কজোজোকে নিতে এসে মধুমিতার চোখেমুখে কৃতজ্ঞতা আর খুশির রামধনু রঙ দেখতে পায় রবীন। ওর মার্কশীটটায় চোখ দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। মাকে চুপ করে থাকতে দেখে জোজো বলে," সামনের পরীক্ষাতে আমি আরো ভালো করতে চেষ্টা করবো মা।"
ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে মধুমিতা। ভালো করার চেষ্টা করবো এই কথাটার মধ্যে কেমন যেন ভালোলাগা জড়িয়ে আছে। চেষ্টায় কি না হয়? চেষ্টা,ইচ্ছে আর সব পারবো এই তিনটে ছোট শব্দ দরকারে ইতিহাস লিখতে পারে।
এই কয়েকমাসে এখানকার বন্ধুরা,মাস্টারমশাইরা আর পেয়ারা গাছের তলায় মাঝে মাঝে এসে দুষ্টু মিষ্টির সাথে কথা বলে যাওয়া সবটাই অভ্যেস হয়ে গেছে জোজোর। ওরা গাড়িতে উঠলে দুষ্টু মিষ্টি হাত নাড়ে।
দুষ্টু বলে," তাড়াতাড়ি চলে আসিস,অঙ্ক করিস। আমরাও করবো বাবার কাছে।''
জোজোর রাগ হলেও কিছু বলতে পারেনা। দুটো ক্লাশ নিচুতে পড়ে অথচ সবসময় মাতব্বরি চালে কথা বলে। আর সুযোগ পেলেই অঙ্ক নিয়ে কথা বলে। ওর বলতে ইচ্ছে করলো," অনেকদিন বাদে বাড়ি যাচ্ছি এখন আমি পড়বোনা। কিন্তু স্যারকে দেখে বলতে পারলোনা।"
দেখলো স্যারই বলছেন ওকে," সবসময় পাকা কথা বলতে নেই। এখন তো টেন ঠিক অঙ্ক করে নেবে জোজো বাড়িতে।"
স্যার যে কেন এমন করে কথা বলেন! অদ্ভুত একটা দায়িত্ব দিয়ে দেন অথচ কোন শাসন ছাড়াই। কতদিন দেখেছে কোয়ার্টারে এসে দুষ্টু মিষ্টি সকালে অথবা সন্ধ্যেতে খেলছে,কখনো নাচছে বা গাইছে। জোজো জানে এটা পড়ার সময়।ও নিজেও এসেছে অঙ্ক বুঝতে। ওদের মা বকুনি দিলে স্যার বলেন,"ওরা বড় হয়েছে পড়তে
বসতে বলবেনা। খেলছে খেলুক ঠিক দেখবে নিজেদের কাজ সময়ে করে নেবে।"
অ্যানুয়ালের রেজাল্ট আউট হওয়ার পর এই সময় সবাই বাড়ি গেছে তাই বেশ কয়েকদিন বাড়িতে থাকবে জোজোও। এবার আর দুষ্টু মিষ্টিরও যাওয়া হবেনা দাদুর বাড়ি দেখতে দেখতে মিষ্টির টেন হয়ে গেলো দুষ্টুর এইট সুতরাং এবার একটু শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে রবীনকেই। লাইব্রেরী থেকে কিছু বই এনে দেখতে থাকে রবীন আসলে স্কুলের কাজের সাথে সাথে মাঝেমাঝে নিজেও ছাত্র হয়ে একটু পড়াশোনা করে এই সময়টা,যখন পড়ানোর ব্যস্ততা খুব থাকেনা।
****************
অনেকদিন বাদে ঠাম্মার বাড়ির সামনে গাড়িটা থামাতে অবাক হয় জোজো," মা এখন বাড়ি যাবেনা?"
" কেন এটা কি আমাদের বাড়ি না? পুজোর ছুটিতে তুই চলে আসার পর খুব ফাঁকা লাগছিলো তাই এখন আমি এখানে চলে এসেছি,দুজায়গাতেই ভাগাভাগি করে থাকি। একলা থাকাটা অনেক দিন জোজোর অভ্যেস হয়ে গিয়েছিলো তাই একটু অস্বস্তি হলেও ভালো লাগে কাম্মা কাকুর আদর। বুঝতে পারে মাও পাল্টাচ্ছে ওর সাথে,মায়ের মুখের সেই হাসিটা ফেরত এসেছে হয়ত ও পেরেছে কিছুটা মাকে খুশি রাখতে। কেমন যেন ভালো লাগে ওর মাকে খুশি দেখে।
কয়েকদিন বাদেই বাবা এলো,কিছু অশান্তি মনে দাগ কেটে যায় তার ক্ষত রয়ে যায় অনেকদিন। তবুও বাবা যখন বললো," অনেক কিছুই বোধহয় ভালোর জন্যই হয় তাই তো জোজো রবীনদার স্কুলে গেলো আর কোন ভাবনা নেই।"
ছোটবেলার বাড়িগুলো কেমন যেন গল্প হয়ে মানুষের মনে থেকে যায় জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অনেকদিন বাদে গল্প হয়ে যাওয়া সেই ছোটবেলার বাড়িতে ওরা সবাই। অনেক লোক,ছোট ছোট ঘর তবুও পাশাপাশি থাকা আর খুশি থাকা। হাল্কা লাগে রাণুরও দিদিকে ফোন করে," জামাইবাবু পারবে আমি জানতাম কেন যেন জামাইবাবুকে মাঝে মাঝে ম্যাজিসিয়ানের মত লাগে।"
রবীন হাসে," ম্যাজিসিয়ান তো অনেক ম্যাজিক করলো। তোমার ঝুলি থেকে হারিয়ে যাওয়া খুশিটা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি তো? আমি জানি একটা অপরাধবোধ ছিলো তোমার।"
" এখন অনেক ভালো আছি জামাইবাবু আমার ছেলেটাও খুব খুশি জেম্মাকে কাছে পাচ্ছে। দিদিও ভালো থাকে জয়কে নিয়ে। আমরা তো জানি জোজো ভালো আছে।"
রবীনের বোঝা বইতে অভ্যস্ত শক্ত ঘাড়টাতে একটু একটু করে দায়িত্ব বাড়ে বুঝতে পারে। তাই বলে," ভালোয় ভালোয় স্কুলের পরীক্ষাটা দিয়ে ছেলেটা পেরোলে আমি নিশ্চিন্ত।"
হাসে রাণু," একবার কাঁধে দায়িত্ব নিয়েছেন এত তাড়াতাড়ি নিশ্চিন্ত হতে দিচ্ছে কে শুনি?
*********************
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জোজোর উন্নতি হতে লাগলো আর তার সাথে জড়তা কাটতে লাগলো। তবে এখন গাছ লাগানোর কাজটা নিজের খুশিতেই করে। ঐ স্কুলে নিয়ম সবাইকে দশটা করে গাছ লাগাতে হয় আর কোন অন্যায় করলে আরো বেশি। সৃষ্টির আনন্দ মন ভরে নিতে ভালো লাগে জোজোরও।
রবীন লক্ষ্য করে দেখে অঙ্কে একটু পিছিয়ে যাচ্ছে জোজো যদিও দীপ্ত অনেকটা সাহায্য করে ওকে এগিয়ে যেতে তবুও বেশ পিছিয়ে পড়ছে।
আজকাল তাই সকালবেলা জোজোকে আসতে বলেছে রবীন। ওরা জাল দেওয়া বারান্দাতেই বসে পড়তে কখনো দীপ্তও আসে ওর সঙ্গে। ওরা আসাতে মিষ্টিরও খুব সুবিধা হয়েছে।
রবীন মাঝে মাঝেই ওদের অঙ্কখেলা খেলতে দিয়ে নিজের কাজ সেরে নেয়।
" বাবা আমিও ওদের সঙ্গে পড়তে বসবো। শুধু ওরাই অঙ্ক শিখবে? আমি শিখবোনা?"
রবীন বুঝতে পারে প্রতিযোগিতার মনোভাব দুষ্টুর মধ্যেও এসেছে হয়ত একটু হিংসেও।
তাই সবুজে চোখ রেখে টিয়াপাখির ডানা ঝাপটানো দেখতে দেখতে দুষ্টুও মিশে যায় ওদের দলে। আর ছোট হয়েও অনেক সময়ই বেশ বড় হয়ে সব ব্যাপারে মাথা ঘামায়।
" বাবা তুমি ওকে এখানে এনেছো কেন? সবসময় কথা বলে আমাদের পড়তে দেয়না।
ওকে এরপর ঘরে বসতে বলবে।"
দুষ্টু অভিযোগ করে," না বাবা ওরাই গল্প করে না পড়ে। যেদিনই দীপ্তদা আসেনা জোজোদা আর দিদি গল্প করে।"
" আমরা পড়ার গল্প করি। তুই বুঝবিনা।"
" পড়ার আবার গল্প হয় নাকি?"অবাক চোখে তাকায় দুষ্টু।
"নাহ্ এভাবে আর তো হয়না,পড়ার থেকে তো ঝগড়াই বেশি হয়ে যাচ্ছে এখানে।"
অনু এসে ধমকে দুষ্টুকে নিয়ে যায় ঘরের ভেতরে," তুই পেছনের বারান্দায় ঠিক আমার রান্নাঘরের সামনে বসবি পড়তে। এ কি দাদা দিদিদের মধ্যে বসে কথা বলা।"
রবীন কিছু বলার আগেই অনু দুষ্টুকে তুলে নিয়ে এলো ওখান থেকে। মায়ের কাছে এসে আবার বায়না করলো দুষ্টু," ওরা যে গল্প করছে ওখানে বসে সেটা কিছু হলোনা।দিদিকে তুমি আলাদা করলেনা আর আমাকে আলাদা করে দিলে,আমি তো কিছুই করিনি।"
অনুর ধমকে তখনকার মত চুপ করে গেলেও খুব রাগ হলো দুষ্টুর আর রাগ করে একটার পর একটা অঙ্ক করতে লাগলো। ওর ছোট লাল মলাট বাঁধানো খাতায় লিখলো ওর রাগের কথা। দুষ্টু সবাইকে আড়াল করে মনের কথা লিখে রাখে ওর খাতায়। মাঝে মাঝে মনে হয় মা সবসময় ওকেই বকে। দিদিকে কিছু বলেনা।
ছোট মেয়েকে বকুনি দিয়ে অনু ভেতরে নিয়ে আসাতে মন খারাপ হলো রবীনেরও। নিজে হেডমাস্টার হয়েও ছাত্রদের অঙ্কের খারাপ নম্বরের খাতাগুলোতে সঠিক সংখ্যা সাজাতে সাহায্য করে নিজের সাধ্যমত রবীন। মাঝে মাঝে সেইজন্য সারপ্রাইজ ভিজিট দিতে হয় হস্টেলে। আজ সত্যিই খারাপ লাগলো বেশ তো ওরা কিচিরমিচির খুনশুটি নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। ভালোই লাগছিলো রবীনের।বাচ্চারা ঝগড়া আর খুনশুটি করবেনা তা হয়? তিনটি শালিক ঝগড়া করে রান্নাঘরের চালের মত ওর একটুকরো বারান্দায় শালিকের কিচিরমিচির আর কুটুর কুটুর।
জোজোর একটু ফাঁকা লাগলো দুষ্টু চলে যাওয়াতে। জোজোর মুখে বোধহয় কথা বসিয়েছে দুষ্টুই একটা সময় শামুকের মত নিজের খোলে ঢুকে পড়েছিলো ও এখানে না এলে হয়ত বুঝতেই পারতোনা বোনে বোনে খুনশুটি কেমন হয়? হস্টেলে দুষ্টুমি,শাসনের সাথে সাথে মজাও কত হয়। মাসের একটা দিনের গ্ৰ্যান্ডফিস্টের হাটের কচিপাঁঠার মাংসের ঝোলের গন্ধ আর স্বাদ হারিয়ে দিতে পারে অনেক বড় রেস্টোরেন্টকে।
দুষ্টু মিষ্টিকে দেখলে মনে হয় ওর যদি এমন একটা ভাই বা বোন থাকতো! মিষ্টিকে একদিন বলতেই বললো," আমার সব জিনিসে হাত দেয়। আমার মত ওর সবকিছু চাই। কিছুতেই বোঝেনা আমি বড়।"
দুষ্টু কোথা থেকে উড়ে এসে মিষ্টির পাশে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দেয়," তুই বল জোজোদা কে বড়? আমি না ও?আমি ওর থেকে কতটা লম্বায় বড় দেখ একবার।"
জোজো হেসে ফেলে এবার মাথায় বড় কথায় লম্বা দুষ্টুকে বড় বলবে না মিষ্টিকে? যা মারকুটে মেয়ে হয়ত দেবে ছোটবেলার মত দুএক ঘা বসিয়ে। ওদের স্কুলের স্পোর্টসে লোহার বল ছুঁড়ে একদম এত বড় একটা কাপ নিয়ে এসেছে। ছোট বড় মাঝারি কাপের মেলা দেখেছিলো ওদের বাড়িতে সেদিন।
বাস্কেটবল ভালো খেললেও খেলার মাঠে দৌড়তে গেলেই আর পারেনা জোজো। দীপ্তই ফার্স্ট প্রাইজটা নিয়ে এলো আর ওর লেগ পুলিং করলো দুষ্টু.." তুইও দিদির মতই খেলাধুলা তে একদম জিরো শুধু হিরো হলে হবে?"
ব্যাস দুই বোনের ঝামেলা শুরু হয়ে যায়।
জোজো অবাক হয়ে যায় দেখে প্রত্যেক মানুষের মনে বোধহয় একটা আলমারির লকারের মত গোপন জায়গা আছে সেটা অনেক সময় অভিমানের হাতুড়ির আঘাতে খুলে যায়।
মিষ্টির সাথে ঝামেলার সময় দুষ্টু বলে ওঠে,"সবসময় তুই ভালো আর আমি খারাপ তাইতো। আমি এত কিছু পারি তবুও মা তোর কথাই সবাইকে বলে কেন? একদিন আমি অনেক কিছু পারবো আরো বেশি বেশি করে। তখন দেখিস তোরা।"
" ভীষণ হিংসুটি হয়েছিস কিন্তু তুই। পারলেই তো ভালো। সত্যিই তো তোর মত নাচতে দৌড়তে আমি পারিনা। সবাই কি সব পারে?"
হস্টেল থেকে মাঝে মাঝে বাড়ির গন্ধ আর একটু আপনজনের ছোঁয়া নিতে চলে এলেও ওদের ঝগড়ার মধ্যে আবার নিজের অস্থায়ী ঘরের দিকে পা বাড়ায় জোজো।
বলটাকে আকাশের দিকে ছুঁড়ে আবার ক্যাচ ধরতে ধরতে ভাবে কে ভালো কে জানে? দুষ্টু না মিষ্টি?
অনু এসে বকা লাগায় দুষ্টু বলতে থাকে কবিগুরুর কবিতা....' তোমার কাছে আমিই দুষ্টু ভালো যে আর সবাই। মিত্তিরদের কালু নিলু ভারী ঠান্ডা ক-ভাই।'
" কেন যে এই নামটা রাখা হয়েছিলো সত্যিই ভীষণ দুষ্টু তুই যেমন নাম আর তেমন কাজ।" অনু বলে মুখে হাসি মাখিয়ে।
মায়ের কথায় সাথে সাথে উত্তর দেয় দুষ্টু," তুমি থাকো তোমার মিষ্টিকে নিয়ে আমি হস্টেলে চলে যাবো জোজো দাদার মত।"
রবীন যে কখন এসেছে ওরা বুঝতেই পারেনি...বুঝতে পারে একটু আদর চায় মেয়েটা যেটা অনু বুঝতে পারেনা তাই বলে.." আমার দুষ্টু মিষ্টিকে ছেড়ে তো আমি থাকতেই পারবোনা।"
ঘন কালো কোকড়া চুলের বিণুনী দুলিয়ে বাবার কোল ঘেষে বসে দুষ্টু.." বাবা অনেক দিন গান গাওনা আজ একটা গান করোনা গো।"
চা বাগানে তখন সন্ধ্যের শেষ আলোর লুটোপুটি পাখিরা ফিরছে দলবেঁধে আনন্দে নিজেদের বাসায় সামনে রবীন গাইছে তুমি নির্মল করো মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে। দুষ্টু মিষ্টি জানে এই গানটা এই সময়ে হস্টেলেও হয়। অনুর শাঁখের আওয়াজ পাওয়া যায়। বাবার সাথে গলা মেলায় ওরা এক অদ্ভুত সুন্দর নীরবতায় সন্ধ্যে আসে রাতের সাথে ভাব করতে।
*******************
দিনের পিঠে দিন বসিয়ে কেটে যায় সময় একটু একটু করে হাসি,মজা ঝগড়া আর পড়াশোনায়। দেখতে দেখতে মাধ্যমিকের টেস্ট এসে গেলো হঠাৎই জোজো অসুস্থ হয়ে পড়াতে বাধ্য হয়ে ওকে হস্টেল থেকে কোয়ার্টারে আনতে হলো রবীনকে। ওর মা এসে কয়েকদিন থাকলেও বেশিদিন থাকা সম্ভব হলোনা, তাই আত্মীয়তা বজায় রাখতেই জোজোকে রাখলো নিজের কাছে ওরা। রবীন জানে অনুর ওপর চাপ বাড়লো নিজের দুই মেয়ে ছাড়াও জোজোর অনেকটা দায়িত্ব নেওয়া। তবুও অনু হাসিমুখে সব সামলে নিলো আত্মীয়তার মাধুর্য টুকু যাতে তিক্ততায় না ডুবে যায় তাই হয়ত একটু বেশি ভালো করেই সামলালো সবটা। মায়ের যাতে কষ্ট না হয় তারজন্য দুষ্টু মায়ের অ্যাসিসটেন্ট হয়ে গেলো কারণ ওর অ্যানুয়াল পরীক্ষা ততদিনে শেষ হয়ে গেছে।
" মা আমাকে দাও দুধটা আমি দিয়ে আসি দিদি আর জোজোদাকে। তোমাকে ছুটতে হবেনা।"
রবীন অবাক হয়ে যায় দেখে ছোটমেয়েকে একটু একটু করে কখন যে বড় হয়ে গেলো মেয়েটা। বই নিয়ে পড়াশোনা,সাইকেল চালিয়ে দস্যিপনা করে কালচিনি চষে বেড়ানোর পাশাপাশি মেয়েটার মনটা এত ভালো! এত কিছু পারে!
রাণু ফোন করাতে দুষ্টুই ধরে," ও মণিমা আমি আছি তো তোমরা এত ভেবোনা। আমি,মা,বাবা সবাই দেখছি জোজোদাকে।"
পাশ থেকে মিষ্টি বলে," শুধু তোরাই দেখছিস? আমি দেখছিনা? ওকে পড়াচ্ছে কে শুনি?"
ফোনের মাঝেই দুজনের ঝামেলা লাগে," তুই পড়াচ্ছিস মানে? তুই তাহলে কখন পড়ছিস?"
রাণু হাসতে থাকে ওদের কিচমিচ শুনে তবে রবীন এসে সমাধান করে..." হ্যাঁ পড়তে পড়তে পড়ানো যায়। আমিই বলেছি মিষ্টিকে জোরে জোরে পড়তে আর দুজনে গ্ৰুপ স্টাডি করতে তাছাড়া দীপ্তকেও বলেছি আসতে। তুই দেখিসনি?"
রাগ হয় দুষ্টুর মাধ্যমিকে দেওয়া কি খুব বড় ব্যাপার নাকি? মা সবসময় বলে ওদের পরীক্ষা,মাধ্যমিকে বসবে। ইশ্ একেবারে যেন মাথা কিনে নিয়েছে। ও ক্লাস নাইনে উঠবে তবুও ওকে ছোট বলে কেউ পাত্তা দেয়না।
আর কি সামনের বার ওরও তো টেন হবে,তখন আবারও মা বলবে ওদের উঁচু ক্লাশ।
তবে তখন তো দিদি আর ও থাকবে জোজোদা তো বাবা বলেছে মাধ্যমিকের পর আবার মায়ের কাছে চলে যাবে। শিলিগুড়িতে অনেক ভালো স্কুল আছে ওখানেই পড়বে।
কথাটা ভাবতেই মনের ভেতরটা একটু খারাপ করে জোজোদা তো বেশ ওদের বাড়ির কেউ হয়ে গেছে অবশ্য মাঝে মাঝে ওর সাথে ঝগড়াও হয় কিন্তু হেরে যায় জিততে পারেনা। ওরা একসঙ্গে মাঝে মাঝে পড়ে দীপ্তদাও থাকে।ওদের দেখে ওরও খুব ভালো মেয়ে হতে ইচ্ছে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় ভালো মেয়ে হলে খুব ভালো করলে মা দিদিকে বলবে দেখতো দুষ্টু কত ভালো, তুই বোনের মত হতে পারিসনা।
সত্যিই জোজোদা চলে যাবে এখান থেকে?
মিষ্টি এসে ওর চুল ধরে টান দেয়," আজকাল কি বকবক করিস রে? তোর একটা ছোট খাতা আছে ওতে কি লিখিস? আমাকে দেখতে হবে।"
" দিদি,ওটা আমার 'বন্ধু ডাইরি' তুই একদম ওটাতে হাত দিবিনা।"
মিষ্টি হাসে," আমি তো ওটাতে হাত দেবোই।"
দুষ্টু সেই দুষ্টুমি ভরা হাসিটা হেসে আর কিছু না বলে মনে মনে ভাবে খুঁজে পাবিনা তুই।
********************
বেশ তরতরিয়ে মাধ্যমিকের সিঁড়ি ভাঙলো মিষ্টি আর জোজো তবে রবীনের স্কুল থেকে প্রথম হলো দীপ্তই ওর শান্ত লড়াকু মুখটাতে হাসির ছোঁয়া।অদ্ভুত চুপচাপ ছেলেটা ওকে কখনো ভালো করে হাসতে আর কথাও বলতে দেখেনি রবীন।
রবীনের দুই আত্মজা,আত্মীয় আর প্রিয় ছাত্র এসে ওর পা ছুঁলো। দীপ্ত অঙ্কে একশো এনেছে। মিষ্টি পঁচানব্বই আর জোজো নব্বই তবে ইংরেজীতে বেশি। কিছুক্ষণ সবার নম্বর মিলিয়ে দেখলো দুষ্টু। মিষ্টি অভিযোগ করাতে অনু বকা লাগালো," সব ব্যাপারে পাকামি,এবার নিজের পড়া পড়।"
" তাইতো দেখছি মা ওদেরকে ডিঙ্গিয়ে যেতে কত বেশি পড়তে হবে আমাকে।"
রবীনের খারাপ লাগেনা মনে হয় পড়াশোনাতে রেষারেষি ভালো।তাতে এগিয়ে যাওয়া যায় এটা খারাপ কিছু নয়।
ছেলের এই রেজাল্ট অনেক বড় প্রাপ্তি মধুমিতার কাছে।কখন যে কাকে দরকার হয় কে বলতে পারে? তাই মানুষের সাথে সুসম্পর্ক রাখাটা বোধহয় খুব দরকার তা আজ খুব অনুভব করে ওরা।
রবীন বলে," ওর সব গুছিয়ে নেবেন,যা রেজাল্ট তাতে শিলিগুড়িতে ভর্তিতে অসুবিধা হবেনা। তোর গুরুগৃহের পাঠ এবার শেষ বাড়িতে ভালো করে থাকবি মন দিয়ে পড়বি।"
জোজোর মুখের আলোটা কেমন যেন নিভে যায়.." আমি আর এখানে পড়তে পারবোনা? মানে এখানে আর পড়া যাবেনা?"
" হ্যাঁ দাদা আমরাও তাই চাই জোজো আরো দুটো বছর এখানেই থেকে যাক।"
দুষ্টুু হৈ হৈ করে ওঠে," জোজোদা থাকছে তাহলে। যাক ভালো হলো,মাঝে মাঝেই জেঠিমণি আর মণিমা আসবে আমাদের বাড়িতে।"
খুশির ঝলক দেখা যায় মিষ্টির মুখে," বাবা আমাদের সেই চড়ুইভাতিটা এবারও হবে তো?"
মধুমিতা হাসে," একদম হবে,আর এবার আমিও থাকবো তোদের মণিমা আর জয়কে নিয়ে আসবো।"
কালজানি নদীর পাড়ে ঐ একটা দিনের জন্য ওরা অপেক্ষা করে সারাবছর।
ওদের কথার মাঝেই রবীন বলে," ওখানে ভালো কোচিং পেতো,ল্যাবও ভালো ছিলো। ও গেলে আপনারও ভালো লাগতো।দুবছর তো বাড়িছাড়া।"
" ওর এখানে মন বসে গেছে দাদা তাই এইসময় আর আমি টানাটানি করতে চাইনা। এখানে ওর লাগানো গাছ,আপনার পড়ানো আর বন্ধুরা সবই অনেকটা জুড়ে গেছে ওর সাথে। আমি চলে আসবো ওকে দেখতে ইচ্ছে হলেই।"
অনুর একটু অবাক লাগে মনে হলো রবীন আর দায়িত্ব নিতে চায়না অথবা ওদের ইচ্ছের জোর কতটা সেটা হয়ত দেখছে। তবে যখন থাকতে চাইছে এখানে থাক,আর তো দুটো বছর, ওখানে গিয়ে খারাপ হয়েও যেতে পারে।
রবীনের দায়িত্ব আরো বাড়লো,ছাড়তে চাইলেও ওকে ছাড়লোনা জোজো। শিক্ষকতাও এক গভীর মাতৃত্ব বা পিতৃত্ব যেখানে ছাত্রছাত্রীরা হয়ে ওঠে সন্তানসম। অনেক সময় সন্তানদের থেকেও দিনের বেশিরভাগ সময় কেটে যায় তাদের ভালো মন্দের চিন্তায়।
জোজোর মুখে হাসির ছোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে ঐ কাছের চাবাগানের সবুজে। রবীনের বারান্দাতে আবার তিন শালিকের কিচিরমিচির। ভেতরে তখন কথা বলছে রবীন,মধুমিতা আর অনু।
ক্লাশ শুরু হতে তো কয়েকদিন বাকি তাই রেজাল্টের খুশি ভাগ করে নিতে মায়ের সাথে বাড়ি যাবে জোজো।
" মিষ্টি,দুষ্টু যাবি নাকি? এখন তো গরমের ছুটি চলছে তোর মণিমা খুব খুশি হবে।"
***************
মিষ্টি মায়ের মুখের দিকে তাকায় ও জানে মা একটা সময় খুব একটা মণিমার বাড়িতে যেতে পছন্দ করতোনা বলতো," ওরা অনেক বড়লোক,এত খেলনা, এত চকলেট এইসব দিয়ে ছেলেটাকে ভুলিয়ে রাখে।"
যদিও আজ সেসব পুরোনো কথা,বদলেছে জেঠিমা আর জোজো দুজনেই তবুও সবেই রেজাল্ট বেরোলো এখন বইপত্র কেনা আছে স্কুলে ভর্তি হতে যাওয়া আছে অনেক কাজ। তাই বলে," পরে যাবো গো আমি তুমি মণিমাকে বোলো।"
হাসে অনু," আসলে ও একটু আমার ন্যাওটা দেখোনা সবসময় মা মা করে। তাছাড়া এখন সত্যিই ওর অনেক কিছু কিনতে হবে। দুষ্টু যাবি নাকি? থেকে আসবি কয়েকদিন? তোর তো এখন ছুটি আছে?"
দুষ্টুও কেন যেন আর এবার যেতে চায়না,রবীন বুঝতে পারে দুষ্টুও বড় হচ্ছে হয়ত বা বুঝতেও শিখেছে হুট করে ছোটবেলার মত সব জায়গায় দৌড়ে যাওয়াটা ঠিক নয়।
দুষ্টু হেসে বললো," মণিমাকে বোলো আমার ছুটির কাজ অনেক বাকি। তুমি যখন আবার আসবে জোজোদাকে নিয়ে তখন মণিমা আর জয়কে নিয়ে এসো সঙ্গে।"
আজকাল বড় হওয়ার সাথে সাথে বইপত্র বাড়ি আর নিজের প্রিয় বন্ধু ডাইরি বেশি ভালো লাগে দুষ্টুর। সবাই ঘুমিয়ে পড়লে নিজের মনের কত কথা সেখানে লেখে।
জোজো ওদের দিকে তাকিয়ে হাসে।মধুমিতা বলে," দুষ্টুও কেমন বড় হয়ে গেলো দেখেছিস?পড়াশোনাতে খুব মন দিয়েছে এখন। সেই দুবছর আগে এই দুষ্টুই পেয়ারা গাছে উঠে বসতো।"
" এখনো ওঠে জেঠিমা পেয়ারার সময়,সেসব ঠিক আছে তবে একটু গম্ভীর হয়েছে এখন।"
অনু আগে থেকেই কিছু হাতে করা জিনিস গুছিয়ে রেখেছিলো তা ওদের সাথে দিয়ে দেয় আর তার সঙ্গে রসগোল্লা আর ছানার জিলিপিও। জয়ের খুব প্রিয় এখানকার মিস্টি।
****************
রবীনের স্কুলের পরিবেশ একটু অন্যরকম হয়েছে বেশ কিছুদিন। অনেক ব্যাপারেই মত পার্থক্য দেখে শিক্ষকদের মধ্যে।কয়েকজন নতুন শিক্ষক এসেছেন তাদের সাথে অনেকের মতের মিল হয়না। উত্তীয় মানে জোজোর রেজাল্ট নিয়েও কথা হলো স্কুলে। রবীনের কানে এসেছে কোথাও একটা পক্ষপাতিত্বের দায়ও পড়েছে ওর ওপর।
আজকাল সবসময় মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেনা রবীন, মাঝেমধ্যেই খুব অস্থির হয়ে পড়ে। হয়ত সেইজন্য জোজোকে অন্য স্কুলে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছিলো পুরোটা না বলতে পেরে। বদলাচ্ছে দ্রুত সমাজ আর মানসিকতা সবার মধ্যে।জীবনে সংঘর্ষের সঙ্গে আগে শান্তি থাকলেও বর্তমানে যেন শান্তির খুব অভাব হয়েছে জীবনে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক আর সামাজিক অবক্ষয় সবে মিলেমিশে মন খারাপ আর দুঃশ্চিন্তার ভাজ রবীনের কপালেও। কিছুদিন আগেই দুটা ছেলে নিয়ম ভাঙলো,শাস্তি দিতেই অভিভাবক ছুটে এলো অশান্ত হলো স্কুল।
মাঝে মাঝেই তাই বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে সব কিছু থেকে চলে যেতে ইচ্ছে করে অনেক দূরে। কখনো রাতে ঘুম না এলে চুপ করে পেছনের বারান্দায় বসে শোনে রাতজাগা পাখির ডাক অথবা ময়ূরের আওয়াজ।
তারমধ্যেই হঠাৎই মাঝে মাঝে চোখ পড়েছে মিষ্টি ঘুমিয়ে পড়লেও দুষ্টু মাথার কাছে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে কিছু লিখছে বা অঙ্ক করছে। প্রথম দিকে দুএকদিন কাছে গেলেও আজকাল পর্দা সরিয়ে দেখে চলে যায় রবীন বুঝতে পারে দুষ্টু বড় হচ্ছে হয়ত এভাবেই দৌড়তে দৌড়তেই সামিল হবে জীবনের দৌড়েও।
******************
"তুমি কি আজকাল খুব চিন্তা করো নাকি গো? কেমন যেন লাগে তোমাকে?আমার খুব চিন্তা হয়।"অনু বলে।
" অত ভেবোনা,বয়েসও তো বাড়ছে আজকাল মাঝে মাঝে চিন্তা হয় স্কুলটা ঠিক চলবে তো?কাজও বাড়ছে নানা রকম ভাবে।তারপর মেয়েরাও বড় হচ্ছে,ওদের ঠিক করে মানুষ করতে পারবো তো?"
খুব চেনা শক্ত মনের মানুষটাকে আজ কেমন যেন আন্মনা লাগে অনুর। হয়ত এমন সময় সবারই জীবনে আসে তখন মনে হয় এতদিন যা করেছি ভালোবেসে তারাই একদিন বললো হেসে সবই গেছে বানের জলে ভেসে।
" সব ঠিক হবে,অত ভেবোনা ভগবান আছে তো।কোন অন্যায় তো করোনি। মেয়েরাও বড় হবে ঠিক। দুষ্টুও তো অনেক শান্ত হয়েছে। চলো আমরা বরং কোথাও থেকে ঘুরে আসি সারাক্ষণ এত স্কুল স্কুল করতে হবেনা। কি লাভ হচ্ছে ছাই?"
" আমার ছাত্ররা অনু ওরাই আমার লাভ।আসলে মনটা খুব জড়িয়ে গেছে এই স্কুল,বাগান,খেলার মাঠ সব কিছুর সাথেই। ছাড়বো ভাবলেও তো ছাড়ার উপায় নেই।"
রবীনের মনে হলো কথাটা অনু খারাপ বলেনি,সত্যিই তো অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়না ওদের কাজ করে করে। কেজো মন কেমন যেন অকেজো হয়ে গেছে হয়ত একটু বিশ্রাম দরকার। আগে তাও বছরে দুবার ওরা মামার বাড়ি যেতো চাবাগানের থেকে গিয়ে লালপলাশের মেলায় মন মেলাতো সবার সাথে অনেকদিন তাও হয়নি পড়ার কারাতে বন্দি হয়ে। আচ্ছা তাহলে একটু ভাবতে হবে কোথায় যাওয়া যায়।
" কোথায় যাবে কিছু ভেবেছো?"
অনু লাফিয়ে উঠলো শুনে," বেশিদিন তো থাকা যাবেনা। চলোনা পুরীতে যাই,অনেকদিন যাওয়া হয়না। একটু পুজোও দেওয়া যাবে। রাণুও বলছিলো যাবে,দেখি যদি বেবিও যায়।"
রবীন বুঝলো অনেক বড় বাহিনী সঙ্গে আছে। তবে শেষ পর্যন্ত বেবি গেলোনা শুধুমাত্র উত্তরের বাহিনীই রওনা দেবে সমুদ্রের পথে তবে রাণুর সঙ্গে জয় আর জোজো দুজনেই আছে। মধুমিতা এবার নিজে বাড়ি সামলানোর দায়িত্ব নিয়ে ওদের পাঠিয়ে দিলো ঘুরতে..." যা তোরা ঘুরে আয়,আমি এই দিকটা দেখবো।"
******************
রবীনের মনে হলো এখানেও সেই দায়িত্ব ওর ঘাড়েই পড়বে বিশ্রাম আর হবেনা,কেন যেন মনটা একটুকরো অবসরের খোঁজে তবে শুভ নিশ্চিন্ত করলো," দাদা আপনাকে কিছু ভাবতে হবেনা আমি সব ব্যবস্থা করবো।আমাদের ব্যাঙ্কের হলিডে হোম খুবই ভালো।আপনি শুধু সমুদ্র দেখবেন বসে বারান্দায়।
রবীনের মন উড়ে গেলো পুরীর সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে।ট্রেনে সবাই মিলে একসাথে হই হই করে ওঠা,রাণু অনেক খাবার এনেছে তাই নিয়ে বেশ মজাও করলো রবীন ওর সাথে। গল্পে আর খেলায় মাতলো চার ছেলেমেয়ে তার ফাঁকে দুষ্টু টুকরো কথা লিখলো ওর ডাইরিতে।
দুষ্টু মিষ্টি বাথরুমে যাবার সময় অনু সাথে যেতে চাওয়ায় দুষ্টু বললো," আমি তো আছি মা,তোমরা বসে গল্প করো কিছু চিন্তা নেই।"
কিন্তু কিছুক্ষণ বাদে একটা গন্ডগোলের শব্দে রবীন আর শুভ এগিয়ে গিয়ে বোঝে গন্ডগোলটা দুষ্টুই পাকিয়েছে। দুটো ছেলে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো ওরা মিষ্টিকে কিছু বলাতে দুষ্টু কলার ধরে থাপ্পড় দিয়েছে আর সেই নিয়ে চ্যাঁচামেচি। রবীন কেমন যেন অবাক হয়ে যায়,অনেকদিন আগে অনুকে বলেছিলো দিনকাল ভালোনা মেয়েরা বড় হচ্ছে একা কোথাও যেতেও ভয় লাগে আজকাল। কিন্তু দুষ্টুর এই রূপ এর আগে দেখেনি রবীন।দুষ্টু স্কুলে স্পোর্টস চ্যাম্পিয়ান,লম্বা,সাহসী,ডানপিটে কিন্তু এভাবে জবাব দিতে পারে ভাবেনি। ছেলেদুটো তেমন কিছু করতে পারেনি ওদের শাসিয়ে সামনের স্টেশনে নেমে গেলো।
মিষ্টির মুখটা লাল,আর দুষ্টুর মুখ থমথমে। অনু ভীষণ বকে দুষ্টুকে,অন্য প্যাসেঞ্জাররা বলে এরা লোকাল ছেলে ভালো নয় বড় বিপদ হতে পারতো।
দুষ্টু বলে," তাই বলে অন্যায় সহ্য করবো? আমরা অনেকে আছি ওরা দুজন মাত্র।"
মিষ্টি বললো," আমি বোনকে টানছি কিন্তু ও শুনলোনা।"
" এই জন্যই আমি যেতে চেয়েছিলাম সাথে।তাহলে এত কিছু হোত না।"
রবীনের মনের উৎকণ্ঠা সন্তানের কাছছ প্রকাশ না করেই বলে," ঠিকই আছে অনু,কতদিন আর কত জায়গায় তুমি ওদের পাহারা দেবে? সবসময় কি ওরা কালচিনিতে থাকবে? ভালোমন্দ বুঝে আর যুঝে ওরা চলুক।"
একটু কিছুক্ষণের জন্য সবাই চুপ করে গেলেও ট্রেনের খোলা জানলা দিয়ে আসা বাতাসের দোলা মনকে শান্ত করে।শুধু দুষ্টু দেখলো মাঝেমাঝেই যাতায়াতের পথে কিছু যাত্রী ওর দিকে নজর করে যাচ্ছে একজন তো জিজ্ঞেস করেই ফেললো," কোন ক্লাসে পড়ো?"
ক্লাস নাইন শুনে আশ্চর্য হয়ে বললো ভাবা যায়না।
দুষ্টুর আর জানতে ইচ্ছে হলোনা কি ভাবা যায়না।এমনিতেই মার কাছে বকুনি খেয়ে মুড অফ হয়ে আছে।
জোজো বললো," দুষ্টু মোটামুটি এই ট্রেনের হিরো সবাই একবার করে দেখে যাচ্ছে এসে।কে এই ডাকাত মেয়ে?"
মুখ ভ্যাঙায় দুষ্টু," আর তুই কি জিরো? দেখতে তো লম্বা মোটাসোটা কাজের বেলায় ঘোড়ার ডিমটা।"
" না বাবা, মা বারবার বলে দিয়েছে কোন দুষ্টুমি না করতে। তাই আমি কাম্মা যা বলবে তাই শুনবো।"
"এখন থেকে আমিই তোদের গার্জেন,আমার কথা শুনবি সবাই।" বলে দুষ্টু
অনু রাণুকে বলে," দেখেছিস,এই এত বকা খেলো একটুও লজ্জা নেই।কতবড় কান্ড করলো!"
" থাকনা দিদি আর বকাবকি করিসনা,বাচ্চা মেয়ে বেড়াতে এসেছে।জামাইবাবু রাগ করবে শেষে।"
ওদিক থেকে ওদের লুডো খেলা নিয়ে খুনশুটি আর ঝগড়াঝাটি শোনা যায় ট্রেনের চলার শব্দ ছাপিয়ে।
রবীনের মনে হলো শুরুতেই একটা ঝামেলা,শেষটা ভালো হলেই ভালো। ট্রেনের ওপরের সীটে শুয়ে চোখ রাখে বইয়ে।কতদিন বাদে এভাবে বই পড়ার সুযোগ পেয়েছে।
*******************
অনেকদিন বাদে কয়েকদিনের ছুটিতে রবীনের মনে সমুদ্রের ঢেউয়ের দোলা লাগে।সত্যিই শুভদের অফিসের হলিডে হোমটা খুবই সুন্দর একদম বারান্দায় বসে সমুদ্র দেখা যায়। রান্নাবান্নার ভার তুলে নিয়েছে আনন্দেই ওরা দুইবোন।রবীন অবশ্য আপত্তি করেছিলো," কি দরকার কয়েকদিনের জন্যই তো এসেছো বাইরে একটু আরাম করো। বাড়িতে তো রান্নাঘরেই কাটিয়ে দাও সারাবেলা।"
শালীই বেশি বায়না করে," থাকনা রান্নার ব্যবস্থাটা তারপর যখন পারবোনা হোটেলে খাওয়া যাবে। বাজারে কত মাছ! দেখলেই রাঁধতে ইচ্ছে করে।"
রবীন হেসেছে," যখন শুনবেনা আমি আর কি বলবো। খেটে যাও সারাদিন। আমি কিন্তু একটু বিশ্রাম নেবো,আর সমুদ্র দেখবো।"
আনন্দে আর খুশিতে ভাসে চার ছেলেমেয়ে অনু বারবারই বলে," যা করবি এখানেই ঘরেই কর বাইরে গেলে কিন্তু একা যাবিনা।"
তবুও বাইরে বেরোলেই চারজনের দায়িত্বে থাকে চার ছেলেমেয়ে।জোজোকে আগলায় শুভ,বৌদি বারবার বলে দিয়েছে দেখে রাখতে। জয় মায়ের হাত ধরে আর দুষ্টু বাবার দায়িত্বে মিষ্টি মায়ের। মা বাবা আর মণিমা মেসোর কান্ড দেখে হেসে দুষ্টু বলে," পুরীতে আগেও এসেছি মা,আমি সব চিনি।এখন তো আমরা তোমাদের গাইড করবো।তা নয় তোমরা আমাদের হাত ধরে নিয়ে চলেছো! ধুৎ ভালো লাগেনা।
অনুর বকুনিতে দুষ্টুর কথা একদম পাত্তা পেলোনা। সেদিন ওদের মন্দিরে পুজো দেবার দিন সকালেই স্নান করে সবাই এসেছে মন্দিরে। পুরীর মন্দিরের ভিড় বোধহয় সমুদ্রের মতই জনসমুদ্র এখানে জগন্নাথ দর্শনের জন্য তাই সাবধানী হয় ওরা।
সবাই হাত ধরে রয়েছে ছেলেমেয়েদের ভেতরে প্রচন্ড ভিড় জগন্নাথ দর্শনের জন্য।ঠেলাঠেলিতে পড়ে যাবার মত অবস্থা এক মুহূর্তের জন্য বিগ্ৰহ দর্শনে একটু অন্যমনস্ক হয়েছিলো রবীন হঠাৎই দেখে দুষ্টু নেই। এদিক ওদিক তাকায় কিন্তু দুষ্টুকে দেখতে পায়না অথচ দাঁড়িয়ে খুঁজতেও পারেনা কারণ প্রচন্ড ধাক্কা আসছে পেছন থেকে এভাবে দাঁড়িয়ে পড়লে হয়ত পায়ের চাপেই মারা যাবে। তাই ভীষণ উৎকন্ঠা নিয়ে বাইরে আসে।ততক্ষণে সবাই বাইরে এসে গেছে,এদিক ওদিক তাকায় রবীন।
" হ্যাঁ গো দুষ্টু কোথায়? তোমার সঙ্গেই তো ছিলো।কোথায় মেয়ে?"
রবীনের মুখ দিয়ে কথা সরেনা," তোমাদের সাথে আসেনি? আমার হাত ছেড়ে গেছিলো ভিড়ের চাপে।"
অনুর গলা ভিজে যায় এবার.." হারিয়ে গেলো মেয়েটা তাহলে? তুমি সামলাতে পারলেনা?"
সবার মুখগুলো ছোট হয়ে যায়,চোখ খুঁজতে থাকে এদিক ওদিক সবার শুভ বলে," আমি আসছি দাদা ভাববেননা।কোথায় আবার যাবে? দুষ্টু আমাদের অত বোকা নয়,হয়ত ভীড়ে সরে গেছে একটু।"
রাণু সামলাতে থাকে অনুকে। অনু তখন কাঁদছে রবীনের মনে ভীষণ অশান্তি ও খুঁজতে যায় মন্দির চত্ত্বরের চারধারে। ছেলেমেয়েদের মুখগুলো ছোট হয়ে গেছে।জোজো বলে," আমি একবার দেখে আসবো ঐ দিকটা,মানে রান্নাঘরের দিকটা?"
" না না বাবা,তুই কোথাও যাসনা তোর মা আমাকে বারবার বলে দিয়েছে তোকে দেখে রাখতে এখানেই বোস তোরা তিনজন।"
রবীনের হঠাৎই মনে পড়ে যায় কোথায় যেন পড়া একটা দেবদাসীর গল্প।পর মুহূর্তে মনকে বোঝায় ও সব গল্প কথা এমন হতে পারেনা কিছুতেই।তবে নিজেকে খুব অপরাধী লাগে এত ছাত্রছাত্রীদের ও সামলায় আজ নিজের মেয়েকে সামলাতে পারলোনা?
শুভ ততক্ষণে আরেক দিকে এগিয়ে গেছে,পা দুটো চলতে চায়না রবীনের এদিক ওদিক তাকায়,কত লোক বসে আছে, কেউ বা দাঁড়িয়ে ভিড় করে।আবার অনেকে লাইন দিয়েছে গেটের সামনে কিন্তু দুষ্টু কোথায়,মোটামুটি এইদিকটা পুরো দেখে ফেলেছে।এবার তো ফিরতে হবে,কিন্তু কি বলবে অনুকে? জগন্নাথ দর্শনে মানুষের মনের সব অন্ধকার কেটে যায় এক অদ্ভুত পরিতৃপ্তি হয় মনে কিন্তু ওর এত অশান্তি হচ্ছে কেন?
হঠাৎই পেছন থেকে ডাক শোনে," দাদা দাঁড়ান দুষ্টুকে পেয়েছি বসিয়ে রেখে এসেছি ওদের এক জায়গায়। আপনি চলুন তাড়াতাড়ি, দিদিই আমাকে পাঠালেন। আর চিন্তা নেই।"
আনন্দে রবীন মন্দিরের দিকে হাত তুলে এক অদৃশ্য শক্তিকে প্রণাম জানায় মন ছুটে যায় পায়ের আগেই মেয়ের কাছে পৌঁছতে। এক মুহূর্ত আগেও মনে হয়েছিলো একদম নিঃস্ব হয়ে গেছে ও। কোন জিনিস হারিয়ে গেলে বোধহয় তার মূল্য সবচেয়ে বেশি বোঝা যায়। এই দুষ্টুর দুষ্টুমি নিয়ে কত বকাঝকা খায় বাড়িতে,অনু সারাক্ষণ বকে.." যা কদিন থেকে আয় মণিমার কাছে দুইবোনে অশান্তি আর ভালো লাগেনা।"
সেই অনুর দুচোখ জলে ভর্তি,কাঁদছিলো মিষ্টি আর রাণুও।
নাহ্ মনে মনে ভাবতে ভাবতে আসে দুষ্টুকে সত্যি বকতে হবে কেন ও হাত ছেড়েছে? তবে মেয়েকে দেখে আর কিছু মনে থাকেনা রবীনের বুঝতে পারে ততক্ষণে অনেকটা বকুনি খেয়েছে।
বাবাকে দেখেই দুষ্টু ছুটে আসে," আমি জানি আমার জন্য অনেক চিন্তা করেছো তুমি,বাবা আমি কি করবো বলো? এই ঠাকুমার জন্যই তো এমন হলো। ঠাকুমা কিছুতেই আমাকে ছাড়বেনা।"
রবীন দূর থেকে বুঝতেই পারেনি কাছে এসে দেখে এক রুগ্ন বৃদ্ধা মহিলা।তার চোখে তখনো জল।
শুভকে দেখেই জিজ্ঞেস করে," বাবা আমার ছেলেদের পেয়েছো? আমি বাড়ি যাবো আমাকে সেখানে একটু পৌঁছে দাও।"
প্রথমে কিছু বুঝতে পারেনা রবীন। দুষ্টু বলে," ভিড়ের চাপে আমার হাতটা ছেড়ে যায় বাবা।তোমাকে খুঁজতে এগিয়ে যাই দেখতে পাইনা,এই ঠাকুমা তখন আমার গায়ে এসে পড়ে।আরেকটু হলেই ভিড়ের চাপে হয়ত মাটিতেই পড়ে যেতো। আমি শক্ত করে ধরি উনি আমাকে জড়িয়ে রাখেন। ছেলেদের নাম ধরে ডাকতে থাকেন কোন রকমে বাইরে আসি কিন্তু পাইনা কাউকে আর আমাকে ছাড়েনা ঠাকুমা একটা জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখেন বলেন এখানেই প্রথমে এসে বসেছিলেন।"
অনু ধমকে ওঠে," তুই ওখানে দাঁড়িয়ে রইলি আমাদের কথা ভাবলিনা একবার? উঃ আমার এখনো সারা শরীর কাঁপছে।"
রবীন হাতের ইশারায় চুপ করতে বলে অনুকে ভদ্রমহিলার কান্নায় মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায় বলছেন," জগন্নাথ দর্শনে যাবো অনেকদিনের শখ ছিলো কিন্তু এমন হবে ভাবিনি ।এখন আমি কোথায় যাবো?"
রবীন কেমন যেন কঠোর হয়ে গেলো অদ্ভুতভাবে অনুভব করলো এতক্ষণ যে কষ্ট ও ভোগ করেছে তা ছিলো অপত্যস্নেহ আর ওনার সন্তানেরা হয়ত মাতৃদায়কে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে গেছে এই মন্দিরের জনারণ্যে। ভেবেছে পুরীতে বা বৃন্দাবনে থাকা অসংখ্য বিধবার মত কোথাও একটা জায়গা হয়ে যাবে তার। হায়রে সংসার যে মা ভালোমন্দ নিজে না খেয়ে সন্তানের মুখে তুলে দিয়ে পরিতৃপ্তির ঢেকুর তোলে তার বার্ধক্য একসময় অভিশাপ হয় সন্তানের কাছে।
রবীন ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছে,মনটা বড় ভারাক্রান্ত হয়ে যায়।ততক্ষণে বাচ্চাগুলোর মুখ শুকিয়ে গেছে অনেকক্ষণ ওদের খাওয়া হয়নি।তাই শুভ আর রবীন অনেক বুঝিয়ে বাইরে নিয়ে আসে ওনাকে।তবে উনি কিছুতেই দুষ্টুকে ছাড়তে চাননা। পুলিশের সাথে কথা বলে ওরা,বাইরে এসে একটু কিছু খাওয়াতে গেলে উনি কিছুতেই খেতে চাননা।
" আচ্ছা আপনারা কোথায় উঠেছিলেন বলতে পারবেন।"
" আমার নাম জানা নেই বাবা তবে মঠে। আমাকে একটু পৌঁছে দাও বাবা।"
ভীষণ বিপদে পড়ে রবীন..কত মঠই তো আছে।কোথায় নিয়ে ঘুরবে ওনাকে। অনুরও খুব রাগ হয় মেয়ের ওপর যত ঝামেলা কি ও সৃষ্টি করবে?
শেষে রবীন ভাবে ওনাকে নিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়াই ভালো হবে।পুলিশ তেমনি বলছে।
রাণু বলে," ইশ্ সত্যিই আমার খুব মন খারাপ করছে।কাল সবেই এলাম আজ এইরকম একটা দিন! জানিনা কি হবে?
ওদেরকে প্রথমে হলিডে হোমে রেখে উনাকে নিয়ে থানায় যাওয়ার জন্য রিক্সার খোঁজে রাস্তার পাশে দাঁড়ায় রবীন। হঠাৎই মা বলে একটা ডাক শুনে চমকে যায় ওরা।
"এই তো এই তো আমার ছেলে,কোথায় ছিলি বাবা? এই দিদিভাই না থাকলে আজ হয়ত আমি মরেই যেতাম ভিড়ের চাপে।"
আশ্চর্য হয়ে যায় দেখে রবীন ছেলের মুখে চোখে অনুতাপ মাখা.." মাথা নিচু করে বলে মা চলো,অনেকক্ষণ ধরে তোমাকে খুঁজছি এদিক ওদিক। ভাগ্যিস পেলাম, না হলে যে তোমার নাতনীকে কি বলতাম?"
রবীনের আর ওর পরিবারের খুব হাল্কা লাগে, ভিড় থেকে সরে দাঁড়ায় একপাশে ওরা। দুষ্টুর মাথায় হাত রাখেন উনি," অনেক বড় হবি তুই দিদি,ভালো মানুষ হবি।"
রবীন একটু অসন্তুষ্ট হয় ভদ্রলোকের ওপর বেশ কড়া করে জেরা করে," আমার তো মনে হয় আপনি ইচ্ছে করেই উনাকে ছেড়ে গেছেন।"
মাথা নিচু করেন উনি," সেই শাস্তি আমাকে জগন্নাথদেব হাতে হাতে দিয়েছেন। এক্ষুনি বাড়ি থেকে ফোন পেয়েছি মেয়ে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে হঠাৎই।"
সত্যিই কি ভগবান আছেন?হয়ত আছেন তাইতো প্রতিদিন কোন এক প্রত্যাশা পূরণের আশায় লাখে লাখে মানুষ এখানে আসে। তবে স্বয়ং জগন্নাথদেব আজ অনেকগুলো মানুষকে শান্তি দিলেন।
অন্যের সন্তানের কাছে তার মাকে ফিরিয়ে দিয়ে যেন এক অশান্ত ঝড়ের শেষে নিজের সন্তানদের নিয়ে শান্ত মনে পা বাড়ায় রবীনরা আস্তানার দিকে। অনেক কিছুই হতে পারতো হয়তো তবে অদ্ভুতভাবে সবটাই অল্পের ওপর দিয়ে গেলো।
মন্দিরের ধ্বজার দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করে রাণু আর অনু,কয়েকঘন্টার ঝড়ে সবাই যেন কেমন চুপ করে গেছে। চারটে ছেলেমেয়ে হাত ধরাধরি করে আছে পরম অবলম্বনে।
রবীন বলে ওঠে," চলো ভাই শুভ এবার সবাই কেমন যেন ঝিমিয়ে গেছে,কি রে তোরা সবাই চুপচাপ কেন? মানুষ যা ভাবে সবসময় কি তা হয়? তবে আজ ছানাপোড়া আর গজা কিন্তু খাওয়া হবেই। চলো চলো সবাই,অটো এসে গেছে উঠে পড়ি।"
********************
ছানাপোড়া আর খাজা গজা খেয়েও মজা মজা ভাব খুব একটা হলোনা। দুষ্টুর সত্যিই মনে হলো ওকে ঘিরে যত সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। কোনটাই ও ইচ্ছে করে করছেনা অথচ হয়ে যাচ্ছে তবুও ভালো, ঠাম্মাকে ছেলের হাতে তুলে দেওয়া গেছে নাহলে যে কি হত কে জানে? বেড়ানোটাই হয়ত পন্ড হত আর মা পিটিয়ে আর বকিয়ে মারতো ওকে। বাবার আর মেসোর কত যে ছুটোছুটি হত।
জয় কুড়মুড় করে খাজা খাচ্ছে,রবীন বলে,"এই নৃসিংহ খাজা ভান্ডারের খাজাটা কিন্তু ভীষণ ভালো। তাইনা রে জয়? আরে তোরা খা,অনু এবার একটু হাসো মাসিমাকেও ছেলের কাছে দিতে পেরেছি।আমাদের দুষ্টুও ফিরে এসেছে আবার কি? পরীক্ষা তো আসবেই জীবনে একটার পর একটা ভয় না পেয়ে পাশ করে গেলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।"
সেদিন ফিরে এসে অনু নিজেকে সামলাতে পারলোনা যথারীতি বড় মেয়ের সাথে ছোটমেয়েকে তুলনা করলো.." তোর জামাইবাবুর খারাপ লাগবে,গাল ফোলাবে দুষ্টুও আজকাল তো তর্ক করে রীতিমতো। কিন্তু দেখ ওকে নিয়ে যত সমস্যা। কই মিষ্টি তো হারিয়ে গেলোনা? ট্রেনেও তাই মারামারি করলো ও। যদি ওরা কিছু করতো তাহলে?"
" মা দিদি এত সুন্দর দেখতে তাই আমাকে ট্রেনে মারামারি করতে হলো।কই আমাকে তো কেউ কিছু বলেনা। সবসময় তুমি দিদির কথা বলো কেন?"
" দেখেছিস তো রাণু? কেমন মুখে মুখে তর্ক করছে?"
" দিদি এবার চুপ কর,জামাইবাবু শুনলে বকবে সত্যিই।আর কিছুনা এবার শুধু আনন্দ করবো আর খাবো।দরকার হলে রান্নাও বন্ধ।"
দুষ্টু মণিমার কোলের কাছে শুয়ে পড়ে রাণু ওর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে.." মা কত কাঁদছিলো, মাকে এমন বলতে নেই।কটা মেয়ে আছে আমাদের দুষ্টুর মত?"
জোজো আর মিষ্টি বলে," ঠিক বলেছো একদম সুপার হিরো দুষ্টু।"
"আজ একটা গান গাইবি? আচ্ছা থাক রাতে আমরা সমুদ্রের ধার থেকে এসে একটা ছোট্ট গানের জলসা বসাবো।"
" হ্যাঁ কাম্মা দুষ্টু ভীষণ ভালো গান গায় আর কবিতা বলে। আমি শুনেছি।"
" ও বোন সব করে, আমি?"
জোজো দুষ্টুমির হাসি হেসে বলে," কালচিনিতে সবাই জানে মিষ্টি খুব ভালো নাচে। এ আবার নতুন কি?"
ঘরের গুমোট হাওয়াটাতে এক ঝলক সমুদ্রের ঝোড়ো বাতাস ঢুকে যায় সবাই মেতে ওঠে খুনশুটি আর আনন্দে।
" দেখেছো মণিমা,জোজো কেমন পাকা হয়েছে? কথা দেখো?" মিষ্টি বলে।
" কেন রে আমি বড় হইনি নাকি? ইলেভেন ক্লাশে উঠেছি।"
" দাঁড়া বাবাকে বলে তোর ল্যাজ কাটবো এবার। ভালো করে পড় এবার।"
মিষ্টি আর জোজোর ঝগড়া মণিমার কোলে শুয়ে শোনে দুষ্টু। জোজোদা বেশ কথা শিখেছে দেখছে এখন। বাপরে দিদির সঙ্গে ঝগড়া করছে কেমন!
বিকেলটা সমুদ্রের পাড়ে বসে সময় কেটে গেলো,রবীন আনমনা হয়ে যায় বসে থাকতে থাকতে।পাহাড় আর সমুদ্রের সামনে এলে বোধহয় এক অসামান্য বিস্ময় হয় আর নিজেকে ক্ষুদ্র লাগে।মন হারিয়ে গেলো একটার পর একটা ঢেউ গুনতে গুনতে মনে পড়লো খুব সামান্য রোজগার তখন তাই দিয়েই অনুকে নিয়ে বিয়ের পর পুরী এসেছিলো তারপর আর দুবার এসেছে কিন্তু সেই প্রথম দুজনে দুজনের হাতে হাত রেখে ভোরের সমুদ্রের ঢেউয়ে পা ভিজিয়ে হাঁটতে হাঁটতে প্রথম নতুন জীবনে পা রাখার শব্দ শোনার অনুভূতি বোধহয় সত্যিই অনন্য।
আজও চোখ বুজলে অনুর সেই সিঁদুর পরা লাজুক মুখটা দেখতে পায় রবীন। প্রথম প্রেম,প্রথম দুজনের একসাথে সমুদ্র দেখার স্মৃতি বড়ই অমলিন। কতগুলো বছর কেটে গেলো দেখতে দেখতে। জীবন এখনো চলছে নিজের গতিতে তবে টাইপরাইটার টুংটাং শব্দে টাইপ করে যাচ্ছে ওদের সাথে সাথে সন্তানদের বড় হওয়ার গল্পও। বড় হচ্ছে ওরা ওদের জীবনেও হয়ত একসময় প্রেম আসবে ওরাও ভালো মন্দ বুঝতে শিখে বাবার হাত না ধরেই হাঁটবে।
বাচ্চারা পেছনে বসে গল্পে ব্যস্ত ওদের সঙ্গী রাণু।শুভ ক্যাশিয়ার,যার যা লাগবে জোগান দিয়ে যাচ্ছে।সমুদ্রের পারে বার বার হাতের কাছে চা এসে যাচ্ছে সাথে ঝালমুড়ি বাচ্চারা গরম রসগোল্লা,ছানার চমচম খাচ্ছে।
অনু এসে রবীনের পাশে বালিতে বসে," কতক্ষণ চুপ করে বসে আছো? কি ভাবো আজকাল এত?"
" চুপ করে বসে ঢেউয়ের ওঠানামা দেখছি ভালো লাগছে। আমাদের প্রথম পুরীতে আসার কথা তোমার মনে পড়ে অনু? একদম কিচ্ছু জানতে না তখন। আর সেই অনু এখন একেবারে জগৎতারিণী গোছানো ঘরণী।"
হাসে অনু।
রবীন বলে, "কোনারকে যাবে শুধু তুমি আর আমি?"
" ইশ্!তোমার কি হলো শুনি? সবাই আছে,শুধু তুমি আর আমি? রাণু বলছিলো কোনারকে যাবার কথা। ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে এখন ওদের নিয়ে আবার কি দরকার?"
" তুমি এখনো সেই লালপলাশের দেশের বোকা মেয়েই রয়ে গেলে সবটাই তো জীবন অনু।জীবনকে তো খুঁজবে জানবে ওরাও।তাই চিন্তাগুলোকে সবসময় পাহারা দিতে যেয়োনা সৃষ্টিকে দেখতে দাও। নিজেরাই নিজেদের চোখ দিয়ে ভালোমন্দ শিল্প বিজ্ঞান সবটাই শিখুক।এই পৃথিবীর মোড়কে মোড়কে লেখা আছে ইতিহাস যত দেখবে ততই জানবে।"
বরের আবার হেডমাস্টার হেডমাস্টার কথায় অনু ছন্দপতন করে।
"এই তো বেশ অন্য কথা বলছিলে,তোমার সব কথা আমি বুঝিনা বাপু। তাহলে যাবে কোনারক,রাণুকে বলি। ওরা তো পা বাড়িয়েই আছে।"
" যাবো,কিন্তু পড়ন্ত বেলায় দেখবো কোনারককে।"
রবীন গুনগুন করতে থাকে সাগরসঙ্গমে সাঁতার কেটেছি কত..."
রবীনের ঘাড়ে মাথা রাখে অনু।সংসারের পাঁচমিশালি ঝুটঝামেলায় প্রেমটা যে কখন গোপন হতে হতে অদৃশ্যই হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। আজ দুহাত বাড়িয়ে খুঁজতে চাওয়া স্মৃতির পুরোনো প্রেমমাখা খাম।
*****************
রাতে বেশ জমজমাট আসর বসলো ঘরে ততক্ষণে ভাব হয়ে গেছে দুষ্টুর পাশের ঘরে থাকা
অভি আর অপুর সাথে। অভি জয়ের বয়েসী আর অপু দুষ্টুর বয়েসী সুতরাং চারের জায়গায় ছয়।
রবীনের ভালো লাগলো ওদের মিলমিশ দেখে অন্ততঃ মিশতে পারে মেয়ে দুটো। তাই প্রথমে মিষ্টির নাচ তারপর দুষ্টু আর জোজোর মিলিত কর্ণকুন্তী সংবাদের কিছুটা পাঠ।
রবীন অবাক হয়ে গেলো, দুষ্টু আবৃত্তি করে এটা ঠিক কিন্তু জোজোও তো সুন্দর বললো! এখনো মনে রেখেছে!
" হ্যাঁ রে তোর মনে আছে,সেই কবে করেছিলি রবীন্দ্রজয়ন্তীতে,তখন তো রাজিই হচ্ছিলি না।"
জোজো হাসে আর মনে মনে ভাবে যা প্র্যাকটিস করেছিলো একদম মনে গেঁথে গেছে। রবীনের মনে হলো অপসংস্কৃতি চারিদিকে, জোজো নিজেও খারাপ হয়েছিলো হয়ত বা সঙ্গে বা বদভ্যাসে তবুও রবীনের শিক্ষা আর শাসন কিছুটা হলেও নিয়েছে ছেলেটা।
জয়ও বীরপুরুষ কবিতার কিছুটা বললো,রাণুর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে গেলো।
ঠিক হলো পরদিন ওরা পড়ন্তবেলায় কোনারকে যাবে।
খাওয়ার পর সমুদ্রের আওয়াজ শুনতে শুনতে গল্পে বসে ওরা রাজনীতি, অর্থনীতি সবই এসে পড়ে সেই আলোচনাতে। পাশের ঘরের অভির বাবাও ব্যাঙ্ককর্মী তাই সবাই মিলে চলে অনেক কথাবার্তা। রবীনের খুব মনে পড়ে চাবাগানের শ্রমিকদের কথা,কত সময়ই তো বঞ্চনার শিকার হচ্ছে ওরাও। কত মেধাবী ছাত্র ভালো কোচিংয়ের অভাবে অনেক সময় পিছিয়ে যাচ্ছে।খুব মনে হয় দীপ্তর কথা,অনুকে গোপন করে অনেক সময়ই এই ছাত্রদের সাহায্য করতে হাত বাড়ায় রবীন। দীপ্তর বইপত্র কেনার টাকা ওর হাতে দেওয়ার সময় দেখেছিলো ছেলেটার চোখটা কেমন যেন ভেজা,হাতদুটো খুব রুক্ষ জমিতে কাজ করে করে।
সংগ্ৰাম,স্বপ্ন,স্বাধীনতা আর অর্থনীতি সব যেন মিলেমিশে যায় ওদের আলোচনার মধ্যে।
দলবেঁধে ওরা বেরোয় তবে অনু আর দুষ্টুকে হাতছাড়া করেনা।এবার দুষ্টু অনুর দায়িত্বে আর মিষ্টি রবীনের দায়িত্বে।হঠাৎই শুনতে পায় দুষ্টুকে কে যেন ডাকছে ও দিদি অনু এড়িয়ে যেতে চাইলে দুষ্টু বলে ঐ তো সেই ঠাকুমা।অনু বকা দেয়," চল বাবা এগিয়ে গেছে।"
শেষ পর্যন্ত দাঁড়াতেই হয় রবীন চাক্ষুষ করে দুই অপদার্থ সন্তানকে যারা মাকে ধাপ্পা দিয়ে তীর্থস্থানে ফেলে রেখে দিতে এসেছিলো কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়েছে।তবে সব সময় কি বাতাস আর ধর্ম কথা বলে? তবে পৃথিবীতে এত অন্যায় আর অধর্ম হতো না সেই সত্য যুগ থেকেই।
বিনীত গলায় ছেলে বলে," মায়ের ইচ্ছা গুন্ডিচা বাড়ি,হরিদাস মঠ,গম্ভীরা এইসব দেখার তাই নিয়ে বেরিয়েছি।"
রবীন গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করে," আপনার মেয়ে এখন কেমন আছে?"
" কাল মাথা ফেটে অনেক রক্ত বেরিয়েছে এখন একটু ভালো। আজ রাতেই চলে যাবো আমরা।"
আর বেশি কথা বলতে ইচ্ছে হয়না রবীনের ওদের সাথে মনে হয় ভদ্রবেশী খুনি এরা। বয়স্ক মাসীমা তখন দুষ্টুর চিবুকে হাত দিয়ে আদর করছেন। পা বাড়ায় ওরা।
********************
পুরীর আসেপাশে আছে অনেক না বলা ইতিহাস আর দেখার জায়গা। নীলমাধবের কথা শুনলো রবীন,এই নীলমাধবই আসলে জগন্নাথদেব।প্রথমে নীলমাধবকেই পুজো করা হত। পুরী থেকে বেশ কিছুটা দূরে অনেকগুলো সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয় নীলমাধবের মন্দিরে।পুরোনো স্থাপত্য আর মূর্তি মন কাড়ে।
রবীনের ক্যামেরা মাঝেমাঝেই বন্দি করছে সবার হাসিমাখা মুখগুলো। কোনারকের কথা দুষ্টু মিষ্টিকে বলে রবীন।কোন জায়গা দেখার আগে বোধহয় তার ইতিহাস একটু জেনে নেওয়া ভালো।
" কিন্তু বাবা,এখানে তো আমরা আগে এসেছি। এই রথের চাকার সামনে দাঁড়িয়ে আমার আর বোনের ছবি আছে,মনে নেই তোমার?" মিষ্টি বলে।
" বাবা আমি তোমাকে বলবো ইতিহাসটা যতটা মনে আছে।" দুষ্টু বলে
পড়ন্ত বেলায় ইতিহাসের গল্প বলতে বলতে আর দেখতে দেখতে কোনারক ঘুরলো ওরা। তবে তার মাঝে অনু একবার আস্তে আস্তে বলে গেলো, "এখানে দাঁড়ানোর দরকার নেই পা চালিয়ে চলো।"
রবীন ওর দিকে তাকিয়ে হাসে,সত্যিই কিছু বলার নেই।
সামনে পেছনে নিজেরা পাহারায় থেকে ওদেরকে ওদের মত থাকতে দিয়ে সবাই দেখতে থাকে বহু বছরের পুরোনো এক সৃষ্টি যা সৃষ্টি করতে হয়ত কত সাধারণ মানুষের যৌবনের চাওয়া পাওয়ার অনেকটাই রাজ আদেশের কাছে বিলীন হয়ে গেছে।
সূর্য তখন অস্ত যাওয়ার পথে,পড়ন্তবেলায় সূর্যের লাল কিরণ মেখেছে মন্দির।মন্দিরের চারপাশের আলোগুলো জ্বলে ওঠে একটু একটু করে। অদ্ভুত এক ভালোলাগায় মন ভরে যায় ওদের,আকাশে তখন বড় থালার মত পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। অপূর্ব এক অনুভূতির অনুরণন তখন সবার মনে।
*********************
পুরী থেকে ফেরার পর মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা মাস,দুষ্টু ডাইরির পাতা ভরেছে পুরীর অনেক না বলা কথা দিয়ে,মায়ের বকুনি,মন্দিরে হারিয়ে যাওয়া,ট্রেনের মারামারি আরো কত কি.. আর আছে এক অপরিচিত ঠাকুমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার গল্প।
আর তার সাথে রয়েছে এক ঝুড়ি খুশি,মজা আর একটুকরো চুপিচুপি ভালোবাসার গল্প। যে ভালোবাসার ছোঁয়া কখনো লেগেছে নিরিবিলি ভোরে একলা ছাদের গল্পে,কখনো বা সমুদ্র স্নানে ঢেউয়ের সাথে লড়াই করতে করতে আছাড় খাওয়ার সময় অথবা একসাথে সমুদ্রের ঢেউয়ের আওয়াজের সাথে কর্ণ কুন্তী পাঠ করার সময়।
আজকাল জোজোদাকে না দেখলে দুষ্টুর মন খারাপ করে,কথা বলতে ইচ্ছে করে ওর সাথে।কখনো বা অভিমানও হয় খুব বেশি যখন ওদের বাড়ির সামনে দিয়ে হস্টেলে যাবার পথেও একবারও তাকায়না ওদের বাড়ির দিকে।
দুষ্টুর ভালোলাগার গল্প আর অভিমানের গল্প সবটাই হয় ডাইরির সাথে কলমের ছোঁয়ায়। মনে মনে ভাবে মা ঠিকই বলে, একটু বেশিই পাকা ও দিদির চেয়েও। দিদিটা বোধহয় সত্যিই ভালো,ওর মত হঠাৎই কাউকে পছন্দ করে ফেলেনা, মনে মনে দিনরাত ভালোবাসার বকবকানি করেনা।
কই কখনো তো শোনেনি দিদির কাছে কারো গল্প। এমন কেউ যাকে দিদি পছন্দ করে। তবুও খুব সাবধানে কিশোরী মনে প্রথম ভালোলাগার স্পর্শ নিজের মনের চোরা কুঠুরিতে যত্নে বন্ধ করে রাখে। একটু অভিমানও হয় জোজোদা তো কখনো ওর মুখের দিকে তাকিয়েও দেখেনা। অথচ ও পড়াতে মন দিতে পারেনা,ঘুরে ঘুরেই পুরীর কথা মনে হয়,ওদের গান গাওয়া,কবিতা বলা আর একসাথে হুটোপুটি করে স্নান করা। যথারীতি সেবার রেজাল্ট খারাপ করলো দুষ্টু,অঙ্কে আর একশোতে একশো পাওয়া হলোনা। হলোনা প্রথম হওয়া,থার্ড পজিশনে আবার গড়িয়ে গড়িয়ে নামলো। স্কুলের টিচাররা অবাক হলেন,রবীনের কানেও কথা এলো দুষ্টু খুব অমনোযোগী হয়েছে, পরের বছর মাধ্যমিক এইরকম করলে রেজাল্ট ভালো হবেনা।
রবীন একটু সময় নিলো দুষ্টুর মন পড়তে ভাবলো পরে কথা বলবে। তবে অনু সামলাতে পারলোনা নিজেকে খুব রাগ করলো,"তোর কি হয়েছে বলতো?
সেই ঘুরে আসার পর কেমন যেন আর পড়াশোনাতে মন নেই।
এত পরিশ্রম করে বাবা সারাদিন, স্কুলের এত কাজ নানা ঝামেলা তবুও তোদের দিকে খেয়াল রাখে।
কি করে এলি খাতায়?
ইশ্ আমার তো ভীষণ রাগ হচ্ছে।সারাদিন এত কষ্ট করি এইজন্য! দুষ্টু তুই আমাকে বলেছিলি তুই সবার চেয়ে ভালো করবি তার কি হলো?
মিষ্টির চেয়েও তো মনে হয় খারাপ করবি।"
মায়ের এই কথাটা আর ঠিক নিতে পারেনা দুষ্টু খুব অভিমান হয়। খারাপ
মিষ্টিও বকলো ওকে,"তোর ডাইরিটা কোথায় রাখিস বলতো?মা আমি দেখেছি ও মাঝে মাঝেই কিসব যেন লেখে একটা খাতায়।"
Comments
Post a Comment