#সুখের_ছোঁয়া#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
খুব ভোরে বিছানা থেকে উঠে জানলায় দাঁড়ায় সাজি আজকাল আর তেমন করে রাস্তায় টানা রিক্সার ঘন্টি শোনা যায় না অথচ এই তো গতবছরেও ওদের রাজবল্লভ পাড়ার পুরোনো বাড়িটার নিচে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত কত রিক্সাওয়ালা। সকাল থেকেই শুরু হত ওদের ঘন্টির টুং টুং শব্দ। কত বয়স্ক মহিলাকে দেখেছে লাল পাড় শাড়ি পরে রিক্সায় উঠে গঙ্গার দিকে যেতে। এখনকার পরিস্থিতিতে ঠাকুরও আছেন রুদ্ধ দ্বারে, তাঁরাও মানুষের ছোঁয়া পেতে নারাজ। বৃষ্টির জলের ছোঁয়া পেয়ে রাস্তার ওপারের কৃষ্ণচূড়া গাছটা গাঢ় সবুজ হয়েছে আর তার মাঝে মাঝেই ফুটেছে লাল ফুল থোকায় থোকায়। আনমনা হয় সাজি রাঙা ফুলের গোছা রক্তক্ষরণ করে ওর বুকেও। কিছু মন খারাপ এলোমেলো হয়ে পথ হারায় আবার মনের চোরা কুঠুরিতে। ওদের খাবার ঘরে রাখা পুরোনো ঘড়িটাতে ঢং ঢং করে ছটা বাজে। মিঙ্কু তখনও বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। নাহ্ আর খুব একটা সময় নেই হাতে, এর মধ্যেই সব কাজ সেরে নিয়ে মিঙ্কুকে তুলতে হবে। ওকে তাড়াতাড়ি রেডি করে ওর হেল্থড্রিঙ্কসটা কোনরকমে খাইয়ে বসিয়ে দিতে হবে ল্যাপটপের সামনে তারপর থেকে চলবে টানা ক্লাশ।
পাঁচ বছরের মিঙ্কু যার ভালো নাম সুতনু মিত্র সে বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকবে ল্যাপটপের দিকে। সামনে দিয়ে একের পর এক চলে যাবে সংখ্যা অথবা অক্ষরের দলবল। চলবে মোটামুটি টানা বারোটা সাড়ে বারোটা অবধি। তার মধ্যেই শুরু হবে সাজির ওয়ার্ক ফ্রম হোম। নিজের অফিসের ফাইল খোলার মাঝে একবার করে উঁকি দিয়ে যাবে। কখনও মিঙ্কু মাথা রাখবে ক্লান্তিতে ডেস্কে গালে হাত দিয়ে হারিয়ে যাবে পড়া শুনতে শুনতে চিড়িয়াখানায় অথবা সেবারের দার্জিলিং বেড়াতে যাবার দিনগুলোতে। তারপর মায়ের ইশারায় আবার নড়ে চড়ে বসে মন দেবে পড়ায়।
বারান্দায় এসে আদরের বোগেনভেলিয়া গাছটায় হাত বোলায় সাজি। কি সুন্দর থোকা থোকা ফুল ফুটেছে গ্ৰীলের বাইরের ডালটাতে। এই গাছটা এখনও খুব স্পেশাল সাজির কাছে। একটা সময় এই গাছটা ওকে আকাশ এনে দিয়েছিল ওর অফিসের কাছের কোন নার্সারী থেকে। বরাবরই গাছের শখ সাজির। ওদের ছোট্ট নতুন ফ্ল্যাটে তাই স্বপ্নের একটুকরো সবুজ বারান্দায় ছিল ছোট বড় অনেক গাছের মেলা। কোথাও যাবার কথা হলেই ভাবতে বসতে হত কি হবে ওর গাছেদের? অগত্যা বাবাকে দায়িত্ব দিয়ে যেত দিনে অন্ততঃ একবার এসে গাছে জল দিয়ে দেবার। ভাগ্যিস বাপের বাড়িটা কাছে ছিল।
না হলে অবশ্য সাজিরও মন টিকত না কারণ বাবা মায়ের আদুরে একমাত্র মেয়ে ভাবতেই পারেনি কোনদিন ওদের ছেড়ে দূরে থাকবে। হয়ত সেই কারণেই এখনও বাবামায়ের সাথেই রয়ে গেছে।
নতুন ফ্ল্যাটের সবুজ বারান্দাটা এখন বড়ই প্রাণহীন। গত বছরই তো ঐ বাড়ি ছেড়ে মিঙ্কুকে নিয়ে এই বাড়িতে চলে এসেছিল সাজি। আকাশের হাত ছাড়িয়ে মিঙ্কুকে আনতে খুব কষ্ট হয়েছিল সাজির অনেক কষ্টে নিজের চোখের জল লুকিয়েছিল। কেঁদে গড়িয়েছিল চার বছরের ছোট্ট ছেলেটা। কিন্তু নাহ্ আর থাকা যায় না একসাথে। মন কষাকষির সংসারে থেকে হাঁফিয়ে উঠেছিল সাজি। কয়েক মাসের মধ্যেই অদ্ভুত ভাবে বদলেছিল আকাশ। কথায় কথায় বলত সাজি বেশি ওর মা বাবার মেয়ে, অনেকটাই কম আকাশের বৌ। সবসময় নিজের বাবা মায়ের সুবিধা অসুবিধা দেখতেই ব্যস্ত সাজি। শ্বশুরবাড়ির প্রতি ওর কোন দায়িত্বই নেই সেটা আকাশ বুঝে গেছে এই কয়েক বছরে। কিন্তু সাজির মত ওরও নিজের বাবা মায়ের প্রতি ওর দায়িত্ব আছে সেটা ও কিছুতেই অবহেলা করতে পারবে না।
' এতগুলো বছর পরে হঠাৎই এমন কথা বারবার বলছ কেন আকাশ? তুমি তো আমাকে সবটা জেনেই বিয়ে করেছ। আমি একমাত্র মেয়ে, আমার মায়ের অসুখ সবটাই তো তুমি জান।'
-'জানি সবটা কিন্তু এখন তো একটা ঘরজামাইয়ের মত ফিলিংস হয় আমার। তোমার বাবা মায়ের জন্য চব্বিশ ঘন্টা আমি আছি। আর আমার বাড়ি? মা বাবা তারা কোথায় যাবে? আমার তো একটা দায়িত্ব আছে তাদের প্রতি।'
-'আমি কি তোমাকে কখনও বাধা দিয়েছি নাকি কর্তব্য পালনে? যাও যা করলে ভালো হয় কর।'
সাজির মনে হয় কথাগুলো অনেকটাই ওর শাশুড়ির শেখানো। আগের বার দুদিনের জন্য যখন বর্ধমানে গেছিল তখন বারবারই এইসব কথা উঠে এসেছিল যে ছেলে মানুষ করাটাই সার। কোন লাভই হল না। 'কদিনই বা তোমরা এসে থাক এখানে? আমাদেরও তো ইচ্ছা করে একটু নাতিটাকে নাড়াচাড়া করি। ওর বড় হওয়াটা তো দেখতেই পেলাম না।'
সমস্যা শুরু হয়েছিল যখন আকাশ বদলি হয়ে বর্ধমানে গেল। ব্যাঙ্কের চাকরি হওয়ার জন্য এই রোগের দুঃসময়েও প্রতিদিনই যেতে হয়েছে। প্রথমটা ওখানে কিছুদিন থেকে তারপর এখানে উইক এন্ডে এসে এভাবে কাজ করেছে। মনের জটিলতা অবশ্য তার আগেই শুরু হয়েছিল। তোমার বাবা মা কতটা পেল আর আমার বাবা মা কতটা পাচ্ছে নিয়ে। আকাশের মনে হচ্ছিল বারবারই সাজির মা বাবার শুধু মেয়েই নয় জামাইও আছে পাশে। এদিকে ওর মা বাবা সেই একা। মাঝে মাঝে অবশ্য বোন এসে আগলায়।
আকাশ যখন বর্ধমানে বদলি হয়েছিল তখন নিশ্চিন্তে শ্বাস নিয়েছিলেন ওর মা আভাদেবী যাক অন্ততঃ কয়েকটা দিন ছেলেকে কাছে পাবেন। সাজির অবশ্য মনে হয়েছিল ইচ্ছে করেই ট্রান্সফার নিয়েছে আকাশ। না হলে শুধু শুধু হঠাৎই চাঁদনীচক থেকে একেবারে বর্ধমান!
একটা চাপা মনকেমন জড়িয়ে ধরেছিল সাজিকে। মন খারাপের মেঘ জমে জমে বাজ পড়েছিল আর তার সাথে ঝরেছিল বৃষ্টিও।
-' আমি জানি সব তোমার মায়ের ইন্ধনে হয়েছে। সবটাই তুমি ইচ্ছা করে করেছ।'
-'সাজি বোকাবোকা কথা বলবে না একদম। হেড অফিস কি আমার ইচ্ছেতেই চলে নাকি? আর সব সময় মাকে টানো কেন আমাদের মধ্যে? আশ্চর্য তো!'
-' তুমি সবসময় আমার বাবাকে টানতে পার আর আমি মাকে টানলেই দোষ। আমাদের সুখের সংসারটা ওঁর সহ্য হয়নি আমি জানি।'
কথায় কথা বেড়েছিল মাঝেমাঝেই উঠে এসেছিল সাজির বাবা বিজনবাবু আর আকাশের মা আভাদেবীর কথা। গলা চড়েছিল দুজনেরই। পরদার আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল মিঙ্কু চুপ করে,শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিল ওর টেডিটাকে তারপর একসময় জোরে চিৎকার করে উঠেছিল,' আমার ভয় করছে। খুব ভয় করছে,তোমরা চিৎকার করছ কেন?'
আকাশ তাড়াতাড়ি গিয়ে মিঙ্কুকে কোলে তুলে নিয়েছিল। হঠাৎই কলিংবেল বেজে উঠেছিল বাবাকে দেখে নিজেকে সামলে নিয়েছিল সাজি। তবুও আর পারেনি বাবার বুকে মুখ রেখে নিজের চোখের জল লুকিয়েছিল।
আকাশ মিঙ্কুকে কোলে নিয়ে পাশের ঘরে চলে গিয়েছিল। কেন যেন বিজনবাবু আজকাল ভীষণ অপছন্দের আকাশের। প্রথমে এমন লাগত না তবে আজকাল মনে হয় সব ব্যাপারে নাক গলান ভদ্রলোক। সাজি তো বলেই ফেলে মাঝেমাঝে,' আমার বাবা বেস্ট,মেয়েরা তো স্বামীর মধ্যে বাবাকেই খোঁজে। কিন্তু তুমি একদমই আলাদা।'
-' না আমার বাবা বা স্বামী কিছুই হওয়ার ইচ্ছে নেই। আমি তোমার আজ্ঞাবহ হয়েই তো আছি। বন্ধু হতে চেয়েছিলাম হতে পারলাম কই? তোমার বন্ধু তো বাবা,সব জানেন তোমার ব্যাপারে।'
তখনকার মত হাসলেও পরে কাজের ফাঁকে ফাঁকে আজ্ঞাবহ কথাটা তীরের মত বিঁধেছিল মনে। এভাবেই একটু একটু করে কথার তীরের বিষ ছড়িয়ে পড়েছিল দুজনের মধ্যেই। একটা সময় আকাশের আর ইচ্ছে করত না কলকাতা আসতে। তারপর হঠাৎই গতবছর লকডাউন সুতরাং আটকে পড়েছিল আকাশ বাড়িতে। শুধু মিঙ্কুকে খুব মিস্ করত,ছেলেটা কি করছে কে জানে? ফোন করলেই বলে,' বাবা তুমি চলে এসো। আমরা চিড়িয়াখানা যাব কবে? আমার জন্য ক্যাডবেরি আনবে তো?'
মনের দূরত্বে একটা সময় অভ্যস্ত হয়ে গেছিল সাজি। মনের দূরত্বের ফলে মিলতে চাইত না শরীরও। একটা সময় সম্পর্কের মাঝে জমেছিল কয়েক টন বরফ।
সপ্তাহান্তে কলকাতা ফিরে আকাশ দেখত মিঙ্কু খুশি হলেও সাজি ভালো করে কথা বলত না। ওর আর ইচ্ছে করত না কথা বাড়িয়ে তিক্ততা সৃষ্টি করতে। একটা সময় শোওয়ার ঘরটাও অচেনা হয়ে গিয়েছিল আকাশের। বেশ অনেকদিন আলাদা ঘরে শুয়েছে ওরা।
তারপর এক ছোঁয়াচে অসুখে ছোঁয়াবিহীন হয়ে গেছিল সম্পর্কটা। একটা সময় মিঙ্কুকেও খুব একটা আদর করতে দিত না সাজি,' ওর কাছে গেলে মাস্ক পরে যাও। তোমাকে কি সাধারণ হাইজিন আমাকে শেখাতে হবে? কতদূর থেকে এসেছ খেয়াল আছে? তারপর আবার ব্যাঙ্কে যাও।'
একটা সময় সম্পর্কের আলগা সুতোটুকু একদমই ছিঁড়ে গেছিল শুধু ইগোর লড়াইয়ে। আকাশ তবুও বলেছিল সাজিকে কিছুদিন বর্ধমানে থাকতে,কারণ এখন তো বাড়িতে বসেই কাজ করছে। কিন্তু কিছুতেই সাজি মিঙ্কুকে নিয়ে ওখানে থাকতে রাজি হয়নি। ঠাট্টার হাসি হেসে বলেছিল,' আমি সারাদিন ঘরে বসে ল্যাপটপ চালিয়ে অফিস করব আর উনি মানে তোমার মা খেটে মরবেন তা হয় নাকি? তারপর মিঙ্কুকে সামলানো আছে। এখানে বাবা অনেক সামলায়।' ওর বাবার কথা শুনে আকাশেরও রাগ হয়ে গেছিল খুব।
বলে দিয়েছিল,' তবে শুনে রাখ আমিও কলকাতা থেকে বর্ধমান যেতে পারবে না। ওখানে নিজের বাড়ি মা বাবা সবাই থাকতে শুধু শুধু কেন এই সময়ে এতটা পথ এভাবে যাব? আর যাবই বা কিভাবে?'
' তাই তো ওখানেই তো তোমার সব। এখানে কিই বা আছে? যেখানে খুশি থাক তুমি।'
ছেলেকে কাছে পেয়ে ভালো লাগলেও নাতির জন্য খুব খারাপ লাগে আভার। সত্যিই তো সাজি কিছুদিন এখান থেকেই অনলাইনে অফিস করতে পারত। একসঙ্গেই থাকতে পারত এখানে এই বাড়িতে।আকাশ চাপা ছেলে কিছু বলে না তেমন। তবে কি যে সমস্যা ওদের মাঝে তা বুঝতেই পারেন না,কিছু তো একটা ছেলের মাথায় ঢুকেছে। সাজিরও ধন্য জেদ,কিছুতেই এখানে থাকবে না। ছেলেটাই বা এই সময়ে কি ভাবে যাতায়াত করবে অতদূর থেকে?
একটা সময় সাজির পছন্দের ছোট্ট ভালোবাসায় তালা পড়েছিল। যদিও চাবি ছিল দুজনের কাছেই তবুও মিঙ্কুকে নিয়ে ওদের পুরোনো বাড়িতে বাবা মায়ের কাছে চলে এসেছিল সাজি। আকাশ যদি বাবা মায়ের কাছে থাকতে পারে তাহলে ও পারবে না কেন?
সবসময় কি মেয়েদেরই মানিয়ে নিতে হবে?
কয়েকটা গাছের ঠাঁইবদল হয়েছিল তবে বাকিগুলো অনাদরে শুকিয়েছিল। তার মধ্যে প্রিয় বোগেনভেলিয়াটাকে যত্নে এনে ওদের রেলিংয়ের একপাশে রেখেছিল সাজি। ওদের ভালোবাসা শুকোলেও সকাল বিকেলে ওর যত্নের ছোঁয়ায় তাতে ভালোবাসার থোকা থোকা ফুল ফুটেছে।
মিঙ্কুর ক্লাশ শেষ হয়ে গেছে কিছুটা আগে। এইসময় ও কনকের কাছে স্নান করে দাদুর সাথে খেতে বসে সবদিন সাজির থাকা হয় না খাবার টেবিলে কাজের জন্য।
সাজির মা অনেকদিন ধরেই শয্যাশায়ী অদ্ভুত একটা মেরুদণ্ডের অসুখ কেড়ে নিয়েছে ভালো করে চলাফেরার শক্তি। খেতে বসে বায়না করে মিঙ্কু,' আমি খাব না আমার কেমন বমি পাচ্ছে। ও দাদু কনক মাসিকে বল না।'
-'খেয়ে নাও দাদুভাই তুমি না খেলে কনক মাসিকে মা বকবে। আজ তো তোমার জন্য চিকেন হয়েছে।'
-' দাঁড়াও টিভিটা চালিয়ে দিই। কার্টুন দেখবে?'
-' না আমি কার্টুন দেখি না মা বকে খুব। তুমি আমাকে বইয়ের গল্প শোনাও বাবা যেমন শোনাত।'
কাজ করতে করতে পরদার পেছনে দাঁড়িয়েছে সাজি। ঘর থেকেই ছেলের বায়না কানে গেছে। অদ্ভুত অভ্যেস করিয়েছে ছেলেটার। রাজ্যের গল্পের বই পড়ে শোনাত ওকে আকাশ যাতে টিভি দেখার অভ্যেস না হয়। বাবার চোখ খুব একটা ভালো না আর বইগুলো তো ঐ ফ্ল্যাটে। সাজির অত সময় নেই তবুও দেখতে হবে একদিন কিছু বই আনতে হবে ওখানে গিয়ে। সত্যি কথা বলতে স্মৃতির পাঁচিল ঘিরে ধরে ওখানে গেলেই তাই আর যেতে ইচ্ছে করে না।
মনে মনে গজগজ করে বাবা হয়েছে, ফোন করেই খালাস। কতদিন আসে না ছেলেকে দেখতে। অবশ্য একটা সময় সাজিই বারণ করেছিল ইনফেকশন হতে পারে ছেলের সেইজন্য। তাছাড়া বাড়িতে বয়স্ক মা বাবা আছে। আর সত্যি বলতে কি শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ছেলেকে দেখতে যেতে ইচ্ছেও করে না আকাশের। ওখানে একটা আগন্তুকের মত গিয়ে ওঠে,মাথা থেকে পা অবধি স্যানিটাইজ করেও রক্ষা নেই। তবুও ছেলেকে আদর করতে পারে না,সাজিও কাছে আসে না। মোটামুটি আইসোলেশনে থাকতে হয় ওকে।আজকাল মনে হয় এক অজানা ভাইরাস এসে বাসা বেঁধেছে ওদের মনের মাঝেই।
সবটাই যেন বাবার বুদ্ধিতে চলে সাজি। বেশ এখনও মেয়ের ঘাড়ে দায়িত্ব চাপিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। একদিন সেই কথা বলতেই তুমুল অশান্তি লেগেছিল। পরে আকাশকে স্বীকার করতেই হয়েছিল কথাটা বলা ওর উচিত হয়নি। যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছিল সাজি মেয়েকে উপযুক্ত করে গড়লে তারও দায়বদ্ধতা থাকে মা বাবার প্রতি।
মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা দিন। কদিন ধরে মিঙ্কুকে তুলে ক্লাশ করাতে বসাতে হিমসিম খেয়েছে সাজি। সারাক্ষণ যেন অদ্ভুত চুপচাপ থাকে ছেলেটা কোন কিছুতেই মন নেই। একদিন রেগে চড় বসিয়ে দিয়েছে বেশ কয়েকটা,একটাতে থামেনি। আকাশের ওপর জমে থাকা সব রাগটাই পড়েছে ছেলের ওপর। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে ছেলে সেদিন কিছুতেই ক্লাশ করানো যায়নি।
নাম প্রেজেন্ট করতে করতে থমকে গেছে ওদের ক্লাশ টিচার পৃথা পরপর তিনদিন সুতনু অ্যাবসেন্ট। কদিন ধরেই চুপচাপ দেখেছে বাচ্চাটাকে। পেন্সিল রেখে ডেস্কে মাথা ফেলে কেমন যেন ঘুমোয়। এবার পরীক্ষাও ভালো দেয়নি। অথচ একটা সময় কত হাসিখুশি ছিল বাচ্চাটা। সত্যিই বড় দুঃসময় এখন, আর শিশুরা বোধহয় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। যন্ত্র বড় যান্ত্রিক করে দিচ্ছে ওদের,কোন বন্ধুবান্ধব ছাড়া এক বন্দি জীবনে আবদ্ধ ছোটছোট বাচ্চাগুলো। খুব খারাপ লাগে যখন বারান্দায় বা জানলায় ফ্যাকাসে মুখের বাচ্চাগুলোকে দেখে। নিজে মা হতে পারেনি বলেই হয়ত শিশুদের শৈশবকে যতটা পারে মন দিয়ে ছুঁতে চায়।
মার্কশীট বানাতে গিয়ে অবাক হল পৃথা এত খারাপ রেজাল্ট সুতনুর! অথচ ওর গার্জেন তো বেশ সচেতন তাহলে হলটা কি ওর? কদিন ক্লাশেও আসছে না। শরীর খারাপ নয় তো?
ছেলেকে নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে সাজি। মিঙ্কু আজকাল খুব কম কথা বলে। ওকে দেখে কেমন যেন ভয়ে ভয়ে থাকে। ওর ধারে কাছে ঘেষতে চায় না। সেটা দেখে আরও রাগ হয় সাজির নিজের মেজাজ হারিয়ে ফেলে। দুদিন ধরে খুব বাবা বাবা করেছে। আকাশ ফোন করেছিল এর মধ্যে। তবে সাজি ওকে কথা বলতে দেয়নি। নিজেও কথা না বলে ফোনটা কেটে দিয়েছিল। অসহ্য লেগেছিল আকাশের সাজির কান্ড দেখে মেজাজ হারিয়েছিল। ঠিক করেছিল আর কিছু না জানিয়েই এবার চলে যাবে কলকাতায় দরকার হলে ছেলেকে দেখে ওদের ফ্ল্যাটেই থাকবে। তবুও ওকে যেতেই হবে। প্রায় তিনদিন কোন কথা হয়নি ছেলের সাথে সাজি ফোন কেটে দিচ্ছে তবে কি সত্যিই কোন অঘটন হল নাকি? বাধ্য হয়েই শ্বশুরমশাইকে ফোন করে আকাশ। মেয়ের বারণ থাকলেও ছাদে উঠে কথা বলেন বিজনবাবু,' কি শুরু করেছ তোমরা? আমার সত্যিই আজকাল আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না। নাতিটার মুখের দিকে তাকাতে পারি না। অথচ মেয়ের এত জেদ। মিটিয়ে নাও বাবা ছেলেটার কথা ভেবে। তিনদিন ধরে ভালো করে খায় না আজ আবার গা টা গরম।'
আকাশের বুকটা কেমন যেন কেঁপে ওঠে মিঙ্কুর জন্য। সত্যিই তো ওদের জেদে ছেলেটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে...কি হবে মিঙ্কুর? একটু ঠান্ডা গোবেচারা ছেলেটা। মনে হচ্ছে এখনই চলে যায় কলকাতায়। অফিসের পরই আজ চলে যাবে যেভাবেই হোক।
একটু বাদেই ফোনটা বাজে আবার।
-' হ্যালো, আমি সুতনুর স্কুল থেকে বলছি। কয়েকটা কথা ছিল আসলে ওকে কদিন ক্লাশে দেখছি না। তারপর রেজাল্ট ভালো করেনি একদম। আমরা অবশ্য জুমে একটা প্যারেন্ট টিচার মিটিং করব। তবুও খুব আনমনা লাগে ওকে দেখতে। ওর মাকে কি একটু পাওয়া যাবে?'
আকাশ নিজেকে সামলায়। কত শখ করে বড় স্কুলে ভর্তি করেছিল ছেলেকে। এখন কি শুনছে? এর আগে এমন অভিযোগ কখনও আসেনি।
-' আমি তো এখন অফিসে আছি,আচ্ছা একটু সময় দিন আমি বাড়ি ফিরে ওর মাকে গিয়ে বলব আপনার সাথে কথা বলতে ম্যাম।'
হঠাৎই দরজা খুলে জামাইকে দেখে খুব একটা অবাক হন না বিজনবাবু। জানতেন আকাশ আসবেই শুধু মেয়েকে কিছু বলেননি। ছেলেকে দেখে হঠাৎই কেমন যেন অসহায় লাগে আকাশের মিঙ্কুর মুখটা খুব শুকনো,জ্বর বেড়েছে তাই মুখটা লালচে।
বাবাকে দেখে হঠাৎই কেঁদে ওঠে মিঙ্কু,' বাবা তুমি আর আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো? আমরা চিড়িয়াখানায় যাব। আমি তোমার কাছে গল্প শুনব।'
সাজির চোখে আজ মেঘভাঙা বৃষ্টির উচ্ছ্বাস। তবে আকাশের কাছে নিজেকে আড়াল করতে পাশের ঘরে গিয়ে অঝোরে কাঁদে। কেন যে ছেলেটাকে অমন করে মেরেছিল সেদিন। বাবার ছোঁয়া মাথায় পেয়ে চোখদুটো অবুঝ হয়ে যায়।
' আর কষ্ট পাস না আকাশ এসে গেছে এবার দাদুভাই ঠিক হয়ে যাবে। সন্তান যে মা বাবা দুজনেরই ভালোবাসা পেতে চায়। কেন যে তোরা বুঝতে চাস না?'
মিঙ্কু কয়েকদিনের মধ্যে সেরে উঠলেও আকাশের তাড়াতাড়ি ফেরা হল না। এই কদিন ছেলেকে আকাশের কাছেই ছেড়ে দিয়েছিল সাজি। হয়ত বা একটা নীরব অভিমান ছিল ছেলের প্রতিও। বাবা যখন সব তখন থাক বাবার কাছেই। শ্বশুরবাড়িতে থাকবে না ভেবে এলেও কদিন এই বাড়িতেই থাকতে হয়েছে আকাশকে। মাঝে তিনটে দিন কেটে গেছে।আকাশের কাল ফেরার কথা বর্ধমানে। হঠাৎই সাজির জ্বর এলো সাথে অল্প শ্বাসকষ্ট। বাথরুম থেকে বেরোনোর সময় কোনরকমে নিজেকে সামলেছে। মাথা ঘুরে গেছে। ডাক্তারের সাথে ফোনে কথা বলে আকাশ।প্রাথমিক ওষুধ দিয়ে অবশ্যই টেস্ট করাতে বলেন ডাক্তার।
বড় চেনা এক ছোঁয়াচে রোগ। এতদিন তো এই রোগটার ভয়েই আকাশকে তেমন করে আসতে দেয়নি ছেলের কাছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে ওর এই অসুখটা হবে ভাবতে পারেনি সাজি। গতকাল রাতে বারবার মনে হয়েছে শ্বাসটা বন্ধ হয়ে যাবে। নিজেই অক্সিমিটার দিয়ে দেখেছে বারবার। মিঙ্কুর মুখটা মনে পড়েছে, বাঁচতে ওকে হবেই। আকাশের চোখেও সারারাত ঘুম নেই মাঝে মাঝেই মেসেজ করে গেছে সাজি ঠিক আছে কি না জানতে। মিঙ্কুকে অনেক কষ্টে ঘুম পাড়িয়েছে গল্প বলে। বারবারই মায়ের কাছে যাবার বায়না করছিল।
ভোরবেলা ফোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙে আকাশের চোখটা লেগে এসেছিল ক্লান্তিতে। ওপার থেকে সাজির গলা শুনতে পায়.. 'আমার ভালো লাগছে না খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাকে ভর্তি করে দাও কোথাও। জানি তুমি মিঙ্কুকে দেখবে তবুও আমি বাঁচতে চাই আকাশ। আমি বাঁচব তো?'
যে মানুষটার ওপর আকাশের অভিমান ছিল আজ সেই মানুষটা পাশে না থাকলে বোধহয় সাজির জন্য এত সহজে বেড পাওয়া যেত না। মিঙ্কুর জন্য যেমন ও সব করতে পারে ঠিক তেমনি বোধহয় সাজির জন্য ওর বাবাও সব করতে পারে। সমানে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে শেষপর্যন্ত এক ডাক্তার বন্ধুর সাহায্যে বেড জোগাড় করলেন বিজনবাবু। বড় অসহায় লাগছিল মানুষটাকে দেখতে। আকাশ নিজেও অবশ্য কম চেষ্টা করেনি,সাজি যে এতটা অসুস্থ হয়ে পড়বে হঠাৎই ওরা কেউ ভাবেনি। ওর কথাগুলো মাঝে মাঝেই বুকে বাজে আকাশের..'আমি বাঁচতে চাই আকাশ।'
অনেকগুলো দমবন্ধ করা দিনের পরে একঝলক মুক্তির শ্বাস নেয় আকাশ। এই কয়েকদিন কি যে গেছে! একদিকে মিঙ্কুকে সামলানো,সাজিকে চোখে দেখতে না পাওয়া। কি যে হচ্ছিল মনের ভেতর ঠিক বলে বোঝাতে পারবে না। অসুখের ছোঁয়া কেটে গিয়ে একটু একটু করে সুখের ছোঁয়া লাগলো দুই পরিবারের মাঝেও। আজকাল আভাদেবীর সাথে বিজনবাবুর কথা হয় সকাল বিকেল। নাতির সাথে ফোনেই কত বকবক চলে ঠাম্মা আর দাদুর। এই করেই মিঙ্কুকে ভুলিয়ে রাখা হয়েছে।
এর মাঝে আকাশ ফোন করেছিল ওর ক্লাশ টিচারকেও। বাড়ির অবস্থা সবটা বুঝিয়ে বলেছিল। নিজের অজান্তেই পৃথার মনটা বলে উঠেছিল বাচ্চাটা যেন ভালো থাকে। ওর মা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ফিরুক। সাজিকে যেন নতুন করে বুঝতে পারে আকাশ এই দুর্যোগের দিনগুলোতে। সত্যিই কি সাজিকে এতটা ভালোবাসত? এতদিন যাকে রাগী,জেদি স্বার্থপর মনে হয়েছে এই কদিন বারবার ঠাকুরকে বলেছে ফিরে আসুক তাড়াতাড়ি ওর অভিমানী বৌটা ওদের সন্তানের কাছে। সত্যিই অনেকটা একা হাতে সামলাত সাজি।
অনেকদিন বাদে আজ বাড়ি ফিরছে সাজি। ওর রোগা হাতদুটো নিজের হাতে নিয়েছে আকাশ। জড়িয়ে রেখেছে ওকে আদরে। প্রতি মুহূর্তে জীবনকে হারানোর আতঙ্কে ভীত সাজি আজ জীবন আর ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার সুখটুকু উপভোগ করতে চায় মন ভরে। চোখের কোণটা ভিজে যায় অজান্তেই সত্যিই কি হারানো জিনিস ফিরে পাওয়াতে এত সুখ?
দোতলার বারান্দায় চোখ পড়ে সাজির, বোগেনভেলিয়া গাছটা এই আঠাশ দিনেই যেন অনেক সুন্দরী হয়ে উঠেছে। অথচ এই কদিন নিজের বাঁচার তাগিদে একবারও মনে হয়নি গাছটার কথা তবুও আজ সবই যেন নতুন লাগছে।
আকাশ ওর হাতটা ধরে গাড়ি থেকে নামায়। ওপরের বারান্দা থেকে মিঙ্কুর কচি গলায় ডাক শুনতে পায়,' মা এসে গেছে,মা এসে গেছে। কি মজা কি মজা!'
-' আমারও মা এসে গেছে,কি মজা কি মজা!'
দাদু নাতির কলকলানিতে হেসে ফেলে ওরা অসুখের ছোঁয়া পার করে সুখের দরজায় পা রাখল সাজি অনেকদিন বাদে।
মাঝে কেটে গেছে বেশ কতগুলো দিন একটা ছোঁয়াচে অসুখ হঠাৎই ওদের মধ্যে আবার এনে দিয়েছে সেই পুরোনো ছোঁয়াছুঁয়ি খেলাটা। আজকাল আকাশকে ছুঁয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে চোখের পাতা বুজতে ভালো লাগে সাজির। আকাশের ঠোঁট ছুঁয়ে যায় আদরে সাজিকে। ফিসফিস করে বলে,' মরতে কে দেবে শুনি? বাঁচতে তো হবেই আমাদের সাজি, আবার শুকনো মনটাকে ভালোবাসা দিয়ে ভালো রেখে বাঁচতে হবে। মিঙ্কুটা বড় কষ্টে ছিল এই কয়েকটা দিন। আবার কেমন আনন্দে আছে দেখ।'
ওদের ক্লাশ টিচার পৃথা রোল কল করে যায় পরিচিত ছন্দে। মিঙ্কু আবার আগের মত জোরে বলে,' প্রেজেন্ট ম্যাম।'
' আর ইউ অলরাইট সুতনু?'
' ইয়েস ম্যাম।'
পৃথার মনটা ভরে ওঠে একটা ভালোলাগার ছন্দে।
আকাশে শরতের মেঘের আনাগোনা, অনেকটা দেরিতে হলেও পাড়ায় পাড়ায় প্যান্ডেল হচ্ছে। জাঁকজমক হয়ত তেমন থাকবে না। পুজোর খরচ বাঁচিয়ে এবার মানুষ দাঁড়িয়েছে মানুষের পাশে। তবুও মা আসবেন প্রতি বছরের মতই। মিঙ্কুর অনলাইন ক্লাশে মন বসে না। নতুন জামা জুতোর প্যাকেটে মা হাত দিতে দেয় না বলে আগে স্যানিটাইজ করে নিতে হবে তারপর।
' মা এই এত জামা কি হবে? কত প্যাকেট গো!'
' এইসব বাবা কিনেছে, যাদের এবার নতুন জামা হয়নি তাদের জন্য।'
গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসে মিঙ্কু তারপর বলে,' কি মজা! আমিও যাব মা তোমাদের সাথে।'
আকাশ মিঙ্কুকে কোলে তুলে নেয়,' যাব তো আমরা সবাই মিঙ্কু সোনা। তারপরে ওখান থেকে একদম বর্ধমানে ঠাম্মার বাড়ি। দুগ্গা পূজা হবে তো বাড়িতে। তুই দেখবি না?'
মুখটা একটু কাচুমাচু করে মিঙ্কু। তারপর বলে,' আমার ভয় করে।'
-'কিসের ভয় আবার?'
-' অসুরটা খুব রাগী তাই ভয় পাই আমি। এবারও কি অমন রাগী মুখ করে তাকাবে?'
-' তাকাতে পারে,তবে তোমার ভয় কিসের? মা দুগ্গা তো আছেই। মা ঠিক বধ করবে অসুরকে দেখিস।'
-' আর করোনাসুরকেও কি দুগ্গা মা বধ করবে? আমি কবে আবার স্কুলে যাব বাবা?'
আকাশ সাজির দিকে তাকায় মিঙ্কুর প্রশ্নের জবাব হয়ত নেই কারো কাছেই তবুও বলে,' করোনাসুরকে তো আমরাই মারতে পারি শুধু খুব সাবধানে থাকতে হবে,মাস্ক পরতে হবে আর স্যানিটাইজ করতে হবে। তাহলেই অক্কা পাবে করোনাসুর।'
গ্ৰামের ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর সরল মুখে অল্পতেই মেখেছে খুশির হাসির ছোঁয়া। অবাক হয়ে যায় সাজি অনেক কিছু না পেয়েও কত খুশি আছে মানুষ। ওদের মুঠো থেকে ছিটকে আসা ম্যাজিক খুশির চাবিতে আজ সাজির মনের অন্দরেও শুধুই আনন্দের আনাগোনা। অনেকটা অসুখে ভরা দিন কাটিয়ে অনেকদিন বাদে শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছে সাজি। অবাক চোখে রাস্তা দেখতে দেখতে আর বকবক করতে করতে যাচ্ছে মিঙ্কু। শরতের আকাশের ঝলমলে রোদের হাতছানিতে চারদিক খুব উজ্জ্বল।
মিঙ্কুকে কোলে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে অনেকদিন বাদে পা রাখে সাজি। পুজোর খুশিতে বাড়িটা সেজেছে। আভাদেবী বলেন,' এসো বৌমা,ষষ্ঠীর পুজো শুরু হয়েছে। আগে ওদেরকে নিয়ে প্রণাম করে ঠাকুর দেখিয়ে নিয়ে আয় বাবু।'
ঠাকুরের সামনে হাত জোড় করেছে সাজি। আকাশ মিঙ্কুর কানে কানে বলে,' অসুরটা ঠিক আছে তো এবার?'
মিঙ্কু ফিসফিস করে বলে,' হ্যাঁ মা দুর্গাকে ভয় পেয়েছে মনে হচ্ছে।'
-' আচ্ছা চল এবার তোর মা দুগ্গা তাকাচ্ছে তোর দিকে। তাড়াতাড়ি গিয়ে স্যানিটাইজ করে নে বুঝলি। আর ভিড়ের মধ্যে একদম যাবি না। তাহলেই শায়েস্তা হবে করোনাসুর।'
সাজির মুখে অনেকদিন বাদে সেই পুরোনো হাসিটা খেলা করছে। ওর কানের ঝোলা দুলে টুংটাং আওয়াজ হয়,চোখে আবার পুরোনো ভালোবাসা লুকোচুরি খেলে। অনেকটা অসুখের পথ পেরিয়ে আবার সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে খুব ইচ্ছে করে আকাশের।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment