Skip to main content

আয় ঘুম যায় ঘুম।

#আয়_ঘুম_যায়_ঘুম#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

বাজারের থলেটা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন অনিরুদ্ধ, ভালোবেসেই হোক বা বাধ‍্য হয়েই হোক এই কাজটা এখনো করে যেতে হচ্ছে নিয়মিত তাকেই।
অবশ‍্য এখন এটা অবসরের অভ‍্যেস,ভালোই লাগে বাজারে যেতে তার মত কয়েকজন অবসর প্রাপ্ত ঝঞ্ঝাটহীন অথবা সংসারের ঝঞ্ঝাটের সাথে দেখা হয় আলুপটল কেনার ফাঁকে। একটু রাজনীতি বা বাজারের দ্রব‍্যমূল‍্য বৃদ্ধির গল্প হয় মাছ কাটাতে কাটাতে ঐ টুকুই এখন খোলা জানালা দিয়ে আসা ফুরফুরে বাতাসের মত।মানে একসাথে ওয়াক,সাইড টক আর কেনাকাটা সবই হয় টুকটাক করে। নিজেকে সংসারের ঝঞ্ঝাট বলাতে একদিন খুব বকুনি খেয়েছিলেন মিনুর কাছে.." সারাদিন বাড়িতে বসে থেকে মাথাটা গেছে,কে তোমাকে ঝঞ্ঝাট মনে করে শুনি? না আছে যৌথ পরিবার। না আছে ছেলেবৌমা যে তাদের সাথে কোন অশান্তি। সেই পড়ে আছে ছেলেটা কোন বিদেশে,দুবছরে একবার আসে। আর বৌমা তো এখনো হয়নি। আর আমি তোমাকে ঝঞ্ঝাট মনে করি বুঝি?"
     " আরে মনে করবে কেন? তোমাকে তো কম সামলাতে হয়না আমার জন‍্য। সারাজীবন তো জ্বালিয়ে গেলাম তোমায়।"
   " তাহলে স্বীকার করছো? অবশ‍্য সারাজীবন নয়,বিয়ের আগে মাকে জ্বালিয়েছো।"
       মিনু জানে মায়ের কথা উঠলেই কত কি মনে পড়বে অনির। মায়ের হাতের সবই নাকি ভালো,মায়ের পিঠে পায়েশ,মায়ের শুক্তো চচ্চড়ি আর মায়ের হাতের মালপোয়া। যদিও মিনু অনেক কিছুই শিখেছে শাশুড়ি মায়ের কাছে তবে জানে অনি ভালো বললেও একবার তো আসবেই মায়ের কথা। ভালো লাগে মিনুর,রাগ হয়না।আসলে ও নিজেও তো মা আবার মেয়েও বটে। এইভাবেই তো বেঁচে থাকে মায়েরা তাদের মমতা,রান্না আর আদর জড়িয়ে রাখে সন্তানকে অনেক অনেক বছর পরেও। বহু বৃদ্ধ মানুষকে দেখেছে মিনু মায়ের রান্নার কথায় নস্টালজিক হয়ে পড়তে। বাবাকেও তো দেখেছে ঠাকুমার রান্নার গল্প উঠলেই বার্ধক‍্যেও মুখটাতে হাসির ঝিলিমিলি রেখা খেলে যেতে।
           মিনুর শাশুড়িমার কাছ থেকে শুধু রান্নাই নয় সেলাইও শিখেছে মিনু। ভীষণ শখ ছিলো উনার সেলাইয়ের এখনো ট্রাঙ্ক খুললে ন‍্যাপথলিনের গন্ধ মেখে উঁকি মারে উনার সেলাই।যত্নে সাজিয়ে রেখেছে থরে থরে মিনু। অনিরুদ্ধ সেগুলোকে রোদে দিলে একটু নাড়াচাড়া করে।দেখে মনে হয় খুঁজতে চায় মায়ের হাতের ছোঁয়াটুকু।
             বাবিকেও তো কত কাঁথা বানিয়ে দিয়েছেন নিজের হাতে।আর তাতে কি সুন্দর কুচি লাগানো আর সূক্ষ্ম হাতের কাজে পদ্মফুলের নক্সা তোলা,আবার কোনটাতে পাখি আর গোলাপফুল।
               যখন বাবানের তিনমাস বয়েসে ওকে নিয়ে গেছিলো বাপের বাড়ি গেছিলো মিনু তখন ওদের পাশের বাড়ির লতিকাবৌদি অবাক হয়ে গিয়েছিলো দেখে," মিনু এগুলো শুধু কাঁথা নয় এগুলো তো একদম ভালোবাসার মাখামাখি। তোর ছেলেকে কি দেখবো আমার তো ওর গায়ে দেওয়া কাঁথাতেই চোখ চলে যাচ্ছে। রাগ করিসনা,একটা নক্সা একটু নেবো?"
     " নাওনা,বৌদি উনি শুনলে খুব খুশি হবেন।"
  অবাক হলেও মিনু বুঝতে পেরেছিলো ঐ বয়েসেই ভালোবাসা অদৃশ‍্য হলেও তাকে ছোঁয়া যায় কখনো কাঁথার নরম স্পর্শে আবার কখনো মাছের মাথা দিয়ে করা মুড়িঘন্টে। খুব ইচ্ছে হয়েছিলো কেন যেন উনার মত সেলাই শিখতে আর তার ছোঁয়া ভালোবাসার লোকজনকে দিতে।
         মিনুর হাতের ভালোবাসার ছোঁয়ায় কখনো সেজেছিলো অনিরুদ্ধর রুমাল আবার কখনো বালিশের ওয়াড়। শাশুড়িমা খুশি হতেন তার শিষ‍্যার নিপুণতা দেখে," বৌমা কিছু সৃষ্টিতে জানো একটা আনন্দ লুকিয়ে থাকে। তা ভালো রান্নাই হোক আর সেলাই হোক। বেশ করেছো বালিশের ওয়াড়গুলো। আমিও তো সেই কোন ছেলেবেলায় মায়ের কাছে শিখেছি।"

              আজকাল অবশ‍্য মিনুরও তেমন ভাবে সেলাই করা হয়না।রকমারি ওয়াড় বিছানার চাদর পাওয়া যায়।তাছাড়া গতবছর চোখটা সমস‍্যা করছিলো শেষে ছানি অপারেশন করতে হলো। এরপর সুতোর ঝাঁপি খুললেই বকুনি দিতো বাবা আর ছেলে। তাই অনেকদিন সেভাবে বসাই হয়না সেলাই নিয়ে। মাঝে মাঝে তো মনে হয় ফোঁড়গুলো ভুলেই গেছে।

      স্বামী স্ত্রীর খুনশুটিতে আর ছেলের অনুপস্থিতিতে অনেকগুলো দিন কেটে গেছে। গতদুবছর না আসার পর বাবি এসেছিলো। আসার কথা শুনেই বাড়ির পর্দা পাল্টে রঙ করিয়ে সাজিয়ে ফেলেছিলো অনিরুদ্ধ আর মিনু। ফ্রীজ উপচে পড়ছিলো ভালোবাসা ভরা রান্নার সমাহারে।
  " মা এতকিছু করেছো! ওহ্ এত খাওয়া যায় নাকি? অভ‍্যেস পাল্টে গেছে মা ওখানে আজকাল বেশি কন্টিনেন্টাল খাবার খাই।"
     মিনু অবাক হয়ে বলে," কেন রে দীপু তো বলে ওখানে ডাঁটা থেকে পুঁটিমাছ সব পাওয়া যায়।"
     অনিরুদ্ধ হাসে," তোর মা এখনো বড় অবুঝ বাবি।আচ্ছা তোমার ছেলে কাজ করবে না পুঁটি চচ্চড়ি রাঁধবে শুনি? এবার এসেছে ভালো করে চচ্চড়ি,ঘন্ট শুক্তো খাওয়াও। যা লাগবে বলবে এনে দেবো।"
       " বাবা তোমার অত বাজারে যাওয়ার দরকার নেই।ইশ্ আমারও মনে থাকেনা,দাঁড়াও সব কিছু আমি ওখানে বসেই অনলাইনে আনিয়ে দেবো।"
       একটা খুশির ঝিলিক মুখটাতে আলো জ্বালিয়ে দেয় অনিরুদ্ধর যাক তবুও ছেলেটা মা বাবার কষ্টের কথা ভাবে।
    মিনু বলে," ওরে ঐসব বরফে ঠাসা মাছ আর প‍্যাকেটের সব্জি আমাদের পোষাবেনা।"
     " হ‍্যাঁ বাবা বাজারের টাটকা মাছ,কাটা মুরগি না হলে হয় নাকি? আর বাজারটা তো আছেই তার সাথে রিক্রিয়েশন আর টাই আপ করা পাড়ার লোকের সাথে রিলেশন।" বলেন অনিরুদ্ধ
    মুখ টিপে হাসে বাবি," আচ্ছা ঠিক আছে,তবে গ্ৰসারিজ আনিয়ে দেবো। বাবা তোমাকে অত ভারী বইতে হবেনা।"
        মিনু হাসে," তা ঠিক আছে,তবে বাজারটা বন্ধ করিসনা তাহলে একদম অকেজো হয়ে যাবে।"
          কাজ অকাজের অনেক গল্প জমে গেলো মিনুর তৈরী নাড়ুতে.." মা দারুণ হয়েছে গো।এটা খুব মিস্ করি ওখানে।"
    " একদম মায়ের হাতের নাড়ু সবাই মিস্ করে।তোর মনে আছে বাবি ঠাকুমার নাড়ুর কথা।"
   " আছে বাবা,তবে মা ঠাকুমার মতই বানায় কিন্তু।"

       নাড়ুর মিঠে স্বাদের মধ‍্যেও মিনু আর অনিরুদ্ধর মনটা তিতকুটে হয়ে গেলো যখন বাবি বললো," বাবা মা তোমাদের সাথে একটা জরুরী কথা ছিলো। জানি হয়ত তোমাদের আপত্তি থাকবে তবুও তোমাদের না জানিয়ে কিছু করতে চাইনা।"
          অনিরুদ্ধ, মিনু দুজনেই বুঝতে পারেন কিছুটা তবুও বলেন বল কি বলবি।
   " এমিলি আমার জুনিয়র যদিও বিদেশী তবে খুব ভালো আর কেয়ারিং এই তো এর আগে আমার যখন শরীর খারাপ হলো ও এসেই তো লুকআফটার করলো।আমি মানে আমরা বিয়ে করবো এখান থেকে ফিরেই।"
       এখানে মত দেওয়ার কিছুই নেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে বাবি শুধু জানিয়ে দেওয়া। তবুও মনটা বড় খচখচ করলো মিনুর কত কি গুছিয়ে রেখেছে বৌমাকে দেবে বলে তবে লালচুলের মেমসাহেব বৌমা তো স্কার্ট পরবে।সে কি পরবে সে সব? আচ্ছা বাবির কি এই দেশের কোন মেয়েকে মনে ধরলো না? তবুও মনে মনে বললো যাক ওরা ভালো থাকলেই হলো।
     থমকে গেলো অনি মানে অনিরুদ্ধ বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় কিছুক্ষণের জন‍্য। ওর বাবা থাকলে আজ হয়ত কুরুক্ষেত্র হতো। বাড়ুজ‍্যে বামুনের ছেলে খ্রিষ্টান বিয়ে করছে! তবে যুগ পাল্টাচ্ছে,তবুও কোথায় যেন একটা চিনচিনে ব‍্যথা লাগে মনে।
  সংস্কৃতি, আচার ব‍্যবহার, রান্নাবান্না কোনটাই তো মিলবেনা।একটা সময় তো মানে মিনু না থাকলে ছেলেটা আর কিছুই.....ভাবতে কেমন যেন ছ‍্যাৎ করে ওঠে বুকটা। না না অত কিছু ভাবতে নেই সবই ভবিতব‍্য।

**********************
ভবিতব‍্য ভেবে কর্তব‍্যটুকু সারলো মিনু। শাশুড়ির দেওয়া জরোয়া নেকলেশটা বাবিকে দিয়ে বললো," ওকে দিস,বলিস আমার আশীর্বাদ।এটা ঠাকুমার হার আমাদের বংশের জিনিস। আর বাকি যা আছে আমি দেবো ওর মুখ দেখে। আসবি তো? মানে ও আসবে তো এখানে?"
        মায়ের কথা শুনে বাবির মনটা যেন হাল্কা হয়ে যায়.." আসবোনা মানে? তোমাদের ছেড়ে যাবো কোথায়? আর তোমরাও আসবে আমার ওখানে।"
      বাবি চলে গেছিলো কয়েকদিন বাদে তারপর দূরভাষেই ভাষা প্রকাশ।তার মাঝেই বাবির সাথে এমিলির বিয়েটা হয়ে গেছিলো। অনিরুদ্ধর ফোনে এসেছিলো ওদের বিয়ের ছবি। সবটাই ওদেশের মত,আর খাতায় সই করে। 
    অনিরুদ্ধ মিনুকে সান্ত্বনা দিয়েছিলো,"মুখটা মিস্টি মেয়েটার। দেখতে বেশ ভালো। বাবির পাশে ভালোই মানিয়েছে বুঝলে।"
  " শোনো অমন ধবধবে রঙের সব মেয়েকে দেখতে ভালো লাগে। কথা বলেই তো সুখ পাবোনা।আমার ছেলেটা চিরকাল পাউরুটি খেয়ে দিন কাটাবে। খেতে এতো ভালোবাসে ছেলেটা।"
       যাক তবুও ঐ ফরসা মেয়েটার সাথে টুকটাক কথা হয়েছে এরমধ‍্যে।একদম যে ইংরেজী বোঝেনা মিনু এমন নয়।তবে ওদের ইংরেজি কেমন যেন পালকের মত ফুরফুরে আর মাখনের মত মসৃণ। ঠিক ধরা যায়না হয় পিছলে যায় নাহলে উড়ে যায় হুস্ করে।
     যদিও আপ্রাণ দোভাষীর কাজ করে চলেছে বাবি যদি মায়ের সাথে একটু ভাব করিয়ে দেওয়া যায় এমিলিকে। একটু একটু করে টুকরো কথায় ভাব হয়ে গেলো শাশুড়ি বৌয়ে। ভিডিও কলে প্রতিদিনই একবার উঁকি দেয় এমিলি,কিচিরমিচির করে কিছুটা সময় তারপর আবার অপেক্ষা অন‍্য আরেকটা দিনের।অনিরুদ্ধর অবশ‍্য ভালোই লাগে আসলে মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়া ছাড়া তো কোন উপায় নেই।সুতরাং হাসিটাকে অযথা বাসী করে লাভ কি? তাই হাসিমুখেই সুখের চাবি কাঠি থাক আঁচলে বাঁধা।

  **********************
মাঝে কেটে গেছে বেশ কিছুদিন।হঠাৎই বিদেশের বাতাস দেশে নিয়ে এসেছে এক মিঠে সুবাস। এমিলি মা হতে চলেছে। আজকাল অনিরুদ্ধ হঠাৎ হঠাৎই বাচ্চার ক‍্যালেন্ডার কিনে আনছে। মিনু গোপালকে একটু বেশি করে সন্দেশ খাওয়াচ্ছে।
     অবশেষে ভিডিও কলে ফুটফুটে তুলোর বলের মত নাতনি দেখে উফ্ কি যে আনন্দ হলো দুজনের বলার নয়।
  " হ‍্যাঁ গো,তুমি নাকটা দেখেছো? একদম বাবির মত। আর থুতনিটা তোমার মত। তবে রঙটা কিন্তু মায়ের মত ফুটফুটে।" এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে যায় মিনু।
     " তুমিও পারো ঐ টুকুনি একটা তুলোর বল সাদা তোয়ালাতে মোড়ানো তার আবার নাক আর চোখ। যাক বাবা একটা ব‍্যাপার কিন্তু দারুণ চুলগুলো কিন্তু তোমার মত একদম কোকড়া আর কালো।এমনটা কিন্তু হয়না।অবশ‍্য বাবিরও তো তাই।"
       গালে একটা লালচে আভার ছোঁয়া খেলে যায় মিনুর," ধ‍্যাৎ সব চুল উঠে গেলো এখনো আছে নাকি তেমন?"
    " আরে যা আছে তাতেই তো বলতে ইচ্ছে করে চুল তার কবেকার....."
        ইশ্,তুমি না! আমার কিন্তু খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ওকে। কে জানে বাবি কবে আসবে? বৌমা মানে এমিলিও তো আসেনি এখানে।"

         তবে মিনুর কাঙ্খিত আসার খবর নিয়ে হঠাৎই এলো অনি," আসার খবর এসেছে মিনু।"
     "মানে?কবে আসছে ওরা?"
" ওরা নয় আমাদের ও দেশে আসার মানে যাওয়ার খবর পাঠিয়েছে বাবি একদম টিকিট করে।পাসপোর্ট তো আমাদের আছেই বাকিটা অনিল করে দেবে।"

         সত‍্যিই অনিল ব‍্যবস্থা করে দিলো সবটাই যাতে ভিসাটা তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। তার মধ‍্যেই মিনু হঠাৎ বায়না ধরলো," এই শুনছো,আমাকে কিছুটা সুতো এনে দেবে।মানে রঙগুলো আমি লিখে দেবো কাগজে।"
     " মিনু এখন সুতো নিয়ে করবেটা কি? তারচেয়ে তোমার জন‍্য একটা কোট কিনে আনি আর আমার একটা জ‍্যাকেট।চলো কাল একটু বেরোনো যাক।"
        অনেকদিন বাদে বাইরের হাওয়ায় মনে অনুরাগের তাপ লাগে মিনুর।একটা সময় কত বেড়িয়েছে কর্তাগিন্নী তারপর একদম বিরিয়ানি খেয়ে ফিরেছে। এখন তো বেরোনোই হয়না। মিনুকে দেখে ভালো লাগে অনিরও। লাল সাদা বাটিকের শাড়িতে মিনুকে বেশ লাগছে,সাথে সেবার শান্তিনিকেতন থেকে কেনা ব‍্যাগখানা।
           মিনুর বায়নায় কোট আর জ‍্যাকেট কিনে হগ মার্কেটের ভেতরে ঢুকতেই হলো সুতো কিনতে। অনির মনে হলো কোট কেনার চেয়ে সুতো কিনেই বেশি খুশি হলো মিনু। কিন্তু সুতো দিয়ে করবে কি?
  যাক এখন মুড ভালো তাই কথা নয় বাড়ি গিয়ে জানবে।
     বাড়িতে এসে জিজ্ঞেস করতেই মিনুর কথা শুনে আঁতকে ওঠে অনিরুদ্ধ," তোমার কি ঠাম্মি মানে গ্ৰ‍্যানি হয়ে মাথাটা গেছে? ও দেশে তুমি কাঁথা নিয়ে যাবে? সেই পুরোনো কাপড়ের কাঁথা!"
      " তা হবে কেন? ঘরে নতুন সাদা মলমল কাপড় ছিলো তা দিয়ে বানাবো গো।আর মায়ের বানানো বাবির ছোটবেলার সেই কুঁচি দেওয়া পদ্ম কাঁথাখানা নিয়ে যাবো গো। অনেক যত্নে রেখে দিয়েছি।"
     অনিরুদ্ধ আর কিছু বলতে পারেনা শুধু বলে," দুঃখ আছে তোমার কপালে মিনু।ওদেশের বাচ্চারা কি ভাবে থাকে দেখোনি? ইশ্ তারমধ‍্যে কাঁঁথা! ওরা সবসময় ডায়াপার পরে থাকে মিনু ওসবের বালাই নেই।"

      মিনু কিছু না বললেও অনি দেখতে পায় অতি যত্নে নরম মলমল কাপড় পরতে পরতে সাজিয়ে সূঁচে গাঁথছে মিনু। তারমধ‍্যে অতি যত্নে নক্সা আঁকছে দক্ষ হাতে সামনে বাবির ছোটবেলার সহজপাঠ বইখানা। ছোট খোকা বলে অ আ.....
    খুকি কাঁদে কিঁয়ো কিঁয়ো। হঠাৎই মায়ের কথা মনে হলো অনির।ঠাকুমা হওয়ার সুখ বোধহয় সত‍্যিই একঘর। আর কিছু বলতে পারেনা মিনুকে।

         *************************
 এই প্রথম বিদেশে আসা অনিরুদ্ধ আর মিনুর সবেরই উপলক্ষ‍্য অবশ‍্য দিদিভাই। বাবিই ওর নাম রেখেছে মিলি। চারদিকে চোখ রেখে অবাক হয়ে যায় মিনু,ঐ জন‍্যই বোধহয় আজকাল ছেলেপুলেরা বিদেশে গেলে দেশে ফিরতে চায়না। এ তো স্বর্গ তবুও তার কাছে দেশই ভালো, বড় মিঠে মায়ের ভাষা আর মায়ের দেশ।

      বাবি এসেছে এয়ারপোর্টে নিতে।কতদিন বাদে ছেলেকে দেখা। মায়ের স্নেহের বাঁধনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বাবিকে মিনু।
        এই প্রথম এমিলিকে একদম সামনে থেকে দেখা।মাতৃত্ব বোধহয় আলাদা একটা সৌন্দর্যের ছোঁয়া রেখে যায়। এমিলি হাগ করে মিনুকে ওর নরম আদরে।মন ভরে মিনুর,উৎকন্ঠা দূর হয় কিছুটা। 
আর তারপর দিদিভাইকে দেখে তো মন ভালো হয়ে যায় ওদের।সবেই হাসতে শিখেছে মিলি,একগাল হাসি দেয়। বাবি বলে," দেখেছো মা প্রেশাস স্মাইল,অন‍্য সময় দেখিনা।তোমাদের কে দেখে হ‍্যাপি হয়েছে তাই।"
হ‍্যাপি হ‍্যাপি সবাই।মিনুর ম‍্যাজিক বক্স থেকে একটা একটা করে জিনিস বেরোতে থাকে। দেখে গালে হাত দেয় অবাক হয়ে এমিলি মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে ওয়াও! মাম্মা ইজ গ্ৰেট।
    হাসে মিনু।অনি বলে," তোর মাকে নিয়ে পারা যায়না।পারলে পুরো বাজারটা তুলে আনে।"
             অনির দিকে তাকায় মিনু তারপর ইতস্ততঃ করে বাবিকে বলে," এমিলি তো বুঝতে পারবেনা,আমি না চারটে কাঁথা এনেছি দিদিভাইয়ের জন‍্য। আর এটা তোর ঠাম্মার বানানো, ছোটবেলায় তুই গায়ে দিতিস। হ‍্যাঁ রে দিদিভাই এক দুবার ব‍্যবহার করবে তো? আসলে খুব ইচ্ছে করলো ঠাম্মা হয়েছি তো।"
       এমিলির চোখে জিজ্ঞাসা, জানতে চায় কি বলছে মিনু। কাঁথাগুলো হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে বাবি।
     মিনু অনির দিকে তাকায়,অনির চোখে একটু সন্দেহ।হঠাৎই বাবি বলে ওঠে," মা তোমাকে প্রথমে বকবো চোখ খারাপ নিয়ে এত সেলাই করার জন‍্য‍।
   আর তারপর অনেক ভালোবাসা জানাবো,তুমি তো আমার ছেলেবেলাটা ফিরিয়ে দিয়েছো। আজ তো আবার চোখের সামনে খোলা সহজপাঠ। কি সুন্দর সেলাই মা! আর এতে যে ঠাম্মার ছোঁয়া,আর আমার ছোটবেলার।"
      চোখটা ঝাপসা হয়ে যায় মিনুর। অনিরও চশমাটা মুছতে হয় একবার বাইরে গিয়ে। এমিলি এতক্ষণ একদম বোকার মত তাকিয়ে ছিলো। বাবি ওকে সব বুঝিয়ে ওর হাতে দিলো। অবাক হয়ে সেলাইয়ে হাত বোলালো এমিলি, অস্ফুটে বললো," এক্সেলেন্ট টাচ অফ লাভ। প্রেশাস গিফ্ট।"

*************************
 এই কদিনে মিলির সঙ্গে ভালোই দোস্তি হয়ে গেছে মিনু আর অনির। মিলিকে ঘুম পাড়ানোর অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করছে এমিলি। মিনু হাত বাড়ায়,ওর গায়ে জড়ায় স্নেহের স্পর্শের নক্সি কাঁথা।হঠাৎই বাবি এসে বলে..মা ঐ গানটা গাওনা একবার। এবার একটা রেকর্ডিং করি ইনস্টাতে দেবো। এই দৃশ‍্য তো এখন বিরল,খুব মনে পড়ছে ঠাকুমার কথা,কি সুন্দর গুনগুন করে গাইতো...' আয় ঘুম যায় ঘুম বাগ্দীপাড়া দিয়ে।বাগ্দীদের ছেলে ঘুমোয় কাঁথা মুড়ি দিয়ে।
        মিনু গুনগুন করতে থাকে ছেলের আব্দারে,রেকর্ডিং করে বাবি। নস্টালজিয়ায় ডুবে যায় অনি। ছোটবেলার দিনগুলো লুকোচুরি করে বাবির ভিডিও ক‍্যামেরায়।
    এমিলি শুনতে পায় একটা নতুন মেলোডিক‍্যাল রাইমস্। মানে বুঝতে পারেনা, তবে বোঝে এটা ভালোবাসার গান।
#আমার_লেখনীতে#
সমাপ্ত:-

      



                  
         
         

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...