Skip to main content
ক্লাস টেনে একটা চ‍্যাপটার আছে Our Runaway Kite. পড়াতে গিয়ে জেনেছিলাম Claude আর Phillipa নামে দুই মা হারা ভাইবোনের মনের কষ্টের কথা। দুই ভাইবোন এই দেখে অবাক হয়েছিল যে তাদের কেন কোন আত্মীয় নেই। সবার  আত্মীয় আছে অথচ তাদের নেই কেন? একদিন বাবাকে জিজ্ঞেস করাতে দেখেছিল বাবার চোখে মুখে বিষণ্ণতা এবং তাদের বাবা স্বীকার করেছিলেন যে তার জন‍্যই আজ তাদের কোন সম্পর্ক নেই। একদিন ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করে তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলেন। বেশ কয়েক বছর বাদে ফিরে এসে দেখেছিলেন তার ভাই মারা গেছে এবং একমাত্র বোন কোথায় গেছে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ছোট ছোট দুটো ছেলেমেয়ে বাবার কষ্ট দেখে কষ্ট পেয়েছিল। তারা একটা নির্জন দ্বীপে থাকত যেখানে তার বাবা লাইট হাউসে কাজ করতেন। নিজেরাই খেলত নিজেদের মত করে সারাদিন। যখন সমুদ্রে বরফ জমত তার আগেই তারা সেই দ্বীপ ছেড়ে মেইন ল‍্যান্ডে চলে যেত। সেখানে অনেক ছেলেমেয়েদের তারা দেখত যাদের রিলেটিভ আছে। ওদের কাছেই ওরা ঘুড়ি বানানো শিখেছিল। একদিন সেই ঘুড়িই মিলিয়ে দিয়েছিল ওদের সাথে ওদের হারিয়ে যাওয়া পিসিমাকে। কারণ ঘুড়িটা ছিঁড়ে যাওয়াতে পিসির লেখা একটা পুরোনো চিঠি দিয়ে ওরা ঘুড়িটা জুড়েছিল আর ঘুড়িতে লিখে দিয়েছিল নিজেদের নাম আর ঠিকানা। সেই ঘুড়ি সুতো থেকে কেটে গিয়ে উড়তে উড়তে চলে গেছিল অনেক দূরে সমুদ্দুরের আরেক পারে। পিসির ছেলেমেয়েরা জঙ্গলে গাছের ওপর থেকে এনেছিল ঘুড়িটা। আর তার পরেই আসে গল্পের টুইস্ট। ফিলিপারা তিনজন থেকে হয়ে গেছিল ছয়জন। বিধবা পিসিমা নিয়েছিলেন সংসারের দায়িত্ব আর ডিক এবং মিমি হয়েছিল ওদের খেলার সাথী। ওদের মনে আর কোন দুঃখ ছিল না যে ওদের কোন আত্মীয় নেই।
        এটা গল্প,তবে বাস্তবও এমনি হয়। আমরা আমাদের ছেলেবেলা মনে করলে তো এমনি ছিল সেই চিত্র। সবাই মিলে থাকা,ভাগ করে খাওয়া আর হই হই করে বাঁচা। ধীরে ধীরে পরিবার ছোট হয়েছে। এখন অনেকেই হয়ত মামাতো,খুড়তুতো, পিসতুতো ভাইবোনদের চেনেও না। কারণ তাদের বাবা মাদের সাথে ভাই বোনদের সম্পর্ক খারাপ। ছোট্ট বাড়ি বা ফ্ল্যাটে থেকে সব নিন্দা মন্দ আমরা সন্তানদের সামনে বসেই করি। তারাও বিদ্বেষী হয়ে ওঠে এই করে আত্মীয়দের প্রতি আর আমরা নিজেই করি এইভাবে পরিবারের ধ্বংস। আসলে আমরা বড়রা অভিনয় করতে পারি,এই যেমন যে দাদা বৌদি আমার কাছে একসময় অত‍্যন্ত খারাপ ছিল। আজ প্রয়োজনে তারা আমার খুবই প্রিয়জন। আবার যে শ্বশুরবাড়িতে একসময় যেতেই ইচ্ছে করত না,এখন সেখানে প্রয়োজনে থাকা যায়। অথবা একসময় যাদের কাছে আমি মানুষ হয়েছি তারাই হঠাৎ করে হল আমার অত‍্যন্ত অপ্রিয়। আমার সন্তানদেরও তাই শেখালাম। এমন করে ভেঙে যাচ্ছে কত অমূল‍্য সম্পর্ক। আমরা সম্পর্ক খুঁজি ফেসবুক গ্রুপে অথবা বেড়ানোর গ্ৰুপে। তবে সত‍্যিই কী সম্পর্ক ভাঙে?
      সম্পর্ক কখনও ভাঙে না,তারা আমাদের জীবন থেকে গিয়েও যায় না ঠিক চুপটি করে বসে থাকে হয় একান্ত আপনজন হয়ে অথবা শত্রু হয়ে। ঘুরে ফিরেই আসে তাদের কথা..তাদের করা খারাপ ব‍্যবহার আরও কত কী......
       আমি বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা খুব সম্পর্ক গড়তে ভালোবাসতেন। মা ও তেমনি ছিলেন। ট্রেনে বা বাসে তাদের কখনও চুপ থাকতে দেখিনি। আলাপ,গল্প এবং শেষে ঠিকানা বিনিময় হয়েছে। চিঠির মাধ‍্যমে শুরু হয়েছে যাতায়াত। অনেক নিরলস পরিশ্রম আর খরচও করেছেন দুজনে এভাবেই কত। তবে তাদের একটা বয়েসের নিঃসঙ্গতা আমাকে কষ্ট দিয়েছে। মায়ের অসুস্থতার সময় দেখেছি হাতে গোণা কয়েকজন এসেছে দেখা করতে। মা কষ্ট পেতেন,অভিযোগ করতেন। আমি বলতাম আমি তো আছি,তোমার কী চিন্তা? আমার মায়ের মত কিছু মানুষজন এখনও আছেন,যাদের ভালোবাসা আমিও পাই। আর এই সম্পর্কের বন্ধন এভাবেই এগিয়ে চলে একজনের সাথে একজনের। যখন আমরা সেই সম্পর্ককে কোন নাম দিতে পারি না বলি তুমি আমার আগের জন্মের কেউ ছিলে।
    আসলে আমরা সবাই সম্পর্ক হারানো মানুষজন। কেউ মানুষকে চিনেছি প্রয়োজনে আবার কেউ মানুষকে ভালোবেসেছি যখন তারা বিপদের দিনে পাশে দাঁড়িয়েছে বন্ধু হয়ে। সম্পর্ককে আমি সম্মান করি,সম্পর্ক হারাতে ভয় পাই। সম্পর্ক হারিয়ে কষ্ট পাই,আহত হই। তাই হয়ত অনেক অসম্মান আর অপমান বুকে নিয়েও বয়ে চলি সম্পর্কের বোঝা

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...