#রাগে_অনুরাগে#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
"সত্যিই একটা মানুষের সাথে বিয়ে হয়েছিলো বটে! সারাটা জীবন জ্বালিয়ে মারলো আমাকে। কখনো শান্তি দিলোনা গো জীবনে।শোনো আজকে মুড়ি আছে মুড়িই খাও।আজ রুটি করতে পারবোনা,মানে রুটি হয়নি।"
প্রত্যেক দিনের মত আজও শান্তির গলা শোনা যায় একতলা থেকে।ওপরে তখন হাতে ঝাড়ন নিয়ে ড্রেসিং টেবিল পরিস্কার করছে রুণা কদিন না ঝাড়লেই মাকড়সার জাল পড়ে যায়।শঙ্খ তখনো বিছানায় গড়াগড়ি করছে.." উফ্ একবার যাও তো নিচে। মা সবসময় এত চেঁচামেচি করে যে কেন? একটু বাদেই বলবে মাথা ধরেছে তারপর শুয়ে পড়বে।বোধহয় আবার প্রেসার বেড়েছে।"
রুণা জানে শাশুড়ি মায়ের মাথা গরম কেন আজ কদিন হলো মালতীদি কাজে আসছেনা। ও যদিও একটু বেলায় রান্নাঘরে ঢুকবে তবুও সকালটা মা সামলায়।
আর বাবা সকালের জলখাবারে রুটি ছাড়া কিছু খেতে চাননা এই নিয়ে গন্ডগোল। রুটি করতে ওদের কারো ভালো লাগেনা তাই ঠিক হয়েছে এই কদিন সকালে মুড়ি পাউরুটি এই দিয়েই চলবে,আর ছেলেমেয়েদের জন্য ম্যাগি সেদ্ধ বা কর্ণফ্লেক্স অথবা ডিমের ওমলেট আর পাউরুটি।
নিচ থেকে আওয়াজ ক্রমাগত বাড়ে শঙ্খর বিরক্ত লাগে।ছুটির দিনেও শান্তি নেই কিন্তু সাহস করে বলতেও পারেনা। বাবা যে কথা জোর গলায় বলছে ওর সাহস নেই। এই সাত সকালে রুণাকে ক্ষেপিয়ে লাভ নেই শেষে কেঁচো খুড়তে..... ওরে বাবা নারী চরিত্র বড়ই জটিল কিছুই বুঝতে পারবেনা....ঐ একটা গান আছেনা মানে ওরা কোন ল মানেনা তাই ওদের নাম ললনা।
দরকার নেই তার থেকে কানে বালিশ দিয়ে আরো আধঘণ্টা শুয়ে গড়ানো ভালো। এই তো সপ্তাহে একটা দিন ছুটি তাই মুড অফ করবেনা। তবুও আরেকবার ভালোমানুষী করে বলে," তুমি বাবাকে একটু বোঝাও,সত্যিই তো মায়েরও বয়েস হয়েছে।আর কত পারবে? তোমার কথা তো বাবা শোনে।"
" কেন গো তোমার বাবাকে তুমি বোঝাও,মায়েরও অবশ্য দোষ আছে একটু বুঝিয়ে বললেই তো হয়। একেই তো বাবা কানে কম শোনে তারপর কি শুনতে কি শুনেছে কে জানে? আমার হয়েছে যত জ্বালা।"
" আমারও কি কম জ্বালা! একদিকে মা বাবা বৌ আবার তার সাথে ছেলেমেয়েও আছে।"
" এই শোনো সকালে উঠে মাথা গরম কোরোনা।ছেলেমেয়েদের কোন ঝামেলা দেখো তুমি শুনি? আর মা তো এখনো নিজের সবটা সামলে নেন। তবে দাপট তো কম না।আমি বলেই টিকে গেলাম।"
শঙ্খ দেখলো চটিয়ে লাভ নেই রুণাকে তাই মগজাস্ত্রই ভরসা সুতরাং মধুমাখা গলায় বললো.." তাই তো বলছি বাবাকে গিয়ে একটু বোঝাও।নাহলে দুটো রুটি করে দিয়ে এসো। না খেয়ে থাকলে সুগার বাড়বে।"
বরের দিকে একটা বজ্র দৃষ্টি হেনে চটি ফটফটিয়ে নিচে নেমে আসে রুণা।দেখে শ্বশুরমশাই গজগজ করছে মুড়ির বাটি পিটপিটিয়ে দেখছে একপাশ থেকে তাকিয়ে।শাশুড়িমা ছ্যাঁকছোঁক করে নিরামিষ তরকারি ছাড়ছেন কড়াতে আর তার সাথে মনের রাগ মেটাচ্ছেন ইচ্ছেমত বাক্যবাণে।
রুণা এসে শ্বশুরমশাইয়ের সাথে মুড়ির বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করে," বাবা শোনো,মালতীদি আসছেনা তুমি জানো তো? মায়ের প্রেসারটা বেড়েছে। সকালে আমার অনেক কাজ থাকে,সেই একটা দিন ছুটি তো আমারও।তোমার ছেলে এখনো বিছানায় দুটোদিন একটু কষ্ট করো।"
" আমি মুড়ি খাবোনা,সাথে মিস্টি নেই কিছুনা। শুকনো বাদাম দিয়ে মুড়ি খাবোনা।"
" তোমার সুগার জানোনা? পাউরুটি বা ম্যাগি খাবে?"
" আমার অ্যাসিড হবে,ওতে সুগার বাড়বে আরো।"
কথাটা ফেলে দেওয়ার নয়,এত বোঝানোর চেয়ে দুটো রুটি করে দেওয়া ভালো। গুটিগুটি রান্নাঘরে ঢুকে আটার কৌটো নামায় রুণা।
শান্তি চেঁচামেচি শুরু করে.." একদম না বৌমা,ওর জেদটাই বড় হলো তাই তো?"
" মা তুমি শরীর খারাপ কোরোনা এমন করে,বাবার মত মানুষ পেয়েছিলে তবুও ভালো।এমনিতে বাবা খুব চুপচাপ। তোমার ছেলের মত না।"
বৌমার কথার ইঙ্গিত বোঝে শান্তি,তারমানে ছেলে ওর মত। অবশ্য অনেকটাই তাই,যাই হোক তবুও বলে," তুমি কি করে জানবে?যে ঘর করেছে সে জানে কি জিনিস! একদম মিচকে। ঐ কথায় বলেনা মুখে নেই রা পর্বতে মারে ঘা।"
শ্বশুরমশাই কানে কম শোনেন এই রক্ষে তবুও উঠে এসেছিলেন.." কি এত গজগজ করছো শুনি?"
"দেখেছো তো বৌমা,এই লোকের সাথে ঘর করে কত সুখ? ঝগড়াও করা যায়না ঠিক মত। এত কথা বললাম একটাও মাথায় ঢুকলোনা। যার সাথে কোন কথা বলে সুখ নেই তার সাথে থাকা আর না থাকা।"
" অমন বলবেন না মা বাবা আপনাকে ভালোবাসেন খুব। কত খেয়াল রাখেন আপনার।"
" স্বার্থপর বৌমা,এত বছর এই সংসারে আছি বলে কি করেছো তুমি?"
পরম শান্তিতে রুটিতে কামড় দিয়ে প্রমথ হেসে বলেন," সত্যিই তো সারা জীবন শুধু চেঁচিয়েই গেলে ভাগ্যিস বৌমা ছিলো তাই সকালে গরম রুটিটা পেলাম।"
" দেখেছো বৌমা,এ নাকি কানে শোনেনা? আমার তো মনে হয় ইচ্ছে করে কালা সেজে থাকে।"
শঙ্খ এসে মাকে ঠান্ডা করে," মা প্লিজ চুপ করো,আমার আর ভালো লাগেনা নিত্য অশান্তি। সবাই জানে তুমি কি করেছো সংসারের জন্য বাবা বলুক আর না বলুক কি এসে যায়?"
আঁচল দিয়ে চোখের জল মোছে শান্তি,প্রমথ রুটি চিবোতে চিবোতে দেখে কিন্তু কিছু বলেনা দেখে আরো রাগ হয়। মনে মনে ভাবে সারাদিন বৌমা আর বৌমা,যেন বৌমাই সব। এদিকে অসুখে চিৎপটাং হয়ে পড়ে রইলে সব সামলাতে হয় তাকেই।
তবে প্রমথকে মনে মনে গালাগাল করতে করতে যে নিজেই ঠাকুরঘরে খালিপেটে পুজো দিতে গিয়ে চিৎপটাং হবে তা ভাবেনি শান্তি। সকালে উঠে খেতে বললেও কিছুতেই কানে যায়না শান্তির। অনেক বলাতে কোনক্রমে এককাপ লিকার চা আর একখানা মারী বিস্কুট খান,আজ চেঁচামেচি করতে গিয়ে চা ঠান্ডা হয়ে গেছে আর খাওয়া হয়নি।
রুণা যথারীতি রুটিযুদ্ধ থামিয়ে একেবারে ছেলেমেয়ের জলখাবার আর শঙ্খর পাউরুটি টোস্ট নিয়ে ওপরে উঠে গেছিলো।তারমধ্যে শাশুড়িমাকে বলে গিয়েছিলো রুটি দুটো বাড়তি আছে উনি পুজো সেরে যেন খেয়ে নেন।শঙ্খ বাজারে গেছে উনি কলঘরে ঢুকেছেন। এরপর পুজোর ঘরে প্রায় একঘন্টা কাটবে।
রুণা জামাকাপড় গোছানোর ফাঁকে পুজোর ঘন্টার টুংটাং শুনতে পায়। গুবলু আর মুন্টি পড়ছে পড়ার ঘরে।ওদের খাওয়া হয়েছে কিনা একবার উঁকি মেরে দেখে রুণা,তখনো দুধের গ্লাস ফাঁকা হয়নি দেখে রুণা তাড়া দেয়।
" এই তাড়াতাড়ি খা,খেয়ে নিয়ে সব নিচে রেখে আসবি।পড়ার টেবিলে আমি যেন কিছু না দেখি।"
**********************
'' মা তাড়াতাড়ি এসো নিচে,ভাই,দাদু....."
মেয়ের চিৎকারে রুণা তাড়াতাড়ি নেমে আসে নিচে সাথে গুবলু।
মুন্টি শান্তিকে তোলার চেষ্টা করছে,বারবার ডাকছে," ও ঠাকুমা চোখ খোলো।দাদু দেখোনা ঠাকুমা কথা বলছেনা। তুমি কেন রাগালে তখন ঠাকুমাকে।"
প্রমথ একপাশে দাঁড়িয়ে মৃদু গলায় ডাকে," শান্তি তুমি চোখ খোলো,তাকাও। আর তোমাকে জ্বালাবোনা যা দেবে তাই খাবো।"
শ্বশুরমশাইকে দেখে হঠাৎই কেমন যেন মনটা ভারী হয়ে যায় রুণার কে বলবে এই মানুষটা খানিক আগে মাকে এত রাগিয়ে দিয়েছিলেন। তবে তাড়াতাড়ি করতে হবে এখন,খুব তাড়াতাড়ি শঙ্খকে ফোন করতে হবে।পাশের বাড়িতে অনিলকে গুবলুকে ডাকতে বলে রুণা চেষ্টা করে শাশুড়িমায়ের জ্ঞান ফেরাতে।জিভের তলায় ট্যাবলেটটা দিতে চেষ্টা করে। উঃ কোথা থেকে যে কি হলো….....
শান্তির মুখটার দিকে তাকাতে পারেনা প্রমথ,কিচ্ছু ভালো লাগছেনা।কেন তাকাচ্ছেনা আর কথা বলছেনা শান্তি? এরচেয়ে ঐ ঝগড়ুটে শান্তিই অনেক ভালো।
অনেকটা ধকল শরীরের ওপর দিয়ে গেলেও সেই যাত্রায় শাশুড়িকে বাড়ি ফেরাতে পারবে জেনে অনেকটা স্বস্তির শ্বাস ফেললো রুণা। ওর বিয়ে হয়েছে প্রায় বাইশবছর। তবে মা হয়েছে একটু দেরিতে। এই এতদিন ধরে গুবলু মুন্টিকে তো উনিই সামলেছেন। বাড়িতে যে একটা গার্জেন মানে নিজের লোক থাকা কতটা জরুরী তা বুঝেছে রুণা।একসাথে থাকতে থাকতে ঘটি আর বাটিতে যে ঠোকাঠুকি হয়নি তা নয়।তবুও হঠাৎ ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যাওয়া ওর সংসারটা যে আবার ছন্দে ফিরছে ধীরে ধীরে এটাই শান্তির।
এই কয়েকটা দিন শঙ্খর বকুনি খেয়ে শ্বশুরমশাই একদম চুপ হয়ে গেছেন।রুণা বকলো শঙ্খকে," বাবাকে এত বোলোনা,মা একটুতেই উত্তেজিত হয়ে যায়। এমনিতেই উনার মনটা ভালো নেই,মা কতগুলো দিন হসপিটালে।একদম একা হয়ে গেছেন মানুষটা।"
শঙ্খকে বকলেও রুণা বুঝতে পারে সব মেয়ের জীবনেই বোধহয় কিছু স্বপ্ন থাকে নিজের জীবন নিয়ে। আর না পাওয়া থেকেই বোধহয় সৃষ্টি হয় নানা অভিযোগ আর উত্তেজনা,রাগ,দুঃখ অনেক কিছুই। হয়ত বা মায়ের জীবনেও এমনি কিছু না পাওয়ার গল্প আছে যা বাবা কখনো পড়তে চাননি,হয়ত বা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছায়।
অথচ ছোট ছোট ভালোলাগা গুলো একটু দেখলেই হয়ত মিটে যায় কত সমস্যা। কিন্তু তা আর হয় কতটা? শঙ্খকে বললেও বলে "বাবা...স্ত্রী চরিত্র বোঝা শিবেরও অসাধ্য।"
ভীষণ রাগ হয় তখন রুণার..." বুঝতে না চাইলে আর বুঝবে কি করে? চিরকাল তো বুঝিয়েই এলে।"
*******************
অনেকদিন বাদে নিজের ফেলে যাওয়া সংসারে দূর্বল পা দুটো আস্তে আস্তে ফেলে শান্তি। শঙ্খ আর নাতি ধরে রেখেছে তাকে। এ যেন এক নবজন্মের পর আবার পা ফেলা সংসারে।
" মা সামলে পা রাখো,খুব আস্তে ভয় নেই আমি ধরে আছি।"
শান্তির চোখদুটো তখন এদিক ওদিক খুঁজছে একজনকে। সত্যিই তো মানুষটা গেলো কোথায়? এতদিন বাদে ফিরছে বাড়িতে অথচ একবারও সামনে এসে দাঁড়ালোনা!
ভাবতে ভাবতেই হঠাৎই দেখতে পায় ঠাকুরঘর থেকে বেরিয়ে আসছে প্রমথ।ইশ্ কদিনে বড় শুকিয়ে গেছে মানুষটা। হাতের পুজোর থালায় পঞ্চপ্রদীপ আর সাদা লাল ফুল সাজানো প্রমথর।শান্তিকে দেখে সেই ঊনপঞ্চাশ বছর আগে এই বাড়িতে প্রথম পা দেওয়া দিনটার কথা মনে হলো। সেদিন ছোট্ট লাজুক নববধূ শান্তি প্রমথর সাথে পা রেখেছিলো বাড়িতে আজ ছেলে আর নাতির হাত ধরে এলো।আহা বড় ক্লান্ত আর বিধ্বস্ত যেন মুখটা।কতদিন বাদে দেখলেন,এই কদিন ছেলে তো যেতেই দেয়নি বলেছে.." তোমার বয়েস হয়েছে, ইনফেকশন হতে পারে কি দরকার যাবার।আর ঝামেলা কোরনা।"
গুটিগুটি পায়ে পুজোর থালা নিয়ে এগিয়ে আসেন প্রমথ,পুজোর পর শান্তিই সবাইকে মঙ্গল আরতির ছোঁয়া দিয়ে আশীষ মাখাতো। আজ তিনি একটু আরতির ছোঁয়া আর ফুল ঠেকাবেন শান্তির মাথায়। তবুও একটু সঙ্কোচ হয় তাই দিদিভাইকে বলেন..." তোর ঠাকুমাকে এই আরতিটা একটু দিয়ে দে মাথায়।"
" বাবা আপনিই দিন মাথায় ঠেকিয়ে মাকে।"
প্রমথ এগিয়ে এসে আরতির ছোঁয়া শান্তির মাথায় মাখিয়ে দিয়ে বলেন.." এসো শান্তি,এই কদিন বড় ফাঁকা লাগছিলো বাড়িটা।"
হয়ত এই কথাটা শান্তিও শুনতে চেয়েছিলেন তাই মনে হলো সবটাই ভুল বোঝা নয়, হয়ত মন পড়তে পারে লোকটাও। আর কটা দিনই বা বাঁচবেন এবারই তো মরতে বসেছিলেন,নাহ্ আর ঝগড়া করবেননা।
*********************
মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা মাস শান্তি অনেক সুস্থ এখন তবে রুণার কড়া নজরে প্রাণ যায় যায়। মোটামুটি রান্নাঘরে ঢুকতে দিতে আর চায়না রুণা তার সাথে মালতীও আছে...ক্যানকেনে গলায় বলে," ভাগ্যিস ফিরে এয়েছো মাসিমা,নাহলে কি যে অপরাধী হয়ে থাকতুম আমি।"
সামনের সপ্তাহে শান্তি আর প্রমথর বিয়ের ঊনপঞ্চাশ বছর পূর্ণ হবে। শান্তি না করলেও রুণা শোনেনা ঐ দিনটা একটু ভালোমন্দ রান্না করে।
এবার বিছানায় শুয়ে রুণা বলে," এই শুনছো,এবার মা বাবার অ্যানিভার্সারিটা একটু বড় করে করবো।"
" সেটা তো সামনেবার করার কথা পঞ্চাশবছরে।"
" আরে পঞ্চাশে তো পা রাখছে আবার কি? মা যা ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলো। তুমি একটু মালাটালা জোগাড় কোরো।আর কয়েকজনকে একটু বলবো।"
" জো হুকুম,আমি কিন্তু বুঝতে পেরেছি তোমার মনের কথা। আর কিছু বলবোনা।"
সকাল থেকেই রান্নাঘরে ব্যস্ত রুণা শান্তি এবার আর কোন বারণ করেনি। প্রমথ এসে বলে," কি ব্যাপার বলতো? বৌমা এত কি করছে রান্নাঘরে?"
মনে মনে রাগ করে শান্তি বলে নেকু একটা নাকি বুড়ো বয়েসে ভীমরতি হয়েছে কে জানে?
মাথার ঘোমটাটা তুলে একটা প্রণাম করে প্রমথকে ঠাকুর ঘর থেকে বাইরে এসে।
প্রমথর মুখে হাসির ছোঁয়া..." ও এবার বুঝেছি।"
" সবই বোঝো,শুধু মুখে বললেনা কোনদিন।"
*****************
মুন্টি,গুবলু দাদুর হাতে আর ঠাম্মার হাতে মালাটা ধরিয়ে দেয়।দাদু এবার মালাবদল হবে কিন্তু।প্রমথর মুখে হাসি,শান্তির মুখে লজ্জার ছোঁয়া..." বৌমা যে কি সব করেনা।"
ততক্ষণে সবাই সমবেত আওয়াজ দেয় হয়ে যাক। প্রমথ শান্তির গলায় মালাটা পরিয়ে দেয় ওরা হইহই করে ওঠে,গুবলু ছবি তুলতে তুলতে বলে.." ঠাকুমাকে কিছু বলো দাদু।"
মুন্টিও বলে ওঠে.." হ্যাঁ দাদু প্লিজ কিছু বলো। মানে আই লাভ ইউ।"
প্রমথ হেসে বলেন," তোমাকে খুব ভালোবাসি শান্তি শুধু দুঃখ একটাই তুমি কোনদিন বুঝলেনা।"
শান্তি আস্তে আস্তে বলে.." ইশ্ আদিখ্যেতা, মরণ।" তবে আজও মনের ভেতরটা কেমন যেন একটা মিস্টি অনুভূতিতে ভরে ওঠে সেই প্রথম ফুলশয্যার রাতের মত।
হৈ হৈ করে ওঠে সবাই।
সবার হাততালির মধ্যে শঙ্খ রুণার কানে কানে বলে," উরিব্বাস বাবা তো একেবারে ওভারবাউন্ডারি মারলো গো এই বয়েসে।"
" শেখো,শেখো কিছু বাবার কাছ থেকে। এটাই তো জীবন,যতদিন আছি এভাবেই ভালোবেসে থাকবো পাশাপাশি বাবা মায়ের মত।"
" যতদিন আছি মানেটা কি?"
রুণাকে ভীষণ ভালোবাসতে ইচ্ছে করে শঙ্খর। হয়ত বিয়ের দিন,জন্মদিন,ভালোবাসার দিন আলাদা করে না পালন করলেও চলে তবুও ঐ আর কি কিছু হ্যাপি হ্যাপি ভাইবস্ দেয় এই দিনগুলো। তাই শুধু পাশাপাশি থাকা নয়,মন পড়তে পারাটাও বোধহয় জরুরী।
সব সারতে বেশ অনেকটা রাত হয়ে যায় ঘুমিয়ে পড়েছিলো রুণাও শঙ্খর কাছ ঘেঁষে। বাইরের রোদের আভা বলে দেয় সকাল হলো..হঠাৎই শুনতে পায় নিচ থেকে মায়ের গলা ভেসে আসছে।এই লোকটাকে নিয়ে আর পারিনা।
শঙ্খ বলে," আবার!"
রুণা বলে,অনুরাগের পর রাগ।"
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment