(১)
#মিলনের_রঙ#
ওরা চেয়েছিল চলে যাওয়া। মেনে নিয়েছিলেন রাধিকা, শুধু মনটা কেমন করেছিল ছোটকুর জন্য। এই তো কিছুদিন আগেই ছেলেটা বিদেশে গেল। আর তার পরেই রমলা পাল্টে গেছিল একটু একটু করে। অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছিল রাধিকাকে নিয়ে।
" আচ্ছা আমি কি আর কোনদিনই ঝামেলা ছাড়া চলতে পারবো না বলতো? ওঁর নিরামিষ,উপোস এই নিয়ে আর কতদিন চলব এই ভাবে?
অনিন্দ্যও আজকাল বিরক্ত হয় কথায় কথায় বুঝতে পারেন রাধিকা। বেশি বয়েস পর্যন্ত বেঁচে থাকাও বোধহয় একটা দায়। তখন মনে হয় শুধু হে কৃষ্ণ আর কতদিন? এবার মুক্তি দাও ঠাকুর। কিন্তু সে তো হবার নয়। ওরা কথা বলেছিল বৃদ্ধাশ্রমে, এক কথায় রাজি হয়ে গেছিলেন রাধিকা। শুধু একবার বলেছিলেন," এই বেশ ভালো, বার্ধক্যের বাণপ্রস্থ। শুধু ছোটকুটার সাথে যদি একবার দেখা হত!"
মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো দিন। রাধিকা বুঝতে পারেন ওঁর আদরের ছোটকু যাকে গোপাল বলে ডাকতেন সেও ভুলে গেছে তাকে।
নিয়ম মেনেই বসন্ত এসেছে,আশ্রমের শিমুল গাছের কাঁটা ঢেকেছে গাঢ় লাল রঙের ফুলে। আজ দোল উৎসব ফাগুয়ার রঙের ছোঁয়া একটু হলেও লেগেছে বাণপ্রস্থের বৃদ্ধাশ্রমে। হঠাৎই একমুঠো আবির এসে আপন আনন্দে ছড়িয়ে পড়ে রাধিকার পায়ে। তারপর যত্নে রঙ ছড়ায় কপালে আর গালে।
চোখের জলে ভিজে যায় আবির।
" গোপাল এসেছিস!"
" হ্যাঁ রাধারাণী, তোমাকে ছাড়া যে বৃন্দাবন অন্ধকার। আমাকে মালপোয়া ভেজে দেবে কে?"
আদরে জড়িয়ে ধরেন রাধিকা নাতিকে
-" আমার গোপাল সোনা।
কিন্তু ওরা যদি..... ?"
"ওদের মনের কালো রঙ মুছিয়ে যে তোমাকে রঙে রঙে ভরে দিতে এলাম। ছোট্টবেলায় আমার হাতের মুঠোয় যে তুমিই রঙ ভরে দিয়ে বলেছিলে..আজ সবার রঙে রঙ মেলাতে হবে।"
(২)
#রঙ_পাল্টায়#
খাতায় কলমে আবিরার সাথে সম্পর্ক রয়ে গেছে সবুজের। আবিরা এখনও সবুজের স্ত্রী। একটা সময় সবুজকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল আবিরা। ওর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আর আদর্শ মুগ্ধ করত ওকে। ভেসে যেত ওর বক্তৃতায়,টগবগ করে ফুটত যৌবনে পা রাখা মনটা।
সময় পাল্টেছে, পাল্টেছে সবুজও। দিন বদলের সাথে সাথে বেশ কয়েকবার হয়েছে দলবদল। আজকাল আর ওরা একসাথে থাকে না। একই আবাসনের পাশাপাশি দুটো ফ্ল্যাটে থাকে। তবে মাঝখানের দরজাটা যে বন্ধ থাকে রাতে তা অনেকেই জানে না। আর জানলেই বা কি? অনেক সহ্য করেছে আর নয়। তবে আবিরা জানে আজ ওর দরজায় আবার এসে দাঁড়াবে সবুজ কারণ ওর বিশ্বাস আবিরার মাখানো রঙের ছোঁয়া ওকে জয়ী করে।
চোখ বুজে আবিরার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সবুজ। আবিরার মুঠোতে ভরা রঙ ছুঁয়ে যায় ওর কপাল। হঠাৎই চোখ খুলে চমকে ওঠে সবুজ ওর সাদা পাঞ্জাবিতে মাখামাখি কালো রঙ।
" একি করলে তুমি? কালো রঙ লাগালে?"
" আজ যে আমার কাছে একটা রঙই আছে তোমার জন্য। সেটাই দিলাম।"
(৩)
#রঙের_ছোঁয়ায়#
"আমার আজ ছুটি হবে তো ডাক্তার বাবু?" আকুল স্বরে বলেন ললিতা।
" আজ নয়, আর দুএকটা দিন থাকতে হবে আপনাকে। আমাদের সাথে থাকবেন,ভালোই তো।"
" আমার রাধাগোবিন্দের দোল খেলার কি হবে এবার? বাড়িতে তো তেমন কেউ নেই।"
ডঃ চঞ্চল চৌধুরীর মনটা চঞ্চল হয় হঠাৎই। হায় রে ভগবান তোমার সেবার জন্য যে এত অস্থির তাকে অসুস্থই বা করেছ কেন? এমনি ছিলেন ওঁর মা,বাড়ি ফেরার জন্য কতই না অস্থির হয়েছিলেন অথচ তাকে ফেরানো যায়নি বাড়িতে। সত্যিই বোধহয় হসপিটালের বেডে মানুষ বড় একলা,অকারণেই সইতে হয় কত যন্ত্রণা অথচ সেই সময় আপনজনেরা থাকে না পাশে।
সারা রাত যন্ত্রণায় ছটফট করে ভোরের দিকে চোখদুটো জড়িয়ে এসেছে ললিতার মনে হল যেন গোবিন্দ এসে আবিরের ছোঁয়ায় মুছে দিয়ে গেছে সব যন্ত্রণা।
হঠাৎই ঘুম ভেঙে যায় ললিতার দেখেন বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে ওঁর সারাক্ষণের সঙ্গী রেবা কোলে রাধাগোবিন্দ। পাশে দাঁড়িয়ে ডাক্তারবাবু মুখে অমলিন হাসি।
" এটা কি করেছিস রেবা? এই হাসপাতালে রাধাগোবিন্দকে!"
" আমিই ফোন করে বলেছিলাম বাড়িতে। এ কেমন রাধাগোবিন্দ শুনি? ভক্ত এখানে শুয়ে চিন্তা করছে আর ওঁর কোন মাথাব্যথা নেই। একদিন তো আসতে পারে নাকি আপনাকে দেখতে? নিন এবার আবিরের ছোঁয়া দিন ইচ্ছে মত।"
হঠাৎই চোখটা ঝাপসা হয় ললিতার। কাঁপা হাতে তুলে নেন একটু আবির।
ভক্ত আর ভগবানের মিলন দেখতে গিয়ে চশমার কাঁচটা মুছতে সরে যেতে হল হঠাৎই। আজ মায়ের দেওয়া রঙের ছোঁয়া বড় মনে পড়ছে।
#সচেতনতা
১
মনের ভেতরটা হু হু করে ওঠে মাঝে মাঝেই রেবার গত বছরের সেলের বাজারটা একদম মাটি হয়ে গেছিল করোনার জন্য। এবার ভেবেছিলেন একশোর জায়গায় দুশো ভাগ উশুল করে নেবেন কিন্তু হলো না। এমন এক বৌমা এসেছে বাড়িতে তার উৎপাতে বাড়ি থেকে বেরোনোই মুশকিল। ও বাড়ির লতা ফোন করেছিল," ও দিদি যাবে নাকি গো একবার হাতিবাগানে? সেলের বাজারে তো তুমি যাও প্রতি বছরই।"
লতাকে কিছু বলার আগেই বৌমার দিকে তাকায় রেবা আড়চোখে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে মলি ওঁর দিকে।
তাই গলাটা নামিয়ে বলে," না গো এবার আর হবে না হাঁটু ব্যথাটা খুব বেড়েছে।"
ফোন ছাড়তেই মলি বলে," আচ্ছা মা তোমাকে বলেছি না করোনায় বেরোবে না বাড়ি থেকে। তাও তুমি?"
মনে মনে গজগজ করেন রেবা, কাজ ফ্রম বাড়ি করে মাথা কিনেছে আর কি? সব কাজ পন্ড করছে এদিকে। হাজার গন্ডা লোক মাস্ক ছাড়া দিব্যি ঘুরছে ফিরছে আর ওঁর বেলাতেই যত ঝামেলা। সারাদিন বাড়িতে বসে আছে বৌ আর ছড়ি ঘোরাচ্ছে।
" তুমি তো বাপু বলেই সারা,আর বছর পয়লার দিন আমার ঠাকুর কি পরবে শুনি? সেই জন্যই তো যেতে চেয়েছিলাম হাতিবাগানে।"
মোবাইলের মেসেজে চোখ যায় মলির আক্রান্তর হারে গা কেঁপে ওঠে। মনে পড়ে যাচ্ছে কুম্ভমেলায় জন সমাগমের দৃশ্য। মানুষ হেঁটে চলেছে মৃত্যু মিছিলে কখনও ধর্মের নামে,কখনও রাজনীতির নামে।
নাহ্ কবে যে সচেতন হবে মানুষ! তবুও শাশুড়ির গলার সাথে গলা মিলিয়ে বলে," মা এবার পয়লা বৈশাখে আমি ঠাকুর সাজাবো। তোমার কোন চিন্তা নেই।"
ওদিক থেকে মুচকি হাসে বাবা আর ছেলে। শ্বশুরমশাই হেসে বলেন," চিন্তামণির চিন্তা কি যাবে এত সহজে?"
আরও রাগ হয়ে যায় রেবার সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলে," কি আনন্দ পকেটের টাকা বাঁচলো বলে?"
-" একদমই না, এ পকেট তো তোমাকে দিয়েছি সেই কবেই। এখন তোমাকে বাঁচাতে পারলেই আমার আনন্দ গৃহলক্ষ্মী।"
পয়লা বৈশাখের দিনে ভোরবেলায় লাল পাড় শাড়ি পরে ঠাকুর ঘরে ঢুকেছে মলি। এবার বাজারে ঘুরে ঘুরে ওরা কেউ নতুন কিছু কেনেনি। কারণ শাশুড়িমা রাগ করেছেন খুব বলেছেন কেউ কিচ্ছু পরবে না তাহলে নতুন। কতই তো আছে নতুন অথবা সেমি নতুন মানে পলিশ করা। আবার কি দরকার!
নিজের ইচ্ছেমত বাগানের ফুল তুলে ফুলের সাজে সাজিয়েছে ঠাকুরকে। নতুন পোশাকে,মুকুটে আর ফুলের গয়নায় সম্পূর্ণ ঠাকুরের সাজ। ধূপের গন্ধে আর প্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত পয়লা বৈশাখের সকাল।
" মা এসো দেখে যাও আমি ঠাকুর কেমন সাজালাম।"
আঁচলে হাতটা মুছতে মুছতে আসেন শাশুড়িমা পেছনে পেছনে শ্বশুরমশাইও।
কিছু না বলে আগে হাত জোড় করে বলেন," দেশে বিদেশে যে যেখানে আছে সবাইকে ভালো রেখ। বিদায় হোক এই অশুভ রোগটা। শুভ হোক সব।"
"মা কেমন হয়েছে বললে না তো?"
-" সত্যিই অপূর্ব হয়েছে বৌমা,তাই তো তোমার মা আগেই প্রার্থনা করে ফেলল। তা নতুন পোশাক কোথায় পেলে অনলাইনে?"
-" না বাবা,ঠাকুরও দেখছি আমাদের মত অনেক জামাকাপড় স্টকে রেখেছে সেখান থেকেই একটা বের করে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে পরিয়ে দিলাম। ঐ আমার ছেঁড়া শাড়ি কেটে মেখলা বানানোর মত আর কি।"
সবার হাসিতে ভরে ওঠে পয়লা বৈশাখের সকাল। মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ কথাটা খুব মনে ধরে রেবার। সত্যিই বুদ্ধি আছে মেয়েটার। ভগবান যদি এত অল্পে রাজবেশে সেজে উঠতে পারেন তাহলে মানুষকে রাজা সাজতে আর সাজাতে এত আয়োজন করতে হয় কেন কে জানে? আর ভগবানকে খুশি করতেই বা প্রাণ বিপন্ন করতে হয় কেন? মনে মনে বলেন আমার মত সুবুদ্ধি দাও সবাইকে। ভালো থাক সবাই।
*( অযথা দোকানে বাজারে বা ভিড়ে ঘুরবেন না তা ধর্ম বা কর্ম যে কোন উদ্দ্যেশ্যেই হোক)@রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী
#সচেতনতা
২
সকালে বৌদিকে দরজা খুলতে দেখে অবাক হয় টগরের মা। বৌদি তো চিরকালই পরে ঘুম থেকে ওঠে। ও কাজ করে যখন দাদাবাবু দরজা খুলে দেয়,সাবান কাচা বার করে দেয়।
" ও বৌদি দাদাবাবু কোথায় গো? আজ তুমি দরজা খুললে।"
-" তোর দাদাবাবু ঘুমোচ্ছে রে কাল একটু রাত করে শুয়েছে। তাই আমি খুললাম দরজাটা। নে তুই কাজ কর এত বকবক করিস না।"
টগরের মায়ের প্রশ্নের ঝুড়িতে তখনকার মত ঢাকা চাপা দিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় ইতু। গতকাল থেকেই জ্বর এসেছে বাসুর। সময়টা ভালো না তাই হাজার একটা চিন্তার ভিড় মাথায়। কিন্তু টগরের মাকে এ ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না। তাহলে নিজে তো কাজে আসবেই না। উপরন্তু এই কথাটা সাত কান করে সারা ফ্ল্যাটে ছড়াবে।
মাঝে দু তিনদিন কেটে গেছে বাসুর জ্বর এখনও সারেনি। খুব চিন্তায় কাটছে ইতুর। ডাক্তার বলেছে করোনা টেস্ট করাতে। তবে এখনও ভয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কে জানে কি ধরা পড়বে? যদি ঐ রোগটা হয়? নামটা নিতেও ভয় পায়।
টগরের মা ইতুকে ভয় পায় দুদিনই মুখ বুজে কাজ করে গেছে। আজও অল্প জ্বর বাসুর। বাড়িতেই টেস্ট করতে লোক আসবে ল্যাব থেকে। সত্যিই আর উপায় নেই। ডাক্তার বলেছে এরপর হঠাৎই অন্য কোন সমস্যা হতে পারে। তখন অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
দরজার বেলটা বেজে ওঠে। দরজা খোলে ইতু টগরের মা মুখে মাস্ক পরে বাইরে দাঁড়িয়ে," বৌদি আমি এখন কদিন আসব না। তুমি আমাকে আগে বারণ করলেই পারতে। এই ফ্ল্যাটে আরও কয়েক বাড়িতে আমি কাজ করি তাদের কথা একবার ভাবলে না? আর আমার কথা? এরপর যে সবার ছড়াবে রোগ? একদম গোষ্ঠী সংক্রমণ হবে।"
অবাক হয়ে যায় ইতু টগরের মা এত জানে? অথচ এই সামান্য কথাটা ও বুঝতে চায়নি! শুধুমাত্র নিজের কথাই ভেবেছে।
* ( নিজে সুরক্ষিত থাকুন,অন্যকেও সুরক্ষিত রাখুন। সচেতন নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্ব। কয়েকদিন টানা জ্বর থাকলে কোভিড টেস্ট করান এর মধ্যে কোন লজ্জা বা ভয় নেই। সঠিক সময়ে রোগ ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসা হবে।)
#স্মৃতির পাতা থেকে#
সেই কবে শিয়ালদা ষ্টেশনের ডরমেটারীতে তোমার সঙ্গে
প্রথম দেখা হয়েছিলো,
এসেছিল এক সন্দিগ্ধ মন নিয়ে,
কেন অপরিচিত অনাত্মীয় দম্পতি এভাবে ডেকে পাঠালো?
কোন উদ্দেশ্য আছে কি না তাই মনে মনে ভেবে,
তবুও এসেছিল মাতৃ বিয়োগের মাত্র একমাস পরেই।
তারপর ফেসবুকে দেখা, টেলিফোনে কথা বলা দম্পতি
কি করে আপন হয়ে গেল, আপন করে নিলো তোমায়,
তুমি অবাক চোখে দেখলে!
সেদিন যদি দেখা না হতো, যদি না আসতে দ্বিধা সংশয়ে
তা হলে অসম্পূর্ণ থেকে যেতো এক অজানা অধ্যায় আমাদের দুজনের কাছেই।
তারপর তুমি যেদিন এসে হাজির আমাদের প্রাঙ্গণে
আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে,
সেদিনই বাঁধা পড়েছি আমরা এক অজানা মায়ার বন্ধনে।
তাই মাঝে মাঝে হয় ফোনালাপ,
নাহয় খোঁজ চলে আপের ছোঁয়ায় ভালো মন্দের খবরাখবর।
না দেখলেই উভয়ের উদ্বিগ্ন হয়ে পরি আমরা উভয়ে,
এভাবেই কাটুক বাকী জীবন,
উভয়ের সুখ দুঃখের ভাবের আদান প্রদান করে।
ভালো থেকো, খুশী থেকো এটুকুই কামনা শুধু।
##
( 27-4-2021)
আমাদের রাণী ভবানী হস্টেলে এক্সটেনশনে ও আমাদের পাশাপাশি ঘরেই থাকত। ছটফট করে এপাশ ওপাশ করত দ্রুত ব্যস্ততায়। নাম জেনেছিলাম পম্পা ফিজিক্সের ছাত্রী। কথা বলত উচ্ছ্বল হয়ে,পরীক্ষার সময় দেখতাম ঘুরে ঘুরে পড়া মুখস্থ করত। এক মাথা কোঁকড়া চুলও নাচত ছুটে বেড়ানোর ছন্দে। তারপর পার্ট টুতে ঘর বদল,ওরা চলে গেল ঐ পাশটায়। থালা ধুতে বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে দেখা হত। অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেছে,এখন আমাদের ছেলে মেয়েরাও বড় হয়ে গেছে। তবুও মনে হয় এই তো সেদিনের কথা। কেন যেন কলেজ,স্কুল আর ইউনিভার্সিটির কথা মনে হলে মনে হয় দিল তো বাচ্চা হ্যায়। অবশ্য আমার মনটা একটু স্পর্শ কাতর আর ভাবুক চিরকালই। হঠাৎই পম্পাকে পেলাম ফেসবুকে, লেখা আরও বেশি দৃঢ় করল বন্ধুত্বের বন্ধনকে। দেখলাম পম্পা এখনও পড়তে ভালোবাসে পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে সেই আগের মতই। আর ওকে দেখে আমার তো মনে হয় একদম তেমনই আছে। প্রত্যেকের জীবনে এখন সমস্যা,হয়ত ফেসবুকের সাজানো ছবিগুলোর পেছনে সবার আছে কিছু না কিছু সমস্যা। তার মধ্যেই বইটা যে কখন অর্ডার করেছে জানতাম না। তবে পেতে দেরি হচ্ছে যখন তখন জানলাম। পেয়েই একটা চিঠি লিখল। অবশ্য হোয়াটস অ্যাপে। মন ভরল। অনেক ভালোবাসা পম্পা,খুব ভালো থাকিস💝💝💝💝আর সুস্থ থাকিস সবাইকে নিয়ে।
প্রথম ভালোবাসা এভাবেই গেছে আরও অনেকের কাছে যারা কখনও আমার প্রিয় বান্ধবী আবার কখনও পুরোনো ছাত্রী। নন্দিতাকে আমি বুবুন বলে ডাকতেই অভ্যস্ত। একটু চুপচাপ ছিল ইউনিভার্সিটি তে। এখন সেই বন্ধুত্ব সময়ের হাত ধরে অনেকটা গাঢ়। বই হাতে পেয়েছে, ছবি পাইনি। আসলে সময়টা ভীষণ খারাপ। সবাই আমরা অসহায় এখন। তবুও পুরোনো কথা বললে আর ভালো কথা ভাবলে মনটা অনেকটা হাল্কা হয়। একটা সময় মা অনেকটা পজেটিভ ভাইবস দিত,মায়ের বোঝানো ছিল অসাধারণ। আজ মা নেই,মাঝে মাঝেই মন খারাপ হয়। আবার নিজেই নিজেকে শান্ত করি। কাউকে ফোন করে আড্ডা দিতেও ভুলে গেছি শুধু ফোন করলেই দুঃসংবাদ অথবা মৃত্যু সংবাদ। মেসেজ করি অনেককেই মাঝে মাঝে ভালো থাকতে বলি। হয়ত এর থেকে বেশি কিছু করার নেই। সব সময় বলছি ভালো থাক সবাই,ভালো থাকি আমরাও।
আমার পুরোনো ছাত্রী সোমা,ইচ্ছেখেয়ালে শ্রীতে ছিল মেসেঞ্জারে বলল দিদি বইটা এসেছে। সত্যি ভালো লাগল জেনে।
একটা সময় ভালুকাবাজারই ছিল আমাদের ভালো থাকার ঠিকানা। আমার দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা আর বাবা মায়ের চাকরি জীবনের পুরোটাই কেটেছে ওখানে। এমন কি চাকরি চলে যাবার পর শুধু ঐ জায়গাটাকে ভালোবেসে বাবা থেকে গেছিলেন বেশ কয়েক বছর ওখানে। স্কুল,আমাদের কোয়ার্টার, পাড়া পড়শী,কিছু বন্ধুদের কথা মাঝে মধ্যেই তাড়া করে। তবে আমার দেখা ভালুকাবাজার নাকি বদলে গেছে পুরোটাই বদলে গেছে আমাদের স্কুলও। তবে আমার আর যাওয়া হয়নি সেখানে। খবর পাই মাঝেমাঝেই একজনের কাছে তার নাম দীপক বিশ্বাস,পেশায় হেডমাস্টার মশাই। ফোন আমার খুব একটা করা হয় না তবে সব খবর পাই ওঁর কাছেই। হঠাৎই জানলাম একদিন পোস্ট অফিসের হাত বদলে কলকাতা থেকে বই পৌঁছে গেছে ভালুকাতেও। অর্ডার দিয়ে পেয়েছে প্রথম ভালোবাসা। খুব ভালো লাগল। অনেকদিনের পুরোনো বন্ধন আরও দৃঢ় করল প্রথম ভালোবাসা💝।
সোমার সাথে আগে খুব একটা কথা হয়নি কোনদিন। দেখলাম ও নিজেও লেখে। হঠাৎই একদিন মেসেজ করল বই পেয়েছে। শরীরটা ভালো নেই। মনটা খারাপ হল। হঠাৎই একদিন ছবি দিল। কাল কথা হল আবার। আসলে আজকাল কথা হলেই শুধু মন খারাপের খবর। শুধু বললাম মনটা ঠিক রেখ মানে চেষ্টা কর ভালো থাকতে।
ভালো নেই হয়ত কেউই,প্রত্যেকের বাড়িতেই কেউ না কেউ আক্রান্ত। গতবার অনেকেই এই সময় রান্না করেছে,ডালগোনা কফি বানিয়েছে। এবার সবাই চুপচাপ সবার ভয় কি জানি কি হয়। আমারও অনেক আপনজনেরা ভালো নেই। ফোন করে খবর নিই আর কিছু করতে পারি না। মন খারাপ হয় অপরাধবোধে ভুগি। তবুও বলব সবাই ভালো থাকি,মনকে ভোলানোর চেষ্টা করি। এই যেমন প্রত্যেকে মাতলাম কার্টুনের খেলায়। হয়ত সবটাই ছেলেমানুষী তবুও বলব অনেক কিছুর মাঝে বাঁচুক মনটা।
Comments
Post a Comment