Skip to main content

নীল মনের উঠোনে

কথাকে দেখতে গিয়ে আমরা মোটামুটি তিন ঘন্টা কাটিয়ে এসেছিলাম। ইশ্ কথা নয় কথাবৌ হবে,আসলে সম্পর্কে কথা আমার বৌদি ওর পুরো নাম কথাকলি সেটা অবশ‍্য ওকে দেখতে গিয়েই জেনেছিলাম। তবে গল্প করে মনে হয়েছিল এ নাম সত‍্যি বাপু সার্থক। এ যে কথার ফুলঝুরি,তবে এত সুমধুর সেই কথা যে সেই কথামালা ছেড়ে চট করে আসাও যায় না। বুঝেছিলাম ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের এই ছাত্রী বহুৎ আড্ডাবাজ আর সাথে সুমধুর হাসি দিয়ে কয়েক ঘন্টাতেই আমাদের মন জয় করে ফেলেছে । যথারীতি আমরা তিনজন ব‍্যাচেলার সেই আড্ডায় জমে গেছিলাম। ইশানদা আমার পিসতুতো দাদা তবে দাদা না বলে ফ্রেন্ডো বললেই ভালো। মানে আমার যাবতীয় কুঅভ‍্যেস দাদার হাত ধরেই হয়েছিল। সে ব‍্যাপারে দাদা আমার শিক্ষাগুরু,মানে সেই সরু সাদা পেন্সিলের মত পদার্থতে অগ্নিসংযোগ করে কিভাবে ধোঁয়া ছাড়া যায় অথবা প্রথম ঝাঁঝালো তরল পদার্থে চুমুক দিয়ে একটু আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছি এমন ফিলিংস আনা যায় সবটাই দাদার কাছ থেকে শেখা। তবে গুরুদেব অবশ‍্য বলতেন,' শোন মাত্রা রেখে সব করবি বুঝলি,কোন ব‍্যাপারেই মাত্রা ছাড়া হবি না। এই বয়েসে একটু আধটু মদ খাওয়া ভালো। লুকিয়ে কিছু করার থেকে এই যে আমার সাথে বসে খাচ্ছিস এ ঠিক আছে। গার্জেন যখন পারমিশন দিয়েছে তখন খা। জীবনে কিছু বাকি রাখতে নেই,টেস্ট করতে ক্ষতি কী?'
      এইভাবেই আমাদের বড় হওয়া যৌবনের রঙ রস উপভোগ করতে করতে। কিন্তু এই ব‍্যাচেলর হয়ে ফ‍্যা ফ‍্যা করে ঘুরে বেড়াতে দেবে নাকি বাড়ির লোক? পিসিমা কড়া সুরে বললেন,' এই পিন্টু তুই তো সারাক্ষণ দাদার চ‍্যালাগিরি করে যাচ্ছিস। তা এভাবে জীবন চলবে নাকি? প্রেম ট্রেম করে নাকি রে ইশান?'
 আমি হঠাৎই বোমা ফাটায় বেশ আতঙ্কিত হয়ে বলেছিলাম,' না না দাদা খুব ভালো এদিক দিয়ে কিছু নেই ওসব আমি জানি সব।'
-' হলেই ভালো হত,আমি বেঁচে যেতাম। যাক তাহলে মেয়ে খুঁজবো এবার,এভাবে বাউন্ডুলে হয়ে ঘুরে বেড়ানো আর সহ‍্য হচ্ছে না। আজ এখানে যাচ্ছে তো কাল সেখানে। কত রাতে বাড়ি ফেরে একেকদিন আড্ডা মেরে।'
  আমি মাথা চুলকালাম,হে ভগবান আমাকেও না পাকড়াও করে পিসিমা। হয়ত এবার বলে বসবে তুইও তো ভালোই ঘুরে বেড়াস দাদার সাথে,হতচ্ছাড়া কী করে বল খুলে সব।
    যাক তখনকার মত বাঁচলেও উদ‍্যোগ হল তোড়জোড় ইশানদার হাতে হাতকড়া পরানোর জন‍্য। আর যথারীতি দাদাও আমাকে চ‍্যালা আর আরেক বন্ধুকে চামুন্ডা করে মেয়ে দেখতে গেল। কারণ এই মেয়ে পিসিমা পিসোর পছন্দ সুতরাং ফাইনাল ম‍্যাচে ক‍্যাচ লোফার মত আমাদের পাঠানো হয়েছিল।
        দাদাটা দিব‍্যি ঘন্টা তিনেক চুটিয়ে আড্ডা মেরে মেয়ে চাইনিজ কন্টিনেন্টাল রাঁধে কিনা? তার হবি কী? সে বেড়াতে ভালোবাসে কিনা ইত‍্যাদি আদ‍্যোপান্ত জেনে অবশেষে একটু আওয়াজ তুলেছিল মেয়ের গায়ের রঙে। আমরা হই হই করে চেপে যা ভাই বলে তাকে চুপ করিয়ে দিয়েছিলাম। আমার কিন্তু খুব ভালো লেগেছিল ছটফটে স্বভাবের কথাকে। 
     স্টাইলিশ অথচ রুচিশীল,কথা বলে অথচ সংযত আর মার্জিত। নীল শাড়িতে রাণী পাড়ের আল্পনা জড়িয়ে মাথায় একগুচ্ছ সাদা জুঁই ফুলের গন্ধের সুবাস ছড়ানো আমাদের কথাবৌ সত‍্যিই মন কেড়ে নিয়েছিল। আমি বৌদি বলার প্রস্তাব দিতেই হই হই করে উঠেছিল একদম,' সেদিন কথায় কথায় শুনেছি যে তুমি আমার থেকে খুব বেশি বড় নও। যদিও সম্পর্কে তুমি আমার ছোট দেওর কিন্তু ঐসব বৌদি ডাক আমার কেমন যেন লাগে। আমার কিন্তু বেশ পুরোনো ডাক মিঠে লাগে,ঐ যেমন রাঙা বৌদি বা মিষ্টি বৌদি অথবা নবৌদি।'
আমি ঢোক গিলেছিলাম এই শুরু হল আবার। এমনিতেই আমি কম কথা বলি। এই কথা যে কোথায় গিয়ে থামবে তার কোন শেষ নেই। মুখটা কাচুমাচু করে বলেছিলাম তাহলে কী বলব তুমিই বলে দাও। অবশ‍্য এসব বিয়ের আগের গপ্পো,মানে যখন আমাদের দাদাভাই ঐ একটু রসেবসে আছে। মাঝেমাঝে তাদের ভিক্টোরিয়ার মাঠে দেখা যায়। আবার কখনও সিনেমায় দেখা যায়। কখনও ছুটির দিনে আবার দেখা যায় রেস্তোরাঁয়। অবশ‍্য আমাকেও মাঝেমধ্যে সাথে নিত দাদা। বলত,' চল কথা তোকে ডেকেছে।'
-' আরে তোদের মাঝে আমি কী করব? না আমার কাজ আছে,আমি যাব না। শুধুশুধু কাবাবে হাড্ডি হওয়া।'
-' আরে কাবাবে চাটনি হয়ে থাকবি। ওরে তুই থাকলে আমি একটু ভরসা পাই। নাহলে কী বকবক করে ভাই সারাক্ষণ,অত জবাবই তো নেই আমার কাছে। আমাকে একদম আউট করে ছাড়ে।'
     এইভাবেই মাঝেমধ্যে কাবাবে চাটনি হতে যেতাম আমি। আর তখনই ভেবেচিন্তে কথা বলেছিল,' তুমি আমাকে কথাবৌ বলে ডেকো। কী তোমার পছন্দ তো?'
  দাদা টিপ্পুনি কেটেছিল,' ও তোমাকে বৌ বলবে কেন? আমার বৌকে আমি বৌ বলব। এসব আবার কী কথা?'
-' হিংসুটে একটা,দেখেছো তো পিন্টু তোমার দাদাকে। আরে এ বৌ সে বৌ নয়,বৌদির বদলে সংক্ষেপে কথা বৌ। ও তো আমার চেয়ে বড় কথাবৌ বললে কী হবে? আর আফটার অল দেবর বলে কথা।'
   দাদা চেপে গেছিল দেখেছিল এই তর্ক বহুদূর চলবে সুতরাং আর বেশি কথাতে কাজ নেই। কথা হয়ত দেবর শব্দের ব‍্যাকরণগত অর্থ বিশ্লেষণ করতে শুরু করে দেবে। এমনিতেই দাদা আর আমি দুজনেই ব‍্যাক‍রণে কাঁচা। যাক বিতর্কে না গিয়ে দুজনেই সহাস‍্য বদনে মেনে নিয়েছিলাম মেমসাহেবের হুকুম।

কিছুটা ভালোবাসার অভ‍্যেসে আর কথার আলপনাতে বিবাহ পূর্ব প্রেম হয়ে গেছিল অনেকটাই ওদের। এখনকার মত উদ্দাম কিছু না হলেও কুলকুল করে পাহাড়ী মিঠে নদীর মত বয়েছিল সেই প্রেমের নদী। আমাদের ইশানদাও বেশ রোমান্টিক হয়ে উঠেছিল সেই সময়ে। তবে কথা কিছুদিনের জন‍্য ইউনিভার্সিটির কাজে বাইরে চলে যাওয়াতে বিরহে সেই প্রেমে আরও গভীরতা এসেছিল। ইশানদা সব কাজ সেরে রাতে চিঠি লিখতে বসত কথাকে তারপর সেই চিঠি রঙীন খামে করে পৌঁছে যেত কথার কাছে। কথাও চিঠিতে লিখত অনেক কিছু সে চিঠি নাকি এত লম্বা হত যা একটা বড় গল্পের মত। আমি অবাক হতাম শুনে,' এত বড় চিঠি! মানে কত পাতা জুড়ে?'
-' আরে আর বলিস না,মেমসাহেবের কথা তো ফুরোয় না,কোন কোনদিন পাঁচ পাতাও হয় চিঠি। আবার কখনও চার তবে সর্বনিম্ন পাতার সংখ‍্যা দুই। তার কম সে লিখতে পারে না।'
 আমিও কেন যেন কল্পনায় উড়েছিলাম দাদার গল্প শুনে, মনে হয়েছিল আহা এমন চিঠি যদি আমার আসত। দাদাটা তো একদম কাঠখোট্টা ওর কাছে কোন ম‍্যাটারই করে না মনে হচ্ছে এত বড় চিঠি। তবে আমিও নিরাশ হইনি,আমার কাছেও মাঝেমধ্যে কথার চিঠি আসত উড়ে।
' পিন্টু কেমন আছো? তোমাদের খুব মিস্ করছি। আরও হয়ত মাস দুয়েক থাকব এখানে। এখানে এখন বৃষ্টি নেমেছে চারিদিক সবুজে সবুজ। দূরের পাহাড়ে মেঘেরা নেমেছে দলবেঁধে। হস্টেলের ছাদ আর বারান্দাটা ভারী সুন্দর। এখন বৃষ্টি পড়ছে তাই আমি বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসে আনমনা হয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে তোমাকে চিঠি লিখছি। মনটা ভীষণ রোমান্টিক হয়ে গেছে বুঝলে,আমিও কালিদাসের মেঘদূতের যক্ষপ্রিয়ার মতই পিপাসার্ত হৃদয় নিয়ে বসে আছি। ইশ্ কী সব লিখছি! কবে আমরা একজায়গায় হব সেই আশাতে দিন গুনছি। তখন আবার কবিরাজীতে কামড় বসিয়ে জমে যাবো আড্ডাতে।'
    কথার চিঠি আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছিল দূরে,এত সুন্দর আর সাবলীল সেই ভাষা যে আমার দুই চোখ যেন ছবির মত সব দেখতে পেয়েছিল।
    উত্তরে লিখেছিলাম ডিয়ার কথাবৌ,তোমার চিঠির ভাষা তো রীতিমত ছবি আঁকে মনে। এত সুন্দর চিঠিগুলো আমার ঐ কাটখোট্টা দাদাকে লিখে কী লাভ? কে জানে তার এত ধৈর্য্য আছে নাকি সেসব পড়ার? তুমি বরং গল্প আর কবিতা লেখো,তোমার হবে। মানে আমি বলছি দায়িত্ব নিয়ে।
           কথাবৌয়ের উত্তর পেয়েছিলাম সাথে একটা ছোট্ট কবিতা। বলেছিল বেশ বললে ভাই তাই তোমাকে একটা হিজিবিজি কবিতা উপহার দিলাম। এই বাংলাতে প্রচুর মানুষ লেখেন আমিও লিখি তেমনি ভালোবেসে। তবে কবি সাহিত্যিক কী সবার হওয়া হয় নাকি?

ওদের বিয়ে হয়ে গেছিল কয়েকমাস বাদেই। দাদার বিয়ে বলে কথা তাই আড্ডার মেজাজে জমে গেছিলাম সবাই। ভাইবোনেরা সবাই একজায়গায় হয়েছিলাম কোন আনন্দই বোধহয় বাকি থাকেনি। ইশানদা বরবেশে সেজেগুজে গিয়ে একদম ছাদনাতলায় হাজির হয়েছিল। আমিও অবশ‍্য ছিলাম সবসময় দাদার পাশেপাশে বাধ‍্য ভাইটি হয়ে। বিয়ের পর কথাবৌ বলেছিল আমি নাকি শত্রুতা করেছি,আমার ওর পক্ষে থাকা উচিত ছিল। আমাদের দলের লোকেরা যখন ইশানদাকে উঁচুতে তুলেছিল তখন আমি নাকি হেসেছিলাম কথাবৌয়ের দিকে তাকিয়ে। তাতে তার খুব রাগ হয়েছিল সে বলেছিল,' আমি সামলাতে না পেরে প্রায় পিঁড়ে থেকে পড়ে যাচ্ছিলাম সেটা তুমিও বুঝলে না। উল্টে দাদাকে তুঙ্গে তুলে নাচানাচি করলে!
বাপরে এই মেয়ে বিয়ে করতে করতে ধরবি তো ধর আমার মত লক্ষ্মণ দেওরকেই ধরল ক‍্যাঁক করে! যাক বেচারা যখন বাপের বাড়ি ছাড়ার সময় খুব কান্নাকাটি করছিল তখন আমরা মোটামুটি ক‍্যাচ লোফার মত তাকে আলতো হাতে বৌদিকে লুফে নিয়ে ইশানদার পাশে মানে একদম তার জিম্মায় বসিয়ে দিয়ে বকুনি দিলাম.. একি! বৌদি আমাদের এত কাঁদছে তুমি ধরতে পারো না? এবার শক্ত হাতে ধরো যাতে আর না কাঁদে।

আমাদের বাড়িতে এসেছিল বৌ হয়ে কথা,সারা বাড়ি আলোতে আলোতে সেজেছিল। কিছুটা সময় চুপচাপ থাকার পর কথা মিলেমিশে গেছিল আমাদের সাথে। কিন্তু বাধ সেজেছিল পিসিমা আর বাড়ির কয়েকজন।
-' একি! তুমি না নতুন বৌ,এত বকবক আর হাসাহাসি কেন বাপু? নতুন বৌ এত কথা বলে নাকি শ্বশুরবাড়ি এসে?'
   আমি কিছু বলতে গেলে বকা খেয়েছিলাম পিসিমার সাথে। চুপ করে গেছিল কথা বৌ চোখটা ছলছলিয়ে উঠলেও মাথা নীচু করে ম‍্যানেজ করেছিল তখনকার মত। বুঝতে পেরেছিল এটা শ্বশুরবাড়ি এখানে বকবক করতে নেই।
         বিয়ের হৈ চৈ সেরে যে যার বাড়িতে ফিরে যাবার আগে মিস্ করেছিলাম কথা বৌয়ের কথামালা। দু এক রাত্রিতেই আমাদের প্রথম দেখা কথাকলি বৌদি কিছুটা হলেও পাল্টে গেছিল। আমরা মজা করলে চোখ দুটো হাসিতে চকচক করলেও কথার ফুলঝুরি আর গড়িয়ে পড়ত না স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঠোঁট বেয়ে।
     ইশানদা আর বৌদি হনিমুনে নৈনিতালে গেছিল সে ছবি অবশ‍্য আমি দেখেছিলাম আমাদের বাড়িতে বসেই। আমাদের বাড়িতে নেমন্তন্ন খাবার সময় সেই অ্যালবাম নিয়ে এসেছিল ওরা। খুশি মাখা দাদা বৌদির হানিমুনের ছবি দেখে আমিও ভেসেছিলাম কিছুটা। তখন আমিও নবনীতার সাথে সবেই প্রেম করছি লুকিয়ে।
   বৌদিকে মজা করে বলেছিলাম,তারপর কথাবৌ বেশ তো ঘুরে হানিমুন করে এলে। তা আমি সেই বাদ পড়লাম তোমাদের দল থেকে।
-' আরে বোল না,আমি তো তোমার দাদাকে বলেছিলাম পিন্টুকে নিয়ে চলো। তা সে বলল হানিমুনে নাকি একা যেতে হয়। তুমি গেলে তো আমিও একটু কথা বলে বাঁচতাম। তোমার দাদা তো অত কথাই বলতে পারে না।'
     সময় এগিয়ে চলেছিল তারপর নিজের ছন্দে,আমাদের পাহাড়ী ঝর্ণার মত বয়ে যাওয়া কথা বৌয়ের কথার গতিও সমালোচনার পাথরে চাপা পড়েছিল। শুনেছিলাম বেশি কথা বলার জন‍্যই নাকি বকুনি খেত কথাবৌ। আমি অবাক হয়েছিলাম শুনে। মাকে বলেছিলাম,বেশি কথা? মানে কী? একটা মানুষ কথা বলবে না?
  মা পিসিমার পক্ষ নিয়ে ধমকেছিল,' চুপ করত বাড়ির বৌ সারাক্ষণ বকবক করেই চলেছে। দুধওয়ালা থেকে ধোপা সবার সাথেই বকবক করে। কারও সাথে কথা বলতে শুরু করলে থামে না।'
 মা কথা বলার মধ‍্যে কী খারাপ আছে? কথা বলা তো ভালো। সত‍্যি তোমরা যে কী? কথা বলবে না একটা মানুষ! তাহলে তো বোবা মেয়েকেই আনতে পারতে।
           আমার যাওয়া একটা সময় কমেছিল ঐ বাড়িতে অফিসের ট্রান্সফার হয়ে গেছিল তারপর চাকরি আর প্রেমিকা সামলে আমিও কেমন যেন আধা সংসারী হয়ে গেছিলাম। ইশানদার সাথে আড্ডার দিনগুলো একটা সময় অতীতের পলি পড়ে ইতিহাস হয়ে গেল জীবনে। ইশানদাও তখন ঘোর সংসারী তারমধ‍্যে খবর পেলাম কথাবৌ মা হতে চলেছে। একদিন গিয়েছিলাম ছুটিতে বাড়িতে ফেরার পর। আমার দেখা সেই কথামালার ঘূর্ণী হাওয়া কথাবৌকে একদম চুপচাপ দেখেছিলাম প্রথমে। তারপর কিছুক্ষণ গল্প করার পর একটু যেন স্বাভাবিক হয়েছিল। আমি অভিযোগ করেছিলাম,কী গো..তোমাকে তো চেনাই যায় না। না না এ আমার কথাবৌ নয়।
-' বিয়ের পর তোমার কথাবৌ এবার চুপকথা বৌ হবার অভ‍্যেস করছে। তোমার দাদাও রাগ করে বেশি কথা বললে। আসলে সবই বোধহয় বদলে যায় বিয়ের পর জানো। সবসময় শুধু শুনি চুপ করো আর চুপ করো। আচ্ছা কথা কী একটা সময় ফুরিয়ে যায় সবারই?'
   মনটা ভারী হয়ে গেছিল হঠাৎই কথাবৌয়ের ছলছলে চোখটার দিকে তাকিয়ে। কোন উত্তর দিতে পারিনি প্রশ্নের তবে একটা সময় পরে অনুভব করেছিলাম মানুষের আবেগ,অনুভূতি ভালোবাসা আর কথা সবেতেই পলি জমে একটা সময়। তাই হয়ত পাশাপাশি দুটো মানুষ বাস করলেও কথার সহবাস হয়ে যায় অনিয়মিত। ঐ সারাদিনে হয়ত প্রয়োজনের বাইরে কোন কথাই হয় না।
         অবশ‍্য সে কথা আমার বোধগম্য হয়েছিল বহু বছর বাদে। ততদিনে কথাবৌ আর আমার জীবনের অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে। 
  ইশানদার ফোনে জানতে পেরেছিলাম ওদের ছেলে হয়েছে। আমি তখন কেরালাতে চাকরিসূত্রে। বলেছিলাম,পার্টিটা কবে হচ্ছে? এতবড় একটা সুখবর। অবশ‍্য আমিও খাওয়াতে পারি কাকু হলাম বলে।
  ইশানদা হেসে বলেছিল,' হুঁ কাকিমা আনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে তো শুনলাম। তবে একটু সবুর করো ভাই,এখন বিয়ে করলে কথা যেতে পারবে নাই। ওর অনেক আশা দেওরের বিয়েতে যাবে বলে।'
      আমার বিয়ে কিছুদিন বাদে হয়েছিল,ততদিনে আমাদের তাতান প্রায় দুবছরের হয়েছে। কথাবৌয়ের মাতৃরূপে খুশির ছোঁয়া,একদম পাকা গিন্নী হয়ে ছেলে কোলে করে ঘুরছে। মায়ে ছেলেতে কত কথা সারাদিন.. আমার বিয়ের তালে ওটুকুই চোখে পড়েছিল। হলুদ মাখার আগে বলেছিলাম,' আর কী তোমার বন্ধু এসে গেছে। সারাদিন তো ওকে নিয়েই কেটে যাবে।'
 -' সত‍্যি কী দস‍্যি হয়েছে ছেলেটা! উফ্ সারাদিন বকায় আমায়।
-শেষে তুমিও বকবক করে ক্লান্ত হয়ে পড়লে?
-একদম না,মা আর ছেলে সারাক্ষণ বকবক করি। এবার কে থামাবে আমাদের? তোমারও তো কথা বলার সাথী আসছে,তা কথা বৌকে ভুলে যাবে না তো?'
  আমি হা হা করে হেসেছিলাম, তোমার সুধামাখা কথা কী ভুলতে পারি?
-' হুঁ দেখব বাবা,কত মনে রাখো'
     সেই যে কেউ কথা রাখে না,ঠিক তেমনি আমিও কথা রাখিনি। প্রথম প্রথম ঐ একটু যোগাযোগ, তারপর ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়েছিল সব। আমিও সংসারী হয়েছিলাম,হয়ত একটু বেশিই। কারণ নবনীতা সংসারী ছিল না। ওর সংসারের থেকে ভাবনার জগত,বন্ধুবান্ধব ঘোরা বেড়ানো বেশি পছন্দ ছিল। তাই আমি একটু একটু করে আরও বেশি সংসারী হতে শিখেছিলাম। আমার বাইরে থাকার সুবাদে আমাদের অগোছালো দাম্পত‍্য তেমনভাবে চোখে পড়েনি কারও। কেউ হঠাৎই এসে পড়লে ম‍্যানেজ করে নিতাম‌। কেন যেন আমাদের ভালোবাসার বিয়ে হলেও বাঁধন জোরদার হল না। একটু আলতোভাবে চলতে লাগলো সব। নবনীতাকে এই নিয়ে অভিযোগ করতাম আমি কম। বরং সে বলত আমার দোষেই আমাদের সন্তান এল না। তাই বাঁধন শক্ত হবে কী করে? নবনীতা বাপের বাড়িতে থাকতে ভালোবাসত বেশি। বড়লোকের মেয়ে বলে হয়ত আমাদের বাড়ি থেকে মাও কোনদিন কিছু বলেনি, আর বললেও আমিই চাপা দিতাম এখানে মন টেকে না সারাদিন তাই চলে যায় এই বলে।
              কথা বৌয়ের টুকটাক খবর পেতাম ইশানদার কাছে কখনও ফোন করলে। শুনেছিলাম ছেলেকে ওরা হস্টেলে পাঠিয়েছে আরও ভালো মানুষ হবে বলে।
   আমার কেন যেন হঠাৎই কথা বৌয়ের কথা মনে হয়েছিল,বলেছিলাম কিছু বলেনি বৌদি?
 'হ‍্যাঁ কান্নাকাটি করছিল খুব,তো বললাম শক্ত হতে। এত নরম হলে ছেলে মানুষ করবে কী করে?'
    আমি অবাক হয়েছিলাম মনে হয়েছিল একটা বাচ্চা হল না বলে আমাদের বাঁধন আলগা হল আর ওদের শক্ত বাঁধনও কী এবার আলগা হবে সন্তান দূরে চলে যাওয়ায়? নাকি কথাবৌ আর ইশানদা আরও কাছাকাছি আসবে আবার?
      এসব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছিলাম অনেক পরে,ততদিনে আমি একলা হয়ে গেছি প্রায় পনেরো ষোলো বছর বিবাহিত জীবনের পর। নবনীতা আর থাকতে চায়নি আমার সাথে। আমাদের কথা,ভালোবাসা,শরীর নদীর টান সবই ফুরিয়েছিল বোধহয়। তারও বছর খানেক বাদে হঠাৎই একটা চিঠি পেয়েছিলাম কথা বৌয়ের। অবাক হয়েছিলাম খুবই..
 ' ভাই পিন্টু,
     লিখব করেও চিঠি লেখা হয়নি,তোমার কিছু কথা আমি শুনেছি কিছুদিন আগে। প্রথমে ভেবেছিলাম সব মিথ‍্যে হোক। তারপর দেখলাম মিথ‍্যেগুলো যখন থাকে সত‍্যিজালে মোড়া তখন তাকে আর কখনও যায় না বোধহয় জোড়া। যাক হয়ত ভালোই হয়েছে তোমাদের আর পাঁচজনের মত সম্পর্কে জোড়াতালি দিয়ে চলতে হয়নি। সম্পর্ক পুরোনো হয়ে ছিঁড়ে গেছে। আসলে পুরোনো জিনিস যদি পচে যায় তাতে রিপু করাও খুব মুশকিল। মানে খুব দক্ষ সেলাই জানা মানুষও পারে না। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কও একদিন পুরোনো শাড়ির মত হয়ে যায়,হয়ত অনেক মায়াজালে বোনা সেই শাড়িকে ফেলাও যায় না কিন্তু রিপুও করা যায় না। জোড়া দিতে গেলেই পাশ দিয়ে ফেঁসে যায়। এক সময় যে শাড়ি শক্তপোক্ত ছিল তাতে অজস্র ফাঁক ফোকর এখন যা ঢেকে রাখাও মুশকিল।'
     কথা বৌয়ের চিঠি পড়তে পড়তে আমি কোথায় যেন হারিয়ে গেছিলাম। এমন অদ্ভুত সম্পর্কের বিশ্লেষণ হতে পারে? কোথাও যেন বড় বেশি ব‍্যথার মোড়কে মোড়ানো এই চিঠি। এই ব‍্যথা কার কথা বৌয়ের না আমার?
   আমি উত্তর দিয়েছিলাম,অনেক কিছু জানতে চেয়ে বেশ অনেকদিন বাদে উত্তর এসেছিল। চিঠির পরতে পরতে জমা অভিমান আমাকে কেন যেন বলে গেছিল কানে কানে ভালো নেই কথাবৌ। আমি মনোবিদ নই,মনের ভাঙাচোরা খেলা সয়ে একটু শক্তপোক্ত হয়ে ওঠা মানুষ। কথাবৌ কথা বলতে পারে তবে সে কথা শোনার মত সে কাউকে পায়নি। ইশানদা তো ভালোই আড্ডাবাজ ছিল,বেশ এদিক ওদিক ঘোরা রেস্তোরাঁয় খাওয়া সবই ভালোবাসত তবে কেন এত মেঘ কথাবৌয়ের চিঠিতে? তবে কী ইশানদা সময় দেয় না কথা বৌকে? নাকি অবহেলা করে? যা দাগ কেটেছে কথাবৌয়ের একান্ত অভিমানী মনে।
     আমি উত্তর দিয়েছিলাম শব্দমালার বন্ধনে গুছিয়ে। যে সময়টা আমি একসময় বৌদিকে দিতে পারিনি মানে একটা দূরত্ব এসেই গেছিল পেশাগত আর সাংসারিক কারণে আজ হয়ত সেই দূরত্ব আমি নিজেও মুছে দিতে চাই। আমার একলা অবকাশে কথা বৌয়ের চিঠিগুলো উড়ে আসা কথার পালকের নরম আবেশ।  অনেকদিন বাদে আবার একটা চিঠি পেয়েছিলাম জেনেছিলাম কথাবৌয়ের শরীর ভালো যাচ্ছে না। অথচ ইশানদার নাকি তাতে এমন কিছু এসে যায় না। সে তার বন্ধু, আড্ডা,ঘোরা বেড়ানো নিয়ে মেতে আছে নিজের মতই। চিঠির কয়েকটা লাইন আজও মনে আছে আমার...'জানো পিন্টু ঐ যে কথায় আছে না অতি বড় সুন্দরী না পায় বর আর অতি বড় ঘরণী না পায় ঘর আমি তার সাথে আরেকটা যোগ করছি অতি ভালোবাসা কখনও আনে হতাশা। আমি বোধহয় হিজিবিজি কিসব লিখতে বসেছি আজ। আসলে তেমন কিছুই তো করা হল না। কোন কাজের মধ‍্যে থাকলে হয়ত ভালো থাকতে পারতাম। আমি যে সংসারী নই ভাই,সারাদিন ঘর গুছোতে,মুছতে,জামাকাপড় ভাজ করতে আমার ভালো লাগে না। দমবন্ধ হয়ে আসে। যেটুকু জানতাম সংসারকে গড়তে কোথায় গিয়ে সবই ঠোক্কর খেয়ে খোঁড়া হয়ে গেলো। সংসারে সবার সাথে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলে আমি আজকাল বড়ই ক্লান্ত আর ভালো লাগে না। মনের কোথায় যে কাঁটা বিঁধেছে তাও খুঁজে পাই না। মাঝেমধ্যে মনেহয় আমার বোধহয় চিকিৎসার প্রয়োজন তবে ভয় লাগে তোমার দাদাকে বলতে। আজকাল তার চোখে অবহেলার দৃষ্টি আমাকে কেমন যেন অসহায় করে দেয় এরপরে হয়ত বলবে আমি পাগল হয়ে গেছি। কথা হারিয়েও মানুষ কী অদ্ভুতভাবে পাগল হয়ে যায় কে জানে? বাবা যে কেন আমার নাম কথা রেখেছিলেন? নিজেকে হারিয়ে যেতে দেখাও বড় কষ্টের,প্রতিদিন হারাই নিজেকে একটু ভালোবাসার খোঁজে। কিন্তু সে কথা আর কে বোঝে?'
     ইশানদাকে বলব কিছু? তারপর ভেবেছিলাম নাহ্ আমার বলা হয়ত ঠিক হবে না। এই চিঠি হয়ত বেচারা আমাকে একলা মনের চিলেকোঠা থেকে গোপনে লিখেছে। কেন যে কিছু করল না কথাবৌ? দিব‍্যি সুন্দর গল্প,কবিতা লিখতে পারত। নাকি ইশানদাই আপত্তি করেছে কিছু করতে। আমার যে অসুখী দাম্পত‍্য সে কথা সবাই জেনে গেছে। তবে সুখী দাম্পত‍্যের খাঁজে খাঁজে এত শ‍্যাওলা যে কখন জমে কে জানে? কী লাগে এটুকু ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতে? হয়ত একটু ভালোবাসা আর ভালো কথা কিংবা মন ভালো নেই সেই বিকেলগুলোতে একটু ঘুরে আসা টুক করে। দাম্পত‍্যের ফ‍্যাকাসে হয়ে যাওয়া ক‍্যানভাসে রঙ ভরতে হয় নিজেদেরই,তাহলেই আবার ঝকঝকে হয় পুরোনো শ‍্যাওলা ধরা ভালোবাসার বাড়িটা একটু যত্ন পেয়ে।

    ঠিক করেছিলাম এবার কলকাতা গিয়ে কথাবৌয়ের কাছে যাবো। ইচ্ছে ছিল পারলে একটা দিন সারাদিন ওদের সাথে কাটাবো,মন ভালো হবে হয়ত আমারও। একটু উঁকি দিয়ে দেখার ইচ্ছে ছিল সুখী গৃহকোণের ফাঁকে আমার কথাবৌয়ের একলা মনটার কষ্টগুলোকেও। 
আমার কথাবৌ যার অসুখে ইশানদা ব‍্যাকুল হয় না,যে ছেলের ফোনে মা ডাক শোনে না। যার দিকে কেউ নাকি ভালোবাসায় তাকায় না। যার কথা কেউ ভাবে না,যে একলা মনে গুমরে কাটায় সারাদিন.. কেন এমন বদল হল? কে বদলে গেছে জানতে বড় ইচ্ছে করে। তবে জানা আর হয়নি। আমি কলকাতায় গেছিলাম ঠিকই কিন্তু কথাবৌয়ের সাথে আর কথা বলার সুযোগ হয়নি। তাকে দেখেছিলাম কিন্তু তার চোখের কোণে হাসি দেখিনি বরং কথা বলতে না পারার দুঃখে হয়ত চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়েছিল ফোটা ফোটা জল।
   বোনের কাছ থেকে শুনেছিলাম ভোরবেলা উঠে কখন যে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল কথাবৌ তা আর কেউ জানতে পারেনি। ইশানদা সেদিন রাতে ছিল না তার একদিন আগে বন্ধুদের সাথে কোথায় যেন বেড়াতে গেছিল। কাজের লোক এসে অনেক বেল বাজিয়ে দরজা না খোলাতে পেরে শেষে এখানে এখানে ফোন করে দরজা ভাঙিয়েছিল। ইশানদাও পৌঁছেছিল তবে কথা বৌ ততক্ষণে হসপিটালে, ডঃ বলেছে সেরিব্রাল অ্যাটাক। প্রায় সাতদিন বাদে চোখ খুলেছিল কথাবৌ কিন্তু তারপরের একুশ দিন আর কথা বলেনি।
         হাঁফিয়ে উঠেছিল কাজের বৌ সন্ধ‍্যাও একটা সময় কথাবৌকে না পেয়ে। বলেছিল,'ও মা গো বাড়িটা যে ভূতের বাড়ি হয়ে গেছে গা। একটা সময় আমিই বলতুম ও বৌদিমণি এবার চুপ যাও। কত কী বলে যাও সারাক্ষণ,অত আমি মাথাতে রাখতে পারিনে বাপু। এই শুনি এই ভুইলে যাই। আচ্ছা তুমি কেন রেডিওতে যাওনি গো। সারাদিন ওপারে বকবক করতে,এ মাথায় বসে লোকজন শুনত।'
   কথাবৌ নাকি উত্তর দিত ,' আরে সে তো একটা সময় চেষ্টা করেছিলাম আমার বাবার উদ‍্যোগেই। এতদিনে সেটা হয়েও যেত গো।  তা তোমার দাদা তো ক্ষেপে লাল। আমি বেরোলে ছেলেকে দেখবে কে? এই করে আর কিছু হল না। এখন সবাই বেরোচ্ছে,ঘুরছে নিজের মত আর আমি বন্দী ঘরে।'
     বকবক করা বৌদিমণি একদম চুপ করে গেছিল একটা সময়। সন্ধ‍্যাদি বৌদিকে হসপিটালে দেখতে গিয়ে চোখ মুছে ফিরে এসেছিল। বোনের কাছে শুনেছি কথাবৌ নাকি সন্ধ‍্যাদিকে প্রায় বলত মেয়েমানুষ নাকি সংসারে একটু ভালো কথা আর ভালোবাসা চায়। কিন্তু বিনিপয়সায় পাওয়া সে জিনিস তবুও বড়ই অমূল‍্য । মানুষ তা দিতে নাকি কিপ্টেমি করে তাই বড় ব‍্যথা জমে মনে। কেউ সইতে পারে কেউ পারে না।
     আমিও পৌঁছেছিলাম দর্শকদের দল ভারী করতে একদিন হসপিটালে। কেন যেন মনটা ভীষণ কেঁপে উঠেছিল। এই কথাবৌকে তো একদিন আমি গিয়েই পছন্দ করেছিলাম ইশানদার জন‍্য। তবে কথাবৌ মন জিতে নিয়েছিল আমারও,কে জানে ভগবান হয়ত কখনও জোড়া সাজাতেও হিসেব গুলিয়ে ফেলেন। তাই হয়ত কথাবৌ আর ইশানদার ম‍্যাচিং ঠিকঠাক হল না। বা হয়ত সবই ঠিক ছিল কোথাও একটা অভিমান জমেছিল যা আর গললো না। তবে আমিই বা কে এত কিছু ভাবার?
      একটুখানি সুযোগ পেয়েছিলাম ভেতরে যাবার। চোখ বুজে শুয়েছিল কথাবৌ,চারদিকে কত মেশিন লাগানো। তবে শুনলাম এখন কিছুটা ভালো কিন্তু কথা বলতে পারছে না। ভারী মন নিয়ে আমি চলে যাবো বলেই পা বাড়িয়েছি,হঠাৎই চোখ খোলে কথাবৌ। আমি একটু এগিয়ে যাই,চোখ দুটো কেমন যেন জ্বলে ওঠে এক মুহূর্তের জন‍্য তারপরেই কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি নামে চোখ বেয়ে। আমাকে দেখে খুব কষ্টে হাত নাড়ে। পরে বুঝেছিলাম সেদিন হয়ত বলতে চেয়েছিল বন্ধু বিদায়..
       ভেজা চোখে ভালো হয়ে যাবার আশ্বাস দিয়ে আমি পা বাড়িয়েছিলাম দরজার দিকে। ইশানদার ঘাড়ে হাত রেখে জানতে চেয়েছিলাম,আগে কোন সমস‍্যা হয়নি? হঠাৎই এমন হল? মানে সুগার প্রেসার ছিল?
    -' ঠিকই ছিল তো,বুঝিনি আগে কিছু। কই বলত না কিছু তেমন করে।ভীষণ মুডি হয়ে গেছিল আজকাল। হঠাৎই হল এমন।'
-' ছেলে আসেনি?'
 -' পরীক্ষা চলছে,আসবে শেষ হলে।'
    তবে কথাবৌ আর বেশি বিরক্ত করেনি কাউকে একদিন ভোরে টুপ করে ঝরে পড়েছিল শরত কালের শিউলির মত জীবন বৃক্ষ থেকে। তবে তার কানে কানে কেউ বলেনি আবার এসো মা,হয়ত বা অনেকদিনের টানাপোড়েন থেকে মুক্তি পেয়ে বেঁচেছিল ইশানদাও।
    আমি দেখে মনে মনে আপশোষ করে ভেবেছিলাম এই হয়ত ভালো হল। কথা নাম যার সে কী কথা হারিয়ে বাঁচে? বয়ে যাওয়া গঙ্গার দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম হয়ত কত গল্পই ছিল আমার তার সাথে কিন্তু কিছুই হল না।


          অনেকদিন বাদে আবার কলকাতা আসছি, সামনেই পুজো। আজকাল আমি একটু লেখালেখি করি। আসলে একা থাকি তো,মনের মধ‍্যে জমে থাকা দমবন্ধ শব্দগুলোকে মুক্তি দিই সাদা পাতায়। একটা বইয়ের মলাট খোলার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা। কলকাতা এখন আর আমায় টানে না বরং ভারী লাগে এখানকার আকাশ বাতাস। যাক ওদিকের কিছু কাজ সেরে,বাড়িতে এলাম। সেটাও কেমন যেন ভূতের বাড়ি হয়ে গেছে অবহেলায়,মা বলতেন মানুষই উৎপাত আবার মানুষই লক্ষ্মী। কথাটা বোধহয় সত‍্যি ছিল তাই তো অনেক উৎপাত সওয়া বাড়িটা আজ মানুষের অভাবে লক্ষ্মীছাড়া,বোন মাঝেমধ্যে এসে শ্রী ফেরায় কিছুটা। যাক ইশানদাকে একবার দেখে যেতেই হবে এবার বারবারই মনে হয়েছিল। অনেকদিন ওর সাথে কথা হয়নি। ওদের ফোনটাও বোধহয় কথা ভুলেছে,ফোন করলে শুধু পি পি করে। আর ইশানদার অন‍্য কোন নম্বর আমার কাছে ছিল না।
       ইশানদাকে বাড়িতে পাবো ভেবেই একদিন সাঁঝবেলার পর হাজির হলাম গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অনেক পুরোনো কথা মনে হল। ইশানদা বেশ কয়েকবছর আগেই এই ফ্ল্যাটটা কিনেছিল ছেলের স্কুলের কাছে হবে বলে। শেষে তো ছেলে হস্টেলেই চলে গেল। বেল টিপে দাঁড়িয়ে থাকি। আজ কেউ আর ভেতর থেকে কলকলিয়ে ওঠে না..কে? ওহ্ আই হোলটা গেছে মনে হয়। তারপর আমাকে দেখেই উচ্ছ্বাস ওমা! আমার দেবর যে...তা হঠাৎ পথ ভুলে এ পাড়ায়! এসো এসো ভেতরে। আর তারপর বন্ধ কোকের শিশি খুলে শব্দরা ছিটকে আসত তার সাথে হাসির ফেনা...
    পরিচিত মুখ দেখতে পাই। আমাকে দেখে সন্ধ‍্যাদি বলে,' ও তুমি এয়েচো,এসো এসো। কতদিন বাদে এলে।'
-' ইশানদা নেই?'
-' হ‍্যাঁ আছে তো ঐ ঘরে বোধহয়। যাও আমি চা করতিছি।'
   ঘরের দরজাটা একটু ভেজানো। একটা সময় কত আড্ডা দিয়েছি কথাবৌয়ের শোবার ঘরে,তবুও আজ কেমন যেন পা আটকে গেল। গলাটা ঝেড়ে বললাম ইশানদা... 
  দরজা খুলে যাওয়াতে যাকে দেখলাম ভারী অবাক লাগলো। ইশানদাকে চেনাই যায় না।
-তোমাকে এ কী বেশে দেখছি বলতে যাবো,হঠাৎই চোখটা আটকে গেলো সামনের ছবিটায়। অদ্ভুত জীবন্ত ছবিটা যেন ডাকছে আমাকে ঘরে এসো ওখানে দাঁড়িয়ে কেন ভাই? কত কথা জমে আছে,আজ অনেক গল্প হবে।
    একটা টাটকা জুঁই ফুলের মালা জড়ানো ছবিটা থেকে ভেসে আসছে ফুলের সৌরভ। হঠাৎই মনে পড়লো এই গন্ধটা কথাবৌকে যেদিন আমরা দেখতে গেছিলাম সেদিন পেয়েছিলাম ওর বিনুনীতে জড়ানো মালা থেকে। সারা ঘর ধূপকাঠির চন্দনের গন্ধে ভাসছে,মনে পড়ল দুটোই বৌদির খুব প্রিয় ছিল।
  ঘোর কাটে ইশানদার ডাকে,' আয় পিন্টু,এই খাটের কোণেই বোস। এটাই তো তোর প্রিয় জায়গা ছিল তাই না? আর কথা বসত ওখানে।'
-' তুমি এমন হয়ে গেছ কেন? মানে শরীর ঠিক আছে তো? আমি তো ভাবলাম তোমাকে বাড়িতে পাবো না এইসময়। হয়ত বন্ধুদের কাছে গেছো। তোমার নম্বরটা দিয়ো বুঝলে।'
  একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ে,না রে আজকাল আর যাই না। আসলে বাইরের লোককে আনন্দ দিতে আর নিজে আনন্দ পেতে গিয়ে কথাকে বড় একা করে দিয়েছিলাম। হয়ত ওকে আরেকটু সঙ্গ দেওয়া দরকার ছিল আমার। কেন যেন একদমই বুঝতে পারিনি কথা একটু একটু করে কখন যে এতটা একা হয়ে গেছিল। হ‍্যাঁ আমি ঐ মন ভালো করতে এখন মাঝেমধ্যে রামকৃষ্ণ মিশনে যাই। আসলে কথাটা একা একা বাড়িতে থাকতে যে কত মন খারাপ করত সেটা অনুভব করি। এভাবে সারাদিন ও একা থাকতে পারে নাকি? মানে কিভাবে যে থাকত এখন বুঝতে পারি।তাই যতটা পারি বাড়িতেই থাকি রিটায়ার করে। বলতে পারিস প্রায়শ্চিত্ত করছি।'
   আমার অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়। যে ইশানদা কথাবৌকে জ্বর অবস্থায় সন্ধ‍্যাদির কাছে রেখে বন্ধুদের সাথে কেদারনাথ চলে যায় তারপর নানা কারণে আর তেমন খোঁজখবর নেয় না, সে হঠাৎ কথাবৌয়ের চলে যাওয়ার পর এত বদলে গেল কী করে? বরং এখন তো তার অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করার সময়।
    সন্ধ‍্যাদি অনেকক্ষণ চা দিয়ে গেছে,আমি বোঝাই ইশানদাকে কথাবৌ আর নেই,সুতরাং এখন তাকে সঙ্গ দেওয়ার আর কোন দরকার নেই। বরং তুমি বাঁচো ছেলের জন‍্য। ইশানদা হাসে,' না রে ও বেশ আছে,আমার ছেলেই তো তাই নিজেরটা ভালোই বুঝতে শিখেছে। মেতে আছে নিজের কাজকর্ম আর ভালোলাগা নিয়ে। মানে যেমন আমিও ছিলাম। তাছাড়া সে এখন অনেক বড় হয়েছে তো,হয়ত কিছুদিন বাদে বিয়েও করবে।'
    সেদিন রাতে আমার আর ফেরা হয়নি বাড়িতে, কোথা দিয়ে যে গল্পে গল্পে ভোর হয়ে গেছিল বুঝতেই পারিনি। অবশ‍্য বাড়ি না ফিরলেও তাতে কিবা এসে যায়? সেখানেও তো কেউ নেই আমার অপেক্ষায়। কথাবৌ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও আমাদের মাঝে সারাক্ষণ রয়ে গেলো তার কত না বলা কথা নিয়ে। আর নবনীতার সাথে তো কবেই আমার কথা ফুরিয়েছিল তাই আমি হয়ত সাদা পাতায় এখনও দাম্পত‍্যের জাবর কাটলেও সে আমার সাথে আর যোগাযোগ করেনি।
 সন্ধ‍্যাদি আমাদের খাবার গুছিয়ে রেখে বাড়ি চলে গেছে। একটা অদ্ভুত রাত আমার কেটে গেছিল ইশাদার সাথে। তবে কথাবৌ অলক্ষ্যে হাজির ছিল হয়ত কারণ ইশানদা পড়ে শোনাচ্ছিল আমাকে তার সুন্দর হাতের লেখায় লেখা অভিমান ভরা ডায়েরিখানা। ইশানদা যা খুঁজে পেয়েছিল অনেকদিন বাদে আলমারির একটা কোণা থেকে।
     ইশানদা আমাকে পড়ে শোনাতে চাওয়াতে আমি বাধা দিয়েছিলাম থাক না দাদা। কথাবৌ যে কথা তোমাকেও বলেনি কখনও তা কী হবে শুনে?
-' না রে বলতে চেয়েছিল,হয়ত বা এই ছোট্ট ছোট্ট চাওয়াগুলোকে আমি কোনদিনই মূল‍্য দিইনি বলেই সে আর কোনদিনই কথা বলেনি। জানিস হসপিটালে আমি তাকে দেখতে গেলে সে বোধহয় অভিমানে চোখ বুজে শুয়ে থাকত।'
      ইশানদা পড়ছিল একটার পর একটা পাতা। খুবই ছোটছোট অভিমান ভরা চাওয়া আর একটু ভালো কথা শুনতে পাওয়ার গল্প। হঠাৎই মনে হল সব মেয়েরাই কী এমন? হয়ত না,কথাবৌ একটু বেশিই বোধহয় ভালোবাসা আর ভালো কথার কাঙাল ছিল। একলা সন্ধ‍্যেগুলোতে যার খুব মনকেমন করত,একলা বিছানায় শুয়ে যার মন উড়ে যেত ইশানদার কাছে দূরে কোথাও। যেখানে ইশানদার বন্ধুদের সাথে গল্পের মাঝে কোথাও ছিল না কথাবৌ। বরং আরও বেশি করে ছিল নিজের পুরুষত্ব জাহির করার চেষ্টা ছিল প্রতিনিয়ত কথাবৌকে আঘাত করে। আমারও তো বৌ ছিল তবে সে কথাবৌয়ের মত ছিল না,বেশি মনোযোগী হলে তার প্রতি আদিখ‍্যেতা মনে হত তার। কে জানে আবেগের স্রোতে ভেসে যাওয়া মনগুলো হয়ত কখনই একটা ভালোবাসার ভেলা পায় না। 
      ইশানদার চোখ ঝাপসা,গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। চুপ করে বসে থাকে ডায়রির পাতা বন্ধ করে। আমার গলার কাছটা টনটন করে কিছু বলতে পারি না। শুধু একজন যেন মিটিমিটি চোখে হাসি চাপে ঠোঁটে আর বলে,' ইশ্ তোমার এই দাদাটাকে যদি পেতাম আগে তাহলে যমের সাথেও ঝগড়া করে বলতাম এত তাড়াতাড়ি যাব না কিছুতেই।'
                    ভোর রাত্রে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। চোখে রোদ লাগতেই চমকে উঠি। ইশানদাটা ঘুমোচ্ছে অঘোরে,কাল সারারাত বেচারা ঘুমোয়নি। হয়ত এমন অনেক রাতই ওর বিবেক ওকে জাগিয়ে রাখে। আমার তারিখটা মনে ছিল না,এমনিতেই এসেছিলাম কাল। পরে শুনেছিলাম কাল নাকি কথাবৌয়ের মৃত‍্যুদিন ছিল। 
ফটোটার দিকে চোখ পড়ে যায় আবার। মনে মনে বলি যে কথা আমাকে বলতে চেয়েছিলে অথচ বলনি সব জানলাম হঠাৎই তোমার শোবার ঘরে এসে,শুধু তোমার মুখ থেকে শোনা হল না। তোমার কথামালাকে সাজাবো ভেবেছি একটা বইয়ে,অক্ষরেরা ছুঁয়ে যাবে তোমার সব না পাওয়াকে। কী বলছ লিখব তো তোমায় নিয়ে? এখন ভাবি তোমার সাথে পরকীয়া করলে মন্দ হত না। ইশানদার অবহেলায় ফেলে যাওয়া ভালোবাসাকে আমি ধরে রাখতাম মুঠোতে যত্নে। কী ভাবছো দুষ্টু হাসি হেসে? আচ্ছা বেশ আগামী জন্মে আমার প্রেমিকা হয়েই না হয় এসো....’
   সব অভিমান শেষে,ভালো থেকো কথাবৌ তারাদের দেশে।
সমাপ্ত:-


        

        

          

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...