Skip to main content

সিমলিপাল

ছুটিছাটা পেলে ছুট লাগানো আমাদের মোটামুটি অভ‍্যেস হয়ে গেছে। আর অতিমারী পরবর্তী সময়ে আরও বোধহয় বেশি চিনেছি জীবনকে,দেখেছি জীবনের ছন্দপতন আর হারিয়েছি কত প্রিয়জনকে। সেই সব হাঁফিয়ে ওঠা দিন থেকে বের হয়ে একটু শ্বাস নেবার জন‍্য যখন ভাবতে বসি কোথায় যাওয়া যায় এবার? ফাঁকে ফাঁকে বাঙালীর দিপুদা ঘুরে ফেলেছি সুতরাং যদি নতুন কোন জায়গায় যাওয়া যায়। অথচ হাতে সময় কম কারণ ছেলেমেয়েরা ব‍্যস্ত। হঠাৎই ছেলে বলল তাহলে চল সিমলিপালে যাই।
 সিমলিপাল যাব এই গরমে? তারপর মাত্র দুটো দিন হাতে মানে দুদিনেই ফিরতে হবে। এত তাড়াতাড়ি উড়িষ‍্যা যাওয়া হবে কী?
    ছেলের আশ্বাসে চল ভোলা উঠাকে ঝোলা বলে বেরিয়ে পড়লাম উড়িষ‍্যার অভয়ারণ্য সিমলিপালের উদ্দেশ‍্যে। হঠাৎই প্ল‍্যান যথারীতি টিকিট পেতে খুবই সমস‍্যা হয়েছে। তবুও কপাল ভালো তাই জগন্নাথ এক্সপ্রেসে টিকিট পেয়ে গেলাম। সিমলিপালে যেতে হলে বালাসোরে নামলেই ভালো। কারণ যদিও বারিপদা আরও কাছে কিন্তু সব ট্রেন বারিপদা হয়ে যায় না। আমরা ঠিক করলাম রাতটুকু বালাসোরে হোটেলে কাটিয়ে আমরা পরের দিন ভোরে সিমলিপালের উদ্দেশ্যে রওনা দেব। 
      আমাদের ট্রেন সন্ধ‍্যে সাতটা পাঁচে শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ল। খাবার নিয়েই উঠেছিলাম কারণ ট্রেন বালাসোরে পৌঁছনোর সময় ছিল রাত্রি দশটা পঞ্চাশ। তাই ডিনার ট্রেনেই করে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিলাম। সত‍্যি কথা বলতে রাতের এই জার্নিটুকু ভালো লাগল কারণ মাত্র কয়েক ঘন্টাতেই বালাসোর পৌঁছে গেলাম। বালাসোর ছিমছাম স্টেশন আমরা ওভারব্রীজ পেরিয়ে এপারে এসে একটা অটো ধরলাম,বালাসোরে আমাদের হোটেল বুক করাই ছিল। হোটেলের নাম নীলাদ্রি ইন বলতেই মোটামুটি দুশো টাকার বিনিময়ে আমাদের পৌঁছে দিল। হোটেলের ফর্মালিটি মিটিয়ে ঢুকতে সাড়ে এগারোটা বেজে গেল। হোটেল বেশ ভালো, সমস্ত আধুনিক সুযোগ সুবিধা আছে আর ঘর বাথরুম সবই খুব সুন্দর। আমরা ফ্রেশ হয়ে টুকটাক ফোনালাপ করে শুয়ে পড়লাম। কারণ পরদিন ভোরে উঠতে হবে আর ফোনালাপ জরুরী কারণ জঙ্গলে ঢুকলে নেট কানেকশন তো দূর টাওয়ার থাকবে না। সুতরাং সমস্ত যান্ত্রিকতার বাইরে গিয়ে মোটামুটি দেড় দিনের ডিজিটাল ডিটক্স।
   সিমলিপাল সম্বন্ধে যেটুকু জানি বলছি,উড়িষ‍্যা আমাদের তার বৈচিত্র্যময় প্রকৃতিসম্ভার নিয়ে আমাদের বরাবরই আকৃষ্ট করে। পাহাড়,জঙ্গল সমুদ্র আর মন্দিরে সাজানো এই রাজ‍্য। সিমলিপাল ময়ূরভঞ্জ জেলায় অবস্থিত বারিপদার কাছাকাছি এক সুন্দর অভয়ারণ্য। ময়ূরভঞ্জ জেলার নামের মতই সুন্দর এই অরণ‍্য। পাহাড়,জঙ্গল,নদী,গ্ৰাম,ঝরনা আর নানা প্রজাপতির মেলা এখানে। জঙ্গলের পথে যেতে যেতে চোখে পড়বে সবুজে ঘেরা লাল মাটির পথ যার সৌন্দর্য্য বর্ণনাতীত। মনে হবে তাকিয়েই থাকি আর তাকিয়ে থাকি এই সুন্দর সবুজ লালের মেলামেশা মাখা টানা পথ। যারা এখানে আসতে চান তাদের জন‍্য বলব সিমলিপালের জঙ্গল পনেরোই জুন থেকে একত্রিশে অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকে। কারণ তখন বর্ষা নামে আর জঙ্গলের রাস্তা খারাপ হয় তাছাড়া জীবজন্তুদের মিলনের সময়ও এটা সুতরাং এইসময় তাদের নিজেদের মত থাকতে দেওয়া হয়। অবশ‍্য আসেপাশের গ্ৰামে যারা বাস করেন তারা তো জঙ্গলের অংশ সুতরাং তারা নিজেদের মতই থাকেন। সিমলিপালের জঙ্গলের মধ‍্যে পাহাড়ের কোলে যে উপত‍্যকা আছে সেখানেই গ্ৰামগুলো গড়ে উঠেছে। এখানকার অধিবাসীদের জীবনে কোন প্রাচুর্য নেই,গ্ৰামে ইলেকট্রিক পর্যন্ত পৌঁছায়নি দেখলাম সরকার থেকে সোলার লাইটের ব‍্যবস্থা করেছে কিছু কিছু জায়গায়। ময়ূরভঞ্জের এই জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে আপনি দেখতে পেতে পারেন উড়ন্ত কাঠবিড়ালি,ময়ূর,হরিণ,শূয়োর,বনমোরগ,নানান পাখি এবং ভাগ‍্য ভালো থাকলে হাতি বা চিতাও। তবে রয়‍্যাল বেঙ্গল টাইগার যে অঞ্চলে থাকে সেখানে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। জঙ্গলে আছে নানা প্রজাতির ওষধি গাছ আর অজস্র শাল গাছ। এই শালগাছকে আঁকড়ে উঠেছে কোথাও কোথাও নানা রঙের অর্কিড। শুনলাম গাইডের কাছে প্রায় তিনশো প্রজাতির অর্কিড আছে এখানে।
    সিমলিপালে ঢোকার রাস্তা দুটো একটা পিঠাবাটা দিয়ে এবং অন‍্যটি যোশিপুর দিয়ে। আমরা পিঠাবাটা দিয়ে ঢুকেছিলাম। টিকিট কাউন্টার খোলে সাতটায় মোটামুটি বিকেল পাঁচটার পর জঙ্গলে থাকা যায় না। তবে আমাদের ফিরতে একটু দেরি হয়ে গেছিল। তখনও বেলা ছিল অসুবিধা হয়নি। টিকিট জন প্রতি একশো টাকা,গাড়ির জন‍্য একশো টাকা,ক‍্যামেরার জন‍্য পঞ্চাশ এবং খাওয়ার খরচ জন প্রতি একশো কুড়ি। সাথে গাইড নিতে হয় তার খরচ সাড়ে তিনশো টাকা।
     একটা সময় বারিপদা এবং সিমলিপালে মাওবাদীদের আস্তানা ছিল তবে এখন এই জায়গা ঘোরার জন‍্য সুরক্ষিত। আমরা তো বেশ সন্ধ‍্যে অবধিই কাটালাম জঙ্গলে।
    
      এবার আসি আমাদের অরণ‍্যে একদিনের বর্ণনায়। ভোরেই অ্যালার্ম দেওয়া ছিল তাই উঠে পড়লাম কিন্তু সবাই তৈরী হয়ে বেরোতে সাড়ে পাঁচটার বদলে ছটাই বেজে গেল। বালাসোর থেকে বারিপদা যাবার পথ খুবই সুন্দর আমরা হাইওয়ের পাশের গাছপালার সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে এগিয়ে চললাম। সাথে অবশ‍্যই নিয়ে নিয়েছিলাম বেশ কিছু শুকনো খাবার,কয়েক বোতল জল এবং হোটেল থেকে দেওয়া প‍্যাক করা ব্রেকফাস্ট। বড় গাড়ি পাঠানোর কথা থাকলেও প্রথমে সেডানে চড়লাম শুনলাম বারিপদাতে বড় গাড়ি আসবে। আমাদের সবার মন তখন ফুরফুরে বেড়াতে যাবার আনন্দে সুতরাং বারিপদাতে গিয়ে ছোট গাড়ি ছেড়ে বড় গাড়িতে উঠে রওনা দিলাম। এই সময় খুব একটা টুরিস্ট নেই কারণ বেশ গরম। আমাদের গাড়িতে এসি ছিল সুতরাং ভালোই লাগছিল তাছাড়া তখন সকাল সুতরাং চারিদিকে সোনা রোদের ছড়াছড়ি। বালাসোর থেকে জঙ্গলে আসতে মোটামুটি ঘন্টা দুয়েক লাগে পথ ৭৩ কিমি মত। তবে জঙ্গল ঘুরতে লেগে যায় সারাটা দিন। বেশ খানিকটা বাদে আমরা পিঠাবাটা এসে গেলাম। এখানেই আমাদের জঙ্গলে ঢোকার সরকারী পারমিট নিতে হল। পারমিট নেবার ফাঁকে মুঠোবন্দি হল কিছু ছবি। কারণ জায়গাটা খুব সুন্দর দেখতে লাগল তখন। ঠিক মনে হল বেশ একটা অ্যাডভেঞ্চারে যাচ্ছি।
    ওখান থেকেই বাড়ল এক নতুন সদস‍্য গাড়িতে আমাদের গাইড। সে গাড়ির পেছনে বসে আমাদের জঙ্গল সম্বন্ধে তথ‍্য দিতে দিতে নিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎই চোখে পড়ল একটা বিরাট আকারের কাঠবিড়ালি। রঙটাও বেশ অন‍্যরকম গাঢ় খয়েরীর সাথে যেন একটু কমলা মত মেশানো। ছেলে বলল ওটা জায়েন্ট স্কুইরেল। কিন্তু ততক্ষণে উনি লম্ফঝম্ফ করে গাছে উঠে পগারপার। তাই আর ছবি তোলা হল না। গাইড নীচু গলায় বলল,চুপচাপ বসে এদিক ওদিক নজর রাখলেই দেখতেও পারি বন‍্য জন্তু। যদিও ততক্ষণে বেশ একটু বেলা হচ্ছে। জীবজন্তুদের ভোরে আর সন্ধ‍্যেতে বেশি দেখা যায়।
       রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে চোখ স্নিগ্ধ হয়ে যাচ্ছে বারবারই সবুজের ছোঁয়ায় মনে হচ্ছে তাকিয়েই থাকে আর দেখি এই নয়নাভিরাম দৃশ‍্য। নানা রঙের পাখি হঠাৎই ফুরুৎ করে উড়ে যাচ্ছে গাড়ির শব্দ শুনে তাদের ক‍্যামেরায় ধরা খুবই শক্ত। আর দেখছি মাঝে মাঝে একটা দুটো করে হনুমান। তারাও একটু লাজুক না ভীত ঠিক বলতে পারব না। আমাদের সাড়া পেয়েই লম্বা লম্বা পায়ে লাফ দিয়ে বা দৌড়ে জঙ্গলে মুখ লুকোচ্ছে। তবে এদের চেহারা বেশ বড়সড় এবং বেশ মোটাসোটা। গাইড বলল জঙ্গলের ভেতরে প্রচুর ফলের গাছ আছে মানে আম,লিচু,কলা,কাঁঠাল,পেয়ারা ইত‍্যাদি। এরা তাই খাবার কষ্ট পায় না তাই এদের চেহারা বেশ ভালো। হনুমান আর পাখি দেখার মাঝেই ঝোপের ভেতর দেখলাম একটা হরিণ। কিন্তু সে মুহূর্তে দৌড়ে হাওয়া হয়ে গেল। ততক্ষণে আমরা পৌঁছে গেছি ভজম চেকপোস্টে। আমাদের সাথে থাকা স‍্যান্ডউইচ আর ডিমসেদ্ধ কলা সহযোগে আমরা খেয়ে নিলাম ওখানে। প্রতিটা চেকপোস্টে বাথরুম এবং জলের ব‍্যবস্থা আছে সুতরাং কোন অসুবিধা নেই। গাড়ি এগিয়ে চলল আমরাও চোখ রেখেছি পথে যদি আমাদের অভীষ্ট পূরণ হয়। হঠাৎই দেখলাম একটু দূর দিয়ে একটা বেশ বড়সড় হরিণ রাস্তা পার হচ্ছে। তবে সবই এক ঝলকে দেখে মন ভরানো কারণ কেউই সুযোগ দিচ্ছে না ফটো তোলার। কিছুদিন আগে যখন বন্দীপুরের জঙ্গল পার হয়েছি তখন দেখেছি ঝাঁকে ঝাঁকে হরিণ নিশ্চিন্তে বিচরণ করছে রাস্তার পাশের জঙ্গলে। এমনকি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল হাতি পরিবারকেও। তবে এখানে ওরা তেমন নিরাপদ নিশ্চয় মনে করে না তাই ওদের পালানোর তাড়া বড় বেশি।
     ভজম পেরোনোর প্রায় পনেরো কিমি পরেই পড়ে নিগিরধা চেকপোস্ট। অনেকটা সময় বসে থাকতে ভালো লাগে না তাই পা সোজা করতে একটু নেমে পড়লাম। টিউবওয়েল চেপে জল নিয়ে মুখে চোখে দিলাম। ভালো লাগল বেশ। ওখানে শাল কাঠের ওপর দিয়ে হাঁটতেও বেশ ভালো লাগল। তার মাঝেই দেখলাম একটা গিরগিটি রঙটা বেশ অদ্ভুত লাল, কালো আর সাদা মেশানো মুখ। গাইড দেখালো শালগাছের মধ‍্যে অর্কিডের ফুল ফুটেছে। একটা গাছে সাদা আর অন‍্য গাছে বেগুনী ফুল দেখলাম। গাড়ি আবার চলতে লাগল নিজের ছন্দে আমরা এগিয়ে চললাম জঙ্গলের পথ ধরে পাহাড়ের ওপরে। বেশ কিছুটা চলার পর গাড়ি একটা উপত‍্যকার দিকে এগোল। চোখ জুড়োনো সেই উপত‍্যকা,লাল মাটির মাঝে সবুজ গালিচা বিছানো মাঝে মাঝেই। আর পথের পাশ দিয়ে লাল মাটির তৈরি বাড়িঘর। ছোট ছোট বাচ্চা ছেলে মেয়েরা পথের ধারে গাছের তলায় খেলছে। মাথায় বোঝা নিয়ে যাচ্ছে গাঁয়ের মেয়ে পুরুষের দল। কোথায় যেন মনে হল বেশ একটা অন‍্য রকম জীবন ওদের যেখানে কোন ছুটোছুটি নেই। নেই ব‍্যস্ততা আর শহুরে জীবনের সংক্রামক রোগ স্ট্রেস, একাকীত্ব আর আইডেন্টিটি ক্রাইসিস। বাচ্চাদের হাতে ধরা নেই মুঠোফোনের চকচকে ঝুঁটি। আমরাও খুব নিশ্চিন্ত কারণ এখানে ফোনের সিগন‍্যাল থাকে না তাই কেউ ফোন করছে না,আমরাও চোখে শুধুই সবুজ দেখছি।
      গ্ৰাম পেরিয়ে আমাদের গাড়ি আবার জঙ্গলের পথ ধরল। মাঝে মাঝে একটা দুটো হরিণকে পালিয়ে যেতে দেখছি। ছেলে সামনে বসে পথের রেকর্ডিং করছে হঠাৎই গাড়ির সামনে এল একদল হনুমান। মানে ওরা অনিচ্ছ্বাকৃত বন্দি হল ক‍্যামেরাতে। দৌড়ে অবশ‍্য উঠল সবাই গাছে তার মধ‍্যেই একদম হাতেনাতে ধরা পড়ল।
     আমাদের গন্তব‍্য এবার জোরান্ডা ফলসের পথে। এখানেও কোন গাড়ি দেখলাম না। আমাদের একটা জায়গায় গাড়ি রাখতে হল বাকিটা হেঁটে যেতে হল। পথঘাট খুব সুন্দর আর পরিস্কার। কানে আসছিল ঝর্ণার শব্দ তবে দেখলাম ঝর্ণা অনেক দূরে। বর্ষার সময় কী হবে বলতে পারব না। আমরা যেখান থেকে দেখলাম সেখান থেকে বুঝতে পারলাম একটা ধারায় গতিতে পাহাড়ের ওপর থেকে জল পড়ছে। এই ঝর্ণার এটাই বিশেষত্ব। চারপাশে পাখির ডাক,জঙ্গলের মধ‍্যে ছায়া থাকলেও বেশ চড়া রোদ তখন। আমরাও একটু বিশ্রাম নিলাম বসে পাথরে। 
তারপর আবার চলা শুরু হল,আমাদের পরবর্তী গন্তব‍্য বড়াপানি। জঙ্গলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গার দূরত্ব বেশ কিছুটা। যাওয়ার পথে আবার হরিণ দেখলাম। গাইড তেমন কিছু দেখানোর নেই বলে মাঝেমাঝে ঝিমোচ্ছে পেছনে বসে। ওর কাছেই শুনলাম জঙ্গলের মাঝে থাকা অনেকগুলো বাংলো নষ্ট করেছে মাওবাদীরা।
     আবার উপত‍্যকা আর গ্রাম পেরিয়ে ধরলাম বড়াপানি যাবার পথ। বড়াপানি যখন পৌঁছলাম সূর্য তখন মাঝ আকাশে। জায়গাটা খুবই সুন্দর, একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে সুন্দর দেখা যাচ্ছে ঝর্ণা। বড়াপানিও অনেকটা জোরান্ডা ফলসের মত তবে জলের ধারা বেশ কিছুটা তীব্র মনে হল আমার। পাহাড়ে নানান পাখির ডাকের মাঝে সেই জলধারার শব্দ মুগ্ধ করল। 
       আর বেশিক্ষণ সেখানে দাঁড়ানো গেল না,আমরা এগিয়ে গেলাম গাড়ির দিকে। ছেলেমেয়েরা তখনও ছবি তুলছে। জঙ্গল সত‍্যি নেশা ধরায় মনকে মাতাল করে। শুনলাম বুড়িবালাম নদীর সৃষ্টি এই জলধারা থেকেই। যে বুড়িবালামের যুদ্ধ ইতিহাসের পাতা থেকে আমাদের মনের মণিকোঠায় রয়ে গেছে।
      এবার আমাদের খাবার পালা,আগেই বলেছি জঙ্গলে দুপুরের খাওয়ার পাওয়া যায় একটা জায়গাতেই। সেখানে খেতে হলে পিঠাবাটা থেকে কুপন কেটে নিতে হয়। আমাদের গাড়ি গ্ৰামের মধ‍্যে এল আবার। দেখলাম এখানেও একটা থাকার জায়গা আছে। কিছু ঘর ও কটেজ আছে। আমাদের থাকার জায়গা অবশ‍্য আগে থেকেই বুক করা ছিল পিঠাবাটা চেকপোস্ট থেকে চার কিমি ভেতরে। থাকার জায়গার নাম লুলুং অরণ‍্য নিবাস। থাকার ব‍্যাপারে আমাদের ছেলের পছন্দের ওপর ভরসা রাখতে হয়। বেড়াতে খুব ভালোবাসলেও হোটেলের ব‍্যাপারে সে একটু সিলেক্টিভ। 
তাছাড়া সিমলিপালের মশা কিন্তু সাঙ্ঘাতিক সেটা অনেকেই জানেন। সুতরাং এই ক্ষেত্রে একটু ভালো জায়গায় থাকলে কিছুটা নিরাপদে থাকা যায়। আমরা মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে গুডনাইটের একধরনের লিকুইড গায়ে লাগিয়ে নিয়েছিলাম যাতে ইউক‍্যালিপটাসের গন্ধ ছিল।
       যাক খাবার জায়গায় যখন এসে পৌঁছলাম তখন সবারই বেশ গরম লাগছে। আরও বেশি গরম লাগল যখন দেখা গেল কোন পাখার ব‍্যবস্থা নেই। গাছতলায় বসে থাকা স্থানীয় মানুষদের দেখে মনে হল কত অল্পে এরা খুশি আছে। আমরা মুখে চোখে ঠান্ডা জল ছিটিয়ে টেবিলে খেতে বসলাম। পাশের উপত‍্যকায় গরু ছাগল চড়ছে। তারপরে আবার পাহাড়। কাঁচের জানলা খুলে দিলাম,একটু বাদেই শরীরটা ঠান্ডা হল।

     আমাদের গাইড একটা একটা করে খাঁজকাটা প্লেট এনে দিতে লাগল আমাদের। রান্নার পদ দেখে সত‍্যি অবাক হলাম। মাত্র একশো কুড়ি টাকাতে এত কিছু! 
   দেখলাম পাতলা পাতলা করে উচ্ছে কেটে বেসনে ডুবিয়ে ভাজা হয়েছে,সাথে বড়ি ভেজে গুড়ো করা,একটা পনীরের তরকারি পটল দিয়ে,সম্বরের মত ডাল,পাপড় ভাজা আর দেশি চিকেনের ঝোল। আমাদের বেশ খিদে পেয়েছে তখন,তাই সময় নষ্ট না করে ঝাঁপিয়ে পড়া থালাতে। একটু একটু করে চেটেপুটে সব খেয়ে একটু গাছের ছায়াতে দাঁড়িয়ে গাড়িতে উঠে পড়লাম।
   গাইডকে জিজ্ঞেস করলাম এখানে সিগন্যাল না থাকা সত্ত্বেও ওরা কী করে জানতে পারে কতজন খাবে? গাইড বলল সব কথা ওয়াকি টকিতে হয়। ততক্ষণে আরেকটা গাড়িও এসেছে। বুঝলাম স্থানীয় মানুষ,মানে ওড়িশার বাসিন্দা। পরিবার নিয়ে জঙ্গল দেখতে এসেছেন। আমরা ছাড়া আর কোন বঙ্গসন্তানকে দেখলাম না জঙ্গল ভ্রমণকালে। বুঝলাম এখন অফ সিজন তাই ভিড় নেই। অবশ‍্য সেটা একদিক দিয়ে ভালো।

     খাবার পর বেশ কিছুক্ষণের গাড়ি যাত্রা,জঙ্গলের প্রতিটা বাঁক বলে যাচ্ছে নানা গল্প। চোখ জুড়োচ্ছে সবুজে। শাল কাঠে পাতা ব্রীজের ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে গাড়ি ঘড়ঘড় আওয়াজে। আমাদের ড্রাইভার ছেলেটি খুব শান্ত স্বভাবের এবং সতর্ক। সে প্রতিটা বাঁক এবং উঁচু নিচু যত্নে পার হচ্ছে। শুনলাম জঙ্গল পনেরোই জুন থেকে বন্ধ হয় এবং খোলে পয়লা নভেম্বর। তার আগে অক্টোবর মাসে রাস্তা সারানো হয়। রাস্তা পিচের নয়,মাটির তাই বর্ষাকালে খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু সত‍্যি রাস্তা খুব সুন্দর আর একদম যত্নে মেনটেন করা হয়েছে। আমরা আবার উপত‍্যকা পার হয়ে জঙ্গলের রাস্তা ধরলাম এবার আমরা যাব চাহালা। যাবার পথে অনেক হরিণ চোখে পড়ল,যাদের গায়ে সুন্দর ছোপ ছোপ দাগ আর মাথায় শিং। তবে তারা খুবই সাবধানী। কোন আওয়াজ পেলেই দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
    গাড়ি এসে থামল চাহালাতে,ছেলে আর গাইড এগিয়ে গেছে। আমরা একটু পেছনে। ওরা ইশারায় আমাদের ডাকল,বুঝলাম কোন জীবজন্তু দেখা যাচ্ছে। একটু এগোতেই দেখলাম সারি সারি গাছের পর কাঁটা তার দেওয়া আর তার পরেই বেশ খানিকটা সমতল আর সমতল পেরিয়ে জঙ্গল। সেখানে প্রচুর হরিণ ঘাস খাচ্ছে, তারা আবার দুই দলে বিভক্ত। পুরুষ হরিণ,মহিলা এবং বাচ্চা সবই আছে সেই দলে। কিছু হরিণ দেখতে খুবই সুন্দর। এগুলো মনে হল চিতল হরিণ। আমি অবশ‍্য পাখি,পশু,গাছপালা সম্বন্ধে খুব অভিজ্ঞ নই। যেটুকু দেখি মনের ক‍্যামেরাতে সাজিয়ে নিই সবটা। মন খুশিতে ভরে ওঠে বেড়ানোর স্মৃতির অনুরণনে। তার মধ‍্যেই একটা বেশ বড়সড় হনুমান এসে গাছের ফাঁক দিয়ে খুবই কৌতূহলী হয়ে আমাদের দেখে চম্পট দিল। সেই চাউনিটা দেখে সবাই হাসলাম। দেখে বুঝলাম এই জায়গাটা পশুদের শান্তিতে বিচরণ ক্ষেত্র,আমাদের মত এরাও পার্কে আসে সাথে প্রেমিকা নিয়ে।
    কিছুক্ষণ সেখানে থেকে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে এগিয়ে চললাম গাড়ির দিকে। তার মধ‍্যেই একটা অদ্ভুত ডাক ভাঙল নিস্তব্ধতা,মনে হল ওটা হাতির ডাক। তবে একটু কনফিউজড গাইডও ডাকটা হাতির না হরিণের। আবার কিছুটা বাদে সেই ডাকটা শুনলাম। ওখানে দেখলাম ময়ূরভঞ্জের রাজাদের ছোটখাটো একটা শিকার প‍্যালেস যেখানে রাজা আসতেন সঙ্গী সাথীদের নিয়ে শিকারে। একটা সময় এখানে ভি আই পি গেস্টও আসতেন তবে মাওবাদী আক্রমণের পর এটা আপাততঃ বন্ধ আছে। তবে জায়গাটা আমার খুবই পছন্দ হল। ইশ্ এইরকম একটা জায়গাতে যদি থাকতে পারতাম একটা বিকেল আর সন্ধ‍্যে তাহলে কত ভালো হত। 
          জায়গাটাতে বেশ সুন্দর বাগান আর গাছপালা রয়েছে। আবার সেই অদ্ভুত ডাকটা শুনলাম তারপরে এগিয়ে চললাম জঙ্গলের পথে। এবার ফিরে যাবার পালা আমাদের, সাথে টুকটাক যা খাবার ছিল সেটা দিয়ে মুখ নাড়তে নাড়তে এগিয়ে চলা। জঙ্গলে তখনও বেশ আলো আছে,গাড়ি থামিয়ে স্মৃতিটুকু থাক এই ভেবে কাঠের ব্রীজে দাঁড়িয়ে কয়েকটা ছবি তুললাম।
   অরণ‍্যের নিস্তব্ধতা ভেঙে মাঝে মাঝে আসছে বাইকে করে স্থানীয় মানুষজন। একটু একটু করে সন্ধ‍্যে নামছে। আমরা আবার পার হলাম দুটো চেকপোস্ট নিগিরধা এবং ভজম তারপরে এগিয়ে যাওয়া আমাদের গন্তব‍্যের দিকে যেখানে আমরা রাত্রিযাপন করব।
        এবার গাড়ি একটু একটু করে জঙ্গলের পথ পেরিয়ে নেমে আসছে পীচ রাস্তায়। পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে নদী পাথুরে পথ ভেঙে আওয়াজ করে। সে এক মনোরম দৃশ্য। দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে গেলাম লুলুং অরণ‍্য নিবাসে। ছবি আগে থেকেই দেখে গেছিলাম তবে জঙ্গলের ভেতরে যে এত সুন্দর রিসর্ট থাকতে পারে তা দেখে সত‍্যি অবাক হলাম। বিরাট বড় জঙ্গলের সীমানা নিয়ে গড়ে উঠেছে রিসর্ট,মনে হল বিদেশের কোন হোটেলে এসে পড়েছি। চারদিকে অজস্র গাছ আর তার মাঝে মাঝে রয়েছে কটেজ। প্রতিটা কটেজই খুব সুন্দর গাছের ছায়ায় ছায়ায় আছে। আম গাছে আম ঝুলছে,কাঁঠাল গাছে কাঁঠাল। এছাড়া নানা জাতের বাঁশ গাছ এবং শাল,দেবদারু,পাইন আর ফুলের গাছ।
     রিসর্টে ঢোকার মুখেই ওরা কমপ্লিমেন্টারি ড্রিংক দিল। প্রত‍্যেকের সুন্দর হাসিমুখ দেখে ভালো লাগল। অনেক আঞ্চলিক মানুষজন এখানে কাজ করেন। রিসেপসন থেকে একটু এগিয়ে আমাদের কটেজ ছিল। ঘরটা এক্জিকিউটিভ,চারজনের থাকার মতই। কিন্তু শুনলাম ঘরটা দুজনের তবে এক্সট্রা চার্জে ওরা চারজন অ্যালাউ করে। কিন্তু ঘরটা বিরাট বড় এবং তাতে দুটো বড় বড় ডাবল বেড খাট সোফা চেয়ার আর অন‍্য সব জিনিসে সুন্দর করে সাজানো। বাথরুম বড়সড় সুন্দর আধুনিক সজ্জায় সজ্জিত। ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গড়ালাম। অবশ্যই তার আগে চা বিস্কুট খেয়ে নিজেদেরকে একটু চাঙা করা। এখানে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট আছে। লাঞ্চ এবং ডিনার সবই পাওয়া যায় তবে চার্জেবল এবং বুফে। আমরা ডিনার খেতে একটু তাড়াতাড়ি চলে গেলাম কারণ সবাই ক্লান্ত আর একটু রয়ে সয়ে খাওয়া যাবে।
      বুফে ডিনারে ভেজ ননভেজ অনেক রকমের স‍্যালাড আর ডেজার্ট সবই ছিল। পেলাম নদী থেকে ধরা টাটকা মাছের ভাজাও। মোটামুটি মাংস,মাছ,পনীর,পোলাউ,চাইনিজ,পাস্তা,নিরামিষ সবজি,ডাল আর ভাজা সবই ছিল মেনুতে। যাক বেশ অনেকটা সময় ধরে খেয়ে ফিরে এলাম ঘরে। আমাদের ঘর মোটামুটি ডাইনিং হলের উল্টোদিকেই তাই আর কোন অসুবিধা নেই। ঘরে এসে একটু গল্প করে সোজা গড়িয়ে যাওয়া ঘুমের দেশে। পরের দিন ঘুম ভাঙলো সকালেই বাইরে বেরিয়ে এলাম চারিদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ,গাছগুলো ফুলে সেজেছে। আমাদের কটেজের সামনে যে আম গাছটা ছিল তার তলায় তখন অনেক আম পড়ে,অনেকদিন বাদে আম কুড়োনোর আনন্দ উপভোগ করলাম। খুবই ছোট ছোট দেশী আম তবে তাকে মুঠোতে ধরার খুশীতে আমিও ফিরলাম ছেলেবেলার দিনে। রিসর্টের মাঠে একটু হেঁটে এগিয়ে গেলাম সুইমিং পুল পেরিয়ে মূল গেটের দিকে দেখলাম গেট পেরোলেই লুলুং নদী। আর তারপরেই পাহাড়। ছোটখাটো নুড়ি বড় পাথর সবই ছড়ানো রয়েছে নদীতে তাদের আদরে সোহাগে ভাসিয়ে নদী চলেছে আপন বেগে। পাখিদের কলতান আর নদীর শব্দ শুনলাম বিভোর হয়ে। ছেলে মেয়েরা নীচে নেমে কিছুটা সময় কাটালো নদীর কাছাকাছি। আমি বারবার কান পাতলাম পাখির গানে। 
    দেখতে দেখতে সময় হয়ে আসছে কারণ আমাদের ফিরতে হবে জঙ্গলের জগত থেকে নিজেদের ব‍্যস্ত জগতে যেখানে প্রচুর কাজ। তাই রিসর্টের দিকে পা বাড়ালাম,মন ছুঁয়ে গেল লুলুং নদী।
     রিসর্টের পেছন দিকটায় হেঁটে হেঁটে এলাম,ঠিক যেন একটা স্বপ্নের জগত পাহাড়ের কোলে সবুজ গালিচা মোড়া। মনে পড়ে গেল কবিগুরুর লেখা কয়েকটা লাইন...
  বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।

    ঘরে এসে একটু ফ্রেশ হয়ে চলে এলাম ব্রেকফাস্ট করতে। আগেই বলেছি ব্রেকফাস্ট কমপ্লিমেন্টারি এখানেও ফল,লুচি,চানা,ডিম,পাউরুটি,কর্নফ্লেক্স,বড়া,ধোসা সবই ছিল। আরও ছিল বাদাম,চানা,নিমকি,ঝুরিভাজা ইত‍্যাদিও। ও হ‍্যাঁ মালপোয়া,পায়েস,ফলের রস,চা কফি সবই ছিল। যাক অত খাওয়া সম্ভব নয় সুতরাং পছন্দের কিছু জিনিস নিয়ে খেয়ে আমরা ঘরে ফিরলাম। সব শেষে পুলে নেমে একটু ঠান্ডা হয়ে ঘরে ফেরা। পুলের জল সকালেই পরিস্কার করা হয়েছে সুতরাং একদম ঝকঝকে,ইনফিনিটি পুলে বেশ লাগল। কারণ চারিদিকে সবুজের সমারোহ আর তার মাঝে একটুকরো নীলের ছোঁয়া। ভীড় ছিল না সুতরাং আমরা চারজন ইচ্ছেমত বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে ফিরলাম।
     হোটেলের চেকআউট সময় এগারোটা আর চেক ইন দুটো। আমরা যদিও অনেক পরে ঢুকেছিলাম, তবুও নির্দিষ্ট সময়েই বেরোলাম কারণ আমাদের ট্রেন ছিল বালাসোর থেকে তিনটে পাঁচে। যে গাড়ি আমাদের জঙ্গল সাফারি করিয়েছিল ওদেরই ফোন করা হয়েছিল ওরা সময়ে গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল। মুগ্ধ করল রিসর্টের পরিবেশ আর ব‍্যবস্থা। রুম সার্ভিস ভীষণ ভালো,সবার মুখে হাসি। রেস্টোরেন্টে সবাই খুব ভালো সার্ভিস দেয়। ফেরার সময় একটা ছোট্ট প‍্যাকেটে উপহার হিসেবে এক শিশি মধু দিল আমাদের। সুতরাং মধুরেণ সমাপয়েৎ।
     আমাদের কথা ছিল ফেরার সময় সীতাকুণ্ড দেখে যাব। সীতাকুণ্ড মনে হয় বৃষ্টির জলে পুষ্ট। যেহেতু বৃষ্টি নেই তেমন তাই জল খুবই অল্প ছিল। তবে সীতাকুণ্ড যাবার পথে লুলুং নদীর সৌন্দর্য মন কাড়ল। কথিত আছে বনবাসে যাবার সময় সীতা এই কুন্ডে স্নান করেছিলেন। ছেলে এগিয়ে গেছিল বলল কয়েকজন ঐ জমা জলে স্নান করছে। তখন খুব চড়া রোদ সুতরাং আমরা চটজলদি গাড়ির শীতলতায় আশ্রয় নিলাম। এবার গন্তব‍্য সোজা বালাসোর। পিঠাবাটা চেকপোস্ট ছেড়ে বেরোলাম। তাকালাম শেষবারের মত জঙ্গলের দিকে। চোখ তখনও নেশা আর মনে জঙ্গল প্রেম। মাতাল মন বলল আবার আসব সুযোগ পেলেই,নেশা ধরিয়ে দিলে যে।
       

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...