো আছেই। মা বাবার একটা ছবি,হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ অতীতে ডুব দেয়। কোথায় গেলো অ্যালবামটা...বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে একদম তলা থেকে পায় খুঁজে বাবা যত্ন করে একদম প‍্যাকেটবন্দি করে রেখেছে। আ্যলবামটা ছোট বলে সুবিধা হবে নিয়ে
যেতে,প্রথম দুটো ছবি দেখে তারপর ভাবে দেখবে ওখানে গিয়ে। যখন সময় কাটবেনা তখন দেখবে বসে।

*******************

    শান্তনু রাধিকার বাড়িতে গিয়ে দেখে একদম সব গোছানো। রাধিকা বলে," আজ তোর জন‍্য একটা খুশখবর আছে মানে সারপ্রাইজ।"
       রাধিকার কথা শেষ হতে না হতেই বাইরে কতগুলো ছটফটে গলার আওয়াজ কানে ভাসে। রাধিকা একটু ব‍্যস্ত হয়ে ওঠে.." ঐ আমার ছেলেমেয়েরা এলো বোধহয়।"
          বেশ কয়েকটা ছেলেমেয়ে ঢুকলো একসাথে। রাধিকা বললো.." অহনা এলোনা?"

      " হ‍্যাঁ ম‍্যাম আসছে,কল করেছিলাম।এসে যাবে একটু বাদেই।"
     শান্তনু বুঝতে পারে সারপ্রাইজটা কি। অঙ্কিত অহনাকে না আনলেও রাধিকা ফেলতে পারেনি শান্তনুর আব্দার..তাই আজ ওকেও ডেকেছে বাড়িতে।

          রাধিকা এই দিনটাতে একটু খাওয়ায় সবাইকে।মেয়েটা তো জীবনে তেমন কিছুই পায়নি কোনদিন তাই হয়ত ডাক্তার হয়েও কৃষ্ণকে নিয়েই আছে মানে কৃষ্ণপ্রেমেই মাতোয়ারা হয়ে আছে। আর তার সাথে বাড়তি পাওনা শান্তনুর বন্ধুত্ব।

             শান্তনুর বারবার মনে হলো অঙ্কিতের কথা,ছেলেটা এলে ভালো হত। কিছুতেই এলোনা।
                 রাধিকা ওদেরকে রেখে একটু বাইরে গেছিলো। একেবারে অহনাকে নিয়ে ভেতরে এলো আজকের সন্ধ‍্যের বিশেষ অতিথি হয়ত অহনাই ওদের দুজনের জন‍্য।
       অহনাই তো সেই ঠান্ডা ঝর্ণার জল যার চঞ্চলতা আছে কিন্তু নির্জনতায় আনন্দ এনে দেয়। অহনার ঝাঁকড়া চুলগুলো আজ এলোমেলো করে খোলা। হলুদ কুর্তা আর লাল ওড়নাতে আজ বসন্তকে বেঁধেছে অহনা।

          শান্তনু তাকিয়ে দেখে মেয়েটাকে, খুব ভালো লাগে। অহনার মধ‍্যে যেন রাধিকার অনেক বছর আগের উচ্ছ্বলতা দেখতে পায়। খুব দুষ্টুমি করতো ওরা দোলে একদম বালতি বালতি রঙ গুলে ঢালা হতো অনিচ্ছুক বন্ধুদের মাথায়। মোটামুটি বাড়ি থেকে টেনে বার করে রঙ দিয়ে ভূত করা হত। রাধিকার বাড়িতে কৃষ্ণঠাকুরের মূর্তিটা খুবই সুন্দর পাশে রাধাও আছে। তখন আরতি হচ্ছে...আরতির পর সবার হাতে প্রসাদ দিয়ে আবির ছুঁইয়ে দেয় রাধিকা।
              রাধিকার ছাত্রছাত্রীরাও একে অপরকে আবির দিচ্ছে। শান্তনুর ভালো লাগে ওদেরকে দেখে। অহনা অবশ‍্য চেনেনা শান্তনুকে,একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে নাহলে হয়ত একটু অস্বস্তি হত। শান্তনুর ভালো লাগে অহনাকে খুবই বুদ্ধিদীপ্ত মিষ্টি মেয়ে আর সুন্দর।সবচেয়ে আগে মনে হয়েছে ও সামলেছে অঙ্কিতকে এই কদিন।

              রাধিকার ছাত্রছাত্রীদের মধ‍্যে কয়েকজন গান জানে তাই এই সুযোগে একটা ছোটখাটো জলসা হয়ে গেলো। কি সুন্দর গায় ছেলেমেয়েগুলো। তবে শান্তনুর মোবাইলে তোলা থাকলো অহনার গান... 'নীল দিগন্তে ঐ ফুলের আগুন লাগলো,নীল দিগন্তে।'
        শেষ হতেই আবার সবার বায়না আরেকটা হয়ে যাক..রাধিকাও গলা মেলালো।এবার আধুনিক গাইলো অহনা...' ও শ‍্যাম যখন তখন খেলোনা খেলা এমন ধরলে আর তোমায় ছাড়বোনা।'
          সকালবেলা ছেলের রঙমাখা মুখটা মনে পড়ে গেলো। শ‍্যামকে ভালোই জব্দ করেছে অহনা,বাইকে করে যেমন গেছে ছুটে। এবার সত‍্যিই হাসি পেলো শান্তনুর।রাধিকা কাছে এসে গম্ভীরভাবে বলে গেলো.. "হাসছিস কেনো? পুরোনো কিছু মনে হচ্ছে?"

       শান্তনু আস্তে আস্তে বলে নতুন পুরোনো সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা কিন্তু সত‍্যিই খুব ভালো গান গায়।আর কাউকে মুগ্ধ করতে গানের জুড়ি নেই।

      "শোন আমি তো ওকে ডেকে বলতে পারিনা এই অঙ্কিতের বাবা,ও অবাক হবে আর কি ভাববে কে জানে? তুই পারলে কথা বলে নিস।"

         শান্তনু বললো.." কিছু চেনাজানা পরে হওয়াই ভালো। আজ থাক,অন‍্যসময় আলাপ করে নেবো।"
                সবাই ওরা গান শেষের পর খাওয়াদাওয়া আর হৈ চৈ করছে। শান্তনু আর অপেক্ষা করেনা বাড়িতে অঙ্কুটা একা আছে তাই তাড়াতাড়ি ফিরে আসে। রাধিকা সবটা গুছিয়ে দেয় অঙ্কিতের জন‍্য।
      " দিলাম সব,ওকে বলিস খেয়ে নিতে। আর এলে ওরই ভালো লাগতো অহনা এসেছিলো।"

****************
ফিরতে ফিরতে শান্তনুর মনে হয় অহনার গান শুনিয়ে আজ চমকে দেবে অঙ্কুকে কিন্তু পরমুহূর্তেই মনে হয়..কই অঙ্কু তো একবারও বলেনি অহনা আসবে এখানে। তার মানে অহনা হয়ত কিছুই বলেনি।

      বাড়িতে এসে অঙ্কিতকে খাবার গুছিয়ে দিতে দিতে বলে.." রাধিকা সব গুছিয়ে দিয়েছে খুব করে বলেছে খেতে। কি করছিলি বাবু এতক্ষণ? একটু ঘুরে এলে তো পারতিস বন্ধুদের সাথে।"

       " কদিন অনেক ঘুরেছি বাবা তাই একটু রেস্ট নিলাম।তারপর আজ দোলের দিন না বেরোনোই ভালো। অহনাও কোথাও একটা গেছে দোলের ইনভিটিশনে তাই চুপচাপ টিভি দেখছিলাম।একটু ঘুমিয়ে নিলাম।"
         শান্তনু বুঝতে পারলো অহনা সত‍্যিই বুদ্ধিমতী কদিনের অভিজ্ঞতায় হয়ত বুঝেছে বন্ধুত্বের মধ‍্যেও একটা গন্ডী থাকা দরকার

************

                  রাধিকার বাড়ি তখনো জমজমাট, ম‍্যামের বাড়িটা সত‍্যিই খুব সুন্দর ওরা সবাই বলে। খেতে খেতে হাসাহাসি করতে গিয়ে একটা কান্ড হয়েছে হঠাৎই অহনা দেখে কুর্তাতে বেশ কিছুটা মিষ্টির রস পড়ে গেছে। ইস্ এই অবস্থায় বাড়িতে যাওয়া চাপ হবে তাই কাচুমাচু হয়ে ম‍্যামকে বলে...ওয়াশরুমে যাবার কথা।

     " অহনা এতো হেজিটেট করার কি আছে তুমি  স্ট্রেইট যাও রাইটহ‍্যান্ডে পাবে ওয়াশরুম।"

        যাক কুর্তাটাকে মোটামুটি ভদ্রস্থ করে নিতে পেরেছে যদিও একটু সময় লাগলো। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ঘরের মধ‍্যে দিয়ে আসতে গিয়ে একটা ছবি দেখতে পায় অহনা...দেখে মনে হয় ঠিক অঙ্কিতের কমবয়েসের ছবি।একটু থমকে যায় অহনা,আবার দেখে। তবে না না এটাতো বেশ পুরোনো একটা ব্ল‍্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ছবিতে অঙ্কিতের মত কেউ,আর তার সাথে মনে হচ্ছে ম‍্যাম। ওমা ম‍্যামকে তো চেনাই যাচ্ছেনা কি সুন্দর একমাথা খোলাচুলে তোলা একটা বাচ্চা মেয়ের ছবি।

  কিন্তু অঙ্কিতের মত দেখতে একদম যে সে কে? অঙ্কিতের বাবা নাকি? মানে আঙ্কেল?

       অহনা শুনেছে ম‍্যাম আঙ্কেলের ছোটবেলার বন্ধু। তাহলে হয়ত কলেজে পড়ার সময় তোলা কোন ছবি হবে। তাহলে একটা সময় হয়ত বন্ধুত্বটা খুবই গভীর ছিলো তাই ম‍্যাম ছবিটা রেখে দিয়েছেন।

  ওদিক থেকে অহনাকে ডাকে ওরা। তাড়াতাড়ি করে অহনা বাইরে আসে ওর মনে তখন কয়েকটা প্রশ্ন কিন্তু এই উত্তরটা কে দেবে বুঝতে পারেনা। তাই সেদিনের মত প্রশ্ন নিয়েই বাড়ি ফেরা।

                বাড়ি ফিরে এসে অঙ্কিতের সাথে অনেক গল্প হয়।শুধু বলতে পারেনা ও রাধিকা ম‍্যামের বাড়ি গেছিলো। শান্তনুও ছেলেকে বলতে পারেনা অহনাকে দেখার ইচ্ছেটা শেষ পর্যন্ত পূরণ করে দিয়েছে রাধিকাই। তবে পরিচয়টাই শুধু হয়নি মুখোমুখি।
               অঙ্কুর ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা দেখে অহনা তবে প্রোফাইলে ওর বাবা মায়ের কোন ছবি খুঁজে পেলোনা। সত‍্যিই কি আশ্চর্য মিল অঙ্কিতের সাথে ওর বাবার!
  বারবারই মনে হলো ছবিটার কথা ঠিক যেন অঙ্কিতের সাথে অহনা সময়টাই শুধু অতীতের পাতায় আঁকা একটুকরো ছবি।

******************

  মাঝে আর মাত্র একটা দিন তারপরের দিনই অঙ্কিত চলে যাবে ভেবেই মনটা কেমন যেন লাগে অহনার। এই কদিন কেমন যেন বাতাসে বুড়ির চুলের মত ফুঁ দিতেই উড়ে গেছিলো মনটা। ভোকট্টা ঘুড়ির মত পাক খেয়েছিলো তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে নীল আকাশের ঐ গভীরে। আবার সেই চেনা জানা ট্রামলাইনের পথ বেয়ে হাঁটবে অহনা একদম একা। ময়দানের সবুজের দিকে তাকিয়ে মনটা অবুঝ হবে অঙ্কুর জন‍্য। ভিক্টোরিয়ার বেঞ্চে খুঁজবে অঙ্কুর ছোঁয়া। বোহেমিয়ান প্রেমডুবডুব মনটাকে বাঁধতে হবে স্টেথোর বাঁধনে। গম্ভীর মুখে বসে লিখতে হবে হসপিটালের কার্ডে রেফার কেসগুলো।

               মন কেমনের সরু ফুটপাথে হোঁচট খেতে খেতে ঘুম জড়িয়ে আসে অহনার দুই চোখে।

    অঙ্কিত বুঝতে পারে মনের গোপন কুঠুরির দুঃগুলোকে চ‍্যাটবন্দি করে ঘুমিয়ে গেছে অহনা।

***************

       সকালে আজ আর বাড়ি থেকে বেরোয়নি অঙ্কিত।অহনাকে আজ যেতেই হবে হসপিটালে তবে তাড়াতাড়ি ফ্রী হয়ে যাবে বলেছে। ভোর হওয়ার আগে থেকেই বুকের বাঁদিকে কেমন যেন একটু একটু মনখারাপের সেতারে কান্নার সুর বাজে অঙ্কিতের।এতটা মন খারাপ আর দিন গোনার অঙ্ক কষতে হয়নি ওকে আর কখনোই ।

        এবার যেন সত‍্যিই যেতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।ছোটবেলায় শোনা গল্পে রাক্ষসীর প্রাণভোমরার মত ওরও প্রাণভোমরা রয়ে গেলো অনেক দূরে। মিস্ করবে অহনার পাগল করা হাসি,দুষ্টুমি ভরা চোখ,মন কেমন করা গানের সুর। বাবার আদর,বিউলির ডাল,পোস্ত আরো অনেক কিছুই।

              ছাদের বাগানটাকে আজ আরো অনুভব করে অঙ্কিত।মায়ের কথা খুব মনে হয়। ছাদের বাগানে শিউলি গাছটায় হাত বোলায় অঙ্কিত।গাছও কখনো কখনো আপনজনের ছোঁয়া দেয়।হঠাৎই একটা শিউলি টুপ করে ঝরে পড়ে ওর গায়ে। মনে মনে ভাবে এখন শিউলি ফুল!
           হাতে নেয় ফুলটা যত্নে। বাবা এসেছে কখন বুঝতেই পারেনি.." আর বলিসনা এই গাছটা মাঝে মাঝেই ফুল দেয় একটা দুটো। তোর মায়ের ছবির সামনে রেখে দিই।"
          অঙ্কিতও নিচে এসে মায়ের ফটোর সামনে একমুঠো ফুল রাখলো মাঝে শিউলিটা।
                    বাবা কত কিছু রেখে গেছে ব‍্যাগের কাছে। একটু বাদেই এসে হুকুম হলো,"আমি সব প‍্যাক করে রেখেছি। আমার লিস্ট করাই থাকে কি কি দেবো সেভাবেই সব গুছোনো।"

               অহনা যেন এবার ওকে নতুন করে সব অনুভব করতে শিখিয়েছে।সত‍্যিই ওর রাগ আর অভিমান ছাড়া অন‍্য অনুভূতিগুলো একদম জং ধরে গেছিলো অহনার ভালোবাসা আর বকুনি শান দিয়ে দিয়েছে ওর অনেক কিছুতেই। এই জন‍্যই বোধহয় মেয়েদের দশভুজার সাথে তুলনা করা হয়।

           আর বাবারা বোধহয় এভাবেই অলক্ষ‍্যে থেকে ছেলেমেয়েদের ভালো মন্দের জোগান দিয়ে যায়।

              অঙ্কিত জানে আজ বা কাল রাধিকা মাসি আসবে মানে ঠিক আসবেই। ওদের জল খাবার শেষ হওয়ার পরই পরিচিত গাড়ির আওয়াজ পায় অঙ্কিত। আজ ও নিজেই দরজা খুলতে যায়। ওকে দেখে খুব খুশি হয় রাধিকা মাসি। " দেখেছিস আমি ঠিক চলে এসেছি,আর যতদিন থাকবো এভাবেই ঠিক চলে আসবো।"

       " আমি জানি তো।
যতদিন থাকবো আবার কি?
তুমি না থাকলে বাবার খেয়াল কে রাখবে?"

             রাধিকা মাসিকে দেখেই বাবা ফ্রেঞ্চটোস্ট এনে টেবিলে হাজির করেছে রাধিকা মাসির জন‍্য..." তুই তো এখনই দৌড়বি তোর মন্দিরে মানে হসপিটালে। চটপট খেয়ে নে।"

          " এই সব ভাজাভুজি আমি একদম খাবোনা।
তোর তাও একটা ছেলে আছে,বৌমা আসবে।আমাকে কে দেখবে শুনি?"

      " কেন তোর কৃষ্ণঠাকুর?"বাবা বলে।

রাধিকা মাসি তাড়াহুড়ো করতে করতে বলে.." হ‍্যাঁ তার ভরসাতেই তো আছি কিন্তু বুড়ি হচ্ছি তো তাই সেও পাত্তা দিচ্ছেনা।"

        রাধিকা মাসি বেশ মজা করে ওরা সবাই হেসে ফেললো।
            অঙ্কিতের হাতে একটা বড় প‍্যাকেট দিয়ে রাধিকা মাসি বললো.." তোর প্রিয় বুটিকের পাঞ্জাবি। পুজোতে পরিস। বাবাকে ছবি পাঠাস দেখবো কেমন মানিয়েছে তোকে। আর আছে টুকটাক কিছু জিনিস তোর কাজে লাগবে।"
          অঙ্কিত জানে ঝুলি থেকে এটা ওটা বেরোতেই থাকবে আর একটা চকোলেটও থাকবে যা ছোটবেলা থেকে পেয়ে এসেছে। সারাবছর ধরে বোধহয় এরা কেনাকাটা করে ওর জন‍্য।

******************

বিকেলবেলা আজ অঙ্কিতকে তুলে নিলো অহনা গাড়িতে.." শোন আজ আর হিরোগিরি করতে হবেনা। কাল চলে যাবি তাই সাবধানে থাকাই ভালো।"
             অহনা খুব একটা শাড়ি পরেনা তবে অঙ্কিতের বায়নাতে শাড়ি পরে আসতে হয়েছে। মা বকা দিয়ে বাচ্চুকাকুকে পাঠিয়েছে সাথে। মায়ের বক্তব‍্য শাড়ি পরতে অনভ‍্যস্ত মেয়ে হয়ত গাড়িই না আ্যক্সিডেন্ট করে ফেলে...
                  অঙ্কিতকে নিয়ে আজ আবার পড়ন্ত বিকেলে গঙ্গার বুকে একটা ভাসমান রেস্টোরেন্টে এসে বসে অহনা। শুধু রাস্তায় ঘুরে লাভ নেই,সত‍্যিই তো আজ জলেভেজা মনের দুঃখকে হাল্কা করতে জলের কিনারাই বোধহয় দরকার।
      মনের দুঃখ আনন্দ সবটাই উদার জলরাশির সাথে ভাগ করে নিতে ভালোবাসে অহনা।

              অহনা অঙ্কিতের কাছে এতদিনে দেখা সেরা মেয়ে,যে শান্ত করতে পারে মনে ওঠা যে কোন ঝড় এক ফুঁ দিয়েই। ভালো রাখতে পারে আর ভালোবাসতে পারে। হয়ত বা ভালোবাসতেও শেখায় তাইতো রাধিকা মাসিকেও আবার নতুন করে ভালো লাগলো অঙ্কিতের। বাবাকে আবার মনে হলো লাভিং ড‍্যাড..বেস্ট ড‍্যাড.. কেয়ারিং ড‍্যাড। ভালোবেসে ফেললো পেছনে ফেলে যাওয়া ছোটবেলার শহরটাকে। মন কেমন করছে সব কিছু ছেড়ে যেতে আজ।
              
                 ভাসমান রেস্তোরার একদম ওপরে উঠেছে ওরা ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে। গঙ্গার বুকে তখন সন্ধ‍্যে নামার প্রস্তুতি। খুব ভালো লাগছে চারপাশটা অঙ্কিতের। অহনা ওর খুব কাছে দাঁড়িয়ে ওর হাতের মুঠোয় ধরা অহনার হাতটা।

      " ভালো থাকিস ওখানে যত্নে রাখিস মন।"
    অহনা একটা ছোট্ট মিষ্টি ডায়েরি ওর হাতে দেয়।
         অঙ্কিত হাসে,"কি করবো এটা?"

    অহনা বলে," মনে জমা,প্রশ্ন,রাগ,দুঃখ,আনন্দ সব লিখে মনটা হাল্কা করে নিবি। ভালোবাসার কথাও লিখিস কখনো কখনো...অপেক্ষায় থাকবো।আসলে কলমগুলো আমাদের হয়ে চিৎকার, কান্না ভালোবাসাবাসি করে ফেলে নিঃশব্দে।"

        " আমি যে তোর মত এত ভালো কথা বলতে পারিনা। কি সুন্দর কথা বলিস! এতেই তো রোগী সুস্থ হয়ে যাবে।"

       " মোটেই না যখন বকার দরকার বকি। বুঝতে পারলাম না তোকে কি দেবো।তারপর তো মনে হলো মনটাই তো নিয়ে যাবি উড়িয়ে আর কিছুই তো রইলোনা।"

            ******************

       কথায় কথায় রাত্রি হয় গঙ্গার বাতাসের ঝাপটায় অহনার মনটাও ডানা ঝাপটায় অঙ্কিতের জন‍্য। কাল এই সময় হয়ত বেশ কিছুটা দূরে চলে যাবে অঙ্কিত। গল্পে গল্পে ঠোঁট ডোবায় লম্বা গ্লাসে সাজানো সুদৃশ‍্য পানীয়তে মনটা ভালো লাগে...অঙ্কিতের ঘাড়ে হেলান দিয়ে বসে অহনা মুহূর্তগুলোর স্বাদ নিংড়ে নিতে চায়।

               অঙ্কিত আদুরে গলায় বলে," মিস্ ইউ অহনা খুউউব। তোর সাথে কাটানো সকাল বিকেল,মন্দারমণির ঢেউ ভেঙে ভালোবাসা গড়া সব সব। ইচ্ছে হলেই তো দেখতে পারবোনা। ছুটে গিয়ে আবির মাখিয়ে আদর করতে পারবোনা। তোর আদর,রাগ,বকুনি গায়ের গন্ধ সব খুঁজবো একা একা রাতে কখনো ঘুম ভেঙে যাওয়া ভোরে।"

        একটু সাহসী গলায় অহনা বলে দাবীর সুরে.." চলে আয়না পরিচিত মাটিতে যদি সুযোগ পাস কোথাও। আর কি ফেরা যায়না মাটির টানে বা আপনজনের টানে? কতদিন ডিস্ট‍্যান্ট ভালোবাসা বাসি হবে?"

            অহনার আব্দারে অঙ্কিত ভেসে যায়...আজ যে ওরও মনে হচ্ছে থেকে যাই।

            অহনা একবার ভেবেছিলো আঙ্কেলের ছবি দেখতে চাইবে। কিন্তু বলতে পারেনা। জিজ্ঞেসা দিয়ে শেষ মিনিট গুলো মাপতে চায়না একদমই। থাক কিছু প্রশ্ন মনে মনেই, হয়ত সময়ই তার উত্তর দেবে।

     অঙ্কিতকে বাড়ির সামনেই ছেড়ে দেয় অহনা। অঙ্কিত একবার বলে.." বাড়িতে আসবি?"
      
         " আজ নয়..অন‍্য কোনদিন আসবো। আজ মনটা একটু একলা হতে চাইছে রে।"
         অহনার গলাটা শুকিয়ে আসে এবার একটু যেন চোখগুলো অবাধ‍্য হয়ে গেছে।
                  অঙ্কিত কিছু বলতে পারেনা। অহনাই বলে.." এই ভুখুরাম,দুখুরাম হতে নেই। সকাল বিকেল অঙ্কু অঙ্কু করে হাঁক মারবো এখান থেকে। আয় সাবধানে,ভালো থাকিস।"

*****************

       বেশ কয়েকদিন হলো অঙ্কিত চলে গেছে,প্রেমটা দিব‍্যি চলছে অনলাইনে...ঐ মানে মিঠে ইপ্রেম❤️🗨️ ঝগড়া আদর ভালোবাসা সবই।
                 তবে কলেজ ফেরত অহনার মনটা মাঝে মাঝে একা হয়ে যায়।বাচ্চুকাকুকে বলে একটু গঙ্গার ধার ঘুরিয়ে নিয়ে যেতে ছোটবেলার মত। আইসক্রীম খেতে খেতে খুঁজতে চায় মিঠে প্রেমের ফেলে যাওয়া মুহূর্তগুলো।

               কয়েকদিন আগে মাদার্স ডে গেলো,অ্যালবামটা আনলেও ভালো করে দেখে উঠতে পারেনি অঙ্কিত। হঠাৎই মাদার্সডেতে সবার স্ট‍্যাটাস দেখে ওরও মনে হলো...আরে ওর কাছেও তো আছে ছোটবেলার ঝাঁপি। ব‍্যাস যেই খোলা সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যায়  প্রথম পাতাতেই মায়ের সাথে তোলা ছবি। তাড়াতাড়ি করে দু তিনটে ছবির কোলাজ করে স্ট‍্যাটাসে দেয়।
            অহনা তো দেখে খুব মজা করলো.." ও মা এতো একদম গোলু ভল্লুকের ছবি। এটা কত বছর বয়েসের?"
    অঙ্কিত বলে," লেখা আছে দুবছরের। আর তুই তো কি রাগী মুখ করে আছিস মনে হচ্ছে মারবি। হিংসুটি লাগছে।"

          ছেলের স্ট‍্যাটাসে ওদের মা ছেলের ছবি দেখে খুব ভালো লাগে শান্তনুর।এই সময়টা মায়া তো ওকে চিনতোই না।শুধু ছেলে আর ছেলে।

      " হ‍্যাঁ রে তুই এই ছবিগুলো কোথায় পেলি?"

  " বাবা, আমি ছোট অ্যালবামটা নিয়ে এসেছি এবার। ওহ্ তোমাকে বলা হয়নি।"

         একটু অবাক লাগে শান্তনুর ছেলে তো কতদিন আলমারিতে হাত দেয়না,তার নিজেরও দেওয়া হয়না অনেকদিন।হঠাৎই অ্যালবাম নিয়ে গেলো! যাক ভালো। রাধিকাকে বলতে হবে ছেলের স্ট‍্যাটাস দেবার কথাটা।

                  ছবিটা দেখে অনেকেই অনেক কমেন্ট করেছে নষ্টালজিক লাগে অঙ্কিতের। সেদিন রাতে অ্যালবামটা খুলে বসে অঙ্কিত। কত ছবি ওর এক একটা মুহূর্তের।দেখতে দেখতে মনটা ডুবে গিয়েছিলো কোন সুদূর অতীতে।মনে হচ্ছিলো কিছুই হয়নি সব এক আছে আর এই তো সেদিনের কথা...ছোটবেলাটাতে যেন আলাদীনের দৈত‍্য এনে ওকে হাজির করিয়েছে। দেখতে দেখতে একটা ফোন আসাতে ওঠে অঙ্কিত.. একটু তাড়াহুড়ো করাতে অ্যালবামটা পরে যায় মাটিতে।

এসে তুলতে গিয়ে দেখে একটা খাম  মাটিতে পড়ে আছে...নিজেই বলে ওঠে অঙ্কিত " আরে এই খামটা আবার কোথা থেকে এলো?
তাহলে এর ভেতরেই ছিলো মনে হয়।
কি আছে এতে আবার?
ছবি?"

   খামটার মধ‍্যে কতগুলো ছবি দেখেই হাসি পায়,ইশ্ বাবাকে ছোটবেলায় দেখতে তো একদম তালপাতার সেপাই ছিলো। আরেকটা ছবিতে ওর দাদুর পাশে বাবা দাঁড়িয়ে। মা মারা যাবার সময় বাবাকে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শুনেছিলো..ছেলেটাও আমার মতই অভাগা শেষে এত কম বয়েসে মাকে হারালো!
           ওর ঠাম্মাও অনেক আগে চলে গেছেন,এখন তো দাদুও নেই। চার পাঁচটা ছবি বাবার ছোটবেলার তারমধ‍্যে একটা ছবিতে চোখ আটকে যায় অঙ্কিতের। একটা চারজনের ছবি,মনে হচ্ছে কোন স্টুডিওতে তোলা। কিন্তু একে? অঙ্কিত নিজেকে আরেকবার আয়নায় দেখে আসে। একদম ওর মত দেখতে...নিজের একটা ছবির পাশে ঐ ছবিটা রাখে দেখে মনে হলো সরল সাধাসিধে অঙ্কিতের পাশে স্টাইলিশ অঙ্কিত। বাবার পাশে মা একদম বেশ চেনা যাচ্ছে।তবে ঐ ভদ্রলোকের পাশে কে? ভালো করে দেখে আবার ছবিটা,ইশ্ কি বোকা বোকা চোখে গগলস পরা ছবি। তবে ভীষণ চেনা একটা চেহারা আবার দেখলো...আরে এটা তো রাধিকা মাসি। বাপরে হেবি স্টাইলিশ ছিলো তো। অবশ‍্য এখনো খুব এথনিক সাজগোজ করে,রুচিসম্মত একদম।ওর সব ভালো পাঞ্জাবি, জ‍্যাকেট আর কুর্তা রাধিকা মাসির কিনে দেওয়া।

        ছবিটা হাতে নিয়ে শুয়ে গড়াগড়ি করে অঙ্কিত। হম্ তার মানে বাবার সাথে মায়ের প্রেমের শুরু অনেক আগেই। অঙ্কিত পিছিয়ে আছে বরং তারপরেই ভাবে..কি সব ভাবছে? ওরা তো ভালো বন্ধুও হতে পারে। কিন্তু রাধিকা মাসির পাশে বসে এ কে? ওর কোন মামা নাকি কাকু? যার সাথে ওর মিল আছে।

       তবে ও যতদূর জানে ওর পিসি আছে কিন্তু কাকা তো নেই। মনে মনে ভাবে..আর মামাকেও তো ও দেখেছে মানে এখনো দেখছে।
         হঠাৎই মনে হলো..আরে মুশকিল আসান তো আছেই একজন, মানে ওর বাবা। কি দরকার এত মাথা খাটানোর?

     ছবিটাকে আবার বিছানায় রাখে অঙ্কিত এবার মোবাইলে কয়েকটা ছবি তুলে নেয়। তারপর জুম করে দেখে নিজের ছবির পাশে রেখে। সত‍্যিই কি অদ্ভুত মিল ওর সাথে। অথচ বাবার সাথে শুধু হাইট ছাড়া তেমন মিল কিছু নেই,বাবা বেশ কালো আর ও খুব ফর্সা। অবশ‍্য মায়ের রঙ ফর্সাই ছিলো,তবুও ওর মত অত ধবধবে নয়।ছোটবেলা অনেকেই ওকে সাহেব বলতো।

          ভাবতে আর ভালো লাগেনা অঙ্কুর,বাবাকে জিজ্ঞেস করে জানবে ভেবেই সব ভাবনার ইতি টেনে ঘুমিয়ে পড়ে।

          পরদিন বেশ ভোরেই ঘুম ভাঙে অঙ্কিতের, সকালটা একটু ফোন করে অহনাকে প্রতিদিনই তারপর আবার রাতে কথা হয়। অহনাকে কিছু বলতে পারেনা,সত‍্যিই তো মনের সব জিজ্ঞাসা রাগ ওকে দেওয়ার কি দরকার? আর কদিন ধরে মেয়েটা প্রেজেন্টেশন নিয়ে একটু ব‍্যস্তই আছে।
        অহনা তো ম‍্যাম মানে রাধিকা মাসির প্রশংসায় অস্থির। তবে অঙ্কু বুঝতে পারে উনি কেন অহনাকে প্রায়োরিটি দেন। নিশ্চয় বাবার কাছে সবটাই শুনেছে।

    " কি রে আর কথা নেই? সব শেষ এতো তাড়াতাড়ি? মিস্ ইউ রে।"
     " হম্ আমিও রে। আজ একটু বাবাকে ফোন করবো তাই তোর সাথে পরে কথা বলছি।"

     অহনা সাবধান করে দেয়.." দেখিস যেন ঝগড়া করিসনা।"

               " ধুৎ এমনি কথা বলবো।" বলে অঙ্কিত।

            ঝগড়া সত‍্যিই করলোনা অঙ্কিত বাবার সাথে কিন্তু বাবার কথা ওর একটুও ভালো লাগলোনা। বাবা যেন ওকে কিছু ঢেকে চেপে কথা বলছে।প্রথমেই খুব অবাক হলো ওর পাঠানো ছবি হোয়াটস অ্যাপে দেখে তারপর উনি কে জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দিতে দেরি করলো অনেকটা।

             শান্তনুর কেমন যেন অস্থির করছিলো আজ অঙ্কিতের মেসেজটা পেয়ে। এই ছবিটা ও পেলো কোথা থেকে? তবে কি ভুল করে কখনো খামটা রেখে দিয়েছে ও নিজেই অ্যালবামে?

        টেনশনে হাত পা ঠান্ডা লাগে শান্তনুর।রাধিকাকে এখনি ফোন করে বলতে হবে কথাটা।
ছেলেকে বলেছে তখনকার মত আমাদের বন্ধু রে। মানে ভাই কাম বন্ধু।

     " অঙ্কিত আবার জিজ্ঞেস করে এনি ব্লাড রিলেশন উইথ হিম? কি নাম ওনার?

   শান্তনু বলে.." ও অমিত,ভীষণ ভালো ছাত্র একসাথেই পড়েছি আমরা।"
        " আর রাধিকা মাসি? মানে ওরও বন্ধু না লাভার?"
               শান্তনু ফোনটা অফ করে দেয় কিছুক্ষণের জন‍্য। ভাবতে তো একটু সময় লাগবে। রাধিকাকে বললো পুরোটা।

        রাধিকা একটু অবাক হয়ে যায়।তারপর বলে "ওকে এবার একটু একটু করে আমাদের গল্পটা বলে দে। সত‍্যি গোপন করে আর কি লাভ? একটা সত‍্যিকে ঢাকতে গিয়ে হাজার একটা মিথ‍্যে বলতে হবে।"

          কি করবে ভেবে পায়না শান্তনু... ফোনটা অন করে বলে..আর বলিসনা কি মুশকিল সুইচড
অফ হয়ে গেলো।

তোর মত দেখতে যাকে বলছিস সে আমাদের এক ভাই..ওর বাবা মারা যাওয়াতে আমাদের গ্ৰামে এসে ভর্তি হলো।তখন আমাদের ফার্স্ট গার্ল ছিলো রাধিকা। তারপর যা হয়, রাধিকার সাথে কম্পিটিশন শুরু হলো। কখনো রাধিকা প্রথম অমিত দ্বিতীয় আবার কখনো বা অমিত প্রথম আর রাধিকা দ্বিতীয়।
          ঝগড়াঝাটি রেষারেষি লেগেই থাকতো। আর আমি ছিলাম মধ‍্যস্ততা করার বন্ধু।বুঝিয়ে সুঝিয়ে মিলমিশ করে দিতাম।"
             ছেলেকে আর বলতে পারেনা শান্তনু,একটা সময় রাধিকাকে খুব ভালো লাগতো।তখনো মায়া আসেনি জীবনে। কিন্তু অমিতের সাথে ঝগড়াঝাটির মধ‍্যেই কখন যে রাধিকা একদম অমিতের প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছে বুঝতেই পারেনি। অমিত দেখতে সুন্দর পড়াশোনাতে অত‍্যন্ত ভালো তাই শান্তনুর এগিয়ে যাওয়া হয়নি নিজের প্রেমের সাম্পান নিয়ে রাধিকাকে তুলতে। অমিতের বাড়ির অবস্থা একদমই ভালো ছিলোনা বিধবা মা আর ছেলে মামাবাড়ির আশ্রিত। আর তারমধ‍্যেই ওর জীবনে পা রাখে রাধিকা সরস্বতীর সুপুত্রী হয়ে।

          শান্তনু বলতে শুরু করে... "রাধিকাদের অবস্থা বেশ ভালো ছিলো।ও নানা ভাবে সাহায্য করতো অমিতকে। কখনো বই দিয়ে সাহায্য করতো,কখনো বা টাকা দিয়ে।"

       অঙ্কিতের একটু অধৈর্য্য লাগে এবার সুদূর জার্মানী থেকে বসে বসে এখন কি রাধিকা আর অমিতের প্রেম কাহিনী শুনতে হবে!

          তাই বলে ওঠে..." বাবা আই ওয়ান্ট টু নো অ্যাবাউট অমিত? উনি তোমার কেমন ভাই? সে এখন কোথায়? উনি এখন কোথায় আছেন?
                আমি সব সব জানতে চাই।কারণ ওনার সাথে আমার খুব মিল। যে দেখবে সে বলবে। আমিও খুব আশ্চর্য হয়েছি দেখে।

         অদ্ভুত একটা উত্তেজনা অঙ্কিতের মধ‍্যে কোন কথা যেন ভালো করে শুনতেই চাইছেনা। অঙ্কিতের শান্ত রূপটা যেন আর পাচ্ছেনা শান্তনু,ওর কথাবার্তা কেমন যেন ক্ষ‍্যাপাটে লাগছে। ইশ্ অ্যালবামটা যে ও নিয়ে যেতে পারে ভাবেইনি শান্তনু। আর ওর মনেও ছিলোনা ওর মধ‍্যে ছবিগুলো আছে।
        অঙ্কিত আবার জিজ্ঞেস করে..." অমিত মানে তোমাদের কমন ফ্রেন্ড তিনি কোথায়?"

      শান্তনু একটু চুপ করে যায়... তারপর গলাটা ঝেড়ে বলে.." অমিত মারা গেছে বেশ অনেক বছর আগে।"

       ইশ্ ঐ ভদ্রলোকের সাথে একবার দেখাও হলোনা! খুব খারাপ ভাগ‍্য সত‍্যিই, এতদিন কিছুই
  জানেনা মানে মা বা বাবা কোনদিন বলেনি তোর মত দেখতে একজন কাকু আছে। মা চিনতো তো ওনাকে...অথচ কেউ ওকে কিছুই বলেনি।নিজের মত কাউকে দেখতে তো খুবই ভালো লাগে।

             ওর বাবা ফোন কেটে দিয়েছে।ও জানে বাবা একটু তাড়াতাড়ি ঘুমোয়,তাছাড়া ওখানের সময়ে বেশ রাত্রি হয়েছে তাই আর বিরক্ত করতে চায়না বাবাকে। কেন যেন মনে হলো ঐ অমিতকাকুর মৃত‍্যুতেই বাবা ওর সমস্ত জিজ্ঞাসা শেষ করে দিতে চাইলো। মানে বোঝাতে চাইলো যে লোকটাই নেই কবে মারা গেছে তার সাথে ওর মিলে কি এসে যায়?

        *******************

   অঙ্কিতকে সাময়িক থামিয়ে দিলেও রাতে শুয়ে শরীরটা খুব ছটফট করতে থাকে শান্তনুর। অনেকদিন বাদে আজ বুকে ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে মায়ার কথা খুব মনে পড়ছে।কেজানে হয়ত মায়া থাকলে এই সিঁড়ি ভাঙার অঙ্ক কষতে কষতে কখনোই অতীতের দিকে যেতে হতনা শান্তনুকে।
        যে অতীতের দরজা সেই কবে বন্ধ হয়ে গেছে,এখন কেবলমাত্র তার সাক্ষী আছে ওরা দুটো প্রাণী। তবে মায়াকে দেওয়া কথার কি হবে? ও কোনদিনই বলতে পারবেনা অমিতের সব কথা অঙ্কিতকে। মায়া তাহলে খুব কষ্ট পাবে,হয়ত ঐ তারাদের দেশে বসেই ডুকরে কাঁদবে যেমন আগে মাঝে মাঝেই কাঁদতো।

           বিছানায় শুয়ে সে রাত্রে ছটফট করে অঙ্কিতও।আসলে কষ্টটা আরো বেশি কারণ অহনাকেও বলতে পারছেনা কিছু। ওকে বলতে পারলে ও হয়ত ঠিক কোন না কোন ওষুধ দিয়ে দিতো মনে লাগানোর। মা থাকলে মাকেও তো জিজ্ঞেস করতে পারতো।

       প্রশ্ন আর উত্তরের সিঁড়ি বাইতে বাইতে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ে অঙ্কিত এই ভেবে একরকম লোক তো পৃথিবীতে থাকেই তাতে এত উতলা হবার কি আছে? অযথা বাবাকে উত‍্যক্ত করলো এই রাতে নানা কথা জিজ্ঞেস করে। তার চেয়ে বরং সেই অমিতকাকুর সাথে রাধিকা মাসির প্রেমের গল্পটা শুনলে ভালো হত।

     আবার একটা প্রশ্ন মনে লুকোচুরি খেলতে থাকে আচ্ছা রাধিকামাসি কি ঐ অমিতকাকুকে বিয়ে করছিলো না তার আগেই মারা গেছেন ভদ্রলোক। ইশ্ সত‍্যি খুব স‍্যাড লাক মাসির,তবে রাধিকা মাসি তো উইডো নয় মানে ও বোঝেনি কোনদিন। শুনেছে উনি তো নাকি কৃষ্ণকে বিয়ে করছেন।

        মাথাটা কেমন যেন জট পাকিয়ে যায় অঙ্কিতের,একটা সিগারেট খায়। বাবা নিশ্চয় ঘুমিয়ে পড়েছে এতক্ষণ। যাক কাল না হলেও আরেকদিন শুনবে রাধিকা মাসির কথা। কত মানুষের অতীতের ডায়েরিতে যে কত কথা বন্ধ পাতার মধ‍্যে লুকিয়ে আছে কে তার হিসাব রাখে?

           ছেলের কাছ থেকে ঘুমোবার নাম করে পালিয়ে এলেও শান্তনুর ঘরে আজ শুধুই রাতজাগা ঝিঁঝিঁ পোকার গা ছমছমে ভাব মনে অতল চিন্তার গভীর তল। মায়ার ছবির সামনে এসে দাঁড়ায় শান্তনু কিছুক্ষণ বাইরে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে।হয়ত এটা ভুল নয় এখন সময় হয়েছে শান্তনুর অঙ্কিতের মুখোমুখি দাঁড়ানোর কিন্তু মায়া কেন যেন বারবার তার মুখে হাত দিয়ে চাপা দিচ্ছে রাগ করছে রাধিকার ওপর। আজকের রাতটা বড় দোটানায় কাটে, বুকের বাঁ দিকটায় খুব ব‍্যথা করে শান্তনুর মনে হচ্ছে দম আটকে আসছে,ভোরের দিকে শরীরে অসহ‍্য কষ্ট হয়। রাধিকাকে ফোন করতে হবে,খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ফোন পর্যন্ত যাওয়া হয়না শান্তনুর তার আগেই শরীরটা লুটিয়ে পড়ে। সকালে কুন্তী এসে বেল বাজিয়ে সাড়া পায়না।কুন্তীর কাছে রাধিকার ফোন নম্বর অনেকদিন আগে রাধিকাই দিতে বলেছিলো। প্রায় দশবার ফোন করে সাড়া না পেয়ে ডাক্তারদিদিকে ফোন করে কুন্তী। রাধিকা আর দেরি করেনা এক মুহূর্ত একদম ব‍্যাগ নিয়ে মন্টুকে নিয়ে চলে এসে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খোলে। দুই বন্ধুর কাছেই দুজনের বাড়ির এক সেট চাবি রাধিকাই বুদ্ধি করে রেখে দিয়েছে।
                      যা সন্দেহ করেছিলো তাই সুগার বাড়িয়েছে অনেকদিন শান্তনু,তারপর হয়ত নানা টেনশনে একটা বড়সড় অ্যাটাক। সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে ইঞ্জেকশন দিয়ে শান্তনুকে ভর্তি করা হয়। নিথর দেহের শান্তনুকে দেখে ভেতর থেকে একদলা কান্না উঠে আসে রাধিকার মনে মনে বলে এই একলা পৃথিবীতে দুজনেই তো দুজনকে আগলে রেখেছিলাম আমাকে একলা করে চলে যাসনা। তাও তো সারাদিন পরিশ্রমের পর একটু কথা বলে হেসে হাল্কা হতাম। কিছুতেই তোর এভাবে যাওয়া হবেনা। কত কাজ এখনো বাকি।

        ******************

                 বেশ ভোরেই কয়েকবার ফোনটা বাজে,অঙ্কিত গতকাল অনেক রাতে ঘুমিয়েছে উঠতে ইচ্ছে করেনা। রাধিকা ভয়েস মেসেজ রেখে দেয় খবরটা জানিয়ে।
               উঠেই ফোনটা দেখে গলা দিয়ে কান্নার দলা উঠে আসে অঙ্কিতের।তাহলে কি বাবাও এবার চলে যাবে ওকে ছেড়ে এতবড় পৃথিবীতে একদম একা করে? এখন কি করবে ও?
       রাধিকা মাসিকে ফোন করে গলাটা আটকে যায় বারবার। কিছুদিন আগেই যে মানুষটাকে চূড়ান্ত অপমান করেছে যাকে দেখলেই ওর জ্বালা ধরতো তার কাছেই আজ বাবার খবর নিতে হচ্ছে। একদম এগিয়ে এসেছে বাবাকে বাঁচাতে..." জ্ঞান এখনো নেই বাবু, তবে এত তাড়াতাড়ি ওর যাওয়া হবেনা। ওকে ভালো করে আনবোই। তুই ভাবিসনা,আমি আছি তো এখানে। নিজের শরীরের যত্ন নিস।সেভেন্টি টু আওয়ার্স না গেলে কিছুই বলা যাবেনা।"

         এখনি চলে যেতে ইচ্ছে করছে ওর একটুও ভালো লাগছেনা। অহনাকে ফোন করে অঙ্কিত, কথা বলতে পারেনা ঠিকমত আটকে যায়.." তুই একটু দেখবি বাবাকে আমার বন্ধু হয়ে। বাবার খুব ...."
              সবটা শুনে অহনা বলে.." আমি বলছি কিচ্ছু হবেনা। ম‍্যাম আছে তো দেখিস আঙ্কেল ঠিক ফিরে আসবে বাড়িতে।মানে আসতেই হবে। আর আমরা সবাই আছি।সবাই মিলে দেখবো আঙ্কেলকে।"

          অহনা শুধু নয় ওর মা বাবা,অহনার বন্ধুরা আর রাধিকা বুঝতেই দেয়নি শান্তনুকে ওর একলা ঘর দোরে ও একা বসত করে। যমে মানুষের দড়ি টানাটানিতে জিতে গেলো রাধিকার মেডিক্যাল টিমই শেষ অবধি। টানা প্রায় পনেরো দিন সবার সেবাযত্নে মোটামুটি সুস্থ হয়ে ফিরলো শান্তনু। এই কদিনে অহনার সাথে খুব ভাব হয়ে গেছে শান্তনুর। দোলের দিনে আলাপ হয়নি তবে কার যে কখন কার সাথে কিভাবে ভাব হয়ে যাবে কে বলতে পারে? অঙ্কিতের অভাবটা যেন প্রাণপনে মিটিয়ে দিতে চায় অহনা। কখনো সেবাতে আবার কখনো শাসনে।

        শান্তনু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলো এই ভেবে যাক এই মেয়েটা আদর করে আগলে রাখবে ওর পাগল ছেলেটাকে দরকারে কড়া বকুনিও দেবে।

     রাধিকা হেসে বলেছিলো.." কিছু ভাগ‍্য করে এসেছিলি দেখছি। কত আদর পাচ্ছিস।"
        " বন্ধুভাগ্য আর বৌমাভাগ‍্য দুইই আমার খুব ভালো দেখছি।" শান্তনুর শুকনো মুখে হাসি দেখা যায়।
          যমের সাথে হ‍্যান্ডশেক করে আবার ফিরে এসে একটু একটু করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা। অঙ্কিত ওখানে বসে অস্থির হয়েছে কিন্তু কিছুতেই ম‍্যানেজ করতে পারেনি এত তাড়াতাড়ি আসাটা। কয়েকদিন দেরি হয়েছিলো আসাটা ফাইনাল করতে। বাবা সুস্থ আছে জানিয়ে অহনা বলে..." অসুবিধা করে আসিসনা বরং কয়েকদিন বাদে আসবি এসে সাথে নিয়ে যাস আঙ্কেলকে। একটু চেঞ্জ হবে।

*****************

অঙ্কিত হয়ত এখন আসতোনা তবুও আসতেই হলো আর পারছেনা ওখানে থাকতে। এই কিছু দিনের ধাক্কা ওর মনেও পর্দা টেনে দিয়েছে একটা। অমিতকাকু রাধিকামাসির কথা মাঝে মাঝে মনে হলেও ভাবে বাবাকে আর জিজ্ঞেস করবেনা এইসব। তবে শান্তনুরও মনে হয় অসুখটা হঠাৎই এলো কেনো? হাত বাড়িয়ে ওকে ধরলো কেন? মুখে চাপা দিতে?

      বাবাকে দেখে মনটা খুব খারাপ হয় অঙ্কিতের এই তো কিছুদিন আগেই কত হাসিখুশি লাইভলি মানুষটাকে দেখে গেলো। এখন হাত কাঁপছে,ডান হাতের জোর কমেছে ফিজিওথেরাপি চলছে।

        অঙ্কিত আসাতে অহনার পলি জমে যাওয়া মনে আবার নতুন করে প্রেমের জোয়ার এসেছে তবে আজকাল আর বাইরে বেশি ঘুরতে পারেনা অঙ্কিত, অহনাই চলে আসে কলেজের পর। শান্তনুর ভালো লাগে, বাড়িটা বেশ জমজমাট লাগে।
         আজকাল রাধিকাও প্রতিদিনই আসে মোটামুটি। হেসে বলে.." কি সুন্দর বাড়িটা ভরে গেছে বাবু আসাতে। তোর বাড়িতে তো চাঁদের হাট।"
       শান্তনু হেসে বলে," আচ্ছা চাঁদটা কে বলতো? ছেলেটা একদম বেরোচ্ছেনা বাড়ি থেকে। বাড়িতে বসে কি প্রেম হয় নাকি? একটু গাছপালা, নদী দেখবে হাতে হাত রেখে তবে তো ভালো লাগবে। একদিন তোর ছাত্রীকেই বলতে হবে বাইরে ঘুরে আসতে।"
                  শান্তনুর কথা শুনে হাসে রাধিকা জোরে। শান্তনু বলে.." অনেকদিন বাদে তোর সেই হাসিটা দেখলাম মানে জোছনা ভরা।"

        রাধিকা একটু লজ্জা পায়,স্কুলে পড়তে শান্তনু একদিন কথাটা বলেছিলো খুব রাগ হয়েছিলো রাধিকার। দুদিন কথা বলেনি রাগে।

               "আয়া তো আছে..তোরা আজ একটু ঘুরে আয়" বলে ছেলেকে জোর করে বের করলো শান্তনু।
            "কোথায় যাবি? আজ তুই যেখানে বলবি সেখানেই যাবো।" অঙ্কিতের কাঁধে মাথা রাখে অহনা।
           " চলনা আজ আবার সেদিনের মত বেলুড় মঠে যাই।মনটা খুব চঞ্চল হয়ে আছে এই কদিন।"
       " তাহলে চল আজ দক্ষিণেশ্বর আর বেলুড় দুজায়গায় ঘুরিয়ে আনবো তোকে।"

                চুপচাপ অনেকক্ষণ বসে থাকে দুজনে।মায়ের কাছে পুজো দেয় একসাথে বাবার জন‍্য।অহনার কপালে মায়ের পায়ের সিঁদুরের ছোঁয়া ওর মাথায় ওড়নাটা জড়ানো খুব সুন্দর লাগছে অহনাকে।

                " বাবাকে সাথে নিয়ে যাবো তুই যেমন বলেছিস। ওখানে কিছুদিন থেকে আসুক। তোকে নিয়ে গেলে আরো ভালো হত।"
        একটু লজ্জা পায় অহনা..." নিয়ে যাবি? চল তাহলে চলে যাই সব ছেড়ে দিয়ে।"
          দুজনেই হেসে ওঠে।

  দেখতে দেখতে অঙ্কিতের যাবার দিন এসে যাচ্ছে এবার শুধুই মন কেমন করছে অহনার জন‍্য,খুব মিস্ করবে রাধিকা মাসিকে। এই কদিন বন্ধুত্ব হয়ে গেছে ওদের আর আছে কৃতজ্ঞতার ঋণ যা হয়ত কখনো শোধ করতে পারবেনা।

******************

         বেশ কয়েকদিন হলো শান্তনু জার্মানিতে এসেছে। এখানকার আবহাওয়াতে,বিশ্রামে আর কলকাতার দুই ডঃ বন্ধুর দেখাশোনাতে এখানে বেশ ভালো আছে। এখন মনে হয় ভাগ‍্যিস বেঁচে গেলো এই যাত্রা নাহলে বুঝতেই পারতোনা এত লোক ভালোবাসে ওকে। তবে অঙ্কিতকে এবার বলতেই হবে সেদিনের না বলা গল্পটা। মায়াকে বলেই এসেছে.."আর তোমার কোন বারণ আর দিব‍্যি শুনবোনা এবার ওকে বলবো আমাদের সত‍্যি গল্পগুলো।"

              শুক্রবার থেকেই মনটা হাল্কা থাকে অঙ্কিতের পর পর দুদিন ছুটি তাই মনটা বেশ ফুরফুরে।
             শান্তনু ডাকে অঙ্কিতকে,আয় একটু গল্প করি তোর সাথে।তোকে সেদিন অমিতের গল্প বলতে শুরু করেছিলাম করা হয়নি শেষ।

     অঙ্কিতের কেমন যেন অস্থির লাগে.. ও আর শুনতে চায়না সেই গল্প। "কি হবে বাবা ঐ গল্প শুনতে চাইনা আমি।তুমি সুস্থ থাকো তাহলেই হবে।"
     হাসে শান্তনু..." তোকে এই গল্প না বললে আমি যে মরতেও পারবোনা শান্তিতে।"

********************

 
   
     

       

            

   

        

            
           

         

      

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...