Skip to main content

থট রিডিং

শীত আসার আগে থেকেই কুয়াশায় মন ঢাকা সুমেধার কেন যেন ভালো লাগছেনা মনটা কিছুদিন ধরেই। গত শীতের পর পরই গরমের আগে দিয়ে একদম নতুন বিয়ের পর কলকাতা ছেড়ে আসা এখানে অয়নের চাকরির সূত্রে। মানে হঠাৎই অল্প মন খারাপের গল্প,আচ্ছা কেন যে এমন হয়? 
  প্রথমটায় মনে হাল্কা খুশির পালকের ছোঁয়া ছিলো..শ্বশুরবাড়িতে সবাই বলেছিলো ভীষণ পয়া বৌমা,বিয়ের পরই ছেলের বিদেশে চাকরির অফারটা এলো। সত্যিই তো এদেশের চেয়ে ওখানে সবই বেশি বেশি মানে উন্নত জীবনযাত্রা বেশি মাইনে।
         সুমেধার হাবি অয়নের হোটেলের চাকরি, প্রথমে কিছুদিন হায়দ্রাবাদে কাজ করে এতদিন কলকাতার হোটেলেই ছিলো।তারমধ‍্যেই মা হঠাৎই পছন্দ করে ফেললো সুমেধাকে বুক ফেয়ারে গিয়ে। সত‍্যি মা পারে,বুক ফেয়ারে বই কিনতে গিয়ে গলায় ডোকরার লকেট ঝোলানো কপালে বড় টিপ আর কানে গণেশের মোটিফের দুল পরা সুমেধাকে হঠাৎই ভালো লেগে গেলো।
         অয়নের মা টুকটাক কবিতা লেখে আর ঐ গ্ৰুপেই নাকি সুমেধা লেখালেখি করতো।একটা বই প্রকাশ করতে এসেই দেখা। উঃ বাবা এতদিন চিরুনী তল্লাশির ফলে না পেলেও অবশেষে পাত্রী মিললো কুম্ভমেলায় না না থুড়ি বই মেলায়।
     সুমেধার অবশ‍্য প্রথমে খুব একটা বিয়ের ইচ্ছে ছিলোনা এক্ষুনি।তারপর ছেলে আবার হোটেলে কাজ করে। পরে অবশ‍্য অয়নের সাথে ডিনারে ওদের পাঁচতারা হোটেলে গিয়ে চমকে গেছিলো সুমেধা। ভাই তো তক্ষুনি বিয়ে ফাইনাল করে দেয় আর কি। তবে সুমেধাকে ইমপ্রেস করতে একটু সময় লেগেছিলো অয়নের ও বুঝেছিলো মায়ের পছন্দ করা খাঁটি বাঙালি সাজগোজ করা মেয়েটা একটু নাক উঁচু,নাকি খচু? কে জানে বাবা? হাসেও যেন মেপে মেপে।
       বাড়িতে এসে ভাইকে বকুনি দিয়েছিলো আচ্ছা করে সুমেধা," মহা হ‍্যাংলা তো তুই! তোকে নিয়ে যাওয়াই ঠিক হয়নি।"
         লন্ডনের আকাশ বড়ই মুডি অথবা সাদা বাংলায় বলতে গেলে খেয়ালী মনের আদুরে মেয়ে হঠাৎই তার মন মেঘলা হয় মনে জমে বাষ্প মানে ঐ ডিপ্রেশনের মেঘলা মন। কখন যে কি মুডে থাকে কে বলতে পারে।এই রোদ তো এই মেঘলা আবার কখনো বা ফ‍্যাঁচফেচে বৃষ্টি অথবা ঝিরঝিরে। যেটা সুমেধার একদম না পসন্দ,কোথাও বেরোলেই একটা ছাতা বগলে করে বেরোও।
অথচ কলকাতায় থাকতে তো এমন কুয়াশার ভিড় হতনা আকাশে আর মনে, বরং শীতের গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসার অপেক্ষায় ওরা বসে থাকতো পথ চেয়ে।মন বলতো শীত আসছে,শীত আসছে। উফ্ শীত আসা মানেই চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া অথবা ময়দানে ভিড় জমানো সাথে থাকবে কৌটো ভর্তি লুচি আলুরদম আর মন ভর্তি রঙীন বেলুনের আনাগোনা।
       অথবা শীতে মধুর দোকানের নতুনগুড়ের সন্দেশ আর তুলতুলে নরম লাল গরম রসগোল্লা। ভাবলেই মনে একটা আলতো খুশির ছোঁয়া। অফিস ফেরত বাবা এলেই ওরা বসে থাকতো বাবার হাতের ম‍্যাজিক বক্স থেকে আজ কি বেরোবে? নরম তুলতুলে রসগোল্লা নাকি জয়নগরের মোয়া? অনেক সময় অবশ‍্য ওরা দুই ভাইবোন মেতে উঠতো ফুলকপির সিঙাড়ার মুচমুচে স্বাদে আর সাথে মায়ের হাতের গরম আদা দেওয়া চা।
       বাবা সিঙারায় কামড় দিয়ে বলতো," লিপি তোমার চা আর সিঙাড়া নিয়ে বোসো আমাদের সাথে। সবাই মিলে বসে একজায়গায় খাই। আরে এইটুকু তো আনন্দ সারাদিনের কাজের ক্লান্তির পর।"
        ওরাও ডাক দিতো," এসোনা,মা একসাথে সবাই বসে গল্প করি।"
          গায়ের বাটিকের চাদরখানা জড়িয়ে মা এসে বসতো, শীতের আদরে আর আগুনের তাতে মায়ের গালে রাঙা আভা তখন। বাবা হাসতে হাসতে অফিসের গল্প করতো আর মা সারাদিন ওরা কি করেছে।বাড়িতে কে এসেছে,কাশীর মায়ের কামাই কত কথাই যে বলতো। আর পড়ার ফাঁকে ওদেরও হয়ে যেতো একটু সিঙাড়া ব্রেক।

          অয়ন বলে সুমেধা খুব ভাবুক,অবশ‍্য কবিরা বোধহয় এমনি হয়। সামনে কবিতার খোলা পাতায় আঁকিবুকি কাটে সুমেধা ওর অবসরে। ওরা হিথরো থেকে কিছুটা দূরে থাকে এই জায়গাটা বেশ নিরিবিলি, প্রতিবেশী আছে কয়েকজন ভারতীয় আসেপাশে তবে তাদের সাথে আলাপ তেমন হয়নি। মাঝে মাঝে এক আধটা গেট টুগেদারে ছোটখাটো হাই হ‍্যালো আর একটু আধটু কথাবার্তায় মনের ভাব বিনিময় হলেও বন্ধুত্বের ভালোবাসা এখনো তেমন জন্মায়নি। তাই অয়ন বাড়িতে থাকলে ওর সাথে বকবকুম আর না থাকলে কাজ কর্ম সেরে কবিতার খাতায়। 
   তার মাঝে একটা বিচ্ছিরি পঁচিশে ডিসেম্বর আর হ‍্যাপি নিউইয়ার কাটলো। হোটেলে কাজ করা ছেলেকে যে কি মরতে বিয়ে করেছিলো কে জানে।
    " তুমি নিউইয়ারে আর ইভে কখনোই থাকবে না?"
 " না হানি,টু আর্ন মানি আই অ্যাম বাউন্ড টু গো।"
     কথাটা বলেই তুলতুলে কম্বলের নরম আদরে সুমেধাকে জড়ায় অয়ন।
     " আমি একা একা থাকবো অ্যাপার্টমেন্টে! সবাই কত হইচই করবে চারদিকে। বিয়ের পর এই তো প্রথম শীতকাল আমাদের। কলকাতার শীতে কত মজা করতাম আমরা।কলকাতার শীত মানেই উড়ু উড়ু মন ঘুরু ঘুরু করার জন‍্য। আর এখানে কনকনে ঠান্ডা, উঃ! তারপর তুমি থাকোনা।"
       আদুরে গলায় আব্দারের সাথে বলে সুমেধা।
   " রুম হিটার চালিয়ে গরম হয়ে ঐ সময় তুমি বেশ কিছু বিরহের অথবা কনকনে ঠান্ডায় হ‍্যাঁচ্চোর কবিতা লিখবে।অথবা আমার মা মানে তোমার কবি শাশুড়ি বন্ধুর সাথে ভিডিও কলে গপ্প করবে। অন‍্যের চাকরি হানি, কি করবো বলো...উৎসবের দিনগুলো এভাবেই কেটে যায় আমার অন‍্যদের প্লেটে খাবার সাজানোর আয়োজন করতে।"
                " ঠিক আছে আর বলবোনা..তুমি প্লেটে খাবার সাজানোর ব‍্যবস্থা করো রান্নাঘরে বসে। আমি কবিতা লিখে সোশ‍্যাল সাইটে পোস্ট করি আর ফেসবুকে বসে থাকি।"
           ওদের খুনশুটির মাঝেই অয়ন মাকে ফোন করে..." মা এরপর দেশে গেলে সুমেধাকে কলকাতায় রেখে আসবো ভাবছি?"
    ওদিক থেকে মা বকুনি দেয়, ঠোঁট ফোলায় সুমেধা..." ও কি কথা? নতুন বৌ নিয়ে গেছিস। দুটিতে আছিস তো ওখানে বেশ। ওকে এখানে রেখে একা একা কি করবি শুনি?"
     " একা কোথায়? আমাদের ফ্রন্ট অফিসের রিয়ানা আছে তো ওর সাথে ফ্লার্ট করবো।"
        " ভালো হচ্ছেনা বলছি,মা দেখেছো তো? আমাদের শীতকালের বইমেলা নলেনগুড়ের সন্দেশ এগুলোই ভালো ছিলো,নতুন বর আর নতুন দেশের চেয়ে।"

           " মা বুঝলে ঐ যে বাবা বলতো না নারী চরিত্র বোঝা শিবেরও অসাধ‍্য আর তুমি দুগ্গা স্টাইলে চোখ বড় করে তাকাতে এরও তাই অবস্থা। অবশ‍্য বাবা বত্রিশ বছরে যা বোঝেনি আমি এই কয় মাসে আর কি বুঝবো? ব‍্যোম ভোলে।"
         সুমেধা এদিকে হেসে গড়িয়ে গড়িয়ে শেষে শুয়েই পড়ে অয়নের কোলে ওদিকে মাও হাসে..." বাবা ছেলের আমার শুধু রান্নার হাতই ভালো নয় সাথে মুখেও কিছু কথা টুপটাপ করে ঝরে।"
     " মা টুপটাপ করে ঝরেনা একদম দুমদাম করে থান ইটের মত পড়ে।হাত মুখ সবই চলে সমানে।"

*********************
        সত‍্যিই পঁচিশে ডিসেম্বর আর ফার্স্ট জানুয়ারী কোথা দিয়ে কেটে গেলো সুমেধার। সুমেধাকে অবশ‍্যই এক ঝাপ্পি খুশি দিতে অয়ন ক্রিশমাস ট্রী দিয়ে সাজিয়ে দিলো ঘর। খুশির ঝুলি নিয়ে স‍্যান্টাবুড়ো যখন এলো সব ঘরে তখন অয়নের প্রচুর চাপ..কেকের গন্ধে ভরপুর সব ক‍্যাফেগুলো। ঠান্ডাকে ভুলে,লন্ডনের রাস্তায় নেমেছে প্রচুর লোকজন। অয়নের ব‍্যস্ততা তুঙ্গে,তারমধ‍্যেই বারবারই মনে হলো নতুন বিয়ে করা বৌটার কথা।
       সুমেধারও বারবার মনে হলো অয়নের কথা তারপর একটা সময় বাবার কথা ভাবতে ভাবতে চোখ দুটো জড়িয়ে এলো ঘুমে। একটা সময় ওদের ছোটবেলায় ও আর ভাই ভাবতো সত‍্যিই স‍্যান্টাবুড়ো এসে মোজায় দিয়ে যায় গিফ্ট আর লজেন্স তবে পরে বুঝেছিলো বাবা আর মা জীবনের আসল স‍্যান্টা।ওরাই তো হাসিমুখে নিজেরা সব কম কম করে নিয়েও খুশি রাখতে চেষ্টা করে ছেলেমেয়েদের। কিছুক্ষণ গল্প করলো বাবার সাথে,মা আর ভাইয়ের সাথে তারপর একটা সময় ঘুমিয়ে পড়েছে।
                   ক‍্যাফের কিচেন সামলে অয়নকে যখন গাড়ি নামিয়ে দিলো তখন প্রায় সকাল হয় হয়।একটু বাদেই হয়ত খেয়ালী সূর্য উঠবে অথবা নাও উঠতে পারে। ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খোলে অয়ন আস্তে আস্তে,সুমেধা ঘুমোচ্ছে গুটিসুটি মেরে কম্বলে ডুব দিয়ে। নিজে ফ্রেশ হয়ে ঢুকে পড়ে সাবধানে কম্বলের উষ্ণ আদরে।

             এই করে নতুন বছরেও পা রাখলো সময়,একটু একটু করে ওদের বিয়ের মেয়াদও বাড়ছে। সুমেধাকে সুযোগ পেলেই নিজের মত করে ফ্রেঞ্চ কুইজিন করে খাওয়ায় অথবা পেনাল্টি দেয় বিলেটেড নিউইয়ার বা ক্রীশমাস সেলিব্রেট করে।
     " এই যে সুমেধা সুন্দরী ওদিকে গেস্ট আর এদিকে বৌ সব সামলাতে আমি কিন্তু হিমসিম এবার। মায়ের কাছে জেনে নিয়ে সিম বেগুনের পাতলা ঝোলটা খাওয়াও তো এবার।ধনেপাতা দিয়ে ঐ ঝোলটা কিন্তু দারুণ করতো মা।"
            সুমেধার অয়নের মায়ের ঝোলের কথায় একটুও রাগ হয়না।সত‍্যিই বোধহয় মায়েরা সেরা শেফ পৃথিবীর।ওরও তো খুব মনে পড়ে মায়ের হাতের বাটি চচ্চড়ি আর চিংড়ির বড়া আহা জিভে জল। বাঙালী বলে কথা সুতরাং খাওয়া তো থাকবেই।
    প্রবাসে সুমেধার নতুন সংসারে একটু একটু করে মন বসছে এখন।অভ‍্যস্ত হয়ে গেছে অনেকটা এখানকার জীবনে। উইকএন্ড বলে অয়নের তেমন কিছু নেই তবে অফ ডে তে অনেক জায়গা ঘুরেছে এর মধ্যে।তবে লন্ডনের সিটি লাইফের থেকে কান্ট্রিসাইডে লঙড্রাইভে যেতে বেশি ভালো লাগে সুমেধার।
      স্ত্রী চরিত্রের খুঁটিনাটি দিক একটু একটু করে পড়তে চেষ্টা করে অয়ন।বুঝতে পারে সুমেধা সাধারণ মধ‍্যবিত্ত ঘরের মেয়ে ছোট থেকে ছোটছোট পাওয়া পেয়ে অভ‍্যস্ত। চিজ কেকের থেকে মুচমুচে সিঙাড়া ভালোবাসে। ফিস ফ্রাইয়ের থেকে বেশি পছন্দের কুমড়ো ফুলের বড়া।

                দুদিন বাদেই ভ‍্যালেন্টাইন ডে,এই দিনটা নিয়ে সুমেধার একটু আলাদা ফিলিংস আছে।অয়নকে বলেছে.." কলেজে যখন পড়ি সবাই এই দিনটাতে গিফ্ট কিনছে,ডেটে যাচ্ছে। কলকাতা খুশির বেলুনে সেজেছে। একটা সময় বাড়াবাড়ি মনে হলেও পরে ভালো লাগতো জানো।"
     অয়ন ওর ভাসা চোখদুটোতে চোখ ভাসিয়ে বলে.." কি ভালো লাগতো? ডেটে যেতে ইচ্ছে করতো? মানে গেছো কখনো?"
           " সেটাই তো হলোনা,ভাবলাম বিয়ের আগে একটু প্রেম করবো তাও হলোনা। সাত তাড়াতাড়ি বিয়ে,ধুৎ।"
        অয়ন মিটমিট করে হাসে," এখন প্রেম করো যতখুশি। কে বাধা দিচ্ছে...?"
       " ইশ্ বাড়িতেই থাকেনা,সব স্পেশাল ডেতে হোটেল আর হোটেল। তুমি ছুটি নিতে পারবে সেদিন?"
     " নো হানি, তবে চলে আসবো তাড়াতাড়ি। প্রমিস,তারপর শুধুই প্রেম।"
     " ইশ্ ছাড়ো, আমি তো ভেবেছিলাম লঙ ড্রাইভে যাবো দূরে কোথাও।"
    " অন‍্য কোন দিন অফ ডে তে যাবো।আমাদের তো সব দিনই প্রেমের দিন। তাইনা?"
    " শুধু কথায় ভোলানো সবসময়।"রাগ করে সুমেধা।

    ********************

      সকালে উঠেই সেলফোনটায় চোখ যায় অয়নের তার আগেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে হঠাৎই মনে হয়েছিলো খুব ঠান্ডার মধ‍্যেও কোথাও যেন বসন্তের উঁকিঝুঁকি দেখতে পাচ্ছে।প্রেমের মরসুম আর লাল বেলুনের ছড়াছড়ি অনেকের মত ওর মনেও। যদিও কার্ড,গোলাপ সবই আসবে আজ সুমেধার জন‍্য তবুও ফিরতে সেই দেরি হবে আজও ক‍্যাফে সামলে। মাঝে মাঝে সত‍্যিই খারাপ লাগে এমন একটা চাকরি করে যে সবার যেদিন আনন্দের দিন সেদিন ওর কেটে যায় আনন্দ বিলোতে তবুও উপায় নেই...জব বলে কথা।
                      অনেক আদরে সুমেধাকে ভুলিয়ে কোটটা টেনে নিয়ে পা বাড়ায় অয়ন।সুমেধা আজ একটা লাল পোশাক পরেছে খুব সুন্দর লাগছে ওকে। এগিয়ে যেতে যেতেও আবার একবার তাকায় অয়ন সুমেধা হাত নাড়ে। 
    ওদের নেবার স্মিথ আর জোনা দুজনে বেরোচ্ছে খুব সুন্দর লাগছে ওদের,একটু উষ্ণতার জন‍্য রাস্তায় বেরিয়েই প্রেমের দিনে ঠোঁটে ঠোঁট রাখে ওরা। সুমেধার দিকে নজর যেতেই ওকে হাত নাড়ে জোনা একটা উড়ন্ত চুমু দূর থেকে উপহার দেয় ওকে।
          সুমেধার মনে হয় ইশ্ এমন করে যদি ও আজ সারাদিন অয়নের সাথে থাকতে পারতো!
                সারাদিনে দুটো কবিতা লিখেছে সুমেধা, দুটোই অয়নের জন‍্য। তারপর ওর পছন্দের মাছ আর চিকেন রান্না করে নিজের সাথে প্রেম করে ফেসবুক দেখে সময় কাটিয়েছে।
       তখন বেশ অনেকটা রাত,অয়নের তাড়াতাড়ি আসার প্রমিস যথারীতি আজও গোল্লায় জানে সুমেধা। কারণ উনি টেক্সট করেছেন আজও দেরি হবে সুমেধা যেন জেগে বসে না থাকে। তাই বিছানায় এসে শরীর এলিয়ে দিয়ে টিভি দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে...
          ঘুমের মধ‍্যে হঠাৎই স্বপ্ন দেখে সুমেধা নলেনগুড়ের পায়েস হচ্ছে,চারদিকে গন্ধ ছড়িয়েছে। নাকি গুড়ের রসগোল্লার গন্ধ! কোথা থেকে যে আসছে বুঝতে পারছেনা। কতদিন সেই মুচমুচে সিঙারা ফুলকপি দিয়ে খায়নি...হঠাৎই ঘুমের মধ‍্যেই শুনতে পায় কে যেন ডাকছে..." ওঠো ওঠো আমি এসে পড়েছি।সেই কতক্ষণ।"
                   আদরের ছোঁয়াটা খুব চেনা,অয়নকে বাধা দেয়না সুমেধা। অয়ন ওকে তুলে বসিয়ে দেয়.." আমি ছুটতে ছুটতে এলাম আর কেমন ঘুমোচ্ছে দেখো। হাঁ করো তাড়াতাড়ি তবে একবারে গিলে ফেলোনা।"
       নরম তুলতুলে গরম নলেন গুড়ের রসগোল্লা,একদম বাবা যেমন আনতো ঠিক তেমনি। এভাবেই তো ওকে কতদিন ঘুমিয়ে পড়লে ঘুম থেকে ডেকে খাওয়াতো।
     " কি মধুর দোকানের মত হয়েছে? নরম তুলতুলে গরম রসগোল্লার মত এভাবেই নতুনগুড়ের গন্ধে মাখামাখি হয়ে থাক আমাদের প্রেম।"
           অবাক হয়ে যায় সুমেধা.." তুমি বানালে? এখন? আর এত কথা কোথায় শিখলে?"
    " কবি মায়ের ছেলে,বৌও কবি,জবে শেফ তাই মুখ আর হাত দুই চলে সমানভাবে। আরে সিঙাড়াটা খাও বেশি করতে পারিনি,তাড়াতাড়ি করে তবে সবই শুধু তোমার জন‍্য।"
           সুমেধা কিছু বলতে পারেনা আজ যে শুধুই ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে অয়নকে। আর অয়ন হাল্কা উঁচু করে কলারটা,নাহ্ একটু হলেও সুমেধার মনটা বুঝতে পেরেছে। আসলে মেয়েরা একটু ভালোবাসা চায়,ওটুকু পেলেই বোধহয় অনেক কিছু করতে পারে। তবে সুমেধার মুখে বহুবার বাবার এই ম‍্যাজিকটার গল্প শুনেছিলো তাই আজ একটু চাপ হলেও চুপিসারে রসগোল্লা বানিয়ে একদম ওর মনের গোলাপবাগানের চারধারে ঘোরাঘুরির ব‍্যবস্থাটা পাকা করে নিলো।
            সুমেধার ঘুমভাঙা মুখটা বড্ড মিস্টি লাগে দেখতে অয়নের,তারপর আবার মিস্টি খেয়েছে। এখনো রাত শেষ হতে দুঘন্টার বেশি বাকি। সুমেধার আদরের চাদর গায়ে জড়িয়ে নিতে নিতে অয়ন ভাবে.. না না স্ত্রী লোকের মনের নাগাল পাওয়া এমন কিছু কঠিন নয় আসলে বুঝতে চাইলে বোধহয় সবই সহজ। হয়ত সেভাবে মেয়েমানুষের মন পড়তেই চায়না কেউ,টেকেন ফর গ্ৰ‍্যান্টেড করেই কাটিয়ে দেয় জীবন।
  
সমাপ্ত:-
  
     
           


      
          

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...