Skip to main content

নকল সুখ

'আজ কী দিয়েছো গো! তুমি ঢুকতেই তো পুরো লেডিস কম্পার্টমেন্ট আলো হয়ে গেল।'
 নিজেকে আয়নায় দেখে অবশ‍্য চুমু খেতে ইচ্ছে হয়েছিল নিজেরও জুহির। এমনকি অভিও বলেছে যে নীল এই জামাটাতে আজকে ওকে খুবই রয়‍্যাল লাগছে দেখতে।
        অথচ নীল কিন্তু মোটেই ফেভারিট কালার নয় জুহির। বিয়েতে পাওয়া সব নীল শাড়িগুলো মোটামুটি সাইড করে রেখে দিয়েছে। একেই ওর শাড়ি পরতে ভালো লাগে না,মানে তেমন একটা ক‍্যারি করতে পারে না শাড়ি। তবুও বিয়ের পর মাঝেমধ্যে অঙ্গে চড়াতে হয় অসহ‍্য জিনিসটাকে। আর তখনই হয় মোটামুটি ল‍্যাজে গোবরে অবস্থা। 
      অফিসে যেতে হয় অনেকটা রাস্তা ট্রেনে করে সুতরাং অন‍্য পোশাকই পরা হয় বেশি। আগে জিন্স টপ বেশি পরলেও বিয়ের আগেই ওর লক্ষ্মীমন্ত আর বুদ্ধিমন্ত মা বলে দিয়েছিল প্রথমটা কুর্তা বেশি পরতে।
  -'কেন মা? বিয়ের পর কী আর প‍্যান্ট পরা যাবে না? ওদের তো কোন আপত্তি নেই। তাছাড়া আপত্তি থাকলেও আমার কিচ্ছু এসে যায় না। এটা আমার ব‍্যাপার।'
 মায়ের কাছে বকুনি খেয়েছিল। ' নতুন বৌ একটু এথনিক পোশাক পরলেই সুন্দর লাগে। মানে আমার তো ভালো লাগে। আমাদের ভারতীয় পোশাক কত কালারফুল জুহি। কী আছে রে তোদের ঐ প‍্যান্ট শার্টে?'
-' কমফোর্ট আছে মা,আর ওটাই আসল কারণ আমাকে অতটা যেতে হয়।'
-' আচ্ছা বাবা কদিন পর না একটু কষ্ট করে। কুর্তাও সুন্দর ক‍্যারি করা যায়। দেখবি ভালোই লাগবে। একটু চেঞ্জ করলে নিজেকে দেখতে অন‍্যরকম লাগে।'
   এই কথা শাশুড়ি বললে কী হত কে জানে? হয়ত বা লঙ্কাকাণ্ড হত। ভদ্রমহিলাকে কুচুটে,বদমাশ,মধ‍্যযুগীয় ইত‍্যাদি মনে হত। তবে এটা তার মায়ের কথা,তার জন্মদাত্রী মা বলে কথা সুতরাং মেনে নিয়েছিল জুহি। বিয়ের পর ছমাস কেটে গেছে তবে এখনও কুর্তাতেই আটকে রয়েছে অদ্ভুতভাবে। মাঝেমধ্যে এক আধদিন প‍্যান্ট পরলেও কুর্তা বেশ লাগে। সুতরাং এখন ভালোই বন্ধুত্ব হয়ে গেছে পোশাকটার সাথে। আর সেটা হয়ত বেশি করে চুমকিদির জন‍্যই।

      এই লোকাল ট্রেনেই হঠাৎই আলাপ হয়ে গেছিল চুমকির সাথে অন‍্য সবার মতই জুহিরও।

    চুমকি প্রথম যেদিন একটা ঢাউস ব‍্যাগ নিয়ে উঠেছিল তখন ওরা অনেকেই অবাক হয়েছিল দেখে। তারপর ওর কথা শুনে আর রকমারি জিনিস দেখে অনেকেই ওর কাছে কেনাকাটা শুরু করে। চুমকি যদিও সব দিন আসতে পারে না এই ট্রেনে তবে সপ্তাহে একটা দিন ওর নির্দিষ্ট এই ট্রেনে। অন‍্য দিনগুলো আবার অন‍্য কোন ট্রেনে ঘুরে ঘুরে শাড়ি,কুর্তা,ডিজাইনার ব্লাউজ বিক্রি করে।

             জুহি প্রথমটা শুধু দেখত দূর থেকে,চুমকি উঠলেই ট্রেনে যেন একটা আনন্দের ঢেউ বয়ে যেত। মেয়েদের নিত‍্যযাত্রার একঘেঁয়ে যাত্রাপথে চুমকি টক মিষ্টি চানাচুরের মত। পাক্কা সেলসগার্লের ঢঙে কখনও চুমকি রং বাহারি ওড়না মাথায় দিয়ে দেখাচ্ছে। আবার কখনও শাড়ির আধখানা গায়ে ফেলে ট্রেনের মধ‍্যে এদিক ওদিক ঘুরছে আর বলছে,' এত কমে পাবেন না গো,এত কমে পাবেন না। এই শাড়িতে আছে খাঁটি সুতির সুতোর বুনোন তাই একদম গরম লাগবে না। এগুলো একদম হাতের কাজ,মেশিনের নয়। আর এই কুর্তাটা পরলে তো একেবারে জুহি চাওলা লাগবে,আর এটা পরলে মাধুরী।'
   ওদিক থেকে কেউ আওয়াজ দিত,আর ঐশ্বর্য্য,আলিয়া এইসব ড্রেস আনোনি?
-' আনব না আবার? এই যে আলিয়া কাট জামা। দিদি এটা কিন্তু দুর্দান্ত দেখুন।'
    জানলার দিকে অন‍্যমনস্ক ভাবে তাকিয়েছিল জুহি,পাশ থেকে তনু বলে,'এই যে জুহি চাওলা নেবে নাকি জুহি সিরিজের কুর্তা?'
-' মেয়েটা ভালো সেল করে কিন্তু,মানে কথাবার্তা খুব ভালো তাই না? বেশ খদ্দেরের মন জয় করতে পারে। আগে দেখিনি।'
-' আরে তুই তো বেশ কিছুদিন আসিসনি,তারপর আজকাল তো পরের ট্রেনেই বেশি যাস। তোর ঘুম ভাঙতে দেরি হয়। নতুন বিয়ের পর আলাদা ব‍্যাপার স‍্যাপার।'
-' এই যাহ্,শুধু বাজে কথা তোর।'
-' হ‍্যাঁ আমি তো বাজে কথাই বলি। ওর নাম চুমকি,কিছুদিন ধরে আসছে। তবে সব দিন আসে না,মাসের প্রথমদিকে আসে। ভালো স্টক রাখে,কথাবার্তা ভালো আর সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং যে ইনস্টলমেন্টে দেয়। আমিও তো মায়ের জন‍্য কিনেছি,দিদিকেও একটা কুর্তা দিলাম। ওদের তো খুবই পছন্দ হয়েছে। এটাও তো ওর কাছ থেকে কেনা।'
-' বাপরে তুই তো একদম ওর ফ‍্যান হয়ে গেছিস দেখছি,তা দাম কেমন নেয়? নিশ্চয় বেশি? আর ইনস্টলমেন্টে দেয় কোন ভরসায়? ট্রেনের পাবলিককে বিশ্বাস আছে নাকি? দেবে কোনদিন টাকা মেরে তখন বুঝবে।'
-' আমি বলেছিলাম,বলেছে কপাল তো নিতে পারবে না। আর দাম তো বেশ কম। আমি তো ভাবি এত কমে দেয় কী করে? বাজারের চেয়ে বেশ কম। মা শুনে বলল আসলে ও পুরোটা নিজেরা করে বলেই হয়ত কমে দিতে পারে।'
   ওদের দুজনের কথার মাঝেই কখন যে কাছে এগিয়ে এসেছিল চুমকি ওরা খেয়াল করেনি। তারপর ওর স্বভাবেই বলে উঠেছিল,' ও দিদি আজ তো কিছুই দেখলে না গো,শুধু বন্ধুর সাথেই গল্প করছ। ও দিকের ব‍্যাঙ্কের দিদিরা অনেক কিছু কিনলো।'

-' কী এনেছো আজ চুমকিদি? আমার আর লাগবে না 
গো। গুচ্ছের জামাকাপড় ঘরে জমেছে। মা বকছিল।'

-' তোমাদের লাগে গো,প্রতিদিন বেরোও তো। এক জামা পরে রোজ যাওয়া যায় নাকি? আজ অনেক কিছু নতুন এনেছি। দেখাবো নাকি? আর একদম সস্তা সস্তা খাস্তা জিনিস সব।'

   ততক্ষণে ওদের পাশে বসে থাকা অনেকেই মন্তব‍্য করে,'দেখাও দেখাও,শুধু ওদিকেই দেখালে হবে নাকি?'
     চুমকি ততক্ষণে একটা র‍্যাপারে জড়িয়ে ফেলেছে নিজেকে আর বলছে বাড়িতে নাইটি পরে বাইরের মানুষের সামনে বেরোতে কেমন লাগে,দেখো এগুলো পরে কী সুন্দর যেখানে খুশি যাও। কত বড় বহর দেখো। আর এই দেখো গুজরাটি কাজের কুর্তাগুলো,ওড়নাতেও কাজ করা আছে গো। দেখো একদম লেটেস্ট।
     কেন যেন গুজরাটি স্টীচের নীল কুর্তা সেটটাতে চোখ আটকে গেছিলো নীল না পসন্দ জুহির। হাত বাড়িয়েছিল আর তারপর কিনে ফেলেছিল। 
আর সেই নীল কুর্তার আজ জয় জয়াকার ট্রেনে। সবাই বলছে অপূর্ব সুন্দর লাগছে ওকে দেখতে। অবশ‍্য নীল কুর্তা দিয়ে কেনা শুরু করে চুমকির মোটামুটি রেগুলার কাস্টমার হয়ে গেছে জুহি। মায়ের জন‍্যও শাড়ি,কুর্তা আর শাশুড়ির শাড়িও কিনেছে একটা দুটো। সবাই পছন্দ করেছে জিনিসগুলো। আরেকটা সুবিধাও আছে ইনস্টলমেন্টে পে করা যায়।
   ভালোই হয়েছে একদিক দিয়ে কারণ চুমকি ট্র‍্যাডিশনাল জিনিসপত্র রাখে আর মায়ের সেগুলো পছন্দ। শপিং মলের জিনিস মায়ের খুব একটা পছন্দের নয়। বলে কতজন ওগুলো গায়ে পরে জানিস? অনেকে তো ড্রেস পরে ছবি তুলে একটা স্ট‍্যাটাস দিয়ে খুলে রেখে চলে আসে। ইস কী সব মনোবৃত্তি মানুষের, একগাদা জিনিস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ট্রায়াল রুমের বাইরে। জামা প‍্যান্ট গলাচ্ছে আর খুলছে তারপর ঝুড়িতে ফেলে যাচ্ছে। আহা রে মেয়েগুলো সারাদিন ওগুলো ভাজ করে ঝোলাচ্ছে হ‍্যাঙারে।
-' মা একটু মডার্ন তো হও,তোমার ঐ মনসা বস্ত্রালয়ের চেয়ে অনেক ভালো। ইস সেই বোকা বোকা জামাকাপড়। ব‍্যাকডেটেড!'
-' চুপ কর,সেসব জিনিসে একটা নতুন গন্ধ ছিল,এখন নতুন ড্রেস আনলে মনেই হয় না নতুন। কত মানুষের গায়ের ঘেমো গন্ধ মাখা।'
-' মা ইশ্...'
     চুমকিদির কাছ থেকে কেনাকাটা করতে গিয়ে একটু একটু করে জানতে পেরেছিল ওর জীবনের কথা। হাতের শাঁখা পলাকে যত্নে সরিয়ে নিয়ে,এলোচুলকে গুছিয়ে খুলে যাওয়া চুলে ক্লিপ আটকাতে আটকাতে বলেছিলো..' এমন দিন সবসময় ছিল না গো,বিয়ে পাশ করতে না করতেই বিয়ে হয়ে গেল। দিব‍্যি সংসার করছিলাম শ্বশুর শাশুড়ি নিয়ে। বর প্রাইভেটে চাকরি করত তবে আয় খারাপ ছিল না বুঝলে। আমাদের সাধারণভাবে চলেই যেত। তারপর এল ঐ করোনাসুর ব‍্যাস ওর কাজটা গেল,তারপর যে কী দিন দেখেছি ভগবানই জানে। সঞ্চয় সব গেল একটু একটু করে। শ্বশুরমশাই মারা গেলেন। শেষে গয়নাতেও হাত। বলতে বলতে চোখটা ছলছল করে চুমকিদির। তারপর রোগ গেলে ভাঙা শরীর নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম,টুকটাক গয়না যা ছিল সেটুকু দিয়েই শুরু করি এই ব‍্যবসা। প্রথমে অনেক কথা শুনেছি,বিক্রি হয়নি তেমন আর হলেও ঐ নাইটি। কিনবে কে গো ঐ বাজারে? তারপর একটু একটু করে দিন ফিরেছে। এখন কর্তা গিন্নী দুজনে খাটি। কোন কাক ভোরে উঠে শুরু হয় জীবন আমার। রান্না করা,অসুস্থ শাশুড়ির খাবার গোছানো,বাচ্চার টিফিন করা। তারপর নাকে মুখে দুটো গুজে বেরিয়ে আসি এই ভারী ঝোলা নিয়ে।
   এক নিঃশ্বাসে কথা বলতে বলতে লাজুক মুখে বলে আগে ও সাইকেলে করে স্টেশনে পৌঁছে দিত। এখন একটা টোটো কিনেছি। সুবিধা হয় তাতে অনেক,আর ও এখন টোটোও চালায় অবসরে।
      গল্প শুনতে শুনতে একটা একটা নিশ্চিন্ত আরামের শ্বাস বেরিয়েছিল জুহির। নাহ্ ওকে হয়ত এমন দিন দেখতে হবে না। আসলে আগের দিনের মেয়েগুলো বোকাও ছিল,বাবা মা যাকে ধরে দিল বিয়ের আনন্দে তার হাত ধরেই ট‍্যাং ট‍্যাং করে চলল। এখন বেশ কিছুদিন ভালো করে দেখে বুঝে যাচাই করে মেয়েরাই পাত্র দেখে নেয় আর সেটাই ভালো। অভিও বেশ ভালোই চাকরি করে আর ওর নিজেরও সরকারী চাকরি সুতরাং কোন চাপ নেই। যাক তবুও এই দিদিটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। একটু কষ্টের জীবন তবে নিজে একটা আয় করে এটাই অনেক। সারাদিন ঘুরে ঘুরে কাজ করে আর কখন নিজের যত্ন নেবে? ট্রেনে কিছু দিদির সাথে ভালো দোস্তি আছে চুমকিদির ওরা কখনও ওকে খাবারও দেয়,চুমকিদি অবশ‍্য নিতে চায় না। বলে খেয়ে এসেছি গো দিদি,তুমি বরং এই ব্লাউজটা দেখো তোমার শাড়ির সাথে দারুণ যাবে গো।
  ওরা ধমকালে বলে বেশি খেলে শরীর হাঁসফাঁস করে যা গরম পড়েছে না,শরীর ভারী হয়ে গেলে ছুটোছুটি করতে পারব না। 

        এবার পুজোতে জুহিদের কাশ্মীরে যাওয়ার কথা। বিয়ের ছুটি আর হানিমুনের ছুটি নিয়ে অনেক ছুটিছাটা চলে গেছে তাই এরমধ্যে আর তেমন করে কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠেনি ওদের। যা গেছে টুকটাক উইকেন্ড আউটিং কাছাকাছিতে একটু স্বাদবদল করতে। অবশ‍্য ওদের হানিমুনেই অনেক খরচ করেছে অভি। হবেই না বা কেন? ফরেন ট্রিপ বলে কথা। অভি অবশ‍্য বলেছিল লাদাখ যেতে কিন্তু রাজি হয়নি জুহি নিজেই। বলেছিল,' আরে না না,হানিমুনে আজকাল তো সবাই বিদেশে যাচ্ছে। প্লিজ আমার প্রেস্টু থাকবে না। আমি আমার টাকাটা দিয়ে দিচ্ছি,তাহলে হবে তো?'
  হা হা করে হেসে উঠেছিল অভি,' আরে বিয়ের একটা খরচ আছে তো নাকি? আর আমাদের দেশেই তো কত ভালো ভালো ঘোরার জায়গা আছে। যেগুলো এখনও দেখাই হয়নি। তোমাকে নিয়ে যেখানে যাবো সেখানেই তো ফুল ফুটবে আর চাঁদ উঠবে। ঐ সব প্রেস্টু নিয়ে কী হবে? সত‍্যিই এই ফেসবুক স্টেটাস তোমাদের মাথাটা খাচ্ছে।'
    এই নিয়ে রীতিমত ছোটখাটো মান অভিমানের পালা চলেছিল কয়েকদিন। তারপর অভি হানিমুনের ডেস্টিনেশনের কনফার্মেশন দেওয়াতে মান ভেঙেছিল। অভি সবটা কী করে ম‍্যানেজ করেছিল তা আর জিজ্ঞেস করেনি জুহি বরং নিজেকে জয়ী মনে করেছিল এই ভেবেই যে ও হ‍্যাঁ বা না টা নিজের মত করেই বলতে পারে। ওর মায়ের মত সারাজীবন মেনে নেবে না যা পছন্দ নয়।
     পরে অবশ‍্য অভি বলেছিল ওর জন‍্যই মেমোরেবল হয়ে রইল ওদের হানিমুনের ট্রিপটা,আর জুহিকে যা লাগছিল নিত‍্যনতুন সাজে তা তো বলারই নয়।
    তবে এটাও বলে দিয়েছিল আর এখন বেশ কিছুদিন বিদেশ নয়,এবার স্বদেশ প্রেমেই আটকে মন দেশের মধ‍্যে করব ভ্রমণ।

        টিকিট কেটে বেশ কিছুটা পরে বাড়িতে বলেছিল ওরা। তবে শুধু বাড়িতেই আর তেমন কাউকে জুহি বলেনি কারণ ওটা সারপ্রাইজ থাক। তবে টুকটাক প্রস্তুতি চলছে ভেতর ভেতর। পুজোতে কাশ্মীরে তেমন ঠান্ডা পাবে না,তাই যা নেবে হাল্কা খুব ভারী কিছু না নিলেও চলবে একটা নিলেই হবে। এইসব টুকটাক অভি বলেছে। তবে জুহির একটু ড্রেস ম‍্যানিয়া আছে,আরে কত ফটো উঠবে তাই ড্রেস নিয়ে তো ভাবতেই হবে।
          মাঝে কয়েকদিন আটটা চল্লিশের ট্রেন ওর ধরা হয়নি তাই অনেকদিন বাদে আবার চুমকিদিকে দেখল। চুমকিদি আজ ওদের দিকেই প্রথম এল,এসেই বলল,'আজ দুটো তিনটে বাগ টানতে টানতে উঠেছি,ভাগ‍্যিস ও তুলে দিয়ে গেল। নামব কী করে কে জানে?'
  অনেকেই জিজ্ঞেস করল এত জিনিস কেন আনতে গেছে একসাথে? চুমকিদি বলে আরে পুজো আসছে না..তোমরা পরবে তো পুজোতে। এত ভালো ভালো স্টক কী আমি বাড়িতে রাখার জন‍্য তুলেছি? অবশ‍্য আমি জানি আজ এখানেই আমার ব‍্যাগের সব লুটপাট হয়ে যাবে। আর আমার ব‍্যাগও হাল্কা হয়ে যাবে।
     জুহিও হাসে মিটিমিটি চুমকিদির বলার কায়দাতে।
চুমকিদি ওর ব‍্যাগের চেন খুলতেই ঐ কী একটা বলে না ধামাকা মত হল। সত‍্যিই অনেক সুন্দর সুন্দর কালেকশন নিয়ে এসেছিল,একদম ইউনিক কিছু টপ,কুর্তা এমনকি ওয়েস্টার্ন আউটফিটও কিছু।
     জুহি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল,' বাপরে,তুমি তো আগে এইসব রাখতে না গো?'
-' একটু অন‍্যরকম কালেকশন আনলাম এবার। ভাবলাম দেখি যদি তোমাদের ভালো লাগে তো আবার আনব অন‍্য কিছু। পুজোতে বেড়াতে গেলে সবসময় কুর্তা পরবে কেন? এগুলো দেখতে পারো,একদম লেটেস্ট। আর কারও কাছে পাবে না। আর বেশি নিলে ছমাসের ইনস্টলমেন্টে দেব।'
       সবার অনেক দেখা দেখির মধ‍্যে জুহিও নিজের পছন্দের বেশ কয়েকটা জিনিস কিনে ফেললো। সত‍্যিই তো বেড়াতে যাবার জন‍্য ওরও তো লাগবে। আর আজকাল অনলাইনের জামাকাপড় বড় একরকম হয়ে গেছে। যেই তুমি একটা কিছু পরে ফেসবুকে ছবি দিলে অমনি আরেকজন সেটা কিনে ফেলবে। আর ভালো লাগে না। অভিকে বলতে ও বলেছিল,'তাতে কী হয়েছে? তুমি তাহলে নিজে ড্রেস ডিজাইনিং শুরু করে দাও এত যদি প্রবলেম। তোমরা মেয়েরা পারো বটে।'
       
       বাড়িতে ফিরে দরজা বন্ধ করে পিঠের ব‍্যাগটা তাড়াতাড়ি খুলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ড্রেসগুলো ট্রায়াল দেয়। অভি এখনও ফেরেনি,সুতরাং শান্তিতে নিজেকে দেখে যতখুশি। সত‍্যিই ড্রেসগুলো সুন্দর, হাল্কা আর বেশ ইউনিক। অভিকে এখন দেখাতেও চায় না একদম পরে সারপ্রাইজ দেবে,তারপর আরেকটু বেশি আদরে ডুবে যাবে। অভির চোখের মুগ্ধতা আর আদরের কথা মনে হতেই কিছুক্ষণের জন‍্য হারিয়ে যায় জুহি তারপর জামাগুলো গুছিয়ে তুলে রাখে।

     দেখতে দেখতে জুহিদের বেড়াতে যাওয়ার দিন এসে গেল। কোথাও যাবো যাবো এই আনন্দে কোথা দিয়ে যে কেটেছে এতগুলো দিন তা ওরা ভাবতেই পারেনি। তবে দীর্ঘ ব‍্যস্ত জীবনের মাঝের এই বিরতিটুকু দুজনেই চেটেপুটে নিতে চায় যতটা পারবে। এই কয়েকদিন আর কোনও চিন্তা নেই,ভালো হোটেলে থাকবে আর ঘুরবে। সারাটা দিন প্রকৃতির মাঝে দুজনে থাকবে দুজনের খুব কাছে।

     ফ্লাইটে করে একদম সোজা শ্রীনগরে নামলেও অভি প্ল‍্যান করেছিল ওরা আগে পহেলগাঁও চলে যাবে তারপর শোনমার্গ,গুলমার্গ আর যা কিছু দেখবে ঠিক করে এসেছে তা দেখে ফেরার সময় শ্রীনগর ঘুরে ওখান থেকেই ফ্লাইটে উঠবে। কারণ জুহির বায়না ফেরার সময় শপিং করবে শ্রীনগরে। সুতরাং সেটাই ভালো প্ল‍্যান।
    জুহি এর আগে কখনও কাশ্মীরে আসেনি,ওর বাবা খুব ভীতু তাই কখনও প্ল্যান করেনি এখানে আসার। তবে কাশ্মীর দেখে মুগ্ধ জুহি,যেমন সুন্দর আবহাওয়া আর তেমন প্রকৃতি। আর সেই সৌন্দর্য্য আরও মন কেড়েছে সাথে ভালোবাসার মানুষ থাকায়। অভিকে আদুরে গলায় বলে,' নাহ্ আবার আসতে হবে এখানে। সত‍্যিই এখানেই স্বর্গ।
-' ভালো তাহলে,এরপর ডিফারেন্ট সিজনে এখানেই আসবো। আর বিদেশে যাবো,ওখানে যাবো সেখানে যাবো বায়না তুলো না।'
-' ইশ্ খুব খারাপ তুমি! এক জায়গা সারাজীবন ধরে দেখব?'
-' কী জানি বাবা তোমার কখন যে কী হয়? এই ছিলাম খুব ভালো আবার খারাপ হয়ে গেলাম। তবে তোমার ড্রেসগুলো কিন্তু দারুণ। কখন এইসব কিনেছো? একদম তো কাশ্মীর কী কলি লাগছো।'
      প্রশংসা শুনে জুহির ব্লাশার লাগানো গালটা আরেকটু চকচক করে। অভির গায়ের কাছে এসে ওর ঘাড়ে মাথা রেখে হোটেলের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া লিডার নদীর শোভায় ডুবে যায়। মনে মনে চুমকিদির কালেকশনকে জিন্দাবাদ বলে। ছবিগুলোতে সত‍্যিই ড্রেসগুলো দারুণ এসেছে। বরং যেগুলো ও অনলাইনে কিনেছে সেগুলো ফিকে লাগছে ওগুলোর কাছে।
         অবশেষে শ্রীনগরে এসেছে জুহিরা,প্রথম দুটো দিন হাউসবোটে থেকে পরের একটা দিন হোটেলে থাকবে এমনি কথা ছিল। যদিও দুদিন হলেই হত তবুও জুহির বায়নাতে আরেকটা দিন রেখেছে অভি।
             
        হাউসবোটে এসে মুগ্ধ হয়ে যায় জুহি,বাইরে থেকে সত‍্যিই বুঝতে পারেনি ভেতরটা এত সুন্দর হবে। যদিও একদম ওরা একা থাকবে এই বেগমমহলে তা ভাবতেই কেমন যেন শিহরণ হচ্ছিল ওর। অভিকে সে কথা বলতেই ও জাপটে বুকে টেনে নেয় ওকে। তারপর ফিসফিসিয়ে বলে,' আজ তো আমি দস‍্যু হব,বেগমমহলের বেগমকে সারারাত ঘুমোতে দেব না। লাল এই ড্রেসটাতে তোমাকে যা লাগছে না। ইচ্ছে করছে না আর বেরোতে এখন।'
        বাইরে থেকে আওয়াজ আসে,' সাহাব বোট আ গয়া।'
     ওদের হাউসবোটের কেয়ারটেকার ছেলেটা ডাকছে বুঝতে পারে। সুতরাং আলতো আদরে ভাসতে ভাসতেই জুহি বেরিয়ে আসে অভির হাত ধরে বাইরে। ছেলেটা সালাম করতেই ওরা বলে একটা ছবি তুলে দিতে। একটা বোটে করে ওরা ডাল লেকের অপর পাড়ে যায়। ওরা এখন যাবে মুঘল গার্ডেনে।
         গোলাপ গাছের ঝাড়টা দেখে মুগ্ধ হয় জুহি,' এই এসো না এখানে একটা ছবি তুলি।'
-' তুমি দাঁড়িয়ে পড়ো,না না ওখানে না এখানে দাঁড়াও। পেছনের ভিউটা সমেত নিই। ফাইন..'
    ছবি তোলা হতেই জুহিকে কে যেন ডাকে। জুহি পেছন ফিরেই অবাক হয়ে যায়..

  কলকলিয়ে ওঠে চুমকিদি,' আরে আমি তো ড্রেস দেখেই চিনেছি দূর থেকে। ওকে বলছি,দেখো আমার ড্রেস কাশ্মীরেও চলে এসেছে। সত‍্যিই অপূর্ব লাগছে তোমাকে এই লালটাতে। আমিও এখানে আসব বলে নিজের জন‍্যও একটা নিয়ে রেখে দিয়েছিলাম। দেখেছো দুজনের কেমন ম‍্যাচিং ম‍্যাচিং।'

     কাশ্মীরে গরম না থাকলেও ভেতরটা কেমন যেন ঘেমে ওঠে জুহির। অভির দিকে তাকায়,ভাগ‍্যিস ও ওর নেচার ফটোগ্ৰাফি আর ভিডিও নিয়ে ব‍্যস্ত। ট্রেনে ভারী ব‍্যাগ বওয়া গৃহবধূ চুমকিদির ওপর যতটা সহানুভূতি ছিল আজ তার ছিটেফোঁটাও নেই কেন যেন। 

      একটু আগে যে ড্রেসটাতে ওকে পরী লাগছিল বলে অভি আদর করছিল এখন সেই একই ড্রেস পরে চুমকিদি ওর সামনে দাঁড়িয়ে। ট্রেনে ঘাম মুছতে মুছতে উঠে হাতে ব‍্যাগ নিয়ে ঘুরে ঘুরে মাল বিক্রি করা চুমকিদি কাশ্মীরে বেড়াতে এসেছে বর আর মেয়ের সাথে! তাও আবার ঐ লাল জামাটাই কিনতে হয়েছে ওকে? এই না বলেছিল ওটা একদম ইউনিক পিস্ একটাই আছে।
       উচ্ছ্বসিত চুমকি জুহির মন পড়তে পারে না। একটু দূরে মেয়ের হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো বরকে হাত বাড়িয়ে  ডাকে,' এই শোন না এদিকে। এই ড্রেসটায় তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে গো। এসো একটা ছবি তুলি দুজনে ম‍্যাচিং ড্রেসে। এবার ভাবছি আমি একটা পেজ খুলব সেখানে দেব।'

       ঠোঁটের কোণে একটা বিরক্তির হাসি ঝুলিয়ে গলাটা নামিয়ে জুহি বলে,' তোমার ব‍্যবসা তো আজকাল ভালোই চলছে চুমকিদি। তুমি কাশ্মীরে আসছো কই একবারও বলোনি তো? আমাদের একটু তাড়া আছে চলি এখন। আর তুমিও কাশ্মীর বেড়াতে আসার এইসব ছবি বেশি শেয়ার কোর না কারণ সবাই জানে তোমার আর্থিক অবস্থা ভালো নয়।তোমার বিক্রি কমে যাবে।'
     ততক্ষণে চুমকির উৎসাহে জুহি যেন অনেকটা বরফ গলা জল ঢেলে দিয়েছে।

      ওদের দুজনেরই বর এগিয়ে এসেছে সামনে। জুহি একবার ভালো করে খেয়াল করে চুমকিদির জগৎকে। কতবার এদের দুঃখের কথা শুনেছে জিনিস বিক্রির মাঝে। সত‍্যিই মানুষ পারে বটে। আসলে সবাই ভালোই আছে,শুধু মিথ‍্যে একটা প্রয়োজনের একটা ঝুলি বয়ে সহানুভূতি কুড়োয়। কী দরকার এগুলোর?
        -'স্মাইল প্লিজ'
   কথাটা শুনে ওরা দুজনেই চমকে তাকায়,শুধু চুমকির সানগ্লাসের নীচে বাষ্পজমা চোখটা ছবিতে ধরা পড়ে না। ইশ্ কেন যে ডেকে এইভাবে কথা বলতে গেল? আর ভদ্রলোক হঠাৎই ওদের ছবিটাও তুলে ফেললেন। অথচ ও তো ওর বরকে ডাকছিল ছবি তুলতে।

         ডাল লেকে তখন বেলা শেষে কনে দেখা আলোর লুটোপুটি,শুধু জুহির কেমন যেন মুড অফ। ওর কেন যেন মনে হচ্ছে ঐ চুমকিদির মত জামাটা কতক্ষণে খুলে ফেলতে পারবে কে জানে গা থেকে?
একটা মলিন ঘেমো মুখ আর এলোমেলো চুলে সাদামাটা সালোয়ার জড়ানো চুমকিদিকে আজ সত‍্যিই মেলাতে পারেনি।

              অভি বুঝতে পারে না জুহির হঠাৎই মুড অফ হওয়ার কারণ। ভালোই তো ছিল বেশ হাসিখুশি হঠাৎই ঐ ভদ্রমহিলার সাথে দেখা হবার পর অফ হয়ে গেল কেন কে জানে? ও তো ওদের ছবিও তুলেছে,বেশ লাগছিল এক ড্রেসে ওদের। অবশ‍্য জুহি অনেক সুন্দর,সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

     হাউসবোটে এসে জুহি ড্রেসটা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। অভি অবাক হয়,' ইশ্ এখনি খুলে ফেললে ড্রেসটা? আমি তো ভেবেছিলাম সামনের বসার ঘরটাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তোমার কয়েকটা ছবি নেব।'
 -' না এই ড্রেস পরে আর ছবি তুলতে হবে না। আচ্ছা তুমি হঠাৎই তখন ওর সাথে আমার ছবি তুললে কেন? '
-' এনিথিং রং? আমি তো দেখছিলাম মহিলা ওর হাবিকে ডাকছিলো ফটো তুলতে। তো আমি ভাবলাম ওনার সাথে বাচ্চা মেয়েটা তাই আমিই তুলে দিই। কে উনি? তোমার খুব চেনা কেউ মনে হল।'

     অভিকে কোন জবাব দিতে ইচ্ছে না করলেও জবাব দিল জুহি।'শোনো ঐ মহিলার কাছ থেকেই এই ড্রেসটা কিনেছি আমি,উনি ট্রেনে ঘুরে ঘুরে জামাকাপড় বিক্রি করেন। বলে তো বর চাকরি করত,চাকরি চলে গিয়ে এখন বেকার। সংসারে খুবই অভাব ছিল। এখন বর টোটো চালায় আর গিন্নীকে ব‍্যবসায় সাহায‍্য করে। সত‍্যি ভেবেছিলাম ভদ্রমহিলা নিডি তাই তো আমরা মোটামুটি সবাই কেনাকাটা করতাম ওর কাছ থেকে। এখন তো দেখছি কেউই কম যায় না,আজ তো আমি মেলাতেই পারলাম না ট্রেনের চুমকিদিকে।'
    -'এতো আরেক বীরাঙ্গনার গল্প জুহি। ভয়ঙ্কর অতিমারীর পর এমন অনেক মেয়েই প্রয়োজনে নিজের মত করে যুদ্ধ করে গেছে সংসার বাঁচাতে। কত মানুষ চাকরি হারিয়েছে আর জীবন হারিয়েছে জানো? আমাদের স্থায়ী চাকরি বলে আমাদের গায়ে আঁচ লাগেনি। অতিমারীর ফলে মানুষ হারিয়েছে অনেক কিছু তবে বাড়িতে থেকেও যে সব করা যায় তা শিখেছে।'
-' আমি জানি সব জানি। তবে লোকের কাছে এত দুঃখের কথা বলে,সেসব তো দেখি ফাঁকা। টাকা তো ভালোই জমিয়েছে।'
-' পরিশ্রমের টাকায় একটু বাঁচতে চায় প্রাণভরে মানুষ। জীবন তো একটাই,তাই সবারই মন চায় ইচ্ছেঘুড়ির লাটাই ছেড়ে দিতে। বলে না কাল হো না হো।'
   জুহির অভির কথাগুলো কানে ঢুকেও ঢোকে না। এমন কত মানুষকে সাহায‍্য করেছে কিন্তু কজন মনে রেখেছে সে কথা? এই তো ওর বান্ধবী অঞ্জুকে বলেছিল আন্টি তো ভালো সেলাই করে সেটা নিয়ে ওরা কিছু ভাবতে পারে,মানে প্রথমে পেজ তারপর বুটিক। পাশের বাড়ির অশ্রু কাকিমার আচারের পেজটা ও খুলে দিয়েছিল। এখন তো অঞ্জুদের ব‍্যবসা দারুণ চলছে। কাকিমারও আচারের ব‍্যবসা ভালো চলছে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে কেউই একদিনের জন‍্য বলে না আইডিয়া গুলো ওর ছিল। বরং ও একদিন বলাতে অঞ্জু এমনভাবে ইগনোর করেছিল যে ওর ভালো লাগেনি। সবটাই নাকি ওরা আগেই ভেবেছিল ঐ জাস্ট সাহস পাচ্ছিলো না এই ভেবে যে চলবে কিনা? আর অশ্রু কাকিমা তো কোনদিনই বলেন না আচারের পেজ খোলার আইডিয়া ওর ছিল। কোনদিন এক শিশি আচারও দেননি। বরং ওদের দুজনের কাছেই জুহি এখন আম জনতা। যেন ওদেরই সব আইডিয়া ছিল,জুহি কিছুই করেনি। 

        তা সত্ত্বেও চুমকিদির কথাতে ওর মন ভিজেছিল,তাছাড়া কালেকশনও ভালো। তাই প্রথম দিকে না কিনলেও এখন তো প্রায়ই কেনে। তবে আজ কেন যেন একটা অদ্ভুত খারাপ লাগা ওকে গ্ৰাস করল।
  তবে কী চুমকিদির ঐ ড্রেসটা? নাকি চুমকিদির কাশ্মীরে আসা? রাতে শুয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করে জুহি। তারপর নিজেই উত্তর বের করে। সত‍্যিই তো জীবন একটাই,তাই ওরও উচিত নিজের মত করেই কিছু করে যাওয়া। কে কী ভাবলো তাতে কী এসে যায়? মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই তো প্রকৃত মানুষের কাজ। অকৃতজ্ঞ মানুষজন তো আছেই তারা কখনই অন‍্যের করা উপকার পেয়েও বলতে পারে না সে কথা। নাহ্ আজ চুমকিদিকে বলা কথাগুলো মনে করে ওর খুবই খারাপ লাগে। এই কথাগুলো বলা একদমই ঠিক হয়নি। আবার কী দেখা হবে? ইশ্ একবারও জিজ্ঞেস করা হয়নি ওরা কোথায় উঠেছে। অভিও ওকে নিশ্চয় খারাপ ভেবেছে,অথচ সবটাই ও অভিকে বলে ফেলেছে। কী করবে ছবিটাকে? চুমকিদিকে ট‍্যাগ করবে? না না ওটা ঠিক হবে না। এরপর দেখা হলে চুমকিদিকে সরি বলবে। কী জানি খুবই সামান‍্য একটা কারণে কেন যে এমন করতে গেল?

       চুমকিদির একটা ফেসবুকে প্রোফাইল ছিল,তাতে নিশ্চয় কিছু আপডেট দিয়েছে বেড়ানোর ব‍্যাপারে। খুঁজে দেখতে চেষ্টা করে জুহি। নাহ্ সেটাতেও কিছু দেখতে পেল না। কোন আপডেটই নেই। চুমকিদি আর ওর ছবিটা অভি ওকে হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়েছিল। ছবিটা আবার ভালো করে দেখে জুহি। নিজেকে কেন যেন ছোট মনে হয়। ছবিটা কিন্তু ভালো তুলেছে অভি। এক ড্রেসে বেশ লাগছে কিন্তু ওদের। শুধু ওদের দুজনের মুখেই কোন হাসি নেই।

        কাশ্মীরের কয়েকটা ছবি দিয়েছিল নিজের প্রোফাইলে,হোটেলে এসেই ছবিগুলো ডিলিট করে ও তাড়াতাড়ি করে। নিজের সুখের চাদর মোড়ানো ক্ষণিকের জীবনটা আড়ালে রাখাই ভালো তা ওকে শিখিয়ে দিয়েছে জুহি। আসলে সবাই তোমার অসুখ দেখতে চায়,তুমি ভালো নেই তা অন‍্যকে ভালো রাখে আর পরিতৃপ্তি দেয়। তবে তোমার একটুও ভালো থাকার ছবি অনেকেই নিতে পারে না। আসলে একটা বড় অসুখে আক্রান্ত আমরা অনেকেই তাই সুখের ছবি দেখলে অনেকেরই গায়ে জ্বালা ধরে।
            এই কদিনের ওর হাসিমুখের ছবিগুলোকে কী দরকার সব অপরিচিত মানুষজনকে দেখানোর? তারা ওর অসুখটাই দেখুক। সুখটুকুকে সে অ্যালবামবন্দী করে রেখে দেবে নিজের কাছে। মাঝে মাঝে যখন ভারী ব‍্যাগ বওয়া ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে বসবে কোন প্ল‍্যাটফর্মের বেঞ্চে তখন ফোনে চোখ রেখে শান্ত করবে তার অস্থির মনটা। জুহি বোধহয় আর ওর কাছে কোনদিনই কোন কিছু কিনবে না। সত‍্যিই তো ওকে বলেছিল এই ড্রেসটা একটাই আছে আর নেই। কথাটা মিথ‍্যে নয়,কিন্তু পরে যখন এক সাইজ বড় আরেকটা পেয়েছিল তখন আর ওটা নিজের জন‍্য রাখার লোভ সামলাতে পারেনি। 
          রাত বাড়ে,শুধু চুমকির চোখে ঘুম আসে না। অনেক কষ্টে জমানো টাকায় এই সুখটুকুকে কিনবে বলে কতদিন ধরে স্বপ্ন দেখেছে। আজ বুঝেছে সব সুখ সবাইকে দেখাতে নেই হয়ত বা নজর লেগে যায়। আজকের অসুখে ভরা পৃথিবীতে মানুষ হয়ত অসুখ প্রিয় তাই তো ঘরে ঘরে অসুখ আর ফেসবুকে নকল হাসিমুখ।
   
   
  



    

      

         
    




       

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...