Skip to main content

জীবন যখন যেমন4

দুষ্টু বুঝতে পারে ওর বাবারও ইচ্ছে নয় ও আলাদা ঘরে চলে যাক। মাকে বলতে তো মা ভীষণ বকেছিলো.." ভীষণ পাকা হয়ে গেছিস তাইনা? কি করবি আলাদা ঘরে? একসাথে দুজনে ঘরে থাকবি গল্প করবি পড়বি তা নয় আলাদা ঘর! কি হবে আলাদা ঘর শুনি?
       আমরা তিনবোন এক ঘরে শুয়ে বড় হয়েছি।ঐ ঘরেই কত ঝগড়া আর মারামারি হয়েছে তবুও ভালোবাসা একটুও কমেনি। এসব আবার কি পাকামো শুনি? একদম হবেনা।তাছাড়া ঘর কোথায়?

   বাবাও একই কথা বলেছে দুষ্টুকে। এ যেন বাবার কথাগুলোই  মায়ের আবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা।
      দুষ্টু কি করে বলবে আজকাল দিদি খুব খবরদারি করে ওর ওপর। আগে বেশ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতো এখন একদম ঘুমায়না।কি সব পড়াশোনা করতে বসে। দুষ্টুও পড়ে ওকে যে পরীক্ষাতে ভালো করতেই হবে।কিন্তু ইচ্ছে তো করে একটু ডাইরি লিখতে,দিদির জ্বালাতে আর একদম উপায় নেই সেইসব করার। একদম চোখ দিয়ে রেখেছে ওর ওপর সারাক্ষণ। অথচ ঐ ডাইরির পাতায় পাতায় লুকিয়ে আছে ওর ভালো থাকা খারাপ থাকা কত কিছুই। ওর মন খারাপ, খুশি আর কান্না সবটুকুই তো ও বলে ঐ বন্ধুর সাথে।

      জোজোদার মুখের দিকে তাকিয়ে ওর কথা বলতেও আজকাল অস্বস্তি হয়। সেদিনই জোজোদা বললো.." দুষ্টুটাও কেমন যেন বড় বড় হয়ে গেলো। আজকাল পেয়ারা গুলো বাদুরেই খেয়ে যাচ্ছে। বাঁদর আর উঠছে না গাছে...."

         দুষ্টু রেগে মেগে তাকাতেই মুখ ঢাকে জোজো।মুচকি হাসে মিষ্টিও। দুষ্টুর খুব রাগ হয় ওরা সবসময় ওকে ছোট ভেবেই গেলো। ও ছোট বলে সবাই ওকে দমিয়ে রাখে। দিদির সাথে ওদের কত ভাব। দুষ্টু ওর বন্ধুখাতার পাতায় লিখে রাখে ওর মন খারাপের গল্প। ছোট থেকে ও সবসময় দিদির পুরোনো জিনিস পেয়ে বড় হয়েছে। জোজোদাকে ওর ভালো লাগে,আগে কত খেলা করেছে ওরা কত গল্প করেছে। এখন দিদিই সব সময় ওদের সাথে গল্প করে।

              নিজের মধ‍্যে এত কথা জমিয়ে রাখতে ভালো লাগেনা দুষ্টুর অথচ কাউকে বলতেও পারেনা। ও জানে এই কথাটা কাউকে বলা যায়না এমন কি দিদিকেও বলা যায়না।দিদিকে বললে দিদি সাঙ্ঘাতিক কান্ড করবে হয়ত জোজোদাকেই বাবা বাড়ি পাঠিয়ে দেবে। ভাবতেই গলাটা বুজে আসে দুষ্টুর। প্রতিদিন জানলায় বসে মাঠে খেলতে যাবার পথে জোজোদাকে দেখতে ওর ভালো লাগে। কিন্তু সামনে এলে কোন কথাই বলতে পারেনা।

      জোজো ভাবে দুষ্টুর বোধহয় কোন কারণে ওর ওপর রাগ হয়েছে তাই ভালো করে কথা বলেনা।
     মিষ্টির কাছে শুনেছে আজকাল পড়াশোনাতে মন দিয়েছে দুষ্টু।ওদের স্কুলের হেডমিস্ট্রেস বাবাকে বলেছেন হয়ত আবার ঘুরে দাঁড়াবে দুষ্টু।

    সত‍্যিই বোধহয় বড়বেলাটা বড্ড বড় বড় মানে বড় পড়াশোনা,বড় চিন্তা,বড় ক্লাশ আর বড় বড় অঙ্কের মেলা কিছু মেলে আর কিছু মেলেনা।

       এর থেকে ছোটবেলাটা ভালো ছিলো মনে হলো দুষ্টু আর মিষ্টি দুজনেরই।

মিষ্টি বলে ,"ছোটবেলাই ভালো ছিলো তাইনা বোন?বেশ  এক খেলনা আর এক জামা নিয়ে দুজনে টানাটানি করতাম আবার একটা বালিশে দুজনেই জড়িয়ে শুতাম। তুই কেন আলাদা ঘরে চলে যেতে চাইছিস? আমার ওপর রাগ? আচ্ছা আমি কিছু বলবোনা আর মাকে। তুই এখানেই থাক। অবশ‍্য তোকে বাবা আলাদা থাকতেও দেবেনা।"

           দুষ্টু অভিমান করে বলে," আমার ছোটবেলাও ভালো ছিলোনা আর এখনো না। ছোটবেলায় আমার জিনিস কেড়ে নিতিস আর এখনো?"
     অবাক হয়ে যায় মিষ্টি,মনে করার চেষ্টা করে.." কি কেড়ে নিলাম আবার? এখন তো আমার ভালো জিনিস তোকে দিয়েই খাই। এই তো সেদিন তোকে কতগুলো চুড়ি দিলাম,আচার খাওয়ালাম।"
        " আমার চুড়ি লাগবে না,তোর চুড়ি নিয়ে নিস।"

  রবীন অবাক হয়ে যায় দুষ্টুর জেদ দেখে।হঠাৎ মেয়েটা এমন হয়ে গেলো কেন? এটা কি বয়ঃসন্ধির প্রভাব? না কি ও কিছু অভিমান লুকিয়ে রেখেছে যা বলতে পারছেনা নাকি কোন সমস‍্যা?

******************

  ছেলেমেয়ে বড় হলেও ওরা বড় হয়ে গেছে ভেবে দায় এড়ানো বোধহয় এত সহজ নয় তাই দুষ্টুর অস্থিরতা অস্থির করে রবীনকে। রাতে শুয়ে অনুকে একটু একটু করে বোঝায় রবীন..অনু অভিমান করে বলে," তুমি আমাকে বলো আমি মিষ্টিকে বেশি আদর দিই কিন্তু তুমি যে দুষ্টুকে বেশি ভালোবাসো তা কি জানো?"

       নিজের কাছে নিজে ধরা পড়ে যায় রবীন।সেই যে একরত্তি কালো মেয়েটাকে কোলে নিয়ে অনু কেঁদেছিলো একেই মেয়ে তারপর আবার কালো এই বলে।
    সেই কথাটা আজও ছবির মত চোখে আর কানে ধাক্কা দেয়। তাই হয়ত একটু আগলে রাখতে চেয়েছে কালো অবহেলিত মেয়েটাকে।দুষ্টুর মধ‍্যে যে নিজেকেই দেখতে পায় রবীন ভীষণ,সাহসী,স্পষ্টবক্তা অথচ মায়া মাখা একটা মেয়ে। শুধু আজকাল ঐ এতদিনের কচিকচি মুখটা কেমন যেন বিষণ্ণ লাগে।তবে কি রেজাল্ট খারাপ করাটা ও নিতে পারেনি?

           মেয়ের শুকনো মুখ দেখতে কোন বাবা মায়েরই বা ভালো লাগে?
             বাবা মাকে সবসময় ওকে আগলাতে দেখে অবাক হয়ে যায় দুষ্টু। দিদিও আজকাল খুব যেন একটু বেশিই ভালো হয়ে গেছে।
    তবে রবীন এখন দীপ্ত আর জোজোকে বাড়িতে অঙ্ক করতে ডাকেনা।দুএকদিন নজর করে দেখেছে সত‍্যিই মিষ্টি বেশ কথা বলে পড়তে বসে আর তিনজনের ভালোই হাসিগল্প হয়। যদিও দীপ্ত একটু চুপচাপ। তাছাড়া এর আগেও কথা উঠেছে জোজোর প্রতি রবীনের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে। সুতরাং প্রথমে শুভ তারপর মধুমিতা আর রাণুকে বলে স্কুলের আলোচনার কথা.." আমি ওদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এমন বলছি। আমার এখানে আলাদা করে পড়তে আসা নিয়ে বেশ কথা হচ্ছে।"
    মধুমিতা একটু মুষড়ে পড়ে শুনে," দাদা তাহলে তো খুব মুশকিল হবে। অঙ্কটা তো ওর ঠিকঠাক হবেনা।"
   " আরে আমি তো আছি চিন্তা কেন এত? আমি হস্টেলের একটা রুমেই পড়াবো সবাইকে তাহলে সেখানে অন‍্য ছেলেদেরও উপকার হবে। কেউ কিছু বলতেও পারবেনা।"

    ওপার থেকে রাণু বলে," কিন্তু মিষ্টির কি হবে? এক সঙ্গে তো বেশ পড়তো ওরা আমি দেখেছি।"

  " তুমি ভেবোনা রাণু,দুষ্টু আর মিষ্টিকে একসাথে নিয়ে আমাকে বসতে হবে। ছোটমেয়ের অভিমান হচ্ছে মনে হয় ঠিকমত যত্ন না পেয়ে। ঐ আমার একটু খাটনি বাড়লো আর কি। তবে ভালো কিছুর জন‍্য আমি বাড়তি কাজ করতে রাজি।"

        অনু এই কথা শুনে কি বলবে ভাবছিলো রবীন,তবে অদ্ভুতভাবে অনু খুশি হলো.." আমি ভাবছিলাম তোমাকে বলবোই ওদের আলাদা পড়াতে। মিষ্টিটা হাসে ফিক ফিক করে দেখেছি আমি। আর ছোটটা একলা ঘরে বসে কি লেখে আমাকে দেখলে সরিয়ে রাখে খাতা চাপা দিয়ে।"

      " তাই তো ঠিক করলাম দুজনকে একসাথে নিয়েই বসবো,আর ছেলেদের সন্ধ‍্যেতে পড়াবো তিনদিন।"

      " ভালো হয়েছে,আজকাল কত কি যে হচ্ছে!
মেয়ে আমার সুন্দর দেখতে তারপর বড় হচ্ছে। আত্মীয়দের ব‍্যাপার শেষে বলবে আমার মেয়ে ওদের ছেলেকে খারাপ করেছে।"

   রবীন অবাক হয়ে যায় এ তুমি কি বলছো অনু? সত‍্যিই তোমার কল্পনার জুড়ি নেই।আমাদের দুই মেয়েই সুন্দর, তবে এখন এসব কি কথা! এগুলো কখনো ওদের সামনে বোলোনা।ভাইবোনের সম্পর্কের মধ‍্যে আবার এসব কি? তবুও দীপ্ত হলে না হয় কথা উঠতো।"

     " মাস্টারি করে করে তোমার মাথাটা গেছে একেবারে। দীপ্ত! ওদের অবস্থা কেমন জানো? ধান রুয়ে রুয়ে ছেলেটার হাতদুটো খরখরে হয়ে গেছে। তোমার টাকাতেই তো পড়ছে। আমাকে বলো আমার ভাবনার কথা,তোমার ভাবনার গরু তো গাছে উঠে যাবে এবার।ওসব কথা মাথাতেও এনোনা কখনো। মেয়েরা পড়ুক ভালো করে চাকরি করুক,আমার মতো হাউস ওয়াইফ হতে হবেনা।"

       রবীন বোঝে অনুর খুব রাগ হয়েছে।তাই মান ভাঙাতে বলে," তোমার মত মা আছে বলে তো ওরা ভালো হতে পারবে।আমি আর কতটুকু খেয়াল রাখতে পারি? দীপ্তর আত্মসম্মান আছে অনু,কষ্ট করে পড়ছে। আমি স্বেচ্ছায় সাহায্য করি কৃতী ছাত্র বলে অমন কথা বোলোনা কখনো।"

***********************

  মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা মাস।দুষ্টু আবার একশো নম্বর ভরেছে থলেতে। মা বাবা সবাই খুশি হয়েছে তবে এবার ছানার জিলিপি খেতে গিয়ে মনে হলো জোজোদাকে একটা দিলে ভালো হত। আজকাল আর তেমন আসেনা ওদের এদিকে,কখনো স্কুল যাবার সময় দেখা হলে দুষ্টু আর মিষ্টিকে দেখে হাত নাড়ে।

          দুজনেরই সামনে পরীক্ষা আসছে একজনের দশের আরেকজনের বারোর। তাই হাতে গোনা আর কয়েকটা দিন স্কুল তার মধ‍্যেই বাবা বারণ করলেও মিষ্টি স্কুলে আসছে চেটেপুটে নিতে ছাত্রজীবনের মিঠে স্বাদটা।কে জানে এরপর কোথায় যেতে হবে পড়াশোনার জন‍্য।

     সাইকেল চালিয়ে যাতায়াতের পথে মাঝে মাঝে দেখা হয়ে যায় জোজোদার সাথে। দুষ্টুর মনে হয় জোজোদাকে খুব সুন্দর হয়েছে দেখতে আরো। বাবা সেদিন একটা ছবি এনেছিলো বললো এটা স্কুলে থাকবে।দুষ্টু প্রথমে একবার দেখেও আরো কয়েকবার দেখেছে লুকিয়ে লুকিয়ে। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করেছে সত‍্যি সত‍্যিই। সাদা ড্রেসে হাতে একটা বিরাট কাপ নিয়ে একপাশে জোজোদা আরেকপাশে দীপ্তদা পেছনে আরো অনেকে। ফুটবল খেলার চ‍্যাম্পিয়ানশিপে শিল্ড জেতার ছবি।

           তার পাশে একবার নিজের বিনুনী ঝোলানো ছবিটার কথা ভাবলো দুষ্টু।ওদের স্কুলেও এইরকম একটা ছবি আছে ওর গলায় মেডেল ঝুলছে আর হাতে বড় একটা কাপ।সেবার স্পোর্টসে সবটাতেই ফার্স্ট হয়ে একেবারে স্কুল চ‍্যাম্পিয়ান হয়েছিলো দুষ্টু। মা সেদিন খুব খুশি হয়েছিলো ওকে বুকে জড়িয়ে বলেছিলো.." এমনি ভালো পড়াশোনা করতে হবে,বুঝেছিস‌।"

      খুশি হয়েছিলো খুব দুষ্টু। মাকে বলেছিলো," আরো একটু বেশি করে আদর করোনা মা আমাকে। আমি ভালো তো?আচ্ছা দিদি বেশি ভালো না আমি?"
       মা একটু চুপ করে গেছিলো দুষ্টু বুঝেছিলো মায়ের সমস‍্যা। তবে একটু বাদেই সামলে মা বলেছিলো দুজনেই খুব ভালো। দুজনে সমান সমান ভালো।
    " তাহলে তুমি বলো কেন দিদি বেশি ভালো। দিদির মত হতে বলো।"
     " ওমা সবাই তাই বলে বড়দের দেখিয়ে,তোর মণিমাকেও তো সবাই তাই বলতো।দিদি শান্ত তুই বেশি কথা বলিস।"

     দুষ্টু এবার প্রতিবাদ করে," কেন মণিমাও তো খুব ভালো। আমি আমার মত,দিদি দিদির মত। মণিমা মণিমার মত। তুমি বড় তো তাই ছোটদের কষ্টটা বুঝতে পারোনা।"

         রবীন অনেকবার বললেও আজ দুষ্টুর কাছ থেকে শুনে আবার বুঝলো অনু সত‍্যিই প্রত‍্যেকেই বোধহয় নিজের নিজের মত। আর সবারই কিছু ভালো গুণ আছে।

*******************

    মিষ্টি আর দুষ্টুর মধ‍্যে আবার ভাব হয়ে গেছে।মিষ্টি যখন পড়তে যায় তার ফাঁকে ডাইরি লিখে নেয় দুষ্টু। বুঝতে পারে সময় ভাগ করে নেওয়াটাও জরুরী।
     রাতে শুয়ে শুয়ে কত গল্প করে দিদির সাথে তারপর কোন সাড়া না পেয়ে বলে," ঘুমোলি নাকি রে দিদি?
         শোননা,এবার বাবাকে বলবো আমাদের চড়ুইভাতিটা আগে করে নিতে বুঝলি।নাহলে তো আর হবেনা কিছুই পরীক্ষা পরীক্ষা করে।"

    মিষ্টি ঘুম জড়ানো চোখে আচ্ছা বলে আর ভাবে সত‍্যিই কত কথা বলতে পারে দুষ্টুটা আর তেমন অভিমানী। বাইরে থেকে একবার ঘরে আসে রবীন দেখতে কি করছে ওরা।
            আলো নেভানো দেখে ফিরে যাবার পথে দুষ্টু বলে," বাবা ঘুমোওনি,যাও ঘুমিয়ে পড়ো।"
      " তুইও তো ঘুমোসনি,হ‍্যাঁ রে সব পড়া ঠিক করছিস তো?"
     " করছি বাবা,তুমি আমাদের চড়ুইভাতিটা আগে করে নেবে তো?"
   " সত‍্যিই পাগলী একটা,রাতে ঘুম আসছেনা মেয়ের এইসব ভাবনায়! হবে হবে, সব হবে।"

             টেস্টের রেজাল্টেও দুষ্টু আবার একদম অঙ্কে একশোতে একশো এনে রেখেছে ওর নম্বরের থলিতে। খুশি দিদিমণিরাও,যাক বোঝানোতে কাজ হয়েছে। মিষ্টির রেজাল্টও ভালো তবে ইংরেজীতে বেশ কমে গেছে। সায়েন্সে নজর দিতে গিয়ে ইংরেজী কম অভ‍্যেস করেছে।

        জোজোর আবার ইংরেজি খুব ভালো তবে সায়েন্সে একটু কম। দুটো চকোলেট বার করে দুষ্টুর হাতে দেয় জোজো। দুষ্টু অবাক হয়ে যায়.." আমার জন‍্য! দিদিরটা কই?"
       ঠোঁট ওল্টায় জোজো," হ‍্যাঁ তোর জন‍্যই শুধু আনলাম, কারণ তুই তো ভালো করেছিস সবার থেকেই। মা পাঠিয়ে দিয়েছে বাবা এনেছিলো। তবে তুই দিদিকে না দিয়ে খাবিনা আমি জানি।"

     অভিমান হয় মিষ্টির," ওর কাছে চেয়ে আমাকে চকোলেট নিতে হবে! ইশ্ দরকার নেই আমার।"
       দিদির গলাটা জড়িয়ে ধরে দুষ্টু আনন্দে,জোজোদা ওকে দিয়েছে দুটোই এটাই বেশি ভালো লাগছে ওর। তাই দিদিকে দিয়ে দেবে যেটা দিদির পছন্দ।

    ওদের কথার মাঝেই রবীন আসে,মিষ্টিকে বলে "মাঝে মাঝে তুই আর জোজো দুজনে একটু ইংরেজীটা আলোচনা করে নিস ঠিক হয়ে যাবে।"
        দুষ্টুও লাফিয়ে ওঠে.." আমিও জোজোদার সাথে আলোচনা করে ইংরেজী শিখবো।"
     অনু ধমকায়," তুই তো ইংরেজী ভালোই পারিস। আর ওর পরীক্ষা নেই।ও বাড়ির সবাই তাকিয়ে আছে ওর মুখের দিকে।"

    মুখ বেজার করে দুষ্টু। জোজো হেসে বলে,"আচ্ছা,তুই যেগুলো পারবিনা আমাকে টেস্ট পেপারটা দিস আমি করে দেবো।"
                     ছেলেমেয়েদের অনেকদিন বাদে হাসিমাখা মুখগুলো দেখে আনন্দ হয় রবীনের। দীপ্ত যথারীতি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে,কিন্তু মায়ের শরীর খারাপ বলে বাড়িতে চলে গেছে। সবারই আশা ছেলেটাকে নিয়ে কিন্তু এত সমস‍্যা ছেলেটার! জোজোও মনে মনে ভাবে দীপ্তর কথা,হয়ত ও ওর রুমমেট না হলে এতটা উন্নতি করতে পারতোনা জোজো।

        ***************
জোজো আজকাল পড়াশোনার জন‍্য মাঝে মাঝেই আসে, দুষ্টুর খুব ভালো লাগে। ওর উড়ে যাওয়া মনটাকে বাঁধতে পেরেছে অনেকটাই তাই আর মনটা ছটফট করেনা।
    তবে জোজোদা সবসময় ওকে বাচ্চা ভাবে।কখনোই ভাবেনা ও বড় হচ্ছে। দুষ্টু অবশ‍্য কয়েকদিন টেস্টপেপার ধরিয়ে দিয়েছে পেজ নাম্বার বলে। জোজো সল্ভ করে দেয় কাজগুলো, ও না করলে দীপ্তকে ধরিয়ে দেয় মাঝে মাঝে.." নে আমার ছোট ছাত্রীর কাজগুলো করে দে চট করে। আরে এই অঙ্কটা কিছুতেই মিলছেনা।"

    " ও তোকে দিয়েছে ভরসা করে আমি করবো কেন?" বলে দীপ্ত।
       " আরে ইউ আর দ‍্য বিগ বস,আমারও তো গুরু তুই, তাই ভয় কি?" বলে জোজো।

     তবে ভয় সত‍্যিই দীপ্ত পেলো একদিন। মানে রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়ে ঘেমে অস্থির হলো অথচ  বলতে পারলোনা জোজোকে কিছুই।

******************
যথারীতি সেদিনও টেস্টপেপার ধরিয়েছে দুষ্টু জোজোকে, এ এক ভালোলাগার খেলা ওর কাছে।যদিও বাবা বলে ঠিক আছে আমি দেখবো গ্ৰামার গুলো,আমাকে দিস আবার ভুলেও যায়।বাবার বেশি নজর অঙ্কে,আসলে নিজের ফেভারিট সাবজেক্ট তো।
         জোজোদাকে টেস্টপেপার ধরিয়ে দিয়ে যখন জোজোদা ফেরত দেয় ওর খুব ভালো লাগে‌। অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করে।একথা কাউকে বোঝাতে পারবেনা দুষ্টু শুধু মাঝেমাঝে শিশিরে ভেজা চা পাতা গুলোকে বলে ফেলে ওর বইয়ের পাতার ভাজে ভালোলাগা খোঁজার কথা।

      " দীপ্ত দেখ একগাদা কাজ দিয়েছে দুষ্টু।ভীষণ মজা পেয়েছে,প্রায়ই বই ধরিয়ে দেয়। স‍্যারকে তো কিছু বলা যায়না‌। আমার এখনো অনেক কাজ বাকি তুই একটু করে দিবি,কাল প‍রশু ওকে করে দিলেই হবে। আমি কাল বাড়ি যাবো,পরশু বিকেলে এসেই দিয়ে আসবো ওদের বাড়িতে।"
     " তুই না আনলেই পারতিস বইটা,বাড়ি থেকে এসে করে দিতিস। ওর তো পড়াশোনা আছে নাকি?"
           " আরে বাবা সব বলেছি তবুও ওর বায়না,জানিস তো নামে আর কাজে একদম এক।"
            জোজো ভোরবেলা বাড়ি যাবে বলে রওনা দিয়েছে,আজকাল বাড়িতে একাই যাতায়াত করে।
          দীপ্ত সকালের প্রার্থনা শেষে পূবের জানলার পাশে বই নিয়ে বসে। বাড়ির কথা খুব মনে হয়,মা এখন কিছুটা ভালো আছে।পরীক্ষার পর বাড়ি চলে যাবে ওখান থেকেই অন‍্য সব পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে তাই ভেবেছে। আকাশের রঙটা খুব উজ্জ্বল আজ চাবাগানের পাতাগুলো গাঢ় সবুজ হয়ে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কদিন আগেই ও গিয়েছিলো চাবাগানের পাশ দিয়ে যে নদীটা বয়ে গেছে তার ধারে। কয়েকদিন আগে নাকি একটা চিতা এসেছিলো মুরগী ধরে নিয়ে গেছে। দুষ্টু শুনে বললো ও নাকি দেখেছে চিতাটাকে,সবাই হাসাহাসি করলো শুনে।সত‍্যিই কিছু বকবক করতে পারে দুষ্টু।
         হঠাৎই মনে পড়ে গেলো এই রে টেস্টপেপার, মানে দুষ্টুর কাজ তো করা হয়নি। কলমটা হাতে নিয়ে দুষ্টুর খাতা আর বইটা কাছে টেনে নেয় দীপ্ত। জোজোটাও পারে  ওকে দিয়েছে মেয়েটা করতে সেটা দিয়ে গেলো দীপ্তকে করতে।

        পেজটা খুলেই দেখে একটা ভাজ করা কাগজ,প্রথমে পেজ মার্কার ভেবে একপাশে সরিয়ে রাখলেও হঠাৎই খুলে দেখে কাগজটা দীপ্ত। বাংলায় লেখা একটা চিঠি কিন্তু কে লিখেছে কাকে লিখেছে কিছুই লেখা নেই। ভালো করে আবার দেখে দীপ্ত,রেখে দেবে ভেবেও রাখতে পারেনা। চোখ দুটো প্রত‍্যেকটা অক্ষর দেখে আর বুঝতে এটা একটা চিঠি। ভালোবাসা বুঝতে পারে দীপ্ত,প্রেমও অজানা নয়।ওদের অনেক বন্ধুদের মেয়ে বন্ধু মানে প্রেমিকা আছে, পুজোতে ঘুরে বেড়ায়।চিঠি দেয়,ফোনে কথা বলে।
         এই তো কিছুদিন আগে স্কুলেও ঝামেলা হয়ে গেলো আজকাল শুধু ছেলেমেয়েরা নয় স‍্যার আর ম‍্যাডামের মধ‍্যেও প্রেম। ইন্দু দিদিমণির তো ডিভোর্স হয়ে গেলো এই স্কুলে এসে বায়োলজি স‍্যারের প্রেমে পড়ার জন‍্য। সব কিছু পাল্টে যাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি। হয়ত এইজন‍্য হেডস‍্যার আর ওদের বাড়িতে ডাকেননা বেশি।

        কিন্তু এই চিঠিটা কার লেখা? কাকে লেখা?
মিষ্টি লিখেছে? না বইটা তো দুষ্টুর।তবে কি দুষ্টুর লেখা?
        অবাক হয়ে যায় দীপ্ত দুষ্টু! দুষ্টু এমন চিঠি লিখতে পারে? কথায় কথায় ঝগড়া করে,গাছে ওঠে,মারপিট করে,খেলার মাঠে দৌড়য় হরিণের মত সেই দুষ্টু লিখেছে!
                    কিন্তু কাকে লিখেছে চিঠিটা? উত্তীয় মানে জোজোকে?
       আর কিছু ভাবতে পারেনা দীপ্ত। নিশ্চয় উত্তীয় বইটা খুলেই দেখেনি দেখলে এই চিঠিটা এখানে থাকতোনা। থাক দরকার নেই,ও দেখলে দেখবে। আবার চিঠিটা ভাজ করে রেখে দেয়।মনটা একটু কেমন যেন হয়ে যায়,ভয় হয় ভেতরে ভেতরে।ও তো দেখে ফেলেছে চিঠিটা কিছু হবেনা তো?
          কাজগুলো করে খাতাটা বন্ধ করে রাখে দীপ্ত আজ আর পড়াতে মন বসেনা। একটা অপরাধবোধ হয় অন‍্যের চিঠি পড়ে ফেলার জন‍্য।

     পরের দিন বিকেলেই ফিরে আসে জোজো,ও যখনই যায় কাম্মা দুষ্টু মিষ্টির জন‍্য কিছু না কিছু পাঠিয়ে দেয়। হয় সাজগোজের জিনিস নয় খাবার দাবার তাই ওগুলো দিয়ে আসতে পা বাড়ায়।
      পেছন থেকে দীপ্ত ডাকে," উত্তীয় এই বইটা নিয়ে যা,একবার খুলে দেখে নে কাজগুলো ঠিকমত হয়েছে কিনা? আমি মাঠে গেলাম খেলতে।"

    যেতে যেতে একবার মুখ বাড়ায় দীপ্ত উত্তীয় কি বইটা খুলে দেখবে? পড়বে চিঠিটা? মনে জমা অনেকগুলো প্রশ্ন নিয়ে দৌড়ে যায় মাঠের দিকে।

       ঠিক তো বইটাও তো নিয়ে যেতে হবে তাই তাড়াতাড়ি করে বই নিয়ে দুষ্টুদের বাড়ির দিকে পা বাড়ায় জোজো। অন‍্য দিন জোজো এলে ওরা দুই বোন দৌড়ে আসে,কিছুক্ষণ গল্প খুনশুটি চলে। তখন মিষ্টি পড়তে গেছিলো কিন্তু দুষ্টুর পা দুটো আটকে গেছে।কিছুতেই যেতে পারছেনা জোজোর সামনে,সেদিন কেন যে হঠাৎই একটা চিঠি লিখে ফেললো।অবশ‍্য তেমন কিছু না লিখলেও যে পড়বে সেই বুঝতে পারবে এটা ভালোবাসার চিঠি। ইশ্ না জেনে শুনে জোজোদাকে কিছু না বলে কেন যে হঠাৎই কাজটা করতে গেলো কে জানে?

        কি জানি জোজোদা কি বলবে? যদি বাবাকে বা মাকে অথবা দিদি বা মণিমাকে কিছু বলে? লজ্জা আর ভয়ে গুটিয়ে গেলো দুষ্টু। কি জানি ঐ টেস্ট পেপারের ভেতর কি আসছে আবার?

         " ওরা কেউ নেই বাড়িতে?"কাউকে না দেখে জোজো বলে।
   " মিষ্টি নেই তবে দুষ্টু আছে।দাঁড়া ডাকছি। এই ব‍্যাগটা রেখে দাও কাম্মা দিয়েছে আর এই যে চকোলেট দুষ্টুকে দিয়ো। আমি এই ফিরেছি  তাই যাচ্ছি এখন। আর এই যে দুষ্টুর বইটা।"

       বইয়ের কথা শুনে দুষ্টু তাড়াতাড়ি বাইরে আসে। মায়ের হাতে দেবার দরকার নেই কি জানি যদি কিছু লিখে থাকে?
                  ততক্ষণে জোজো সিঁড়ি দিয়ে নেমে রাস্তায় পা রেখেছে। দুষ্টুকে দেখে বলে," তোর বই দিয়ে গেলাম দেখে নিস। আর চকোলেট খাস তোর ফেভারিট।"
        মাথা নাড়ে দুষ্টু,পা বাড়ায় জোজো। বই খাতা আর চকোলেট হাতে নিয়ে দরজার পেছনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ হাঁফিয়ে নেয়।তারপর বইটা খোলে...তাড়াতাড়ি কাগজটা দেখে খোলে কিন্তু মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কাজগুলো যখন হয়ে গেছে তখন তো বইটা খুলেছিলো জোজোদা তবে নিশ্চয় ওকে ভালোবাসেনা তাই কোন উত্তরও দেয়নি। খুব মন খারাপ হলো দুষ্টুর চোখ ছাপিয়ে জল নামলো আর বাইরে নামলো আকাশ ভেঙে বৃষ্টি।
      মায়ের কথা শুনতে পেলো," ইশ্ মিষ্টিটা ছাতা ছাড়া গেছে।কে জানে এমন অসময়ে বৃষ্টি হবে?"
           দুষ্টু জানে অসময়ে বৃষ্টি নামলো হয়ত ওর মনে জমানো ভালোবাসাটা আজ মারা গেলো তাই। আবার তারপরেই তাড়াতাড়ি চোখ মুছে ফেললো দুষ্টু ওর সদ‍্য বড় হয়ে ওঠা ছোট্ট মনটা বললো,হয়ত দেখেইনি জোজোদা চিঠিটা,ভালোই হয়েছে যদি জোজোদা দেখতো তাহলে উল্টোটাও হতে পারতো।হয়ত রাগ করতে পারতো বা ওকে বকতো অথবা বাবা বা মণিমাকে বলেও দিতে পারতো। ইশ্ ও যে চিঠিটা হুট করে দিয়ে ফেলেছে একদমই ঠিক হয়নি সেটা।

         নিজের সঙ্গে কিছুক্ষণ বকবক করলো দুষ্টু বাইরে তখন বৃষ্টির জলতরঙ্গ বেজে চলেছে ওদের জানলার ওপর সানসেটে। দুষ্টু টেনে নেয় ওর ডাইরি বাবা তখনো ফেরেনি মনে হয় চাবাগানের শ্রমিকদের ছেলেদের পড়িয়ে একদম
  দিদিকে নিয়ে ফিরবে।মা ঠাকুরের কাছে সন্ধ‍্যে দিচ্ছে তারপর জপ করবে কিছুক্ষণ ডাইরিতে আজ ওর মনটা উজাড় করে লিখলো মনের সব কথা।শেষে লিখলো ওর ভালোবাসা নিশ্চয় একদিন বুঝবে জোজোদা।আর জোজোদা তো ওকে ভালোবাসেই তাইতো সবসময় ওকে চকলেট দেয়।
       আরো এলোমেলো,হিজিবিজি কত কথা লিখে চোখ মুছলো দুষ্টু মনে মনে ভাবলো বাবা বলে যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। সত‍্যিই হয়ত সেটাই ঠিক। তবে ওকে বড় হতে হবে ভালো হতে হবে। এই তো কদিন আগে শুনেছে ওদের স্কুলের মৌ দি ইলেভেনে পড়তেই কোথায় যেন চলে গিয়েছিলো,কদিন পাওয়া যায়নি তারপর থানা পুলিশ করে ধরে আনার পর শুনেছিলো মৌ দিদির নাকি আঠেরো বছর বয়েস হয়ে গেছে তাই এখন যা ইচ্ছে করতে পারে। ওদের পাড়ার কাকে যেন বিয়ে করেছে পালিয়ে।

        বাবা আর মাকে বলতে বাবা রাগ করেছিলো," কিচ্ছু হবেনা এই মেয়েগুলোর, কোথায় নিজের পায়ে দাঁড়াবে তা নয় এখনি বিয়ে করে বসলো! আরে বিয়েটাই কি সবকিছু? মিষ্টি তোর সাথেই তো পড়তো মৌ তাইনা? স্কুলের পরিবেশ যে কি হচ্ছে? তবে তোমরা শুনে নাও কানটি খুলে এমন কিছু করলে কিন্তু আমি আর ভালো বাবা হয়ে থাকতে পারবোনা।"

    অবাক হয়ে গিয়েছিলো দুষ্টু বাবা সেদিন অকারণে ওদের দুজনকে বকেছিলো বেশি করে দিদিকে। দিদি রেগে গিয়ে বলেছিলো," আমাকে এইসব বলছো কেন? আমি কি বিয়ে করেছি নাকি? শুধু শুধু শরীর খারাপ কোরনা।"
     মায়ের ওপরেও বাবা রেগে গিয়েছিলো,মাও এক কথা বললো বকছো কেন ওদের। রবীন বলেছিলো," সঙ্গদোষ তো ভয় করে তাই,জানোনা তো প্রেম আর নেশাটা হলো গিয়ে ঐ দেখাদেখি করে শাড়ি কেনার মত। ও করছে আমিও করি এইরকম ব‍্যাপার।"
      সেদিন অবশ‍্য দুজনেই খুব রাগ করেছিলো বাবার ওপর।
     আজ সেই কথাটা মনে হওয়ায় বুকটা ঢিপঢিপ করলো ভয়ে ভাগ‍্যিস ওর চিঠি ওর কাছে ফিরে এসেছে তবে ও তো কোন নাম লেখেনি চিঠিতে তাই কে বুঝবে? কিন্তু হাতের লেখা?
                       জানলায় এসে দাঁড়ায় দুষ্টু মনে ভয়,দুঃখ আবার হয়ত একটা হাল্কা শান্তিও চিঠিটা কি ছিঁড়ে ঐ জলের মধ‍্যে ফেলে দেবে? ভিজে গলে হারিয়ে যাবে ওর মনের প্রথম ভালোবাসার কথা? কিন্তু পারেনা দুষ্টু রেখে দেয় ডাইরির কভারে আটকে চিঠিটা।

         খাতাটা টেনে নেয় এবার ভালো লাগে ওর খাতায় লেখা জোজোদার হাতের ছোঁয়া দেখতে। তবে খাতাটা খুলে অবাক হয়ে যায়,এ কি এতো জোজোদার হাতের লেখাই নয়। জোজোদার ইংরেজী লেখা খুব ভালো কিন্তু এই লেখাটা একটু ছোট্ট গোল গোল একদম ছাপা অক্ষরের মত। এতো দীপ্তদার লেখা। তবে চিঠিটা কি দীপ্তদা দেখেছে? জোজোদা আদৌ দেখেনি? মাথাটা কেমন যেন করে দুষ্টুর বুঝতে পারে এইটুকু সময়ে আর এই কয়েক মাসে বড্ড ভয় ভয় আর গন্ডগোলের ব‍্যাপার হয়ে যাচ্ছে মানে ও করে ফেলছে। এরপর বাবা যদি জানতে পারে ভেবে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় একদম ভয়ে।
     তাড়াতাড়ি ডাইরিটাকে লুকিয়ে রাখে ওর লুকোনো জায়গায়।আর বার করবেনা সবসময় ওর মনের কথাগুলো এভাবেই থাক গোপনে।কিন্তু জোজোদা? ওর ভালোবাসা কি কোনদিন বুঝবেনা জোজোদা? সাহসী হয় দুষ্টু আবার মনে মনে ভাবে বড় হয়ে বলবে ঠিক একদিন," আমাদের পুরীতে যাবার কথা মনে আছে তোর? সেই ওপরের বাঙ্কে বসে গল্প,কবিতা আর গানের কথা। আমি তখনই তোকে ভালোবেসেছিলাম।" নিজের বয়েসটা আবার ভাবে দুষ্টু। মা ঠিকই বলে তুই বেশি পাকা দিদির থেকে সবসময় মুখে কটর কটর কথা একদম খই ফুটছে।
             মনে মনে ভাবে বয়েসটা আঠেরো হোক এখন তো সবেই পনেরো পেরিয়েছে। আবার চিন্তা লাগে সে না হয় গেলো কিন্ত দীপ্তদাকেই বা কি করে মুখ দেখাবে? ইশ্! নাহ্ এই তিনটে মাস আর ওদের সামনে বেরোবেনা ও। পেয়ারা গাছের তলা আর কালজানি নদীর ধার ভুলে যাবে শুধুই মন দেবে পড়াশোনাতে। অনেক বাড়াবাড়ি হয়েছে। তবুও বারবার মনে হলো ইশ্ দীপ্তদা কি সত‍্যিই পড়েছে চিঠিটা? তারপর মনে হলো না না নিশ্চয় পড়েনি।
   চিন্তা ভুলতে অঙ্ক বইটা টেনে নেয় দুষ্টু একটার পর একটা অঙ্কে মন দেয়। রবীন বাড়িতে এসে অবাক হয়ে যায়...একদম চুপচাপ বাড়ি খুব মন দিয়ে পড়ছে দুষ্টু।

***********************

          খেলে এসে দীপ্ত জোজোকে দেখে। আজ জোজো খেলতে যায়নি,বিকেলেই তো ফিরলো।কিন্তু ও কি চিঠিটা পড়েছে? কি জিজ্ঞেস করবে ভেবে পায়না তখনই,এক ঘরে থাকলেও দীপ্ত সবসময়ই একটা ঘেরাটোপের মধ‍্যেই থাকে।মাস্টারমশাইয়ের কথাগুলো খুব মনে পড়ে।
         জোজোকে ওর ঘরে রাখার আগে স‍্যার বলেছিলেন," একটা ছেলে আসছে,একটু একটু পোকা ধরেছে ওর স্বভাবে। এখানে আসছে ভালো হতে। ওর সাথে থেকে তুই নিশ্চয় ভালো হয়ে উঠবি খারাপ হয়ে যাবিনা। তোর মধ‍্যে যে শক্তি আর আগুন আছে তা দিয়ে ওকে পরখ করে নিস ও যেন তোকে না বদলায়।"
        তাই বন্ধু ছাড়াও লিটল গার্জেনও হয়েছে জোজোর।প্রথম প্রথম রাগ করতো ছেলেটা কখনো অবজ্ঞাও তারপর একটা সময় বুঝেছে দীপ্তর দীপ্তির চমক তখন একটু একটু করে শুনেছে ওর কথা।

       তাই আর জিজ্ঞেস করলোনা,জোজো বিছানায় গড়াচ্ছিলো," আজ খেলাটা মিস করলাম। কটা গোল দিলি ওদের?"
          " শেষ হলো কোথায়? বৃষ্টি নেমে গেলো তো। আচ্ছা তুই দুষ্টুকে কাজটা দিয়েছিস? সব ঠিক করে করেছি কিনা কে জানে? কিছু বললো দুষ্টু।"
       একটা হাই তুলে বললো জোজো.." আমার সামনেই এলোনা,কি জানি তখন ঘুমোচ্ছিলো নাকি? ভাবলাম ওকেই দেবো চকলেটটা তো এলোই না।শেষে যখন চলে আসছি তখন তাড়াতাড়ি করে এসে বইটা নিয়ে গেলো। পাগল আছে মেয়েটা। মাঝে মাঝে বকবক করে আবার মাঝেমাঝেই চুপ করে যায়। অত চাপ নিসনা ও দেখে নেবে।তোর আবার ভুল হবে নাকি? তারপর হাতের লেখা তো পুরো ছাপানো।"

      এক নিঃশ্বাসে বলে যায় জোজো দীপ্ত মন দিয়ে শোনে আর চোখের সামনে ভাসতে থাকে চিঠির ছোট্ট কয়েকটা শব্দ একটা কিশোরী মনের কিছু জমে থাকা অনুভূতি।তবে শেষ কথাটাতে মনটা যেন কেমন করলো..দুষ্টু দৌড়ে এসেছিলো বইটা নিতে তাহলে কি ও আশা করেছিলো বইয়ের মধ‍্যে কিছু থাকবে? দীপ্তর নিজেকে অপরাধী মনে হলো ওরই উচিৎ ছিলো হয়ত চিঠিটা উত্তীয়কে দেওয়া। কিন্তু সেটাও কি ঠিক হত?

********************

      মেয়ের আব্দার ছিলো চড়ুইভাতিটা আগে কোরো বাবা তাই এবার ডিসেম্বরের প্রথমেই ঠিক করলো চড়ুইভাতিটা করে নেবে রবীন।ঐ সময় রাণু আর জোজোও আসে এক একবার এক একটা জায়গায় ওরা চলে যায় সবাই মিলে সেখানেই হয় চড়ুইভাতি।
             জোজোও যায় ওদের সাথে খুব আনন্দ হয় তবে দীপ্ত যায়না কারণ রবীন এটা মোটামুটি পারিবারিক পিকনিক করে। একটা দিন একটু খোলা হাওয়ায় মনের জানলা দিয়ে বাড়তি অক্সিজেন আনা জীবনে। ওদের একটানা পড়াশোনার মধ্যেই একটু মুক্তির আশ্বাস।

         " দুষ্টু আমরা কিন্তু সামনের রবিবার ভাবছি যাবো।তোর মণিমা আর মধুমিতা বৌদিও আসবে ভালোই হলো এবার জোজোর বাবা আর কাকুও আসবে।বেশ বড় একটা দল হবে।"
       বাবার কথাটা শুনে একটু যেন কেমন লাগে দুষ্টুর একটা সময় এই দিনটার জন‍্য অপেক্ষা করতো অথচ এবার যেন আর যেতেই ইচ্ছে করছেনা একদম।সারাটা দিন জোজোদার সঙ্গে থাকা। এই কদিন ও পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছে জোজোদা আর দীপ্তদার কাছ থেকে।
      " বাবা এবার তো আমাদের পরীক্ষা তাই কি দরকার থাকনা এবার ছেড়ে দাও। আমার অনেক পড়া আছে।"
      " না বাবা আমরা যাবো,এরপর তো হয়ত এমন পিকনিক আর হবেনা। কে কোথায় চলে যাবো। পড়া তো আছেই। কি রে বোন তুই তো বলেছিলি যাবি?" মিষ্টি খুব বায়না করে।

     রবীনের অবাক লাগে দুষ্টুকে দেখে।অনেক পাল্টে গেছে দুষ্টু আগের সাথে ওকে আর মেলানো যায়না অনেক ধীর স্থির আর শান্ত পড়াশোনাতে মন দিয়েছে। হয়ত বা অনেকটা বেশি বড়ও হয়ে গেছে এই কয়েক মাসে।

       " এটা তো তোর জন‍্যই করা হয়েছে দুষ্টু।ঐ তো বছরে একটা দিনই আমরা একটু আনন্দ করি সবাই মিলে।তুই তো বললি আমাকে চড়ুইভাতিটা আগে আগে করতে।"

         দুষ্টু আর কিছু বলতে পারেনা,তবে বেশ লজ্জা পায় একসাথে সারাটা দিন কাটাতে জোজোদার সাথে। তবুও বাবার জন‍্য যেতেই হলো পিকনিকে। সবুজের মাঝে বিন্দুতে মন হারিয়ে যায় সবার। ছোট কুঁড়ি মন গুলো হাসিতে আর আনন্দে ফুটে ওঠে ফুলের মত ছড়ায় তার সুন্দর সৌরভ।জয়,মিষ্টি,জোজো মেতে ওঠে মজার হুল্লোড়ে,দুষ্টু প্রথমে একটু লজ্জা লজ্জা পেলেও খেলাতে মেতে ওঠে ওদের সাথে এবং যথারীতি খেলতে খেলতে খুনশুটি ঝগড়া সবই হয়।
        জোজোর মা আর বাবার এই প্রথম ওদের সাথে পিকনিকে আসা আর ওদের জন‍্যই রবীন একটু অন‍্যরকম করে বেশ বড় ব‍্যবস্থা করেছে। আনন্দে গল্পে মেতে ওঠে সবাই।মধুমিতা ও আজ যেন বহুদিন বাদে ছেলে আর বরের সাথে এক সুন্দর দিনের আনন্দ উপভোগ করছে। সবার মুখের হাসিটা খুব ভালো লাগছে রবীনের। প্রথম যখন জোজো ওদের ওখানে আসে তখন মধুমিতার সেই শুকনো কালো মুখের অসহায়তা কষ্ট দিয়েছিলো রবীনকে। তাই অনেকটা দায়িত্ব কাঁধে পড়লেও অবলীলায় নিয়েছিলো সেটা চ‍্যালেঞ্জের মত। একটা ধাপ সাফল‍্য ছুঁয়েছে জোজো,আরেকটা ধাপ পার হলেই রবীনের মুক্তি।
       " জামাইবাবু এই সবুজের গালিচায় বসে একটু গানের জলসা হবেনা? প্রত‍্যেকবারই তো হয় আমাদের।"রাণু বলে।
        " তুমি গাইবে তো আমার সাথে?"
  " ইশ্ আমার আর এখন গান আসেনা,কতবছর রেওয়াজ নেই। দাদাকে বলুন,দাদাও ভালো গান গায়।"
          শুভর দাদা অরাজী হয়েও রাজী হয়ে গেলো সবুজে আর খোলা আকাশে ছড়িয়ে পড়লো ওদের গান,' এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়।'

            দুষ্টুকে আবৃত্তি করতে বলে সবাই আজ দুষ্টুর কেমন যেন বাধো বাধো লাগে।বারবার মনে হয় পুরীতে একসাথে কর্ণকুন্তী সংবাদ পাঠ করার কথা। কিন্তু এক জিনিস বারবার বলবে কেন? আর ও জোজোদার সাথে আর কিছুই করবেনা। জোজোদার ওপর ওর খুব অভিমান। তাই বলতে থাকে...নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ওর প্রিয় কবিতা..
আমরা কেউ মাস্টার হতে চেয়েছিলাম।
কেউ ডাক্তার কেউ উকিল
কিন্তু অমলকান্তি সেসব কিছু হতে চায়নি
সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিলো।

     রবীনের মন হারিয়ে যায় কোথাও বড় বাস্তব ছোঁয়া মাখা কবিতাটায়। ওদের সাথেও হয়ত এমন কেউ অমলকান্তি ছিলো যে রোদ্দুর হতে চেয়েছিলো কিন্তু হয়নি। কতজনই তো হতে চায় রোদ্দুর কজনের ভাগ‍্যে আর তা হয়। দুষ্টুর গলার ওঠা নামাতে বড়ই জীবন্ত হয়ে ওঠে কবিতাটা। দুষ্টুর মনটাও যেন খোলা আকাশে রোদ্দুর ধরতে পারে।

        রাণু অনুকে বলে," দিদি তোর মেয়েদুটো সত‍্যিই এত ভালো হয়েছে! অবশ‍্য ওরা তো আমারও মেয়ে। দুষ্টুর চোখদুটো দেখেছিস? একদম কথা বলে।
      দেখিস খুব ভালো মেয়ে হবে ও।"

  " এখন কি তক্ক করে তা তো জানিস না।পড়াশোনা করে যদি ভালো চাকরি পায় তো ভালো নাহলে এমন মেজাজ কে সহ‍্য করবে?"
           " মেজাজ থাকা ভালো মেয়েদের একটু,নাহলে তো সবাই পা দিয়ে মারিয়ে যাবে।"
              অনু বুঝতে পারলো রাণু কি বলছে। হয়ত রাণু ভালো আর মেজাজী নয় বলে অনেক কিছুই ওকে সইতে হয় যা হয়ত বলতে পারেনা।
      সেই তুলনায় অনু অনেকটাই মেজাজী, মুখের ওপর সব বলে দেয়।ছোট থেকে এমনি ছিলো।

               রাণুর কথাতে অনুরও একটু যেন কেমন লাগে,কথাটা কাকে বললো রাণু কে জানে?
       তাই অন‍্য কথাতে চলে যায়.." ওসব থাক,তোর জামাইবাবুর খুব ইচ্ছে মেয়েদুটো ভালো মানুষ হোক তা হলেই হলো।"

        রাণু একবার তাকিয়ে দেখে ওর ভাসুর জায়ের ছবি তুলছে নানা ভঙ্গীতে সবুজের মাঝে। শুভর এতটা শখ নেই,ছেলেকে নিয়ে ব‍্যস্ত থাকে। বাবা আর ছেলে বল খেলা নিয়ে মেতেছে।
         দুষ্টু জোজো আর মিষ্টি বসে গল্প করছে জামাইবাবু যথারীতি ব‍্যস্ত রান্নার দিকে।
          " একটা ভালো ছেলে আমাদের বাড়িতেই তুই পাবি। দুষ্টুর সাথে কিন্তু ভালো মানাবে জোজোকে।"
         অনু ধমকায় রাণুকে," এইসব আর কখনো বলিসনা ভাগ‍্যিস তোর জামাইবাবু আর তোর জা কেউ এখানে নেই। তাহলে কি মনে করতো আমরা সুযোগের অপেক্ষায় আছি। তারপর ওরা এখন বাচ্চা।"
        " দিদি ভালো ছেলেকে চোখে রাখতে হয় তাই বললাম, ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকবে।মানে তোর ঘর থেকে আমার ঘরে।"
       এবার বুঝতে পারে রাণু মজা করছে তাই হেসে ফেলে অনু," খুব বুদ্ধি তো তোর। তবে একদম চুপ। মেয়েরা আসছে এদিকেই।"
       " বাবা তুই তো পুরো হেডমাস্টারকে চালিয়ে চালিয়ে লেডি হেডমাস্টার হয়ে গেছিস,মিস্ট্রেস বলছিনা।"
              হেসে অস্থির হয় দুইবোন। দুষ্টু মিষ্টিকে আসতে দেখে রাণু বলে," মিষ্টি তোর নাচটা হবেনা এবার?"
    " মণিমা পড়তে পড়তে আমি এত গড়াগড়ি খাচ্ছি যে নাচতে আর ভালো লাগছেনা গো।"
        তবুও রবীন এসে যখন বললো," সবাই যখন বলছে একটা ছোট করে কর। এই তো হয়ত শেষ পিকনিকে আসা। আবার কি এমন দিন হবে?"

             শীতের হাওয়ার লাগলো নাচন গানের সুরে গলা মেলায় ওরা.. মিষ্টির পা দুটো সবুজ ঘাস ছুঁয়ে লাফিয়ে ওঠে নাচের তালে বাতাসে ওড়ে সবুজ ওড়না হঠাৎই মধুমিতা কোমরে শাড়ি জড়িয়ে পা মেলায় মিষ্টির সাথে। জোজো অবাক হয়ে যায় মাকে দেখে।একটা সময় মাকে কত কাঁদতে দেখেছে আজ মাকে আনন্দ করতে দেখে খুব ভালো লাগছে। মিষ্টি আর মায়ের একসাথে নাচের ছবি ক‍্যামেরাবন্দি করছে বাবা। মনটা খুশির ছোঁয়া পেয়ে ভাসলো নাচের তালে ঐ নীল আকাশের সাদা মেঘেদের দলে।
                     দুষ্টুর মনে হলো নাচের জাদু বোধহয় সত‍্যিই মানুষকে মুগ্ধ করে বাবাকে বললো," বাবা, দিদি কত কি পারে তাইনা? আমি তো তেমন কিছু পারিনা। কি সুন্দর লাগছে দিদিকে দেখতে!"
          " সবাই সুন্দর দুষ্টু কেউ সাজে,আবার কেউ কাজে। শুধু বুঝতে হয় আমার কি সুন্দর। নিজেকে ছোট ভাবতে নেই কখনো।"

      *********************

মনের মধ‍্যে বাবার কথাগুলোই বাজে বারবার দুষ্টুর নিজেকে কখনো ছোট ভাবতে নেই। ও নিজে ছোট হয়ে কেন যে নিজেকে ছোট ভাবতেই শিখেছে সবসময়। জোজোদার সাথে কেন যেন গল্পের মধ‍্যে একটু হারিয়ে যাওয়াই হলো বেশি।মনে মনে একটু একটু করে যে অভিমান জমেছিল আজ তা অনেকখানি হাল্কা হলো সবুজের ছোঁয়ায়। বুঝতে পারলো ওদের মধ‍্যে একটা মিঠে আলাপের খুনশুটি আর ভালোলাগা আছে যার মধ‍্যে শুধু শুধু প্রেম নিয়ে এলে হয়ত সম্পর্কটা গোলমেলে হয়ে যেতো। মনে মনে নিজের কপালকে সাবাশ বললো আর অপকম্মের জন‍্য নিজেই নিজের কান মলে দিলো দুষ্টু। বাবা কি সব ভালোবাসার ভূত চেপেছিলো মাথায়!

       " আচ্ছা জোজোদা,তুই এখান থেকে চলে যাবার পর সবচেয়ে বেশি কি মিস্ করবি?" দুষ্টু জিজ্ঞেস করে।

     মিষ্টি হাসে," দেখেছিস বোন কেমন পাকা হয়েছে? কি আবার মিস্ করবে? নিজের বাড়ি গিয়ে বাঁচবে।মায়ের আর কাম্মার হাতের রান্না খাবে আর বিন্দাস থাকবে।"

     রাগে ঠোঁট ফোলায় দুষ্টু," দিদি আমি তোকে বলিনি যাকে বলেছি সে বলবে।"

        জোজো আকাশের দিকে তাকিয়ে দুই হাত তোলে..." প্রথমে যখন এখানে এসেছিলাম তখন তোদের বাড়ি আসতাম বাড়ির গন্ধ পেতে। আর এখন বাড়ি গিয়ে তোদের সবাইকে,এই কালচিনি,চাবাগানের সবুজ,নদীর ঝিরঝিরে বয়ে যাওয়া,আমার বন্ধু দীপ্ত,দুষ্টুর দেওয়া পেয়ারা সব সব খুব মিস্ করবো। আর সবচেয়ে বেশি মিস্ করবো স‍্যারের শাসন।"

       " আমার কথা বললিনা তো?আমি বাদ?"মিষ্টি বলে।

   "বললাম তো সবাইকে মিস্ করবো। তোর কথা আলাদা করে বলতে হবে নাকি? খুব হিংসুকুটি হয়েছিস তো?"

     মিষ্টি দেখে দিদি একটা গাছের ডাল দিয়ে জোজোদাকে একটা ঘা দেয়। অবাক লাগে দুষ্টুর দিদি শেষে মারামারি করছে জোজোদার সাথে!

      জোজোর মনে আজ খুশির ছোঁয়া মা বাবাকে একসাথে দেখে, কতদিন বাদে মা বাবা সবার সাথে মিলেমিশে খুশিতে আনন্দ করছে।অথচ একটা সময় সবাই আলাদা হয়ে গিয়েছিল ওরা। সেই দিনগুলো চাপা পড়ে যাক খুশির আনন্দে।

          কলাপাতাতে ধোয়া ওঠা ভাতে গরম মুগডাল,বেগুন ভাজা,ফুলকপির তরকারি আর পাঁঠার মাংস। সবুজে পাতা সবুজ পাতায় গরম ভাত আর মাংসের সুবাসে সবার পেটে ইঁদুরের নৃত‍্য। সুতরাং সবার লাইন দিয়ে বসে মেতে ওঠা ডানহাতের সুখে। মুখে সবার আঃ শব্দ আর মনে তৃপ্তি। মিষ্টি বললো," দীপ্তটা এলে ভালোই হত তাইনা? বাবাকে বলেছিলাম রাজি হলোনা।"

      বিজ্ঞের মত মাথা নাড়ে দুষ্টু," দীপ্তদা তো বাইরের তাই বাবা করে করে বলবে? তাহলে তো সবাইকে বলতে হয়।"

       রবীন পরিবেশনে ব‍্যস্ত খাওয়াতে খাওয়াতে বলে.." এই যে বাচ্চারা ভালো করে খাও,তোমাদের জন‍্যই এত সব আয়োজন। আজ মনকে সবুজে ভিজিয়ে নিয়ে যা যাতে একদম তাজা অক্সিজেন পেয়ে মনটা ভালো হয়ে যায় আর বুদ্ধিগুলো একদম ছুটে যায় আকাশ ছুঁতে।"

     আকাশ ছুঁতে কি পারবে ওর বুদ্ধি? মনে মনে ভাবে দুষ্টু। তবে আজকের চড়ুইভাতিটা যদি ওর বায়নাতে না হত তাহলে খুব মিস্ করতো।

            অনেকটা খুশি,ঝুলিভরা হাসি আর মুঠোভরা আনন্দের গল্প নিয়ে ফিরলো মা,মাসি সবাই।ফিরলো ওরাও।রাতে শুয়ে শুয়ে ওরা দুই বোনে অনেক গল্প করলো।অনেক রাত পর্যন্ত শুধু ঘুম এলোনা দুষ্টুর চোখে মন ভাবলো কত এলোমেলো কথা,ছোটছোট হাসি আর খুশি মনকে নিয়ে গেলো কল্পনা আর ভালোলাগার তেপান্তরে। দিদিকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে মাথার কাছের টেবিল ল‍্যাম্প জ্বালিয়ে ডাইরি বন্ধুকে অনেকদিন বাদে বলে অনেক কথা।

*******************

      পরীক্ষা পরীক্ষা করে কয়েকদিন মাথা থেকে অন‍্য সব কিছুই চলে গিয়েছিলো সবারই।এই কয়েকদিন রবীনেরও খুব চাপ থাকে পরপর দুটো বোর্ডের পরীক্ষা। স্কুলেও ব‍্য‍্যস্ততা আবার বাড়িতেও একই ব‍্যস্ততা আর পারা যায়না..." অনু দেখো ওরা যেন সুস্থ থাকে।"

      অবশেষে প্রতিবারের মত রবীনও সামলালো সব ঠিকমত আর মেয়েরাও ভাঙলো পরীক্ষার সিঁড়ি ভালোভাবেই। অনেকটা নিশ্চিন্তে শ্বাস ফেললো অনেকদিন বাদে।

         রেজাল্ট বেরোনোই তো শেষ কথা নয়,উচ্চমাধ‍্যমিকের পর অনেকগুলো পরীক্ষা মেয়েকে আর ছাত্রদের শেষ করিয়ে নিশ্চিন্তে শ্বাস ফেলা।

  " বাবা,আমি পারবো তো? সব ঠিক হবে তো?"

   মিষ্টির কথা শুনে কেমন যেন লাগে রবীনের তাহলে কি মেয়েটা সত‍্যিই মনে মনে খুব ভাবছে? কোথাও একটা ভয় কাজ করছে হেরে যাবার।

      " কি পারবি? তোর ভয় কিসের আমরা তো আছি? সবাই কি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হয়?"

      " কিন্তু বাবা তোমার তো ইচ্ছে আমি ডাক্তার হই।"

       দুষ্টু বিজ্ঞের মত বলে অমলকান্তিও তো রোদ্দুর হতে চেয়েছিলো, কিন্তু হতে পারেনি তো।"

    " পড়াশোনাটা তো খেলার মতই,হার জিৎ আছেই। তবে হারলেও ছেড়ে দেবোনা,কত কি করার আছে।কিছু একটা করে নেবো।তাইনা বাবা?" দুষ্টু বলে।

    অনু হাসে মেয়ের কথা শুনে। রবীন বলে," হেরে গিয়ে মরে যাওয়ার চেয়ে বেঁচে থেকে নেচে বেড়ানো ভালো কত সুন্দর নাচিস তুই। ভয় পাসনা,কিসের ভয়?

  আমরা করবো জয় নিশ্চয়।"

     বাবার গা ঘেঁষে বসে ওরা," রবীন গাইতে শুরু করে আমরা করবো জয় নিশ্চয়।"

গলা মেলায় দুষ্টু আর মিষ্টি বাবার সাথে।

********************

    পরীক্ষা শেষ হলেও যেন হলোনা,আসলে একটা সময় পরীক্ষার পিঠে পরীক্ষা আসে মানে ঐ নামতা পড়ার মত অবস্থা। মিষ্টি তো বলেই ফেললো," বাবা এই বোধহয় পরীক্ষার শুরু তাইনা? ছোট থেকে বড় পরীক্ষা তারপর আরো বড় বড় পরীক্ষা দিয়ে একদম বড় হয়ে যাওয়া।"

         রবীন হেসে বলে," বড় হওয়া কি এত সহজ! একটা সময় আমরা খাইয়ে দাইয়ে বড় করি জামাকাপড় ছোট করে তোরা লাফিয়ে লাফিয়ে বড় হয়ে যাস। তারপর শুরু হয় তোদের নিজেদের নিজেদেরকে বড় করার পালা।"

       দুষ্টু বলে," তখন তোমরা পাশে থাকবেনা বাবা? কেন বলছো নিজেকে নিজে বড় করতে হবে?"

         আজকাল স্কুলের নানা সমস‍্যায় মাঝে মাঝে মনটা ভারাক্রান্ত হয় রবীনের একটা বয়েসে যোগ করতে করতে সময় কেটে যায় আর তারপরেই হয়ত শুরু হয় বিয়োগের সময়। একটু একটু করে একা হওয়ার পালা,একটু করে নিজের সাথে নিজে কথা বলা। হয়ত মেয়েদুটোও এরপর কোথাও একটা চলে যাবে।আর হৈ হৈ করে ছানার জিলিপি খাওয়া বা মাংস কষা খাওয়া হবেনা।

       অনুকে বলতেই অনু রাগ করলো," কি যে সব ভাবো আজকাল! ওরা বড় হবেনা? বিয়েও তো দিতে হবে।"

      বিয়ের কথায় বুকটা কেমন যেন কেঁপে ওঠে রবীনের।তাই বলে," ওদের আগে বড় হতে দাও,চাকরি করুক তারপর।"

******************

        রেজাল্টের দিন যত আসতে থাকে মনটা একটু করে ভয়ে কাঁপে ওদের,প্রথমে দুষ্টুর রেজাল্টই বের হলো। রবীনেরও স্কুলের ফাঁকে মনটা অস্থির, তবে সত‍্যিই খুশি মুঠোতে ভরে দুষ্টু ভালো ফল করলো।

           রবীনদের বাড়িতে খুশির জলসা বসলো,মাস্টারমশাইরা ভিড় করলো সবাই মিস্টিমুখ করলো। দুষ্টু মায়ের কাছে এসে বললো," মা আমি ভালো করেছি তো। তুমি খুশি মা?"

       মায়ের কাছে একটু আদর পাওয়ার জন‍্য কাছে আসে দুষ্টু।রবীন অনুর দিকে তাকায়,অনু জড়িয়ে ধরে চুমু খায় দুষ্টুকে," ভীষণ খুশি হয়েছি আমি।"

        " আমিও খুব খুশি হয়েছি বোন,একেবারে একশোতে একশো! কতগুলো বিষয়ে তুই এতো এতো নম্বর পেয়েছিস! আমার থেকে অনেক ভালো।" মিষ্টি বলে।

    আজ দুষ্টুর সব চাওয়া যেন পাখা মেললো আকাশে। মন ছুটে গেলো পঙ্খীরাজে করে সব পেয়েছির দেশে। সবার এত আদরে মনটা খুশি হয়ে উঠলো,বুঝতে পারলো পড়াশোনা ভালো করে করলে সবাই আদর করে।আজ ওর গুণ রূপকে পেছনে ফেলে এগিয়ে এসেছে অনেকটা।স্কুলে নাটকে যখন রাণী সাজতে চেয়েছিলো তখন দিদিমণি শীর্ষাকে রাণী সাজিয়েছিলেন কারণ ও সুন্দরী। ওকে আর দিদিকে পাশাপাশি দেখে অনেকেই বলতো দিদির মত হয়নি। আজ দুষ্টু বুঝতে পারে ও ওর মত একটু অভিমানী,একলা থাকতে ভালোবাসে,ঝগড়ুটে কখনো রাগী তবে মনটা খোলা আকাশের মত।

     মণিমা ফোন করে," দুষ্টুরাণী,আমাদের তো অবাক করে দিয়েছে আবার, ফিরে এসে একদম ছক্কা মেরেছে। কি নিবি বল মণিমার কাছে?"

     " কি নেবো আবার? আমাকে গল্পের আর বিজ্ঞানের বই দিয়ো। আর খাওয়াবে একদিন।"

      দুষ্টু রাণুর খুব প্রিয় মনটা খুশি হয়ে যায় ওর। ওদিকে ফোন রাখতে চায় দুষ্টু।

  " দাঁড়া দাঁড়া তোর তো রেজাল্ট বেরোলো,আমাদের বাড়িতে আরেকজনের তো ভয় এখনো কাটেনি। নে কথা বল এবার।"

       দুষ্টু চুপ করে ফোনে কান রাখে,মিষ্টি বলে "কে রে জোজো নাকি?"

    ঘাড় নাড়ে দুষ্টু,ওদিক থেকে শুনতে পায়...." এই যে চ‍্যাম্পিয়ান, খুব একা একা ছানার জিলিপি খাচ্ছিস? ইশ্ আমি পেলাম না একটুও ভাগ। যেদিন আসবো সেদিন খাবো।তুই তো অনেক বড় হয়ে গেলি! একদম ইলেভেন।"

     দুষ্টু একটু লজ্জা পেয়ে হাসে,সত‍্যিই বড় ক্লাশ হয়ে গেলো..." তুই আর দিদি ভালো করলে বাবা আবার আনবে মিষ্টি।"

      " দেখি কি হয়? খুব চাপে আছিরে। তোর জন‍্য একবাক্স চকলেট নিয়ে যাবো।মিষ্টিকে একটু দে না কথা বলবো।"

    দুষ্টুর মনে হলো দিদি যেন একদম উৎসুক হয়ে আছে ফোনের জন‍্য। অনেকটা কথা বললো ওরা পড়াশোনা নিয়ে। ওরা তো আরো বড় তাই ওদের পড়াশোনার কথাও যেন বড় বড়।

              তবে এবার তো ওকেও অনেকটা বেশি পড়তে হবে।বাবা অবশ‍্য বলেছে সব ঠিক হয়ে যাবে।

      রাতে শুয়ে মিষ্টি বলে," তোর তো সব ভালো হলো,জানিনা আমার কি হবে? জোজোও তাই বলছিলো।"

     " সব ভালো হবে দিদি,সব তুই ভাবিসনা।"

" তুই কি করে জানলি?"

 "বাবা বলেছে তো ভালো ভাবলে ভালোই হয় সব।তাই ভালো ভাবতে হয়।"

          বাবা মা সবার জীবনের প্রথম শিক্ষক তবে শিক্ষক বাবা অনেক সময়ই জীবনের সেরা শিক্ষক হয় সে কথা আজ ডাইরিতে লিখলো দুষ্টু..." আমার জীবনের সেরা শিক্ষক তুমি বাবা। আমাকে ভুল রাস্তা থেকে ঠিক রাস্তায় এনেছে কখনো তোমার শাসন আবার কখনো আদর। আজকের আনন্দের অনেকটাই পেয়েছি তোমার শেখানো একটা কথা.. 'আনন্দকে খুঁজে নিতে হয়। কত ছোট জিনিসে লুকিয়ে আছে আনন্দ।' আমিও বেরোবো আনন্দ খুঁজতে বাবা।"

     কথাগুলো লিখেই মনে হয় কেমন যেন বড় বড় কথা বলে ফেললো আজ।সত‍্যিই কি আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়? ধরা দেয় হাতে?

*************

লিখতে লিখতে আনমনা হয়ে গিয়েছিলো দুষ্টু,জানলা দিয়ে আসা দোলন চাঁপা ফুলের মিষ্টি সুবাসে মনটা কেমন যেন ভরে উঠেছিলো এক ভালোলাগার অনুভূতিতে।

      সত‍্যিই আজকের দিনটা ভীষণ ভালো, জীবনে হয়ত এমন ভালো দিনই বেশি থাকে তবুও আমরা খারাপ দিনগুলো মনে করে ভালো দিনগুলো একপাশে করে বাঁচি আর দুঃখ পাই। প্রথম ধাপের পরীক্ষা ভালো ভাবে পাশ করার আনন্দ মনে মনে ভাবতে ভাবতেই চোখটা বুজে গিয়েছিল দুষ্টুর। 

রবীনের চোখেও আজ ঘুমেরা নিয়েছে ছুটি,অনু একটু বেশি ঘুম কাতুরে। একবার ঘুমোলে একদম আর সাড়া পাওয়া যায়না। অবশ‍্য সারাদিনের পরিশ্রম আর উৎকন্ঠার পর শান্ত মন ছুটেছে বিশ্রামের দিকে। রবীনের মনটা তখনো অস্থির, রাতের নীরবতা কাড়ে ঘুম চিন্তায়। উঠে বাইরে এসে দেখে মৃদু আলোর ছটা।পর্দা সরিয়ে ভেতরে আসে.." ইশ্ একমাথা ঝাঁঁকড়া চুলে মুখ ঢেকে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে দুষ্টু,সত‍্যিই মেয়েটা ভীষণ খামখেয়ালী। ওকি অঙ্ক করছে নাকি?"

            ডাকতে গিয়েও চোখ পড়ে যায় রবীনের

লেখাগুলোতে..বাবা মা জীবনের প্রথম শিক্ষক।তবে শিক্ষক বাবা বোধহয় জীবনের সেরা শিক্ষক।

           আলমারিতে রাখা আয়নায় নিজের শরীরটাকে দেখে রবীন,মাথার চুলে পাক ধরেছে মুখে চিন্তার ছাপ অনেকটাই ভারী হয়েছে চেহারা আগের থেকে। হয়ত বা জীবনের ভার বইতে বইতে ভারী হয়ে যাওয়া শরীরে আর মনে।

মনটাকে এক্সরে করার চেষ্টা করে মনোযোগ দিয়ে রবীন, সত‍্যিই কি সেরা শিক্ষক হতে পেরেছে সন্তানের কাছে? নিজেকে সেরা শিক্ষকের জায়গায় দাঁড় করাতে বোধহয় ঘরে বাইরে অনেক বেশি নজর রাখতে হয় নিজের ব‍্যক্তিত্বের ওপর যার মধ‍্যে মিশেল থাকবে বন্ধুত্ব,পথপ্রদর্শক এবং শিক্ষকের।

সত‍্যিই কি সে নিজে এমন শিক্ষক? সেই আদর্শ তার মধ‍্যে আছে?

      দুষ্টুর মাথায় হাত রাখে রবীন,এলোমেলো স্বপ্ন দেখে দুষ্টু আধো ঘুমে।বাবাকে ও প্রণাম করছে,বাবার চওড়া হাতের সবকটা আঙুল ওর মাথা ছুঁয়ে রেখেছে। বলছে ভয় পাসনা দুষ্টু,ভয় কিসের? ভয় আর মনখারাপ হলে মন বন্ধুকে খুঁজতে বলবি কারণটা,দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।

       হঠাৎই ঘুম ভেঙে চমকে ওঠে দুষ্টু, বাবা তো সত‍্যিই দাঁড়িয়ে একদম ওর কাছে।

      "বাবা তুমি ঘুমোওনি? কটা বাজে এখন?"

ঘুমিয়ে পড়তে চাইলাম কিন্তু এলোনা রে মা,তাই ভাবলাম দেখি আমার দুই মা কি করছে। আজকাল মেয়েদের মা বলে ডেকে যেন বড় তৃপ্তি পায় রবীন। মেয়েরাও মাঝে মাঝে শাসন করে আজকাল ছোটবেলায় হারানো মায়ের মত।

             দুষ্টু ডাইরির পাতাটা বন্ধ করে,বিছানায় এসে শোয়। " আয় তোর মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিই।আর জাগিসনা বেশি রাত।"

       বাবার কোলের কাছে সেই ছোট্টবেলার মত গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ে দুষ্টু। মেয়েদের দিকে তাকিয়ে রবীন মনের ইচ্ছেটা আবার বলে..ভালো হোক ওদের।

*****************

দুষ্টুর রেজাল্ট আউট হওয়ার সপ্তাহ দুয়েকের মধ‍্যেই মিষ্টির রেজাল্ট আউট হলো। রবীনের অনেক ছাত্রের মধ্যে দুই ছাত্র একজন আত্মীয় আরেকজন অনাত্মীয় আর আরেকজন আত্মজা তাই মনটা একটু বেশিই উৎকন্ঠিত।

            এই সময়টা ছাত্রছাত্রীদের সাথে পরীক্ষা দিয়ে ফেলে অভিভাবক আর স‍্যারেরাও।রবীনের অবস্থা তেমনি হলো,মনকে চাপমুক্ত রাখতে চাইলেও পারলোনা। মিষ্টির আগের দিন থেকেই মনটা কাঁপছে আর পেটের ভেতর গুড়গুড়। ইশ্ কি যে হবে এবার কে জানে!

            রবীন যতটা ভেবেছিলো অতটা না হলেও ভালোই ফল করলো মিষ্টি।সবসময়ই কি ভাবা আর হওয়া এক হয়?আসলে আজকাল অল্পেতে আর খুশি হওয়া যায় কই তাই নাইন্টি পার্সেন্ট ছুঁই ছুঁই করেও মিষ্টির মন খারাপ গেলোনা। অনুও বললো," ইশ্ আরেকটু যদি ভালো করে পড়তিস!"

         মায়ের কথা শুনে মনটা যেন কেমন হয়ে গেলো দুষ্টুর।ওর খুব জানতে ইচ্ছে করলো আচ্ছা মা কি একশোতে একশো পেয়েছে বরাবর? তাই মায়ের মুখে হাসি নেই। দিদির মন খারাপের মাঝে হঠাৎই হাসির ঝুড়ি আনতে চায় দুষ্টু..." দিদি তুই ভীষণ ভালো করেছিস। ইশ্ ইলেভেনের পড়া কি কঠিন রে! আমি তো ভয় পাচ্ছি রীতিমতো। তুই তো একদম জয় করে ফেলেছিস সব ভয়। দিদি তুই কলেজে যাবি এবার?"

      মিষ্টি চোখ ছলছল করে বলে," দীপ্ত নাইন্টি ফাইভ পার্সেন্ট পেয়েছে। ও তো বাবার কাছেই পড়তো তাহলে? আর আমি নব্বই ছুঁতে পারলামনা।"

           "আরো কত বাবার ছাত্র যে তোর থেকে কম পেয়েছে,তারা তো লাফাতে লাফাতে আসছে রেজাল্ট নিতে মহা আনন্দে। ইংরেজীতে ঝুলিভরা নম্বর পেয়েছে শুনলাম। কিছুক্ষণ বাদেই আসবে 'জোজো ইংরেজ' মিস্টি নিয়ে। মণিমা ফোন করেছিলো।ওদের বাড়িতে তো খুশির মেলা,বাবা বললো।"


      দুষ্টুর কথা শুনে এবার সত্যিই হেসে ফেলে মিষ্টি,সত‍্যিই জোজোদার রেজাল্ট শুনে সবাই খুব খুশি হয়েছে সবাই। বাবাকে অনেক ধন‍্যবাদ জানিয়েছে জেঠু আর জেম্মা। এই হয়ত হয়,কেউ অল্পেই খুশি আর কেউ চায় আরো বেশি। চাওয়ার কোন শেষ নেই,আর সেই চাওয়ার দলে হয়ত নিজেও আছে মিষ্টি।

       কিছুক্ষণ বাদেই বাইরে গাড়ির হর্ন শোনা যায় দুষ্টু দৌড়ে বাইরে আসে,কতদিন বাদে জোজোদা আসছে। জানেনা এরপর আবার কবে দেখা হবে?

     গাড়ি থামতেই জেম্মা আর জেঠু নামে। জোজোদাকে দেখতে পায়না..ওকে দেখেই জেম্মা বলে..." আরে দুষ্টু,খুব লম্বু হয়ে গেছিস তো! আমরা এসে গেছি,অনেকদিন বাদে দেখা হলো তাইনা?"

         অনেকগুলো বড় বাক্স ওদের হাতে। দুষ্টুর চোখদুটো এদিক ওদিক খোঁজে জোজোকে।

           খুশির বাক্স হাতে নিয়ে নামে ওরা,মিষ্টির মনের একটু দুঃখ দুঃখ ভাবটা উড়ে যায় মেঘ হয়ে নিরুদ্দেশে,দুষ্টু বলে " দিদি দেখেছিস ওরা কত খুশি হয়েছে জোজোদার রেজাল্টে।"

   আসলে শূন‍্য থেকে পূর্ণতার পথে এগোনোর আনন্দই বোধহয় আলাদা তাই বোধহয় ছেলের রেজাল্ট জেনে মধুমিতা এত খুশি হয়েছে।

          একসাথেই ওরা দুইবোনই জিজ্ঞেস করে জোজোর কথা।একসাথে দুজনে একই কথা বলাতে হেসে ওঠে দুজনেই। হাসে মধুমিতাও.." আমি জানি তো তোরা কাকে খুঁজছিস। ও একটু স্কুলে গেলো রে আরে মার্কশীট নেবে তারপর একটু বন্ধুদের সাথে গল্প করবে আর বলিসনা। দীপ্ত দীপ্ত করে তো অস্থির। সত‍্যিই রবীনদা একদম ঠিক ছেলের ঘরে ওকে রেখেছিলেন নাহলে যে কি হত!

       আমি একটু মিস্টিও দিয়ে পাঠালাম সবার জন‍্য। মধুমিতার একটু মিস্টি মানে যে কতটা হতে পারে তা জানে অনু।আর সেইজন‍্য একসময় ওদের বাড়াবাড়ি পছন্দ হতোনা। আজ অবশ‍্য সেই ভাবনা নেই অনুর মনে কারণ ওর বোনকে ওরা ভালোবাসে,বোন খুশি আছে।

          বাবা ফেরার আগেই জোজো আর দীপ্ত এলো অনেকদিন বাদে স্কুলের সাদা পোশাক পরেছে ওরা। দুজনের হাত দুজনের ঘাড়ে।জানলা দিয়ে ওদের দেখে দুষ্টু, গুটিগুটি পায়ে পেয়ারা গাছের নিচের ডালটা ধরে ওপরে ওঠে। ওরা গাছের তলায় আসা মাত্রই দুটো পেয়ারা ছুঁড়ে দেয়,ঠকঠক করে পড়ে দুজনের মাথায়। যদিও ছোট পেয়ারা তবুও চমকে উঠলো ওরা।

    " ওয়েলকাম জানালাম আয় আয়।"

   দুষ্টুর কান্ডকারখানা দেখে হেসে ফেললো ওরা অনেকদিন বাদে এতটা উচ্ছ্বল দেখলো দুষ্টুকে।

     " এই যে বাঁদরী এটা একটা ওয়েলকাম জানানো! যদিও মনে থেকে যাবে সারাজীবন এই ওয়েলকাম আমাদের। দে দে ছানার জিলিপির হাড়িটা। দুজনে সাবাড় করি। মিষ্টি কোথায় রে? শুনলাম ওর মন খারাপ কাম্মা বললো। আমি কিন্তু খুব খুশি হয়েছি ভাই।নিজের রেজাল্ট দেখে আর তার চেয়েও বেশি বন্ধুর রেজাল্ট জেনে।"

       দীপ্ত অবাক হয়ে যায় ছেলেটাকে দেখে,এ কেমন ছেলে কেজানে? দুষ্টু কি ওকে বলেছে যে ও দীপ্তকে ভালোবাসে। নাকি ওর সেদিনের ভুলে সবটা না জানাই রয়ে গেলো?

     ততক্ষণে গাছ থেকে নেমেছে দুষ্টু ওর একমাথা কোকড়া চুল কপালে ঘাড়ে লুটোপুটি খাচ্ছে।

      " তুই কিন্তু কিছু লম্বা হয়ে গেছিস দুষ্টু,আমার সমান তো হয়ে গেছিস প্রায়। তবে দীপ্তকে ছাড়াতে পারিসনি। মিষ্টি ভেতরে কি করছে?"

       "দিদি মিষ্টির হাড়ি নিয়ে বসে আছে,জেম্মা এনেছে না?"

       দীপ্ত দুষ্টুকে দেখে,মনটা উড়ে যায় কোন নিরুদ্দেশে, কত ছটফটে আকাশের উড়ন্ত পাখির মত মেয়েটা ভালোবাসা নিয়ে বসেছিলো মনে কিন্তু কে জানে কি হলো ওর ভালোবাসার। ডাকপিয়নের ভুলে চিঠিটা ভুল ঠিকানায় গিয়ে আবার ফেরত এলো।

      দুষ্টু বিজ্ঞের মত ওদের রেজাল্ট নিয়ে দেখে,মনটা ছুঁতে চায় ঐ নীল আকাশটা।দীপ্তদার রেজাল্টটা এক্সেলেন্ট,স্কুলে শুধু নয় জেলার মধ‍্যে সবার চেয়ে বেশি পেয়েছে দীপ্তদা। বাবা হয়ত চেয়েছিলো দিদিও এমন ফল করুক,ও কি পারবে ধরতে আকাশ ছোঁয়া সাফল‍্য। তবে বাবা খুব খুশি দীপ্তদাকে তো বাবা খুবই ভালোবাসে।

        ওদের ঘরে পা দেবার আগেই রবীন এসে পড়ে। দীপ্ত আর জোজো দুজনেই আবার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে। দীপ্ত ব‍্যাগ থেকে বড় একটা কৌটো বের কর রবীনের হাতে দেয়.." মা পাঠিয়েছে সবার জন‍্য আমাদের গাছের নারকেলের রসকরা।"

       দীপ্ত জানে স‍্যারের খুব পছন্দ ওর মায়ের হাতের রসকরা। একদিন স‍্যার বলেছিলেন," আমার মা বানাতো রে এমন,উঃ আমরা দুইভাই তো একদম খেয়ে শেষ করতাম। মাও নেই আর সেই স্বাদও পাইনা। এই নাড়ুর কাছে কোথায় লাগে দোকানের মিস্টি। এতে মাখানো আছে ভালোবাসার মিঠে ছোঁয়া,তাই এর স্বাদই আলাদা।"

         রবীন দুহাতে যত্ন করে নেয় ছাত্রর দেওয়া মিঠে ভালোবাসা, ওদের নিয়েই তো কেটেছে কতটা সময় জীবনের।

            মিষ্টি ততক্ষণে ঘর থেকে বাইরে এসেছে বাবাকে দীপ্তকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে দেখে ওর কেমন যেন রাগ হয়। এই ছেলেটা বাবার মন জয় করে কেমন আদর খাচ্ছে। কত ভালো রেজাল্ট করেছে! একবার হলেও বাবা বলবে ওর কথা।

        রবীন কেমন যেন মিষ্টির মন পড়তে পারে তাই ইশারায় কাছে ডেকে ওদের আদর করে বলে..." আজ আমার কত আনন্দের দিন।"

*******************

  মেডিক্যালের জন‍্য পরীক্ষা দিলেও মিষ্টির র‍্যাঙ্ক তেমন ভালো হলোনা।কলকাতার কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে ঠিক হলো মিষ্টি। জোজো জেভিয়ার্স এ ভর্তি হলো ইংরেজী অনার্স নিয়ে তবে সব প্রতিভার সব সময় সুযোগ হয়না তাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেয়েও বাড়ির অসুবিধার জন‍্য সরকারী কলেজে ফিজিক্স নিয়ে ভর্তি হলো দীপ্ত। যদিও রবীন বলেছিলো.." তুই পড়বি? আমি যদি কিছু খরচ দিই।"

       যদিও দুই মেয়ের পড়ার খরচ সামলে এই খরচটা চালানো রবীনের পক্ষে অনেকটা।তবুও ওর ইচ্ছেটা পরখ করে দেখতে চাইলো। একটু অপরাধবোধও হলো ছেলেটার পড়া হবেনা ইঞ্জিনিয়ারিং।

      দীপ্তর জবাব শুনে শুধু রবীন না বাড়ির সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল বিশেষতঃ অনু।ও যেন অনুর ভাষাতেই বললো.." স‍্যার অনেকদিন মাথায় ছাতা ধরে রেখেছিলেন।এবার অভ‍্যেস খারাপ হয়ে যাবে। রোদ বৃষ্টিতে এবার আমাকে ভিজতে দিন স‍্যার। দেখি যুদ্ধটা জিততে পারি কিনা?"

      বোকাসোকা লাজুক ছেলেটার মুখের আত্মবিশ্বাসী কথাগুলো শুনে অবাক হয়ে গেলো রবীন।হয়ত এই যুদ্ধ জেতার সাহস ওকে জিতিয়ে দেবে সব যুদ্ধ।

   


    



     

      

 

      

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...