ছোটবেলার দুর্গামন্ডপ,একচালায় ডাকের সাজের দুর্গাঠাকুর সবই এখন অতীত। মা,বাবা চলে যাবার পর দীর্ঘদিন গ্ৰামের বাড়ির পুজোর নস্টালজিক স্বাদে বঞ্চিত মন। কলকাতার থিমের পুজোর ভিড়ে মাঝেমাঝেই উঁকি মারে ছেলেবেলার সেই দিনগুলো। গ্ৰামের একটা পুজোকে কেন্দ্র করে কত হইচই আর বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের মেলা। তারপর বিজয়া দশমীর মেলার আনন্দটুকু দুহাতে ধরে মাকে বিদায় দেবার পালা বিজয়াদশমীর মিষ্টিমুখে। দীর্ঘদিন কলকাতা শহরে থাকার সুবাদে এখন আমি মোটামুটি শহুরে,তবুও কোথায় যেন এখনও মাটির গন্ধমাখা মনটা মাঝেমধ্যেই উঁকি দেয় স্মৃতির ঝাঁপি নিয়ে। ছুটে যেতে ইচ্ছে করে একছুট্টে ছোটবেলার দিনগুলোতে। কিন্তু সময় বড় কঠিন,যা যায় তা যায়ই আর ফেরত আসে না কখনও। তবুও আমরা অনেক কিছু হারিয়ে ভালো থাকতে শিখে যাই,অনেক কষ্ট আর কান্নাকে লুকোতে শিখি হাসিমুখে। তাই নাইবা হল গ্ৰামের সেই দিনগুলো ফেরত পাওয়া,দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালে ক্ষতি কী?
কর্তার উদ্যোগেই আমরা দুজনে আজ বেরিয়েছিলাম ডাব্লুউবিটিসির বাসে গ্ৰাম বাংলার ঠাকুর দেখতে ধান্যকুড়িয়া আর আড়বালিয়াতে। সকাল আটটায় এসি বাস ছাড়ল ধর্মতলা ট্রামডিপো থেকে। বাসে ওঠার কিছুটা বাদে এলেন পরিবহনমন্ত্রী তিনি যাত্রীদের সাথে কুশল বিনিময় করার পর বাস ছাড়লো। বিজ্ঞাপন গয়নায় সুসজ্জিত তিলোত্তমার পথে তখন অনেকেই ফিরছেন গঙ্গা থেকে কলাবউ স্নান করিয়ে। আমরা বেশ সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম।শরতের ঝলমলে আকাশ আর মাঝেমাঝেই ঘোমটা টানা কলাবৌ কোলে ভক্তদের দেখতে দেখতে এগিয়ে গেছিলাম ধর্মতলার দিকে।
বাস ছাড়তে না ছাড়তেই হাতে পেলাম সুন্দর পোড়ামাটির দুর্গামূর্তি,চাবির রিং,আইডেন্টিটি কার্ড এবং আমাদের যাত্রাপথ আর দ্রষ্টব্য স্থানের বর্ণনা। সবটাই হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের উদ্যোগে। সকাল সকাল মাকে পেয়ে মন ভরল আনন্দ আর খুশিতে। কিছু মানুষজনের ওঠার কথা ছিল চিনারপার্ক থেকে। সবাই ওঠার পর বাস চলতে লাগল আপনছন্দে। তারমধ্যেই আমাদের হাতে চলে এসেছে সকালের ব্রেকফাস্ট আর জলের বোতল। চারটে রাধাবল্লভী,আলুর দম,আচার আর দুটো মিষ্টি ছিল বক্সে। যা সত্যি কথা বলতে বেশ অতিরিক্ত আমাদের কাছে। কিছুটা বাদে একজায়গায় গাড়ি থামিয়ে আমরা চা খেলাম। গাড়ি এগিয়ে চলল দেগঙ্গা,বেড়াচাঁপা ছাড়িয়ে আড়বালিয়ার দিকে। দুপাশে প্রচুর ভেড়ি আর ধানক্ষেত। ধানক্ষেতের শোভা চোখ জুড়োনো। পাকা ধানে নুয়ে পড়েছে গাছগুলো।
দেখতে দেখতে আমরা আড়বালিয়াতে পৌঁছে গেলাম। প্রথমে দেখতে গেলাম পুরাতন বসু বাটির পূজা এই বাড়ির সদস্য বর্তমানে বিশ্বনাথ বসু যিনি অভিনয় জগতের সাথে যুক্ত। সাবেকি সাজে মাকে দেখে মন ভরলো। তখন সপ্তমীর পুজো চলছে। এই দূর্গাপূজা প্রায় তিনশো বছরের পুরোনো। ডাকের সাজের এই প্রতিমা অনন্য সুন্দর।
এরপর দেখলাম আমরা ভট্টাচার্য্য পরিবারের পুজো যা ১০৩ বছরের পুরোনো।
আড়কবালিয়া গ্রামের অন্যতম প্রাচীন পূজা বসু বাড়ির মাঠের দুর্গা পূজা। এই পূজা সূচনা করেন রাঘবেন্দ্র বসু। এই পুজোতে মাকে বরণ করা হয় কন্যারূপে এবং বিদায়বেলায় কনকাঞ্জলি দেওয়া হয়।
আমরা একসাথে দুটো বাসের যাত্রী ছিলাম এই ট্রিপে। বেশিরভাগ যাত্রীই বয়স্ক বা মধ্যবয়স্ক,কয়েকজন কমবয়সী ছেলেও ছিল। কিন্তু সবাই সুন্দর আনন্দে উপভোগ করছিল ঠাকুর দর্শন।
আড়বালিয়া গ্ৰামে রাস্তার ওপর একটা পুজো হচ্ছিলো সেই মায়ের মূর্তিও নয়নাভিরাম।
আড়বালিয়া থেকে ধান্যকুড়িয়া আসতে বেশি সময় লাগে না। ধান্যকুড়িয়া ঢোকার মুখেই চোখে পড়ল বিশাল গম্বুজের মত গেটের ওপরে সিংহমূর্তি যাকে ছুরি দিয়ে প্রহার করছে দুই বিদেশী। তবে এই গেট বন্ধ এবং ভেতরের বাগানবাড়ি সদৃশ বাড়িও পরিত্যক্ত। এই গ্ৰাম ভীষণ বর্ধিষ্ণু এবং ইউরোপীয় সংস্কৃতির ছাপ এখানকার গৃহস্থাপত্যে। এখানকার উল্লেখযোগ্য যে পুজো তা হল গাইনবাড়ির পুজো,সাহুবাড়ি এবং বল্লভবাড়ির পুজো। এছাড়াও এখানে আজে নজরমিনার এবং রাসমঞ্চ। তবে সাহুবাড়ির পুজো এখন বাইরের মানুষের কাছে বন্ধ করেছেন ওরা।
ধান্যকুড়িয়া গ্ৰামের প্রথম পুজো আমরা দেখলাম মন্ডলবাড়ির পুজো। বাড়ির ভেতরেই মন্দিরে মায়ের অধিষ্ঠান। তখন পুজো হচ্ছিলো। এনাদের নির্মিত জগন্নাথ মন্দিরও আছে। তবে বাস কর্তৃপক্ষের মর্জিতে তা আর আমাদের দেখা হল না কারণ সেটা চারটেতে খুলবে শুনলাম।
এরপর আমরা এলাম গাইনবাড়ির পুজোতে। এই বাড়ি বেশ বড়। ধান্যকুড়িয়া রাজবাড়ি বলতে আমার এটাই মনে হল। বাইরেটা যেমন বিরাট আকারের গোলাপী রঙের বিদেশী কায়দায় বানানো ঠিক তেমনি ভেতরটাও সুন্দর। ধান্যকুড়িয়া গাইন বাড়ি বর্তমানে হেরিটেজ তকমা পেয়েছে। এই বাড়ির দুপাশে বড় টাওয়ার। এই পুজো প্রায় ১৮০ বছর ধরে হয়ে আসছে। গাইনবাড়ির পুজোতে বলি হয় না। বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। সন্ধিপুজোর প্রাক্কালে বন্দুক ফায়ার করা হয়। এই বাড়ি যত্নে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। হিন্দী সিনেমা সাহেব বিবি গোলাম,ফরাসি সিনেমা লা-লুই-বেঙ্গলি,বাংলা সিনেমা সত্যান্বেষী এবং বর্তমান ভূমিকন্যার শুটিং হয়ে গেল সেখানে।
আমাদের সর্বশেষ গন্তব্য ছিল বল্লভ ম্যানসন। এই বাড়িও বেশ বিদেশী কায়দায় তৈরী। সবুজে সাদায় রঙ করা এই বাড়ি বেশ যত্ন সহকারে সংরক্ষিত। বাড়ির ছাদের প্রতি কোণে একটা করে ইউরোপীয়ান স্ট্যাচু দেখা যায়। ঢোকার ঠিক মুখেও ইউরোপীয় রাজার মূর্তি এবং দুপাশে দুজন এশীয় ব্যক্তি দেখা যায়। ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্যের প্রতীক সম্ভবতঃ এই মূর্তি। এই বাড়িকে পুতুলবাড়িও বলা হয়। বাড়ির ভেতরের আদল অনেকটাই গায়েন বাড়ির মত। গায়েন বাড়িতে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে প্রতিমার সামনে যাওয়া নিষেধ ছিল,এখানে তা ছিল না। এখান থেকে বেরিয়ে রাসমঞ্চ দেখে আমরা চলে এলাম খাওয়ার জায়গায়। ততক্ষণে সবার ক্ষিদে পেয়েছে, তাই হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসে পড়লাম। খাবার মেনু বেশ ভালো ছিল..ভাত,ডাল,আলুভাজা,ফুলকপির তরকারি,পোলাও,বেগুনী,ধোকার ডালনা আর চিলি পনীর। অবশ্যই শেষে চাটনি,পাঁপড় এবং দুই রকমের মিষ্টি ছিল। আর ছিল হজমের জন্য জোয়ান আর লিমকা। খাওয়ার জায়গাতে বেশ কিছুটা সময় গল্প আর আড্ডা শেষে আমরা আবার বাসে উঠে বসলাম। বাইরে রোদের তাপ থাকলেও বাসে এসি থাকায় খুব একটা অসুবিধা হয়নি। বেশ অন্যরকম একটা বেড়ানোর অভিজ্ঞতা আর নতুন জায়গা দেখে মন ভালো করে ফিরলাম। বাসে যারা আমাদের সহায়ক হিসেবে ছিল তাদের ব্যবহার অত্যন্ত ভালো ছিল। সব শেষে মাটির সুন্দর ভাড়ে চা আর লজেন্স খেয়ে আমাদের গ্ৰাম বাংলার ঠাকুর দেখা শেষ হল।
এমন একটা সুন্দর ট্রিপ পুজোর দিনে করতে পেরে খুব ভালো লাগলো। এমন ট্রিপে আপনারাও যেতে পারেন,মোটামুটি জনপ্রতি খরচ পড়েছে সতেরশো টাকা করে। বুকিং অনলাইনেও করা যায় wbtc website এ গিয়ে অথবা ওদের অফিসে গিয়ে।
এই লেখাটি গত 2020 সালে "এখন আরণ্যক" পত্রিকা তে প্রকাশিত হয়েছিল। আসলে আফ্রিকার এই গ্রেট মাইগ্রেশন দেখাটা আমার বহুদিনের স্বপ্ন। কিন্তু মধ্যবিত্তের বেশীর ভাগ স্বপ্ন সাধারণত অগস্ত্য যাত্রাই করে থাকে। আমার মতো বেকার হোমমেকারের জীবনেও হয়তো সেটাই ঘটতো যদি না আমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের স্বপ্নের সাথে আমার স্বপ্নটা অলৌকিক ভাবে মিলে না যেত। যাইহোক যাবার আগে একটু পড়াশোনা করতে গিয়ে দেখলাম বাংলাতে কেউ তেমন ভাবে এটা নিয়ে লেখেনি। ভাবলাম ফিরে এসে একাজটা করবো। কিন্তু ফিরে এসে পড়লাম অতিমারির খপ্পরে। সঙ্গে একমাত্র পুত্রের বিয়ের ব্যবস্থাপনা। তারমধ্যেই শেষ করলাম আমার বহু সাধের লেখাটুকু। জানি না এই বিস্ময় কে কলমের মাধ্যমে কতটুকু তুলে ধরতে পারলাম। তবুও ইচ্ছে হল সে অভিজ্ঞতাটুকু এই গ্রূপে শেয়ার করি বন্ধুদের সাথে।সবাই পড়ো কিন্তু সময় করে।।😊
................................................
গ্রেট মাইগ্রেশন : এক জীবন্ত বিস্ময়
~ সঙ্ঘমিত্রা বসু
যত দূর চোখ যায় সামনে বিস্তীর্ণ ধু ধু মাঠ। বহু দূরে দূরে একটা দুটো নিঃসঙ্গ অ্যাকাশিয়া। মাঠের শেষে অর্ধবৃত্তাকার দিগন্তরেখা। ওরা আসছে দিগন্তের ওপার থেকে। হাজারে,হাজারে ,
লাখে, লাখে। যতদূর চোখ যায় কালো কালো চলমান বিন্দু।অবাক বিস্ময়ে সেদিকে তাকিয়ে আছি। ওরা কিন্তু কখনো থামছে না।ধীরে ধীরে আমাদের পেরিয়ে চলে গেল প্রথম সারিটা। তারপর দ্বিতীয় সারি।এরপর একে একে তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ………।কি অসম্ভব সুশৃঙ্খল এই মিছিল!চলেছে এক নির্দিষ্ট লক্ষ্যে। ওদের এই চলমান জীবনকাহিনী আজও প্রাণী জগতের এক বিস্ময়।এরা হল মূলত ওয়াইল্ডএবিস্ট বা ন্যু, কেপ বাফেলো , অ্যানটিলোপ আর জেব্রা র দল।সাধারণভাবে এই পশুরা ই অংশ নেয় মাইগ্রেশনের পরিক্রমায়।বাকিদের অংশগ্রহণ নিতান্তই নগণ্য।আজ কি তাহলে সত্যিই আমার চোখের সামনে ঘটতে চলেছে আফ্রিকার সপ্তম বিস্ময়ের অন্যতম টি! ঘোর লেগে যাচ্ছে যেন দু চোখে। হটাৎ সম্বিত ফিরল ক্যামেরার অবিশ্রান্ত শাটারের শব্দে।মস্তিষ্ক সঙ্কেত পাঠালো “ছবি তোলো”।চোখ আর হৃদয় বলল “দেখো, আরও দেখো। এতো তোমার স্বপ্ন ছিল”।এই হল তাহলে জীবজগতের সেই বহুল চর্চিত জীবন্ত বিস্ময়……..গ্রেট মাইগ্রেশন !ক্যামেরা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে।
প্রশ্ন হল গ্রেট মাইগ্রেশন আসলে কি? এর উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের আসতে হবে একটু বিস্তৃত আলোচনায়। মাইগ্রেশন শব্দ টা এসেছে লাতিন শব্দ “মাইগ্রারা” থেকে। যার অর্থ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া। তাঞ্জানিয়ার সেরেঙ্গেটি এবং কেনিয়ার মাসাইমারা হল আসলে একই অরণ্যের দুটি অংশ। তাঞ্জানিয়ার উত্তরাংশে এই সেরেঙ্গেটি বনাঞ্চল ।ত্রিশ হাজার বর্গ কিমি জুড়ে এর অবস্থান। প্রকৃতি এখানে অকৃপণ। ঘন জঙ্গল, বিস্তৃত জলাভুমি আর সাভানা ঘাসের প্রান্তর এই অরণ্যভুমিকে সমৃদ্ধ করেছে। মাসাইজাতির মাতৃভাষা “মা” অনুসারে সেরেঙ্গেটি শব্দের অর্থ হল “ENDLESS PLAINS”অর্থাৎ উন্মুক্ত অথবা সীমাহীন সমভুমি। সত্তর টি প্রজাতি র ছোট বড় স্তন্যপায়ী প্রানী এবং পাঁচশ প্রজাতি র পাখির আবাসভূমি এই সেরেঙ্গেটি অরণ্য। অন্যদিকে, এই অরণ্যের অপর অংশ হল কেনিয়ার অন্তর্গত মাসাইমারা ন্যাশনাল পার্ক। প্রাচীন জনজাতি মাসাই সম্প্রদায়ের নামে এর নামকরণ । আবার তাদের মাতৃভাষা “মা” অনুসারে “মারা”শব্দ টির অর্থ হল “SPOTTED” অর্থাৎ বহু বিন্দুর সমাহার। বিস্তীর্ণ প্রান্তর জুড়ে অসংখ্য প্রাণী এবং বিক্ষিপ্ত গাছপালা কে দূর থেকে দেখলে মনে হয় ঈশ্বর বুঝি অজস্র বিন্দু দিয়ে প্রান্তর টিকে সাজিয়ে দিয়েছেন নিজের খেয়ালে।প্রকৃতির সাথে ছন্দ মিলিয়ে এই নামকরণ স্থান মাহাত্ম্য কে যেন দ্বিগুণ করে তুলেছে । যাই হোক,আবার ফিরে আসি মাইগ্রেশন পর্বে।আসলে আক্ষরিক অর্থে এই মাইগ্রেশন হল একটি নির্দিষ্ট বৃত্তাকার পথে ক্রমাগত চক্রাকারে এক ধারাবাহিক পরিক্রমণ।এতে অংশ নেয় লক্ষ লক্ষ ওয়াইল্ডএবিস্ট, কেপ বাফেলো, জেব্রা, জিরাফ আর অ্যানটিলোপের দল । তবে এই পরিক্রমায় ওয়াইল্ডএবিস্ট বা ন্যু দের সংখ্যাধিক্যের কারণে অনেকে গ্রেট মাইগ্রেশন কে “ওয়াইল্ডএবিস্ট মাইগ্রেশন” ও বলে থাকেন।তাঞ্জানিয়া র অন্তর্গত দক্ষিণ সেরেঙ্গেটির গোরোঙগোরো অঞ্চল থেকে শুরু হয়ে এই মাইগ্রেশন চলতে থাকে উত্তরে কেনিয়া তে অবস্থিত মাসাইমারা রিসার্ভের দিকে।চলতে চলতে আবার একসময় মাসাইমারার অরণ্য পেরিয়ে এরা আবার ফিরে আসে সেরেঙ্গেটির গোরোঙগোরো অঞ্চলে ।বছরের পর বছর ধরে চলেছে এই বিস্ময়কর পরিক্রমা।
এই মাইগ্রেশনের অন্যতম কারণ হল জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার দুটি অপরিহার্য শর্ত……খাদ্য এবং পানীয় জল।শুধুমাত্র এই দুটি কারণে যুগ যুগ ধরে চলেছে এই নিরবিছিন্ন পরিক্রমা।মাইগ্রেশনের প্রথমার্ধের সময়কাল জানুয়ারী থেকে মার্চ এই তিন মাস। বর্ষা র জলের ছোঁয়ায় সবুজ ঘাসে এই সময় ছেয়ে যায় সেরেঙ্গেটির তৃণভূমি।পশুর দল ওই সময়টাকেই বেছে নেয় তাদের প্রজনন কাল হিসেবে।মাত্র দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ লক্ষ শাবকের জন্ম দেয় ন্যু মায়েরা ।বাকিদের ক্ষেত্রেও প্রায় একই নিয়ম প্রযোজ্য। এরপর এই অঞ্চলে বর্ষা বিদায় নেওয়ার সাথে সাথে নতুন শাবকদের নিয়ে সবাই মিলে রওনা দেয় উত্তর পশ্চিমে গ্রুমেতি নদী উপত্যকার দিকে। জুন মাস পর্যন্ত তারা ওখানেই অবস্থান করে। এই চলার পথে তাদের অতিক্রম করতে হয় গ্রুমেতি আর মারা নদী। এই নদীগুলো সাধারণত হিংস্র কুমীর আর জলহস্তী অধ্যুষিত ।মারা নদী ছাড়াও মাসাইমারার অন্য যে নদী টিতে মাইগ্রেশন দেখা যায় সেটি হল তালেক। এইসব নদী তে কুমীরেরা ওঁত পেতে থাকে শিকার ধরার জন্য।তাদের হাতে প্রাণ যায় অসংখ্য পশুর। যাইহোক, জুলাই- আগস্টের শেষদিকে এই পশুর দল পৌঁছে যায় কেনিয়ার অন্তর্গত মাসাইমারা অরন্যাঞ্চলে। শুষ্ক মরশুম টা তারা এখানেই কাটিয়ে দেয়। কারণ এই সময় বর্ষার জলে মাসাইমারা সবুজ হয়ে উঠেছে । এরপর নভেম্বর নাগাদ আবার হাল্কা বৃষ্টি শুরু হলে তারা এগিয়ে চলে দক্ষিণ পূর্ব দিক ধরে।চলতে চলতে ডিসেম্বর নাগাদ ফিরে আসে সেই গোরোঙগোরো অঞ্চলে যেখান থেকে শুরু হয়েছিল তাদের যাত্রা।আবার শুরু হয় নতুন করে ঘর বাঁধার পালা। অনাগত সন্তানদের পৃথিবীর আলো দেখানোর প্রস্তুতি চলে জোর কদমে। আসে ফেব্রুয়ারী মাস। আবার কচিকাঁচায় ভরে ওঠে সেরেঙ্গেটি তৃণভূমি ।তবে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর হাতছানিও এই আদিম অরণ্যের এক অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট। প্রায় আড়াইলক্ষ ন্যু এই মাইগ্রেশন চলাকালীন নানাকারণে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে বাধ্য হয়। আসলে তাঞ্জানিয়া থেকে কেনিয়া পৌঁছোতে এদের অতিক্রম করতে হয় প্রায় আটশ কিমি পথ। এই দীর্ঘ চলার পথে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্লান্তি আর শিকারী পশুর অতর্কিত আক্রমণ বহু সময় মাঝপথেই এদের চলা থামিয়ে দেয় চিরদিনের মতো।
মাইগ্রেশনের পথে একটা গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হল “মারা ত্রিকোণ” (Mara Triangle)।মাসাইমারা রিসার্ভ এর তিন ভাগের এক ভাগ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এই অঞ্চল টি। মাসাইমারার ঠিক পশ্চিমাংশে এর অবস্থান । প্রায় ৫১০ বর্গ কিমি এর বিস্তৃতি ।মারা নদী এক অদ্ভুত সুন্দর প্রাকৃতিক সীমানা সৃষ্টি করে একে ঘিরে রেখেছে। সাভানা ঘাসের ঘন তৃণভূমি, ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন জলাভূমি আর আগ্নেয় গিরি র প্রক্ষিপ্ত অংশ নিয়ে গড়ে উঠেছে এই অঞ্চল ।মারা ন্যাশনাল পার্কের মূল প্রবেশদ্বার থেকে বহুদূর এর অবস্থান।এই অবস্থানগত বিচ্ছিন্নতার কারণে এই অঞ্চলে পশুদের আনাগোনাও অনেক বেশি। মাইগ্রেশনের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের স্থানগত অনন্যতা লক্ষ্যণীয় ।কারণ সেরেঙ্গেটি থেকে মারাতে আসা এবং মারা থেকে সেরেঙ্গেটিতে ফেরা…….এই দুই যাত্রাপথেই এই অঞ্চলটিকে অতিক্রম করতে হয়।তাই “মারা ত্রিকোণ”গ্রেট মাইগ্রেশনের ক্ষেত্রে এক দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
সেদিনটি ছিল আমাদের মাসাইমারা ভ্রমণ সূচীতে সোনালি ফ্রেমে বাঁধানো একটি বিশেষ দিন। মারা নদীর তীরে সেদিন টান টান উত্তেজনা। রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে খান কুড়ি সাফারি জীপ।কারণ সকাল থেকে এখানে জমায়েত হয়েছে কয়েক হাজার ন্যু। গাইডদের অভিজ্ঞ চোখ নাকি বুঝতে পারছে আজ এই দল টি নদী পেরোবেই। মারা নদী অতিক্রমের এই দৃশ্যটিই কিন্তু গ্রেট মাইগ্রেশনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং দুর্লভ অংশ। তবে এই দৃশ্য চাক্ষুষ করার জন্য আমাদের প্রথম দিনের চেষ্টা কিন্তু সফল হয় নি। সেদিন ভাগ্যদেবী হয়ত বিরূপই ছিলেন । সেদিনকার ন্যু এর দলটি নদীতীর পর্যন্ত এসেও মুখ ঘুরিয়ে ফিরে গিয়েছিল অজ্ঞাত কোন এক কারণে। । আজ তাই দ্বিতীয় দিন নতুন উদ্যমে আবার রওনা দিয়েছি সদলবলে। সূর্য সবে উঠেছে মাসাইমারার আকাশে । চোখের সামনে উন্মুক্ত সেই অর্ধবৃত্তাকার দিগন্তরেখা। দিগন্তের ওপার থেকে উঠে আসছে ন্যু এর দল।সারি বেঁধে তারা সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে কি এক অজ্ঞাত তাড়নায়। চলেছে মাথা সামান্য ঝুঁকিয়ে মাটির দিকে নজর রেখে। লক্ষ্য মারা নদী।মাঝে মাঝে তারা ছুটছে। খানিক দূরত্ব রেখে তাদের অনুসরণ করছে সাফারি জীপের দল। নদীর ধারে পৌঁছে গিয়েও ন্যু এর দল টি দ্বিধা দ্বন্দে কাটিয়ে দিল প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় । দর্শককুল যখন হতাশ হয়ে আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে ঠিক তখনই এলো সেই আশ্চর্য মুহূর্ত । হটাৎ করেই যেন উঠলো একটা শোরগোল ।তারপরই একটানা আওয়াজ……ঝপ ঝপ ঝপ। ন্যু দলপতি নেমে পড়েছে নদীতে।তীব্র গতিতে তাকে অনুসরণ করছে বাকি দল টি। সেই গতির অভিঘাতে ছিটকে উঠছে নদীর জল।তাদের পায়ের ক্ষুরের দাপটে উঠলো লাল ধুলোর ঝড় ।মারা নদীর বুক জুড়ে তথন তুমুল আলোড়ন।সে এক অপার্থিব দৃশ্য । হটাৎ ই চোখে পড়ল জলের নীচ থেকে মাথা তুলছে তিনটে বিশালাকৃতি নাইল ক্রোকোডাইল। আর ঠিক নদীর ওপারে পাথরের খাঁজে ওঁৎ পেতে বসে আছে এক ক্ষুধার্ত সিংহ। দূর থেকে নজর রাখছে গোটা কয়েক জলহস্তীও । সব কিছুকে তুচ্ছ করে প্রাণপণে নদী পেরিয়ে চলেছে ন্যু এর দল টি।সেই গতি র সামনে দাঁড়াতেই পারল না অপেক্ষারত সিংহ। কিন্তু তবুও শেষ রক্ষা হলনা। দলের শেষ সদস্য টি কে আক্রমণ করে বসল কুমীরেরা।প্রানপণ লড়াই করেও সে পারলো না নিজেকে মুক্ত করতে। মারা নদীর ঘোলা জল লাল হয়ে উঠল ন্যু এর রক্তে। প্রতিষ্ঠিত হল “ SURVIVAL OF THE FITTEST”এর বিখ্যাত থিয়োরি।
এই গ্রেট মাইগ্রেশন পর্বের গুরুত্ব আজ আর আফ্রিকার বন্যপ্রাণের মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ নয়। সে দেশের অর্থনীতিতে এই মাইগ্রেশনের আবেদন অপরিসীম। সারা পৃথিবীর কাছে আফ্রিকার আরণ্যক জীবনের আকর্ষণ তো ছিল বরাবরই ; সেই মুকুটে পালক হিসেবে যুক্ত হয়েছে এই মাইগ্রেশন পর্ব। বন্যপ্রাণ নিয়ে আগ্রহী চিত্রগ্রাহক দের এইসব দৃশ্যতো এক অভাবনীয় স্বপ্নস্বরূপ ।তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন প্রকৃতিপ্রেমিক দর্শককুল।তাই গ্রেট মাইগ্রেশন পর্ব একদিকে যেমন বন্য প্রাণীদের কাছে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই , অন্যদিকে একেই মূলধন করে আফ্রিকার এইসব অঞ্চলের ভ্রমণ সংস্থাগুলো সংগ্রহ করে তাদের সারা বছর বেঁচে থাকার রসদ।সুতরাং আজ আফ্রিকার ভ্রমণ বাণিজ্য অনেকাংশে নির্ভর করে থাকে এই মাইগ্রেশনের ওপর । সত্যিই এ এক অনন্য বিস্ময়। চিরজীবন স্মরণে রাখার মত এক দুর্লভ স্মৃতিও বটে ।।
রেগেমেগে আগুন ভোলা,
একি বিষম জ্বালা!
বলা কওয়া নেই গিন্নী হাওয়া
গুছিয়ে নিয়ে ঝোলা।
'আরে আরে ও গিন্নী..
কোথায় গেলে চলে?'
রইলো পড়ে অস্ত্রসস্ত্র..
সবই তো গেলে ফেলে।
মা দুগ্গা বলেন ফোনে..
কি করি কও স্বামী?
আমার চেয়েও মর্ত্যে এখন..
পাবলিকের ডিমান্ড দামি।
মহালয়ার আগে থেকে..
ভক্তগণ ঘনঘন কলিং।
কি করো মা কৈলাসে তুমি?
জলদি জলদি কামিং।
পাবলিকেরা কোমর বেঁধে,
ঝাঁপিয়ে পড়ল বলে...
দরকার নাই অস্তর সস্তর্
জলদি এসো চলে।
শোনো ডার্লিং নন্দীরে সব
কইয়্যা দিয়েছি আমি।
অস্ত্রসস্ত্র শান কইর্যা,
লইয়্যা আইস্যো তুমি।
রাগে গজরান ভোলেবাবা,
উৎসবের বাড়াবাড়ির ঠ্যালায়.
নিয়মকানুন সবই কী..
যাবে নাকি চুলায়?
হতচ্ছাড়া পাবলিকগুলো
খইয়ে জুতোর শুকতলা,
হন্যে হয়ে ছুটছে মরে
শ্রীভূমি টু নাকতলা।
গুঁতিয়ে ভীড়ে সেল্ফি তুলছে
ফেসবুকে দিচ্ছে রীল..
কান্ড দেখে হেসেই মরছি
ধরছে আমার পেটে খিল।
আর কত টেনেটুনে লম্বা করবি..
দুর্গাপুজার নামে ছেলেমানুষী খেলা?
দাম্পত্য অশান্তি যদি আমার লাগে..
তবে বোঝাবো তোদের ঠ্যালা।
আমি সুন্দরী নই,
সাদামাটা সাধারণ এতটাই যে,
কারোও গল্পে নায়িকা হওয়া যায় না।
আমি সুচিস্মিতা নই,
বরং হাসলে আমাকে খারাপই লাগে।
আমি সুবক্তা নই,
মেপে কথা, পরিমিত আলাপ আমার দ্বারা হয় না।
উল্টে প্রাণ খুলে কথা বলতেই ভালোবাসি,
সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলতেই শান্তি লাগে মনে।
বিদ্যেবতী বা বুদ্ধিমতী কোনোটাই আমার বিশেষণ নয়,
অতি সাধারণ নগণ্য একটা মেয়ে, এতটাই যে,
কারও কবিতায় কল্পিত নারী হওয়া যায় না।
আমি ভীষণ একগুঁয়ে, জেদি, নাছোড়বান্দা ধরণের।
বারণ শুনি কিন্তু অকারণে বারণ মানি না।
অন্যায়ের সাথে আপোষ করতে পারি না কোনোদিন।
কথায় কথায় চোখে জল আসে ঠিকই কিন্তু সেটা অস্ত্র নয় বরং আড়াল করি।
আমি ভীষণ রকম ভঙ্গুর কিন্তু টের পেতে দিই না,
পাছে আঘাতকারীর অনুকম্পা হয়।
আমি আদতে অচল আজকের দুনিয়ায়,
সবাই যখন ভীষণ ভাবে আধুনিক আমি তখন
পুরোনো দিনে বাঁচি।
প্রাগৈতিহাসিক বলে ঠাট্টা করে অনেকে আড়ালে জানি,
তবু বদলাতে ইচ্ছে করে না।
আধুনিকতার বিরোধী নই তবে বিশ্বাস করি,
আধুনিকতা পোশাকে নয় মনে হয়।
আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী কিন্তু কুসংস্কারে নয়।
আমি মনে করি কাউকে দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার হলো সময় যা ক্রয় করা যায় না।
আমি প্রার্থনায় বিশ্বাসী কিন্তু ভণ্ডামিতে নয়।
লোক দেখানো লৌকিকতা আমার আসে না,
যেটুকু মন থেকে আসে সেটুকুই করি।
আমি বদমেজাজি, কঠোর এটা জেনেও পাল্টাতে পারি না নিজেকে।
নিজের অসহয়তা যতটা না পীড়া দেয় তার চেয়েও বেশি পীড়িত হই, প্রিয়জনের অসহায় অবস্থায়।
আমি এরকমই, হয়তো তাই আজ পর্যন্ত কারও প্ৰিয় হয়ে উঠতে পারি নি।
এতো মনের মতো লেখাটি কার লেখা, কারুর জানা থাকলে অবশ্যই জানাবেন।
📷 No one but Anwit Bhattacharya
Comments
Post a Comment