বারান্দায় চুপটি করে আলসেমিতে বসে বৃষ্টি দেখছি,আজ কাঠবেড়ালী গুলোর কোন পাত্তা নেই। হয়ত বৃষ্টিতে চুপটি করে কোথাও বসে আছে,না হলে নিজেদের কোটরে ঢুকে কুটুর কুটুর করছে। বারান্দায় রাখা সাইকেলটা নিয়ে একটু আগেই অনিকেত বেরোলো পোস্টঅফিসে,বলল তো একটু পরেই ফিরবে। আমি হাসলাম বললাম মুক্ত বিহঙ্গ এখন তুমি,কখন ফিরবে কে জানে? যাক দুপুরের খাবার আগে এসো,আমার আবার খিদে পেলে রাগ হয়ে যায়। রামধুনিয়া একটু আগে কাজ করে তাড়াতাড়ি বেরোলো,আকাশে মেঘ দেখেই ছুট লাগালো। এতক্ষণে হয়ত অনি পৌঁছে গেছে পোস্টঅফিসে। আমার এখন অনেকটা অবসর,তারমধ্যে বৃষ্টি পড়ছে মনটা আরও খুশি। আঃ কতদিন বাদে এমন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এলো,গাছপালাগুলো খুশিতে পাতা নাড়ছে আপনমনে। মাটি থেকে কী সুন্দর ভেসে আসছে সোঁদা গন্ধ। হাতে বইটা নিলেও মন দিতে পারি না,উদাস হয়ে যায় মন। কত এলোমেলো ভাবনা এসে ভীড় করে মনে। অনি রিটায়ার করে গেলেও এই জায়গাটা ছাড়তে পারিনি। ছত্তিশগড় আর উড়িষ্যার মাঝে অবস্থিত এই জায়গাটাতে কী অদ্ভুত অপার শান্তি যে পাই তা বলে বোঝাতে পারব না। আসলে কত স্মৃতি জড়ানো এই বাড়িটা। সেই কবে চাকরিসূত্রে অনির হাত ধরে লাল তাঁতের শাড়ি গায়ে জড়িয়ে এখানে আসা,স্বপ্ন বোনা একটু একটু করে নতুন সংসারকে ঘিরে। তারপর ধীরে ধীরে মেয়েবেলা কাটিয়ে বৌ হয়ে সংসারের হাতা খুন্তি নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে পাকা গিন্নী হয়ে ওঠা। ছেলে মেয়ে হল তারা বড় হল,এখন তো মেয়ে সংসার করছে,আর ছেলেও তাই। দুজনেই থাকে নিজেদের কর্মস্থলে,ফোনে কথা হয়। সময় পেলে আসেও কদিন থেকে যায়। তবে আমিই বেশি যাই মাঝেমাঝে দুজনের কাছেই। সবাই বলে আমার ছেলে মেয়েরা ভালো। আর ভাগ্য করে নাকি জামাই আর ছেলের বৌ পেয়েছি। ভালো লাগে শুনতে,আমি শুধু ভাবি শেষবেলাটা যেন ভালো হয়। আসলে যৌবনের রক্তের জোর থাকলে অনেক ঝড় ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া যায় কিন্তু বার্ধক্যে তা পারা যায় না। তাই ওরা যদি আমাদের পাশে থাকে শেষবেলায় তবেই হয়ত ভালো,আমার অবস্থা যেন বিন্দীর মত না হয়... কে জানে কেমন আছে?
অবশ্য অনিকেত বলে ওর পেনশন আছে তাই আমি চাকরি না করলেও বা কী? যা গচ্ছিত আছে ভালো করেই চলে যাবে। আমি রাগ করেছি কী সব অলুক্ষুণে কথা বলো,আচ্ছা আমিও তো আগে যেতে পারি তাই না?
-' আরে না না তা তো হতেই পারে। তুমি বিন্দীর কথা বলো তো তাই বলছি।'
এলোমেলো চিন্তায় বিন্দী নামটা আবার হারিয়ে যায়। হঠাৎই সাইকেলের ঘন্টিতে ঘোর কাটে। ওমা অনিকেতও তো ফিরে এলো। যাক ভেজেনি তাহলে..
আমি উঠে দাঁড়াই,টেবিলে বইটা নামিয়ে রাখি।
ও বলে,' উঃ কী বৃষ্টি,কাজটাও হল না। ঐ একটু দাসদার সাথে গল্প করে এলাম। ও হ্যাঁ তোমার একটা চিঠি এসেছে।'
আমি অবাক হয়ে বলি আমার চিঠি.. তুমি?
-' মানে তোমার চিঠি কে আনবে শুনি? আরে পিয়ন নিয়ে আসছিলো,তা আমাকে দেখে ধরিয়ে দিল।'
আমি ওর দিকে তোয়ালেটা বাড়াতে বাড়াতে চিঠিটা হাতে নিই ঠিকানাটা তো হিমাচল প্রদেশের তাহলে কী বিন্দী?
চিঠিটা দেরাজের ওপর রেখেই দুজনে খাওয়াদাওয়া করি। কারণ অনিকেত দেরি হলেই তাড়া দেবে। বলবে,'কিগো? আমি কিন্তু সময়ে চলে এসেছি। তুমি দেরি করছ। এরপর বলবে না যেন আমার জন্য তোমার খেতে বসতে দেরি হল।'
এ চিঠি বিন্দীর চিঠি,অনেকদিন পরে ওর কোন চিঠি পেলাম। সেই কবে একটা ফোন পেয়েছিলাম তারপর আর কোন খবর নেই। সুতরাং এই চিঠি নিশ্চিন্তে নিরালায় বসে পড়তে হবে।
অনিকেত চিরকালই স্বল্পভোজী তাই পাতলা মাছের ঝোল,পোস্ত আর তেঁতো দিয়ে পরম তৃপ্তি সহকারে খেয়ে দুপুরের বিশ্রামটুকু উপভোগ করতে শোয়ার ঘরে চলে গেল। এইসময় হয়ত একটু টিভি দেখবে,খবরের কাগজ পড়বে তারপর ঢুলবে মধ্যাহ্নভোজের আয়েশে। আমি এইসময় কিছুক্ষণ নিজের মত কাটাই,বাগানে একটু ঘুরে বেড়াই পাখিদের কিচিরমিচির শুনি। তারপর কিছুটা সময় ছায়ায় দাঁড়িয়ে রোদ্দুরে দেওয়া জামাকাপড় তুলে আনি। আজ আর চঞ্চল মনের কিছু করতে ইচ্ছে করে না। খামটা খুলে বসি বসার ঘরের সোফায় বসে তারপর ডুবে যাই তাতে...
আদরের সই,
'অনেকদিন বাদে তোকে চিঠি লিখছি। আজকাল তো আর তেমন চিঠি লেখার অভ্যেসই ছিল না। কাকে লিখব চিঠি? তবে এখানকার গ্ৰাম থেকে ফোন করতে গেলে অনেকটা যেতে হয় আমি ততটা যেতে পারি না। তাই ওকে দিয়েই খাম আনালাম। সে আনতেও অনেকটা যেতে হয় তবে ও আনিয়ে দিয়েছে একজনকে দিয়ে। আমি ভালো আছি তুই হয়ত ভাববি আমি ভুলে গেছি তা নয় রে। আসলে এখানে অনেক কিছু দেখতে হয় তো তাই সময় করে উঠতে পারি না। এ এক অন্য জীবন,সহজ সরল মানুষজন এখানে। প্রকৃতিও অকৃপণ হাতে ঢেলে দিয়েছে সবটা যেন। এ আমার বার্ধক্যের বারাণসী। আসলে কোনদিনই ভাবিনি এমন একটা জীবন হবে আমার। আসলে জীবনের গল্পের প্রতি পাতা যে কখন বদলে যাবে তা হয়ত বোঝাই যায় না তাই না?....'
আমি হারিয়ে যাই হঠাৎ চিঠির অক্ষরে চোখ রাখতে রাখতে। মুকুন্দপুরে ছিল আমাদের ছোটবেলার গ্ৰাম,বিন্দী আমার ছোটবেলার বন্ধু ওর ভালো নাম বিন্দুলেখা। একই ক্লাশে পড়তাম আমরা। পড়াশোনাতে মোটামুটি ছিল ও,তবে খুব ভালো কিছু নয় কিন্তু হাতের লেখা ছিল চমৎকার। তবে দেখতে শুনতে ভালো ছিল,আর তাই বোধহয় চার কন্যার সন্তান ওর বাবা ক্লাশ টেনের পরীক্ষা দেবার পরই ওকে পাত্রস্থ করে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। পরীক্ষার পর রেজাল্ট বেরোলো যথারীতি বোর্ডের পরীক্ষা টপকে গেলেও আর এগোনো হয়নি বিন্দীর। আমার কাছে খুব কান্নাকাটি করেছিল বিয়ের আগে। বলেছিল,' মেয়েদের জন্মই বোধহয় হয় ঘরবদলের জন্য বুঝলি। এতদিন বাবার ঘরে ছিলাম বাবার শাসনে। সে শাসন এত কড়া যে বলতে পারলাম না এখন বিয়ে করব না। বলেছিলাম বুঝলি,দোষ পড়েছিল আবার মায়ের ঘাড়ে। মা চার চারটে মেয়ের জন্ম দিয়েছে সুতরাং বোঝা নামাতেই তো হবে। খারাপ লেগেছিল খুব তাই আর কিছু বলিনি।'
আমরা বন্ধুরা গিয়েছিলাম ওর বিয়েতে,নিজেরাই অবাক হয়েছিলাম ওর বরকে দেখে ইশ্ মোমের পুতুলের মত নরম বিন্দীর কেমন যেন একটা কালো রাগী রাগী বর। আমাদের সাথে একটু ভালো করে কথাও বলল না। তারপর কেটে গেছিল অনেকগুলো দিন। বিন্দী বিবাহিতা,আমরা তখনও পড়াশুনা করছি তাই বাড়ি থেকে ওর সাথে বেশি গল্প করাও মা আর বাবা পছন্দ করতেন না। একটা সময় বিন্দীর বাপের বাড়ি আসা কমেছিল,শুনেছিলাম ওর বাচ্চা হবে। মা হয়েছিল কম বয়েসে বিন্দী,তবে বাঁচেনি সে বাচ্চা। পরে শুনেছিলাম বরের মতই কালো মেয়ে হওয়াতে ওর প্রতি আরও নির্যাতন বেড়েছিল সবার। অবশ্য সেই মেয়ে বেশিদিন ভোগায়নি ওকে অবহেলা সয়েই চলে গেছিল কয়েক মাস বাদেই। কোল খালি হয়ে যাওয়ায় মানসিকভাবে বিধ্বস্ত বিন্দীর কিছু দিন ঠাঁই হয়েছিল পিত্রালয়ে। তখন আমি কলেজে পড়ছি,কত কথা হয়েছিল ওর সাথে। কান্নায় ভেঙে পড়েছিল,' আচ্ছা বল তো আমি কী এমন খারাপ যে আমার সাথে ও এমন ব্যবহার করে? অথচ মন পাওয়ার জন্য কত কী করি। যা বলে তাই করি,অবশ্য না করেও উপায় নেই। কী করব আমি? মেয়েটা চলে গেল,কী মিষ্টি হয়েছিল জানিস,আমার মুখের দিকে টুলটুল করে তাকিয়ে থাকত।'
আমি তখনও মাতৃত্বের স্বাদ পাইনি,তাই হয়ত সবটা বুঝতে পারিনি। তবুও মনটা ভারী হয়ে গেছিল বিন্দীর কান্নায়। বলেছিলাম,' একটু শক্ত হতে শেখ। আসলে লোকটার কোন কমপ্লেক্স আছে। দেখতে তো ঐ,সত্যি মেসো যে কেন... তাও যদি মনটা ভালো হত। তুই দেখতে সুন্দর বলে ও তোকে দাবিয়ে রাখে।'
কথাগুলো হয়ত হজম হয়নি বিন্দীর আসলে সেই প্রাচীন ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী বিন্দী আর শোনেনি পতিনিন্দা। চলে গেছিল,বাবা বকবে বলে।
তারপর আমার আর দেখা হয়নি বিন্দীর সঙ্গে। বাবা মাও মুকুন্দপুরে আর থাকতেন না। দাদাই নিয়ে এসেছিল কলকাতাতে। তবে শুনেছিলাম বিন্দীর ছেলে হয়েছে সে ভালো আছে। আমিও বুঝেছিলাম ছেলে হওয়াতে বুঝি কিছুটা পায়ের তলার মাটি শক্ত হয়েছিল বিন্দীর।
হারিয়ে গেছিলাম আমরা,ফিকে হয়ে গেছিল ছোটবেলার বন্ধুত্ব। আমি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম পড়াশোনাতে,তারপর প্রেমের জোয়ারে কিছুদিন ভেসে একদম বসেছিলাম বিয়ের পিঁড়িতে। চাকরি অবশ্য আমারও করা হয়নি,বরের চাকরিসূত্রে চলে এসেছিলাম এখানে তারপর ছেলে মেয়েদের মা হয়ে সংসার সামলাতে সামলাতে ভুলে গেছিলাম একটা সময় নিজে কী চাইতাম। তবে সংসার আমাকে একদম ভরিয়ে রেখেছিলো। পেয়েছিলাম পছন্দের সাথী,ভালো ছেলে মেয়ে তারা আমাকে ঘিরে রেখেছিলো জড়িয়ে রেখেছিলো। এই সুখের ঝাঁপিটুকু যত্নে আগলে রাখতে রাখতে কখন যে মাঝবয়েসে এসে পা রেখেছিলাম বুঝতেই পারিনি।
বাবার শরীর ভালো নয় শুনে কলকাতা এসেছিলাম হঠাৎই নার্সিংহোমে দেখা হয়ে গেছিলো বিন্দীর সাথে। অদ্ভুত শূন্যতা চোখে মুখে ছড়ানো,অন্যমনস্ক হয়ে একটা চেয়ারে বসে ছিল। আমার কিশোরীবেলাটা ছটফটিয়ে উঠেছিল,মুহূর্তে ভুলেছিলাম বয়েস।
-' বিন্দী না?..কতদিন বাদে তোকে দেখলাম! এভাবে এখানে দেখা হয়ে যাবে ভাবিনি রে। কেমন আছিস? তোকে কত খুঁজেছি,কোন হদিস পাইনি। ফোনও ব্যবহার করিস না নাকি?'
একসাথে এতগুলো প্রশ্ন করে নিজেই লজ্জা পাই,ইশ্ ওকে তো কিছু বলতেই দিলাম না। তারপর পাশে বসে হাতে হাত রেখে শুনেছিলাম ওর কথা।
কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিল,' না রে কারও সাথেই যোগাযোগ নেই। আমরা ঐ বাড়ি ছেড়ে এখন অন্য বাড়িতে চলে এসেছি। আর ও পছন্দ করত না কারও সাথে যোগাযোগ রাখি। তাই ঐ সংসার নিয়েই এতদিন কেটে গেছে।'
-' ওহ্ আচ্ছা,তা দাদা কী অসুস্থ নাকি?'
পরে শুনে মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেছিল,বিন্দীকে যে মানুষটা সারা জীবন শান্তিতে থাকতে দেয়নি অপমান করে গেছে তারজন্য ও দিনের পর দিন নার্সিংহোমে আসে বসে থাকে।
আমি বলেছিলাম,' তোর দিকে যে কোনদিন সহানুভূতির হাত বাড়ায়নি তার জন্য কেন এত করিস?'
-' সবাই কী ইটের বদলে পাটকেল মারতে পারে? আমি যে পারি না রে।'
বুঝেছিলাম মুখে যতই আমরা নারী স্বাধীনতার কথা বলি প্রকৃতিই বোধহয় আমাদের মায়াময়ী সেবিকা করে পাঠিয়েছেন। আর সেই মায়ার ডোর কাটতে বড় ভয়,বেদনা আর অনুশোচনা আমাদের।
-' আর তোর ছেলে?'
-' হ্যাঁ আছে,তবে তেমন কোন খোঁজ রাখে না। ঐ মাঝেমধ্যে আসে। পাড়াতেই বিয়ে করেছিল ভালোবেসে। আমি মেনে নিয়েছিলাম তবে ওরা মানিয়ে নিতে পারেনি। তবে ভালোই হয়েছে অপমান করার একজন কমেছে। হয়ত বা দুজন...আসলে বাড়ি থেকে তো অনেক কিছুই শিখেছে।'
চোখটা ছলছল করে উঠেছিল বিন্দীর আমি না বলতে পারা অনেক কথা বুঝেছিলাম অল্প কথাতেই। বুঝেছিলাম মায়ের যে এ বাড়িতে কোন সম্মান নেই তা ছেলেও শিখেছে,হয়ত বা বৌমাও।
ফোননম্বর চেয়েছিলাম,বলেছিল ল্যান্ডফোন নম্বর তবে একটু হাল্কা হাসি হেসে বলেছিল,' ওটা বেশিরভাগ মৃত থাকে। আসলে টাকা পয়সা ঠিকমত দেওয়া হয় না তো। তোর ঠিকানাটা বরং দে আমি চিঠি দেব। ওটা কম খরচে হয়ে যায়।'
আমি অবাক হয়েছিলাম শুনে,তারপর এক অদ্ভুত ভালোলাগায় মন ভরেছিল। বিন্দীর হাতের লেখা খুব সুন্দর ছিল। কতদিন বাদে হয়ত চেনা লেখায় ডুব দেব আবার। সত্যিই তো চিঠি কেই বা লেখে তেমন।
আমিও ওর ঠিকানা নিয়েছিলাম। তারপর ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করে হারিয়ে গেছিলাম লোকের ভীড়ে। এর মাঝে বাবা চলে গেছিলেন কলকাতা এসেছিলাম আবার তবে বিন্দীর খোঁজ নেওয়া হয়নি। ঠিকানা রয়ে গেছিলো ডাইরির পাতায়।
বছরখানেক বাদে একটা চিঠি এসেছিল ঠিক এমনিভাবে।
' আদরের সই,
তোকে কথা দিয়েছিলাম চিঠি দেব,তাই বসেছি আজ খাম নিয়ে। ওটা বেশ কম খরচে হয়। ফোনটা চির ঘুমের দেশে চলে গেছে। ভালোই হয়েছে,কে আর ফোন করত। তবে ভাবিস না আমি খারাপ আছি। আমি বেশ ভালো আছি রে। ও চলে গেছিল তোর সাথে দেখা হওয়ার কিছুদিন বাদে। কিছুটা মুক্তির বাতাস জীবনে। হয়ত ভাবছিস ছিঃ কী অনাসৃষ্টি কথা,যার স্বামী মরল আর সে কিনা মুক্তির বাতাস নিচ্ছে। কোথায় শোক করবে,কাঁদবে। হ্যাঁ কেঁদেছি রে তবে পরে নিজেই চোখ মুছে ভাবলাম যে স্বামীর কাছে আসামী সেজে থাকতাম প্রতিনিয়ত তারজন্য আর কত শোক করব? এ কথা অবশ্য আমার নয়,আমার গুলগুলি আমাকে বলেছে। গুলগুলি আমার বোনঝি রে। ছোট বোনের মেয়ে,একফালি খোলা জানলা আমার। সত্যিই বোধহয় একটা মেয়ে থাকা দরকার।
আমি ভালো আছি রে। তবে ঐ যে ফুঁ দিয়ে যে মেঘগুলো সরাতে চাই সেগুলো আবার ঘিরে ধরে মাঝেমাঝে। শরীর মন বিগড়োয় অশান্তিতে। বাড়িটা ছেলে রাখতে চাইছে না,ওর শালা মাথায় ঢুকিয়েছে প্রমোটারকে দেবার জন্য। বারবারই বলছে ওর নামে সব করে দিতে, এতদিনে ঐ একফালি বাড়িটার মালিক হয়েছি আমি তাও কেড়ে নিতে চায়..কেমন লাগে বলত? এরা কেউ কী আমাকে নিজের মত করে বাঁচতে দেবে না?'
চিঠি পড়তে পড়তে কেন যেন চোখটা ঝাপসা হয়ে উঠেছিল। সত্যিই কী আমরা বাঁচতে পারি নিজের ইচ্ছেতে সবসময়? অন্যের ইচ্ছে পূরণ করতে করতে কখন যে ইচ্ছে ঘুড়ির সুতো কেটে উড়ে যায় ঘুড়ি আকাশে বুঝতেই পারি না। তবে ঐ আর কী যাদের ইচ্ছেপূরণ করতে করতে জীবন ক্ষয়ে যায় তাদের চোখে একটু ভালোবাসা দেখতে পেলে মনটা ভরে যায়,হয়ত ভুলে যাই অনেক না পাওয়ার কষ্টও।
বেশ কয়েকটা চিঠি এভাবেই এসেছিল দু তিন মাস অন্তর। আমিও লিখেছি একটা দুটো। অনি হাসতো বলত,' যাক তোমার বান্ধবীর কল্যাণে তোমার চিঠি শিল্প তড়তড়িয়ে এগোচ্ছে। আমাকেও একটা দুটো লিখতে পারো মন চাইলে..'
হেসেছিলাম দুজনেই। তারপর চিঠিতেই জেনেছিলাম ওর ছেলের অত্যাচারের কথা,কিছুতেই তারা মাকে শান্তি দিতে চায় না। তবে গুলগুলি বলেছে,কিছুতেই যেন বাড়ির দখলদারি ছেলেকে না ছাড়ে মিমি।
তারমধ্যেই আরেকটা চিঠি পেলাম কিছুদিন বাদে,এই চিঠিতে কেমন যেন একটা বসন্তের বাতাস বইছে। অবেলাতেও কখনও শীতের রুক্ষতাতেও বসন্তের ফুল ফোটে বন্ধুত্বের মিঠে সুবাসে। জানলাম নীলেন্দুদার কথা। কয়েকদিন মানসিক অশান্তির জেরে সুগার বেড়ে গেছিল। বাজারে গিয়ে হঠাৎই মাথা ঘুরে গেছিল,একজন এগিয়ে এসে একজায়গায় বসিয়ে চোখে মুখে জল ছিটিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল রিক্সা করে। তারপর থেকে একটু করে আলাপ,বিন্দীর হাঁটতে যাওয়ার পথে নীলেন্দুদার দাঁড়িয়ে থাকা। কখনও একসাথে চা খাওয়া,আবার হয়ত বাজারে যাওয়ার পথে টুকটাক টুকরো কথা আর শুভেচ্ছা বিনিময়। বিন্দীর ঘা খেতে খেতে শক্ত হয়ে যাওয়া পাথুরে মনে বন্ধুত্বের শীতল জলে বেরিয়েছিল বর্ষার সোঁদা মাটির গন্ধ। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম চিঠিতে ভদ্রলোক কেমন? দাদা না বন্ধু? ভালো তো এমন একটা বন্ধু একটুকরো সবুজ ঘাসজমির মত তোর জীবনে শান্তি নিয়ে আসুক।
বাংলাতে আমরা দুজনেই ভালো ছিলাম,তাই চিঠিতে দুই বান্ধবীর মাতৃভাষার চর্চাও কিছুটা হয়।
জেনেছিলাম একদিন গুলগুলিকে নিয়ে নীলেন্দুদাদের বাড়িতে গিয়েছিল। নীলেন্দুদা অবিবাহিত,বাড়িটা প্রায় ভগ্নদশায় চলে গেছে কাকাবাবুর মৃত্যুর পর। সেইজন্যই এখানে এসেছেন কয়েকমাস হল। বাইরে বাইরে থেকে এসেছেন চাকরিসূত্রে। কলকাতাতে তেমন মন টেকে না। পাহাড়ে পর্বতেই ভালো লাগে থাকতে। এই বাড়িটার জন্য এবার এখানে থাকা বেশ কিছুদিন তারপরেই আবার চলে যাবেন পাহাড়ে। ওখানে এক বন্ধুর অনাথ আশ্রমের দেখাশোনা,বাগান করার সব দায়িত্ব নিয়েছেন ভালো লাগে বলে। যা কিছু জমানো আছে আর যা পাবেন তাতে ভালো করেই চলে যাবে বাকি জীবনটা।
শুকনো গলায় বিন্দী জিজ্ঞেস করেছিল,' আপনি চলে যাবেন?কবে?'
-' না না এখনি নয়,হয়ত পুজোর পরে। অনেকদিন কলকাতার পুজো দেখি না। এবার ইচ্ছে আছে পুজো দেখব। মায়ের সাথে ছোটবেলায় কত গেছি বাগবাজারের পুজো দেখতে। পরে কাকাকে নিয়েও গেছি। একসময় আমরা ওদিকেই ভাড়া থাকতাম। এ বাড়ি আমার মায়ের বাবার.. আমি তো এমনি ভবঘুরে আজ এখানে তো কাল সেখানে।'
বিন্দী মাসের হিসেব করেছিল এখনও বেশ কয়েক মাস। চা খাওয়া আর হাঁটাটা কখন যে অভ্যেস হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলেছিল,' ওহ তাহলে দেরি আছে।'
-' হ্যাঁ দেরি আছে,তবে এবার কলকাতার দিনগুলো আমারও সুন্দর। আমিও কিন্তু খুব মিস্ করব আপনাকে। আমাদের চায়ের দোকানটা সকালবেলায় মনে পড়ে যাবে। আপনার কথাগুলোও,খুব সুন্দর কথা বলেন আপনি।'
হেসেছিল বিন্দী টুঁটি চেপা কথাগুলো কখন যে বেরিয়ে এসেছিল ভোরের বাতাসে বুঝতেই পারেনি। যেদিন নীলেন্দুদার বাড়িতে গেছিল গুলগুলির সাথে ওর জন্মদিনে সেদিন হঠাৎই ওর মুঠোতে এসেছিল একটা ফোন। খুব আপত্তি করেছিল বিন্দী। গুলগুলি বলেছিল,' এমা আমি ভেবেছিলাম টিউশনের টাকায় মিমিকে একটা ফোন দেব পুজোতে। তুমিই কিনে দিলে..'
-' দিলাম একটা ছোট্ট উপহার,আমাদের বুড়োদের একটু কথা বলার মত। ওর তো সবই মৃত মোটামুটি, মন আর ফোন দুটোই।'
বিন্দী কিছু বলেনি,অনুভব করেছিল কথাটা। আর গুলগুলি হেসেছিল,' কী সুন্দর কথা বলো তুমি কাকামণি।'
তবে কোন মিঠেভাবই হয়ত চিরকাল থাকে না জীবনে,আর কলঙ্কও নারীকে ছাড়ে না। একমাস,দুমাস তারপরই আলকাতরার রঙ ছড়ালো চারদিকে। বুড়িটা বুড়োটার সাথে প্রেম করছে বুঝলি। সকালে বাহারি শাড়ি পরে বেরোয়,তারপর চা খাওয়া, আড্ডা আর গল্প। বুড়োটা দূরে কোথাও থাকে সেখান থেকে আসে তারপর কী গল্প দুজনের। অথচ বিন্দীর আলমারিতে ছিল হাতে গোণা কয়েকটা শাড়ি। সামর্থ্য কোথায় যে কিনবে? কোনরকমে পোস্ট অফিসে থাকা কিছু টাকায় খরচ মেটায়। তাও বাপের বাড়ি থেকে পাওয়া বাড়ি বিক্রির ভাগ আর এই বাড়িটা। একটা ঘর ভাড়া দিয়ে কিছু পায়।
তবুও জীবনে হঠাৎই শূন্য শাখায় পাখি বসে কখনও,নীলেন্দুর ভালো লাগে বিন্দুলেখার চাপা দীর্ঘশ্বাস ভরা মুখে হাসি ফোটাতে। হয়ত নিজেও দিন গোণেন আর তো কয়েকটা মাস,তারপরেই চলে যাওয়া। বিন্দুলেখাকে বলেন..' বাগবাজারের ঠাকুর দেখেছেন? এবার আপনাকে নিয়ে যাবো।'
একটা সময় পরে অবশ্য বিন্দী দাদা আপনি আর নীলেন্দু তুমি করেই বলতেন ওকে। মেঘ জমেছিল চারধারে। কথা গেছিল ওর ছেলে বৌমার কানে ছেলে এসে শাসিয়ে ছিল ওকে। কান্নায় ভেঙে পড়েছিল বিন্দী,ফোনে বলেছিল,' একজন মানুষ কখনও আমাকে ওষুধ এনে দেয়,একটু খোঁজ নেয়। হয়ত হাঁটতে গিয়ে কথা হয় তাতে কিসের এত সমস্যা বলতে পারিস? আমি তো দাদা করেই বলি। একটা বয়স্ক লোক।'
অনেকদিন বিন্দীর ফোন পাইনি,চিঠিও না। আমিও ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম ছেলেমেয়েদের নিয়ে। বেশ কিছুদিন ছিলাম না। তারপর পেয়েছিলাম দীর্ঘায়িত এক চিঠি। বিন্দীর কাছে যা হয়ত কালবৈশাখীর ঝড় ছিল আমার কাছে হয়ত সেটাই ছিল নবঅঙ্কুরের সৃষ্টির সুবাস।
সেদিন ছিল রাখীপূর্ণিমা হঠাৎই দুদিন আগে ছেলে বৌ এসে হাজির হয়েছিল। ভয়ে গুটিয়ে ছিল বিন্দী। কয়েকদিন আগে ছেলে এসে ফোনটা আছড়ে ভেঙে দিয়ে গেছে। গুলগুলিকে তাড়িয়েছে বকে বাড়ি থেকে,মাসিকে অপমান করেছে। মায়ের চরিত্রে কালি ছিটিয়েছে যতটা পেরেছে। এ যেন বাবার এক জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি হয়েই বড় হয়েছে ছেলে অদ্ভুত হিংস্র আর অমানবিক।
রাখীর সকাল থেকেই বাড়িতে তোড়জোড় চলছে বৌমার ভাইরা নাকি এবার এখানে আসবে রাখী পরতে। অদ্ভুত ভালোমানুষী করছে বৌমা অবাক হয় বিন্দী..' এবার পায়েস আর পোলাও আপনি করুন,আমি মাংসটা করব। আর আপনার জন্য পনীর। আপনি যে কেন মাংস ছাড়লেন? আরও সুন্দর থাকতে পারতেন এইসব খেলে।'
কথার মিছরির মধ্যে হঠাৎই ছুরিটা বিঁধলো। রূপও কখনও মানুষের শত্রু হয় তা হাড়ে হাড়ে বোঝে বিন্দী। সেই ছোটবেলা থেকে তার শত্রু তার রূপ।
বাঙালী বাড়িতে ভাইফোঁটার ঘটা থাকে তবে রাখীর এত ঘটা দেখেনি বিন্দী। তবে চূড়ান্ত অবাক হল যখন দেখল ছেলে নীলেন্দুদাকে সাথে নিয়ে ঢুকল বাড়িতে।
অবাক মায়ের দিকে তাকিয়ে আর বৌয়ের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে বলেছিল,' আমিই নিয়ে এলাম,আমাকে তো চেনেন উনি। জিজ্ঞেস করছিলেন তোমার শরীর খারাপ নাকি? ফোনও পাচ্ছেন না।'
বৌমা ভালোমানুষী করে অতি যত্নে তাঁকে বসিয়েছিল। বলেছিল,' মামাবাবু আজ ভালো দিনে এসে পড়েছেন। আজ কিন্তু না খাইয়ে ছাড়ব না। মায়ের কাছে আপনার কথা অনেক শুনেছি।'
অবাক হন নীলেন্দু হয়ত অপ্রস্তুতও। তাই বলে,' না না আমি এখনই চলে যাব। ও বলল মায়ের শরীর খারাপ তাই এলাম,কদিন খোঁজ পাচ্ছি না। অবশ্য আমিও ব্যস্ত ছিলাম। তোমরা এসে ভালো হয়েছে,এবার ওর আর অসুবিধা হবে না।'
নীলেন্দুদা চলে যাবার উদ্যোগ নিতেই ছেলে, বৌমা আর তার ভাইয়েরা জোর করেই বসিয়ে দিয়েছিল তাঁকে। আর তারপরই বিন্দীর হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল একটা রাখী আর বলেছিল,' এই সুযোগ কেউ ছাড়ে? যদিও হঠাৎ আলাপ তবুও উনি বড় দাদার মতই তোমাকে আগলে রেখেছেন মা। আর আমাদেরও তো মামা নেই তাই রাখীটা পরিয়ে দাও হাতে। এই নাও..কই গো মিষ্টির থালাটা নিয়ে এসো।'
হঠাৎই উঠেছিল এক কালবৈশাখীর ঝড়। রাখীটা টেবিলে রেখে নীলেন্দুর হাত ধরেছিল বিন্দুলেখা তারপর বলেছিল,' আপনি একদিন বলেছিলেন জীবন এত ছোট নয়..আমি বুঝেও বুঝিনি। আজ এই অসহ্য জীবনের হাত থেকে আমি মুক্তি চাই। আমাকে মুক্তি দেবেন? আমিও পাহাড়ে গিয়ে আশ্রমে থাকবো। যে কোন কাজ করব। সব ছেড়ে দিলাম তোদের,নে বাড়িঘর সব নে। এইজন্যই তো এত নাটক করলি। কালি যখন ছুঁড়েছিস মায়ের দিকে সেটা আজ ভালো করেই মাখবো।'
উত্তেজনায় কাঁপছে বিন্দী। ব্যস্ত হন নীলেন্দু,' তোমার শরীর খারাপ করবে। শান্ত হও।'
বিন্দীর এই রূপ কেউ কখনও দেখেনি,অবাক হয়ে যায় ছেলে। দুদিন আগে যে মা ভয়ে কাঁপছিল বলছিল,' আর বাড়ি থেকে বেরোবে না,ফোন করবে না কাউকে তার আজ এ কী রূপ!'
মুখের হাসি অমলিন রেখে বিন্দুলেখার হাত ধরেন নীলেন্দু বললেন,' যাবে আমার সাথে? চলো তবে।' তারপর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রিক্সায় উঠে মিলিয়ে যান জনস্রোতে।
রাখী,বাড়ি আর মিষ্টির থালার সাথে অনেকদিনের সুতোয় গাঁথা সম্পর্কগুলো একনিমেষে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল বিন্দী। তবে নীলেন্দু বুঝেছিলেন শুধু বন্ধু হয়ে থাকতে দেবে না কেউ ওদের তাই সামাজিক নিয়ম মেনে আইনের বন্ধনে স্বামী স্ত্রী হয়েছিলেন তাঁরা। বাগবাজারের মায়ের মুখ লাল পাড়ের দুধ সাদা শাড়ি পরে সলাজ মুখে নীলেন্দুর হাত ধরে দেখেছিল বিন্দুলেখা। যে দাম্পত্যসুখ কোনদিনই সে পায়নি তার নবযৌবনে তা বিগত যৌবনে বার্ধক্যের সীমায় দাঁড়িয়ে দিয়েছে তাকে নীলেন্দু। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে শুধুই কী শরীর থাকে? থাকে অনেক কিছুই..কত ছোট ছোট দৃষ্টি,মুগ্ধতা,মিষ্টতা,সহানুভূতি,হাসি,ব্যথার ভাগাভাগি দাম্পত্যকে দেয় পরিপূর্ণতা।
বিন্দীর চিঠি পড়তে পড়তে কখন যে আমিও হারিয়ে গেছিলাম হিমাচলের বরফ মাখা গ্ৰামটাতে বুঝতেই পারিনি। ছবির মত দেখছিলাম পাশাপাশি দুটো বেতের চেয়ারে বসে বাচ্চাদের খেলা দেখতে দেখতে গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে বিন্দী আর তারমাঝেই নীলেন্দু উঠে গায়ে ভারী শালটা জড়িয়ে দেয় যত্নে যাতে ওর ঠান্ডা বুকে বসে না যায়।
হঠাৎ আমারও চমক ভাঙে,অনির ডাকে..' মেমসাহেব আপকে চায়ে। কহাঁ খো গয়ে তুম হাঁ....…'
চিঠিটা ভাজ করে রেখে পরম নির্ভরতায় অনির হাতটা ধরে বুকে হেলান দিই আমিও।©রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী।
(ভালো লাগলে শেয়ার করবেন লেখিকার নামসহ। লেখিকার অনুমতি না নিয়ে কোন সিনেমায়,ইউটিউবে বা গল্প পাঠে গল্পটি ব্যবহার করবেন না। সেক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।)
সমাপ্ত:-
্
Comments
Post a Comment