আবার একটা ফাদার্সডের গন্ধ ভেসে আসছে। আমার মেয়েটা ভাবতে বসেছে ওর বাবাকে কী দেবে,কী খাওয়াবে সেদিন। আমিও খুঁজলাম তোমার আমার একটা ছবি চোখটা ঝাপসা হল আবার। তোমরা যখন সাথে ছিলে কোনদিন ভাবিইনি তোমরা একদিন থাকবে না। কী বোকা ছিলাম বলতো? ভাবতাম ঢের ঢের দেরি আছে সব ফুরিয়ে যাবার,এখনও তো কত এনার্জি তোমাদের। দেখতে দেখতে তোমার সত্তর হয়েছিল,মনে হত এই তো বেশ ভালো আছ তোমরা এখনও একটুও বুড়ো হওনি। এভাবেই অনেক অনেক বছর কেটে যাবে। কিন্তু ক্ষয় হয়ত হয়েছিল ভেতরে ভেতরে যার হদিশ আমি পাইনি তাই তো পরপর চলে গেলে দুজনেই।
আচ্ছা শোক কী সত্যিই প্রকাশ করা যায়? হয়ত যায় না কখনই,কান্না ঝরানো দেখে যারা হিসেব করে শোকের অঙ্ক তারা বড় বোকা। কিচ্ছুটি জানে না তারা,তাদের গণিত বড়ই নড়বড়ে।
আসলে যতদিন যায় শোকের ওপর আমরা প্রলেপ দিই নানা কাজে ব্যস্ত থেকে। ফুল ফোটাতে চাই এক গামলা চোখের জলকে কাজে লাগিয়ে,মন ফেরাতে ঘুরতে যাই,সাজগোজ করি। তোমাদের কথা এলে ঝাপসা চোখ আড়াল করে বলি হয়ত এমনটাই হবার ছিল। আসলে ততদিনে শোক বুকের মাঝে একটা জায়গা করে পাঁচিল তুলে নিজের মত থাকতে শিখে গেছে। হঠাৎই সবার মাঝে থেকেও একলা হয়ে যাই শোককে সঙ্গী করে। শোক বড় আপন এর ভাগ কাউকে দেওয়া যায় না। কেউ বোঝালে মন বুঝতে চায় না। ধীরে ধীরে মন শান্ত হতে শেখে বুকে ঢেউ চেপে হাসে আবার ছুটোছুটি করে ব্যস্ততায়।
সইতে সইতেই হঠাৎই খুব ভোরে ঘুম ভেঙে মন খারাপ করতে শুরু করে,কেন জানি না হয়ত কোন কারণ নেই অথবা গভীর কোন কারণ আছে। আমাদের মনের কোণে কোণে এভাবেই জমতে থাকে কত দুঃখ আর কান্না যে কান্নার হদিশ কেউই জানে না শুধু মনের মেঘ পিয়নই বোধহয় তার হদিশ রাখে। আমিও সইতে শিখেছি সেভাবেই কিন্তু সত্যি কী সইব বলেই সব পারা যায়? তাই তো হঠাৎই কোন ফাদার্সডের মেঘলা দিনে মন বলে ওঠে তুমি কেন চলে গেলে বাবা আরও তো পাঁচটা বছর... ধুৎ সেই পাঁচ বছরও তো পেরিয়ে গেছে কবেই। তোমাকে ছাড়া রয়েছি ছয় বছর।
আসলে এই ফাদার্সডে মাদার্সডে,স্ট্যাটাসে মা বাবার সাথে আদরে জড়িয়ে ছবি দেওয়া তখন তো ছিল না। শুধু জানতাম আমার সকালে,বিকেলে,রাতের খবরে তোমরা ছিলে। যেখানে মন খারাপ হলেই অন্ততঃ কথা বলা যায়,বা এক রাত্রি ট্রেনে চাপলেই পৌঁছনো যায়। অদ্ভুতভাবে ফোনে গলা শুনেই বুঝতে আজ আমার মন খারাপ। যখন আমার কাছে আসতে ম্যাজিকম্যানের মত ঝোলা থেকে বেরোত কত কিছু।
খুব ছোট্ট ছোট্ট জিনিস কিন্তু বড়ই আদর মাখা। বাবা তোমার মনে আছে? ইশ্ তোমার আবার কী মনে থাকবে তুমি তো সেই ভুলে যাওয়ার দেশে গিয়ে বসে আছ। মানে এই আমের মরশুমে তুমি যেভাবেই হোক আমার জন্য আম পাঠাতেই। একবার তো সেই আম পাঠাতে গিয়ে পুরো ভিজে ফিরে এলে,শুনে আমি কাঁদলাম মন খারাপে। ঠাকুরকে বললাম তোমার যেন শরীর খারাপ না হয়।
কেমন যেন সব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় বুঝলে,তখন যেগুলো নিয়ে কখনই ভাবিনি এখন ভাবি। আসলে তুমি ছিলে আমার জীবনের ম্যাজিকম্যান যেমন তোমাকে ভয় পেতাম তেমনই বোধহয় ভালোবাসতাম। তুমি চলে যাওয়ার পর কেমন যেন বেরঙ হয়ে গেল আমার জন্মদিনের দিনটা। সবই থাকে,প্রতিনিয়ত তাকে পলিশ করি। দেখাই আছি ভালো, কারণ তুমি তো চাইতে যাতে আমি ভালো আর হাসিখুশি থাকি। তাই তো শেষ যাওয়াটাও আমার চোখের বাইরেই হল।
যেদিন আমার গেছে তা তো কোনিনই ফিরবে না তবে তোমাদের মত ছোট ছোট আদর দেওয়ার কাউকে ফিরিয়ে দিয়েছ তোমরাই। আর ছুঁতে পারি না তবে প্রতিনিয়ত জড়িয়ে আছ তা বুঝতে পারি।
তোমার আমার মাঝে একটা ম্যাজিক টাচ ছিল,তোমার চওড়া হাতের ছোঁয়া ছিল মাথায়। আজও অনুভব করি তোমার পাঁচ আঙ্গুলের স্পর্শ। জানতাম সবসময় পাশে আছ তুমি,তোমার বটগাছের মত ছায়ায় বড় নিশ্চিন্ত আমি। শুনেছি মানবদেহ নশ্বর,আত্মার ক্ষয় হয় না। সেই অক্ষয় শক্তিটুকু দিয়ে আগলে রেখো তোমার আত্মজাকে। দেখেছ তো কত স্বার্থপর আমি সারাজীবন শুধু চেয়েই গেলাম,আজও চাইছি। তোমাকে কী দেব? শুধু বলি প্রতিনিয়ত তোমরা ভালো থেকো তোমাদের আশীর্বাদের ছোঁয়ায় ভালো থাক তোমার খুকু আর তার পরিবার। জানি তো ছেলেবেলার দিন কখনই ফিরে আসে না কিন্তু খুব খুব মিস্ করি তোমাদের।
Comments
Post a Comment