Skip to main content

জীবন যখন যেমন13

মায়ের দায়িত্ব পুরোপুরি ফুলিয়া আর শিবুকে দিয়েছে এই কয়েকদিনের জন‍্য আর অফিসের কাজ বুঝিয়ে দিয়েছে রায়বাবুকে।যদিও ওনার কৌতূহলের শেষ নেই বারবার জিজ্ঞেস করছেন কোথায় যাচ্ছেন? অনুষ্ঠানটা কি? যারা এখানে এসেছিলো তাদেরই কারো বিয়ে নাকি?
       অবাক হয়ে যায় দীপ্ত ভদ্রলোক মোটামুটি ফেলুদা বা ব‍্যোমকেশ হতে পারতেন মানে মগজাস্ত্রটা দারুণ চলে ওনার।না বলতেই অনেক কিছু বুঝে যান।
                    যাক তবুও বিদেশে ভালোমন্দতে এই মানুষটার নির্ভরতায় অনেক কিছুই পার হয়ে গেছে দীপ্ত।তাই হয়ত একটু বেশিই প্রশ্রয় দেয় ওনাকে।

*******************
নিজের কাজের কোন ফাঁক রাখতে চায়না দুষ্টু তাই মনপাখিকে খাঁচায় বন্দি করে ফাইলের সাথে সন্ধি করতে গিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ করছে দুষ্টু। যদি কিছু কাজ থাকে সেটা ভোরে উঠে শেষ করেই বেরোবে ভেবেছে। বাবা অবশ‍্য বারবার বলছে," আগে কাজ দেখ,তারপর আসবি এখানে সবাই আছে মামা মেসো চলে এসেছে সুতরাং অনেকটা নিশ্চিন্ত এখন।"
       তবুও দিদিকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে দুষ্টুর,কত কি হয়ে গেলো এরমধ‍্যে যদিও ছবিতে সবই দেখছে আর মন কেমন করছে। দায়িত্ব আর দায় অনেক কিছুই জীবন থেকে নিয়ে যায় আর হাসিমুখে সেটা ছেড়েও দিতে হয়। তবুও দীপ্তদাকে কথা দিয়েছে ও আসার আগে চেষ্টা করবে যেতে।
      রাত জেগে বলা কথাটার কথা মনে পড়ে দুষ্টুর সত‍্যিই কি সবুজ চাবাগানে ভালোবাসার লাল পলাশ ফুটবে?

**********************
    সানাইয়ের সুরে জমে উঠেছে বিয়েবাড়ি, রবীনের ব‍্যস্ততার মাঝেও মনে বাজে বিদায়ের সুর। ভোরবেলা মামী আর মাসিমণি পাশের কাকিমারা মিষ্টিকে ঘুম থেকে তুলেছে,কি সব করতে হয়।সত‍্যিই চোখ খুলতে ইচ্ছে করছিলোনা,উফ্ এত ঝামেলা বিয়ে করার কে জানে! ওপার থেকেও এক সংবাদ ভেসে আসে মুঠোফোনে.." ভোরবেলার ডাকে না ওঠাতে মা আর কাম্মা গায়ে জল ছিটিয়ে দিয়েছে। উফ্ এত ঝকমারি জানলে ওখানেই রেজেস্ট্রী করে নিতাম।"
           জোজোর কথাতে চমক ভাঙে মিষ্টির সত‍্যিই তো আজই রেজেস্ট্রী হবার কথা। আগেই করে নিতে বলেছিলো মধুমিতা জেম্মা। তারপরেই জিভ কাটে মিষ্টি মানে ওর শাশুমা কিন্তু মা রাজি হয়নি কিছুতেই।তখন মাথায় ঢোকেনি কিছু মিষ্টির তবে জোজো বুঝিয়েছিলো..." তুই এখনো বাচ্চা আছিস বুঝবিনা।আরে রেজেস্ট্রী হয়ে যাওয়া মানে তো আইনত আমরা স্বামী স্ত্রী যদি সামাজিক বিয়ের আগেই হানিমুন করে ফেলি তাই।"
       "তুই একটা অত‍্যন্ত অসভ‍্য পাজি আর বোকা।মা নিশ্চয় অন‍্য কোন কারণে বলেছে।"
          অবশ‍্য মা যে কারণটা বলেছিলো পরে তা জোজোকে বলতে পারেনি দুষ্টু। মা বলেছিলো কতরকম ঘটনা ঘটে জানিস,কি দরকার আগে রেজেস্ট্রী করার?
    "কি ঘটনা মা?"
    " এই ধর কোন কারণে বিয়েটা হলোনা তখন?"
     তবে ওদের আলোচনাটা এগোয়নি রবীনের বকুনিতে, "থাকনা অনু, এইসব কথা কি দরকার বলার। আমাদের মিষ্টির বিয়ে জোজোর সাথেই হবে।সে তুমি যখন চাইছোনা রেজেস্ট্রী পরেই হবে।"

         বাড়ির হইচইয়ের মাঝে টুকরো কত কথা মনে ভাসে মিষ্টির। বোনকে ফোন করেছিলো, ও বললো রওনা দিয়েছে সব সেরে দেখা যাক কখন আসে?
        দুষ্টু রওনা দিয়েছে শুনে মাসিমণি আর মামী লাফিয়ে ওঠে," হ‍্যাঁ রে দুষ্টু অফিসের গাড়ি করে আসবে তো? আমি তো শুনেছি একদম লালবাতি জ্বালানো গাড়িতে আইএএস অফিসাররা ঘোরে।"
                 মনটা যেন একটু কেমন করে মিষ্টির আজ বুঝতে পারে একটা সময় গুণের মাপকাঠিতে রূপ পিছিয়ে পড়ে আসলে রূপের ক্ষয় আছে আর গুণের সমৃদ্ধি আছে তাই বোধহয় সবার চোখে দুষ্টুই আজ সেরা। হঠাৎই নিজেকে সামলায় মিষ্টি ওর কি হিংসা হচ্ছে? সেই ছোটবেলার মত ওর জামাটা নিতে ইচ্ছে করছে?
      আসলে গুণ তো নেওয়া যায়না হয়তো অনুকরণ করা যায় কিন্তু অপহরণ করা যায়না।
      আজ দুষ্টুর জন‍্য গর্ব হচ্ছে ওরও।

***********************
বাইরে একসাথে অনেকগুলো গাড়ির শব্দ পাওয়া যায়। শাঁখের শব্দ আর উলুধ্বনি শোনা যায়। আওয়াজ আসে গায়ে হলুদের তত্ত্ব এসেছে আর তারপর হৈ হৈ, সাউন্ডবক্সে কে যেন একটা গায়ে হলুদের গান লাগিয়ে দিয়েছে। একটা পরিচিত হাসির আওয়াজে মিষ্টি বোঝে মণিমা এসেছে.." আমি চলে এলাম রীতিমত ঝগড়া করে,কি অবস্থা বলো..জোজোর বন্ধু আর আমার ননদের ছেলে আসবে দিদিভাই বলছিলো। আমার বাপের বাড়ির সবাই এখানে,আমার মেয়ের বিয়ে ও বাড়িতে মন বসে? ছেলেটার মাথাটা তো গেছে,বলে আমি তোমার ছেলে না? তুমি গিয়ে ফিরে এসো রাতে আমার সাথে যাবে। অনেক ম‍্যানেজ করে এসেছি।"
             মণিমার আনা হলুদের সাথে সাথে হলুদ প্রজাপতি উড়ে বসলো মিষ্টির গায়ে মুখে...হলুদে মাখামাখি হলো সবাই মহা আনন্দে। তারমধ‍্যেই অর্ক খবর নিয়ে এলো.." এসে গেছে,এসে গেছে ছোড়দিদি। গাড়ি ঢুকলো বলে,আমি দেখলাম।"
        সবার মন নেচে ওঠে দুষ্টুকে দেখার জন‍্য।একটা সময় পেয়ারা গাছে উঠে দুষ্টু পেয়ারা ছু়ঁড়ে ওয়েলকাম জানাতো আজ পেয়ারা গাছটাই যেন সবাইকে সাথে নিয়ে ওর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে।
       রবীনও আছে ওদের মাঝে..মেয়েটা যে কবে এতো বড় হয়ে গেলো বুঝতেই পারেনি। তবে কিছুক্ষণের মধ‍্যেই দুষ্টু ফিরে গেলো আপন মহিমায়। দিদিকে জড়িয়ে ধরে হলুদ মেখে একাকার কান্ড। রাণু আর বেবি আরেকটু বেশি করে হলুদ মাখিয়ে দেয় ওকে..." মাখো মাখো হলুদ মাখো সোনা।হলুদ প্রজাপতি বসুক তোমার গায়েও এবার।"
             দুষ্টুর গালের হলুদে রাঙা আভা লাগে...লাল কুর্তায় লাগে হলুদ ছোপ। মিষ্টি ওর গালে গাল রাখে," এতোক্ষণ তুই না আসাতে সবটাই যেন ফাঁকা লাগছিলো। এবার একদম ঠিকঠাক লাগছে।"
        ভালোবাসার মুহূর্তে অর্কর মুঠোফোনে আলো জ্বলে ওঠে। জোজো একদম কারেন্ট আপডেট নেওয়ার জন‍্য শেষে ঐ বেচারাকে ধরেছে।

         ****************
ওদের আনন্দের মাঝে দুষ্টুর মুঠোফোন যে কখন বেজে গেছে বুঝতেই পারেনি।দীপ্ত বুঝতে পারেনা দুষ্টু পৌঁছে গেছে কিনা? ফোনও ধরছেনা,এমন তো ,হয়না। তাহলে কি মিষ্টিকে ফোন করবে? সেটা ঠিক হবেনা,তার থেকে সোজা চলে যাওয়াই ভালো।
                গায়ে হলুদের ট্রে গুলো ওরা সাজিয়ে রাখে।রাণু বলে," দেখো সব ঠিক আছে তো আমি কিন্তু পাত্রপক্ষের লোক।"
          " তাহলে,মিস্টি খেয়ে চলে যা এখন রাতে আসিস।"বেবি আর রবীন দুজনেই বলে।
         হেসে গড়িয়ে পড়ে রাণু," কতদিন বাদে তিনবোন,দাদা বৌদি ছেলেমেয়েদের নিয়ে একজায়গায় হয়েছি।মা বাবা এসেছে আমি পাত্রীপক্ষ হয়ে গেলাম এবার।"
         ওদের হাসির মাঝে জয় এসে বলে, "ছোড়দি একটা অনেক লম্বা দাদা তোমাকে খুঁজছে,বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।"
       রবীন হেসে বলে," হতভাগাটা এসেছে বোধহয়।"
       অনেকদিন বাদে বাবার মুখে আদরের নামটা শুনলো দুষ্টু,দৌড়ে বাইরে এলো হলুদ ওড়না উড়িয়ে...."দীপ্তদা এসো এসো।"
            দীপ্ত বুঝতে পারলো চাবাগানের সবুজে লাল পলাশ ফুটেছে আর তাতে হলুদ প্রজাপতির ছড়াছড়ি।

******************

অনেকদিন বাদে স্মৃতির উজ্জ্বল পথে পা রেখে মনটা হঠাৎই চঞ্চল হয়ে ওঠে আনন্দে দীপ্তর। দুষ্টুকে স্কুলে পড়তে অনেকবার দেখেছে,বরাবর ডানপিটে আর একরোখা ছিলো।খরগোশের মত দৌড়ে প্রাইজ নিয়ে আসতো আর গান আবৃত্তি করে মুগ্ধ করতো সবাইকে। কিন্তু মেয়েলী ভাবটা একটু কম,ছেলেদের সাথে খেলতে এমনকি মারামারি করতেও দেখেছে।এই নিয়ে কাকিমাকে বকতেও শুনেছে। একটা সময় দুষ্টু শুধুই হেডস‍্যারের মেয়ে,একটু সমঝে চলতো ওকে।তারপর হাতে এলো সেই চিঠি... বারবারই মনের ভুলে ভেবেছে দীপ্ত চিঠিটা যেন ওকেই লেখা।

       চিঠিটা পড়ার পর একটু বেশি ভালো করে নজর করেছে দুষ্টুকে আড়াল থেকে।সামনাসামনি চোখ রাখার সাহস তখন ছিলোনা তবে যেদিন স্কুলে যাওয়ার পথে দেখা হতো মনে পড়ে যেতো নচিকেতার সেই গানটা..লাল ফিতে সাদা মোজা স্কুলের ইউনিফর্ম মানে দীপ্তকে মনে মনে বলতেই হত দুষ্টু ইউ মেড মাই ডে। তারপর সেই হারিয়ে যাওয়া সময়টা এলো কলেজে ঢুকে সব তছনছ হয়ে গেলো।স‍্যারের কথা মনে ছিলো ঠিক করেছিলো নিজেকে প্রতিষ্ঠিত না করে আর ফিরবেনা কালচিনিতে।

      কিন্তু হঠাৎই দুষ্টু আবার সামনে এলো দার্জিলিংয়ে তবুও মনকে বাঁধলো দীপ্ত একদম শক্ত করে। এক ঝলক রঙ শুধু পড়ন্ত বেলাতে কখন যে ছিটকে এসে চোখেমুখে লেগেছিলো বুঝতে পারেনি। তারপর কলকাতার পথে যখন দুষ্টুকে আবার দেখলো তখন নিজেকে আর সামলাতে পারলোনা....সেই দেখা হওয়ার পর মাঝেমাঝেই মনে হত সেই গানটা...

  মাঝেমাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাইনা..

        তারপর চাকরি পাওয়া,ব‍্যাচেলর পার্টি আর একদম ফিদা হয়ে যাওয়া।সত‍্যিই আর কিছু করার নেই। শুধু দুজনে অপকটে ভালোবাসার চোরা চিঠিটা খাম থেকে বের করতে পারেনি এখনো।তাহলে বোধহয় দীপ্ত চা বাগানের পাশে দাঁড়িয়ে বলতো..তোকে খুব ভালো লাগে মানে ভালোবাসি আমি।

      দুষ্টু এসে চোখের সামনে হাত নাড়ে.." এসো ভেতরে.. কি দেখছো অমন করে?"

     "নাহ্ আমি একটা কথা ভাবছিলাম যে বিয়েটা কার?"

      " দীপ্তদা,জোজোদার ছোঁয়া কিন্তু তোমারও লেগেছে। চলো ভেতরে বাবা অপেক্ষা করছে।এরপর সবাই বাইরে ছুটে আসবে।"

          অনেকদিন বাদে আবার এই বাড়িতে পা রাখা,প্রতিটা জিনিস এখানে চেনা শুধু একটু নতুন রঙ যোগ হয়েছে সবেতেই..অনুরাগের রঙ।

      স‍্যারের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে দীপ্ত.. ওর মাথায় হাত রেখে আজ যেন খুব পরিতৃপ্ত লাগছে রবীনের।আজ যেন মনে হচ্ছে দীপ্ত ছাত্রর চেয়েও অনেক বেশি। দুষ্টু ইশারা করে মানে প্রণাম করার মত আরো আছে..দাদু,দিদা,মামা। তবে মামী আর মাসি মনে হচ্ছে শিং ভেঙে বাছুরের দলে ঢুকে পড়েছে। 

রাণু ভালো করে দীপ্তর দিকে তাকায়..দুষ্টুর পাশে দীপ্তকে বেশ মানিয়েছে। জোজোর কাছেই শোনা অবশ‍্য.." কাম্মা,দুষ্টুর মনে বোধহয় পুট্টি লেগেছে।" প্রথমে শুনে আঁতকে হয়েছিলো রাণু..পুট্টিটা আবার কি?"

     " ওহ্ সত‍্যিই তুমি কি কিছু বুঝতে পারোনা? আরে পুট্টি মানে সবে প্রলেপ পড়ছে মনে,এরপর রঙ ধরবে। এশিয়ান পেন্টসকে কন্ট্রাক্ট দিলেই ভালো কি বলো?"

     হেসে কুটিপাটি খেয়েছিলো রাণু.." ভগবান এত কথা তুই কোথা থেকে শিখলি?বাপরে আমার পেটে খিল ধরে গেলো হাসতে হাসতে।"

          দীপ্তর একটু অস্বস্তি হয়,সবাই ওকে যেন দেখছে একটা বিশেষ নজরে। অনুও আজ একটু বেশিই যত্ন করলো ওকে.." অনেকদিন বাদে তোমাকে দেখলাম, মাকে নিয়ে এলেনা কেন?"

   দীপ্ত হাসে..  " হ‍্যাঁ অনেকদিন বাদে এলাম।আসলে মায়ের শরীর খুব একটা ভালো যায়না তাই।"

     দুষ্টু তাড়াতাড়ি ওকে বিয়েবাড়ির দর্শকদের কাছ থেকে মুক্ত করার জন‍্য ঘরে নিয়ে গিয়ে ফ্রেশ হওয়ার ব‍্যবস্থা করে দেয়।

           "মিষ্টিকে দেখছিনা তো? ওর বিয়ে আর ওকেই দেখতে পাচ্ছিনা..কোথায়?"

     " ও এখন ভিআইপি দীপ্তদা,ওয়েট।এখন বোধহয় গায়ে হলুদের পর বাথরুমে ঢুকেছে।ওদিকে জোজোদা তো ছবি দেখার জন‍্য জ্বালিয়ে মারছে।শেষে অর্ককে ধরেছে,উঃ বাবা এখনই সব দেখে ফেলবে তো পরে কি দেখবে?"

       দীপ্ত মনে মনে বলে হয়ত জোজোর অবস্থা আমারও তাই তোকেও আজ দেখতেই থাকি মনে হচ্ছে। কে বলবে সেদিনের দুষ্টু যে পেয়ারা ছুঁড়তো সে আইএএস অফিসার এখন। তবে আজ প‍্যান্ট না পরে ভালো করেছিস,তোর হলুদ ওড়না তো কালচিনিতে ঢুকেই মনটাকে বেঁধে নিলো।

        নিজের জিনিস বের করার ফাঁকে চারদিকে তাকিয়ে দেখে দীপ্ত..বাইরে সবাই হৈ চৈ করছে। দুষ্টুও বাইরে গেছে চা আনতে হয়ত এক্ষুণি এসে তাড়া দেবে খাবার জন‍্য। ব‍্যাগ থেকে প‍্যাকেট গুলো বের করে দীপ্ত।জিনিস বের করার ব‍্যস্ততায় বুঝতেই পারেনি কখন এসে দুষ্টু দাঁড়িয়েছে। ওর ভাসা চোখদুটোতে শাসনের ছোঁয়া মাখিয়ে দুষ্টু বলে," ইশ্ তোমার এখনো হয়নি,কখন খাবে তুমি? লুচি এখনো খাওয়া হলোনা তোমার।এরপর ভাত কখন খাবে? তোমার কত কাজ আছে জানো?এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে যায় দুষ্টু।

    " একটু এদিকে আয় আগে এই কাজটা সারি তারপর।"

     দুষ্টুর হাতে ঘড়ি আর একটা ভারী প‍্যাকেট দেয় দীপ্ত.." সময়কে কাজে লাগাতে তোর কাছে শিখেছিলাম, তাই মনে হলো তোকেও বেঁধে নিই আমার সময়ের সাথে। আর এটাতে একটা শাড়ি..আমি এই প্রথম কিনলাম শাড়ি।তোকে কোনদিন দেখিনি শাড়ি পরতে...."

  " দীপ্তদা! এইসব কেন? তুমি কলকাতা গেছিলে?"

  ওদের কথার মধ‍্যে মিষ্টি এসে ঢোকে,মিষ্টির লম্বা চুল তখনও ভিজে। গালে হাল্কা হলুদের আভা আরো লালিত‍্য মাখিয়ে ওর সৌন্দর্য্য দ্বিগুণ করে দিয়েছে।

        " সেই এলি এতো দেরি করে? তুই আর দুষ্টু দুজনেই সমান।একদম প্ল‍্যান করে এসেছিস দেরি করে মনে হচ্ছে,আমি ফাইন আদায় করবো দুজনের কাছে।"

     দীপ্ত হাত বাড়ায়..." এটা তোর আর জোজোর জন‍্য। এটা শুধু তোর জন‍্য।"

        মিষ্টি দুষ্টুর দিকে তাকায়.." দেখি দেখি ওটাতে কি আছে? বোন দেখা একবার।"

       " দিদি তুই কিন্তু সেই ছোটবেলায় যেমন করতিস তেমন শুরু করেছিস। আমার জামাটা সবসময় বেশি ভালো লাগতো তোর।"

     " কাল থেকেই তো বড় হয়ে যাবো,আজ একটু ছোট হয়ে থাকতে দে প্লিজ.."

     দিদির দিকে প‍্যাকেটটা বাড়িয়ে দেয় দুষ্টু... "ইশ একদম পলাশের রঙের শাড়ি,আমার থেকে এটা দেখতে বেশি সুন্দর। আমার তো এটাই বেশি ভালো লাগছে।"

  ওদের দুইবোনের মধ‍্যে থেকে দীপ্তর স‍্যান্ডউইচ অবস্থা।আর ওর কাচুমাচু মুখটা দেখে হাসি পায় মিষ্টির তাই বলে..." ছোটবেলায় হলে নিয়ে নিতাম, কিন্তু এখন আর নেবোনা।কারণ দীপ্ত অনেক দোকান ঘুরে তোর জন‍্য ভালোবেসে এটা এনেছে। আমার শাড়িটাও আমার কথা ভেবেই কিনেছে তাই আমারটা আমার থাক আর তোরটা তোর।দুষ্টু সবাই তোকে আলাদা করে জিনিস দিচ্ছে কি ব‍্যাপার বলতো?"

        " আমি সবার আদরের তাই আদর করে দিচ্ছে। ছোট হবার অনেক সুবিধা আছে।"

      কলতলায় এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে দীপ্ত,মিষ্টি সবটা দেখে ফেললো।খুব ইচ্ছে করলেও বলতে পারলোনা,তোকে একবার ঐ শাড়িটা পরে দেখতে চাই।

*************

বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিয়েবাড়ির ব‍্যস্ততা বাড়ছে।অনু চারিদিকে ছোটাছুটি করছে,রবীন এরমধ‍্যে বেশ কয়েকবার বাইরে থেকে এলো। খাওয়াদাওয়ার দিকে তেমন কিছু দেখার নেই তবুও দুষ্টুর ছোট মেসো ঐ দিকে আছে।খুবই শান্তশিষ্ট মানুষটা।কৃষ্ণমামাকে নিয়ে বারদুয়েক বাজার থেকেও ঘুরে এসেছে দীপ্ত,লিস্ট মিলিয়ে সব কিনলেও পুরোহিতের অর্ডারে আবার ছুটোছুটি।

            দীপ্ত ফিরে এসে দেখে দুষ্টুর স্নান হয়ে গেছে। দুষ্টুর পোশাকেও বিয়েবাড়ির উৎসবের রঙ লেগেছে,মাঝে মাঝেই ছোটাছুটি করতে করতে ওর দিকে তাকিয়ে হাসে দুষ্টু.." উঃ একটা মেয়ে বিয়ে করবে বলে দিব‍্যি গুছিয়ে বসে আছে।আর আমি অফিস ফেলে এখানে ছুটোছুটি করছি।"

      রাণু হাসে.." করে নে সোনা একটু,তোর বিয়েতে ওরা দুজন ছুটবে।"

         দীপ্তর কাছে জোজো ফোন করে," কি রে কখন আসছিস? এই যে বললি ওখানে দেখা করেই চলে আসবি।"

       " ওর মাথাটা একদম গেছে বুঝলি কালচিনিতে এসে দেখা করে এখন ছেলেটা ছুটে যাবে শিলিগুড়িতে!"

     মিষ্টির বকুনিতে জোজো চুপ করলেও রবীন বলে.." আচ্ছা বর আনতে তো কাউকে পাঠাতেই হয় তাহলে আমি কি দীপ্তকেই পাঠিয়ে দেবো গাড়ি করে?"

     রাণু বারণ করলেও রবীন মধুমিতার কাছে ফোন করে..মধুমিতা বলে," দাদা কোন চিন্তা নেই আমরা ঠিক চলে যাবো। আর শুভ আছে জোজোর বন্ধুরা আছে ভাবনা কি?"

        রবীনের মুখ থেকে হঠাৎই বেরিয়ে আসে," কি ভালো লাগছে শুনে আপনি আসছেন কতবার বলেছি তখন বলেছেন আসবেননা,ছেলের বিয়েতে আসতে নেই। আমি তো জানি দেখতে নেই,ভীষণ ভালো লাগছে।"

        ওদিকের সানাইয়ের শব্দের মধ‍্যে মধুমিতার হাসির শব্দ শোনা যায়..." আমার জা গায়ে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে সেই যে পালিয়েছে আর আসেনি বাপের বাড়ি থাকবে বলে।আমি একা একা কি করবো এখানে শুনি? তারচেয়ে সবার মাঝে থাকলে আমার ভালো লাগবে। ছেলেও খুব জেদ করছে।"

      রাণু ফোনটা নিয়ে বলে ওঠে.." চলে এসো দিদিভাই খুব মজা হবে। সত‍্যিই মিস্ করছি তোমাকে।"

    মধুমিতার আসার খবরে বিয়েবাড়ির আনন্দের মধ‍্যে নতুন মাত্রা যোগ হয়ে যায়। সত‍্যিই রাণুর মনের ভেতরে একটু অপরাধবোধ হচ্ছিলো,এভাবে আগে এসে থেকে যাওয়াতে।যাক এখন শুধু খুশি আর খুশি।

     যদিও বিয়ে অনেক রাতে তবুও মিষ্টিকে একটু আলাদা ঘরে বিশ্রাম করার জন‍্য ঢুকিয়ে দিয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসে ওরা।

      দুষ্টু ওকে আদর করে বলে যায়.." আজকের দিনটা হাওয়া আর ভালোবাসা খেয়ে পেট ভরা। আমি খেয়ে আসি..তুই ততক্ষণ জোজোদার মাথাটা একটু ঠান্ডা করে নে কথা বলে।"

        ওদের সবার চলে যাওয়ার ফাঁকে জোজোর সাথে কথা বলে মিষ্টি..." বেশি দেরি করিসনা তাড়াতাড়ি চলে আসবি।আর বন্ধুদের গাড়িতে নিবিনা,মেসো আর পিসামশাই আর ভাই বসবে গাড়িতে।"

     " এই রে বৌয়ের শাসন শুরু,আচ্ছা বাবা তাই হবে। একটা ছবি পাঠা দেখি।"

  " উঃ আমার খিদে পাচ্ছে,এখন ছবি পাঠাতে পারবোনা।বিয়েতে এতো কষ্ট কে জানতো?"

        ফোনেই একটু আদর করে দেয় মিষ্টিকে.." দীপ্ত আর দুষ্টুকে বলা আছে তোকে খাবার এনে দেবে।"

     ওরা বলেছিলো," আমি খাবোনা,নিয়ম ইজ নিয়ম।মা যা বলেছে তাই খাবো।"

            অনেকদিন বাদে নিজের ছোটবেলায় বড় হওয়া প্রিয় জায়গার খাবারের স্বাদ পেলো দীপ্ত।

    কলাপাতা আর মাটির গ্লাসে সেই আগেকার মত ধোঁয়াওঠা গরম ভাত ডাল,বেগুনভাজ,ফুলকপির তরকারি, ছ‍্যাঁচড়া,মাছের চচ্চড়ি আর মাছের ঝোল। এই রান্নার যেন আন্তরিকতাই আলাদা।

      স‍্যার বললেন," কি রে কেমন লাগছে? এটা নিজের উদ‍্যোগেই করলাম। ঘরের মানুষজন একটু নিজেদের মত দুপুরে খাবেনা। আমাদের নিজেদের জায়গার খাবার,আর কত আশা করে আছে মানুষজন হেডমাস্টারের মেয়ের বিয়েতে রান্না করবে। সব কি ক‍্যাটারিং করলে হয়?

    আশ্চর্য হয়ে যায় দীপ্ত এইজন‍্য হয়ত স‍্যারের কোন তুলনা নেই।সবার কথা ভাবেন।

  খাওয়ার পর দুষ্টুকে একটু নিরিবিলিতে পায় দীপ্ত,"শাড়িটা একবার পরিস,তুই শাড়ি পরিস তো? মানে আমি হঠাৎই কিনে ফেললাম মিষ্টিরটা কিনতে গিয়ে।"

      মুখে হাসি আর চোখে দুস্টুমি মাখিয়ে বললো," হ‍্যাঁ শাড়ি পরি তো,তুমি দেখোনি সরস্বতী পুজোতে আমাকে। শাড়ি জড়িয়ে সে কি অবস্থা!"

      হেসে ওঠে দীপ্ত.."সত‍্যি, সবাই হেসেছিলো।শুধু আমি হাসিনি।"

      " তোমার দেওয়া শাড়িটা পরবো কিন্তু আজ নয়। জোজোদা তাহলে খুব রাগ করবে। ওহ্ তোমাকে তো দেওয়াই হয়নি।"

        দুষ্টু ঘরে যায়,আবার একটু বাদেই ফিরে আসে একটা প‍্যাকেট নিয়ে। এটা তোমার রাতে পরবে। দীপ্ত অবাক হয়ে যায় দেখে.."কে কিনেছে এটা স‍্যার?"

     " নো তোমার বন্ধু,তাকে ফোন করে এবার ঝগড়া করো।আমি কিছু জানিনা।"

        কিছুটা সারপ্রাইজ থাক,বাকিটা রাতেই হবে নাহয়।

*********************

       দেখতে দেখতে সন্ধ‍্যে এসে পা রাখে বিকেলের বারান্দায়, বিয়েবাড়ির আলোগুলো জ্বলে ওঠে আরো উজ্জ্বল হয়ে।মিষ্টিকে একটু আগেই সাজাতে নিয়ে গেলো পাশের বাড়িতে নিরিবিলিতে।যদিও আপত্তি করছিলো মিষ্টি," কত রাতে তো বিয়ের লগ্ন,এখনি সেজে কি করবো? ইশ্ এতো আগে...."

     ধমকায় সবাই,"তোর বর যখন আসে আসুক,আরে লোকজন তো চলে আসবে নাকি? তারা এসে কি দেখবে?লক্ষ্মীসোনা যা এবার তৈরী হয়ে নে। মামী মাসীদের সাজের মাঝখানে একটু পালিয়ে আসে দুষ্টু একবার দেখে যায় দীপ্তদাকে। তখনো বাধ‍্য ছেলের মত বাবার সাথে টুকটাক কাজে ব‍্যস্ত।বাবাকে বকুনি দেয় দুষ্টু.." বাবা একটু বাদেই লোকজন আসবে তুমি তৈরী হও এবার। আর দীপ্তদাও রেডি হয়ে নাও।তুমি একটু এগিয়ে যাবে কালচিনিতে ঢোকার মুখ থেকে বরযাত্রীদের নিয়ে আসবে।"

     রবীন বলে," আরে তুই তো রেডি হোসনি এখনো,আমি মেয়ের বাবা কি আর সাজবো? দীপ্ত বরং যা তৈরী হয়ে নে।"

   " সেসব বললে হবেনা,তুমি আর মা সুন্দর করে সাজবে চলো।"

     রবীন বুঝতে পারে ওর পছন্দের দুজন মানুষকেই সাজাতে চায় দুষ্টু।

******************

      যদিও আয়না পাওয়া মুশকিল তবুও আয়নার সামনে দাঁড়ায় দীপ্ত,এই প্রথম ধুতি পরলো জীবনে।যদিও পুরোটা সাজানোই ছিলো তাই অসুবিধা হয়নি।মামা তো দেখে অবাক.." আরে তোমাকে তো চেনাই যাচ্ছেনা। খুব মানাইছে ধুতিতে।"

     হেসে ফেলে দীপ্ত,তবে সেই হাসিতে রামধনুর রঙের ছোঁয়া লাগে দুষ্টুকে দেখে...দুজনের  পোষাকে অদ্ভুত রঙের মিল! ইশ্ উত্তীয়টা যে কি করেছে। সত‍্যিই বোধহয় গোপন আর কিছু রইলোনা...বাইরে রবীন্দ্রসঙ্গীত মন ভরায়..

গোপন কথাটি রবে না গোপনে,

    উঠিল ফুটিয়া নীরব নয়নে।

        না না না,    রবে না গোপনে॥

                বিভল হাসিতে

                বাজিল বাঁশিতে,

        স্ফুরিল অধরে নিভৃত স্বপনে--

            না না না,     রবে না গোপনে॥

     হঠাৎ এই গানটা কে চালালো কে জানে! দীপ্তকে দেখে লজ্জা পায় দুষ্টুও। সত‍্যিই এতোটা সাজগোজ কোনদিন করতে অভ‍্যস্ত নয় ও তারপরে আজকাল তো একদমই করেনা।যদিও মণিমা বলেছে..." আজ তোর থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছেনা,এতো সুন্দর হলি কবে?"

            দীপ্ত বলে ফেলে," কেমন যেন অন‍্যরকম লাগছে তোকে।"

    " খুব লাউড লাগছে তাইনা?"

  " ভীষণ ভালো লাগছে।"

       হঠাৎই আসছে আসছে শব্দে ওদের কথাগুলো চাপা পড়ে যায়। কৃষ্ণমামা তাড়া দেয় দীপ্তকে," চলো আমরা একটু এগিয়ে যাই বুঝলে ফোন এসেছিলো,বরযাত্রীদের গাড়ি কিছুক্ষণের মধ‍্যেই এসে যাবে মনে হয়।"

        কৃষ্ণমামার সাথে যেতে যেতে একবার পেছন ফেরে দীপ্ত দুজনের চোখ মিলে যায়,ভালো লাগে দুষ্টুর.." ইশ্ দীপ্তদাকে বলা হলোনা তো একদম অন‍্যরকম লাগছে দেখতে ওকে।"

                 দুষ্টুর ভাবনার মধ‍্যেই ছোটমাসি তাড়া দেয় মিষ্টিকে নিয়ে আসতে হবে চল।

          দিদিকে দেখে মনটা হারিয়ে যায় দুষ্টুর.. ঠিক যেন লক্ষ্মীঠাকুরের মত লাগছে দিদিকে লাল টুকটুকে বেনারসীতে। সত‍্যিই দিদি খুব খুব সুন্দর, জোজোদা তুই খুব লাকি।

         " কি সুন্দর লাগছে বোন তোকে!" মিষ্টির চোখ এদিক ওদিক দীপ্তকে খোঁজে। দুষ্টু হাত ধরে ওর দুই মেয়েকে একসাথে দেখে মনটা ভরে যায় রবীনের। অনুর চোখ ঝাপসা হয় আনন্দে,ঠাকুরকে বলে ওদের তুমি ভালো রেখো।

             একমুঠো উজ্জ্বল আলো মুখে এসে পড়ে মিষ্টির,ঝলসে ওঠে কতগুলো ক‍্যামেরা।অনুষ্ঠানের তারকা তো আজ ও তাই সবার উৎসাহ ওকে দেখার তারমধ‍্যেও ধ্রুবতারাকেও চোখে পড়ে যায় সবার। দুষ্টু বুঝতে পারে অনেকেই ওকে দেখিয়ে কথা বলছে। কেউ কেউ এসে আলাপ করলো..কোথায় আছে জানলো। তবে দুষ্টুর মনে আজ লেগেছে পলাশের ছোঁয়া।পলাশরঙের শাড়িটা গায়ে ফেলে দেখেছে বার কয়েক।প্রথমে ভেবেছিলো ইশ্ ওকে মানাবে নাকি এই রঙ! তারপর যেন মনে হয়েছে এই রঙটা সত‍্যিই ভালো মানিয়েছে ওকে। তাই ভালোবেসে একটু আদর করে নিজেকে আর শাড়িটাকে।

কখনো কখনো নিজের পিঠ চাপড়েও বলতে হয় সাবাশ বেটা।সবসময় অন‍্যের মুখের দিকে নাইবা চেয়ে রইলে ভালো শোনার আশায়। নিজের পিঠ আর ঢাক নিজেকেও বাজাতে হয় দরকারে।

          লোকজন তখন আসতে শুরু করেছে তার মধ‍্যে মিষ্টির অপেক্ষার মুহূর্ত গোনা,এ যেন এক অনন‍্য অনুভূতি বারবারই সবার মধ‍্যে হারিয়ে যাচ্ছে একলা মনটা। তার মধ‍্যেই চোখ রাখতে ইচ্ছে করে ফোনে। কতটা দূর এলো ওরা?ও দেখতে না চাইলেও সাজগোজ করেই একটা ছবি পাঠিয়েছে  জোজো,দাবী ছিলো মিষ্টির একখানা ছবি।কিন্তু তখনো সাজগোজ হয়নি ঠিকমতো।তাই মেসেজ করতে যায়.." এতো আগ্ৰহ ভালো নয় একটু সারপ্রাইজ থাক।"
                     তারপরে আর ফোনটা দেখা হয়নি তেমনভাবে।মোটামুটি চোখ বুজে নিজেকে ছেড়ে দিতে হয়েছে ওদের হাতে সাজানোর জন‍্য। তারপর আর অনেকক্ষণ কথা হয়নি।বুঝতেই পারে ওরা রওনা দিয়েছে,কারণ বোনের কাছে দীপ্তর খোঁজ নিতে গিয়ে জেনেছে ও আর মামা এগিয়ে গেছে বরযাত্রীদের অভ‍্যর্থনায়।
      আজ যে ওরও দেখতে ইচ্ছে করছে একদম সামনে থেকে জোজোকে। অনেকদিন সামনাসামনি দেখা হয়না,অন‍্য সময় হলে এতদিনে ঠিক চলে আসতো হুট করে। মিষ্টির হাতে গাছকৌটো আর চোখে স্বপ্নের ঝাঁপি..ওর পানকৌড়ি চোখদুটো ডুব দিয়েছে স্বপ্নের নীল সায়রে।
         বিয়ে বাড়ির সানাইয়ে স্বপ্নে ডুব দিয়েছে আরো একজোড়া ভাসা চোখ।এদিক ওদিক ছুটোছুটির মাঝে বারবারই মনে হচ্ছে কাজের জায়গায় চলে যেতে হবে আবার কখন হুট করে তারমধ‍্যে একটু চোরা চাউনির ছোঁয়া,একটু হাসি আর ছোট্ট ছোট্ট কথা। মিষ্টির মত দুষ্টুর চোখও বারবার আনমনা হয়ে খোঁজে কাউকে.. অনেকক্ষণ তো ওরা গেছে নিশ্চয় এসে পড়বে একটু বাদেই।ছাদনাতলার আলপনাতে স্বপ্ন ছড়িয়েছে নানা রঙ,বাবার এক ছাত্র সাজিয়েছে ছাদনাতলা দুদিন ধরে।
      " কি অপূর্ব তোর হাতের আঁকা! খুব সুন্দর সাজিয়েছিস,এই দ‍্যাখ ছবিতে কত সুন্দর লাগছে।"
     " দুষ্টুদিদি তোমার বিয়েতে আরো সুন্দর সাজাবো।তবে আমাকে তোমার মনে থাকবে তো?অবশ‍্য না থাকলেও ক্ষতি নেই আমি ঠিক চলে আসবো।"
            অবাক হয়ে যায় দুষ্টু শিক্ষার্থীদের কেমন আন্তরিকতার শক্ত সুতোতে বেঁধে রেখেছে বাবা যে তারাও তাদের সবটুকু দিয়ে এগিয়ে এসেছে।

             মিষ্টি ওকে ইশারায় ডাকে..দুষ্টু কাছে যেতেই ওর গলাটা জড়িয়ে ধরে মিষ্টি," এখানে বোসনা একটু,কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছিস?"
     " দিদি তোর সাজুগুজু নষ্ট হয়ে যাবে তো? আমি তো তোর কাছেই আছি।আসলে লোকজন আসছে একটু কথা বলতে হচ্ছে। মা অতদিকে কি সামলাতে পারে?"
       " ওরা কতদূরে জানিস? দীপ্তকে একবারও দেখতে পেলাম না ওকে কেমন লাগছে তোর পাশে।"
       গালে লাল রঙের ছোট একটা তুলির আঁচড় লাগে দুষ্টুর.." ধুতি পরে একদম কুপোকাত, কখনো এভাবে সাজেনি তো। আর কেই বা ওকে সাজাবে? তবে বেশ লাগছে লম্বুকে।জোজোদার  পছন্দ আছে।"
       ওদের কথার মাঝে বাইরে একটা হইচই শুনতে পাওয়া যায় বুঝতে পারে বরযাত্রী আসছে বোধহয়। মাসিরা মায়ের সাথে ব‍্যস্ত ছিলো বরণের সব ঠিকঠাক সাজাতে,উলুর আওয়াজও পাওয়া যায়। দিদির ওড়নাটা ঠিক করে দেয় দুষ্টু," একদম রানী লাগছে দেখতে। এবার তোর শ্বশুরবাড়ির লোকজন এসে পড়েছে সুতরাং তোর আর বোর লাগবেনা।"
         এতক্ষণে অর্ককে পাওয়া গেলো, বিয়েবাড়িতে আনন্দে গা ভাসিয়েছে সবাই।
   " কি রে ওদিকে কি খবর? বর এলো?"দুষ্টু বলে।
" না ছোড়দি বরের গাড়ি আসছে পেছনে,এটা বরযাত্রীদের বাস।সবাই মোটামুটি এসে পড়েছে,শুধু পিসেমশাই আর দুজন আছে বরের গাড়িতে।"
                 দুষ্টু আর পারেনা বাইরে যায়। বাবা বাইরে দাঁড়িয়ে, জেম্মা জেঠু আর অন‍্য বরযাত্রীদের আপ‍্যায়ন করছে,মণিমা আর মাও আছে সেখানে।
     দুষ্টুকে দেখতে পেয়ে মধুমিতা জড়িয়ে ধরে," এই তো আমার সোনা মেয়েটা। আমি বলেছি বুঝেছেন দাদা তুই আমার মেয়ে ছিলি ওহ্ আমাকে যে কত হেল্প করেছে মার্কেটিং করতে।"
          দুষ্টুর মনে পড়ে যায় কলকাতার উত্তর দক্ষিণে ঘুরে বেড়ানোর সেই দিনগুলোর কথা।
         সবার কথার মধ‍্যে দুষ্টু দীপ্তকে খোঁজে,হাজার হোক বাবার ছাত্র হলেও ওদের গেস্ট গেলো কোথায়? তাছাড়া বর মহারাজই বা কোথায় দিদি তো বারবারই অন‍্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে।
      

এদিকে একটু একটু করে খাওয়াদাওয়া শুরু হয়ে গেছে,বরযাত্রীদের এসে পড়াতে বাড়ি একদম জমজমাট।হস্টেলের সামনের মাঠ থেকে পুরোটা জুড়ে প‍্যান্ডেল হয়েছে। মনে হচ্ছে ওদের কোয়ার্টার একটা রাজপ্রাসাদের অংশ।
           দীপ্তদাকে একটা মেসেজ করে দুষ্টু,সাথে মামা আছে ফোন না করাই ভালো..." কোথায় তোমরা? বরের গাড়ি কোথায়?
কোন উত্তর পায়না,উফ্ সবাই একরকম।নিশ্চয় এতক্ষণে বরের গাড়ি এসে গেছে তাই নিয়ে ব‍্যস্ত হয়ে পড়েছে। জেম্মাকে জিজ্ঞেস করতে যায় দুষ্টু একবার দেখে জেম্মা দিদির সাথে কথা বলছে।
          বাবাকে পেয়ে জিজ্ঞেস করে,"বাবা,বরের গাড়ি কই? আর মামু দীপ্তদা কোথায় গেলো?"
         রবীন একটু হলেও মেয়ের মনটা পড়তে পারে,সত‍্যিই দীপ্তকে না পাঠালেই ভালো হত।কতটুকু আর সময়ের জন‍্য এসেছে ছেলেটা এখানে একটু আনন্দ করতে পারতো।
       জোজোটা খুব সৌখীন,সত‍্যিই মিষ্টির সাথে ওকেই মানায়।দুজনেই সাজগোজ,গল্প ভালোবাসে।মিষ্টি আদুরে ভালো আদর পাবে সবার কাছে। মনের কথাগুলো এবার দুষ্টুকে বলে রবীন," আর বলিসনা,তুই শুনিসনি ঐ ছেলের নাকি গাড়িতে ফুল কম হয়েছে মানে ফুলের সাজ কম হয়েছে তাই বাইরে এসেই তার মনে হয়েছে আরেকটু সাজানো দরকার গাড়ি তাই কাকু আর পিসামশাইকে নিয়ে গাড়ি আরেকটু সাজিয়ে সে আসছে। ভাবিসনা অনেকটা আগে রওনা দিয়ে দিয়েছে বৌদি বললো।"
          বাবার কথা শুনে হাসে দুষ্টু," বুঝলাম আর সেইজন‍্য দীপ্তদা আর মামু রাস্তাতে রয়েই গেছে ওনাকে ওয়েলকাম জানাতে।"

*********************
     মধুমিতাকে পেয়ে রাণুরও ভালো লাগছে বারবার মনে হচ্ছিলো ও এখানে আনন্দ করছে আর দিদিভাই বাড়িতে একলা রয়ে গেলো,অবশ‍্য ননদ ছিলো আরো লোকজন ছিলো।
        মধুমিতার আজ মিষ্টিকে দেখে আর বিয়েবাড়িতে এসে বারবারই মনে হচ্ছে হাজার ওয়াটের বাতি জ্বালিয়ে যতই খুঁজে বেড়াক না কেন এত ভালো মেয়ে আর পরিবার পাওয়া যেতোনা। প্রথমটা একটু আপত্তি করলেও আজ মনে হচ্ছে ছেলে এবারের বায়নাটা ঠিক করেছিলো। পরিবার ভালো পাওয়াটাও বোধহয় একটা প্রাপ্তি আর তার প্রথম ভিত্তি হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা।

     বারবারই মধুমিতা ফোনে চোখ রাখছে গল্প আর জমজমাট আসরের মধ‍্যেও।জোজোর বাবাও বাইরে অপেক্ষা করছে, রবীনদাও একটু ব‍্যস্ত এতক্ষণ তো ওদের এসে যাওয়া উচিত। অদ্ভুত ভাবে ফোনগুলো নট রিচেবল বলছে। এ আবার কি কথা?
        দীপ্তও বারবার জোজোর ফোনে ট্রাই করছে, এতক্ষণ তো চলে আসা উচিত। বারবার দুষ্টু মেসেজ করছে জলদি চলে এসো বরকে একদম নিয়ে।এখানে কত মজা হচ্ছে। আজ হয়ত নিজেকে বারবারই দীপ্তর পাশে দেখতে ইচ্ছে করছে দুষ্টুর।
                        কৃষ্ণমামা বললো শেষে," চলো আমরা বরং গাড়িটা নিয়ে একটু এগিয়ে যাই। সত‍্যিই আমারও আশ্চর্য লাগছে কোন বিপদ আপদ যেন না হয়।"
       কথাটা হঠাৎই মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে কৃষ্ণর আর খারাপ খবরটাও হঠাৎই উড়ে আসে হাওয়ায়... প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে বরের সাজানো গাড়ি দেখলাম,আরেকটা গাড়িকে ধাক্কা দিয়েছে।অনেক লোকজনের ভিড়। সাইকেলে আসা একটা লোক কথাগুলো বলে যেন উড়ে গেলো হাওয়ায়।

      মুহূর্তের উড়ো খবরের ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যায় সব কিছুই বিয়েবাড়িতে। কৃষ্ণ আর দীপ্ত সাথে আরো দুজনকে নিয়ে বাড়িতে ফোন করেই এগিয়ে গেছে। দীপ্তর বুকের ভেতরে একটা অসহ‍্য কষ্ট হয়। কতবার বন্ধু বলেছিলো চলে আয় একসাথে যাবো,যেতে পারেনি। কি জানি কেমন আছে ওরা? জোজো ছাড়া তো আর কারো ফোননম্বর নেই। মিষ্টিকে সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে রাণু,ওর চন্দন ধুয়ে গেছে জলে। যাদের খাওয়া হয়ে গিয়েছিলো সেটুকুই বাদবাকি সব পড়ে।
      দুষ্টুকে আটকানো যায়নি কিছুতেই বাবার সাথে  গাড়ি নিয়ে আইডেন্টিটি কার্ড আর প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে রওনা দিয়ে দিয়েছে। যদিও রবীন চোখের জল আটকানো গলায় বলেছিলো.." তুই এদিকে থাক,সবাইকে সামলা তোর মা,দিদি।আমি অমলকাকু,দাসকাকু সবাই তো আছে।"
  " আমাকে যেতে হবে বাবা,বাধা দিয়োনা।"
      দুষ্টু পরপর থানাতে ফোন করতে থাকে নিজেদের পরিচয় দিয়ে যাতে কি হয়েছে? হসপিটালে যেতে হবে কিনা? সব ব‍্যবস্থা হয়।"
         চোখটা ঝাপসা হয়ে যায় দুষ্টুর, দিদি যে জোজোদাকে এতোটা ভালোবাসে কোনদিন বুঝতেই পারেনি,কোনদিন ওকে অজ্ঞান হয়ে যেতে দেখেনি এভাবে। শুধু অবাক হয়ে গেছে মধুমিতা জেম্মাকে দেখে..ঝড় সামলাতে সামলাতে মানুষ বোধহয় অদ্ভুত শক্ত হয়ে যায়। দিদিকে বারবার বলছে," তুই চোখ খোল মিষ্টি,আমার ছেলেটা ভীষণ ভালো কারো কোন ক্ষতি করেনি।সবাইকে খুব ভালোবাসে দেখিস ও ভালো থাকবে।আমি তোকে বরণ করে ঘরে তুলবো।"
        সবার আশ্চর্য লাগে ফোন ধরছেনা কেন ওরা? তাহলে কি সবাই? কান্না থামাতে পারেনা রাণুও শুভও যে ছিলো ঐ গাড়িতে।

****************
গাড়িতে ভেঙে পড়ে রবীন,এত শক্তভাবে সব সামলেছে জীবনে আজ কেন যেন ভীষণ অসহায় লাগছে। সন্তানের স্বপ্নের সাথে যে আরো কতগুলো মানুষ জড়িয়ে।
    " বেঁচে আছে তো ওরা দুষ্টু? শুভও তো ঐ গাড়িতে।"
     " বাবা একটু মন শক্ত করো,আমি দেখছি।"
     বাবার হাতটা শক্ত করে ধরে বসে দুষ্টু,রবীনের আশ্চর্য লাগে একটা সময় যে হাতটা ধরে হাটতে শিখিয়েছে মেয়েটাকে আজ সেখানেই নির্ভরতার আশ্বাস।এভাবেই হয়ত মানুষ বেঁচে থাকে উত্তরসূরীর মধ‍্যে।
ওখানে পৌঁছনোর আগেই থানা থেকে ফোন আসে দুষ্টুর কাছে," ম‍্যাডাম একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে,কাছের থানায় ফোন করে জানতে পেরেছি ওরা পৌঁছে গেছে ইতিমধ্যে।তবে কোন ডেথ হয়নি ম‍্যাডাম।"
        সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে ফোন করে দুষ্টু," জেম্মা মনে সাহস রাখো,দিদিকে, মাসিকে মাকে বোঝাও কোন খারাপ কিছু হয়নি।"
       দুষ্টুকে আজ যেন কান্ডারী মনে হয় ওদের সবার।হয়ত এমন একটা পদে ও আছে বলেই খবরটা পাওয়া গেছে।
       বিয়েবাড়ির সানাই অনেকক্ষণ থেমে গেছে,কিছু লোকজন চলে গেছে তবে অনেকেই আছে প্রতীক্ষায়। কে যে কাকে কিভাবে সামলাবে বুঝতে পারেনা।

খবরটা পেয়ে দীপ্তদা আর মামুকে ফোন করার চেষ্টা করে কিন্তু আশ্চর্য ফোন ধরছেনা কেন ওরা!ওদের তো পৌঁছে যাবার কথা এর মধ‍্যেই।
              এরমধ্যে আবার ফোন করে দুষ্টু থানায়,শোনে ওখানে খুব ঝামেলা হচ্ছে কিন্তু ব‍্যাপারটা কি সেটা বুঝতে পারেনা যতক্ষণ না ওখানে যাচ্ছে।ওরাও পরিস্কার কিছু বলতে পারেনা শুধু বলে কয়েকজন আহত একজনকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
    হাত পা আড়ষ্ট লাগে দুষ্টুর তাহলে কি জোজোদার কিছু হয়েছে? দিদির বিয়েটা কি আজ হবেনা?

*************
      এরকম একটা অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ‍্যে পড়তে হবে ভাবতে পারেনি দুষ্টু।দূর থেকেই দেখে জায়গাটা কুরুক্ষেত্র হয়ে গেছে। ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো গাড়িটা ফুল ছেঁড়া অবস্থায় একপাশে পড়ে।
চিৎকার শুনতে পায়.." আপনাদের ড্রাইভারের দোষ তার জন‍্য আমাদের পাত্র হসপিটালে, আমরা কিছু শুনতে চাইনা। ক্ষতিপূরণ চাই। আমাদের মেয়ে লগ্নভ্রষ্টা হবে নাকি? আমরা কিছুতেই বরের গাড়ি যেতে দেবোনা দরকারে এই বরকে নিয়ে যাবো বিয়ের আসরে তারপর বিয়ে দিয়ে দেবো।"

     অবাক হয়ে যায় দুষ্টু,জোজোদার কপাল দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে,পাঞ্জাবি ছেঁড়া। মেসোর পায়ে চোট এসেছে,পিসামশাই আর ভাই মোটামুটি ঠিকঠাক। ওদের ফোনগুলো ওরা ভেঙেছে।

           চিৎকার করে ওঠে দুষ্টু.." আপনারা থামুন,আগে দেখবো কার দোষ তারপর ঠিক হবে সব। আমি থানাতে ফোন করেছি আরো পুলিশ ফোর্স আসছে সবাইকে থানায় যেতে হবে যারা হামলা করেছেন এদের ওপরে।"

       " আপনি কে? এইসব বলার? এই গাড়ির ধাক্বায় আমাদের পাত্র হসপিটালে আমরা এই বরের সাথেই বিয়ে দেবো আমাদের পাত্রীর।"

         ওদের কথা শেষ হতে না হতেই একটা মেয়ের গলার আওয়াজ পাওয়া যায়.." আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে,আর আপনাদের উৎসব হবে তা হবেনা। ঠিক আছে আরেকজন তো আছে ধুতি পরা,ওনার তো বিয়ে না। আপনারা পাত্রকে নিয়ে যান। ওনাকে তাহলে বিয়ে করতে হবে।"
     অবাক হয়ে যায় দুষ্টু কনের শাড়ি পরা মেয়েটাকে দেখে।শেষে কনেও এসে গেছে স্পটে! এরা কি দিয়ে তৈরী? এত বেপরোয়া!

          ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে যায় দুষ্টু..দীপ্তদাকে ওরা ঘিরে ধরেছে ততক্ষণে। অদ্ভুত একটা নোংরা রাজনীতির গন্ধ পায় দুষ্টু।ততক্ষণে পুলিশ ফোর্স এসে জায়গাটা ঘিরে ফেলেছে..ওরা দুষ্টুকে ম‍্যাডাম বলার আগেই নিজের স্বমহিমায় সবাইকে চিনিয়ে দিয়েছে দুষ্টু।ওর পরিচয় শুনে ভিড় ততক্ষণে একটু হাল্কা হলেও জোজোদা আর দীপ্তদাকে ওরা ঘিরে রেখেছে।জোজোদার কপালটা রুমালে চাপা দেওয়া। ওরাও কেমন যেন চুপ করে গেছে কারো মাথা কাজ করছেনা।

          হঠাৎই দুষ্টু বলে ওঠে," আপনাদের গাড়ির ড্রাইভার আর গাড়িতে যারা ছিলো সবাই নেশা করেছিলো,পুলিশ তদন্ত শুরু করে জানতে পেরেছে।"

         " কিন্তু আমাদের পাত্র হসপিটালে,বাঁচবে কিনা জানিনা মেয়ের বিয়ের কি হবে?"

             দীপ্ত বা জোজো কাউকেই মুখ খুলতে না দিয়ে হঠাৎই নিজেদের মধ‍্যে কথা বলে দীপ্তকে ধরে টানে ওরা।

           দুষ্টু আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা,দীপ্তর হাতটা ধরে এসে.." কি করছেন আপনারা কি হচ্ছে এটা? উনি বিবাহিত...

       হঠাৎই অবাক হয়ে যায় সবাই । রবীনও একদম চুপ করে যায় দুষ্টুকে দেখে। আইনকানুন যে কোথায় পৌঁছে গেছে কে জানে? জোর করে একটা ছেলেকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিয়ে দেবে!
              
                 ভিড়ের মধ‍্যে থেকে কনের সাজে যে মেয়েটি এসে দীপ্তর সামনে দাঁড়ায় ওকে চিনতে একটুও ভুল হয়নি বলে চুপ করে গেছিলো দীপ্ত..রূপসী। ও করতে পারেনা এমন কোন কাজ নেই।
       মেয়েটি চিৎকার করে ওঠে," মানে? আপনারা অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন আর খেসারত দেবেননা? আমার বিয়ে ওনার সাথেই হবে।"

            " কার দোষে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে সেটা ঠিক করার জন‍্য পুলিশ আর আইন আছে। অযথা আইন হাতে তুলে নেবেননা। তাছাড়া উনি আমার স্বামী, আমাদের রেজেস্ট্রী হয়ে গেছে।"

            এতেও সব শেষ হয়না রূপসী দেখে নেবো,ভালো হবেনা। ওনাকে আমি ভালো করে চিনি বলে ফুঁসলেও দুষ্টুর তৎপরতায় প্রায় জোর করেই ওদের কনেকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে আহত পাত্রের সাথে বিয়েটা হসপিটালেই হলো। ওদের বেশ কিছু খরচ দিয়ে,জোজোর মাথায় ব‍্যান্ডেজ বেঁধে মেসোকে ফার্স্ট এড করিয়ে ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত্রি একটা।

        আনন্দের ঝাড়বাতি কখন যে নিভে গেছে বিয়েবাড়িতে,পুরো বাড়িটাই চুপচাপ।যে জোজোদা খবর তৈরি করে আজ সে নিজেই খবর।অথচ ওদের কোন দোষ ছিলোনা। অন‍্য সময় কত হাসে কথা বলে সে আজ চুপচাপ হয়ে গেছে। একটা অশান্তির সময় কাটিয়ে মাঝ রাতে ফেরা সবার বাড়ির দিকে। পুলিশের কিছু লোককেও সাথে নিয়ে এসেছে দুষ্টু ওরাই বললো প্রোটেকশন দরকার ম‍্যাডাম।
       তারপর থেকে দীপ্ত কোন কথা বলেনি,হঠাৎই আসা একটা ঝড়ে ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত।কেন যে ভগবান বারবার ওকে এনে অতীতের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় কে জানে! আবার সেই রূপসী এত বছর বাদে? দুষ্টু না থাকলে কি হত আজ!
     কিন্তু দুষ্টু এটা কি করলো? সবার সামনে ওকে বাঁচাতে কি বলে ফেললো?

           এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও বাড়ির সামনে অপেক্ষায় থাকা মানুষগুলোকে রবীন ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছে বরণডালা সাজাতে। জামাই আসছে তাই আবার বাজুক সানাই। চোখের জল মুছে ওরা বরণডালা সাজাতে থাকে,নতুন করে বাতিতে তেল দিয়ে জ্বলজ্বলে শিখায় প্রজ্বলিত করে মঙ্গলদ্বীপ। হাতে যে আর বেশি সময় নেই....মিষ্টির গালের মুছে যাওয়া চন্দনে তাড়াতাড়ি কল্কা তুলে দেয় পাশের পাড়ার মেয়েটা..জোজোর সেই কতদিনের সাধ মিষ্টিকে বৌ বেশে দেখার।
                 কালচিনিতে হস্টেলের সামনে এসে হাসির আভা দেখা দেয় জোজোর মুখে আজ যেন এক ট্রফি জিতে মাথা কেটে ঘরে ফেরার দিন।
          বিয়েবাড়ি থেকে ভেসে আসছে সানাইয়ের আর উলুর শব্দ।

******************

একটা বড় ঝড়ের পর সব গুছিয়ে দিতে যেমন সাহায‍্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসে অনেকেই রবীনের পাশেও তখন অনেকে এসে দাঁড়িয়েছে তার মধ‍্যে অধিকাংশ ছাত্রদল আর চাবাগানের বস্তীর কিছু ছেলেমেয়েও। এই বানরবাহিনী যে ইচ্ছে করলেই সমুদ্রে সেতু বাঁধতে পারে তা বুঝতে পারলো রবীন। বাড়ির সামনে গাড়ি আসতেই ফুলঝুরি বাজি পটকা আর বাজনার ঘটা লাগলো। কে বলবে এখন মাঝ রাত.. কিছু আগে বিয়েবাড়ি শুনশান হয়ে গিয়েছিলো।

        জোজোর মাথার ব‍্যান্ডেজটা টোপর দিয়ে ঢেকে দেয় আদরে রবীন,ওদের সঙ্গের বাক্স থেকে বের করে এরমধ‍্যেই পাঞ্জাবি বদলে দেওয়া হয়েছে জোজোর। জোজোর মনটা ভিজে গেলো হঠাৎই মনে হলো স‍্যার যেন সেই ছোটবেলার মত ওর জামার কলার ঠিক করে দিয়ে বলছেন.." আদরে একদম বাঁদর হয়েছিস,জামাটাও ঠিকমত পরতে পারিসনি।"

             ওদের গাড়িতে দুষ্টু আসেনি,এই গাড়িতে রবীন জোজো ওর পিসামশাই আর ভাই। দুষ্টু ইচ্ছে করেই ওর জন‍্য নির্দিষ্ট গাড়িতে উঠেছে,পুলিশের গাড়িটা পেছনে। একটু অবকাশ চায় এইটুকু পথে দুষ্টু, দীপ্তর সাথে ওকে কথা বলতেই হবে।

      এতটা লড়াইয়ে ও দেখেছে দীপ্তদার মুখটা অদ্ভুত ফ‍্যাকাশে যেন খুব ভয় পেয়েছে। এমনকি হসপিটালেও যায়নি দুষ্টুর সাথে। অবশ‍্য দুষ্টু থানার ওসিকে সঙ্গে নিয়ে আর অন‍্য লোকজনের সাথে গেছিলো।ওদের বারণই করা হয়েছিলো যেতে।কিন্তু দীপ্তদা অদ্ভুতভাবে চুপচাপ তখন থেকে যেন একটা ট্রমায় আছে।

      সত‍্যিই তো মেয়েটা কি অদ্ভুতভাবে হঠাৎই দীপ্তদাকে জোর করছিলো কেন? কোন বিয়েবাড়ির লোকজন এবং কনেও এমন মানসিকতার হতে পারে তা জীবনে এই প্রথম দেখলো দুষ্টু হয়ত চাকরি জীবনের প্রথমে এভাবেই দেখা শুরু..আরো কত কি দেখতে হবে জীবনে কে জানে? আর দেখার শুরু শেষে নিজের জীবন দিয়ে!

   যদিও আগে শুনেছে মানে শুনতেই হয়েছে তবুও আবার মেসো বলে,"জানিস আমাদের কোন দোষ ছিলোনা,গাড়িতে আরো কিছু ফুল লাগাতে একটু দেরি হলেও ড্রাইভারকে বলি একদম তাড়া না করতে..অত রাত্রে লগ্ন মানে আড়াইটার পরে লগ্ন এত তাড়ার কি আছে?

        বেশ গল্প আর মজা করতে করতে আসছি সবাই,মাঝে বৌদির সাথেও কথা হলো। আর তো বেশি দূর ছিলোনা বলতে বলতে আসছি উফ্ গিয়ে বড় বড় ছানার জিলিপি খাবো,জোজো লাফিয়ে উঠলো ওকে বকা দিলাম তোর বিয়ে তুই খাবিনা। হঠাৎই দেখলাম একটা গাড়ি আমাদের সাথে রেষারেষি করছে ভেতর থেকে উচ্ছ্বাস আর হাসির আওয়াজ। আমাদের গাড়ির পাশ দিয়ে যাবার সময় হঠাৎই জানলা দিয়ে কয়েকটা কাঁচের বোতল ছুঁড়ে দেয়,তারপর এসে ধাক্কা মারে আমাদের গাড়িতে।

     বোতল ফেলাটা আমাদের জব্দ করার জন‍্য কারণ আমাদের ড্রাইভার বারবারই ওদের পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছিলো। যদিও ওকে বকছি বারবার...তারমধ‍্যেই আমাদের টক্কর দিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একদম ধাক্কা।"

                   তারপরের আর আগের অনেকটাই জানা দুষ্টুর, বিয়েবাড়িটা বোধহয় কাছাকাছি ছিলো লোক জমতে শুরু করে।দেখা যায় বরের হাতে অসহ‍্য যন্ত্রণা মাথা ফেটেছে,দুএকজন আরো আহত ওরা ওদের হসপিটালে নিয়ে গেলেও জোজোদাদের দায়ী করে নিগ্ৰহ শুরু করে।ঘটনাটাতে রাজনৈতিক রঙ লেগে আগুন আরো ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এমনটা কখনো শোনেনি হবু বর আহত বলে বিয়ে ক‍্যানসেল করে অন‍্য বর বা তার বন্ধুর সাথে বিয়ে দিতে ক্ষেপে ওঠে সবাই এমন কি কনেও। ভেবেই গায়ে কেমন কাঁটা দিয়ে ওঠে দুষ্টুর,বিয়েটা কি একটা ব‍্যবসা?

           ড্রাইভার গাড়ি চালাতে চালাতে বলে," ম‍্যাডাম শুনলাম ঐ মেয়ে একদম সাঙ্ঘাতিক কি সব পার্টি টার্টি করে..ছেলেটাও তাই। আপনি না থাকলে কি যে হত! জোর করে হয়ত বিয়েটা দিয়েই দিতো। দুষ্টু অবাক হয়ে যায় তাহলে বরের কি হত? মানে অনেকটা টাকা পয়সার বিনিময়ে যাকে বিয়ে করলো হসপিটালে মেয়েটা?

      দুষ্টুর মনে একটা অদ্ভুত জেদ হয়ে যায়,আজ যা হলো হলো পরে একটু দেখতে হবে ব‍্যাপারটা কি? এতগুলো সমস‍্যায় মাথাটা ভার হলেও দুষ্টু জানে ওকে মাথা ঠিক রাখতে হবে।

     কিন্তু দীপ্তদা,এত কথার মধ‍্যে কোন কথা বলেনি, কয়েক ঘন্টার মধ‍্যে যেন অনেকটা আলাদা হয়ে গেছে দীপ্তদা। নাহ্ ওকেই মুখ খুলতে হবে,দুষ্টু লক্ষ্য করে বাড়ির কাছাকাছি প্রায় চলে আসছে ওরা।

   " দীপ্তদা প্লিজ মুড অন করো,কি হয়েছে বলো? আমরা বাড়ির কাছাকাছি চলে আসছি। তুমি কি চেনো ঐ মেয়েটাকে? তোমাকে দেখে হঠাৎ ও ক্ষেপে উঠেছিলো কেন? এমন কি নিজের ঠিক করা বরকেও ছাড়তে রাজি। শেষ পর্যন্ত মুক্তিপণই দিতে হলো প্রায়,এটা তো ক্ষতিপূরণ নয় সুযোগ পেয়ে ঘুষ আদায় করলো ওরা। আমি মানতে পারছিনা কিছুতেই এটা বিশ্বাস করো।"

         দীপ্ত কি করে বলবে দুষ্টুকে ওর জীবনের কালো অধ‍্যায়টার কথা যদিও স‍্যার কিছুটা জানেন। রূপসী আর শিশিরদা ওর জীবনটা দূর্বিষহ করে তুলেছিলো একটা সময় ভালোমানুষী করে ওর অভাব আর মেধাকে হাতিয়ার করে ওকে দলে টেনেছিলো।

     কিন্তু একটা সময়ে ওর ওপর আক্রমণের পর স‍্যার যখন বলেছিলেন দল থেকে তুই বাইরে আয় তোকে আবার মেধার আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে মাকে দেখতে হবে। স‍্যার নিজেও চেষ্টা করেছিলেন ওকে বাইরে নিয়ে আসতে হস্টেল থেকে কিন্তু অত সহজে রেহাই পায়নি দীপ্ত। 

সেদিনের কথা মনে করে আজও বুক কাঁপে দীপ্তর,ওর ছোট্ট ভাড়া করা ঘরে একদিন হঠাৎই রূপসী এসে ঢোকে পরনে শাড়ি,স্লিভলেস ব্লাউজ আর খোলা চুল...ঠিক আজকের মতই চিবিয়ে চোখ বড় করে বলেছিলো," দল ছেড়ে কোথায় যাবি? 

আমরা তোকে ছাড়বোনা এত সহজে।

অনেকদিন তোকে দেখছি আমি যদিও জানি শিশিরটা আমাকে ছাড়বেনা, তবুও তোর ঐ চওড়া ছাতি আর লম্বা শরীরটা আমাকে টানে।ইচ্ছে করে অনেক আদর করি তোকে। আমাকে আজকে ভরিয়ে দে আদরে আদরে এই দেখ আমার সারাটা শরীর তোকে চাইছে। দিবি তো বল? তাহলে তোর মুক্তি নাহলে এখনি চিৎকার করবো তুই আমাকে এখানে ডেকে...."

          কোথা থেকে গলায় এত জোর পেয়েছিলো সেদিন জানেনা দীপ্ত যাকে শিশিরদার সাথে বিছানায় যেতেও দেখেছে সে হঠাৎ এখানে এসে ওকেও..." তুমি এক্ষুণি এখান থেকে চলে যাও নাহলে আমি লোক ডাকবো।"

 তবে ওকে লোক ডাকতে হয়নি তার আগেই রূপসী চিৎকার করে লোক ডেকেছিলো নিজের শাড়ি খুলে আর ব্লাউজ আলগা করে।"

       ওর দলের ছেলেরা বোধহয় কাছাকাছি ছিলো,চরম হেনস্থা হয়েছিলো সেদিন দীপ্তর। শিশিরের চড় থাপ্পড়,রূপসীর চড় থাপ্পড় অপবাদ সবই জুটেছিলো।খবর গেছিলো রবীনের কানেও..রবীন বিশ্বাস করেনি,হয়ত স‍্যারের জন‍্যই সেই যাত্রা বেঁচে গেছিলো দীপ্ত। রবীন বলেছিলো.." পচা পাঁকে পা দিয়ে নিজের সারা শরীরে এভাবে গন্ধ ছড়ালি? যদি কোনদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারিস আমার সামনে আসবি নাহলে এ মুখ আর দেখাবি না কখনো।"

          হঠাৎই দুষ্টুর সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিলো দার্জিলিংয়ে চিনেও চিনতে চায়নি ওকে, অল্প কথা বলে পালিয়েছিলো। তারপর ওখান থেকে এখানে সেখানে করে আবার দুষ্টুর সাথে দেখা ততদিনে অনেকটা শুদ্ধ দীপ্ত। তারপর স‍্যারের সাথে দেখা,স‍্যারের চওড়া হাতের আশীর্বাদ একটু হলেও মনকে শান্ত করে।দুষ্টুর ছোঁয়া আবার স্বপ্ন দেখায় বুঝতে শেখায় পৃথিবীটা খুব সুন্দর, নীল আকাশ,সবুজ প্রকৃতি আর লাল পলাশের মাঝে দুষ্টুর একটু একটু মন ছুঁয়ে যাওয়া কথা আর হাসি দীপ্তকে ভালো রেখেছিলো মনে হয়েছিলো সব পারি। কিন্তু আজ আবার অতীত কেন এলো সামনে? তাহলে কি কোনদিনই ওর জীবন ভালো হবেনা? সবটাই মরীচিকা?

         দীপ্ত হঠাৎই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে..." রূপসী আমার অতীত,এতদিন বাদে সামনে এসে আবার মনে করিয়ে দিলো অতীতটা ইতিহাসের মত জীবন পাতায় লেখা হয়ে যায় মোছা যায়না।"

           শুভ দুষ্টুকে ইশারা করে,দীপ্তদাকে হঠাৎই ভেঙে পড়তে দেখে দুষ্টু নিজেকে আইএএস অফিসারের জায়গায় এনে একটা ধমক দেয়.." এসব কি হচ্ছে দীপ্তবাবু,কান্না ব‍্যাপারটা আমি পছন্দ করিনা।আই হেট টিয়ারস।"

         অন্ধকারে দীপ্তর একদম ঠান্ডা হয়ে যাওয়া হাতটায় হাত রাখে দুষ্টু.." আমি আছি তো,সব ঠিক হয়ে যাবে কাল থেকে এক নতুন সূর্যের আলো ধুয়ে মুছে দেবে সব কিছু।"

               বরের গাড়ি সামনে,তারপর ওদের গাড়ি পেছনে পরপর দুটো জিপ ততক্ষণে এসে একদম বিয়েবাড়ির সামনে। বাজি পটকা ব‍্যান্ডপার্টি সব বাজছে নিজের ছন্দে বাবার ছাত্রবাহিনী মোটামুটি কোলে তুলে নিয়ে জোজোদাকে নামিয়ে দিলো বরণের সামনে..হিপ হিপ হুররের মত সবাই বলে উঠলো আমাদের হিরো দাদাকে আর হাঁটতে হবেনা। সংবাদ মাধ‍্যমের কিছু লোকজনও এসে পড়েছে বেশ আগেই দুষ্টু অবাক হয়ে যায় এ এক অন‍্য বিয়ে,মেসোকে একটু বিশ্রামে পাঠিয়ে দুষ্টু দিদির কাছে যায়..দুশ্চিন্তা মাখানো মিষ্টির মুখে চোখে আরো গাঢ় করে মাখানো ভালোবাসার রঙ। সন্ধ‍্যে থেকে দীপ্ত আর দুষ্টুকে পাশাপাশি দেখবে বলে বায়না করছিলো। একটু ঝড়ে সব এলোমেলো হয়ে গেলেও যখন দেখলো দুএকটা ডাল ভাঙলেও বাগানটা ঠিকঠাক আছে তখন মিষ্টির মুখেও হাসি ফুটলো। দীপ্ত আর দুষ্টুর পাশাপাশি জোজোকে একটু দেখতে পারলে ভালো হত। দুষ্টুকে মিষ্টি বলতেই বলে..." একটু জেম্মা,জেঠুর আদর খাচ্ছে জিজুদা মানে জোজোদা। তুই এবার রেডি হয়ে নে জোজোদাকে ছাদনাতলায় আনার পর তোর ডাক পড়বে।"

            

        

                 
              
            
         

     

       

        

               
             
      

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...