পরনের টি শার্টটা এক ঝটকায় খুলে নিয়ে তাড়াতাড়ি প্যাডেড অন্তর্বাসটা পরে নিজের সুডৌল বুকটা আয়নাতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে হাসি পায় ওর নিজেরই। এদিকে ভাগিরথীয়া তাড়া দেয়,' আরে কতক্ষণ নিজের ঐ দুটো দেখবি শালা আরে না না শালী আয়নাতে টুকটুক করে,তাও যদি আসল হত। লে এবার চট করে রেডি হয়ে নে তো দেখি। শালা আমার হয়েছে যত মরণ এদেরকে লিয়ে। এদিকে পয়সাও চাই অন্যদিকে শুধু ছুক ছুক করা। নিজের বুকে নিজেই হাত বোলাচ্ছে দেখো কেমন করে? পিরিতের মানুষ পেলে তো ছিঁড়ে খাবি মনে হচ্ছে শালা। পয়সা কামাই করতে হলে লে জলদি। তোর হলে ওরা সাজবে, আরে আয়না তো একটাই। তারপর আবার ঘর ভাড়া ভী আছে।'
তাড়াতাড়ি শাড়িটা জড়িয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক পরে,চোখে কাজল এঁকে রেডি হয়ে নেয় পল্টন। এখন ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। দিব্যি মানিয়েছে ওকে এই বেশে। প্রথম প্রথম লজ্জা লাগলেও এখন আর লাগে না। তাছাড়া কে আর বুঝতে পারছে কলকাতা শহরের হাজার লোকের ভিড়ে পল্টন এখানে কী কাজ করে নিজের জীবিকা অর্জন করে। ভালোই রোজগার হয় ধর্মতলা অঞ্চলে। ভাগিরথীয়াকে কিছু টাকা অবশ্য দিতে হয়,বাকিটা নিয়ে বাড়ি ফেরে পল্টন। বাড়িতে অসুস্থ বাবার ওষুধের খরচ,সংসারের টুকটাক খরচ সবই চলে যায় ওর টাকাতে। বাকিটা আসে বাবার আর মায়ের ভাতার টাকায়। টাকাটা ভিক্ষার টাকার মতই তবুও ওদের মত সংসারে সেটার জন্যই অপেক্ষায় থাকে মা। আর পল্টন বি.এ পাস করে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরছিল। এমন ছেলেপুলে তো কত ঘুরছে অলিগলিতে। চাকরি না পেয়ে যখন এখানে ওখানে দরবার করছে আর সকালে কয়েকটা ফোর ফাইভের বাচ্চা পড়াচ্ছে তখনই হঠাৎ করে দেখা হয়েছিল স্কুলে বখে গিয়ে ক্লাশ এইটে পড়া ছেড়ে দেওয়া লাল্টুর সাথে।
-' আরেব্বাস তোকে তো চেনাই যায় না রে,চুলের কাটটা তো দারুণ। বাইক নতুন কিনেছিস বুঝি? কী করছিস এখন? দেখ না আমার যদি একটা কাজ..'
গলাটা আটকে এসেছিল পল্টনের।
-' আরে শালা,প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে চলেছিস,উত্তর দিতে দিবি তো? চল গঙ্গার ঘাটে গিয়ে বসি। ওখানে একটা ক্যাফে করেছে।'
কথায় কথায় জানতে পেরেছিল এই অদ্ভুত পেশাটার কথা। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মুখোশে মুড়ে কলকাতার পথে পথে ঘুরে রোজগার করা। প্রথম দিন নিজের ওপর নিজের ঘেন্না হলেও একটা সময় সমঝোতা করেছিল এই ভেবে যে জীবন গাড়ি চালাতে হলে যা কিছু একটা করতে হবে এই জীবন দর্শনের সাথে। তারপর থেকে কলকাতায় চাকরির নামে এসে সেজেগুজে পেশায় নেমে পড়ে পল্টন। দিনের শেষে পকেটে জমে যায় বেশ কিছু টাকা অবশ্য তার বখরা দিতে হয় দালালদের তারপরেও যা থাকে তাতে চলে যাচ্ছে মোটামুটি। শুধু কখনও চেনা কেউ যদি দেখে ফেলে সেই ভয় পায়। এক দুদিন যে হয়নি তা নয়,তাড়াতাড়ি করে চোখে সানগ্লাস পরে ঘোমটা টেনে হাতে তালি দিতে দিতে সরে গেছিল অন্যত্র। বেশ চলছিল এভাবেই কিন্তু ঐ যে হঠাৎই প্রেমে পড়াটাই সব যেন এলোমেলো করে দিল ওর জীবনে।
২
সরস্বতী পুজোর দিন প্রথম দেখেছিল হলুদ শাড়িতে ছিপছিপে মেয়েটাকে ট্রেন থেকে নামতে। দেখেই পাগল পাগল হয়ে গেছিল মনটা। ইশ্ একদম উড়িয়ে নিয়ে গেছিল মনটাকে দমকা হাওয়াতে মেয়েটা। নিজেকে সামলাতে পারে না পল্টন একটু জোরে পা চালিয়ে ফলো করে মেয়েটাকে। ওর উড়ন্ত চুল তখন বসন্তের বাতাস লেগে এলোমেলো। মাঝেমধ্যে নেলপলিশ পরা আঙুলগুলো তাকে ঠিক করে দিচ্ছে আলগোছে। তারপর আবার হেঁটে চলেছে ছন্দে ছন্দে। পল্টনের চোখে পড়ে ওর পাতলা কোমর,উন্মুক্ত পিঠে দোল খাওয়া ছোট্ট দুটো জড়ির লটকনের কানাকানি।
এই অঞ্চলে মেয়েটাকে একদম নতুন দেখছে। দেখেই ফিদা হয়ে গেছে মনটা ততক্ষণে। খুব কথা বলতে ইচ্ছে করে ওর,তবুও নিজেকে সামলায়। অভিভূত হয়েই পেছন পেছন চলতে শুরু করে। মেয়েটা হঠাৎই পাশের রাস্তায় ঢুকে যায়,জাস্ট একটা সেকেন্ড বোধহয় অন্যমনস্ক ছিল তারমধ্যেই এই অঘটন। ইশ্ কোথায় যে ঢুকে গেল মানে কোন বাড়িতে তা আর দেখতে পায় না। মনটা হঠাৎই খারাপ হয়ে যায় খুব। এদিক ওদিক কিছুটা সময় তাকিয়ে হাঁটা দেয় বাড়ির দিকে। বুঝতে পারে স্বপ্নের পরী কোথাও উড়ে গেছে ডানা মেলে। তবে মন থেকে কিছু চাইলে তা বোধহয় মিলে যায় কখনও কখনও তাই হঠাৎই মুন্নুর দেখা হয়ে গেছিল আবার স্টেশনে। সেদিন অবশ্য আর সুযোগ হাত ছাড়া করেনি। এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল,'তুমি কী এই পাড়াতেই থাকো?'
একটা ঘাতক হাসি খেলে গিয়েছিল মেয়েটার মুখে জিজ্ঞেস করেছিল,' তাতে তোমার কী শুনি? তখন থেকে আমার দিকে ঘনঘন তাকাচ্ছো কী মতলবে? ভালো হবে না কিন্তু বলছি। কোন বদ মতলব থাকলে কেটে পড়ো এখুনি।'
কেটে পড়ো বললেও পেছনে সমানে ঘুরঘুর করা পল্টনকে কাটাতে পারেনি মুন্নু। হাল ছাড়েনি পল্টনও,জানতে পেরেছিল এখানে ওর মাসির বাড়ি কদিনের জন্য এসেছে। তারপর চলে যাবে। একটু ইয়ে ইয়ে করে জিজ্ঞেস করেছিল,' তা বাড়িটা কোথায় বলো?' চোখ পাকিয়েছিল মুন্নু,' কী দরকার বাড়ি কোথায় জেনে? শোনো ওখানে গিয়ে হাজির হলে পাড়ার ছেলেদের দিয়ে ক্যালানি খাওয়াবো একদম।যাও আমার মুড খারাপ কোরনা।'
মেয়েটাকে নজরছাড়া করেনি পল্টন। মেয়েটার চক্বরে দু তিনদিন কাজেও যায়নি। ফোন এসেছিল কলকাতা থেকে বলে দিয়েছিল শরীর খারাপ। রুজি রোজগারের জন্য ঠোঁটে রঙ আর বুকে প্যাড পরে মেয়েমানুষ সাজলেও ভেতরটা যে পুরুষত্বের অহংকারে ঠাসা। আর সেখানে লঙ্কার ঝাঁঝ দিয়ে জ্বালা ধরিয়ে ঐ ধানি লঙ্কা মেয়েটা আগুন ধরাবে সেটা ভেবেই মনটা ক্ষেপে উঠেছে একদম। প্রত্যাখানই বোধহয় পাওয়ার বাসনাতে আরও আগুন ধরিয়ে দেয়।
বিকেলের দিকে বেরিয়েছিল আজ একটু মুড ভালো করতে। নাহ্ কাল থেকে আবার রঙ মেখে সঙ সাজার কাজে যেতে হবে। মা ঘরের তলায় টিকতে দিচ্ছে না। সারাক্ষণ খিচ খিচ করছে আর বলছে,' কাজে যাস না কেন শুনি? বেশ তো রোজগার করছিলি। তা ভালো লাগছে না। জোয়ান ছেলে ঘরে বসে শুয়ে থাকলে কার ভালো লাগে?'
বিরক্ত লাগছিল পল্টনের মাকে চুপ করতে বলে বেরিয়ে এসেছিল ঘর থেকে। সাইকেলে যেতে যেতে হঠাৎই চোখে পড়েছিল ফুচকাওয়ালা আলু মাখছে আর তার সামনে দাঁড়িয়ে আরেকজন সমানে বলে যাচ্ছে আরেকটু ঝাল দিয়ে মাখো। বেশ যেন ঝাল ঝাল খেতে হয়। ফুচকা খাবো আর হুশ হাস করব না তা হয় নাকি? পল্টন ঘাড় উঁচু করে আরেকবার দেখলো পেছন ফিরে সাইকেল চালাতে চালাতে। পাগলীটা ফুচকা খাওয়া নিয়ে একেবারে মত্ত। ও যে সাইকেল নিয়ে পাশ দিয়ে গেল সেদিকে কোন মন নেই। ওকে পেছনে ঘুরতে দেখে পেছনে বসা জগু বলল,' আরে চল ভাই ওভাবে পেছন ফিরে তাকাতে তাকাতে সাইকেল চালালে এবার দুজনেই পড়ে যাব।'
-' এই পড়ে যা,বেশ হবে। আমি কোনদিকে দেখব তুই বলে দিবি নাকি? খুব দেমাক মেয়েটার,পাত্তাই দিচ্ছে না। কদিন ধরে ঘুরছি পেছনে। এই জগু তুই যা,আমি ফুচকা খাবো এখন।'
জগু কপাল চাপড়ে গালাগালি দিয়ে সাইকেলটা নিয়ে এগোয়। ফুচকাওয়ালার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলে,' আমাকে একটা পাতা দাও,আর হ্যাঁ ঝাল হবে তো?'
মেয়েটা ওকে দেখেও না দেখার ভান করে। ফুচকা খেতে খেতে মেয়েটার গায়ের গন্ধ পায় পল্টন। কেমন যেন নেশা লাগে ওর। মনে হয় ইশ্ এই মেয়েটাকে প্রেমিকা হিসাবে না পেলে জীবনের কোন মানেই থাকবে না। মেয়েটা ফুচকা খেয়ে যাচ্ছে। একটা সময় থামে,ফুচকাওয়ালা জিজ্ঞেস করে আর দেবে কিনা?
কুড়মুড় করে আওয়াজ হয় মুখের ভেতর তারমধ্যেই কথা বলে,' না আর খাবোনা,কত হল বলো। এই নাও টাকা।'
পল্টন হঠাৎই বলে ওঠে,' না না ওর কাছ থেকে দাম নিয়ো না আমি দিচ্ছি। কত হয়েছে?'
-' এই শোন মুন্নু বিনা পয়সায় কিছু খায় না। তোমাকে আমি চিনি না,তুমি কেন আমার ফুচকার দাম দেবে শুনি?'
চমকে উঠেছিল পল্টনও কোথায় ভেবেছিল মেয়েটা হয়ত খুশি হবে। সেখানে বলছে ওকে চেনেই না। হঠাৎই মুখটা তিতকুটে হয়ে যায়। তবুও হাল ছাড়ে না ফুচকার দোকান ছেড়ে মেয়েটা এগোতেই ও পেছনে যায় বলে,' এমন করে আমাকে অপমান করলে কেন? আমি এমনিতেই বলেছি।'
-' ও যে কোন মেয়ে দেখলেই এমনিতে ফুচকা খাওয়াও তাই না?'
নিজেকে সামলাতে পারে না পল্টন বলে,' আমার তোমাকে ভালো লাগে বিশ্বাস করো। আমার জীবনে আর কেউ নেই হঠাৎই তোমাকে দেখে ভালো লাগলো।'
হা হা করে হেসে ওঠে মেয়েটা,' প্রথম দেখাতেই প্রেম? এত তাড়াতাড়ি প্রেমে না পড়াই ভালো তবে কাদা জল খেতে হবে। সেটা আর হজম হবে না। এমন কথা অনেকবার শুনেছি। এবার ফোটো এখান থেকে। আমার মাসির বাড়ি এসে গেছো।'
-' প্লিজ মজা কোর না সত্যিই আমার তোমাকে ভালো লেগেছে। কোথায় থাকো? মানে ঠিকানাটা? আর ফোন নম্বর কিছু? আমি পাশের পাড়াতেই থাকি।'
-' বেশ করো,থাকো কে বাধা দিয়েছে? তোমার বাড়িতে থাকো তুমি।'
-' আর তোমার ঠিকানা?'
-' আমি কলকাতায় থাকি,খুঁজে নিয়ো।'
বলে হাসতে হাসতে ঢুকে গেছিল বাড়িটার ভেতর। গত কমাস মেয়েটাকে আর দেখেনি। কলকাতাতে যাতায়াত করলেও সেখানে খুঁজে পায়নি পল্টন। তবে ওর মুখটা ভোলেনি,সবসময় মনে পড়ত সেই মুখ আর হাসি। কী যে নাম বলেছিল? হ্যাঁ মুন্নু,সেটাও মনে করে রেখেছিল।
৩
নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও মাঝেমাঝেই সেই মুখ তাড়া করত সবসময় ওকে। তবে একটা সময় পরে হাল ছেড়ে দিয়েছিল যে আর দেখা হবে না। ঐ বাড়িটাতেও গেছিল,যেটা ওর মাসির বাড়ি বলেছিল। খোঁজ করতে গিয়ে অপমানিত হয়েছিল। শুনেছিল ঐ বাড়িতে যারা থাকত তারা নাকি ভাড়াটে আর খুব খারাপ লোক। দুমাসের ভাড়া বাকি রেখে হঠাৎই পালিয়ে গেছে বিনা নোটিশে। পল্টন বুঝেছিল আর কোন আশা নেই,ওর প্রথম ভালোবাসা ধোঁয়াশা হয়ে মিলিয়ে গেল এই বিরাট পৃথিবীর আকাশের কোন এক কোণে।
কলকাতার আকাশে বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ। সব কিছু ভুলে সবাই মেতেছে উৎসবের আনন্দে। পল্টনের রোজগারও ভালোই হচ্ছে এই সুবাদে। হাততালি দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,' এত কিছু কিনলি,ভরে থাক তোদের ঘর। আমাদেরও কিছু দিয়ে যা। আশীর্বাদ করি মা দুর্গা তোদের ভালো রাখবেন।'
এই শহরের জনপদে মিশে যায় ক্লান্ত পল্টনের চরণ কখনও কখনও আহত হয় ভীষণভাবে আত্মবিশ্বাস। হে মা দুর্গা,তুমি নাকি অশুভ বিনাশিনী। কবে আমাদের একটা চাকরি হবে বলতে পারো? কয়েকবার ভেবেছে ছেড়ে দেবে এই পেশা,চলে যাবে দূরে কোথাও। কিন্তু দিনের শেষে মুঠোভরা টাকা ভাবতে দেয়নি অন্য কিছু। এই রোজগারের টাকায় নিজের জন্য মা বাবা আর ভাইবোনের জন্য জামাকাপড় কিনেছে। বাড়িতে কখনও মাংসের গন্ধে ছোট ভাইবোনেরা খুশি হয়। ভেবে নিয়েছিল পুজোর পর ছেড়ে দেবে কাজ,দেখবে যদি অন্য কিছু করা যায়। নিশ্চয় একটা উপায় হবে ঠিকই.. এক গাড়ির সামনে থেকে আরেক গাড়ির সামনে এগিয়ে যায় পল্টন। বেশিরভাগ গাড়ির কাঁচ তোলা,কাঁচের ভেতরের সুখী মুখগুলো দেখে হিংসা হয়। তাদের কানে পৌঁছলেও হয়ত তারা শোনে না ওর তালির শব্দ। আবার এগিয়ে যায় সামনের দিকে।
সিগন্যাল লাল হয়েছে সবুজ থেকে,থেমে যাওয়া গাড়ির দিকে ছুটে যায় পল্টন আর ওর দলের কেউ কেউ। গাড়িটার সামনে এসে কাঁচে টোকা মারে পল্টন,লোকটা মেয়েমানুষ নিয়ে গাড়িতে উঠেছে মনে হচ্ছে। শক্ত হাতে জাপটে ধরে মেয়েটাকে,পান খাওয়া মুখটা গালে ঘষছিল,হয়ত এইভাবেই উসুল করতে চায় টাকা। এও এক ধরনের আনন্দ উশুল করা এই পুজোর মরশুমে। হঠাৎই জানলাটা নেমে যায়,অবাক হয়ে যায় পল্টন লোকটার ভক্তি দেখে। পার্স থেকে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে বলে ইয়ে লো,অওর কুছ শুভ বোল দো। টাকাটা খপ করে লুফে নেয় পল্টন তারপর লোকটাকে খুশি করতে ওর মেয়েমানুষের মাথায় ঠেকিয়ে কিছু শেখানো বুলি বলতেই চমকে ওঠে ওর মনের মানসপটে যত্নে রাখা পরীর মুখটা দেখে। আরে এটা মুন্নু না?
চোখাচোখি হয়ে যায় মেয়েটার সাথে,মেয়েটাও কী ওকে দেখে চমকালো? না না ও কী করে চিনবে ওকে? একদলা কান্না গলা দিয়ে উঠে আসে হঠাৎই পল্টনের। তারপর নিজেকে সামলায় মা বলেছে তো ছেলেদের কাঁদতে নেই। ইচ্ছে করছিল তখনি ঐ পঞ্চাশ টাকাটা ওখানে ছুঁড়ে ফেলে দিতে। কিন্তু ততক্ষণে জানলার কাঁচ উঠে গেছে,সিগন্যাল সবুজ হয়ে গেছে। গাড়িগুলো চলতে শুরু করেছে, শক্ত লাঠির মত হয়ে যাওয়া পা দুটোকে টেনে টেনে ফুটপাতে আনতে হয় অনিচ্ছায়। শুধু চোখদুটো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে লোকটা জড়িয়ে ধরে আছে ওর স্বপ্নের পরীকে,তারপর হয়ত দুমড়ে মুচড়ে ওর শরীরটাকে। আর ভাবতে পারে না পল্টন,রাস্তায় বসে থাকা অন্ধ বুড়িটার থালায় পঞ্চাশটাকা ফেলে দিয়ে এসে আজ অন্ধের মতই ছুটতে থাকে পথ দিয়ে। একটু এগোলেই সামনে গঙ্গা,ঝাঁপিয়ে পড়ে গঙ্গায়। এখানে কাঁদলে ওর চোখের জল আর কেউ দেখতে পাবে না,মা গঙ্গা নিশ্চয় ওর মনে জমা পাপের কাদাজলকে ধুয়ে শুদ্ধ করে নেবেন।
অনেকক্ষণ নিজেকে শীতলজলের ছোঁয়ায় শুদ্ধ করে ভেজা কাপড়ে উঠেই এগিয়ে যায় ওদের ঘরের দিকে। ভাগিরথীয়া দেখে অবাক হয়,' কী রে এরমধ্যেই ধান্ধা শেষ? কী হয়েছে তবিয়ত খারাপ? নে নে একটু বিশ্রাম লিয়ে আবার বেরিয়ে পর কামে।'
কোন কথা বলে না পল্টন,ছদ্মবেশ ছেড়ে এগিয়ে যায় বাইরের দিকে আসছি বলে। তারপর মিলিয়ে যায় মানুষের ভীড়ে। একটা স্টেশন আগে নেমে হেঁটে হেঁটে আসে শ্মশানের পাড়ে,চুপ করে বসে থাকে গঙ্গার ধারে অনেকটা সময়। আজ মুন্নু বলে মেয়েটাকে দেখে কেন এমন লাগছে ওর? ও মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছিল বলে? নাকি আজ ওরা দুজনে দুজনের কাছে ধরা পড়ে গেছে? হয়ত বা আড়াল করে রাখা মুখোশ খুলে গেছে দুজনেরই আজ। নিজেকে প্রশ্ন করে পল্টন ওর কী মনে ঘেন্না জমেছে ট্যাক্সিতে বসৈ থাকা মুন্নুকে দেখে? লোকটা নোংরা হাত বোলাচ্ছিল মেয়েটার গায়ে। ভাবতেই কপালের শিরাগুলো দপ দপ করে রাগে মুন্নুর। নিজের ভিক্ষাবৃত্তির জন্য নিজের গায়ে থুতু ছেটাতে ইচ্ছে করল। ছিঃ ছিঃ এর থেকে বোধহয় মরে যাওয়াও ভালো ছিল। পেটের দায়ে কী কাজ করছিল ও? মুন্নুও হয়ত পেটের দায়েই নেমেছে এই পথে। কিছুই তো জানার সুযোগ হয়নি মেয়েটার সম্বন্ধে। শ্মশানে একটা মৃতদেহ এসেছে,চিতার আগুন জ্বলছে। সেই আগুনের তাতে নিজেকেও পুড়িয়ে নেয় আজ পল্টন,মুন্নুকে খারাপ ভাবতে ওর ভালো লাগে না। কই মেয়েটা তো একবারও ওর ভালোবাসায় সায় দেয়নি। হয়ত এমন কাজ করে বলেই পল্টনকে জড়াতে চায়নি নিজের জীবনের সাথে। ইশ্ যদি ভগবান একবার দেখা করিয়ে দিতেন ওর সাথে....
৪
বাড়িতে অনেক রাতে ফিরে আসতেই মা বকাবকি শুরু করে। আজ মাকেও কিছু জবাবদিহি করতে ইচ্ছে করল না। শুধু বলল আজ মনটা ভালো নেই,চাকরিটা চলে গেল। মানে ও নিজেই ছেড়ে দিয়ে এসেছে এই চাকরি আর পোষাচ্ছে না।
-' মানে তুই পুজোর আগে চাকরিটা ছেড়ে এলি? তোকে কী ভূতে ধরেছে নাকি? সত্যি তোরা সবাই মিলে আমাকে পাগল করে ছাড়বি।'
-' মা একটু চুপ করো,খুব অসুবিধার জন্য ঝোঁকের মাথায় চাকরিটা নিয়েছিলাম। এই কাজ বেশিদিন করলে আমি নিজেই পাগল হয়ে যেতাম।'
ছেলের রাগী চোখমুখ দেখে মা আর কিছু বলে না। হয়ত তাতে ভালোই হয়েছে নাহলে নিজেকে আর ঢেকে রাখতে পারত না পল্টন। সবটাই হয়ত বলে ফেলত।
বেশ কিছুদিন বেকার বসে থাকার মাঝে বহুবার কলকাতা থেকে ভাগীরথীয়ার ফোন এসেছে তবে কিছুতেই রাজি হয়নি পল্টন। এই কাজ সে আর করবে না। অনেক চেষ্টার পর একটা কাজ জুটে গেল,অবশ্য তারজন্য ওকেও কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। যা জমিয়েছিল তা দিয়ে ড্রাইভিং শিখে নিয়েছিল। সাইকেল,বাইক চালাতে পারত বলে খুব একটা অসুবিধা হল না। তবে প্রথম কলকাতার রাস্তায় চালাতে একটু নার্ভাস লাগত। এখন মোটামুটি অভ্যেস হয়ে গেছে। অদ্ভুত একটা আশা মনে কাজ করে পল্টনের এভাবেই গাড়ি চালাতে চালাতে হয়ত কোনদিন মুন্নুর সাথে দেখা হয়ে যাবে।
কিন্তু দেখাটা যে এভাবে হবে তা ভাবেনি পল্টন। সেদিন ডিউটির চাপ ছিল,বুঝতে পেরেছিল আজ আর শেষ ট্রেনটাও ধরতে পারবে না। সেন্টার থেকে একটা ডিউটি পেয়েছিল একটু রাতের দিকে। ও যেতেই গাড়ির মালিক গাড়ি দিয়ে বলেছিল কাকে যেন একটা আনতে যেতে হবে একটা ঠিকানা দিয়েছিল হাতে। আর বলে দিয়েছিল এখন নয়,উনি ফোন করলে যেন ও নিয়ে আসে তাকে। একে তাকে এইসব কথায় কেমন যেন গোলমেলে ঠেকেছিল ব্যাপারটা। ও বলেছিল ওকে ফিরতে হবে বাড়ি। ভদ্রলোক রেগে উঠেছিলেন,' আর ধ্যাৎ রবি এ কাকে পাঠালো? এই শোন আমার ড্রাইভার আছে। ওকে পাঠানো যাবে না তাই তোমাকে ডাকলাম। হ্যাঁ যা বলছি সেটা করবে ডবল টাকা পাবে,আর বকশিসও দেব।'
একটু ঢোক গিলেছিল পল্টন তারপর আর না করেনি। বুঝেছিল ব্যাপারটা গোপনীয় তাই এত টাকা দেখাচ্ছে লোকটা।
লোকটার ফোনের নির্দেশ শুনে জায়গা মত গিয়ে মেয়েটাকে এনে পৌঁছে দিয়েছিল পল্টন। আজ সে আর চমকে ওঠেনি,শুধু স্টিয়ারিং ধরতে গিয়ে হাতটা কেঁপে যাচ্ছিলো মাঝে মাঝে। নিজের চশমার আড়াল থেকে পেছনের সীটে বসা মেয়েটাকে দেখছিল লুকিয়ে। বুঝতে পেরেছিল শিকারকে শিকারীর কাছে পৌঁছে দেওয়াটা ওর কাজ। ঘেন্না ধরে গেছিল এই ভদ্রসমাজের মুখোশধারী মানুষগুলোর ওপর। নিজের বৌয়ের না থাকার সুযোগে ড্রাইভারকে ছুটি দিয়ে অন্য মেয়েকে নিয়ে ফূর্তি করবে।মানুষের মধ্যে মানবিকতা,দয়া,মায়া,বিশ্বস্ততা কিছুই কী রইল না আর বাকি? কে বলতে পারে হয়ত বৌটাও....
কাজ শেষ হলে বাকি সময়টা হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসে ঝিমিয়েই কাটিয়ে দেয়। দেখতে দেখতে ভোর হয়ে যায়। চারদিকে নতুন সূর্যের আলো ধুইয়ে দিচ্ছে গতরাতের কালো অন্ধকার। মনটা ভালো হয়ে যায় পল্টনের। কাছের কলটা খুলে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দেয়। আবার কিছুটা বাদেই নতুন করে ডাক আসবে অন্য কোন মালিকের কাছ থেকে। সেন্টারের মাণিকদা ফোন করেছিল কখন ডিউটি রাখবে। পল্টন হাই তুলে বলেছিল সকালেই ডিউটি দিয়ে দিতে,কাল ওর বাড়ি যাওয়া হয়নি রাতে। আজ তাড়াতাড়ি ডিউটি করে বাড়ি চলে যাবে।
বারোটার মধ্যে ডিউটি শেষ করে বাসে উঠে পড়ে পল্টন,আজ তার বড় তাড়া খুব তাড়াতাড়ি তাকে পৌঁছতে হবে। মানিকতলার মোড়ে নেমে খালপাড়ের দিকে এগিয়ে যায় পল্টন। হ্যাঁ ঐ বাড়িটা,বেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ওর একটুও চিনতে অসুবিধা হয় না। তাড়াতাড়ি করে বাড়িটার সামনে এসে বেলটাতে হাত রাখে।নাহ্ বেলটা তো খারাপ,তাই বাধ্য হয়ে কড়া নাড়ে। ভেতর থেকে একটা কাঁপা গলার আওয়াজ পায়,দেখ না মা কে এল..
সাথে সাথেই একটা ঝঙ্কার ওঠে,' দিনরাত শুয়ে শুয়ে বিছানায় কে এলো আর কে এলো। কে আর আসবে? যম এলেই তো বাঁচি।'
-' কী করব মা,মরণ যে হয় না। মরলেই তো তুই আর আমি দুজনেই বাঁচি।'
পল্টন আর কড়া নাড়তে সাহস পায় না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। একটু বাদেই দরজা খুলে যায়,সেই প্রথম দেখার মত আজও নিজেকে কেমন ক্যাবলা ক্যাবলা লাগে পল্টনের। এভাবে এতদিন বাদে একদম সামনাসামনি মুন্নুর মাঝখানে কেউ নেই,কোথাও যাবার তাড়া নেই...গতকাল যে এভাবে ওর চাওয়া পূরণ হবে ভাবেনি। শুধু নিজের ওপর রাগ হয়েছিল এই ভেবে যে ওর ভালোবাসাকে অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছে।
ওদিক থেকে ঝংকার আসে,' কে আপনি? কী চাই? ফোনে কথা বলবেন এভাবে এসে হাজির হবেন না। মা অসুস্থ আমি ব্যস্ত থাকি।'
কী বলবে ভেবে পায় না পল্টন প্রথমে তারপর আর দেরি করে না বলে ফেলে অনেকটা সাহস নিয়ে..' আমি পল্টন,সেই যে তোমার মাসির বাড়ির পাশের পাড়ায় থাকতাম। তোমাকে কত খুঁজেছি কিন্তু এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবিনি। আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।'
অনেক কুৎসিত লোভী মুখের মাঝেও এই মুখটা মাঝেমধ্যে মনে যে পড়েনি তা নয় তবে নিজেকে সামলেছে ও। দাদাটা হঠাৎই মারা যাবার পর একটা চাকরির খোঁজে এসেছিল ওরই বন্ধুর সাথে। সে যে ওকে এই ব্যবসাতে নামিয়ে দেবে বুঝতেই পারেনি। প্রথমে ধর্ষিতা হয়েছিল,তারপর অভ্যেস হয়ে গেছিল নতুন নতুন খদ্দেরে। রোজগার মন্দ হয় না। তবে এক পাড়াতে বেশিদিন থাকে না,এদিক ওদিক করে বেড়ায়। এইসব লাইনে অনেক ঝামেলা আছে।
হঠাৎই স্বপ্নের হাজার ফুলকি চোখে চিকচিক করে উঠলেও নিজেকে সামলায় মুন্নু। ভেবেছিল বলবে চেনেই না ওকে কিন্তু পারল না।
-' ও বুঝেছি,তুমি এখনও আমার পিছু ছাড়োনি। ডাকবো পাড়ার ছেলেদের? একদম কেলিয়ে বেন্দাবন দেখিয়ে ছেড়ে দেবে?'
পল্টনের আজ গলায় অন্য সুর বাজে,সে বলে..' ডাকো যাকে খুশি আমাকে মারুক। তবে সত্যিটা তো আর মিথ্যে হবে না। সত্যি আমি তোমাকে ভালোবাসি মুন্নু,খুব ভালোবাসি।'
মনটা হঠাৎই এলোমেলো হয়ে যায় মুন্নুর। ঘর থেকে মা চেঁচায়,' কে এলো রে মুন্নু? কে এলো?'
-' মা চুপ করো,আমি কথা বলছি তো...'
একটু ঢোক গিলে নিজেকে সামলায় মুন্নু তারপর পল্টনের হাতটা ধরে হিড়হিড় করে টেনে এনে কাঠের চেয়ারে বসায়। তারপর বলে,' তুমি না ভদ্রলোকের ছেলে। শেষে আমার মত একটা বেশ্যার প্রেমে পড়লে। হা হা তুমি বোধহয় জানো না আমি কী করি? প্রতি রাতে,কখনও দিনে যেদিন যেমন ডাক পাই আমার একটা শরীরটা ঐ লোভী মানুষগুলোর ক্ষিদের বস্তু হয়ে রোজগার করে ঘরে টাকা আনে। শুনলে তো এবার,যাও এবার ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে।'
নিজেকে শক্ত করে পল্টন হঠাৎই শক্ত হাতে মুন্নুর হাতটা ধরে তারপর বলে,' আমি সব জানি,কাল আমিই তোমাকে গাড়ি করে নিতে এসেছিলাম। অনেকদিন আগেও একদিন দেখেছি। তবুও আমি তোমাকেই ভালোবাসি আর বিয়ে করতে চাই।'
-' হা হা হা হা,উঃ হাতে কী জোর রে বাবা! যেন লোহার হাত। লোকে কতরকম পাত্রী চায় খবরের কাগজে। আর তুমি শেষে আমার মত একটা মেয়েকে! যাও তো কেটে পড়ো এখান থেকে। অমন সংসারের লোভ আমাকে দেখিয়ো না,তারপর শরীরের টান ফুরোলেই আমাকে বেশ্যা বলে ঘেন্না করবে।'
-' আমি মুন্নুকে ভালোবাসি,মুন্নুর সবটুকুকে ভালোবাসি। তোমার শরীর,মন সবটাকে আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নেব।'
-' আর আমার এই কাজ তাকে ভালোবাসো? আমাকে কিন্তু এই কাজকেও ভালোবাসতে হয়েছে দায়ে পড়ে..' কথাগুলো বলেই একদলা থুতু ছেটায় মুন্নু। বারান্দায় রাখা চৌকিটাতে বসে একটু হাঁফায়।
তোমাকে ভালোবাসি,কাজ করে নিজেকে বাঁচাতে তো আমাদের সমাজ বাধ্য করে। আমি জানি এই কাজে তুমি শখে আসোনি,হয়ত কেউ বাধ্য করেছে তোমাকে,অথবা এসেছো পেটের দায়ে। আমি যেমন হিজড়ে সেজে হাতে তালি দিতে দিতে একদিন চলে এসেছিলাম তোমারই গাড়ির সামনে। সেদিন খুব কান্না পেয়েছিল দুজনের দুরবস্থাতেই। তারপর ঠিক করেছিলাম আর এই কাজ করব না,না খেয়ে মরলে মরব।
-' তোমার অনেক পথ আছে,আমার কোন পথ নেই। একবার এই পথে পা রেখেছি আর আমার মুক্তি নেই। যাও তো যাও,আমি এখন ঘুমোবো। সারারাত ঘুম হয়নি আমার।'
পল্টন উঠে দাঁড়ায় তারপর বলে,' আমি এখন গাড়ি চালাই। অনেকের সাথে আলাপ হয়েছে। রোজগার মন্দ হয় না। পরে একটা সেন্টার খুলব ড্রাইভারদের। দুটো ডালভাত আমি তোমাকে খাওয়াতে পারব। আমাদের পাড়াতে মেয়েরা বিউটিশিয়ান শেখে,সেখানে শিখে তুমিও কাজ করতে পারবে।'
-' বাবা এ তো একেবারে ফ্যামেলি প্ল্যানিং করে এসেছে দেখছি। যাও যাও এখন যাও এত লোভ দেখিয়ো না.. আমাকে কী তেমন ভেবেছো নাকি যে আমি গলে যাবো?'
পল্টন মাথাটা নীচু করে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,' এত সহজে আমাকে তাড়াতে পারবে না। আমি আবার আসব...'
-' আর যদি দেখো তালা বন্ধ বাড়িতে?'
মুন্নুর চোখের তারায় বিদ্যুৎ খেলে যায়,ও খিলখিলিয়ে হাসে।
-' এতদিন বাদে যেমন দেখা পেয়েছি,তেমনি কখনও কোথাও ঠিক দেখা হয়ে যাবে..হয়ত নষ্ট হয়ে যাবে আমাদের জীবনের কয়েকটা বছর।'
-' নষ্ট মেয়ের জন্য জীবন নষ্ট করার চেয়ে সেই বোধহয় ভালো হবে।'
পল্টন দরজার বাইরে পা রাখে। বলে, কাল আবার আসব,দরজা না খুললে বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকব।'
মুন্নুর বুকটাতে হঠাৎই একঝাঁক সুখের পায়রা ডানা ঝাপটায় কে যেন বলে এতদিনে বোধহয় সত্যিই কেউ বলল নষ্ট মেয়েকে নিয়ে জীবন নষ্ট করতেও সে রাজি।
মুন্নু দরজায় শেকল তুলতে পারে না,দাঁড়িয়ে থাকে। পল্টন পেছন ফিরে তাকিয়ে একটু হাসে তারপর এগিয়ে যায় সামনের দিকে। মা ডাকে ওকে,ঘরে ফোনটা বাজে সশব্দে মুন্নুর ফোনে কথা বলতে ইচ্ছে করে না বারান্দায় দাঁড়িয়ে আনমনা হয়ে ভাবে সত্যিই কী কাল ছেলেটা আসবে? নাকি সবই কথার কথা?
তারপর নিজেকে শক্ত করে ফোনটা মুঠোতে ধরে কল ব্যাক করে বলে,' হ্যাঁ পৌঁছে যাবো সন্ধ্যায়,তবে এগারোটায় ছেড়ে দিতে হবে,আর বারোটা হলে টাকা বেশি লাগবে।'
রাত্রিটা আজ একটু শান্তিতে ঘুমোতে চায় মুন্নু,দিনে যে স্বপ্ন চোখ খুলে দেখতে ভয় পেয়েছে রাতে তা চোখ বুজে আজ দেখবে।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment