Skip to main content

অপরিচিতা

#অপরিচিতা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

বেশ অনেকটা ধার দেনাতে গলা শুধু নয় মাথা ডুবিয়ে যখন নিম্ন মধ‍্যবিত্ত পাড়ায় এই ফ্ল্যাটটাতে এসেছিল রুমঝুম তখন এটাকেই স্বপ্নের ঝাড়বাতি জ্বালানো দালান বলে মনে হত। নিঃশ্বাস ফেলে ভেবেছিল যাক বাবা আর ভাড়া বাড়িতে থাকতে হবে না। খেয়ে না খেয়ে যা করেই হোক ধার টুকু শোধ করে দিলেই অন্ততঃ বলতে পারবে মাথার ছাদটুকু নিজের কেনা। হঠাৎই খেয়াল হল ওমা ছাদ কই আবার? সে ছাদের ওপরে তো আরেকজনের ঘর। তাহলে দেওয়ালটুকু হোক বরং আমার নিজের। হঠাৎই কানে আসে পাশের ফ্ল্যাটের খুটখাট শব্দ। ধুৎ বাবা দেওয়ালেও তো অন‍্য মানুষের অধিকার অপর প্রান্ত থেকে। সে যাই হোক অন্ততঃ ঠিকানাটা তো আমার, দরজাগুলো আমার,বারান্দায় সকালের সূর্যের লুকোচুরি দেখার আনন্দটুকু আমার। ফ্ল্যাট জুড়ে তখন খুটুর খাটুর। অনেকেই তখনও আসেনি। নিজের পরিজনদের নিয়ে আর ছোট ছানাদের নিয়ে সংসার পাতে রুমঝুম। কেমন ছিল সেই দিনগুলো? কে জানে তখন বোধহয় মনে হত চব্বিশ ঘন্টার বদলে যদি বাহাত্তর ঘন্টা হত দিনগুলো তাহলে বোধহয় ভালো হত। অসুস্থ দুই গুরুজন আর দুটো ছোট ছানা নিয়ে খুব খারাপ অবস্থা তখন। তবুও তার মাঝেই নিজের ছেলেমানুষ মনটাকে বাঁধতে পারে না রুমঝুম। দখিনা হাওয়ার মত ছটফটে দাপুটে মনটা ছুটে বেড়ায় ফ্ল্যাটের একতলা থেকে চারতলায়। যে কজন এসেছে একটু একটু করে চিনে ফেললো তাদের। কিন্তু ওর পাশের ফ্ল্যাটে কারা আসবে? অনেকদিন ধরে তো খুটখাট করে কাজ চলছে কিন্তু কেউ তো আসেনি এখনও।
       সাজানো গোছানো দেখে মনে হয় খুব শৌখিন ওঁরা। হঠাৎই একদিন দুমদাম শব্দে বুঝল কেউ এল এবার। কোলের ছোট ছানাটাকে নিয়ে দরজা খুলে ফেলল,মনের উচ্ছ্বাসে বলে গেল," এতদিনে এলেন আপনারা? সেই কবে থেকে মিস্ত্রী কাজ করছে। যাক ভালো হল এবার একটু জমজমাট হবে এপাশটা।"
           ওপাশের পরিপাটি ছিপছিপে ভদ্রমহিলা পাতলা ঠোঁটের ফাঁকে মাপা হাসি হাসেন," হ‍্যাঁ এই এলাম একটু করে সব গুছিয়ে। পরে কথা হবে হ‍্যাঁ।"
       দরজা বন্ধ করার উদ‍্যোগের মাঝেই রুমঝুম বলে ওঠে," আমি রুমঝুম। কিছু অসুবিধা হলে বলবেন কাকিমা।"
         ভদ্রমহিলা একটু অবাক হন। রুমঝুম বুঝতে পারে সেটা। হঠাৎই কাকিমা বলে ফেলাতে হয়ত একটু বিরক্ত হয়েছেন। 
 তাই বলে," আসলে আমার কাকিমা ঠিক এমনি তাই বলে ফেলেছি।"
        " না না ঠিক আছে। আচ্ছা আসি এখন।"

      তারপর থেকে টুকরো কথা হত কখনও অবসরে। ওপাশ থেকে থাকত দরজা বন্ধের তাড়া। ফ্ল্যাটে এসে রুমঝুম বুঝেছিল এখানে বাইরে দাঁড়িয়ে টুকরো কথা বলাটাই রেওয়াজ। চট করে কেউ কারও অন্দরে কাউকে হয়ত এন্ট্রি দিতে চায় না। তবুও ছটফটে রুমঝুম দোলে আবীর দিতে বা বিজয়া জানাতে ছুটে গেছে অনেকেরই অন্দরে।

      আলাপের শুরুতে সেই কাকিমা ডাকটাই রয়ে গেছে অনেক বছর পরেও আর সেটাকে বদলে দিদি বা বৌদি করা হয়নি। একটা সময় ওদের দরজাটা খোলা দেখলেই অদ্ভুত একটা তৃপ্তি অনুভব করত রুমঝুম। নাই বা হল রোজের গল্প তবুও পাশে তো আছে কেউ তাতেই মনে জাগে ভালোলাগার ছোঁয়া। পাশের বাড়ির তালা বিহীন কোলাপসিবল গেট অথবা প্রতিবেশীর রান্নাঘরের আলোর ছটা অদ্ভুত পরিতৃপ্তি দেয় রুমঝুমকে শুধু মনে হয় ভালো থাক সবাই যে যার নীড়ে।
        একটা সময়ের পর হঠাৎই ভেঙে গেল আগল। রুমঝুমের ছোট ছানা মাঝে মাঝেই তালমিছরি মুখে নিয়ে ফিরে আসে দিদার বাড়িতে মিনি ট্রিপ দিয়ে। অবসরে সময় পেলে ওদের বাড়ির সোফায় বসে মন খুলে কথা বলা। অপরিচিত মানুষজন হয়ে ওঠে নিকটাত্মীয়। ভালোবাসার সাথে সাথে আদানপ্রদান হয় কখনও টুকটাক খাবার দাবারও। আর বিনিময় হয় অঙ্গীকার পাশে থাকার।
- ব‍্যস্ত সমস্ত কাকিমা আর শান্ত কাকু মাঝে মাঝেই এদিক ওদিক চলে যান বিনা নোটিশেই। প্রথম প্রথম হঠাৎই ঘরে তালা দেখে মন খারাপ হত রুমঝুমের। কোথায় গেল মানুষগুলো?
  ফিরে আসতেই অভিমান আর অভিযোগ মিলেমিশে একাকার হত," কোথায় গেছিলেন কাকিমা? হঠাৎই সকালে উঠে ঘরে তালা দেখে মন খারাপ হয়েছিল।"
      তারপর থেকে কাকিমা যাবার আগে সাতদিন আগেই নোটিশ ঝুলিয়ে দিতেন," বুঝলে এবার প্রায় মাস দুয়েক বাদে আসব। ছোট মেয়ের কাছে যাব,তোমরা সাবধানে থেক। তারপর এসে এখানে কিছুদিন থেকে আবার যেতে হবে বড় মেয়ের বাড়ি।"

   গলাটা একটু শুকিয়ে যায় রুমঝুমের," এতদিন থাকবেন না কাকিমা। আসলে গেটটা খোলা দেখলেই বেশ মনটা ভালো লাগে।"
-" মেয়েদের পাশে তো থাকতেই হয় বল বিপদে। আমরা ছাড়া ওদের আর কে আছে বল। এই মেয়েটা অফিসে গেলে নাতিটা একা থাকবে ওর তো ছুটি পড়েছে। তোমরা ভালো থেক বুঝলে।"
       রুমঝুমের মনটা একটু ফিকে হয়ে যায়,দু মাস বা আড়াই মাসে আবার তালায় জমবে ধূলা।

-" আমার দুটো জিনিস রাখবে? গোপাল আর তুলসী গাছকে রাখবে? তুমি তো ঘরে পুজো করই। আসলে এবার ঠিক কোন ব‍্যবস্থা করতে পারিনি।"

      স্নান করে ভালো কাপড়ে কোলে তুলে নিয়ে আসে গোপালকে রুমঝুম। সাথে গাছগুলো আর গোপালের জামাকাপড়।
       দেখতে দেখতে কেটে গেছে দিনগুলো। তুলসী গাছটা আর অন‍্য দুটো গাছ বেশ বড় হয়ে উঠেছে রুমঝুমের দেখভালে। গোপালও দিব‍্যি আছে ওর ঘরে।
      একটা সময় রুমঝুম ওর গাছটাকেও রেখে গিয়েছিল দশদিনের জন‍্য। বলেছিল," এবার কদিন বেশি লাগবে কাকিমা,গাছটা শুকিয়ে যাবে। একটু রাখবেন?"

      অবশ‍্য গোপালের ঠিকানা ওর ঘরে হয়েছিল একবার মাত্র তারপরেই গোপাল কাকিমার সাথে পাড়ি জমিয়েছে ট্রেনে করে বিভিন্ন জায়গায়। তুলসীগাছ বারান্দায় শুকিয়েছে অনাদরে।
    পরের বার রুমঝুম বলেছিল," কাকিমা গাছ রাখতে হবে না? আর গোপাল?"
   -" গোপালকে সাথে নিয়ে গেলাম,আর তোমার বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সারাদিন অনেক কাজ। ও থাক পরে একটা লাগিয়ে নেব।"
       রুমঝুম বুঝতে পারল এখনকার শহুরে মানুষ বড়ই আত্মকেন্দ্রিক তারা কখনই বিনিময় করতে চায়না সোহাগ আদর বা দ্রব‍্য। কেউ কোন কারণেই কৃতজ্ঞতা বন্ধক রাখতে চায়না। যতটা পারে শোধ করে দিতে চায়।

      মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। রুমঝুম এখন অনেক পরিণত আর অভ‍্যস্ত শহুরে মাপা ভদ্রতায়। তবুও মাঝে মাঝে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না আবেগ,বড়ই বেয়ারা এই আবেগ। তবে ওর আবেগের স্রোতে কিছুটা হলেও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে কাকিমাকেও। হয়ত কাকিমাও অনুভব করে রুমঝুমের পরিবার ওদের অবলম্বন সময়ে অসময়ে। তাই মাপা গন্ডী ছেড়ে মনের টান হাত মিলিয়েছে অপরদিকের মনের সাথে। তবে কাকিমার যাওয়া আসা চলেছে পুরোনো ছন্দেই। কখনও ছোট মেয়ের বাড়ি আবার কখনও বড় মেয়ের বাড়ি। আবার প্রয়োজনে বাপের বাড়ি। যার যেখানে সমস‍্যা দৌড়েছেন আপনজনের বিপদে সবসময়।
     আজকাল মাতৃহারা রুমঝুমের মনে হয় মাতৃত্বের ছোঁয়াটুকু মাঝে মাঝে ও নিজেও পেয়ে যায় প্রতিবেশী হয়েও কাকিমার কাছ থেকে।
     " তোমার কি পায়ে ব‍্যথা রুমঝুম? খুব ছোটাছুটি কর আজকাল দেখি আমি জানলা দিয়ে। একটু নিজের দিকে নজর দাও। পায়ে একটা নরম জুতো পরবে বাড়িতে।"
      মনটা ভিজে যায় রুমঝুমের এমন করে মায়েরা ছাড়া আর কে বলবে? সারাদিন কত কাজ করে অথচ কে আর বলে তোমার কত পরিশ্রম। মা মেশানো ডাকগুলোতে বড় মা মা গন্ধ থাকে যেন। নিজের সংসারের গন্ডীতে থেকে অনুভব করতে চায় সেই গন্ধটা। ফ্রীতে পাওয়া ভালোবাসা টুকু যত্নে ছুঁতে চায় রুমঝুম।
              অনেকদিন বাদে ঘুরে এসে কাকিমা যখন বলেন," তুমি তো খুব সাজতে ভালোবাস এই দুলটা এনেছি তোমার জন‍্য পরে দেখিও আমাকে কিন্তু।"
     আদরে হাতের মুঠোতে দুলটাকে ধরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে রুমঝুম," কি সুন্দর! আমার কথা ওখানে গিয়ে মনে ছিল? আমি কিন্তু প্রতিদিনই ভাবতাম কবে দরজার তালাটা খুলে যাবে। আমি পরব,নিশ্চয় পরব।"

              এ বাড়ি ও বাড়ি করতে অভ‍্যস্ত কাকিমা আর শান্ত হাসিমাখা মুখের কাকু অনেকদিন কোথাও আর যান না। রুমঝুম তৃপ্তিভরে দেখে দরজাটা খোলা। কিন্তু সাহস পায় না সোফায় বসে গল্প করতে। একটা যে ভারী ছোঁয়াচে রোগ এসেছে সারা পৃথিবী জুড়ে। না না দূরত্ব টুকু মেনে নিতেই হবে। তাই মাঝে মাঝেই ফোন করে অথবা কখনও বাইরে থেকে বেলটা বাজিয়ে বলে যায়," কতদিন দেখি না কাকিমা। ভালো আছেন তো? কোন অসুবিধা হলে বলবেন আমরা তো আছি পাশে।"
   ওপাশ থেকে শুকনো মুখ দুটোতে হাসির ঝলক ফোটে," চলছে গো, কি যে এক রোগ এলো। সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকছি।"
-" আমিও তো তাই আর আসি না। আজ দেখতে ইচ্ছে করল তাই দূর থেকে দেখে গেলাম।"

        একটু করে ভয় কাটল, বুঝল সবাই এভাবেই চলতে হবে। রুমঝুম একদিন জিজ্ঞেস করল," আচ্ছা কাকিমা বোনেরা কেমন আছে? এখন তো আর আপনারা যান না। ওরাও এলো না। কতদিন দেখা হয় না ওদের সাথে তাইনা?"
      দূর থেকে একগাল হাসি নিয়ে কাকিমা বললেন," আর বোলো না মেয়েরা আমার সংসার সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে গো। ছেলেপুলে স্বামী তারপর আবার একটা বড় কুকুর পুষেছে। ওদের নিয়েই দিন কেটে যায় নানা ঝামেলায়।"
     রুমঝুমের চোখে ভাসে দূর থেকে দেখা বিশাল কুকুরটার ছবি আর হঠাৎই এই দেড় বছরে খুব লম্বা হয়ে যাওয়া নাতিদের ছবি। মনে মনে ভাবলো আহা কত খুশি ওঁরা মেয়েদের পরিপূর্ণ সংসার দেখে। এমন তো ছিল ওর মা বাবাও। কথায় কথায় ছুটে আসত।

    তাই বলে ওঠে," তাই তো সবার সংসারের ঝামেলা। কিচ্ছু ভাববেন না আছি তো আমরা কোন সমস‍্যা হলেই ফোন করবেন। যখন হোক হাজির হয়ে যাব।"
   ওপাশ থেকে মিঠে হাসি বেজে ওঠে," হ‍্যাঁ গো নিশ্চয় বলব। তোমরাই তো ভরসা এখন।"

              সত‍্যিই একদিন দুপুরে রুমঝুমের ফোনটা বেজে উঠল। ওপাশ থেকে একটা করুণ গলা," তোমার কাকুর জ্বরটা হঠাৎই বেড়েছে। দুদিন থেকে একটু জ্বর জ্বর ভাব ছিল। কি করি বুঝতে পারছি না।"
     মুখে মাস্ক পরে ছেলের সাথে ওদের দরজার সামনে দাঁড়ায় রুমঝুম, ওষুধ পত্র যা আনানোর আনিয়ে দেয়। বলে," কাকিমা একটা টেস্ট করিয়ে নিলে ভালো হয়।"

"কোথায় করাব বুঝতে পারছি না। কি করে নিয়ে যাই বলতো তোমার কাকুকে?"
রুমঝুম বলে," বোনেরা জানে কিছু?
"না গো ওদের কিছু বলিনি। সারাদিন সংসারের ঝামেলা ওদের। শুধু শুধু চিন্তা করবে।"
" তবুও একবার খবর দিন ওদের। ওরা যে আপনার আপনজন পরে খারাপ লাগবে ওদের।"

      ফোনে খবর যায়। টেস্ট হয় বাড়িতেই। দুজনেই কোভিড পজেটিভ। কাকু খুব অসুস্থ। রুমঝুম ছেলেকে বারবার ছুটিয়ে ওষুধ পত্র আনিয়ে দেয়।

 বারবার ফোন করতে থাকে রুমঝুম ওঁরা কখনও ধরেন কখনও ধরেন না। বাধ‍্য হয়ে কখনও গিয়ে বেল বাজায় বড় চিন্তা হয় অসহায় মানুষ দুটোর জন‍্য। আজ যদি ওর নিজের মা বাবা থাকত তবে এমনটা হলে কি হত?
           হঠাৎই রুমঝুমের ফোন বাজে। অচেনা নম্বর পরিচয় দেয়," দিদি আমি পাশের বাড়ির কাকিমার মেয়ে। অক্সিমিটারটা কাজ করছে না। তুমি একটু ছেলেকে বলবে দরজার বাইরে থেকে মাকে বুঝিয়ে দিতে?"
       চিন্তায় পড়ে রুমঝুম, মারণ রোগ তবুও এটুকু হয়ত করতেই হবে মাতৃত্বের ছোঁয়া টুকু পেয়েছে যে একসময়। আবার ফোন আসে। গ্ৰীলের ফাঁক দিয়ে অক্সিমিটার হাতে নিয়ে বোঝাতে থাকে ছেলে ওপারে ওঁরা।
            তবুও সবই বিফলে গেল। রুমঝুম ওদের প্রয়োজন নয় প্রিয়জন হতে চেয়েছিল। কিন্তু কাছেই যে ঘেঁষতে পারল না। ফোনের ওপারের উদ্বিগ্ন সন্তানদের নানা চেষ্টা সত্ত্বেও হারিয়ে গেল একটা মানুষ হঠাৎই। মুছে গেল একটা নাম চিরতরে। 
            রুমঝুম সারারাত ঘুমোতে পারে না সকালে ফোন করে কান্নাভেজা গলায়," কেমন আছেন কাকিমা? আমি যে পাশে থেকেও কিছু করতে পারলাম না।"
-" কি করবে? এ রোগ যে মারণ রোগ। যে কাছে আসবে সেই মরবে। ভাগ‍্যিস সেন্টারের একটা মেয়েই ডিউটিটা করতে চেয়েছিল। নাহলে কি যে করতাম একলা ঘরে? হয়ত পাগলই হয়ে যেতাম।"
        জীবনকে অনেকটা দেখেছে রুমঝুমও। একটা দীর্ঘশ্বাস ঝরে পড়ে অজান্তেই। মানুষ সংসার,সন্তান আত্মীয় পরিজনদের জন‍্য কত কিই না করে। কিন্তু এক জায়গায় এসে বোধহয় সবাই খুব একা। আজ সন্তান,আত্মীয়,প্রতিবেশী, বন্ধু কেউই নেই কাকিমার পাশে। এক অপরিচিতা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামলাচ্ছে এক শোকস্তব্ধ একলা ভদ্রমহিলাকে। হয়ত সেই অপরিচিতাও সবটাই করছে তার সংসারকে ভালো রাখার জন‍্য। মাথায় হাত ছোঁয়ায় রুমঝুম," হে ঈশ্বর মুছে দাও রোগ,মানুষকে আবার ধরতে দাও মানুষের হাত সুখে না হলেও অন্ততপক্ষে দুঃখের দিনে। এভাবে একা করে দিয়োনা।"
        

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...