Skip to main content

দ‍্য বেস্ট পাওয়া

#দ‍্য_বেস্ট_পাওয়া#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

সুদর্শনার যখন বিয়ে হয়েছিলো তখনো ওর পড়াশোনা পুরো শেষ হয়নি।মানে পড়তে পড়তেই বিয়ে। মোটামুটি পছন্দের পাত্র পেয়ে বাবা আর অপেক্ষা করতে চাননি..অবশ‍্য মেয়ের মত নিয়েই এগিয়েছেন।বাবার কথার ওপরে কথা বলার সাহস কখনোই ছিলোনা তাই বিয়ের ব‍্যবস্থাটা মেনে নিয়েছিলো সুদর্শনা আর পড়াশোনা তখন প্রায় শেষের পথেই তাই চলো যাই ছাদনাতলায়।

         আবেশে আবেগে ভালোবাসার রেশে প্রথম কয়েকটা দিন বেশ কেটে গেলেও কিছুদিন বাদেই সুদর্শনা বুঝলো শ্বশুরবাড়ি শ্বশুরবাড়িই হয় এখানে ভালোবাসাবাসির থেকে রেষারেষি বেশি আদরের থেকে গায়ে কথার চাদর চাপিয়ে দেওয়াটাই বোধহয় খুব সহজ।

        বিয়ের আগে ননদদের ভালোবেসে তাদের ব্লাউজে এমব্রয়ডারি করে তত্ত্ব সাজিয়ে আনলেও সব ব‍্যাপারে তাদের খবরদারি কিছুদিন বাদেই টের পেলো।

      উঠতে বসতে কথার জ্বালায় জীবনটা যেন ঝালাপালা হয়ে গেলো। প্রজাপতির মতো আর উড়ে বেড়ানো হলোনা সুদর্শনার ভয়ে শামুকের মত গুটিয়ে দিন কাটাতে লাগলো। অনেকটা দূরে বাবা মাকে ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতে কথায়মাখা ভাত খেয়ে দিন কাটানো কোনরকমে। বরের কাছে কিছু বললেই," মানিয়ে নাও একটু কষ্ট করে।আমি বাবা বোনদের কিছু বলতে পারবোনা।"

     বুঝতে পারে সুদর্শনা সবাই সেফ খেলতে চায়।

            অনেক খোঁচার মধ‍্যে স্বামীর ভালোবাসাটাই হয়ত ছিলো পরিতৃপ্তি মনে হত নাইবা ওর হয়ে কথা বলুক তবুও তো ভালোবাসে।

          " তোমাদের দুজনের মাসে খেতে কতটাকা লাগে জানো? আম মিষ্টি দুধ ভালোমন্দ সবই তো আমি এনে খাওয়াই।" শ্বশুরমশাই প্রায়ই বলতেন।

         সুদর্শনা শুনেছিলো তার স্বামী নিজের হাতখরচ টুকু রেখে পুরোটাই দিতো সংসারে বাবার হাতে তুলে তবুও কথা হজম করে ভাত তুলতে হত মুখে। একেকদিন মনে হত আজ আর খাবেনা। না খেয়েই কাটিয়ে দেবে দিন পরক্ষণেই মনে হত বাবার কথা.. 'অন্ন লক্ষ্মী তার ওপর রাগ করতে নেই' সত‍্যিই তো যা না খেয়ে থাকতে পারবোনা তার ওপর কিসের রাগ?

                                দেখতে দেখতে বিয়ের পর বছর দেড়েক কেটে গেলো। একসাথে বিয়ে হয়েছে এমন অনেকেরই মা হওয়ার খবর এলো। অনাস্বাদিত মাতৃত্বের স্বাদ নিতে ইচ্ছে হলো সুদর্শনারও..একদিন রাতে নিভৃতে বরের কাছে এসে বললো…." এই যে সবারই তো খবর আসছে। আমাদের মাঝে কেউ আসবেনা? মা ও বলছিলো এক কথা।"
         পাশ ফিরে শুতে শুতে অয়ন বলেছিলো," শোনো যদিও সরকারি চাকরি তবুও মাইনে আর কত পাই। জানো তো একটা বাচ্চাকে ভালো করে মানুষ করতে কত খরচ? তার থেকে না আনাই ভালো, যদি ভালো করে মানুষই না করতে পারি।"
             দেখতে দেখতে শ্বশুরমশাইয়ের রিটায়ারমেন্টের সময় এগিয়ে আসছে কথার জ্বালা আরো বাড়তে থাকে। সংসারটা কূটনৈতিক ক্ষেত্র না রাজনৈতিক ক্ষেত্র বুঝতে পারেনা সুদর্শনা। শ্বশুরমশাই যেন ওকে দেখতেই পারেননা।

শ্বশুরমশাইকে দেখতে আসে মাঝে মাঝেই ননদেরা ওকে শুনিয়ে বলে.." রিটায়ার করার পর সব ছেলেকে দিয়ে রেখোনা যেন। জানো তো ফাঁকা হাত কুকুরেও চাটেনা। আজও কান পাতলে পরিস্কার শুনতে পায় সুদর্শনা কিছু কথা।
আসলে প্রথম পাওয়া ভালোবাসার মতই কষ্টগুলোও তোলা থাকে বুকের চোরাকুঠুরিতে গোপনে। অপমানে আর ভয়ে একটু একটু করে গুটিয়ে নেয় নিজেকে সুদর্শনা। শুকনো মুখটাতে হাসির ছিটেফোটা নেই,বাড়িতে ননদরা এলে লুকিয়ে থাকে নিজের ঘরে চুপটি করে কারণ জানে শ্বশুরমশাইয়ের ঘরে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

          ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতো আজ কি অভিযোগের তীর উঠবে ওর বিরুদ্ধে। কে জানে কি অন‍্যায় আবার করেছে?

         এর মধ‍্যেই ছোটননদ মা হলো একসাথেই প্রায় বিয়ে হয়েছিলো তাই প্রশ্ন উঠলো সুদর্শনা নিশ্চয় বন্ধ‍্যা নাহলে এতদিন ওর কিছু হলোনা কেন?
ননদের মেয়ের মুখেভাতে একপাশে অনাহূতের মত বসে সুদর্শনা। ননদ তখন ওর পরিচিত এক মাসিশাশুড়ির সুন্দরী বৌমার গুণগান আর নিজের বৌদির অপমানে ব‍্যস্ত। অনেকেই জিজ্ঞেস করছে ওর কোন খবর আছে কিনা? অনেকদিনই তো বিয়ে হলো। মাথা নাড়ে সুদর্শনা লাজুক হাসি হেসে।কানে আসে ননদের কথা.." মাসিমণি কি সুন্দর বৌমা হয়েছে তোমার! আমাদের বাড়ির ছেলেগুলোর ভাগ‍্যই খারাপ।"
          অবাক হয়ে যায় সুদর্শনা মোটামুটি তিনবার দেখার পর ওকে সিলেক্ট করেছিলো ওরা। সত‍্যিই মানুষ চেনা বড়ই মুশকিল। হয়ত দোষ ওরই ওদের প্রত‍্যাশা মত বৌ হতে পারেনি ও।

        হীনমন্যতা গ্ৰাস করে ফেলে সুদর্শনাকে একদিন কেঁদে ফেলে বরের কাছে," দেখোনা যদি একটা টিউশন পাওয়া যায় আমি করবো যা দেয় দেবে।"

         তবে ভগবান বোধহয় সব সময় মুখ ফিরিয়ে থাকেননা ভক্তের অপমানে যুগে যুগে অবতীর্ণ হন নিজের মত এগিয়ে যেতে সাহায্য করেন অন্ধ আর পঙ্গুকেও। তাই একদিন সুখবর এলো জাস্ট লটারি পাওয়ার মতই সুদর্শনা তিন নম্বর ইন্টারভিউতে চাকরি পেয়ে গেছে।

             শৈশব,বিয়ে,প্রেম সব কিছুর ওপরে যে স্বাবলম্বী হওয়ার আনন্দ তা বোধহয় সুদর্শনা বুঝলো ওর অপমান আর অপ্রাপ্তির দিনগুলো পার করে আর্থিক স্বাবলম্বী হয়ে। মাটিতে ছেঁড়া কাপড়ের মত আছাড় খাওয়া সুদর্শনার কল্পনার ঘুড়ি একদম ভোকাট্টা হয়ে মনের খুশিতে ঘুরপাক খেলো।
      হয়ত এত আনন্দ কখনো পায়নি বারবার মনে হলো মায়ের কথা.." ভালো করে পড়,পড়াশোনা এমন এক অমূল‍্য রত্ন যা ছেড়ে যায়না কখনোই।"
কেউ চুরিও করতে পারেনা।"

           চাকরি পাবার পর শ্বশুরবাড়িতে সেই বিখ‍্যাত মাসিমার মুখে শুনেছিলো ঠেসমারা কথা," আমার বৌমাকে বাপু চাকরি করতে দিতামনা। বাড়ির বৌয়ের আবার চাকরি করা কি?"
          অনেক অপমানে অপমানিত সুদর্শনা মুখ খুললো," আসলে মাসিমণি সবাই কি চাকরি পায়? চাকরি পেতে যোগ‍্যতা লাগে।"

          হয়ত সুদর্শনার মত সব মেয়েরই স্বাবলম্বী হওয়া জরুরী একদম নিজের মত করে কারণ কোন কাজই ছোট নয়।

       আজও চোখ বুজলে নিজের সবচেয়ে আনন্দের দিন বলতে মনে হয় ওর চাকরি পাওয়ার দিনটার কথাই নাহলে সুদর্শনা কবেই কুদর্শনা হয়ে কুকথার জালে জড়িয়ে হয়ত একটা নড়বড়ে জীবনে দমবন্ধ হয়ে মরেই যেতো। ঐ স্বাবলম্বনই তো দিয়েছে ওকে মিঠে মাতৃত্বের স্বাদ,ইচ্ছে মত মানুষ করেছে সন্তানকে। যে স্বাদের সত‍্যিই কোন ভাগ হয়না। আরো অনেক কিছু দিয়েছে অনেক কিছু যা হয়ত বলে শেষ করা যাবেনা তারমধ‍্যে সবচেয়ে প্রিয় আত্মসম্মান যা ওর একান্ত নিজস্ব..অনেক ভালোবাসার জিনিস।
#আমার_লেখনীতে#
#মেয়েবেলার_চারপ্রহর#

সমাপ্ত:-

            

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...