কাঁধে ঢাউস ব্যাগটা নিয়ে মলের সিঁড়ি দিয়ে উঠছে মেয়েটা পেছন থেকে দেখে আজও চিনতে কোন ভুল হয়নি নৈঋতের। তবে অবহেলায় ফেলে আসা অতীতকে আবার নতুন করে না দেখে ফেলাই ভালো। তাই মাকে বলে,' মা এদিকে নয়,চল তোমাকে লিফ্টে করে নিয়ে যাব।'
সঞ্চিতাও মেয়েটাকে দেখছিলেন,নৈঋত মাকে খেয়ালই করেনি। তবে এবার খেয়াল করল যে মা এখনও হাঁ করে ওপরের দিকে তাকিয়ে আছে। আর হ্যাঁ ওকেই তো দেখছে চোখ গোল গোল করে। অথচ ওর কোন খেয়াল নেই,ভারী কোমরটাকে দুলিয়ে মাথার পনিটেল নাড়িয়ে চলে যাচ্ছে সামনের দিকে।
খুব তো বড় বড় কথা বলেছিল যে ওর অনেক বন্ধু আছে,একটা বন্ধু জীবন থেকে চলে গেলে ওর কিছু আসে না। তাহলে এই ভ্যালেন্টাইন ডের দিন সেই একখানা ঢাউস ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কেন শুনি?
মাকে এবার তাড়া দেয়,গম্ভীর গলায় বলে,' মা কী দেখছ বলত? আমি যে এতগুলো কথা বললাম তুমি কী কোনটাই শুনলে না?'
হঠাৎই মা ওর হাতটা চেপে ধরে,' ঐ যে দেখেছিস..মহুল না? আরে ঐ যে।'
-' মা কী হচ্ছে? চল ঐদিকে,হ্যাঁ আমি দেখেছি। তবে তুমি এবার চল। ও যদি এদিকে তাকায় তো কী ভাববে?'
-' ভাবার কী আছে? একটা সময় কত আমাদের বাড়িতে এসেছে। খুব খেতে ভালোবাসত মেয়েটা। ও নিশ্চয় আমাদের দেখেনি বল। নাহলে ঠিক কথা বলত।'
লিফ্টের বোতাম টিপে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছুটা সময়,লিফ্ট নামতে দেরী করছে। মনটা হঠাৎই তেতো হয়ে যায় নৈঋতের। মা তো জানে না মহুলকে ও কত বাজে ভাবে অপমান করেছিল। হয়ত ওকে দেখলেও কথা বলবে না,মুখ ফিরিয়ে চলে যাবে। তাই অন্য পথে অন্য দিকে চলে যাওয়াই ভালো। এসেছে হয়ত মহুল কারও সাথে প্রেমটেম করতে। শুনেছে তো কোথায় একটা চাকরি পেয়েছে। ওপরের ফুডকোর্টে বা লাগোয়া ক্যাফেটাতে বসে অনেকেই প্রেম করে। তবে সাজ দেখে তো মনে হল না যে ডেটে যাচ্ছে।
নিজেকে শাসন করে হঠাৎই নৈঋত কেন আবার ওকে নিয়ে ভাবতে বসেছে আজ? মনই জবাব দেয় আসলে বোধহয় প্রথম কোনকিছুই চট করে ভোলা যায় না,আর ভালোমানুষদের কথাও বোধহয় তাই..
মহুলের বিপক্ষে যদি পাঁচটা খারাপ কথা ভাবতে যায় তাহলে দেখা যাবে পাঁচটার মধ্যে চারটেই ওর গুড কোয়ালিটি।
লিফ্ট থেকে নেমে ওরা সেই দোকানটায় আসে,মাকে নিয়ে মাঝেমধ্যে এখানে আসতে হয় ওকে। অবশ্য ও চাকরি নিয়ে বাইরে চলে যাবার পর অনেকদিন আসা হয়নি এখানে। মা জামাকাপড় দেখতে দেখতে কেমন যেন আনমনা হয়ে যাচ্ছে মাঝেমধ্যেই। আজ যেন মনে সেই খুশিটা নেই অথচ বেরোনোর আগেই বেশ খুশি ছিল। হঠাৎই কী এমন হল? তবে কী সেই মেয়েটাকে দেখেই?
মহুল আবার ঘোরাঘুরি করতে শুরু করে নৈঋতের মনের মধ্যে। হঠাৎই একদিন ইচ্ছে হয়েছিল মেয়েটাকে আই লাভ ইউ বলে ওর প্রেমে ভেসে যেতে। ও হেসে বলেছিল,' বন্ধুত্বটাই তো ভালো ছিল,হঠাৎ প্রেমের কী হল? আমার মধ্যে এমন কী আছে মানে প্রেমে গড়াগড়ি খাবার মত?'
-' কী আছে আমি জানি না,তবে তোকে খুব ভালো লাগে আমার।'
-' কী দেখে?'
-' কী আবার দেখে? অত হিসেব আমার আসে না ভালো লাগে তাই বললাম।'
নিজের মনটাকে কোনদিন কারও কাছে তেমনভাবে খোলে না মহুল। শুধুমাত্র মায়ের কাছে ছাড়া। তাই অবাক লাগল ওর আবার বয়ফ্রেন্ড? তাও আবার হঠাৎই একজন ওর প্রেমে পড়ে গড়াগড়ি খেল,আই লাভ ইউ বলল। কে জানে হয়ত হতে পারে এটা নৈঋতের ছেলেমানুষী।
না করে দেবে ভেবেও না করতে পারেনি মহুল শুধু প্রেমের মাত্রাটাকে কোথায় যেন একটা বাঁধনে বেঁধে রেখেছিল। মানে ঐ খুব সীমিত কিছু কথাবার্তা,সপ্তাহে এক আধদিন দেখা ঐ পর্যন্তই প্রেমটা ছিল। তবে ঐটুকু আস্বাদনের মিঠে সুবাস ভালো ছিল। অন্ততঃ মহুলকে ভরিয়ে রেখেছিল। হয়ত বা ওর কোথাও একটা না পাওয়ার শূন্যতাকে অনেকটাই ভরিয়ে রেখেছিল নৈঋতের ছেলেমানুষী ভরা আবেগ।
সঞ্চিতা এখনকার মা ছেলের সব বন্ধু,বান্ধবীকে চিনতেন তাই মহুলও পরিচিত ছিল। তবে ছেলে যখন বলল ভালোবাসার কথা তখন একটু অবাক হয়েছিল শুনে। তার স্মার্ট,ঝকঝকে ছেলের হঠাৎই এমন একটা মোটাসোটা শ্যামলা মেয়েকে পছন্দ হল কেন? তবে মেয়েটাকে ভালো লাগত সঞ্চিতার,একটু নিজের ঘোরের মধ্যে থাকে তবে ভালো মেয়ে। ছেলে অবাক হয়েছিল শুনে বলেছিল,' তোমার ভালো লেগেছে?'
-' কেন খারাপ লাগার কী আছে? তোর যখন ভালো লেগেছে তো আবার কী?'
-' আবার কী মানে? তোমার ভালো লাগে না তাই তো?'
সঞ্চিতা কিছুটা ভেবে বলেছিলেন,' মানুষ চেনা খুব একটা সহজ বোধহয় নয় রে। চোখে দেখে বোধহয় সবার সবটা বোঝা যায় না। আর অত কী বোঝার আছে? ভালো লাগছে বন্ধুত্ব রাখ,মিশে দেখ কেমন লাগে?'
তারপর মাঝে মাঝে আসত মেয়েটা। সঞ্চিতার ভালো লাগত মেয়েটার অকারণ বকবক। কেন যেন সঞ্চিতার মনে হত অনেকটা কষ্ট চেপে বকবক করে মেয়েটা। জিজ্ঞেস করাতে বলেছিল,' আমার কোন
Comments
Post a Comment