Skip to main content

সীতাহারটা

#সীতাহারটা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
অর্ণাদের পুরোনো বাড়ি খড়দহতে গঙ্গার ধারে ।যদিও এখন ওরা মানে ও, বাবা আর মা কলকাতাতেই ওদের বাগুইহাটির ফ্ল্যাটে থাকে। তবুও বাবার খুব ইচ্ছে একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা সুতরাং খড়দহ থেকেই বিয়েটা হোক। তাছাড়া সাগ্নিকদের বাড়িও তো নৈহাটি সুতরাং একদিক দিয়ে ভালোই হবে,অসুবিধার কিছুই নেই। যতই কলকাতায় ছোট একটুকরো পাখির বাসা থাকুকনা কেন শিকড় তো সেই খড়দহতেই।ওখানেই ঠাকুর মন্দির আর আত্মীয়স্বজন আর ওদের মাঝেই বড় হয়ে ওঠা তাই ছোটবেলার স্মৃতি আর মাটির টান বলে তো কিছু একটা আছেই।
                          যদিও অর্ণা কিছু না বললেও মৌমি একটু আপত্তি করেছিলো," ইশ্ এখানে ফ্ল্যাটে মেয়েটা বড় হয়েছে।আমার আর ওর সব বন্ধুবান্ধব তো এখানেই তা এখান থেকে বিয়ে না দিয়ে সেই টেনে নিয়ে যাচ্ছো খড়দহতে।ওখানে এক গাদা আত্মীয়স্বজন,খরচ কত বাড়বে হিসেব আছে?"
        "তা বাড়ুক,একমাত্র মেয়ে আমাদের আর তো তেমন কোন অনুষ্ঠান নেই ওর বিয়েটা ছাড়া।বাবা মা আছেন তাছাড়া আমাদের প্রতিষ্ঠিত বিগ্ৰহ নিত‍্যানন্দ মহাপ্রভু আছেন তার সামনেই মেয়ের বিয়ে হবে। গঙ্গাতে জল সইবে তোমরা,বাজনা বাজবে,পাড়ার মেয়ে বৌরা সব একজায়গায় হবে।ভেবেই তো আমার খুব ভালো লাগছে।"

      " হুঁ যতসব ব‍্যাকডেটেড কালচার,বলো ব‍্যান্ডপার্টি বাজবে দুমদাম করে। আমার বিয়েতে দেখিনি ওহ্ বাপরে! প্রথমে তো আমার পিলে চমকে উঠেছিলো, কলির বিয়েতেও তো তাই হলো।"
     অর্ণা বলে ওঠে,  " আমার তো বেশ ভালো লাগে মা।বেশ একটা হিন্দি মুভি মুভি ব‍্যাপার।"
        যাক যত কথাই মৌমি বলুক শেষে কর্তার ইচ্ছেতেই কর্ম হলো ঠিক হলো ওখান থেকেই বিয়ে। সুতরাং কেনাকাটা শুরু করতেই হবে আর তো বেশিদিন নেই । যদিও মৌমি চায়নি এত তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ে দিতে কিন্তু সাগ্নিকের মায়ের শরীরটা খুব একটা ভালো যাচ্ছেনা কিছুদিন ধরেই তাই ওরাই একটু তাড়া দিচ্ছে বিয়ের জন‍্য।
               সকাল থেকেই কর্তাকে তাড়া দিচ্ছে মৌমি," আজ কিন্তু গয়নার দোকানে যাওয়া আছে,তোমার মনে আছে তো? সময় পেলে একদম বেনারসীটা কিনে নেবো বুঝলে।"
       একটু গা ঢিলে দেয় প্রতাপ,গয়নার দোকানে যেতে কোনদিনই খুব একটা ভালো লাগেনা ওর..সেই কিছু পুরোনো গয়নাকে জলে দিয়ে নতুন গয়না কেনা আর ক্ষতি বলতে অনেকটা সোনা বাদ আর তার সাথে মেকিং চার্জটাও। কি যে হুজুক নতুন ডিজাইন কেনার? একটা গয়না কি শুধুই গয়না? মানে এক ডেলা সোনা? কত অনুভূতি তাতে জড়িয়ে থাকে সেটা যার গয়না সেই জানে। 

     গতকাল শোনার পর থেকেই মনটা একটু খারাপ প্রতাপের মৌমি প্রতাপের মায়ের দেওয়া আশীর্বাদের সীতাহারটা ভাঙতে চায়। অনেকদিনই অভিযোগ করেছে বিয়ের পর থেকেই মৌমি.." কি একটা জবরজঙ্গ ডিজাইন গো,একগাদা পাথর বসানো, আর তেমন সোনাও নেই এতে। আজকাল কি এসব কেউ পরে নাকি? তোমার মা যেমন! যত সব পুরোনো মাল আমাকে গছিয়ে দিয়েছে।কে জানে কোন দোকানের জিনিস,এর কতই বা ভ‍্যালু হবে?"
           " মৌমি আশীর্বাদের মূল‍্য কি টাকাতে হয় নাকি? কত শুভকামনা জড়িয়ে থাকে এতে। আর গয়নার দোকানের বিল সমেত তোমাকে দেবে নাকি?"
    " সেটাই দেওয়া ভালো বুঝেছো,তাহলে অন্ততঃ পরবর্তীতে সুবিধা হয়। অবশ‍্য তোমার মায়ের কবেকার পুরোনো গয়না।কোথায় পাবে তার বিল?"
          " এই হারটা ছোটবেলায় মাকে পরতে দেখেছি,কি সুন্দর লাগতো মাকে দেখতে!"
        " তুমি চুপ করো,বিয়ের প্রথম প্রথম দুএকবার পরেছি। কোন অনুষ্ঠান হলেই তো মা বলতেন,' বৌমা ঐ হারটা গলায় দাও।তোমাকে খুব সুন্দর মানায় ওতে।' নিজের পুরোনো হারখানা আমাকে দিয়ে খুব সুন্দর মানায়! একটা বলে দিলেই হলো। এখন তো প্রায় কুড়ি বছর লকারেই পরে আছে। আর ইচ্ছেই করেনা পরতে,অনেক হয়েছে আর নয় এবার ওটাকে ভাঙবো।"

              মৌমি একদম ডিটারমাইন্ড ঐ হারখানা ভেঙেই অর্ণার বিয়ের গয়না মানে একটা স্টাইলিশ হার কিনবে। অবশ‍্য খুব ভালোই জানে ওটা নামেই হার কতটা কি আছে বলা মুশকিল হয়ত পাল্টাতে গিয়ে আর্ধেক সোনাই ওরা বাদ দেবে।সে নাহয় থাক দোকানে গিয়ে দেখা যাবে কি হয়? 

      কথায় বলেনা যার বিয়ে তার মন নেই পাড়া পড়শীর ঘুম নেই।যত জ্বালা হয়েছে তার,মেয়ে আর মেয়ের বাবার কোন চিন্তাই নেই। দিনরাত অফিস করছে আর মোবাইল নিয়ে খুটুর খুটুর। আর বাবা তো ভোলানাথ ওখানে সবই ভাই সামলাবে বলে নিশ্চিন্তে বসে আছে গোঁফে তা দিয়ে।
       দুই কুড়ের কেউ যেতে চায়না গয়নার দোকানে । একজনের তো নাকি গয়না পরতেই ভালো লাগেনা পরিস্কার বলেছে.." মা কি দরকার অত খরচের! কয়েকটা কস্টিউম জুয়েলারি কিনে দাও।আর ঐ টাকাটা আমাকে দিয়ে দাও। আমি ইচ্ছেমতো খরচ করবো। ঘুরবো,ফিরবো,ব‍্যাঙ্কে রাখবো। অযথা একদিনের জন‍্য অত খরচ করে কি লাভ? সেই তো বন্ধ কুঠুরিতে পড়ে থেকে হাঁফিয়ে উঠবে গয়নাগুলো। পরতে তো পারবোনা,শুধু ভাববো আমার আছে।"
                   অবশ‍্য মৌমির নিজের ঝাঁপিতেও কম গয়না নেই তবে সব মেয়েকে দিয়ে দিলে নিজে পরবে কি? মৌমির রুচির প্রশংসা সর্বত্র,নিত‍্যনতুন শাড়ি,গয়নায় বিয়েবাড়িতে চমক দিতে খুব ভালো লাগে ওর। আর মেয়েটা হয়েছে উল্টো,নাকে কানে গলায় কোথাও কিছু নেই। গয়না পরলে নাকি গা চুলকোয়। অনেক কষ্টে রাজি করালেও গলাতে তো কিছু পরাতেই পারেনা কানে একটা টিনের ঝোলাদুল পরে চললো। অথচ এই বয়েসে মৌমির কানে দুল,গলায় একটা চেন,হাতে চুড়ি অথবা বালা থাকতো।
                  তবুও যখন শুনেছে মৌমি সাগ্নিকদের বাড়ি থেকে ওর হাতের মাপ চেয়েছে বারবার বলে দিয়েছে" শোন গয়না কেনার সময় হোয়াটস অ্যাপে ছবি পাঠিয়ে দিতে বলবি আগে দেখে নিবি ডিজাইন।"
   " মা তুমি যে কি না! আমাকে নিয়েই যাবে ওরা বালা আর আঙটি কিনতে।মামণির শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা। আর একটা হার আর কি কি সব দেবে ওগুলো আছে ওদের।"
      মনে মনেই বিড়বিড় করে মৌমি সেই নিশ্চয় শাশুড়ির গয়না কেস ওর মতোই। শাশুড়ির পুরোনো গয়না নতুন বৌকে দেওয়া। 
       তবে নাহ্ বালা আর আঙটির ডিজাইনটা সত‍্যিই সুন্দর।তার সাথে লোহাটাও,যাক ওদের পছন্দ আছে।মেয়ের পাঠানো ছবি দেখে কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছিলো মৌমি।

        তবে ও ঠিক করে নিয়েছে আর পুরোনো গয়নার জঞ্জাল বাড়িতে জমিয়ে রাখবেনা। সব এক্সচেঞ্জ করবে যা বাদ দেয় দেবে,যত্তসব ব‍্যাকডেটেড ফ‍্যাশন।

       মৌমির তাড়াতে অর্ণা আর প্রতাপ দুজনেই তৈরি হয়ে নিয়েছে। মৌমি হাতব‍্যাগটা ভালো করে গুছিয়ে নেয় আরেকবার, হ‍্যাঁ ঠিকঠাক নিয়েছে সব কিছু বাক্সে গুছিয়ে।
                " হ‍্যাঁ গো,কার্ড সঙ্গে রেখেছো তো। এই গয়নাতে তো কিছুই হবেনা মনে হচ্ছে তবুও যেটুকু পাওয়া যায়। যাইহোক সঙ্গে নিয়ে নাও কার্ডগুলো।"
       প্রতাপ ঘাড় নাড়ে," হ‍্যাঁ সব নিয়েছি চলো যাই এবার।আমার ভালো লাগেনা গয়নার দোকানে যেতে।মেয়েকে নিয়ে গেলেই তো হত।"
        গজগজ করে মৌমি,অর্ণা বাবার হাতটা জড়িয়ে বলে," আমার বাবা না গেলে হবেইনা কিছু।"
             ওদিক থেকে সাগ্নিকের ফোন আসে কথা বলাতে ব‍্যস্ত হয়ে যায় অর্ণা.." এই বেরোলাম,একটা বোরিং কাজ করতে মানে গয়না কিনতে।"
    " বিয়েটা সই করে করে নিলেই বেশ হতো তাইনা? এত ঝামেলা থাকতোনা।তারপর চলে যেতাম হানিমুনে কোথাও একটা অনেক দূরে।"
          অর্ণা ব্লাশ করে," আচ্ছা দোকানে গিয়ে কনফিউসড হলে তোমাকে ফোন করবো।"
       " ধ‍্যাৎ আমি ঐ সব বুঝিনা,তোমার মা বাবা তো আছেন।"
            ******************
কলকাতার বিখ‍্যত গয়নার দোকানের সামনে গাড়ি থামে। মৌমি গয়না দেখায় মন দিয়েছে,আগে দেখবে পছন্দ করবে তারপর এক্সচেঞ্জের কথাটা বলবে।কারণ জানে এখনি হারটা বার করলে প্রতাপের মুখ কালো হয়ে যাবে,মুড অফ করে বসে থাকবে।

      একটার পর একটা হার ওরা সাজিয়ে রেখেছে এরমধ‍্যে অনেকগুলো গলায় পরিয়ে দেখেছে মেয়ের। একটা সময় মেয়ে আর না পরতে চাইলে নিজেই গলায় ফেলে দেখেছে.." আচ্ছা দেখো এটা ঠিক আছে? আমি আগে ট্রায়াল দি তাহলে দেখতেও পারবে তোমরা।"
      শোরুমের মেয়েটা ওদের বিক্রেতাসুলভ ভঙ্গীতে প্রশংসা করে ওঠে," এটা কিন্তু আপনাকে দারুণ মানিয়েছে ম‍্যাডাম খুব লেটেস্ট আর আনকমন।মেয়ের বিয়েতে এখন মায়েরা মেয়েদের মতই সাজে, দারুণ লাগে দেখতে। আপনার জন‍্য এটা নিন।"
      একটু গদগদ মুখে প্রতাপের মুখের দিকে তাকায় মৌমি প্রতাপ যথারীতি অন‍্যদিকে তাকিয়ে চা খাচ্ছে।মেয়ে ঘাড় নাড়ে," দারুণ, নিয়ে নাও।"
        যাক অনেক করে দুটো নেকলেশ পছন্দ হয় সাথে চূড়,আঙটি আর দুল।
              মৌমি এবার ব‍্যাগ খুলে বাক্সটা বের করে,প্রতাপের হঠাৎই চোখ পড়ে যায় বাক্সটাতে।মায়ের কাছে শুনেছিলো রূপোর ওপর মিনে করা এই বাক্সটা শখ করে বাবা কখনো রাজস্থান থেকে এনেছিলেন। প্রতাপেদের ভাইবোনদের খুব লোভ ছিলো এই বাক্সটার ওপর,মা বাক্সটা খুললেই ওরা বসতো মায়ের কোলের কাছে।ঐ বাক্সে রাখা আতরের শিশি থেকে মা দুএক ফোঁটা ছড়িয়ে দিতো,এখনো সেই গন্ধ নাকে ভাসে। ওর বিয়ের সময় নেকলেশ শুদ্ধ,বাক্সটাও মা মৌমিকে দিয়েছিলো .." বড় বৌমাকেই দিলাম এটা,বাড়ির প্রথম বৌ।তোর তো খুব পছন্দ ছিলো বাক্সটা।"
       তারপর মৌমিকে দেখেছে এতে গয়না রাখতে,ভালো লাগতো প্রতাপের।কেমন যেন মা মা একটা গন্ধ মাখানো বাক্সটা,আর তার সাথে মাখানো ছেলেবেলার স্মৃতির গন্ধটাও।
       বাক্স থেকে নেকলেশ আর খুচখাচ গয়না গুলো শোকেসের ওপর রাখে মৌমি," এগুলো এক্সচেঞ্জ হবে।অবশ‍্য জানিনা এতে হবে কিনা? দেখুন কি হয়, বাকিটা কার্ডে দেবো।"
          হারটা দেখা মাত্রই দোকানের মেয়েটা হাতে নিয়ে ঝুঁকে দেখে পাশের দুজনও এগিয়ে আসে।নিজেদের মধ‍্যেই বলাবলি করে ওরা..." অনেক আগের জিনিস,কিন্তু কি সুন্দর ডিজাইন দেখেছিস। দাঁড়া একটা ছবি তুলে রাখি।"
          অর্ণার একটু বিরক্ত লাগে ওদের ভাবভঙ্গী দেখে তাই বলে," একটু তাড়াতাড়ি করবেন আমার কিছু কাজ আছে।"
      প্রতাপও বলে," হ‍্যাঁ শুনুন,এখনি ওটা ভাঙবেন না।জাস্ট টেস্ট করে বলুন সোনাটা ভালো তো? আর ভ‍্যালুয়েশন কেমন হতে পারে?"
                 মৌমির একটু রাগ হয়,না গলিয়ে কি করে বলবে ওরা? অত পাথর আছে,সত‍্যি একটু পালিশও করে দেয়নি হারটা। কেমন যেন আজব কথা বলে প্রতাপ!
          কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ওরা ভেলভেটের ট্রেতে করে নিয়ে আসে হারটা.." ম‍্যাডাম, এটার কিছুই বাদ যাবেনা। অনেক বছর আগে এই দোকান মানে আমাদের মেন শোরুম থেকে কেনা হয়েছিলো হারটা। তখন তো এই শোরুম ছিলোনা। আর স্টোনগুলো অরিজিনাল পান্না আর চুনী।মোটামুটি এই হারের টাকায় অন‍্য গয়নাগুলো হয়ে যাবে শুধু মেকিংটা লাগবে....."
         হঠাৎই অর্ণা বলে ওঠে," দেখি দেখি হারটা একবার এদিকে।আমি তো কোনদিনই এটা পরতে তোমাকে দেখিনি মা। আচ্ছা দেখতো আমাকে কেমন লাগছে?"
        হারটা পরে চট করে একটা সেল্ফি তোলে অর্ণা। প্রতাপের চোখটা ভরে যায় ছোটবেলায় দুর্গা পুজোর সময় মাকে দেখতো এই হারটা পরতে,কি যে সুন্দর লাগতো দেখতে!
           " খুব সুন্দর লাগছে তোকে একদম মা দুর্গার মত।" হঠাৎই মুখ থেকে কথাগুলো অবাধ‍্য হয়ে বাইরে চলে আসে।
           " তাহলে মা এই হারটা পরেই আমার বিয়ে হবে। আর অন‍্য হারটা তোমার জন‍্য থাক।"
           মৌমি কিছুই বলতে পারেনা যে হারকে এতদিন জঞ্জাল বলে মনে করেছে তার মূল‍্যই এতদিন বোঝেনি কখনো। আজ অর্ণা আর জহুরীর এই দোকান ওর চোখ খুলে দিলো।
       প্রতাপের মুখে আজ অদ্ভুত একটা পরিতৃপ্তির হাসি। বারবারই মনে হলো,গয়না শুধুই গয়না নয়।প্রতি গয়নার পেছনে থাকে কত গল্প।
      খুশি হয়ে মৌমির জন‍্য পছন্দ করা হারটা আরেকবার ওর গলায় পরিয়ে দিয়ে বলে," তোমার হারটা তুমি দিয়ে দিলে এটা বিয়েতে পরবে তুমি।আমার খুব ভালো লাগবে।"
            শো রুমের মেয়েটা বলে," খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এক্সচেঞ্জ করলেও এই হারটা ভাঙা হতোনা।অ্যান্টিক জুয়েলারি হিসেবে পলিশ করে রেখে দেওয়া হত।আসলে এখন তো অনেকটাই মেশিনের কাজ। এমন কারিগর আর কই?"
                 হোয়াটস অ্যাপে সাগ্নিককে ছবিটা পাঠায় অর্ণা...ওদিক থেকে উত্তর আসে," একদম রাণী লাগছে তোমায়,জাস্ট ফিদা হয়ে গেলাম।"

***************
মাঝে কেটে গেছে বেশ কিছুদিন,আজ অর্ণার বিয়ে। সেজেগুজে ঠাম্মার ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে অর্ণা। ওর ঠাকুমা নিরুপমা দেবীর পরনে লাল পাড়ের গরদ হাতে শাঁখা পলা আর বালা.." আয় আয় দিদিভাই,ওমা! এযে একদম দুগ্গাঠাকুর। দেখি নাকখানা,ও মেয়ে এই নথটা পরিয়ে দাও তো দেখি ঠিক করে আমাদের বংশের নিয়ম টানা নথ ছাড়া বিয়ে হয়না।"
                পরনে লাল বেনারসী,কপালে চন্দনের আল্পনা আর টানা নথে অনন‍্যা অর্ণা। ওর গলায় ঝিলিক দিচ্ছে সেই সীতাহারটা, পালিশে আরো ঝকঝক করছে।
    নাতনীর কানে মুখ রাখেন নিরুপমা," তোর বাবা হবার সময় সাধে তোর দাদু দিয়েছিলো আদর করে,প্রথম সন্তান আসছে তো তাই। আহা এমন রূপেই তো এই মণিহার সাজে। দাদুভাই তো আজ চোখই ফেরাতে পারবেনা।"
               পাশ থেকে দাদু হেসে ওঠেন," ইশ্ কয়েকবছর আগে হলে মালাবদলটা আমিই করতুম তোর সাথে।"
              বাইরে সানাইয়ের সুর বাজছে,প্রতাপের মুখে হাসি হয়ত এই সুখটুকুর জন‍্যই এখান থেকে বিয়েটা দেওয়া। মৌমিও মেয়েকে দেখে চোখ ফেরাতে পারেনা,মেয়েটা শুধুই লক্ষ্মীমন্ত নয় বুদ্ধিমন্তও বটে। ও ছিলো বলেই তো শাশুড়িমায়ের সাধের সীতাহারটা বেঁচে গেলো নইলে যে কি হত?
   অর্ণার গলার অন‍্য হারগুলোর মধ‍্যে রয়ে গেলো নিরুপমাদেবীর যত্নে আগলে রাখা স্বামীর দেওয়া হারখানা আর তার সাথে আশীর্বাদ... "জন্মজন্মান্তরে সুখে থেকো দিদিভাই,তোমার আঁচলে বাঁধা থাক সুখের ঘরের চাবির ঝাঁপি।"

সমাপ্ত:-
           

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...