Skip to main content

মহালয়ার গান আর পাঠ

নববর্ষের সূচনা হতে না হতেই আমরা মেতে উঠি শারদোৎসবের আগমনের আনন্দে। কেন যেন মনে হতে থাকে এই তো আর হাতে গোনা কয়েকটা মাস তারপরেই মা আসছেন এই ধরাতে। এই ধরিত্রীর পুত্র কন‍্যারা অধীর আগ্ৰহে অপেক্ষা করে মায়ের হাসিমুখ দেখে নিজেদের সব দুঃখ আর অপূর্ণতা ভুলে যেতে। গ্ৰীষ্মের পর আসে বর্ষা আর বর্ষার মন কেমন করা কালো মেঘ কেটে যেতেই আকাশে ভাসে নীল মেঘের ভেলা। প্রকৃতির বুকে ফোটে সাদা কাশফুল আর পাড়াতে পাড়াতে শুরু হয় বাঁশের কাঠামো বেঁধে পুজো প‍্যান্ডেল বানানোর প্রস্তুতি। বর্ষায় ভিজে সবুজ হয়ে ওঠা শিউলি গাছ শরতের আগমনে খুশিতে টুপটাপ করে শিশির মাখা ভোরে ঝরিয়ে দেয় শিউলি ফুল মাটির বুকে। শিউলি ঝরানো শিশির মাখা ভোরে আলতা মাখা রাঙা চরণে মা দুর্গা আসবেন ধরায় সেই আনন্দে আমরা মেতে উঠি সবাই। শরতের আকাশ,শিউলির সুবাস আর কাশফুলের দোলায় আমরাও পাই পুজো পুজো গন্ধ,আর সেই সুবাসটুকু মেখে খুশিতে ভরে ওঠে মন....

  গান:- আয়রে ছুটে আয় পুজোর গন্ধ এসেছে।

 স্কুলের ক্লাসে অঙ্ক করতে গিয়ে ছোট পড়ুয়াদের মন হয়ে ওঠে আনমনা। পুজো পুজো গন্ধে তারাও বড় চঞ্চল তাই অবাধ‍্য চোখ বারবারই চলে যায় জানলার দিকে। স্কুলের উল্টোদিকে প‍্যান্ডেল সেজে উঠছে লাল সাদা কোচানো কাপড়ে। ঐ প‍্যান্ডেলেই কদিন বাদেই আলো করে আসবেন মা দুর্গা। আলোয় আলোয় সেজে উঠবে চারদিক কত আনন্দ আর খুশির ছোঁওয়া মায়ের ঐ মর্ত‍্যে আসার চারদিনকে ঘিরে। আনমনা ছাত্রীকে ইচ্ছে করে না বকুনি দিতে আমারও,একদিন তো আমাদেরও ছেলেবেলা ছিল। কত মিঠে স্মৃতি মনে ভাসতে থাকে ছোটবেলার দুর্গাপুজোকে ঘিরে। শ্লেটে নামতা লিখতে লিখতে হঠাৎই মন হত আনমনা, এক ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করত দুর্গামন্ডপে। মাকে বলতাম, মা...দুগ্গার চোখ কখন আঁকা হবে গো? বাবা রেডিও খুললে হঠাৎই বেজে উঠত মন হারানো সেই গানটা। মা গুনগুন করে গলা মেলাতেন সেই গানে। মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় শোনা সেই গান আর পড়ানো ভুলে আনমনা হয়ে হারিয়ে যাই আমিও......

গান:-এক এক্কে এক দু এক্কে দুই

  মায়ের দনুজদলনী,ত্রিনয়নী,ভয়তারিণী,শান্তি প্রদায়িনী রূপ। কোথাও যেন আমাদের চিন্ময়ী মা আর মৃণ্ময়ী মা মিলেমিশে একাকার হয়ে যান। মায়ের শীতল স্পর্শ যেমন ভুলিয়ে দেয় সব কষ্ট তেমন জগন্মাতা দুর্গা আমাদের কাছে আসেন শক্তিদায়িনী রূপে। একদিকে তিনি যেমন শিবের ঘরণী অন‍্যদিকে তিনিই মহিষাসুরমর্দিনী। অশুভ শক্তির বিনাশকারিণী মা দুর্গা তাই মাকে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে প্রণাম করে আমরা চেয়ে নিই শক্তি,ভক্তি,রূপ,যশ,মান,মোক্ষ সবটুকুই। মায়ের দেওয়া অভয় আর শক্তি দিয়ে আমরা জয় করতে চাই সব বিপদ বাধা আর নিধন করতে চাই মানবরূপী অসুরদের। মাগো তোমার এই দনুজদলনী রূপে এই পৃথিবীর সমস্ত কালিমা মুছিয়ে দিয়ে শুভদা রূপে এসে আলোয় আলোয় ভরিয়ে দাও ধরাকে এই প্রার্থনাই করি।

গান:- ও মা দনুজদলনী।

যখন অন‍্যায় হয় ঘোরতর এই ধরায়,পাপীদের পাপের ভান্ডার হয় পরিপূর্ণ তখন অসুর নিধনে আসেন মা দুর্গা সমস্ত দেবতাদের প্রতিনিধি হয়ে। তাঁর ভুবনমোহিনী রূপের আড়ালে থাকে বজ্রনিনাদ যার হুংকারে কেঁপে ওঠে স্বর্গ,মর্ত‍্য আর পাতাল। তিনিই দুর্গা,তিনিই কালী আবার তিনিই মহাবিদ‍্যা আদ‍্যাশক্তি।
শক্তিরূপে তুমি এসো মা,এ বিশ্বব্রম্ভান্ড আলো করে আমাদের ঘরের মেয়ে হয়ে তুমি এসো মা। কারও কাছে তুমি মাতা,কেউ বা তোমায় দেখে কন‍্যারূপে। তুমিই আনন্দদায়িনী,তুমিই জ্ঞানদায়িনী,তুমি অহংনাশিনী,তুমিই রিপুদলনী। তোমার বিপন্ন সন্তানদের রক্ষা করতে তুমি এসো,যুগে যুগে তুমি এসো মা। মাগো বন্দনা করি তোমায় এই শারদপ্রাতে ভুবনমোহিনী রূপে এসো এই ধরার আঁধার ঘোঁচাতে...

গান:-ভুবনমোহিনী বন্দী তোমারে।

আশ্বিনের শারদপ্রাতে এই ধরাতে পড়ুক মায়ের পদচিহ্ন। মা দুর্গার পদস্পর্শে পবিত্র হোক এই পৃথিবী। মুছে যাক দুঃখ,ভয়,পাপীদের হোক বিনাশ। তোমার ত্রিনয়নের আলোর ছটায় এই পৃথিবী হোক আলোকিত। তোমার স্নেহসিঞ্চিত হস্তস্পর্শে সুজলা,সুফলা হোক এই পৃথিবী। দুর্গা তুমি এসো তোমার সন্তানদের দুর্গতিনাশিনী জগৎজননী  মাতৃরূপে। মাগো তোমার শক্তি ছড়িয়ে দাও তোমার নিপীড়িত সন্তানদের মাঝে তারা যেন সকল বিপদ বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে আসতে পারে তোমারই মত ত্রিশূল হাতে আর করতে পারে অত‍্যাচারীর নিধন। আমরা যেন জোর গলায় বলতে পারি...

"আমার দুর্গা আত্নরক্ষা শরীর পুড়বে, মন না।
আমার দুর্গা নারী গর্ভের রক্ত মাংস কন্যা।
আমার দুর্গা গোলগাল মেয়ে, আমার দুর্গা তন্বী।
আমার দূর্গা কখনও ঘরোয়া, কখনো আগুন বহ্নি।

আমার দূর্গা ত্রিশূল ধরেছে, স্বর্গে এবং মর্ত্যে।

আমার দুর্গা বাঁচতে শিখেছে নিজেই নিজের শর্তে।"

গান:- দুর্গা দুর্গে দুর্গতিনাশিনী


হিমালয় কন‍্যা উমা আমাদের ঘরের মেয়ের মতই তাই তাঁর আগমনে এই ধরিত্রী সাজে আনন্দে আর আমাদের মনে আসে খুশির জোয়ার। গিরিনন্দিনীর আগমনে দুঃখ,অভাব ভুলে আমরা মেতে উঠি বাঙালীদের শ্রেষ্ঠ উৎসব শারদোৎসবের আনন্দে। সন্তানদের নিয়ে মা আসেন পিতৃগৃহে,সেই আনন্দে ভাসি আমরা সবাই। বাঙালীর প্রতি ঘরে ঘরেই মা বাবা অপেক্ষায় থাকেন তাদের কন‍্যা ঘরের দুর্গার জন‍্য।  এতক্ষণে হয়ত কৈলাশে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। আমরা গুনছি অপেক্ষার প্রহর আর কান পেতে শুনছি মায়ের পদধ্বনি। আকাশের নীল মেঘের ভেলায় ভেসে ভেসে সুখবর আসে কাশের বনে ফিসফিসিয়ে মা আসছে। শিবঠাকুরের খেয়ালখুশি নাকি মায়ের হল শখ এবার আগমন আর গমনে দুইয়েই থাকবে ঘোটক। শুভ অশুভ জানি না মা,ভালোই যেন হয়। তোমার আশীষে এই পৃথিবীর সব হোক মঙ্গলময়..

অপূর্ণ সব স্বপ্নগুলো সত‍্যি করে দাও মা,

পাপীদের হোক শাস্তি,পাপের যেন হয় না ক্ষমা।

আলোয় ভরুক এই পৃথিবী, দূর করো সব কালো,

তোমার আশীষ মাথায় নিয়ে সকলে থাক  ভালো।

গান:- অয়িগিরি নন্দিনী।

আমার মনভাবনার সৈনিকেরা যুদ্ধ করে মৃত...

তবুও কখনও দাঁড়িয়ে থাকি ঝাঁসীর রাণীর মত।


রীণাকে পাঁচটা ব্লাউজ আর মেখলা দিলাম সেলাই করতে।

শোনো শোনো বন্ধুগণ শোনো দিয়া মন

জয়ের বিয়ের আয়োজন প্রায় সমাপন

আইবুড়ো ভাত আগামীকাল একুশের দুপুরে..

সবাই এসো সেজেগুজে আর খেয়ো পেটপুরে,

বিকেলে যাবো গঙ্গা আমন্ত্রণে এয়োরা সাথে থেকো,

 গায়ে হলুদ বাইশ তারিখে সবাই হলুদ মেখো...

হলুদের পরে একটু সবাই করবে তাড়াতাড়ি,

জলদি জলদি খেয়ে,সেজে যাবে কনের বাড়ি।

বিয়ে পর্ব মিটতে হয়ত হতে পারে রাত্রি..

কুছ পরোয়া নেই তাতে তোমরা তো বরযাত্রী।

বাসী বিয়েতে যারা যারা মুখ‍্য ভূমিকা নেবে..

তারা সেদিন ফিরবে না,কনের বাড়িতে থেকে যাবে।

আমাকে তো বাড়ি ফিরেই করতে হবে আয়োজন..

ছেলে সাথে লক্ষ্মী আনবে,তাকে করতে হবে বরণ।

তেইশের সন্ধ‍্যেতে বৌ আসবে,সবাই থেকো সাথে..

শ্বশুরবাড়িতে রাখবে চরণ,পা ডুবিয়ে আলতাতে।

চব্বিশের দুপুরে রীতি মেনে ঘরোয়া বৌভাত..

বৌমার দেওয়া ঘি ভাতে সাজবে সবার পাত।

রাতের অনুষ্ঠানে থাকবে একটু নাচ আর গান,

খুশি থেকো সবাই,ভরিয়ো মন প্রাণ।

খাওয়া শেষে সবিই


গায়ে হলুদের পর্ব মেটার আগেই তাড়াহুড়ো শুরু হয়ে গেল কারণ গায়ে হলুদ নিয়ে আমার আপনজনেরা যারা যাবে তারা ফিরে এসে আবার বরযাত্রী যাবে। এই ব‍্যাপারে আমার দুই ননদাই,আর দেওর জাকে পাঠালাম। একজন মহিলা না গেলে ভালো দেখায় না তাই জাকে পাঠালাম একটু জোর করে দাবী খাটিয়েই। একটা কথা না বললে খুব অন‍্যায় হয় যে প্রত‍্যেকে এগিয়ে এসেছে যাকে যা বলেছি তা সুন্দর করে হাসিমুখে করেছে। মনে মনে কষ্ট হল এটা ভেবে যে জা কখন তৈরী হবে,ছেলেরা চটজলদি তৈরী হতে পারে কিন্তু ওর তো একটু সময় লাগবে। তবুও ও হাসিমুখেই রাজি হয়ে গেল। ননদরা জলখাবার খেয়ে বাড়ি চলে গেল,একটু সাজুগুজু করবে বলে। আমার বাড়ির ভদ্রলোকের টেনশনের জন‍্য আমি আর সেদিন খোঁপা বাঁধার মেয়ে আনতে পারিনি। তার কড়া হুকুম ছিল,সাজ হোক না হোক পাঁচটা পনেরোতে ছেলে বেরোবে তারপর সাড়ে পাঁচটায় আমরা। দেরী যে করবে তাকে ফেলে দিয়ে বাস চলে যাবে। জলখাবারে মন দিতে পারলাম না,তাড়াহুড়ো করে ছুটলাম একটু বেলা হতেই ভাত খেতে। কারণ স্বামীর চোখে দাগী আসামী আমিই,কিছু বললেই ক্ষেপে যাচ্ছে প্রচন্ড। আমার আবার অনেক দায়িত্ব,ছেলের সব গুছিয়ে দিতে হবে। মেয়ের জিনিস একজায়গায় বের করে দিতে হবে। বরেরটাও হাতের কাছে রাখতে হবে। যদিও ডেট লিখে সবার সব কিছু আগে থেকেই প‍্যাকেট করেছিলাম যাতে কোন অসুবিধা না হয়। কালিয়াগঞ্জ থেকে মাসিমা এসেছিলেন উনি বরযাত্রী না যাওয়াতে মনে হল মায়ের মত কারও কাছে সংসারের পুরো দায়িত্ব দিয়ে বেরোবো। ছেলের বিয়ের দুদিন আগে মা,মেয়ে চুলটা কুচিয়ে নিয়েছিলাম ঐ যাকে ক্রিম্পিং না কী যেন বলে। ঐ দিয়ে মোটামুটি ম‍্যানেজ করে নিলাম সাবেকি সাজে বিয়েবাড়ি। একগাদা ফুলের মালা আনিয়ে রেখেছিলাম আমার দেওরকে দিয়ে সবাইকে মালা সাপ্লাই করতে লাগলাম। আমার মেয়ে নিজের সাজের ফাঁকে সবাইকে সাজাতে লাগলো। মেয়েটাকে সত‍্যিই তখন আদর করতে ইচ্ছে করছিল। আমাকেও ঝাড়পোছ করে চটজলদি সুন্দরী করে দিল,বকাও খেলাম ছটফট করছি বলে। 

গায়ে হলুদের তত্ত্ব দিয়ে আমাদের লোকজন ফিরলো,বেচারারা কোনরকমে একটু ঝোলভাত খেয়েই ছুটলো রেডি হতে। এদিকে মেয়ের বাড়ির দুজন এসেছে বর নিতে তার আগেই আমি রেডি হয়ে ছোটাছুটি করছি। সুব্রতদা আর বুজুকে বললাম তোমাদের ছেলেকে সাজাও। বন্ধুরা ছোটাছুটি মধ‍্যেই আমাকে ছিনতাই করে বললো,বোস একটা দুটো ছবি তুলি। আর ছবি তোলা ভয়ে কাচুমাচু মুখ করে বসলাম,এখনি হয়ত বকা খাবো বরের কাছে। তারপর একটা অদ্ভুত মনখারাপ গ্ৰাস করল আমাকে,কেন জানি না সেটা হয়ত শেয়ার করতে পারব না। ওরা ছেলে আশীর্বাদ করল,আমি ছেলেকে আদরে জড়িয়ে চুমু খেলাম বললাম খুব ভালো থাক বাবা।

গায়ে হলুদের পর্ব মেটার আগেই তাড়াহুড়ো শুরু হয়ে গেল কারণ গায়ে হলুদ নিয়ে আমার আপনজনেরা যারা যাবে তারা ফিরে এসে আবার বরযাত্রী যাবে। এই ব‍্যাপারে আমার দুই ননদাই,আর দেওর জাকে পাঠালাম। একজন মহিলা না গেলে ভালো দেখায় না তাই জাকে পাঠালাম একটু জোর করে দাবী খাটিয়েই। একটা কথা না বললে খুব অন‍্যায় হয় যে প্রত‍্যেকে এগিয়ে এসেছে যাকে যা বলেছি তা সুন্দর করে হাসিমুখে করেছে। মনে মনে কষ্ট হল এটা ভেবে যে জা কখন তৈরী হবে,ছেলেরা চটজলদি তৈরী হতে পারে কিন্তু ওর তো একটু সময় লাগবে। তবুও ও হাসিমুখেই রাজি হয়ে গেল। ননদরা জলখাবার খেয়ে বাড়ি চলে গেল,একটু সাজুগুজু করবে বলে। আমার বাড়ির ভদ্রলোকের টেনশনের জন‍্য আমি আর সেদিন খোঁপা বাঁধার মেয়ে আনতে পারিনি। তার কড়া হুকুম ছিল,সাজ হোক না হোক পাঁচটা পনেরোতে ছেলে বেরোবে তারপর সাড়ে পাঁচটায় আমরা। দেরী যে করবে তাকে ফেলে দিয়ে বাস চলে যাবে। জলখাবারে মন দিতে পারলাম না,তাড়াহুড়ো করে ছুটলাম একটু বেলা হতেই ভাত খেতে। কারণ স্বামীর চোখে দাগী আসামী আমিই,কিছু বললেই ক্ষেপে যাচ্ছে প্রচন্ড। আমার আবার অনেক দায়িত্ব,ছেলের সব গুছিয়ে দিতে হবে। মেয়ের জিনিস একজায়গায় বের করে দিতে হবে। বরেরটাও হাতের কাছে রাখতে হবে। যদিও ডেট লিখে সবার সব কিছু আগে থেকেই প‍্যাকেট করেছিলাম যাতে কোন অসুবিধা না হয়। কালিয়াগঞ্জ থেকে মাসিমা এসেছিলেন উনি বরযাত্রী না যাওয়াতে মনে হল মায়ের মত কারও কাছে সংসারের পুরো দায়িত্ব দিয়ে বেরোবো। ছেলের বিয়ের দুদিন আগে মা,মেয়ে চুলটা কুচিয়ে নিয়েছিলাম ঐ যাকে ক্রিম্পিং না কী যেন বলে। ঐ দিয়ে মোটামুটি ম‍্যানেজ করে নিলাম সাবেকি সাজে বিয়েবাড়ি। একগাদা ফুলের মালা আনিয়ে রেখেছিলাম আমার দেওরকে দিয়ে সবাইকে মালা সাপ্লাই করতে লাগলাম। আমার মেয়ে নিজের সাজের ফাঁকে সবাইকে সাজাতে লাগলো। মেয়েটাকে সত‍্যিই তখন আদর করতে ইচ্ছে করছিল। আমাকেও ঝাড়পোছ করে চটজলদি সুন্দরী করে দিল,বকাও খেলাম ছটফট করছি বলে। 

গায়ে হলুদের তত্ত্ব দিয়ে আমাদের লোকজন ফিরলো,বেচারারা কোনরকমে একটু ঝোলভাত খেয়েই ছুটলো রেডি হতে। এদিকে মেয়ের বাড়ির দুজন এসেছে বর নিতে তার আগেই আমি রেডি হয়ে ছোটাছুটি করছি। সুব্রতদা আর বুজুকে বললাম তোমাদের ছেলেকে সাজাও। বন্ধুরা ছোটাছুটি মধ‍্যেই আমাকে ছিনতাই করে বললো,বোস একটা দুটো ছবি তুলি। আর ছবি তোলা ভয়ে কাচুমাচু মুখ করে বসলাম,এখনি হয়ত বকা খাবো বরের কাছে। তারপর একটা অদ্ভুত মনখারাপ গ্ৰাস করল আমাকে,কেন জানি না সেটা হয়ত শেয়ার করতে পারব না। ওরা ছেলে আশীর্বাদ করল,আমি ছেলেকে আদরে জড়িয়ে চুমু খেলাম বললাম খুব ভালো থাক বাবা।



ছেলেকে নির্ধারিত সময়ে বের করলেও গাড়ি ছাড়তে ছাড়তে একটু দেরি হল। এগুলো তো বিয়েবাড়ির অঙ্গ,সেখানে কিছু উল্টোপাল্টা হবে না তা হয় নাকি? অবশেষে আমি সবাইকে নিয়ে বরযাত্রী বাসে। আমার বরকর্তা বর অন‍্য গাড়িতে চড়ে বসলেন। মোটামুটি সঠিক সময়ে পৌঁছে গেলাম সবাই কনের বাড়িতে। ছেলেকে বিয়েতে বসিয়ে ছেলের বাবার মাথা ঠান্ডা হল। ছেলের বিয়ে মাকে কেন দেখতে হয় না জানি না। জোর করে নিয়ম ভাঙতেই পারতাম। তবে একটা নিয়মের সাথে জড়িয়ে থাকে অনেকের মতামত হয়ত বা অকারণে ঘটা মঙ্গল আর অমঙ্গলও। সেই দায়ভার নেবার ইচ্ছে করল না জোর খাটিয়ে,তাই চিরাচরিত নিয়ম মেনে আমিও দেখলাম না বিয়ে।

       ছেলের বিয়ে মিটিয়ে,ননদ ননদাইদের হোটেলে পৌঁছে দিয়ে আমরা রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ‍্যে। ওখানে তখন হাড়কাঁপানো ঠান্ডা। ননদরা বাসী বিয়ে দিয়ে আসবে,ওদের যাতে কষ্ট না হয় তাই ওদের আলাদা থাকার ব‍্যবস্থা করেছিলাম। ছেলের সঙ্গী হয়ে থেকে গেলো ওর তিন ভাই,সত‍্যিই ছেলেগুলো এই কয়েকদিন যা করেছে তার কোন উপমা হয় না। ওরা থাকাতে আমি নিশ্চিন্তে মাঝরাত পার করে বাড়ি ফিরলাম।


Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...