Skip to main content

জীবন যখন যেমন ( সিজন ২)

মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা মাস আপন খেয়ালেই। মিষ্টিকে নিয়ে নতুন সংসারের মিঠে স্বাদের সাথে সাথে কখনো টক,ঝাল আর তেতোও এসে যাচ্ছে মানে জীবনে যা হয়। জীবনও তো একটা যাত্রা সেখানে কখনো হাসি,কখনো কান্না,কখনো রাগ আবার কখনো অনুরাগ।
              গতকাল রাতে বেশ ঘুমোতে দেরি হয়ে গেছে যথারীতি সকালে ঘুম ভাঙেনা মিষ্টির।রবীন থাকলে বকুনি লাগাতো ঠিক...সকালে উঠবিনা দেরি করে উঠবি। চোখটা খুলেই রক্তচক্ষু সূয‍্যিমামাকে দেখে মিষ্টির মনে হলো,এই রে আজও অফিসে যেতে দেরি হবে নাকি? চোখ ঘুরিয়ে খোঁজে জোজোকে দেখতে পায়না। ইশ্ খুব পাজি ওর বরটা সকালে ঘুম ভাঙিয়ে দেয়না।
                 হঠাৎই দেখতে পায় জোজো ঘরে ঢুকছে । ওর গালদুটো চকচক করছে ব্লেডের আদরে ক্লিনলি সেভ করাতে বুঝতে পারে অফিসের জন‍্য হাফ রেডি জোজো।
     " গুডমর্ণিং,উঠে পড় এবার। তোর সব রেডি আছে। উঠেই গরম কফি আর স‍্যান্ডউইচ টেবিলে পাবি।"
 " ইশ্ আমার বেচারা বরটা,বিয়ের পরও বৌয়ের সব গুছিয়ে দিতে হচ্ছে। ইশ্ মা যদি জানতে পারে।"
   দুষ্টুমি খেলে যায় জোজোর চোখেমুখে," তার জন‍্য একটু বাড়তি আদর করে দিস তাহলেই হবে। আর আমি বিশ্বাস করিনা কাজের শ্রেণীবিভাগ হয়। মেয়েদের আর ছেলেদের কাজ বলে কিছু আছে নাকি? যেদিন আমি উঠবো সেদিন আমি করবো।আর যেদিন তুই আগে উঠবি তুই করে নিবি।"
      মিষ্টির দুষ্টুমি করে বলতে ইচ্ছে করে," তাহলে আমি একটু বেশি বেশি আদর করে প্রতিদিনই দেরি করে উঠবো।"
      জোজোর আফটার সেভ লোশনের গন্ধটা ছুঁয়ে আছে মিষ্টিকে ভালোবাসার বাঁধনে বিছানায় মিষ্টিকে একটু জড়িয়েই জোজো তাড়া দেয়," জলদি,তোকে ড্রপ করে আমি অফিসে চলে যাবো। উফ্ বিবাহিত পুরুষ মাল্টিটাস্কার,অন্ততঃপক্ষে আমি তো তাই।একাধারে শেফ,ড্রাইভার, বডিগার্ড আরো কত কি?"

         একটা মিঠে হাসির ছোঁয়ার রেশ লেগে থাকে মিস্টির চোখে মুখে।বারান্দায় এসে দাঁড়ায় ঘুম থেকে উঠে ওর একান্ত প্রাইভেট স্পেশ এই বারান্দা হয়ত বা প্রেমও জোজো সেটা জানে।রাগ অভিমান আদরে মাখামাখি এই বারান্দা দুজনের ভালোলাগায় সাজানো অবশ‍্য তারমধ‍্যে দূর থেকে আরেকজনেরও দুষ্টুমি ভরা ছোঁয়া আছে..সে মাঝে মাঝেই বলে ও দিদি একটু তোর প্রেমটাকে মানে নতুন ভালোবাসাকে দেখা আমাকে। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। মিষ্টি ক‍্যামেরার ওয়েবে স্রোতে ভাসিয়ে দেয় কিছু ফুল আর গাছের হাওয়ায় দোলা লাগার ছবি। ওদিক থেকে দুষ্টু ভাসিয়ে দেয় ওর ভালোলাগার একটুকরো বাগানটা তারপর ফুলেদের যত্নআত্তি নিয়ে কিছুক্ষণ একটু গল্প করে যে যার কাজে চলে যায়।
         নতুন বৌয়ের বায়না মত নিত‍্য নতুন সবুজে বারান্দা আর ঘর সাজায় জোজো। ও জানে কালচিনির মেয়েটা সবুজ মিস্ করে তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর একটু ছোট্ট চেষ্টা। জোজোর হাতে ফুলের টব দেখলে বোধহয় সবচেয়ে বেশি খুশি হয় মিষ্টি।
               বারান্দার গাছগুলো সকালে ভালো থাকার একমুঠো ঝকঝকে আনন্দের চাবিকাঠি মিষ্টির। একটু সময় দিয়ে দেখে গাছের কুঁড়িগুলো,শুকনো পাতাগুলোকে যত্নে সরিয়ে দেয় গাছের থেকে। ঝিরঝির করে জল ছড়িয়ে স্নান করিয়ে দেয় গাছ গুলোকে আদরে। তারপর নিজে বাথরুমে ঢোকে। ততক্ষণে জোজো নিজের অনেকটা কাজ গুছিয়ে নিয়েছে।
         মিষ্টি বাথরুম থেকে এসে চটপট তৈরি হয়ে যায়। ওর দিকে একবার আদুরে চোখে তাকায় জোজো দেখে নেয় আজ কি পরেছে মহারাণী। এটা ঠিক সাজলে মিষ্টিকে জাস্ট ফাটাফাটি লাগে। তবে এমনিতেও খুব সুন্দর মিষ্টি তাই হয়ত লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট এবং আল্টিমেটলি অনেক কষ্টে মহারাণীর মন জিতে নেওয়া।

            এবার মিষ্টি তাড়া লাগায়," চল চল আমার হয়ে গেছে। মাঝেমাঝে কি যে হয় তোর কে জানে?
       আর হ‍্যাঁ মাঝে একবার ফোন করিস প্লিজ।"
  " আমিই তো ফোন করি প্রতিদিন। তুই কোথায় করিস? শোন আমার হয়ত আজ একটু দেরি হবে তুই চলে আসিস। আচ্ছা আমি দেখছি।"
       মিষ্টি একটু কাছে আসে জোজোর,ওর বুকের কাছে এইসময় প্রতিদিনই এসে একটু আদর করে যায় আর বলেও যায়," এত ভাবিসনা, আমি চলে আসবো ঠিক। তুই কাজ করে আসিস।"
            জোজো এই ছোঁয়াটুকু প্রতিদিনই প্রাণভরে নেয়। সারাদিন অফিসে কাজ করার ফাঁকে এই মুহূর্তটাই ছুঁয়ে যায় মাঝে মাঝেই। প্রেমটা তো তেমনভাবে হয়নি,বিয়ের পরের সময়েও ক‍্যামেরা রিপোর্ট মিষ্টির অ্যাসাইনমেন্ট।তারমধ‍্যে ঐটুকুই একটু আনন্দ।আর ছুটির দিনে হুটহাট বেরিয়ে পড়া।

      ****************
মিষ্টিকে অফিসে নামিয়ে নিজের কাজের জায়গায় পা রাখে জোজো। হয়ত বা মিষ্টিকে কাছে পেয়ে পরিপূর্ণতায় জোজো এখন আরো হ‍্যান্ডসাম হয়েছে। একথা অবশ‍্য শালীও বলে। অনেক কাজের মধ‍্যেও দুষ্টুমিটা তো আছে ষোলো আনা। সাধে কি নামটা দুষ্টু?যেমন নাম তেমনি তার কাজকর্ম। দিদিদের রঙীন দাম্পত্য ছুঁয়ে যায় দুষ্টুকেও মনে মনে ও স্বপ্ন দেখে একটুকরো সবুজের যেখানে থাকবে ও আর দীপ্ত। দীপ্তর কথাটা মনে হতেই আবার মুঠোফোনে হাত রাখে দুষ্টু,ট্রেনিংয়ের খুব চাপ যাচ্ছে বেচারার। এমনিতেই তো ভালোবাসার কথা ঠিক গুছিয়ে বলতে পারেনা এখনো।তারপর আজকাল এত চাপ যে ফোন ব‍্যবহার করাও সম্ভব হয়না সবসময়।
      এপার থেকে সাহস দেয় দুষ্টু," এই তো হয়ে আসছে দেখতে দেখতে। আর তো কয়েকটা মাস। তারপর আরেক নতুন দীপ্তদাকে দেখবো আমি।"
       ওদিক থেকে দীপ্ত বলে," ভাবছি ফোনটা কিছুদিন বন্ধ রাখবো। আর ভালো লাগছেনা কিচ্ছু।কেন যে সারাদিন বাদে ফোন করি।"
      " কেন কি হলো হঠাৎ? ফোনে কথা না বলতে ইচ্ছে করলে কোরোনা। এত বায়না কেন?" সব বুঝেও একটু খুনশুটি করে দুষ্টু। ও তো ভালো করেই জানে কারণটা তবুও।
          ওদিক থেকে কতগুলো উড়ন্ত চুমু ঝাঁকে ঝাঁকে এসে থাবা মারে দুষ্টুর ফোনে। প্রেমে পড়লে আইএএস অফিসারও গাল লাল করে।আর এতো একদম হাবির পাঠানো তাই গুনে কাছে টেনে নেয় আদরটা
       " আচ্ছা আর কতদিন আমাদের দাদাবোনের সম্পর্ক থাকবে শুনি? রেজেস্ট্রী তো সেই কবেই করে ফেলেছিস একদম নিজে উদ‍্যোগ নিয়ে তাই এখন তো মিসেস মানে আমার বেটার হাফ। দীপ্ত এখন তুমি বিবাহিত আর তোমার বৌ তোমাকে দাদা বলে ডাকছে। এরপর হয়ত ভাইফোঁটা দেবে বা রাখী পরাবে।"
       ওদিক থেকে খিলখিল করে হাসে দুষ্টু। একথা অবশ‍্য বাবাও বলেছে," একি দুষ্টু,এখনো তুই ওকে দীপ্তদা বলিস নাকি?"
     " বাবা আমার ঠিক আসেনা,চিরকাল তো এই নামেই ডেকেছি।"
      মা বকুনি দেয় শুনে," আমিও তো প্রথমে রবীনদা বলেই ডেকেছিলাম এখনো তাই ডাকি নাকি?"
      " মা তোমার কথা ছাড়ো,তোমার তো লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট। দাদা থেকেই একেবারে বর।আমার কতদিনের অভ‍্যেস বলো দেখি?"
       রবীন গম্ভীর মুখে বাইরে কাজ আছে বলে অন‍্য ঘরে চলে যায়। ওরা দুই বোন চোখাচোখি করে হাসে।অনু রান্নাঘরে চলে যায় ইশ্ কি বলতে কি বলে ফেলেছে। রাতে রবীনের কাছে আছ জুটবে একটা বকুনি। জোজো পেপারে চোখ রেখে গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করে। স‍্যার কাম শ্বশুরমশাইয়ের সাথে নো ইয়ারকি।এক সময় প্রচুর বকা খেয়েছে। তাই স‍্যার চলে যেতেই বলে," শেষে দীপ্তকে সাধক করে ছাড়লি।এখনও আইনত একদম একশোভাগ সত‍্যি ইস্তিরিকে বোন বলে ভাবতে হচ্ছে। কবে যে তোরা স্বামী ইস্তিরি হবি কে জানে!"
            " আরে এরমধ‍্যে বেশ একটা পুরোনো বাংলা সিনেমার ব‍্যাপার আছে তুই বুঝবিনা। তুই তো একদম ক্ল‍্যাসি বর। প্রথম দিনেই দিদিকে দেখেই ওকে বৌ বলে ইমাজিন করে নিয়েছিলি। আমার বাবা অত তাড়াতাড়ি সব আসেনা।"
         নিজেই কথাটা বলে চুপ করে যায় দুষ্টু,কি বলতে যে কি বলে ফেলেছে। ওরই তো সব কিছু তাড়াতাড়ি আসে মানে আসতো। দীপ্তকে প্রথমে তো ও নিজেই মুখ ফুটে বলেছে। বিয়েটাও ওর জোরেই হয়েছে হঠাৎই।
             মিষ্টির মুখে হাসি খেলে যায়," তোর তো প্রেম বিয়ে সবই হুটহাট হয় বোন। পারলে তো এক ছাদনাতলাতে দীপ্তকে বিয়ে করে নিতিস।"
        " আর লাদাখের প্রেম,আহা সে তো আমার নিজের চোখে দেখা। আমার বৌটা যদি এমন রোমান্টিক হত! "
       মিষ্টি হাসে, দুষ্টু বলে," সুন্দরীদের দেখে অন‍্যদের রোমান্স বেড়ে যায় তাই ওরা কুল থাকে।"
       ওদের কথার মাঝে দুষ্টুর ফোনটা বেজে ওঠে ব‍্যস্ত হয়ে পড়ে ও। ছুটির দিনেও শান্তি নেই গজগজ করে মনে মনে। এখানে সেখানে গন্ডগোল লেগেই আছে নানা রকম। ভালো লাগেনা আর। সবেই তো বাড়ি এলো প্রায় একুশদিন বাদে দিদি এসেছে বলে।
          বাইরের ঘরে বসে স্কুলের কাগজপত্র দেখে রবীন কিছু কাজ বাড়িতে বসেও করতে হয়। দেখতে দেখতে কেটে গেলো অনেকগুলো বছর। নবীন রবীন এখন প্রবীণ হাতে গোনা আর চার বছর। তবে এরমধ‍্যে অনেক কাজই হয়ে গেছে সারা। দুই মেয়ে আর ছাত্রদের নিয়ে রবীনের এখন অনেকটা নিশ্চিন্ত জীবন। ওরা ভালো থাকলেই হলো এখন। অনুটাই মাঝে মাঝে বিরক্ত করে ঘরদোর ফাঁকা হয়ে গেছে বলে। রবীন বলে," তুমি ঘুরে আসতে পারো তো দুষ্টুর কাছ থেকে।মনটা একটু ভালো হবে।"
      " তোমাকে কে দেখবে শুনি? মেয়ে তো অফিস নিয়ে ব‍্যস্ত থাকবে।আমি কি করবো তখন? রাণুটাও আসেনা অনেকদিন। ছেলে নিয়ে ব‍্যস্ত,ছেলে বড় হয়ে ওর নাকি আরো কাজ বেড়েছে।"
        রবীন জানে সবটাই অনুর বায়নাভরা অজুহাত।ভালো না লাগলেও যাবেনা অনু। কারণ রাতে এখনো রবীনের পাশে না শুলে অনুর ঘুম আসেনা। একসময় যা দূরন্ত প্রেম ছিলো আজ তা অভ‍্যেস। তবে রবীনের মাঝে মাঝে চিন্তা হয় ভবিষ্যত ভেবে। কে জানে কি হবে একটা সময়? তবে থাক সেসব না ভাবাই ভালো।আজকের সুখটা নিংড়ে নেবে আজই কি দরকার যে দিনের খবর জানেনা সেই খবরের আশঙ্কায় দিন গোনার?
        অনেকদিন বাদে দুই মেয়ে মানে লক্ষ্মী এলো ঘরে আজ সত‍্যি মনটা ভরানো রবীনের শুধু সেই ছেলেটা থাকলেই পুরো পরিবার একসাথে হওয়া যেতো। দীপ্তর কথা ভেবেই ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসি খেলে যায় রবীনের। প্রথমে কাছে ছিলো ছেলেটা একদম নিজের কাছে।নিজের যত্নে বড় করেছিলো ছেলেটাকে। তবে আজ যা মাঝেমাঝেই কানাকানি হয়ে রবীনের কানে আসে সেকথা কিন্তু তখন স্বপ্নের কোণেও ছিলোনা। অনেকেই বলে রবীন মাস্টার একদম ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছে,দুই ছাত্রর দিকে চোখ রেখেই বসেছিলো। কথাটা শুনে প্রথমটা খুব খারাপ লাগলেও এখন গা সওয়া হয়ে গেছে।
              দীপ্তকে তো এমন কোন জায়গাতেই দেখতে চেয়েছিলো রবীন। খুব ব‍্যথা লেগেছিলো মনে যখন ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেয়েও পড়তে যেতে পারেনি। রবীনের মনে ইচ্ছে থাকলেও সাহায্য করতে পারেনি। অসন্তুষ্ট হয়েছিলো অনুও,হয়ত ভয়ও পেয়েছিলো যে রবীন আর্থিকভাবে ওকে সাহায্য করলে ওর সংসারে অভাব বাড়বে।
       যাক যেদিন গেছে তার কথা ভেবে কি লাভ? হয়ত যা হয়েছে ভালো হয়েছে। অভাবে পুড়ে খাঁটি সোনা হয়েছে ছেলেটা তাই তো হীরের টুকরো মেয়েটা ওকে জীবনসঙ্গী করে নিয়েছে নিজের ইচ্ছেতেই।
        তবে ট্রেনিং নিতে প্রথমে জেরবার হয়েছে ব‍্যাটা খুব। তবে ভালো স্পোর্টস ম‍্যান ছিলো তাই খুব একটা অসুবিধা হয়নি। তবে দুষ্টু হেসে বলে," বাবা মাঝে মাঝে বলে একদম জিভ বেড়িয়ে যাচ্ছে। বয়স তো হয়েছে নাকি?"
    আমিও বলেছি," কেন তোমার কত বয়েস আর? মনের জোরটাই আসল।সেটা তো তোমার আছে। শুনে হেসে বলেছে ওর বন্ধু এখন রীতিমতো সংসারী মানে জোজোদা। আমি বলেছি ও অকালপক্ক।"
         রবীন মেয়ের কথায় না হেসে পারেনা। বড় হলে সবাই বন্ধু হয়ে যায়।বয়েস কোথায় যেন লুকোচুরি খেলে চুরি করে বন্ধুত্ব আনে বাবা মেয়ের মাঝে।

                অনেকদিন ছেলেটা গেছে,এরমধ‍্যে আসেনি।দুষ্টুরও যাওয়া হয়নি।তাছাড়া ট্রেনিংয়ের এই সময়টা খুব কড়াকড়ি থাকে ওদের তাই একটু দেখা ছাড়া তেমন হয়ত কিছু আর হবেনা। তবুও দুষ্টুর খুব ইচ্ছে করছে কয়েকদিনের জন‍্য ঘুরে আসতে। অবশ‍্য ওদিক থেকেও আব্দার আসছে একবার আসার জন‍্য‌।
           সামনে নির্বাচন আসছে এই সময় দুষ্টুর কাজের চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। টুকটাক ঝামেলা,মিটিং নানা রকম সমস‍্যা লেগেই আছে। সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত চলছে নানা রকম কাজের ঝামেলা।

*************************
আজকাল রবীনেরও একটু চিন্তা লাগে এইসব নিয়ে। ছোটমেয়েটার খুব কাজের চাপ এদিকে সাংবাদিক জামাইয়েরও প্রচুর কাজ। প্রায় দিনই শোনে অনেকটা রাত করে ফিরেছে আবার কোনদিন আসতেই পারছেনা বাড়িতে। মিষ্টির গলায় প্রায় শোনা যায় অভিমানের সুর।
     রাত্রিবেলা একা একা মেয়েটা থাকে শুনে অনু গজগজ করে," দুটি জামাই হয়েছে বটে বাপু,দুই মেয়েই আমার একা একা দিন কাটায়। এদিকে বড়টা আর ওদিকে ছোটটা। কবে যে একসাথে থাকবে কে জানে?"
       রবীন মজা করে বলে "তুমি বরং গিয়ে পাহারা দাও দুটোকে।"
    " আমার বয়ে গেছে,যার যার সে সামলাক। আমি আমার সংসার দেখি।"
    " তাহলে আর এত চিন্তা কোরনা,আর কত মেয়ে মেয়ে করবে ওরা বড় হয়েছে এখন। দীপ্তর ট্রেনিং শেষ হলে ওদের দুটোকে চেষ্টা করতে হবে একজায়গায় করে দেবার।"
অনু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে," মানে? একজায়গায় পোস্টিং হবে নাকি?"
  "আরে না না বিয়েটা তো অন্ততঃ দিয়ে দিতে হবে আমাদের সামাজিক প্রথা মেনে। বড়টাও তো একটু আনন্দ করবে নাকি? আর দীপ্তর মায়েরও তেমন ইচ্ছে। উনার শরীর তো খারাপ হয় মাঝে মাঝেই।"
          অনুর মন ডুবে যায় এক অন‍্য ভবিষ‍্যতের স্বপ্নে,আবার বাড়ি ভর্তি লোকজন আসবে।সাদামাটা সাজে অভ‍্যস্ত দুষ্টু সাজবে নতুন লাল বেনারসীতে। সত‍্যিই মেয়েটা যে কবে বড় হয়ে গেলো যেন মনে হয় এই তো সেদিনের কথা। দুটোর ঝামেলায় অস্থির হয়ে উঠতো মাঝে মাঝেই আজ সব ফাঁকা হয়ে গেছে।
                    কত কাজ সামলাতে হবে তার মধ‍্যে,জোগাড় আছে তো। এই মেয়ে সবসময় কাজে ব‍্যস্ত।বললেই বলে," দিদি আর জিজুদা করবে সব। ওদের বিয়েতে আমাকে খুব খাটিয়েছে।"
      অনু আর রবীন যখন চোখে আঁকে ভবিষ‍্যতের স্বপ্ন তখন দুষ্টু মুখ ডোবায় ফোনের স্পীকারে। রাত বেশ অনেকটা হয়েছে,টুকরো মেসেজে আর কথায় কিছুটা সময়। আজকাল দীপ্ত রাগ করে দাদা বললে বলে নাম ধরে বলবি।
  " ঠিক আসেনা,অনেক বছরের অভ‍্যেস তো।"
   " তাহলে সিরিয়ালের মত দীপ্তবাবু আপনি বলিস।"
    দীপ্তর রাগী উত্তর হাসিতে ভাসায় দুষ্টুকে। "আচ্ছা আর দাদা বলবোনা দীপ্তবাবু।"
        " দু চারদিনের ছুটি নিয়ে একবার আয় তোকে মানে তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে দুষ্টু।" 
  " ওয়েট দীপ্তবাবু, দেখছি।"
           দুষ্টুর মন উড়ে যায় কথায় কথায় দীপ্তর কাছে।দীপ্তর চোখ এলোমেলোভাবে খোঁজে অপেক্ষার ক‍্যালেন্ডার।

     ***********************

       দীপ্ত এখন হায়দ্রাবাদে সর্দার বল্লভভাই প‍্যাটেল ন‍্যাশনাল পুলিশ অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিংয়ে আছে। মুসৌরিতে থাকা কালীন দীপ্তর মনকেমনের মেঘের চাদর সরাতে যাওয়া হয়নি দুষ্টুর। খুব একবার আসতে বলেছিলো ওকে। কিছুতেই রাজী হয়নি দুষ্টু," সবে একটা ভালো কাজে গেছো,এখন মন দিয়ে ট্রেনিং নাও। কি হবে বলতো ঐ একটু চোখের দেখা ছাড়া? আমি গেলে বরং তোমার কনসেন্ট্রেশন নষ্ট হবে।"
        দীপ্ত রাগ করে বলেছিলো," তুই কি মেনকা নাকি? "
     দুষ্টু হেসে বলেছিলো," তুমি বিশ্বামিত্র নও তা আমি জানি।তবে আমি ঊর্বশীর চেয়ে কম কি শুনি?"
     পৌরাণিক কাহিনী কে কাকে শেখায়? দুজনের মন খারাপ এভাবেই কেটে যায় কথার পালকের আদরে মন ডুবিয়ে। দুষ্টু আর বলতে পারেনা,বাবা বারণ করেছে বলেছে ওদের ওখানে অনেক নিয়ম এর মধ‍্যে কোন দরকার নেই। 
      দিদি অবশ‍্য খুব আপশোষ করেছিলো শুনে," ইশ্ ভাবছিলাম আমরাও যাবো তোর সাথে তা আর হলোনা।"
     " মানে তোরাও মুসৌরী যেতি নাকি? এই রে আমার সাথে ওখানেও? সবেই একটু।"
    " যাবোই তো,তুই আমার হানিমুনে গেলি।আমি যাবোনা কেন?"
    " দিদি তুই কিন্তু খুব হিংসুটে। তাই বোধহয় আমার যাওয়াটাও হলোনা। ওদিকে ও রেগে অস্থির।"
       " সত‍্যিই মাস্টারমশাই শ্বশুরমশাই হওয়ার কি যে জ্বালা!"
           দিদি যতই মজা করুক দুষ্টু তাও জানে বাবা চিরকাল ওদের গাইড করে এসেছে তাই বাবার কথাই শেষ কথা।

     সুতরাং সেবারের মত যাওয়া মুলতুবি হলেও আবার পরিকল্পনা হচ্ছে জোরদার তবে দুষ্টু দীপ্তকে এখন কিছুই বলবেনা।কোন এক সূর্যের আদরমাখা বিকেলে বা একদম হামাগুড়ি দেওয়া ভোরে পৌঁছে যাবে সারপ্রাইজ দিতে। দিদি অবশ‍্য ছাড়পত্র দিয়েছে," নাহ্ তুই এবার একাই যা,ছেড়ে দিলাম।বড় হয়েছিস তো।"

      মন উড়ে যায় হায়দ্রাবাদে দুষ্টুর কয়েকমাস বাদেই ভোট তার আগে অনেক কাজ ওদের শালী জামাইবাবু দুজনেরই। আজকাল সংবাদ পরিবেশনের শিরোনামে অনেক সময়ই জোজোর মানে উত্তীয়র নাম দেখা যায়। বাড়িতে ফিরতে রাত হয় ব‍্যস্ততায়। অভিমানের পারদ চড়ে মিষ্টির মনে। শিলিগুড়ি থেকে শাশুড়িমায়ের ফোন," আমি গিয়ে ভোটের আগে কয়েকদিন থাকবো তোর কাছে মিষ্টি। কি করবি বল,ওর কাজটাই তো এইরকম।"
               আরেকটু বেশি নরম ভালোবাসায় অনেকটা ভরিয়ে দেয় মিষ্টিকে জোজো। তবে ভালোবাসার তাপ কখনো ছড়িয়ে যায় চারদিকে। আর সুখের পরশে ঢাকা সম্পর্কে চোখ পড়ে যায় কখনো কোন অসুখী মনের।
               মিষ্টিকে অফিসে ছেড়ে আসাটা প্রতিদিনের অভ‍্যেস জোজোর। শুধু কখনো বাইরে যাওয়া থাকলে একটু নড়ে যায় অভ‍্যেসটা। তবে আজকাল বাইরে যাওয়াটা একটু এড়িয়ে যায় জোজো হয়ত সুন্দরী বৌয়ের কথা ভেবেই।
        ওদের অফিসের প্রতীম বলে," আপাততঃ এখন দুটো বছর বাইরের কাজগুলো দিয়োনা বেচারাকে বুঝলে সোম দা। আরে আমি তো আছিই পোড় খাওয়া দাম্পত‍্যে অভ‍্যস্ত পুরোনো আসামী।"

       চশমাটা কপালে তুলে একবার উত্তীয়কে দেখে সোম। বিয়ের পর আরো হ‍্যান্ডসাম হয়েছে। সুখে মোড়ানো সুন্দর একটা ইয়ঙ্গ ছেলে। তার সাথে খুব ট‍্যালেন্টেড।
 তবুও বলে,-" তবে মাঝে মাঝে বাইরে যেতে হবে ভাই এই ধর নর্থ বেঙ্গল আর দরকারে দিল্লীও। আর কিছুদিন বাদে হয়ত বিদেশেও।"
             " এখনই অনেক দূরে দিয়ো না দাদা,তবে নর্থবেঙ্গল যেতে পারি।ওটা তো প্রাণ আমার। বাড়িটাও ঘুরে আসা যাবে।"
       সোম ল‍্যাপটপে চোখ রাখে মনে মনে ভাবে বৌ আর সংসার। এক দুই করে এখন তো তিন নম্বর বৌয়ে আছে। অবশ‍্য তাতেও হয়না,বাইরে গেলে নিত‍্য নতুন হলে ভালো হয়। ছেলেটার সামনে ব্রাইট ফিউচার সেই বিয়ে করা বৌয়ে আটকে গেলো।
       মনে মনে হাসে সোম আর হাসিটা ধাক্কা খায় ওর নিষ্প্রাণ সংসারের চোরা কুঠুরিতে যেখানে ধন আছে প্রাণ নেই। সম্পদের ছোঁয়া আছে কিন্তু সুখের ছোঁয়া নেই। নেই কোন কচিমুখের কিচিরমিচির। শুধু আছে সাজানো সোফা আর বিত্তের ছড়াছড়ি।

           আরেকবার  তাকায় ছেলেটার দিকে সোম,খুব ভালোবাসে মনে হয় বৌকে।তাই একদম একলা ফেলে চলে যেতে মন চায়না। নতুন বৌয়ের আদরের সুখে এখনো লালচে আভায় মাখামাখি ছেলেটা। 

                         সুখের ঘরের চাবির খোঁজ কি সবাই পায়? কজনের ঘরেই বা আছে ভালোবাসার ডানা ঝাপটানো আর সুখ পাখির কিচির মিচির? তা ঝগড়া,অভিমান যা থাকুক না কেন ভালোবাসা বাসিও তো থাকে পাশাপাশি। 

              নিউজ এডিটিং করতে করতে আনমনা হয়ে যায় উত্তমা। কিছুদিন হলো হায়দ্রাবাদ থেকে এখানে এসেছে। সবেই নতুন চাকরিতে ঢোকা তাই তেমন মুখ খোলেনা তবে এর মধ‍্যেই সোম বুঝেছে মেয়েটা কাজের আছে তারপর সুন্দরী। বেশ ঝরঝরে ইংরেজি বলে তাছাড়া তেমন কোন পিছুটান নেই দরকারে বাইরে যেতেও পারবে সুতরাং একে কাজে লাগবে। তবে এখন থেকে বেশি কিছু না বলাই ভালো। দেখা যাক।
                টুকরো কথার খুনশুটিতে উত্তীয়র দাম্পত‍্যের একফালি ছোট জানলা দিয়ে সুখের হদিশের আলো এসে পড়ে উত্তমার মনেও একটু হিংসেও হয়। মনে পড়ে নিজের অসুখী দাম্পত‍্যের দিনগুলোর কথা। তবে এখন ও মুক্ত আর স্বাধীন। আর কাউকে কোন তোয়াক্কা করবেনা।
     

*************************

         বাস স্টপেজে দাঁড়িয়েছিলো উত্তমা হঠাৎই দেখে পরিচিত গাড়িটা পাশ দিয়ে বেরোচ্ছে। এই গাড়িটা এদিকে কেন? অফিস তো ওদিকে।
 অফিসে এসে উত্তীয়কে জিজ্ঞেস করলো," আজ আপনার গাড়িটা দেখলাম।ভাবলাম একবার হাত দেখাই। তারপর দেখলাম উল্টোদিকে যাচ্ছে। তাই আর..."
--" হ‍্যাঁ আমি একটু মিসেসকে ছেড়ে এলাম তাই।"
       
       জগতে সবাই সমান হয়না। জোজো বোধহয় সেই বেশি ভালো মানুষের দলে। তাই হঠাৎই বলে ফেললো,
-" আপনি ওদিকে থাকেন? আমাকে তো যেতেই হয় প্রতিদিন। আপনি ক‍্যাব না পেলে একটা কল করবেন আমি লিফ্ট দিয়ে দেবো।"
       হয়ত এই প্রস্তাবটার অপেক্ষাতেই ছিলো উত্তমা তাই সহজেই লুফে নিলো জোজোর দেওয়া কার্ডটা। 
            আজকাল মাঝে মাঝেই লিফ্ট নেয় উত্তমা তবে প্রথমদিন বেশ রাগ হয়েছিলো। ও যখন সামনে বসার জন‍্য এগিয়ে এসেছিলো উত্তীয় ওকে পেছনটা দেখিয়ে দিয়েছিলো। পরে দেখেছিলো ল‍্যাপটপ,ব‍্যাগ সব ওখানে রাখা।
     মনে মনে হেসেছিলো,একদিন ঠিক বসবো ঐ সামনের সিটেই আমি। হোয়াটস অ্যাপে মিষ্টির লম্বা বিণুনী দোলানো ছবিটা দেখে বলেছিলো মধ‍্যবিত্ত বাঙালি বৌ স‍্যারের,তাই একটু বেশি সংসারের বন্ডিং। আচ্ছা দেখা যাক।


  আজকাল উত্তমার সাজগোজ বেড়েছে। সোম খেয়াল করে। তাছাড়া প্রতীম বলছিলো," নতুন মেয়েটাকে দেখলাম আমাদের হ‍্যান্ডসাম উত্তীয়র গাড়ি থেকে প্রায়ই নামছে। কি ব‍্যাপার বুঝতে পারছিনা।"

       সোম অতটা কান দিলোনা কথাটায় শুধু মনে মনে বললো বেড়াল হয়ে চড়াইয়ের বাসায় থাবা মারতে এগিয়েছে। কে জানে চড়াইয়ের ছোট্ট বাসাটা টিকবে কিনা?

****************************
      দুষ্টু হায়দ্রাবাদে যাবে সামনের সপ্তাহেই। যদিও রবীন একটু আপত্তি করছিলো," একা যাবি?"
-"হ‍্যাঁ বাবা,আবার কে যাবে? আমিও তো ট্রেনিংয়ে ছিলাম ওখানে"
      এর মধ‍্যে শিলিগুড়িতে এসেছে বার দুয়েক কিছু কেনাকাটা করতে। দুজনেই দিন গুনছে। জানেনা দীপ্ত কতটা সময় পাবে? তবুও একটু পাশাপাশি আর কাছাকাছি থাকা কিছুক্ষণ। প্রেমের শুকনো সোঁতায় আরেকটু বেশি জলে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া একে অপরকে।
    মিস্টি ফোন করে," হোটেলে নো ডিস্টার্ব লাগানো থাকবে তো?"
    " দিদি আমাদের বিয়েটা এখনও হয়নি কিন্তু। কি যে বলিস না তুই?"
    -"আসল বিয়ে তো হয়ে গেছে আবার কি?"
   আইএএস অফিসারের গালেও রঙ ধরে চুলের গোছা এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে মুখে চোখে।
  এখনি এতটা কাছাকাছি ভাবতে পারেনা কোথায় যেন একটা সংস্কারের বেড়ি পা জড়িয়ে ধরে।
      বালিশ আকড়ে দিদিকে বলে," প্লেটোনিক লাভটাই ভালো। বেশ আবেগে সোহাগ মিশে মনকে ভরিয়ে রাখে।"
      পাশ থেকে জোজোর গলা শোনা যায়," আমি দীপ্তকে প্রেমের পাঠ দিয়ে দেবো। তোর চিন্তা নেই। ও তোর প্লেটোনিক লাভে অনেক কিছু মিশিয়ে একদম ককটেল করে দেবে।"
-" হ‍্যাঁ রে এসে পড়েছে নাকি জিজুদা? 
-"এসে পড়েছি তো। ভূতে কথা বলছে নাকি?
-"আজকাল এত দেরি হয় কেন? দিদি বলছিলো। তারপর ফোনে নাকি কারা সব ফোন করছে? কাকে লিফ্ট দিচ্ছো?"
      -" আমি রীতিমতো ঘামছি এবার তোর জেরায়। আরে অফিসের একটা স্টাফ। নতুন এসেছে হায়দ্রাবাদ থেকে রাস্তাঘাট তেমন চেনে না। তাই মাঝে মাঝে হেল্প করি।"
-" শোনো দিনকাল ভালো নয় বেশি সমাজসেবা করতে যেয়ো না। সেই কবে লাদাখ গেছো।যাওনা একবার ঘুরে এসো দিদিকে নিয়ে অন‍্য কোথাও থেকে।"
-" তোর সাথে নিয়ে যাবি ? তাহলে যাই মানে যেতাম।"
 -" চলো কে বারণ করেছে।"
-" শুধু পেছনে লাগা। ওর এখন সময় আছে নাকি? সারাদিন অফিসের কাজে ছুটছে। সামনে তো হয়ত নর্থবেঙ্গল যাবে।"
            জোজোদা আসছে শুনে মনে একটা খুশির পালকের আদর খেলে যায় দুষ্টুর। নিশ্চয় দিদিও আসবে। বেশ কাটবে কদিন। তারপর যখন শোনে দিদি আসতে পারবে না তখন আর ভালো লাগেনা।
-" দিদি তুইও চলে আয় না প্লিজ।"
-" ও অফিসের কাজে যাবে রে। আমারও চাপ আছে।"
-" শোনো আমি ওখান থেকে ঘুরে আসি তারপর এসো।"
-" আরে অফিস যখন পাঠাবে তখন যাবো। তুই নিশ্চিন্তে যা এখন ঘুরে আয়।"

         অনেকগুলো চিন্তার জাল বুনতে বুনতে ঘুমিয়ে পড়ে দুষ্টু।

***********************
এয়ারপোর্টে  যেতে দুষ্টু বারণ করলেও এইটুকু সুযোগ হাতছাড়া করেনি দীপ্ত। ওর সাথে ট্রেনিং নিচ্ছে আব্রাহাম আর সুদীপ এই কয়েক মাসে ওদের সাথে বেশ দোস্তি হয়ে গেছে। ওরাই বললো," অফ আছে তো চলে যাও আজকে দোস্ত। এতদিন বাদে জান আসছে।"
       দুষ্টুকে কথাটা বলতেই দুষ্টু হো হো করে হেসেছিলো। " মিস্টার দীপ্ত তা তুমি জানকে এত দূরে রেখে বেঁচে আছো কি করে শুনি? "
       দীপ্ত দুষ্টুর কথার প‍্যাঁচে আটকালেও সকাল সকাল আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রথমেই নজর যায় মাথার চুলগুলোর দিকে। ইশ্ কি অবস্থা! কে জানে দুষ্টু চিনতে পারবে কি না?
                   হাওয়ার স্রোতে ভাসতে ভাসতে চোখদুটো তখন বন্ধ দুষ্টুর আজ আর অফিসের কোন ঝামেলা নেই এই মুহূর্তে কারণ মুঠোফোন এখন আপৎকালীন কোমায় চলে গেছে। দুষ্টুর গালে ভালোবাসার রঙ আর মনে খুশির ছোঁয়া। মনে পড়ে যায় পুরুলিয়ার দিনগুলো যখন প্রথম দীপ্তকে বেঁধে ফেলেছিলো ওর এলোমেলো হৃদয়ের অভ‍্যন্তরে। পলাশের রঙ না থাকলেও কুঁড়িই ফুটিয়েছিলো ভালোবাসার রঙীন ফুল।
        আর তারপর দুজনেই ভেসে গেছিলো যার যার সাফল‍্যের পর্বতারোহণের ট্রেকে। অবশেষে একটু শান্তি কারণ দুজনেই আজ একটা জায়গায় পৌঁচেছে।
         বাবার কষ্ট,দীপ্তর ভেসে যাওয়া,দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে আবার খুঁজে পাওয়া দীপ্তকে। একটু একটু করে ভালো লাগা। ওকে পৌঁছে দেওয়া মানে সাহায‍্য করা সামিটে পৌঁছতে।
            শুধু এত কিছুর মধ‍্যে প্রেমটাই ঠিক মত হলোনা। হঠাৎই রেজেস্ট্রী করে নিতে হল। তবুও দিদির বিয়ের সেই রাতটা সারা জীবন হয়ত মনে থেকে যাবে ওর।
        তবে এসব নিয়ে জোজোদার খুব দুঃখ থাকলেও দুষ্টুর বেশ লাগে ওদের অল্প অল্প প্রেমের গল্প।যেখানে ঝগড়া কম প্রেম বেশি। অবশ‍্য দীপ্ত আর ঝগড়া ঠিক জমেনা। আগে তো কথাই বলতো না এখন বেশ বলে। তবে প্রেমের কথা....না থাক সেগুলো ছোট ছোট মেসেজেই বন্দি।
           এই তো কালই ও বললো," আমি আসছি চা বাগানের সবুজ নিয়ে তোমার পলাশ রাঙানো হৃদয় খানি। ইশ্ তারপর আর কিছু আসছেনা মাথায়।"
      দীপ্ত বলে," আমি অত বলতে পারিনা,পলাশের কার্পেট পেতে রাখবো হৃদয়ে।"
       তারপর দুজনের অনেক হাসি। পদ যতই উঁচু হোক না কেন? প্রেম করতে বাধা কোথায়? প্রেমিকা তো একটাই। আগের দিনের বাদশারাও তো কত বেগমের মন জিততো।
              দীপ্তর টুকরো কথাগুলো মনে করে আবার কল্পনার দোলনায় একটু ভেসে নেয় মাঝ আকাশে দুষ্টু।

        দীপ্ত এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেছে,একটু বাদেই ল‍্যান্ড করবে ফ্লাইট। কি বলবে দুষ্টু? ও তো বারবার বারণ করেছে আসতে।
             দুষ্টু চোখ রাখে জানলায় গাঢ় মেখের রাজপুরী এখন অনেকটা হাল্কা নিচে শহর দেখা যাচ্ছে। হয়ত ঐ শহরের কোন রাস্তা দিয়েই আসছে দীপ্ত ওর জন‍্য। খুব বারণ করেছে ও তবু যে শুনবে না সেই কম কথা বলা ছেলেটা সেটা ও ভালো করেই জানে।

************************
     
    হায়দ্রাবাদের বাতাস আজ বসন্তের গন্ধ মাখা সেই গন্ধ কিছুটা মেখে নিয়েছে দীপ্তও। চোখ রাখে প্রতীক্ষায় গেটের দিকে। ওর ক্লিন সেভড গাল দুটো চকচক করছে। কিছুটা মানসিক শান্তি আর নিরাপত্তা মানুষকে অনেক বেশি সুন্দর করে। কালচিনির দুঃস্থ ছেলেটা আজ স্বপ্নপূরণের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে সেটা ওর আত্মবিশ্বাসী চোখমুখ বলে দেয়।
                  ফোনে টুং করে একটা মিঠে ঘন্টি বাজে,স্ক্রীন আলো করে কয়েকটা শব্দ আমি পৌঁছে গেছি।

         রবীনের ফোনে আর মিষ্টির ফোনেও আসে একই বার্তা। নিশ্চিন্ত হয় ওরা। শুধু অনু রবীনকে বলে,"আমাদের সময় এই সব ছিলোনা। রেজেস্ট্রী হলেই বা কি এখনও তো সিঁদুর পরেনি মাথায়।তারমধ‍্যেই চলে গেলো।"
        বাকি কথাগুলো অব‍্যক্ত থাকলেও রবীন বোঝে। তাই বলে,"দুজনেই যথেষ্ট বুদ্ধি রাখে অনু আর ভেবোনা।"

              দীপ্তর চোখ সানগ্লাসে ঢাকা থাকলেও দূর থেকে বুঝতে পারে লম্বা টানটান চেহারার ছোট চুলের একমুখ দুষ্টুমি মাখা মুখটাই ওর প্রেমিকা। কিছু কি বদলেছে এই বেশ কয়েকটা মাসে? 
                    হয়ত আরো একটু বেশি সুন্দরী হয়েছে।
   হাত নাড়ে দীপ্ত দুষ্টুর মনের ভেতর অনেকগুলো প্রজাপতি হঠাৎই রঙ বেরঙের ডানা মেলে উড়ে আসে। বলতে ইচ্ছে করে এবার কিন্তু সত‍্যি তোমাকে আইপিএস অফিসার লাগছে।
               দুধসাদা টিশার্ট আর হাল্কা আকাশি জিন্সে খুব স্মার্ট লাগছে ওকে,নাহ্ আর দীপ্তদা নয়। দীপ্তর টানটান শরীরে এখন নিয়মিত শরীর চর্চার ছাপ পড়েছে। যা ওকে করে তুলেছে আরো বেশি পুরুষালি। সত‍্যিই জীবনের প্রতিটা ধাপ একটা অন‍্য ছাপ রেখে যায় মানুষের জীবনে।
                       হঠাৎই দীপ্তকে অবাক করে সেই কালচিনির ডানপিটে মেয়েটা ওকে জড়িয়ে ধরে এয়ারপোর্টেই। এতদিনের জমানো আবেগ ভালোবাসা সবই ফুরফুরে মেঘের মত উড়ে বেড়াতে চায় দীপ্তর শরীরের গন্ধ মেখে। 
             একটু অবাক হলেও দীপ্তর বলিষ্ঠ হাতদুটো কয়েক সেকেন্ডের জন‍্য ধরতে চায় দুষ্টুর জমানো প্রথম আবেগটাকে গ্ৰীষ্মের প্রথম ঝরে পড়া বৃষ্টির মত। যার শীতলতা কিছুটা হলেও মুছে দেয় অপেক্ষায় না ঘুম আসা রাতের ক্লান্তি।

            ট‍্যাক্সি ছুটে চলেছে হোটেলের দিকে ওদের ইনস্টিউটের কাছেই হোটেল নিয়েছে দীপ্ত। দুষ্টুকে দূরে রাখতে মন চায়না,দুজনেরই অনেক আকাঙ্খিত তিনটে দিনের অবকাশ। তাই চোখে হারাতেও ইচ্ছে করে না। 
         " আমিই কিন্তু চলে এলাম শেষ পর্যন্ত। অবশ‍্য মা অনেকদিন ধরেই বলছিলো তুই একবার গিয়ে দেখে আয় ছেলেটাকে। তোর চোখ দিয়েই আমি দেখে নেবো।"
        দুষ্টুর মুখে মা ডাক শুনে দীপ্তর মুখে একটা হাসি লুকোচুরি খেলে। আসলে মা হয়ত ওকে আর দুষ্টুকে কাছাকাছি দেখতে চায় খুব তাড়াতাড়ি। তবে ওর অনুপস্থিতিতে দুষ্টু অনেকটা বেশি আগলে রেখেছে মাকে।

               হায়দ্রাবাদ শহরের পাতায় পাতায় ইতিহাস আজও নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে অনেক স্মৃতি নিয়ে। 
      দুষ্টুর চোখ জানলার বাইরে যায়। দীপ্ত আগে থেকেই ঠিক করেছে আর তুই বলবে না মেয়েটাকে এবার তুমি। তবে তুইটা কেন যেন বারবার উঁকি মারে মনের মাঝে। এতদিনের অভ‍্যেস তো।
   " তুমি একটু ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি তার মধ‍্যেই চলে আসবো। একটা ছোট কাজ আছে।"
       " তুইটাই তো ভালো ছিলো আবার তুমি কেন? "
  " মায়ের একটু আপত্তি তাই বৌ ভাবার অভ‍্যেস করছি ডানপিটে দুষ্টুকে।"
     অন‍্য সময় হলেই দুষ্টু চেঁচাতো....দীপ্তদা।
  সত‍্যিই তো ও তো দীপ্তকে দাদা বাদ দিয়ে একদম অন‍্যরকম কেউ হিসেবে মানে একান্ত আপন করে পেতে চায়। তাই বলে," হুঁ বুঝলাম,তবে সাতপাক এখনও ঘোরা হয়নি। মা অবশ‍্য সেটাকেই বিয়ে বলে জানে। ছাড়ো ও সব তোমার ট্রেনিং কেমন চলছে বলো? আর তো বেশি বাকি নেই। বেশ কয়েক ধাপ পেরিয়ে এসেছো।"
       দুষ্টুর ফোনটা বেজে ওঠে ওপারে মিষ্টি কলকল করে," কি রে কোথায় তোরা? মানে বন্ধ ঘরে নাকি?"
     দুষ্টুর গালে লালচে আভা, দীপ্ত বুঝতে পারে ওপার থেকে একটা ছোটখাটো অভিজ্ঞ আক্রমণ চলছে। তবে ওর তেমন কোন তাড়া নেই,আগে দুষ্টুর মনটাকে পড়তে চায় ভালো করে। ছোট থেকে দুষ্টুকে দেখেছে দীপ্ত,একটা সময় ওর দুষ্টুমিকে ভয় পেত। তারপর কত কিছু অজানা কথা একটু একটু করে জানতে জানতে বুঝেছে দুষ্টু খুব ইমোশনাল। যদিও চাকরির জায়গায় রীতিমত মোশনে সামলাচ্ছে সবটাই তবুও ওর মনের ছোট ছোট ভালোলাগা গুলো খুঁজে নিতেই বেশি ভালো লাগে এখন।
                দুষ্টু হাতটা বাড়ায় ," জোজোদা,তোমার সাথে কথা বলবে। মাথা খাচ্ছে আমার। "
           ওপারের অনেক কথাই ভেসে আসে দুষ্টুর কানে আর এপাশে তখন শুধু হাসির শব্দ।
- " তোরা এলি না কেন? বেশ হত তাহলে।"
-" এই তিন দিন শুধু তোদের, এনজয় কর। পরে গল্প শুনবো।"

   
 গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে হোটেলের সামনে। রিসেপশনে এগিয়ে যায় দীপ্ত, খাতায় সই করে ফর্মালিটি ফিলাপ করে। দুষ্টু দেখে আ ডাবল বেড রুম ইজ বুকড ফর মিঃ এন্ড মিসেস...
     নিজের আই কার্ডটা এগিয়ে দেয় দুষ্টু। তবে বুকে তখন আছড়ে পড়েছে দুরন্ত সমুদ্রের ঢেউ খাতার লেখাটা দেখে। অবাক লাগে খুব,তবে এটাই তো সত‍্যি ও তো এখন মিসেস অফ দীপ্তময়....

***********************
  মিষ্টিকে অফিসে ছেড়ে হাত নেড়ে গাড়িতে স্টার্ট দেয় জোজো। কদিন ধরে মিষ্টির মনটা ভালো নেই। কেন যেন চুপচাপ আছে। অবশ‍্য বোনের সাথে হেসেই কথা বলছিলো। জোজো জানে মিষ্টি খুব আদুরে আর মুডি। তাই হঠাৎই মনে হলো হয়ত ভালোবাসা আরেকটু বেশি বেশি দিতে হবে। সত‍্যিই কদিন ফিরতে অনেকটা রাত হয়ে যাচ্ছে। গত রাতেও খায়নি মিষ্টি,ঘুমিয়ে পড়েছিলো। সামনে চোখ রাখে,উহ্ কি জ‍্যাম! নাহ্ আজ অন‍্য রাস্তা ধরতে হবে।
     ঘড়িতে চোখ রাখে উত্তমা,নিশ্চয় এতক্ষণে মিসেসকে ড্রপ করা হয়েছে। এবার ফোনটা করবে।
        ফোনটা রিং হয়ে যায় কেউ ধরেনা। আরেকবার রিং হতেই সেই ভরাট গলাটা শোনা যায়। তবে উত্তমা কিছু বলার আগেই ওপার থেকে উত্তর আসে," সরি আমি প্রায় অফিসের কাছে। আজ অন‍্য রাস্তা ধরেছি।"
            রাগে দাঁত চেপে ঠোঁট কামড়ে ধরে উত্তমা। গাঢ় লাল লিপস্টিকটা ধেবড়ে যায়। "ফিলিংলেস একটা, সারাক্ষণ শুধু বৌয়ের পা চাটছে। একদম ছাপোষা ভেতো ঘরমুখো বাঙালী। উফ্ এখন আমাকে ক‍্যাবে যেতে হবে।"

************************

     হোটেলের ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে যায় দুষ্টু ওর দুষ্টুমি ভরা চোখদুটো একটু মেপে নেয় দীপ্তকে। 
     মনটা বলে ওঠে," ওহ্ তুমি তো বেশ! মানে এত কিছু প্ল‍্যান করেছো কখন? তার মানে প্রেমটা বেশ বুঝে গেছ এই কয়েক মাসে।"
         দীপ্ত একদম ইনোসেন্ট একটা চাউনি দিয়ে জানতে চায় কি হল?
      ততক্ষণে ওরা একটা বড় ফুলের বোকে দেয় ওদের হাতে। অনেকগুলো লাল গোলাপ উঁকি মারছে বোকে থেকে। ভালোবাসার রঙ নাকি লাল? হবে হয়ত। দুষ্টুর সাদা কুর্তা আর কালো জিন্সেও লাগে লাল গোলাপের ছোঁওয়া। মুহূর্ত বন্দি হয় ওদের ক‍্যামেরায়। দুজনের অনেকদিনের কবিতা না লেখা সাদা হৃদয়ে আজ লাল গোলাপের ছোঁয়া।
          তাড়াতাড়ি দুষ্টুকে একটা প‍্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে দীপ্ত একটা কাজ আছে আসছি ফিরে তাড়াতাড়ি। তুই ততক্ষণে বলতেই আবার সামলে নিয়ে তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও বলেই চলে গেলো ছুটে।
    অবাক হয়ে গেলো দুষ্টু বুঝতেই পারলো না কোথা থেকে কি হল। মানে প‍্যাকেট এলো কোথা থেকে এল?
          ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় দুষ্টু,হোটেলটা বেশ ভালো,সুন্দর ঘরগুলো। সুন্দর করে সাজানো। সুগন্ধীতে ভরপুর ঘরে মনটা এমনিতেই প্রেম রঙে সেজে ওঠে দুষ্টুর।
                       সুটকেশটা খুলতে গিয়ে নজর পড়ে যায় প‍্যাকেটটার দিকে। কি দিয়ে চলে গেল?
            প‍্যাকেটটা খুলতে গিয়ে চোখ পড়লো লেখাতে,বাব্বা ওপরে রীতিমত ওর নাম লেখা। কোথা থেকে এনেছে কে জানে?
      প‍্যাকেট খুলে রীতিমত মাথায় হাত দেয় দুষ্টু, একটা দুটো নয় চারটে ড্রেস। মানে শাড়ি,কুর্তা,চুড়িদার আর জিন্স মিলিয়ে। সাথে অ্যাকসেসরিজ আর ব্লাউজ সব আছে। কপালে চোখ ওঠে দুষ্টুর এত গোছানো হল কি করে সেই মুখচোরা ছেলেটা? এত একদম প‍্যাকেজ পুরো এই তিন দিনের। বুঝতে পারে দীপ্ত ওর পছন্দের সাজে সেজে ওঠা দুষ্টুকে দেখতে চায় চোখ ভরে। আর হয়ত তাই চলে গেলো তাড়াতাড়ি করে প‍্যাকেট ধরিয়ে।
         ছোট প‍্যাকেটটা আবার কি? খুলে দুটো বড় চকোলেট পায় আর সাথে একটা চিঠি।
          একটা সময় জোজোদা নিয়মিত ওকে চকোলেট দিত। আঙ্কেল আনলেই সেই চকোলেটের ভাগ ওরাও পেত। আর তা নিয়ে দিদির সাথে কম ঝামেলা হত না।
         " জানি তুই চকোলেটের পোকা ছিলি। তখন দিতে ইচ্ছে হলেও পারিনি। এখন খাস তো?"
       একা একাই হাসে দুষ্টু,ছেলেটা একদম ফিদা হয়ে গেছে। কতদিকে খেয়াল! দিদি শুনলে বলত এমন প্রেমিক কজনের ভাগ‍্যে জোটে? জোজোদা তো কম করে না । তবুও দিদি বলতে ছাড়েনা। সত‍্যিই কি বিয়ের আগের দিনগুলোই ভালো। বিয়ের শোলার মুকুট লোহার চেয়েও ভারী। বর বৌ দুজনের মাথাতেই চাপে দায়িত্ব। হারিয়ে যায় ভালোবাসা আর নিপাট বন্ধুত্ব অসাড় সংসারে সুখ সাজাতে।
        জামা কাপড়গুলো দেখতে থাকে দুষ্টু প্রত‍্যেকটাতেই আছে ওর প্রিয় মানুষের ভালোবাসার ছোঁয়া। এত মাপজোক পছন্দ সব ঠিক মত করলো কি করে দীপ্ত? 
        বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে,টুক করে চুড়িদার পরে নেয় দুষ্টু। আজ আর শাড়ি পরতে ইচ্ছে করছে না। আগে বললে কোন ড্রেসই আনতো না সঙ্গে। এখানে তো সবই গুছিয়ে রেখেছে একজন। আয়নার সামনে দাঁড়ায় দুষ্টু একদম পারফেক্ট ফিট। কি করে হলো? কিছুই তো জিজ্ঞেস করেনি। আজকাল আর তেমন সাজগোজ করা হয়না,তবুও কানের ঝোলা দুলটা পরে নেয় যত্নে দুষ্টু।

******************
  মুঠোফোনে জলতরঙ্গ দোলে দিদি ফোন করেছে ভিডিও কলিং। ঘড়িতে চোখ রাখে দুষ্টু, এখন তো ও অফিসে ওহ্ তার মধ‍্যেই পাহারায় রাখতে চায় বোনকে।
              -"দিদি বল,অফিসে মন বসছে না তাই তো? এই দেখ আমি একা। দীপ্ত এখানে নেই।"
   ওদিক থেকে মিষ্টির হাসি ছড়িয়ে পড়ে চুপচাপ ঘরে," দেখি দেখি, কি সুন্দর লাগছে রে তোকে! দেখি কেমন ফিট করেছে ড্রেসটা? একটু দেখা।"
-" দিদি আমি কিন্তু একটা রহস‍্যের গন্ধ পাচ্ছি। মানে ড্রেসের ফিটিং নিয়ে তোর এত মাথা ব‍্যথা কেন?"
          দিদিটা সত‍্যিই বোকা,ঠিক ধরা পড়ে গেলো যে দীপ্ত বন্ধুকে সাহায‍্যের হাত ওরাই বাড়িয়ে দিয়েছে সুদূর কলকাতায় বসে। নিশ্চয় এইসব ঐ জোজোদার বুদ্ধি। ঠিক একটু খোঁচাতেই সবটা বেরিয়ে এলো।
         দুষ্টুর চোখে খেলে মজার হাসি-" আমাকে ফাঁকি দেওয়া কি এত সহজ! তাই ভাবছি দীপ্ত এত কিছু জেনে ফেললো এই কয়েক মাসে? ওদিকে কলকাঠি নাড়ছে অন‍্য কেউ।"

       কথা বলতে বলতে বেলটা বেজে ওঠে। ততক্ষণে দুষ্টু মেখেছে ভালোবাসার সৌরভ শরীর জুড়ে। 
-" মনে হয় এলো,দাঁড়া বলছি সব।"
-" এখন কিছু বলিস না,আনন্দ কর। এটা আমাদের বন্ধুদের ব‍্যাপার। রাখি পরে কথা হবে।"
       দীপ্তকে তেমন ভাবে পাজামা পাঞ্জাবী পরতে দেখেনি দুষ্টু এক দুদিন ছাড়া। আজকে বেশ অন‍্য রকম লাগছে।একটু অবাক হয়ে দেখলো ওর সাথে মোটামুটি ম‍্যাচিং। এমনটা হল কি করে? এটা তো কেউ জানেনা ও এখন কি পরবে?
    হঠাৎই দীপ্ত বলে ওঠে, "এটা বোধহয় টেলিপ্যাথি,চলো গাড়ি দাঁড়িয়ে আজ এইবেলা একটু বাইরে হাল্কা কিছু খেয়ে একটু ঘোরাঘুরি করব। যতটা একসাথে থাকা যায়।"
     দীপ্ত মুখে কিছু না বললেও ওর চোখ দুটো অনেক কিছু বলে যায় দুষ্টুকে। হাল্কা হলদে পাঞ্জাবী আর জ‍্যাকেটে বেশ লাগছে দীপ্তকে। ওর পুরুষালি চেহারা এখন নিয়মিত শরীর চর্চায় আরও বেশি আকর্ষণীয়।
     দুষ্টু এগিয়ে আসে হাত বাড়ায় দীপ্ত। শক্ত মুঠোতে দুষ্টুর হাতটা ধরে দীপ্ত। ওর গায়ের মিঠে গন্ধ একটা মাদকতা ছড়ায় বসন্তের বাতাসে। এগিয়ে যায় ওরা গাড়ির দিকে।

********************
    অফিসে এসে উত্তমা আর সুযোগ পায়না জোজোকে কিছু বলার। ওকে কিছু বলতে খুব ইচ্ছে করে। অন্ততপক্ষে আজকের সাজটা একবার দেখাতে। অফিসে এসেই দেখতে পায়না ওকে সিটে। 
       জিজ্ঞেস করাতে কোন সঠিক উত্তর পায়না। তারপর একটা সময় দেখতে পায় তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে যাচ্ছে কোথাও একটা। ঘড়িতে চোখ রাখে উত্তমা এখনও ছুটির সময় হয়নি।নাহলে একবার ট্রাই করত কোন একটা অজুহাতে সঙ্গ নেবার। ধুৎ আজ দিনটাই খারাপ গেল সকাল থেকে। ল‍্যাপটপে চোখ রাখে উত্তমা,নতুন চাকরি তাই যা খুশি করতে পারেনা। এখনও অনেকটা কাজ বাকি। তবুও ইচ্ছে করল যদি চলে যাওয়া যেত কোন একটা অজুহাতে। যাবে নাকি একবার? মানে চেষ্টা করবে নাকি?
                " ম‍্যাডাম শুনছেন?"
   দুবার ডাকার পর মাথা তোলে উত্তমা। ইশ্ খেয়ালই করেনি। জানতে পারে সোম স‍্যার ডাকছেন ওকে। এই একটা হয়েছে,ঠিক প্রতিদিন ছুটির আগে দিয়ে ওকে ডেকে কোন একটা কাজ ধরাবে। এই করে প্রতিদিন বেরোতে দেরি হয়ে যায়। একদিন.. কাল করি? বলাতে চিবিয়ে উত্তর দিয়েছিলো," আজকের কাজ দরকার হলে আগের দিন সেরে রাখবেন। কালকের কোন প্রশ্ন নেই। এটা খবরের অফিস,আর বাসী খবরে কারো উৎসাহ থাকেনা।"
       ফ্রন্ট ক‍্যামেরায় নিজেকে একবার গুছিয়ে নেয় উত্তমা। একদিন এটা নিয়েও শুনেছে। উনি নাকি খুব টিপটপ লুক পছন্দ করেন। আজ ভারী দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই একটা কমপ্লিমেন্ট পেলো,নিজেকে একটু মনে মনে আদর করলো উত্তমা। সত‍্যিই লিপস্টিকের শেডটা ভালো। যাক,বসের সুনজরে থাকা ভালো। দরকারে এই মাঝবয়সী লোকটাকে হাত করেই পৌঁছে যাবে উত্তীয়র কাছে। বাইরের একটা ট্রিপে যদি উত্তীয়র সাথে যেতে পারে তাহলে আর ওকে পায় কে? সারাদিন এক সাথে থাকা যায় যদি কয়েকটা দিন তাহলে ঠিক মুঠোয় করে নেবে ছেলেটাকে।
                      সোম চোখ রাখে উত্তমার দিকে,লাস‍্যময়ী। এখনও নিজেকে আগলে রেখেছে। হয়ত সন্তর্পণে এগোচ্ছে কোন উদ্দেশ‍্যের দিকে। মুখে হাসি মাখা,ঠোঁটে সেক্সি পিঙ্ক রঙে আটকাতে পারে কোন মাঝবেলার ফেরারী মন। নোট দিতে থাকে সোম,চোখ বুঝতে চায় কিছু একটা। উত্তমা একটু ভুল করে ফেলে।
         সোম বুঝতে পারে কোন কারণে মন নেই কাজে মেয়েটার।

**********************
   নিউমার্কেটের ফুলের বুটিকে মাঝে মাঝেই আসে জোজো। ও জানে মিষ্টি খুব ফুল ভালোবাসে। ওরা দূই বোনই একটু সবুজ পাগল। কিছু করার নেই,কালচিনির চাবাগানের আদরে মানুষ। তাই মাঝে মাঝেই ভালোবাসার গন্ধ বাড়াতে ফুলের চাদর পেতে দেয় জোজো। 
        রহমান এগিয়ে আসে ও জানে জোজোর কি পছন্দ। তবুও এবার আরেকটু বেশি সময় নেয় জোজো ফুলের রঙে ছোখ বাঁধতে। কাল মহারাণীর জন্মদিন,একটু মুখটা ভার কদিন থেকে। তাই আজ ঠিকই করেছিলো তাড়াতাড়ি ফিরবে বাড়িতে। গাড়িতে বসে জোজো ফুলগুলো গুছিয়ে রাখে পেছনের সীটে। প‍্যাকেটটাও ঠিকমত রাখে। অনলাইনে এসেছে আজই,আর কিছুটা কিনেছে বসুন্ধরাদির বুটিকে গিয়ে।
         ফ্ল্যাটের দরজার বন্ধ কোলাপসিবল গেট বলে দেয় মহারাণী এখনও ফেরেনি। সাবধানে ভেতর থেকে আবার বাইরের দিক থেকে তালাটা ঝুলিয়ে দেয় জোজো।
          এখনও কিছুটা সময় আছে,এরমধ‍্যে ফুলগুলো সাজিয়ে নেয় ভালোবাসার আদরে। মিষ্টির মন ভালোর কফি আর স‍্যান্ডউইচ রেডি করে রাখে। নিজে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসেই দেখে টুং করে বার্তা এলো "আমি এই বেরোলাম। তুমি কোথায়?"
        জোজো উত্তর দেয়," ওকে যাও,আমি ফিরব একটু বাদেই।"
        অনেকদিন বাদে একটু অন‍্যরকম প্ল্যান,দুষ্টুমি ভরা হাসি খেলে যায় জোজোর মুখে। এখন শুধু চুপচাপ করে অপেক্ষা। ব্লু টুথ স্পীকারটা অন করে দেয় জোজো বাজতে থাকে...আজও আছে গোপন,ফেরারী মন।

***************************
দীপ্ত জানে দুষ্টুর খুব প্রিয় বিরিয়ানী, অনেকদিন বায়না ছিলো হায়দ্রাবাদের সেরা বিরিয়ানী খাবে। কতটুকু খাবে জানে দীপ্ত। তবুও আজ আর কোন বায়নাই বাকি রাখবে না দুষ্টুর। একটা সময় ছিল যখন দুষ্টুকে কাছে কোনদিন পাবে সেই স্বপ্নই দেখেনি।
         গল্প করতে করতে হেসে গড়িয়ে পড়ছে দুষ্টু,নিভু নিভু আলোতে খুব সুন্দর লাগছে ওকে দেখতে। দীপ্ত চোখ ফেরাতে পারছে না আজ,হয়ত চোখ ফেরাতে পারেনি কোনদিনই প্রেমে থাকার সময় থেকেই। এত পজেটিভ মেয়েটা যে ওর চিন্তার জোয়ারে ভাসিয়ে নিতে পারে যে কোন কাউকে।
      গজলের সুরে আর নিজামী মেজাজে ভেসে যাচ্ছে আজ ওরা। দুষ্টুর হাতটা ধরেছে দীপ্ত। একটা চোরা ভালোলাগার চাউনি খেলে যায় দুষ্টুর মুখে। হায়দ্রাবাদের বাতাসে প্রেমের হাল্কা সুবাস আর বিরিয়ানীর গন্ধে ম ম করছে।

           কোলাপসিবল গেটের আওয়াজে জোজো বুঝতে পারে এসে পড়েছে মিষ্টি। মোমবাতিটা জ্বালিয়ে ফেলে। কলকাতার পথে ততক্ষণে আঁধার নেমেছে। দরজা খুলে মোমবাতি জ্বলতে দেখে একটু চমকে যায় মিষ্টি,এমনিতেই ওর একটু ভূতের ভয়। তবে আসল ভূত যে এইভাবে জড়িয়ে ধরবে ভাবেনি।
         " কেমন ভয় পাইয়েছি বল।"
  " একটুও ভয় পাইনি,জানি তোমার কান্ড।"
-" অবাক হওনি?"
    ঠোঁট ওল্টায় মিষ্টি,তবে মনে খুশির পালকটা আজ একটু বেশিই ছটফটিয়ে মনটা তোলপাড় করলো। মনে পড়ে গেলো জোজোর কথাটা -"পুরোনো হতেই দেবনা আমাদের ভালোবাসা। বরং নতুন নতুন থিম এনে বদলে দেবো একঘেয়েমি।"
-" এটা কি পুজো নাকি? থিম আনবে?"
ওর কানে কানে বলেছিলো জোজো," আরে প্রেমও তো একরকম পুজো। শুধু ওখানে দিনক্ষণ থাকে এখানে থাকেনা।"
         
           
                      

          

    
  




         
          
                

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...